তোমাতেই আমি পর্বঃ০৫

0
1969

#তোমাতেই_আমি
#পর্ব_০৫
#Tabassum_Kotha

দিয়াদের বাড়িতে দিয়ার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে অর্ণব। দিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। গত ২৫ মিনিট যাবত অর্ণব একই ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে বসে আছে। যেনো সে অনেক বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে আর সংকোচে সেটা দিয়াকে বলতে পারছে না।

কিছুক্ষণ পর সংকোচ টা কিছুটা কাটিয়ে উঠে অর্ণব বলতে শুরু করে,
— লুক দিয়া! আমি তোমাকে যা বলবো এখন তার জন্য আমি আগেই সরি বলে নিচ্ছি। তোমাকে এভাবে ঠকাতে চাই নি আমি। কিন্তু আমি নিরুপায়।

— কি হয়েছে অর্ণ? এভাবে বলছো কেনো?

— দিয়া ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার স্বভাব আমার নেই। স্ট্রেইটভাবে বলছি। আই লাভ সামওয়ান এলস্। জানি তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর এখন এঙ্গেজমেন্টের কয়েকদিন আগে বিয়ে ভাঙাটা তোমাকে ঠকানো হচ্ছে। কিন্তু আমি মীরাকে ভালোবেসে ফেলেছি। মীরাকে ভালোবেসে তোমাকে বিয়ে করা মানে তোমার আর আমার দুজনের জীবনই নষ্ট করা।

— অর্ণ আমার ঠিক কি উত্তর দেওয়া উচিত আমি জানি না।

— আমি জানি দিয়া আমি তোমার অপরাধী হয়ে যাবো আজকের পর। কিন্তু বিশ্বাস করো আজকে যদি আমি স্বার্থপর না হই সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে আমাদের দুজনকে। আমি মীরাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তেই। মীরা ব্যতিত অন্যকাউকে ভালোবাসা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।

— অর্ণ আমি! আমাদের বিয়ে টা!!

— দিয়া এমন নয় যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি তাই বিয়ে করছিলাম। তোমাকে বিয়ে করার পিছনে কারণ ছিল শুধুই বিজনেস ডিল। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি বিজনেস ডিল জীবনের একটা অংশ। জীবন নয়। আই হোপ তুমি বুঝতে পারবে। তোমার বাবা কেও বিষয় টা বুঝিয়ে দিও, এরপর সে রাগ করে যদি আমার কোম্পানিতে ইনভেষ্ট না করতে চায় তাহলে আমি ফোর্স করবো না। লাইফে প্রথম বার আমার স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করছে, আমার সুখ এবার আমার চাই। সরি আগেইন দিয়া। জানি অন্যায় করছি তোমার সাথে কিন্তু আমি হেল্পলেস।

— অর্ণ! তোমার আর আমার ফ্রেন্ডশীপ আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর উপরই তৈরি হয়েছিল। তুমি চিন্তা করো না আমি বাবাকে বুঝিয়ে নেবো।

— থ্যাংকস্ দিয়া। আমার প্রব্লেমটা বোঝার জন্য।

— সে না হয় ঠিক আছে কিন্তু এই মীরা টা কে? পরিচয় করাবে না?

— তুমি দেখবে মীরাকে?

— কেনো নয়। মিট করাও একদিন।

— চলো আজকেই দেখা করাই তোমাকে মীরার সাথে।

অর্ণব আর দিয়া অর্ণবের বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা হলো। অর্ণব কার ড্রাইভ করছে ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে। আজ সে ভীষণ খুশি। এতো বছরের কষ্ট, রাগ, ঘৃণা, প্রতিশোধ সব ভুলে নতুন ভাবে জীবণ শুরু করবে সে। সে মীরার প্রতি অনেক অন্যায় করেছে। মীরার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। কতো কষ্ট দিয়েছে নিজের মনের শান্তির জন্য। মীরা কি সব ভুলে তাকে মেনে নেবে!! কেনো নেবে না! অর্ণব ভালোবাসে মীরাকে। এই ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই। যতোটা ভালোবেসে নিজেকে ভুলে যাওয়া যায় ঠিক ততোটাই ভালোবাসে সে মীরা কে। মীরার কাছে ক্ষমা চাইবে সে তার সব অন্যায়ের জন্য। মীরাকে রাজী করাবে সে, মীরার মন জয় করবে। মীরার মনে তার জন্য ভালোবাসা জাগিয়ে তুলবে। মীরার হাত ধরেই অর্ণব তার অতীত থেকে বেরিয়ে আসবে। কথা গুলো বলেই একটা মুচকি হাসি হাসলো অর্ণব।

গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে দিয়া। কিছুক্ষণ পরপর আড়চোখে দেখছে অর্ণবকে। মাঝে মাঝে হয়তো দুই এক ফোঁটা চোখের পানি অর্ণবের আড়ালে মুছে ফেলছে। বিয়েটা অর্ণব আর তার বাবার জন্য বিজনেস ডিল হলেও সে অর্ণবকে পছন্দ করতো। এইভাবে অর্ণবকে হারিয়ে ফেলবে এটা সে বুঝতে পারে নি। কষ্ট হচ্ছে তার কিন্তু কিছু করার নেই। সে জানে অর্ণব তাকে ভালোবাসে না।তাহলে থাক না অর্ণব অন্য কাউকে নিয়ে সুখে।

দিয়ার ভাবনায় ছেঁদ ঘটিয়ে দিয়ে গাড়িটা ব্রেক কষলো অর্ণবের বাড়ির সামনে এসে। মীরাকে দেওয়ার জন্য অর্ণব লাল গোলাপ এনেছে অনেকগুলো। সেগুলো হাতে নিয়ে সরাসরি দুতলায় মীরার ঘরের সামনে চলে গেলো অর্ণব। দরজা টা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় দিয়াকে একটু ওয়েট করতে বলে আস্তে আস্তে নক করতে শুরু করলো সে। কিছুক্ষণ নক করার পর দরজাটা ভিতর থেকে খুলে দিলো।

দরজা খুলতেই অর্ণবের হাসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে একটা ছেলে দরজা খুলে দিয়ে অর্ণবকে সামনে দেখতেই সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় অর্ণব ছেলেটাকে ধরতেও পারলো না। কে ছিল ছেলেটা কি উদ্দেশ্যে এসেছিল তার কিছুই জানতে পারলো না অর্ণব। মীরার ঘর থেকে লোকটা বেরিয়েছে, মীরার কোনো ক্ষতি করেছে কি না ভাবতেই অর্ণবের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। গোলাপের তোড়া টা নিচে ফেলে দিয়ে অর্ণব হুরমুড়িয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢুকে মনে হচ্ছে অর্ণবের বুকে কেউ ধারালো ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে।

বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে মীরা। পরনের শাড়িটা মাটিতে পরে আছে। চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে। মীরার এই অবস্থা দেখে মুহূর্তেই অর্ণবের চেহারার রং পাল্টে যায়। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, কপালের রগটা ফুলে উঠেছে। সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। অপরিচিত সেই লোকটার ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে যাওয়া আর মীরার এই অবস্থা দেখে আপাত দৃষ্টিতে যা ভেবে নেওয়া যায় সেটাই ভেবে নিয়েছে অর্ণব। রাগে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে অর্ণবের মীরার কাছে থেকে এতো বড় ধোঁকা সে মেনে নিতে পারছে না। অর্ণবের অবস্থা বেগতিক দেখে দিয়া সেখান থেকে চলে গেলো।

অর্ণব ঘরের আশেপাশে কিছু একটা দেখে ওয়াশরুমে গিয়ে এক বালতি পানি এনে মীরার গায়ে ছুড়ে মারলো। আচমকা এতো পানি গায়ে পরায় লাফ দিয়ে উঠলো মীরা। ভেজা শরীর নিয়ে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে অর্ণবের দিকে। হয়তো জানতে চাচ্ছে হঠাত্ পানি এলো কোথা থেকে।

অর্ণবের হাতে বালতি দেখে বুঝতে পারলাম একটু আগের সুনামির কারণ টা সেই। কিন্তু আমি হঠাত্ কি ভুল করলাম যার জন্য এভাবে আমাকে ভিজিয়ে দিলেন। নিজেকে সামলে উঠে দাড়াতেই খেয়াল করলাম আমার পরনে শাড়ি নেই। শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট। দুই হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে নিচে তাকাতেই দেখলাম শাড়িটা নিচে পরে আছে। কিন্তু আমি ঘুমানোর আগে শাড়ি পরেছিলাম। সেই শাড়িটা খুললো কিভাবে। আর অর্ণবই বা এমন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেনো? উনার দিকে তাকাতে পারছি না, চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই কাঁচা খেয়ে ফেলবেন আমাকে। তবুও অনেকটা সাহস জুগিয়ে কিছু বলে উঠার আগেই আমার গালে স্বজোরে একটা চড় মারলেন অর্ণব। চড়ের মাত্রাটা এতোটাই তীব্র ছিল যে আমি ছিটকে নিচে পরে গেলাম। ঠোঁটের কোনায় ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। ব্যথায় আমার চোখে পানি এসে পরেছে। নিজেকে সামলে মাথাটা একটু উঁচু করতেই অর্ণব আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে আমাকে উপরে তুললেন। চুলগুলো এতো জোরে টেনে ধরেছেন মনে হচ্ছে এখনি ছিড়ে যাবে।

— অর্ণব ছাড়েন আমাকে, ব্যথা পাচ্ছি আমি। প্লিজ ছাড়েন!

— ব্যথা পাচ্ছিস তুই! যেই ব্যথা তুই পাচ্ছিস তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি ব্যথা আমাকে দিয়েছিস। আমি কি তোর জন্য যথেষ্ট ছিলাম না! এতোই যখন তোর শরীরে আগুন ধরেছিল আমাকে বললেই পারতিস। একবারেই সব আগুন নিভিয়ে দিতাম।

— ছিঃ অর্ণব আপনি এগুলো কি বলছেন! মুখে যা আসছে তাই বলছেন! আমাকে কি আপনার এরকম মেয়ে মনে হয়!!

— মনে হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না কারণ সব আমি নিজের চোখে দেখেছি। এসব করে আমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল! জানো তুমি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আজ তাড়াতাড়ি এসেছিলাম তোমার কাছে আগের সব ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে তোমাকে প্রপোজ করতে। কিন্তু দেখো আমার ভাগ্য! তোমার আসল রূপ টা দেখা হয়ে গেলো আমার। আজকে তাড়াতাড়ি না এলে তো জানতেই পারতাম তুমি এতোবড় একটা চরিত্রহীন। তুমি একটা নষ্টা মেয়ে।

— চুপ করুন। এতো নোংরা কথা আপনার মুখে আটকাচ্ছে না?

— তুমি আমার বাড়িতে আমার চোখের আড়ালে নষ্টামি করে বেড়াতে পারবে আর আমি তোমাকে নষ্টা বললেই সেটা নোংরা কথা!!

— ছিঃ আপনি এসব কেনো বলছেন? কি করেছি আমি?

— কি করেছো সেটাও আমার মুখ থেকে শুনতে চাও!

— আমি কিছুই করি নি। এসব আপনি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছেন। আমাকে নতুন ভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য। হয়তো আমাকে টর্চার করার কারণ শেষ হয়ে গিয়েছিল আপনার কাছে।

— তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য নও। তুমি একটা চরিত্রহীন। তোমার হাত ধরে আমি আলো তে আসতে চেয়েছিলাম। আমার জীবন নতুন করে সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি ছিঃ! তুমি এসবের যোগ্যই নও।

অর্ণব আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শাড়িটা হাতে নিয়ে আমাকে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে গেলেন। উনার টানা হ্যাঁচড়ায় আমার আমার হাতে পুড়া ঘা এ ব্যথা লাগছে। আমার হাজার আকুতি মিনতি শুনেও উনি থামলেন না। একটা অন্ধকার ঘরে আমাকে রেখে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমার অন্ধকারে অনেক ভয় হয়। আমি বারবার উনাকে ডাকলাম তবুও উনি দরজা টা খুললেন না।

অন্ধকারে ভীষণ ভয় করছে আমার। বারবার মনে হচ্ছে কেউ আশেপাশে আছে। আবদ্ধ ঘর হওয়াতে নিশ্বাসটাও আটকে আসছে।

?

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে স্মোক করছে অর্ণব। চারটা সিগারেটের শেষাংশ নিচে পরে আছে। পুরো প্যাকেট সামনে নিয়ে বসেছে। পিছনে ঘরটাতে ড্রেসিং টেবিল আর সেন্টার টেবিলের কাঁচ ভেঙে পরে আছে। ফুলদানিগুলো ভেঙে নিচে পড়ে আছে। বাইরের কেউ ঘরটা দেখলে বলবে নিশ্চিত টর্নেডো হয়েছিল।

দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে অর্ণবের। ভিতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে তার। এতোবছর পর আবার সেই দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছে। মীরার দেওয়া ধোঁকা সে মেনে নিতে পারছে না। মীরাকে ভালোবাসা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছে অর্ণব, কেনো সে মীরাকে ভালোবেসে ফেললো। মীরা শুধুই ঘৃণার যোগ্য।

১৯ বছর আগের সেই দিনটা চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে অর্ণবের। তার ৮ম জন্মদিনের রাতে তার মায়ের গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকা লাশটার দৃশ্য তার চোখে ভাসছে।













অর্ণবের মা অনু আর বাবা অঙ্কুর চৌধুরী প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কারণ অঙ্কুর আর অনুর বড় ভাই দুর্ভাগ্যক্রমে চিরশত্রু ছিল। যদিও এতে কারোই দোষ ছিল না। অঙ্কুর ছাত্র থাকা কালীন রাজনীতিতে জরিয়ে পরে, যার জন্য মারামারি খুব সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাড়ায় তার জন্য। আর এই জিনিসটাই অনুর ভাই আর বাবার চোখের শূল হয়ে যায়। হাজার চেষ্টা করেও যখন অনুর মন থেকে অঙ্কুর কে সরাতে পারে না তখন অনুর বাবা তার বিয়ে ঠিক করে দেয়।

অঙ্কুরকে ভুলতে না পেরে বিয়ের দিন অঙ্কুরের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় অনু। বরযাত্রীর সামনে যখন জানা জানি হয় মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে, লজ্জায় সবার মাথা নিচু হয়ে যায়। অনুর বাবা অপমান সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে সেখানেই মারা যান। বিয়ে বাড়িতে নেমে আশে শোকের ছায়া। সেদিনরে পর থেকে বাবার মৃত্যুর জন্য অনুকেই দায়ী করে তার ভাই।

অঙ্কুরের হাত ধরে এক অজানা শহরে এসে সংসার শুরু করে অনু। অনুর কথা রেখে অঙ্কুরও রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সৎ পথে উপার্জন শুরু করে। দুজনে নিজেদের আলাদা একটা দুনিয়া গড়ে নেয়। বছর ঘুরতেই তাদের ঘর আলো করে অর্ণব পৃথিবীতে আসে। হাসতে খেলতে সময় পাড় হতে থাকে তাদের। এতোকিছুর মধ্যেও দিন শেষে অনুর মনে শান্তি ছিল না। হয়তো তার বাবা ভাইকে কষ্ট দেওয়ার অনুশোচনা ছিল।

অর্ণবের ৮ম জন্মদিনের দিন অনেকটা সাহস আর বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে অনু তার বাবার বাড়ি গিয়ে উঠেছিল। সাথে অর্ণবও ছিল। বাবাকে তার নাতি দেখাতে চেয়েছিল সে। অঙ্কুরের বিজনেসে তখন অনেক লাভ হচ্ছিল, নিজেদের বাড়ি নিজেদের গাড়ি সব ছিল। এক গাড়ি ভর্তি উপহার নিয়ে গিয়েছিল অনু। সে জানতো তার বাবা রাগ করবেন অনেক। কিন্তু তার ভাইয়া সব সামলে নেবেন।

বাবার বাড়িতে গিয়ে অনুর ধারণা সম্পূর্ণরূপে পাল্টে যায়। বাবার বাড়ি আর বাবার বাড়ি নেই। এখন সেটা ভাইয়ার বাড়ি। ভাইয়াও আর অনুর সেই আগের ভাইয়া নেই। যেই ভাইয়ের চোখে অনু নিজের জন্য ভালোবাসা-আদর দেখতো সেই চোখে আজ ঘৃণা এসে ভর করেছে। যেই অনু একসময় তার ভাইয়ের কলিজার টুকরা ছিল সেই অনু আজ খুনি। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সে।

চলব..