#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব – ০৮
– কেননা ছবিটিতে সেই দশ বছর আগের আমাদের চার বন্ধুর ছবি।তার মানে এটাই আমার বন্ধু শুভর বাসা। কিন্তু শুভরা তো ঢাকায় থাকতো। হঠাৎ করে এখানে আসার কারণ কী?
শুভ – আরে ভাই আপনি ছবির দিকে কী ভাবছেন এইভাবে?
তানভীর – ও কিছু না।
শুভ – আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
প্লিজ বসুন।
– আমি আর মামুন ভাই গিয়ে সোফায় বসলাম। পেছন থেকে একজন মহিলা শুভকে জিগ্গেস করলো, শুভ ওরা কারা?চিনতে পারলাম না তো।
– পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি শুভর মা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে সোফা থেকে উঠে গিয়ে আন্টিকে সালাম করলাম। আমার এমন কান্ড দেখে।শুভ আর মামুন ভাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আন্টি – আরে বাবা কি করছো?কে তুমি চিনতে পারলাম না তো।
তানভীর – আন্টি আমি তানভীর।
আন্টি – কিন্তু তুই তো জেলে ছিলি। হঠাৎ আমাদের এখানে আসলি কেন?বাড়িতে গিয়েছিলি?
তানভীর – বাড়ি থাকলে তো যাবো?
আন্টি – মানে?
তানভীর – চলুন বসে কথা বলি।
– সোফায় গিয়ে বসার পর। শুভর বড় বোন মিম এসে সোফায় বসল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই আমাদের এখানে এসেছিস কেন? আমাদের ঠিকানা কোথায় পেয়েছিস?
তানভীর – এটা তোমাদের বাসা আমি জানতাম না। শুধু এইটুকু জানি যে একজন মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে। তার বাবা সেটা মেনে নিতে পারেনি।যার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।
মিম – আমার বোন মুক্তাকে কে ধর্ষন করেছে জানিস? তোর মামাতো ভাই রনি ও তাঁর বন্ধুরা।
তানভীর – হুম জানি। দুজনকে শেষ করে দিয়ে।আর বাকী দুজনকে খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেবো।
মিম – তুই ওদেরকে মেরেছিস?(অবাক হয়ে)
তানভীর – একজন ভাই তার বোনের ধর্ষনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে।
মামুন – ছোট্ট ভাই ওনাদের মনের অবস্থা এখন ভালো না। এখন এইসব না বললেই ভালো হয়।
তানভীর – হুম।
আন্টি – তার আগে বল তুই আর রাকিব কেন তোর মামাকে খুন করেছিলি?আর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিস কবে?
তানভীর – আমি বা রাকিব দুজনের মধ্যে কেউ মামাকে খুন করেনি।
আন্টি – তাহলে এতো বছর জেলে ছিলি কেন?
তানভীর – মামাকে খুনের দায়ে। কিন্তু আমারা খুন করেনি। আমাদের কেউ একজন মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে।
মিম – সেই দিন কি হয়েছিলো? সব খুলে বল।
– তারপর ওইদিন আমাদের দুজনের সাথে যা যা হয়েছিলো। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবটুকু খুলে বললাম। সাথে রাকিবের বিষয়ে বিষয়টা ও বললাম।
– সবটা শুনে মীম আপু বললো,সব না হয় ঠিক আছে। কিন্তু নুসরাত কেন তোর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলবে? আর বিয়ের বিষয়টা যদি কেউ জেনে যাই। তখন কী করবি?
তানভীর – জানি না। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানলে জানুক। কোনো সমস্যা নেই।
আন্টি – হয়তো ওকে কেউ ভয় দেখিয়েছিলো। তুই সবকিছু ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখ।আর ধন্যবাদ তোকে আমার মেয়ের ধর্ষকের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য।তোরা গল্প কর আমি তোদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছি।(বলেই আন্টি চলে গেলেন)
মীম – কী বলবো তোকে ভেবে পাচ্ছি না।সবাই না হয় তোদের কথা বিশ্বাস করেনি। কিন্তু তোর পরিবার। তোর মা বাবা ও তোর কথা বিশ্বাস করলো না কেন?
মামুন – নিজের বড় ভাইয়ের মৃত্যু। তারপর সবাই তো ওদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলো। নুসরাত ওর ছোট্ট মামা তারাও মিথ্যা কথা বলেছে।কে বা কারা খুন করেছে?সেটা না জেনে ওদের দুজনকে ফাঁসিয়ে দিলো।
– কি অদ্ভুত মানুষের মন মানসিকতা?আর কিছু ওকিল তো থাকবেই।যারা টাকার জন্য মিথ্যা কথা বলতেও দ্বিধা বোধ করেনা। মানুষ মারবে কী বাঁচবে।সেটা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই।
মীম – কিছু বলার নেই ভাইয়া।
মামুন – আর এতো দিনে আমি ওদের যতটুকু চিনেছি। আমার মনে হয় না।ওরা এইরকম কাজ করতে পারে। কিন্তু কেন ওদের দুজনকে ফাঁসিয়ে কে জানে?
মীম – এর পেছনে বড় কোনো রহস্য আছে।যেটা খুঁজে বের করতে হবে।কোনো কারণ ছাড়া তো আর এমনটা করবে না।
তানভীর – এইসব কথা এখন বাদ দাও।মুক্তা কোথায়?তাকে তো দেখলাম না।
মীম – ওর রুমে ঘুমিয়ে আছে। তুই বস আমি ডেকে আনছি।
তানভীর – ঘুমিয়ে থাকলে থাকুক। এখন আর ডাকার দরকার নেই।পরে একসময় এসে দেখে যাবো নে।
মীম – ঠিক আছে।তাহলে পরে এক সময় আছিস।
– এমন সময় আন্টি খাবার নিয়ে আসলো। এসে বললো,নে খাবার গুলো খেয়ে তারপর গল্প কর। আমি আর মামুন ভাই কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষে আন্টি জিগ্গেস করলো, তোর বিষয়ে বাড়িতে কেউ কিছু জানে না?
তানভীর – কি জানবে? আমি তো তাদের মৃত। জান্নাত কে জিগ্যেস করেছিলাম।সে বললো, আম্মু বলেছে আমি নাকী মারা গেছি।
আন্টি – কষ্ট পাবি না।দেখবি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
তানভীর – আন্টি আমাদের চলে যেতে হবে। আমি যে এখানে এসেছি। কিংবা আমার আর রাকিবের বিষয়ে।কাউকে কিছু বলবেন না।
আন্টি – ঠিক আছে। তুই কোনো চিন্তা করসি না। আমারা কাউকে কিছু বলবো না।
তানভীর – ধন্যবাদ আন্টি।আমরা এখন আসি তাহলে।কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন। আমি শুভকে আমার নাম্বার দিয়ে যাচ্ছি।
মীম – ঠিক আছে। তুই পরে কোনো এক সময় আসিস।
-তারপর মীম আপু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। এইটুকু সময়ের মধ্যে শুভ কোনো কথা বলেনি। বাহিরে এসে বললো,ভাই তুই এতোটা বদলে গেলি কীভাবে?তোকে চিনতেই পারেনি।
তানভীর – কী করবো বল?আমাকে বাধ্য করা হয়েছে বদলে যেতে। সেইদিন যদি আমার সাথে ওইসব না হতো। তাহলে হয়তো আজকে এমনটা হতো না।
শুভ – তোকে দেখে বার বার রাতের কথা মনে পড়ছে। তোর পরিচয় জানার পর তোকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু রাতের কথা ভেবে আর…..
তানভীর – হাহাহা তুই আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি।আর সবসময় থাকবি। (জড়িয়ে ধরে)
শুভ – নিশ্চুপ…..
মামুন – ভয় পাওয়ার কি আছে। ও তো আর খারাপ কিছু করছে না। শুধু অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে।
তানভীর – যাইহোক আমাকে একজায়গায় যেতে হবে। তোর নাম্বার দে পরে ফোন দিবো নে।(ছেড়ে দিয়ে)
– শুভর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে সোজা ফ্যাক্টরি চলে আসলাম। তারপর রাতে রবিন ভাইয়ের বাসায় গেলাম।গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যেতেই।নিশি ভাবি বললো,আজকে বাড়িতে না আসলেও তো পারতে?
তানভীর – আসলে ভাবি পুরোনো এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম।তাই আসতে একটু দেরি হয়েগেলো।
তিন্নি – মাম্মামকে সরি বলো।
তানভীর – কেন আমি কী করেছি?
তিন্নি – সারাদিন বাসায় আসোনি। আমার জন্য চকলেটও আনো নি।
তানভীর – ঠিক আছে।সরি,আর কখনো ভুল হবে না। এখন থেকে সময় মতো বাসায় ফিরবো। প্রতিদিন তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো। এবার খুশি তো।
তিন্নি – খুব খুশি। আর যদি কখনো ভুল করো। তখন কী হবে?
তানভীর – তুমি যা বলবে তাই করবো।
তিন্নি – মনে থাকে যেন।
তানভীর – হে থাকবে।
নিশি – তোমাকে সোজা করতে। আমার মেয়েই যথেষ্ট।(মুচকি হেসে)
জান্নাত – পাঁচ বছরে বাচ্চা মেয়ে।কি পাকনা পাকনা কথা বলে।(হাসতে হাসতে)
তিন্নি – দেখলে চাচ্চু ওরা কি বললো?
তানভীর – ওদের কথাই তুমি কান দিও না।ওরা তোমাকে দেখে হিংসা করছে।
জান্নাত – মোটেও আমরা হিংসা করছি না।
জিনিয়া – আর আপনি তো ওকে ভয় পান।
– বলেই দুজনে হাসতে লাগলো। হঠাৎ করে মামুন ভাই ফোন করে বললো, ছোট্ট ভাই তাড়াতাড়ি ফ্যাক্টরিতে আসো।খুব জরুরি একটা কাজ আছে।
(বলেই ফোন কেটে দিলো)
নিশি – কে ফোন দিয়েছিলো?
তানভীর – মামুন ভাই।আমাকে একটু যেতে হবে খুব জরুরি।
নিশি – আবার কোথায় যাবে?
তানভীর – খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো। একটা কাজ আছে।
– নিশি ভাবি কিছু বলার আগেই। আমি বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে ফ্যাক্টরিতে চলে গেলাম। ফ্যাক্টরি গিয়ে মামুনের কথা শুনে পুরো একটা গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম।
চলবে..