তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-২৮+২৯

0
620

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৮

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।একদম হালকা!ইলশেগুড়ি যাকে বলে!দুপুরের এ সময়টার বৃষ্টি মানেই মন ভালো হয়ে যাওয়া।কিন্তু মন ভালো নেই আমার।ভিজতে ইচ্ছে করছে।এই এটুকো বৃষ্টিতে ভেজা সম্ভব না।কোনোমতে শুধু চোখেমুখে একটুআধটু ছিটেফোটা লাগছে।বেডের দিকে তাকালাম।শুদ্ধ উপুর হয়ে শুয়ে।ঘুমিয়েছেন হয়তো।রাতটা তার বাহুডোরেই কেটেছে আমার,দিনটাও কপালে তার ঠোটের স্পর্শেই শুরু হয়েছে।সকালবেলায় শেহনাজ মন্জিলের সবার সাথে কথা বলেছি।আব্বু ব্যতিত।এ নিয়ে একটু অন্যমনস্ক থাকতে চাইলেও থাকতে দেননি শুদ্ধ।ব্যালকনিতে পিছন থেকে জরিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষন।চোখ বন্ধ করে তার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে ওভাবেই ছিলাম।এতেই শান্তি!এতেই বাকিসব ভুলতে বসি আমি!এটুকোতেই চলবে আমার!

আস্তেধীরে এগিয়ে গিয়ে উকি দিলাম।শুদ্ধ সত্যিই ঘুমিয়েছেন।কেমন যেনো অদ্ভুতভাবে রাগ উঠলো।এখন ঘুমোনোর কি দরকার?বসে বসে আমার সাথে দু একটা কথা বললেও তো পারে!তাপসী আপু,ইশান ভাইয়ারা তো তাই করে।দুজনেই কতো রোমান্টিক।একসাথে ভেজে বৃষ্টিতে।যীনাত আপু,মাহির রুমে দরজা লক।ওরা নয় ঘুমালোই,মানলাম।এসময় আপনার ঘুম আমি মানতে পারছি না শুদ্ধ।হয় বৃষ্টিতে ভিজবো,নয় আপনার সাথে গল্প করবো!কোনোকিছু না ভেবে পাশের পানির গ্লাস থেকে আঙুলের ডগায় পানি নিয়ে ছুড়ে মারলাম তার মুখে।

শুদ্ধ তৎক্ষনাৎ চোখমুখ কুচকে তাকালেন আমার দিকে।কি হলো তার জানি না,ঝড়ের বেগে উঠে দাড়িয়ে সোজা কোলে তুলে নিলেন আমাকে।সোজা ওয়াশরুমে নামিয়ে দিলেন উনি।হা করে তাকিয়ে রইলাম তারদিক।এক পর্যায়ে শাওয়ার অন করে দুহাত দেওয়ালে চেপে ধরলেন শুদ্ধ আমার।অত্যন্ত রাগী গলায় বললেন,

-হোয়াট?

চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি।পানি লাগছে চোখেমুখে।ভিজে যাচ্ছি পুরোটাই।হাত দেয়ালে চেপে ধরেই শুদ্ধ সামনে এসে দাড়ালেন আমার।আটকে দিয়েছেন ঝর্নার পানি।পুরোটাই তার পিঠে বাধা পেয়ে ঝরে যাচ্ছে।ঝাপসা চোখে দেখলাম উনিও পুরোপুরি ভিজে গেছেন।নেভি ব্লু টি শার্টটা ভিজে লেগে আছে গায়ের সাথে একদম।সামনের চুলগুলো থেকে পানি পরছে।রাগে নাকটা হালকা লাল দেখাচ্ছে।এই ঘুম থেকে তুলে দেওয়ার জন্য এতো রাগ?এতোবড় শাস্তি?এবার আমিও বাজখাই গলায় বললাম,

-হোয়াট?এভাবে কেনো….

-এতো শখ কেনো বৃষ্টিতে ভেজার?জ্বর হলে?

ও!মিস্টার বর একারনে ক্ষেপেছেন।টের পেয়েছেন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিলো আমার।ঠোট টিপে হাসি আটকিয়ে বললাম,

-হ্যাঁ।খুব শখ!তো কি করবেন আপনি?আমার তো….

শুদ্ধ সামনে থেকে সরে গিয়ে আবারো ভিজিয়ে দিচ্ছেন আমাকে।পিটপিট করে কোনোমতে তাকাতে যাবো,উনি দ্বিতীয়বারের মতো সামনে দাড়ালেন।

-শখ মিটেছে?

হাত খানিকটা ঝাড়া মেরে‌ বললাম,

-না!

শুদ্ধ হাত ছেড়ে কোমড় জরিয়ে ধরলেন এবার আমার।পানির ফোটাগুলো তার চোখমুখ ছুইয়ে এসে আমাকেও ছুইয়ে‌ দিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম ওই সিক্ত চেহারার দিকে।উনি বললেন,

-নাও?

-উহুম!

-জ্বর বাধানোর ইচ্ছা হয়েছে?

-হুম।ইনফ্যাক্ট আরো অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইচ্ছে‌ করছে।

একটু আটকে থেকে আমাকে ছেড়ে‌ দিলেন শুদ্ধ।চোখ বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালেন।তার চোখের কোনা বেয়ে পানি গরাতে দেখলাম।মন বললো,ঝর্নার পানি ছিলো না ওটা।তার চোখের পানিই‌ ছিলো।ভেতরটা ধক করে উঠলো আমার।কি হলো ওনার?এই অসুস্থতার কথায় কষ্ট পেয়েছেন উনি?নাকি আমি যা বুঝাতে চেয়েছিলাম তা মানতে কষ্ট হচ্ছে ওনার?নিশব্দে তার বুকে গিয়ে মাথা রাখলাম।একহাতে জরিয়ে আরেকহাতে উনি মুঠো করে ধরলেন আমার চুল।আবার ছেড়ে দিয়ে শান্তভাবে বললেন,

-মাথা মুছে ফেল!

পিছিয়ে দাড়ালাম।শুদ্ধ এক পা দেয়ালে ঠেকিয়ে নিচদিক তাকিয়ে বললেন,

-তোয়ালে নিয়ে আয়!মাথা মোছ!

কিছু না বলে চুপচাপ শাওয়ারটা অফ করে দিতে যাচ্ছিলাম।শুদ্ধ ঠান্ডা গলায় বললেন,

-থাক ওটা!

বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে।তোয়ালে নিয়ে‌ দেখি শুদ্ধও বেরিয়েছেন ভেজা শরীরেই।আমি দাড়িয়ে শুদ্ধর দিকে এগোতে যাবো,উনি বললেন,

-চেন্জ করে আয়!

এবারও কথা না বাড়িয়ে তাই করলাম।এগোচ্ছিলাম তার দিক।উনি পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন।অনেকটা সময় পর চেন্জ করে বেরিয়ে এলেন।ব্যালকনির দিকে যাচ্ছিলেন উনি।আমিই হাত ধরে ফেললাম তার।ছলছল চোখে সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-কি হলো আপনার?

….

-সরি।ভুল হয়ে গেছে!আর ভিজতে চাইবো না বৃষ্টিতে।

….

-সরি বললাম তো!

….

-আর কোনোদিন অসুস্থ্যতার কথা‌ বলবো‌ না!সত্যি বলছি!

বলতে বলতেই কান্না করে দিলাম আমি।এবারে শুদ্ধ জরিয়ে ধরলেন আমাকে।বললেন,

-তোকে তো বলেছি,তোর কান্নায় আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যায়।পাগল হয়ে যাই আমি।তোর আর্তনাতের কথা ভাবতেও পারি না,তাতে তো আমার পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে।তোর কষ্টের কথা‌ শুনলেও আমার মৃত্যুযন্ত্রনা হয় সিয়া।শুনতে পারি না তোর কোনো কষ্টের কথা।কেনো বুঝিস না তুই?কেনো?কতোভাবে বোঝাবো তোকে?আর কতোভাবে?

চুপ করে রইলাম।শুদ্ধও চুপ।কিছুটা সময় পর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিলাম।একটু কাদোকাদো মুখ করে বললাম,

-আমার চোখদুটো কাপছে শুদ্ধ!

উনি বুক থেকে সরিয়ে চোখের দিক তাকালেন আমার।ভালো করে দেখে বললেন,

-কই?কাপছে না তো!

-চোখের কি মাথা খেয়ে নিয়েছেন?

-হোয়াট?

-কিসের হোয়াট?হ্যাঁ?কিসের হোয়াট?কাপছে না?আমার চোখ সত্যিই কাপছে!দেখুন ঠিকমতো!কাপছে আমার চোখ!দেখুন!

-ঠিকমতোই দেখলাম তো।নাহ্!কাপছে না তোর চোখ!

-ভালো করে দেখুন না!

-হ্যাঁ,ভালো করেই….

এবার আমি তার বুকের কাছের শার্ট মুঠো করে নিলাম।রাগ নিয়ে বললাম,

-ভুলোমন লোক একটা!এই বর?মনে নেই আপনার?আমার চোখ কাপলে আপনার কি করতে ইচ্ছে করে?সে রাতে পদ্মপুকুরে তো এতোএতো….

আর বলতে পারলাম না।ওনার শার্ট ছেড়ে নিচদিক তাকিয়ে নিজের জামাই খামচে ধরলাম।চোখ বন্ধ করে জিভ কাটলাম।এটা কি করলাম আমি?চেয়েছিলাম ওনাকে মনে করিয়ে দিতে।আর রেগে গিয়ে নিজেই এভাবে মুখফুটে…ছিঃ ছিঃশুদ্ধ কি ভাবছেন?কিভাবে তাকিয়ে আছেন উনি এখন আমার দিকে?তাকাতে পারবো তারদিক?একটু চুপ থেকে শুদ্ধ দুগাল ধরলেন আমার।মাথা উচু করে ধরে আলতোভাবে আমার দু চোখে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।দুহাতে মুখ ঢেকে নিলাম আমি।যেটুকো ছিলো,অনেক ছিলো।উনি বলতে শুরু করলে সেটা সহ্য করা দুর্বিসহ আমার।এলোমেলো হয়ে যাওয়ার ভয়টা শুরু হয়ে যায় হঠাৎ করেই।আর বেশিক্ষন হয়তো সম্ভব ছিলো না তার মুখোমুখি থাকা!একদমই না!

_______________

তাপসী আপু,ইশান ভাইয়া,তায়্যিব,ইমরোজ ভাইয়া,রিফাত ভাইয়া ওরা বিকেলেই চলে গেছে।শুদ্ধও ইমরোজ ভাইয়ার সাথেই গেলেন কোথাও।তামিম ভাইয়ার নাকি কিছু কাজ আছে ঢাকায়,ও রয়ে গেছে।যীনাত আপুকে যেতে দেইনি।আমি মাহি আর যীনাত আপু মাহির ঘরে বসেছিলাম।মুলত টিপার্টি ছিলো তিনজনের।একথা সেকথা বলতে বলতে মাহি বললো,

-প্রেম জিনিসটা কেমন গো যীনাত আপু?

-আমায় কেনো বলছো?এই যে বিখ্যাত লাভারের বিখ্যাত বউ,একে বলো!

-ও আমার বোঝা শেষ!ইনসিয়া ভাবি তো আমার চেয়েও এ বিষয়ে মাথামোটা!নইলে এসময় বরকে ছেড়ে কেউ আমাদের সাথে বসে আড্ডা দেয়?

কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলাম শুধু।যীনাত আপু বললো,

-লাইফে সিক্রেট লাভার মিলা,তো লাইফ জিঙ্গালালা!এদের ভালোবাসাটা একপাক্ষিক হয় তো,অপেক্ষার ফল তো,তাই এরা পাগলের মতো ভালোবাসতে জানে।শুদ্ধকেই‌ দেখো না,ও তো….

-এসেছে লাভগুরু!তোকে কে বলছে শুধু সিক্রেট লাভাররাই এতোঅতো ভালোবাসে?জেনারেল লাভাররাও অনেক ভালোবাসে।বফ তার গফকে,বর তার বউকে!

তামিম ভাইয়ার গলা শুনে দরজায় তাকালাম।ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার মাথায় চাটি মেরে বললো,

-বেছে বেছে এটাকেই বক্তা হিসেবে বসিয়েছিস?তোদের কমন সেন্স তো গ্যায়া!যেটুকো জানতি,সেটুকোও কথার মারপ্যাচে ফেলে উল্টেপাল্টে দেবে যীনাত।আগেই বলেছি,ওর ভোলাভালা চেহারার ফাদে পা দিবি না!

যীনাত আপু তেলে‌ বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

-শোনো ভাইয়া,পুরো শেহনাজ মন্জিল জানে যীনাত কেমন মেয়ে!এইসব ফালতু কথায় আমাদের বোনদের মধ্যেকার সম্পর্ক নষ্ট করতে আসবা না একদম!

-ওওওলে!যীনাত কেমন মেয়ে!জানে তো সবাই।ইনসুও জানে।বল ইনসু?যীনাত কেমন মেয়ে?বল তো বোনু,যীনাত ভিজে বেড়াল কি না!বল তো!

-কিহ্?আমি ভিজে বেড়াল?তুমি তাহলে শকুনি!

আমি আর মাহি রোবটের মতো ঘাড় নেড়ে একবার এরদিক,একবার ওরদিক তাকাচ্ছি।এর আগেও এদের ঝগড়া দেখেছি,তবে ইদানিং একটু বেশিই বেড়ে গেছে।আর প্রতিবার তামিম ভাইয়াই আগেআগে ঝগড়া বাধাতে চলে আসে।এভাবে চলতে থাকলে পরে যীনাত আপুই আমাকে ধোলাই দেবে,ওর হয়ে কিছু বলি নি কেনো!তাড়াতাড়ি মাঝখানে দাড়িয়ে গিয়ে বললাম,

-এই তামিম ভাইয়া শোনো,খবরদার আজেবাজে কথা বলবে না আপুকে!

-ওমা!এই ইনসু?তুই আমার বাসায় থাকতি দুদিন আগে।আমার নুন খেতি।ব্যাংকে কতোসময় এসি বন্ধ থাকতো।ঘামে ভিজানো টাকায় খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি তোকে।আর আজ কিনা তুই এই যীনাতের পক্ষে?

যীনাত আপু বললো,

-নাটকের জায়গা পাও‌ না?শেহনাজ মন্জিল ইনসুর দাদুবাসা,ও তোমারটা খেয়ে‌ না,মামাদেরটা খেয়ে মানুষ।আর আমি কি জানি‌ না,জয়েন্ট ফ্যামিলি হলে কি হবে,মামীর‌ হাতে‌ কয়েকটা টাকা‌ ছাড়া বাজার করার‌ জন্য‌এক কানাকড়িও দাওনা তুমি!মামা সবসময় আমাদের‌ বাসায় গিয়ে‌ আফসোস করে!

চোখ বন্ধ করে হতাশার শ্বাসত্যাগ করলাম।মাহি উৎসাহ নিয়ে বললো,

-এ দুটোর ঝগড়া বেশ লাগছে!তাইনা ইনসিয়া ভাবি?

বিরক্তি‌ নিয়ে‌ তাকালাম ওর দিক।দাত কেলানি থামালো ও।এরমধ্যে সেজোমা এসে বললো,

-কি শুরু করেছিস তামিম?বাসা ঝনঝন করছে তোর আওয়াজে!

তামিম ভাইয়া‌ বললো,

-ও!খালি আমার গলাটাই শুনলে?আর এই যে‌ সাধুবেশী‌ কাকগলার মেয়েটা,এর গলা পাওনি?

যীনাত আপু‌ বললো,

-এমনভাবে বলছে যেনো তার কোকিল কন্ঠস্বরে আজাদ ম্যানশন মোহিত!হুহ!

সেজোমা বললো,

-উফ!থাম তোরা!ইনসু?শুদ্ধ দেখলাম তোর বইখাতা সব এনেছে।রুমে গিয়ে দেখ তো‌ মা!

চোখ চকচক করে উঠলো আমার।একছুটে রুমে এসে দেখি সত্যিই‌ সব বই আনা হয়েছে।শুদ্ধ‌ পরখ করে করে টেবিল আর শেলফে সাজাচ্ছেন ওগুলো।খুশিতে একছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম তাকে।শুধু বই আনার খুশি নয়,শুদ্ধ‌ শেহনাজ‌ মন্জিল গিয়েছিলেন এই খুশিতে।উনি আমাকে না জরিয়ে ধরেই বললেন,

-আম্মু বলে দিয়েছে তোকে?ভাবলাম একদম সাজিয়ে তারপর ডাক লাগাবো!কিন্তু….

-থ্যাংক ইউ!থ্যাংক ইউ সো মাচ!

উনি বুক থেকে সরিয়ে‌ দাড় করালেন আমাকে।বললেন,

-আলাদাভাবে থ্যাংকস্ কেনো‌ বলছিস?আমি তো চাই তুই পড়াশোনা কর।তোকে তো‌ বলেছিলামও যে বইখাতা,সার্টিফিকেটস্ সবকিছু আনাবো ও বাসা থেকে।

খুশিতে হাপাচ্ছি আমি।কোনোভাবে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললাম,

-আপনি শেহনাজ মন্জিল গিয়েছিলেন তাইনা?আব্বু…আব্বু কেমন আছেন?উনি আমার কথা কি কি বলেছেন আপনাকে?আমাকে নিয়ে যাননি বলে রাগ করলেন বুঝি খুব?বইগুলো এনেছেন বলে উনি খুব মন খারাপ করেছেন তাইনা?বলুন না!

শুদ্ধ মুখ কালো করে ফেললেন।হাত মুঠো করে চোখ অন্যদিকে‌ সরিয়ে নিলেন উনি।আমার হাসিটাও কমে আসছিলো।আবারো জোর করে‌ হেসে তার সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-আব্বু প্রথমে খুব বকেছেন আপনাকে তাইনা?এমনটাই তো হবে বলুন শুদ্ধ!ওভাবে বিয়ে…তার উপর আজ আমাকেও‌ নিয়ে যাননি আপনি।আর তো….

-আমি শেহনাজ মন্জিল যাইনি সিয়া!

সবটা থমকে গেলো আমার।চুপ হয়ে গেলাম আমি।একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো সবটা ভুলে শুদ্ধ গিয়েছিলেন আব্বুর কাছে।মিটিয়ে এসেছেন সবটা।কিন্তু উনি যান নি।শুদ্ধ আমার দু গাল ধরে বললেন,

-সবটা ইমরোজ করেছে।যাইনি ও বাসায় আমি।শ্যামাপাখি,একটু বোঝ‌ আমাকে।আমি…আমি শতচেষ্টা করেও ছোটকাকুর রাগ মেটাতে পারবো না!পারবো না!

চোখ তুলে‌ তারদিক তাকালাম।শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললাম,

-কেনো?কিসের এতো রাগ ওনার আপনার উপর শুদ্ধ?বলতে পারেন?কিসের এতো ক্ষোভ,অভিমান ওনার?

একটু থেমে ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিলেন উনি আমাকে।আবারো এগিয়ে‌ দুহাত সর্বশক্তিতে চেপে ধরে‌ বললেন,

-অকারন।কোনো কারন নেই!শুধু এটুকো জেনে রাখ সিয়া,আমার বেচে থাকার কারন তুই!তোকে লাগবে আমার!তাই অন্যকোথাও যেতে দেবো না তোকে আমি!পরিস্থিতি সবটা ঠিক করে দেবে একসময় দেখিস।আর ঠিক সে কারনেই এরপর থেকে তুইও কোনো কারন জানতে চাইবি না সিয়া!কোনো কারন না!

হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলেন উনি।টপটপ করে চোখ‌ দিয়ে পানি পরতে লাগলো আমার।বসে পরলাম মেঝেতে।নিজেকে প্রচন্ড অসহায় লাগছে।শুদ্ধ না নিজে সবটা ঠিক করছেন,না আমাকে কিছু করতে দিচ্ছেন।চোখ‌ বন্ধ করে তার কাছে,তার পাশে থাকার যে অটুট ভাবনায় বেধেছিলাম নিজেকে,তাতে কিছুটা হলেও চিড় ধরছে।বারবার মনে হচ্ছে,এভাবে পরিস্থিতির উপর সবটা ছাড়লে কিছুই কোনোদিনও‌ ঠিক হবে না।আমাকেই‌ কিছু করতে হবে।জানতে হবে সবটা।ঠিক করতে হবে সবটা!সবটাই!

#চলবে…..

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৯

রুমে আবছা অন্ধকার জেকে বসেছে।ড্রিম লাইটের টিমটিমে আলোটা সে অন্ধকারকে আটকাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।তবুও যেনো আজ পেরে উঠছে না কিছুতেই।চারপাশ আরো ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আসছে আমার।কিচ্ছু ভালো লাগছে না শুদ্ধর ওমন ব্যবহারের পর থেকে।বিছানায় হাটু জরিয়ে গুটিশুটি মেরে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন শুদ্ধ।লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বললেন,

-মনে হচ্ছিলো খাবার খাওয়া নিয়ে রেস লাগিয়েছিস কারো সাথে।একদম নাকেমুখে ডিনার শেষ করলি যে?

…..

-বইগুলো এনে দিলাম,কোথায় পড়তে বসবি।তা না এভাবে বসে আছে!

…..

উনি এগিয়ে এসে সামনে বসলেন আমার।কিঞ্চিত ঝুকে বললেন,

-রৌদ্রময়ীর চেহারায় আজ অমাবশ্যা কেনো?

একপলক তাকালাম তার দিকে।ঠোট টিপে হাসছেন উনি।বললেন,

-পড়তে বসবি না?

-কাল থেকে পড়তে বসবো।

-এই কালটা হলো তোর কাল!ফিউচার ইম্পসিবল টেন্স!কোনোদিন আসবে না,তোর পড়াও হবে না।আমি জানি!সো,নো কাল!সব আজ থেকেই!

-ইচ্ছে করছে না পড়তে।

-কেনো?

-ভালো লাগছে না।

-কেনো?

-এমনি।

-এমনি কেনো?

-বললাম তো এমনি!

কথাটা বলতে বলতে হাটু ছেড়ে পাশে ফিরে শুতে যাচ্ছিলাম।শুদ্ধ একটানে তার বুকে ফেললেন আমাকে।মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

-এমন করিস কেনো তুই শ্যামাপাখি?সময়ের টেনে দেওয়া দুরুত্ব সইবে,তোর দুরে সরে যাওয়া না।পুরো পৃথিবীর অপমান সইবে,তোর গম্ভীরতা না।সবার রাগ সয়ে নেবে শুদ্ধ,কিন্তু তোর সামান্যতম অভিমানও‌ সহ্য হবে না ওর বিশ্বাস কর।সহ্য হবে না!

এই কথাগুলো শুনলে কার না ইচ্ছে করবে কথাগুলোর মাঝেই হারাতে?সন্ধ্যেবেলার সবটা ভুলে গিয়ে চুপচাপ তার বুকের মধ্যেই মিশে রইলাম।মাথা তুলেছিলাম একবার।উনি মুচকি হেসে কপালে চুমো দিয়ে আমাকে বুকে জরিয়ে শুয়ে পরলেন।কখন ঘুমিয়েছি জানিই না।তবে ঘুম ভাঙ্গলো কপালে শুদ্ধের ঠোটের স্পর্শে।আমাকে চোখ মেলতে দেখে উনি একটা বড়সর হাসি দিয়ে বললেন,

-গুড মর্নিং শ্যামাপাখি!

একটু হেসে ঠিকমতো উঠে বসলাম।সত্যিই সকালে তার মুখ দেখলে রাতের অন্ধকারের মতো সব মন খারাপ কেটে যায় আমার।শুদ্ধ দুহাত তার মাথার নিচে দিয়ে বললেন,

-আজ হাত লেগে গেছে।সারারাত জরিয়ে ধরে রাখা!কম কথা না!তাইনা বউ?

তারদিক ফিরলাম।ওনার ঠোটে সেই মোহনীয় হাসি।একরাশ মুগ্ধতা,ভালোলাগা,লজ্জা নিয়ে ফ্রেশ হলাম।ডাইনিংয়ে এসে দেখি যীনাত আপু কাটা চামুচ দিয়ে ব্রেড খোচাচ্ছে আর পাশে বসা তামিম ভাইয়ার দিকে তীক্ষ্মচোখে তাকিয়ে আছে।তামিম ভাইয়ার চেহারায় বিরক্তি।আবহাওয়া ঠান্ডা করতে একগাল হেসে বললাম,

-গুড মর্নিং!

মাহি আর সেজোমা জবাব দিলো।চুপচাপ বসে গিয়ে মাহিকে ফিসফিসিয়ে বললাম,

-কি হয়েছে?সেই ঝগড়াই?নাকি আবার লেগেছে?

-এবার তো আরো ইন্টারেস্টিং!

-মানে?

-যীনাত আপুর আম্মু ফোন করেছিলো।ওর কিছু টিউশন মিস যাচ্ছে,বাচ্চাগুলোর গার্ডিয়ান নাকি ক্ষেপেছে।আজই ওকে সোজা তোমাদের বাসায় যেতে বলেছে।আন্টি নাকি ওখানেই।তারপর নাকি দুজন একসাথে তাদের বাসায় যাবে।

-কি?আপু আজই….

-আরে মজার কথাটা তো শোনো!

-এখানে মজার কি আছে মাহি?যীন্…

-ধুরু!পরে ডাকিও ওকে।শোনো!ফুপা অফিস যাওয়ার সময় বলে দিয়ে গেছে,তামিম ভাইয়াকে ওকে নিয়ে যেতে।তামিম ভাইয়া তো ওকে নিয়ে যাবেই না।বলেছে কাজ নাকি হয়নি ওর,পরে যাবে।আমি ফট বলে দিয়েছি ফুপাকে,কাল তামিম ভাইয়া কাজ সেরেই বাসায় ঢুকেছিলো,ও নিজে বলেছে শুদ্ধ ভাইয়াকে আজই যাওয়ার কথা।অগ্নিদৃষ্টি ছুড়েছিলো ভাইয়া এটা শুনে জানোতো ইনসিয়া ভাবি?আবার বলে কি,গাড়ি নিয়ে আসেনি ও,ভাড়া বাচাতে লোকাল বাসে যাবে।এদিকে যীনাত আপুও যাবে না ওর সাথে।অনেকক্ষন কথা কাটাকাটির পর ফাইনালাইজ হয়েছে,ওরা দুজন এক সাথেই যাবে।ফুপা এ বাসার গাড়িই নিয়ে বেরোতে বলেছে তামিম ভাইয়াকে।

কপালে হাত চলে গেলো আমার।শুদ্ধ এসে ভ্রু নাচিয়ে বোঝালেন কি হয়েছে।কিছুই বলিনি।সেজোমাই বললো আপু ভাইয়া চলে যাবে।যীনাত আপুর যাওয়ার কারন শুনে উনিও আর কিছুই বলেন নি।খাওয়া শেষে অনেক বুঝিয়ে আপুকে রাজি করালাম ভাইয়ার সাথেই যেতে।বেশ অনেকটা সময় আমার সাথে কাটিয়ে শেহনাজ মন্জিলের জন্য বেরিয়ে গেলো যীনাত আপু।

_____________

শুদ্ধ অফিস গিয়েছেন আজ।দিনটা কেটেছে বইয়ে মুখ গুজে।এতোএতো পড়া দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।এইতো,শুরু হয়ে গেলো আমার লাইফের আরেক অধ্যায়!বর যখন টিউটর!রাতে পড়িস নি,আজ সারাদিনে এগুলো কমপ্লিট না হলে শাস্তি আছে।শুদ্ধর এটুক কথাই যথেষ্ট ছিলো ওই সাদাকালো বইয়ে চোখ আটকে রাখার জন্য।একদিনে আইনস্টাইন হবো আজ আমি,এই ভাব নিয়ে হাই তুলতে তুলতে পড়েছি কিছুটা।বিকেলের দিকে চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে ছিলাম মাহি,মামী,সেজোমার সাথে।সেজোকাকুর সাথে শুদ্ধ একটা ব্রিফকেস নিয়ে বাসায় ঢুকলেন।সেজোমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

-ইনসু?তুই রুমে যা।

-কাকুর খাবারটা….

-কাকু?

আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সেজোকাকু দাড়িয়ে গেছেন।শুদ্ধ একপলক তারদিক,একপলক আমার দিক তাকিয়ে নিশব্দে হেসে টাইটা টানতে টানতে উপরে চলে গেলেন।কিছু না বুঝে আমি কাকুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

-কাকু,আপনার খাব্….

-কে তোর কাকু?

-ম্ মানে?

-শশুড় হই না?আব্বু বলে ডাকবি!নাকি ইয়াদের মতো আব্বু ডাক শোনার যোগ্যতা আমার নেই?আমাকে ডাকা যাবে না আব্বু বলে?আমি কি…

-না কাকু,এসব আপনি…

-আবার কাকু?

-ও তো আমাকেও এখনো সেজোমা বলেই ডাকে!

সেজোমাও গাল ফুলিয়ে বসে।ঠোটে জোর করে হাসি টেনে বললাম,

-বেশ!আব্বু আম্মু!

ওনারা হাসলেন।সেজোমা বললো,

-যা ইনসু!শুদ্ধকে ডেকে‌ নিয়ে আয়।একসাথে খেয়ে নিক বাপ ছেলেতে।

মাথা নেড়ে রুমে চলে আসলাম।শুদ্ধ ওয়াশরুম থেকে সবে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছেন।একটা কালো টিশার্ট,ট্রাউজার পরেছেন।কপালের সামনের চুলগুলো হালকা ভেজা,ভেজা মুখে বিন্দুবিন্দু পানি।ওসব ছেড়ে ঘাড়ে লেগে থাকা অদৃশ্য পানি মুছতে ব্যস্ত উনি।হাটতে হাটতেই টেবিল থেকে কিছু কাগজ বিছানায়,বিছানার ব্যাগ থেকে কিছু টেবিলে রাখছেন।এগিয়ে গিয়ে টেবিলের পাশেই দাড়িয়ে মাথা নিচু রেখে বললাম,

-টায়ার্ড?

উনি থেমে গেলেন।তোয়ালেটা চেয়ারে রেখে সামনে দাড়ালেন আমার।দুহাত পিছনে নিজের পিছনে দিয়ে কিছুটা ঝুকে দাড়ালেন।আমি একটু পেছোতেই উনি আরো ঝুকে কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-ছিলাম।এখন নেই।

নাকে নাক ঘষে দিলেন উনি।চুল কানে গুজে দিয়ে সরে দাড়িয়ে বললাম,

-আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাক্….

ফোন বেজে উঠলো ওনার।নাম্বারটা দেখে শুদ্ধ তাড়াতাড়ো রিসিভ করলেন কলটা।ব্যস্ত হয়ে বললেন,

-কোথায় তুই?কেমন আছিস?এভাবে এতোগুলো দিন…

….

-তোকে‌ কতোবার কল করেছি।একটাবার তো রিসিভ করবি কলটা!

….

-আজই?আই মিন এখনই?

শুদ্ধ তাকালেন আমার দিক।কিছু একটা ভেবে বললেন,

-আচ্ছা বেশ।আসছি।

কল কেটে আবারো কাউকে ফোন করলেন উনি।বললেন,

-দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে একদম গেইটের কাছে গিয়ে দাড়া।বেরোবো।

এটুক বলেই ফোন রাখলেন শুদ্ধ।কাবার্ডের কাছে গিয়ে কফি কালারের একটা শার্ট বের করলেন উনি।ওটা বেডে রেখে আরো কিছু খুজতে লাগলেন।আমি একটু বিব্রত হলাম।কে এমন কল করেছিলো?সবে ফিরলেন,আবার এখনই বেরোবেন?এগিয়ে গিয়ে বললাম,

-এখনই বেরোবেন?

-হুম।

….

-কোথায় জিজ্ঞাসা করবি না?

-না।সাবধানে যাবেন আর তাড়াতাড়ি ফিরবেন।

-বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

কপালে ভাজ পরলো আমার।টের পাচ্ছি।তবুও শুদ্ধকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।আড়চোখে বেডে রাখা শার্টটার দিকে তাকালাম।ওটা পরলে হাজার মাইল দুরে থেকেও হাজারটা মেয়ের চোখে পরবেন উনি।মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা বলে হালকা রঙের শার্টটা পরে যেখানেই দাড়াবেন,মাঝরাস্তার হেডলাইটের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকবেন একদম।অনেককিছু করতে ইচ্ছে করছে শার্টটার সাথে।শুদ্ধ বললেন,

-তোর এই কালারের কোনো জামা নেই সিয়া?

একটু চমকে উঠলাম আমি।বিস্ময় নিয়ে তাকালাম তার দিকে।উনি ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-কিছু জিজ্ঞাসা করেছি!

-আ্ আমার জামা কেনো?

-দান করে দেবো কাউকে!যেমন আমিও যাচ্ছি,হাজারটা মেয়ের চোখে পরতে!তেমন জামাটাও বিসর্জন দে!

তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে দুটো জামা বের করলাম।একটা পুরোপুরি কফি কালার,একটা কফি আর ব্লাক মিক্সড।শুদ্ধর সামনে ধরে বললাম,

-দুটোই দিয়ে দেবো।আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো।যাকে বলবেন তাকে।আপনার বেরোনো লাগবে না!

উনি দু আঙুলে কপাল ধরে হেসে দিলেন।হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।কথাটা বলে নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।এভাবে বলার দরকার ছিলো না মোটেও।শুদ্ধ এগিয়ে এসে বললেন,

-জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড!একসাথে বেরোবো আমরা।ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই শুদ্ধর বউ দেখবে বলে অস্থির হয়ে আছে।শুনেছে রিসেপশন দেরিতে করবো,তাই আর ওয়েট করতে নারাজ সবাই।একটা রেস্ট্রুরেন্টে একসাথে হয়েছে।ফোন করে তোকে নিয়ে পৌছাতে বললো।রেডি হয়ে নে!এজ সুন,এজ পসিবল!

হাসি ফুটলো আমার মুখে।তাড়াতাড়ি চেন্জ করে নিলাম।কফি কালারের গাউনটাই পরলাম।সাজ বলতে ঠোটে লিপস্টিক দিয়েছি শুধু।সামনের ছোট চুলগুলো ছেড়ে বাকিসব ব্যান্ড দিয়ে বাধা।সাইডব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে দাড়ালাম শুদ্ধর সামনে।উনি ফোনটা পকেটে পুরে তাকালেন আমার দিকে।চোখ নামিয়ে নিলাম।হুট করেই কোমড় জরিয়ে ধরে কাছে টেনে নিলেন উনি আমাকে।চুলের ব্যান্ড খুলে দিয়ে এলোমেলো করে দিলেন চুলগুলো।তারপর আলতোভাবে ঠোটে আঙুল ছুইয়ে দিলেন।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-একটু বেশিই বোল্ড লাগছিলো!

-ইনসিয়া ভাবিইইইই!

মাহির ডাক শুনে লাফিয়ে শুদ্ধর কাছ থেকে সরে দাড়ালাম আমি।শুদ্ধ দাতে দাত চেপে দরজা খুললেন।মাহির সেই ইনোসেন্ট হাসি।শুদ্ধ কড়া গলায় বললেন,

-তোকে একদম গেইটে দাড়াতে বললাম না?

-ইয়ে ভাবলাম দশ মিনিটের আগেই রেডি হয়ে গেছি,ইনসিয়া ভাবি রেডি হলো কি না দেখে আসি।তাই….

-তোর এই বাহানার তো….

আবারো ফোন বেজে উঠলো শুদ্ধর।বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে মাহির দিকে তাকিয়েই বললেন,

-আসছি আসছি!

ফোন রেখে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-যাওয়া যাক?

মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলাম।আমি জানি,তার বন্ধুমহলে আমি যেনো কোনোরকম অস্বস্তিতে না পরি এজন্যই মাহিকেও নিয়ে যাচ্ছেন উনি।আজ প্রথম শুদ্ধর সাথে ওনার বউয়ের পরিচয়ে বেরোচ্ছি।কিছুটা ভয়,কিছুটা লজ্জা,কিছুটা অস্বস্তি সব মিলিয়ে এক অচেনা অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে ভেতরটায়।তবে সবটার মধ্যেও এক অদ্ভুত প্রশান্তি খুজে পাচ্ছি।শুদ্ধর কিছুটা স্বাভাবিকতা।আর আমার চাওয়া তো এটাই।এভাবে যেনো আস্তেআস্তে ঠিক হয়ে যায় সবকিছু।

#চলবে…