তোকেই ভালোবাসি পর্ব-০৯

0
2643

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব- ০৯

– মামুন ভাইয়ের কথা শুনে পুরো একটা গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। মামুন ভাই বললো,আমাদের দুজন লোক পাঠিয়েলাম ঢাকায়।যাতে তোমার বড় মামার সিকিউরিটি গার্ডকে খুঁজে বের করে। কিন্তু তারা বলছে, ছয় বছর আগে ওই সিকিউরিটি গার্ড রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে।

মামুন – এখন কী করবে?

তানভীর – কী আর করবো। একজন তো মারা গেছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যে ওকিল ছিলো।তাকে খুঁজে বের করতে হবে।

মামুন – তার আগে ওই সিকিউরিটি গার্ডের স্ত্রী ও তার মেয়ের সাথে দেখা করতে হবে।

তানভীর – কেন?

মামুন – আমাদের লোকজনদের কাছে কিছু বলেনি। কিন্তু বলেছে তোমাদের সাথে নাকী ওনাদের কিছু কথা আছে।যা একমাত্র তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে বলবে না।

তানভীর – আমার সাথে কী এমন কথা থাকতে পারে?যা আমাদের দুজনকে ছাড়া অন্য কাউকে বলবে না।

মামুন – এতো কিছু চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। চলো কালকে ওনাদের সাথে দেখা করে আসি।হয়তো কোনো গোপন কথা আছে।যা শুধু তোমাদেরই বলতে চাই।

তানভীর – ঠিক আছে। তাহলে আমারা কালকে সকালে ঢাকায় যাবো। আমাদের লোকদের বলে দিয়েছেন।

মামুন – লোকজন দিয়ে কী করবে?

তানভীর – শুভর বোনের ধর্ষক আরো দুজন বেঁচে আছে। তাদের কে কী এমনি এমনি ছেড়ে দেব?

মামুন – তাহলে শুভ ও আমাদের সাথে যাবে?

তানভীর – না। এমনিতেই ওদের মনের অবস্থা ভালো না।যা করার আমরাই করবো। শুভ আমার বন্ধু।ওর বোন মানে আমার ও বোন।

মামুন – ঠিক আছে। আমাদের লোকদেরকে বলে দিবো। কিন্তু নুসরাতের কী হবে?

তানভীর – নুসরাতের কী হবে মানে?

মামুন – এমপির ছেলে অনিকের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তিন দিন পর নুসরাতের বিয়ে।কিন্তু তারা বড় ধরণের কোনো অনুষ্ঠান করবে না। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি।

তানভীর – এক মেয়ে বিয়ে দিতে না পেরে। আবার আরেক মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছে। কেন…? ওর মাঝে এমন কি পেয়েছে?
(রেগে গিয়ে)

মামুন – এখন মাথা গরম করলে চলবে না।মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। এক কাজ করো তুমি ওকে তুলে নিয়ে আসো। তারপর বিয়ে করে নাও।

তানভীর – আমি নুসরাত কে বিয়ে করবে যাবো কেন? ওইদিন নুসরাত ও তো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে।

মামুন – সেই জন্যই তো বললাম। সবকিছুর প্রতিশোধ নিবে। ভুলে যেওনা যাদের কারণে দশ বছর জেলে ছিলে। তাদের মধ্যে নুসরাত কিন্তু একজন।

তানভীর – ঠিক আছে। আমি ওকে বিয়ে করবো। শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।(কিছুক্ষণ ভেবে)

মামুন – তাহলে কালকে ওনাদের সাথে দেখা করে এসে। বিকালে নুসরাত একটা পার্কে যাবে। ওখান থেকে তুলে নিয়ে বিয়েটা করে নিবে। তারপর রাতে বাকি কাজ শেষ করে। আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে আসবো।

তানভীর – নুসরাত পার্কে যাবে। আপনি জানলেন কি করে?

মামুন – প্রতিদিনই কিছু বন্ধুদের নিয়ে পার্কে বসে আড্ডা দেয়।

তানভীর – ঠিক আছে।যা করার সাবধানে করেন।আমাদের কয়েকজন লোক ছাড়া যাতে কেউ জানতে না পারে।

মামুন – এইসব নিয়ে কোনো চিন্তা করো না।

তানভীর – ঠিক আছে। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।কাল সকালে সবাইকে নিয়ে রেডি হয়ে থাকবেন। এইসব রাকিব কে জানাবেন না।

মামুন – ঠিক আছে।

– তারপর মামুন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। সোজা বাসায় চলে আসলাম। বাসার ভিতরে যেতেই নিশি ভাবি বললো,কি এমন কাজ ছিলো? আমার কথা শুনাতে মতো সময় তোমার ছিলো না।

তানভীর – সরি ভাবি। আসলে মামুন তাড়াতাড়ি যেতে বললো তো তাই আর কি।

নিশি – হুম।চলো রাতের খাবার খাবে।সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। একসাথে খাবে বলে। কিন্তু তোমার তো সেই সময় নেই। তিন্নি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। কাল সকালে বুঝতে পারবে।

তানভীর – তিন্নি, জান্নাত সবাই খেয়েছে?

নিশি – হুম সবাই খেয়েছে। তা হঠাৎ করে জান্নাতের এতো খেয়াল রাখছো।ব‍্যাপার কী?

তানভীর – কিছু না।

– রাতে রং খাবার খেয়ে। ভাবির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তারপর আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর রাকিব এসে বললো, সারাদিন কোথায় থাকিস?

তানভীর – কেন কী হয়েছে?

রাকিব – কে কাকে ধর্ষন করেছে?তার জন্য দুজনকে মেরে দিলি। আবার দুজন বাকী। সেটাও কাগজে দেখে দিয়ে এসেছিস।
যদি কোনো ঝামেলা হয়। তখন কী করবি?

তানভীর – কে কাকে ধর্ষন করেছে মানে? শুভর বোন মুক্তাকে রনি ও তার তিন মিলে ধর্ষণ করছে।আংকেল সেটা মেনে নিতে পারেনি। যার কারণে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। একজন ভাই হিসাবে আমি সেটা কখনোই মেনে নেবো না।

রাকিব – শুভ তো ঢাকায় থাকে। আর রনি ভাইয়া এইসব করতে যাবে কেন?

তানভীর – আগে থাকতো। এখন নারায়ণগঞ্জ চলে এসেছে। আর রনিকে আমার সামনে কোনোদিন ভাই বলে পরিচয় দিবি না। কালকেই ওর শেষ দিন।(রেগে গিয়ে)

রাকিব – ঠিক আছে। তোর যা খুশী কর। আমি কিছু বললে তো কোনো লাভ নেই। কালকে রিয়াদেরকে নিয়ে ঢাকা যেতে বলেছে।তোকেও নিয়ে যেতে বলেছে।

তানভীর – আমি যেতে পারবো না। কালকে আমার কিছু কাজ আছে।

রাকিব – কিন্তু নুসরাতের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।কিছু একটা কর। রিয়া বললো নুসরাত এখনো ও নাকী তোকে ভালোবাসে। কিন্তু বাড়িতে ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না।

তানভীর – তো আমি কী করবো। যখন আমার গালে থাপ্পর মেরে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে। তখন এতো ভালোবাসা কোথায় ছিলো? শুধু ওর কারনে আব্বু আম্মু আমার কথা বিশ্বাস করেনি।

রাকিব – প্লিজ ভাই এইসব ভুলে যা। ওর বিয়েটা হতে দিস না। তাহলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে।

তানভীর – কী সমস্যা হবে শুনি?

রাকিব – সুইসাইড করবে।

তানভীর – তুই এতো কিছু জানলি কীভাবে?

রাকিব – রিয়াকে ফোন করেছিলো। অনেক কান্নাকাটি করছে ফোনে।এটাও বলেছে তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।যদি কাউকে বিয়ে করতে হয়।তাহলে তোকেই বিয়ে করবে।

তানভীর – বাহ্ দুদিনে এতো ভালোবাসা।এতো কিছু জেনে গেছিস।রিয়া তোকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছে তো?

রাকিব – হুম। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। জিগ্যেস করার পর বলেছে।

তানভীর – ঠিক আছে। তুই কালকে ঢাকায় যা। আমার কিছু কাজ আছে। আমিও ঢাকাতে যাবো।কিন্তু তোদের সাথে যেতে পারবো না।

রাকিব – তিন দিন পরে নুসরাতের বিয়ে।কিছু একটা করিস। সত্যিই যদি কিছু একটা করে বসে।তাহলে কিন্তু……

তানভীর – অনেক রাত হয়েছে। গিয়ে ঘুমিয়ে পর।কাল সকালে হয়তো তোর সাথে দেখা না হতে পারে।কোন সমস্যা হলে ফোন দিয়ে জানাবি। নুসরাতের বিয়ের আগ পর্যন্ত একটু সাবধানে থাকিস। এখন যা…….

রাকিব – ঠিক আছে।ওখানে যাওয়ার আগে ফোন করসি।

– রাকিব চলে যাওয়ার পর। রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে। ভাবির কাছে বলে। গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম।

– ফ‍্যাক্টরির সামনে থেকে সবাইকে এক সাথে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি,মামুন ভাই আর দুজন লোক একটা গাড়িতে।আর বাকী ছয়জন লোকজন অন‍্য একটা গাড়িতে।

– কয়েকঘণ্টা পর ঢাকায় পৌঁছে ।ঠিকানা অনুযায়ী ওই সিকিউরিটি গার্ডের বাড়িতে গেলাম। ওনার স্ত্রীর সাথে দেখা করে আমার পরিচয় দেওয়ার পর।আমাকে দেখে ওনার স্ত্রী কাঁদতে শুরু করলেন। কিছুক্ষন পর ওনার মেয়ে এসে একটা চিঠি এনে আমার হাতে দিলেন।

চলবে।