তুই তারারে ভিনদেশি পর্ব-০২

0
907

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশি❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ০২

লজ্জায় রাগে ভয়ে থরথর কাপঁছে আফরিন। তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য। এইতো কিছু সময় আগের কথা। ভার্সিটিতে ঢুকার সময়। আফরিন দেখে আদিত্য, কৌশাল আর সাথে আহান ভার্সিটির গেটের দিকেই আসছে । তাই নিজের ব্যাগ থেকে বই বের করে, বইয়ে মুখ গুজে ছিল একরকম। আফিরন এমনটা করেছিল আদিত্যকে দেখে। কারণ সে জানে আজকে যদি আদিত্য তাকে পায় শাস্তি নিশ্চিত। কিন্তু এতেও যেন শেষ রক্ষাটা আর হয়ে উঠলো না। অহনারও আসতে লেট হবে একটু।

বইয়ের ভিতর মুখ লুকানোর কারণে সামনে কি আছে সেটা তার জানা ছিল না। হঠাৎ করে কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে। আফরিন পরে যায়। আফরিন ভাবে হয়তো কেউ তাকে ফিল্মি ইস্টাইলে এসে ধরে ফেলবে হলো কি তার উল্টো। মাঠ ভর্তি মানুষের সামনে এক বালতি বেইজ্জতি উপহার হিসেবে পেলো আফিরন। আফরিন সামনে তাকাতেই দেখে আদিত্য। মুহূর্তেই ভয়,রাগ আর লজ্জা তিনটা জিনিসই এক সাথে ভর করে তার মাঝে।

___________

আদিত্য, কৌশাল, আহান তিন বেস্ট ফ্রেন্ড একসাথে যাচ্ছিল কোনো কাজে। আদিত্য সত্যি বলতে আফরিনকে খেয়াল করেনি সে ব্যাস্ত ছিল নিজের ফোনে। আদিত্য আফরিনের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলে। আফিরন মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে। ভুলটা অবশ্য আদিত্য + আফরিনের সমান ছিল। আফরিন উঠে দাড়ায় আর বলে

—– ইচ্ছে করে এমনটা করেছেন তাই না? আদিত্য বলে

—– আমার কোনো ইচ্ছে নেই কারো সাথে ধাক্কা খাওয়ার এটলিস্ট তোমার মতো মেয়ের সাথে নাই।

আফরিন রেগে বলে

—— আমার মতো মেয়ে মানে? What you mean by that আমার মতো মেয়ে!!! আদিত্য ভাব নিয়ে বলে

—— তোমার মতো মেয়ে মানে তোমার মতো মেয়ে,,, এবার তুমি কেমন তুমি ভালোই জানো।

আফরিন বলে

—– এই যে মিস. এই ভাব আমার সাথে দেখাতে আসবেন না। কৌশাল বলে

—– আদিত্য বাদদে। আদিত্য বলে

—– আমি আমার কথার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি পছন্দ করি না কৌশাল। সেটা ভালো করেই জানিস।

আফরিন কৌশাল কে উদ্দেশ্য করে বলে

—– উনি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড কিভাবে হলো?! হাউ!! এটিটিউড এর দোকান। যত্তসব ফাউল এটিটিউড। বলেই চলে যেতে নিলে আদিত্য বলে

—– ভার্সিটি শেষে যেন হল-রুমে পাই। কালকের কথা ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই।

এই ভয়টাই পাচ্ছিল আফরিন। কালকে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছে আজ না জানি কি করে!!! আফরিন একটা দৌড় দিয়ে বলে

—– পারবো না। নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। জেনে বুঝে বাঘের গুহায় যাবো নাকি? এই আমি গেলুম। কৌশাল আফরিনের এমন কথা শুনে হেসে বলে

—– মেয়েটা বেশ কিউট । আদিত্য রাগী চোখে কৌশালের দিকে তাকিয়ে বলে

—- তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু? আহান বলে

—– আচ্ছা বাদদে না আদিত্য তুই তো,,, তখনই অহনা আসে সাথে অন্যা। আজ আসতে লেট হয়েছে অন্যার জন্য। অহনা কৌশাল কে দেখে বলে

—– ভাইয়া আফরিনকে দেখেছিস? কৌশাল বলে

—– লাইব্রেরির দিকে যেতে দেখলাম। আসতে লেট হলো কেন? অহনা অন্যাকে দেখিয়ে বলে

—– এই লেটলতিফ অন্যার জন্য, ঘুম থেকে উঠতে ১২ ঘন্টা লাগে। অন্যার চোখ পাকিয়ে বলে

—– চুপ ফাজিল মাইয়া। কৌশাল বলে

—– কেন রাতে কি পেঁচার মতো সরি পেঁচির মতোজেগে থাকো?? অন্যা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে

—– না সেলায় মেশিনের কাজ করি। ঐ যে সাবানা ম্যাডামের সেলাই মেশিনটা পেয়েছিতো। অহনা বেইবি চলো। কৌশাল বলে

—– কিসের মধ্যে কি? আদিত্য বলে

—– তোরা যাবি কিনা? আর আহান তুই?

আদিত্য আহানের দিকে তাকিয়ে দেখে আহান অহনার দিকে তাকিয়ে আছে একমনে অহনাও তাকিয়ে আছে। আহনার চোখ টলমল করছে। অহনা নিজেকে সামলে নেয় আর অন্যাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

____________

আদিত্য বলে আহানকে,,

—- তোর আর অহনার মাঝে আবার ঝগড়া হয়েছে? কৌশাল আহানের দিকে রাগী চোখে তাকায় আদিত্যর কথা শুনে। আহান বলে

—– আর বলিস না কাল রাতে তোর সাথে কথা বলছিলাম তখন অহনা কল দেয়। কিন্তু ফোন ওয়েটিং পেয়ে সে বলে। কার সাথে কথা বলছিলে। কেন এতো কথা। আমি এখন পুরোনো হয়ে গিয়েছি। আরো কত কি!! পরে ইচ্ছেমতো বকে দিয়েছি।

কৌশাল বলে

—– দেখ তুই অহনাকে পছন্দ করিস তোদের মাঝে সম্পর্ক আছে সেটা আমি জানি। আর মেনেও নিয়েছি কারণ আমার বিশ্বাস তুই অহনাকে হ্যাপি রাখবি। ও তোর জন্য এমন করে কারণ তোকে হারাতে ভয় পায়। আর আহান তুই যদি অহনাকে না চাস এখনি বলে দে। আমি সামলে নিব কিন্তু পরে যদি তোর কারণে আমার বোনের চোখের এক ফোটা জল পরে ভুলে যাবো তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

আহান বলে

—– ওর বুঝা দরকার আমারও একটা লাইফ আছে। ওকে নিয়েতো আর সারাদিন পরে থাকা যায় না!!!, কৌশাল কিছু বলতে যাবে তখনই আদিত্য বলে

—– তোর ব্রেক লাগবে তাইতো!! আমি নিজে অহনার সাথে কথা বলবো। এখন চল। আর কথা না। তারপর তিনজনই বেড়িয়ে গেলো

____________

অন্য দিকে লাইব্রেরিতে এসে হাঁপাচ্ছে আফরিন। তার একটুপরই দেখে অহনা আর অন্যা চলে এসেছে। কিন্তু প্রতিদিনের মতো আজকে অহনা তেমন হাসি-খুশি না। অন্যা ব্যাগটা টেবিলে রাখে বলে

—– দেখ অন্য কারো জন্য নিজের এত সুন্দর পত্নীর মতো চেহারাটা বাদুরের মতো বানাসনা। বিরক্ত লাগে।

অন্যার কথা শুনেই আফরিন বুঝতে পারলো আবার কিছু হয়েছে আহনা আর আহান এর মাঝে। আফরিন কিছু বলতে যাবে তখনই ঘন্টা পরে যায়। আর কিছু বলতে পারে না।

___________

ক্লাস শেষ করে বের হতে না হতেই দুইটা ছেলে এসে অহনা, আফরিন আর অন্যাকে বলে তোমাদের নিচে হল-রুমে যেতে বলেছে আদিত্য ভাইয়ারা। আফরিন প্রথম পালাতে চাইলেও পরে ভাবে আজকে পালালে কালককে কপালে শনি,রবি,বুধ,শুক্র সব আছে । তার কিছু করার নেই এখন যেতে হবেই।

নিচে হল-রুমে আফরিন যেয়ে দেখে রুম প্রচুর নোংরা। চিপস চকলেটের খোসা ফালানো। আর তার একটু দূর একটা বেন্ঞ্চে বসে কথা বলছে আদিত্য, কৌশাল, আহান । আফিরন খেয়াল করে দেখে আদিত্যর চুলগুলো ফ্যানের বাতাসের কারণে তাল মিলিয়ে উড়ছে। চোখ মুখে একটা মাসুম বাচ্চার ছাপ আছে কিন্তু এরোগেন্ট ভাবটা বেশি। গায়ের রং ফরসা। সবচেয়ে বেশি আকষর্নীয় হলো তার ডান ভ্রুর ওপরের লালচে ছোট তিলটা।

আফরিন কে আসতে দেখে আদিত্য উঠে দাড়ায় আর আফরিনের সামনে এসে বলে

—— তোমার পানিশমেন্ট হলো,, এই যে,, এই রুমটা সুন্দর করে ক্লিন করে তারপর যেখানে খুশি যেতে পারো। আর অহনা আমার সাথে আসো কথা আছে।

আফরিন বলে

—— আদিত্য ভাইয়া। আমার না ডাস্ট-এলার্জি প্লিজ অন্য কোনো কাজ!?! আদিত্য রেগে একটা ধমক দিয়ে বলে

—–চুপচাপ কাজ করো এসে যেন দেখি সব ক্লিন। কৌশাল আর আহান ওদের দেখ । অন্যাও এই কাজের সাথে জিরত ছিল। বলেই অহনাকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় । আফরিন আর অন্যা দেরি না করে কাজে লেগে যায় ।

__________

আদিত্য আর অহনা দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির পাশের লেকটার পাশে। আদিত্য বলে

—— কি হয়েছে অহনা আহানের সাথে। অহনা চুপ আদিত্য বলে

—– নিজের ভাইয়াের বন্ধু না ভেবে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো। অহনা বলে

—– ভাইয়া ওর কাছে আমার জন্য ৫মিনিট সময় হয়না। আমার লাইফ টাকে হ্যাল বানিয়ে দিয়েছে। ওর যখন ইচ্ছে হয় কথা বলে যখন ইচ্ছে হয় না বলে না। মন চাইলে কল দেয় না চাইলে না। আগে যেখানে ৩/৪ ঘন্টা কথা হতো সেখানে এখন সে ৩ মিনিট টাইমে দিতে নারাজ!!! জানো কালকে ওকে একটা মেয়ের সাথে দেখেছিলাম। কিন্তু পরে বলে ঐটা নাকি ওর বোন।

আদিত্য বলে

—— হুমম বুঝলাম। তুমি ওর লাইফে থেকে গায়েব হয়ে যাও। ওর দিকে ফিরে তাকাবে না। নিজেকে বদলে ফেলো একদম। ওর পছন্দ মতো কোনো কাজ করবে না। নিজের মতো চল। আর এভাবে ইগনোর কর যে সে নেই তোমার আসেপাশে। ওর কাছে সম্পর্কের মূল্য থাকলে চলে আসবে নয়তো শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তোমার তখন খারাপ লাগবে না। কি বলতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছ নিশ্চয়ই?

অহনা বলে

—- হুমমমম। আদিত্য বলে

——চল যাওয়া যাক।

__________

অপর দিকে নাক মুখে ধুলো যাওয়ার ফলে কাশি শুরু হয়েগিয়েছে আফরিনের। ধুলো জিনিসটা সে সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু কাশিটা বেরেই চলছে। এক পর্যায়ে। কাশতে কাশতে আফরিনের নাক- মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। আর আফরিনের একটা ফেবিয়া আছে সেটা হলো সে রক্ত দেখতে পারে না। হাতে রক্ত দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেই আস্তে আস্তে পরে যেতে চাইলে । কেউ এসে তাকে ধরে ফেলে কিন্তু কে সেটা দেখার আগেই আফরিন চোখ বুজে ফেলে……

চলবে।