#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৪
-ই্ ইনসু,ইনসু আপু…আ্ আম্মুর….আম্মুর এক্সিডেন্ট হয়েছে!
হুহু করে কেদে দিলো ইরাম।কথাটা শুনে পায়ের তলার মাটি সরে গেলো আমার।ফোনটা হাত থেকে পরে গেছে।স্তব্ধ হয়ে গেছি যেনো।আয়ান চৌধুরীর ফোনকলের পর থেকে অস্থির হয়ে ছিলাম শুদ্ধকে সবটা জানাবো বলে।রুম তছনছ করে দিয়েছিলাম ওই মুখোশধারী লোকটার কুকীর্তির প্রমান জোগারের জন্য।এরইমাঝে ইরাম ফোন করে এই কথাটা বললো।টাল সামলাতে না পেরে পরে যাচ্ছিলাম।কেউ দুহাতে জরিয়ে ধরলো আমাকে।জলভরা চোখে দেখলাম শুদ্ধ আমাকে জরিয়ে ধরে আছেন।উনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,
-কি হয়েছে?কি হয়েছে তোর সিয়া?কার ফোন ছিলো?কে ফোন করেছিলো?কে,কি বলেছে তোকে?কি হলো?বল তো!কে ছ্…..
আমি চিৎকার করে কেদে উঠলাম।শুদ্ধের শার্ট খামচে ধরে চেচিয়ে বলতে লাগলাম,
-আম্মু…আম্মুর নাকি….
-ক্ কি?কি হয়েছে আম্মুর?আমি….
উনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।জাপটে জরিয়ে কান্না করতে লাগলাম আমি।
-শুদ্ধ…আমার….আমার আম্মুর….
-ছোটমা?হ্যাঁ,ক্ কি হয়েছে ছোটমার?বল সিয়া!বল!কি হয়েছে ছোটমার?
আমি আরো জোরে কাদতে লাগলাম।আমাকে একহাতে জরিয়ে কপাল ধরে শুদ্ধ নিজেও দিশেহারার মতো করছেন।ফোনটা বের করে কল লাগালেন কাউকে।
-হ্ হ্যালো?হ্যালো ইমরোজ?ইমরোজ?ছ্ ছোটমা…ছোটমার ক্…
…..
ফোনটা বেডে ছুড়ে মারলেন উনি।তারপর আমার দুগাল ধরে মাথা উচু করে বললেন,
-কাদিস না সিয়া!শান্ত হ!কিচ্ছু হবে না ছোটমার!কিছুই হবে না দেখিস!
কোনো কথা কানে যাচ্ছে না আমার।পাগলের মতো বলতে লাগলাম,
-আমি আম্মুর কাছে যাবো।আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে চলুন শুদ্ধ।নিয়ে চলুন!
এরমধ্যে মাহি,আম্মু ঘরে ঢুকেছে।আম্মুও অস্থিরভাবে বললো,
-ইনসু?শুদ্ধ?ইনসুর কি হয়েছে?এমন করছে কেনো ও?কাদছে কেনো?কি হয়েছে ওর?
-আম্মু….আম্মু ছ্ ছোটমা একটু অসুস্থ্য হয়ে….
-কি?কি হয়েছে ছোটর?কি হয়েছে ওর?অসুস্থ্য মানে?এভাবে….
-আম্মু,শান্ত হও তুমি।কিছুই হয় নি ছোটমার।কিছুই হবে না।একদম ব্যস্ত হবে না তুমি,অস্থির হবে না বলে দিলাম।মাহি?আমি সিয়াকে নিয়ে বেরোচ্ছি।আব্বুও এখনই চলে আসবে অফিস থেকে।তুই আম্মুকে একটু…
-না শুদ্ধ!আমিও যাবো!আমিও যাবো শেহনাজ মন্জিল!আমি….
-হ্যাঁ,যাবে তো!আমিই নিয়ে যাবো তোমাকে।ছোটমা একটু সুস্থ্য হোক।
-না।আমি এখনই….
-পাগলামি করো না আম্মু।এখন সিয়াকে সামলানো…
মাহি বললো,
-শুদ্ধ ভাইয়া,তুমি ইনসিয়া ভাবিকে নিয়ে বেরোও।ফুপিকে আমি ঠিক সামলে নেবো।এসো তোমরা।
একদন্ড না দাড়িয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে বেরিয়ে এলেন শুদ্ধ।গাড়িতে বসে স্টার্ট দিলেন গাড়িটা।বুকে হাত গুজে সারাটা রাস্তা কেদেছি চিৎকার করে।কোনোদিক তাকাইনি আর।হসপিটালে গাড়ি থামতেই শুদ্ধকে রেখেই দৌড়ে ভিতরে ঢুকলাম।ইমারজেন্সির সামনের করিডরে শেহনাজ মন্জিলের সবাই।বড়মা,মেজোমা,ফুপি কাদছে।দীদুন লাঠিতে হাত রেখে স্থির দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে।মেজোকাকু আর রিফাত ভাইয়া ব্যতিত কোনো ছেলেমানুষ নেই।সোজা গিয়ে ইমারজেন্সি রুমের দরজায় বারি লাগালাম আমি।সীমা ভাবি এসে জরিয়ে ধরলো আমাকে।চেচিয়ে বললাম,
-ছেড়ে দাও!ছেড়ে দাও আমাকে ভাবি!আম্মু!কি হয়েছিলো?কিভাবে এসব হয়ে গেলো?
দীদুন এসে কাধে হাত রাখলো আমার।তাকে জরিয়ে আরো জোরে কেদে দিলাম।সবাই মিলে শান্ত হতে বলছে আমাকে।ইরামটা এসে জরিয়ে ধরে ফুপাতে ফুপাতে বললো,
-আপু?কেদো না প্লিজ এখানে।আম্মু আর আমি একটু বেরিয়েছিলাম আজ।আমারই কিছু কেনাকাটা…রোড পার হতে গিয়ে একটা গাড়ি আম্মুকে….
ও কেদে দিলো আরো জোরে।ওকে জরিয়ে আমিও কাদছি।আব্বুর কথা মনে পরতেই কান্না থামিয়ে বললাম,
-কাকু?আব্বু কোথায়?আব্বু কোথায় গেছে?আর ইমারজেন্সি রুমে শুধু নার্স কেনো?ডক্টর কোথায়?বলুন কাকু?কি হচ্ছে টা কি?
রিফাত ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,
-ইনসু,শান্ত হ!তোকে স্ট্রং থাকতে হবে এখন।
-মানে কি?আম্মুকে ওভাবে…
-ইনসু,এক্সিডেন্টে ছোটমার অনেকবেশি রক্তক্ষরন হয়ে গেছে।রক্ত দিতে হবে তাকে।রক্ত দেওয়ার আগে কোনো চিকিৎসাই হয়তো….
-তো দিচ্ছে না কেনো ব্লাড?কেনো থেমে আছে?যা করার করছে না কেনো?
রিফাত ভাইয়া মাথা নিচু করে বললো,
-ছোটমার ব্লাডগ্রুপ ও নেগেটিভ।আর ও নেগেটিভের ব্লাড কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।আশেপাশের হসপিটাল,ব্লাডব্যাংক গুলোতেও খবর লাগানো শেষ।হাতে সময়ও খুব কম।তাই ডক্টরেরা বলেছেন নিকটাত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করতে।ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে এমন কারো রক্ত ইনস্ট্যান্টলি দিতে হবে তাকে।নইলে…কিন্তু তুই চিন্তা করিস না।কাকু ভাইয়ারা খোজ নিতেই গেছে।কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিক….
আটকে গেলাম আমি।আব্বু,ইরাম,আমার তিনজনেরই ব্লাডগ্রুপ এ পজিটিভ।শেহনাজ মন্জিলের কারোটা ম্যাচ হলে এখনো আম্মুর চিকিৎসা থেমে থাকতো না।নানুবাসার দুই মামা,এক খালামনি।কার কাছে যাবো আমি এখন?
-ওইতো আব্বু এসে গেছেন!
ইরামের কথায় পাশ ফিরলাম।দৌড়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরতে যাচ্ছিলাম।কিন্তু উনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন।স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।আজও তার অভিমান এতোটুকো কমেনি।মেজোকাকু এসে বললেন,
-ইয়াদ?ব্লাডের কোনো ব্যবস্থা…
-ইরামের খালামনির ব্লাড গ্রুপ এবি পজেটিভ।একমামা তো বিদেশ,আরেক জনের সাথে ব্লাডগ্রুপ ম্যাচ করেছে,কিন্তু তার ফিজিক্যাল হেল্থ স্টেবল না।ডক্টর মানা করেছে তাকে ব্লাড ডোনেট করতে।যদিও সে চাচ্ছিলো,অনেক জোরাজুরি করছিলো,আমিই ধমকে…
-ছোটমাকে ব্লাড আমি দেবো!
সবাই পিছনে তাকালো।শুদ্ধ!চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছেই আমার।শুদ্ধ সোজা আমার দিক এগিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
-কাদিস না সিয়া!কিছু হবে না ছোটমার।আমার ব্লাডগ্রুপ ও নেগেটিভ।যতো ব্লাড লাগবে,আমি দেবো!
রিফাত ভাইয়া এসে জরিয়ে ধরলো শুদ্ধকে।তারপর শুদ্ধ ডক্টরের সাথে পা বাড়ালেন।এরমধ্যে বাকিসবাইও এসেছে হসপিটাল।বেশ কিছুক্ষন কেটে গেছে।চোখের জল শুকিয়ে যেনো কান্না কমে এসেছে।একধ্যানে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আমি।উনি অসহায়ভাবে নিজদিক তাকিয়ে।আচমকাই মাথায় হাত দিয়ে শব্দ করে কেদে উঠলেন উনি।বরাবরই প্রচন্ড শক্ত মানুষ উনি।আম্মুর এতো কঠিন মুহুর্তেও উনি কেদেছিলেন কি না কে জানে,কিন্তু এই মুহুর্তে যেভাবে কাদছেন,তা সবার জন্যই বিস্ময়ের ছিলো।আমি আবারো কাদতে লাগলাম নিশব্দে।ইরামকে জরিয়ে রেখেছি।তাপসী আপু,যীনাত আপু,সীমা ভাবি আমাদের পাশেই বসে।দীদুন আব্বুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-বিয়ের দিন ইনসুর তোমার কাছে চাওয়া দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করেছে ইয়াদ!
আব্বু জলভরা চোখে তাকালেন দীদুনের দিকে।একপা দু পা করে এগিয়ে গেলাম তার দিকে।তার সামনেই মেঝেতে বসে মাথা নিচু করে বললাম,
-আর কতো অভিমান করে থাকবেন?আমাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না আব্বু?
আব্বু জাপটে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।কেদে দিলাম শব্দ করে।কতোদিন পর!কতোদিন পর উনি আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরেছেন!আব্বুও কাদছেন।বললেন,
-ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত মা!তোর এই পাপ্….
-এসব কি বলছেন আপনি আব্বু?বলবেন না এভাবে প্লিজ!পাপ হবে আমার!আপনি যা করেছেন সবসময় আমার ভালোর জন্য।ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করে দেবেন না প্লিজ!
-মা রে….
-ইমারজেন্সির পেশেন্টের বাসার লোকজন কে আছেন?
নার্সের কথায় আব্বু এগিয়ে গেলেন আমাকে ছেড়ে।আমিও এগোলাম।আব্বু বললেন,
-কি হয়েছে নার্স?পেশেন্ট….
-শি ইজ আউট অফ ডেন্জার!একদম ঠিক সময়ের মধ্যে ব্লাড দেওয়াতে এখন বাকিসব ট্রিটমেন্টগুলো শুরু করেছেন ডক্টররা।আশা করা যায়,তাড়াতাড়িই সুস্থ্য হয়ে যাবেন উনি!
স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সবাই।আব্বু আমাকে আর ইরামকে জরিয়ে ধরলেন।বাকিসবাইও খানিকটা শান্ত হয়েছে।আব্বু বলে উঠলেন,
-শুদ্ধ কোথায়?
আশেপাশে তাকালাম।সত্যিই শুদ্ধ নেই!কোথায় উনি?আব্বু আবারো বললেন,
-কি ব্যাপার রিফাত?ওর তো ব্লাড দিয়ে কেবিনেই থাকার কথা।কত নম্বর কেবিন ওর?
রিফাত ভাইয়া মাথা নিচু করে বললো,
-শ্ শুদ্ধ কেবিনে নেই ছোটকাকু!
থমকে গেলাম।কোথায় গেছেন উনি এই শরীর নিয়ে?কেনো গেছেন?আজকের এই বিভীষীকাময় দিনটাকে আশীর্বাদে পরিনত করে দিয়েছে সে আমার জন্য।আম্মুর সাথে সাথে আব্বুকেও ফিরিয়ে দিয়েছে আমার কাছে।তার বিশ্বাস আবারো জিতে গেছে।এই মুহুর্তে,এই পরিস্থিতিটাই সত্যিই বদলে দিয়েছে সবটা।তবে উনি কোথায়?আব্বু বললেন,
-কেবিনে নেই মানে?কোথায় গেছে ও?
-হসপিটালে নেই।কাউকে কিছু না বলে একপ্রকার লুকিয়েই বেরিয়ে গেছে ও!
-কিহ্?বেরিয়ে গেলো?তোমরা কোথায় ছিলে?সবেমাত্র ব্লাড ডোনেট করে ও এভাবে বেরিয়ে গেলো?ওর শরীরটা দুর্বল!গেছে যখন নিজেই ড্রাইভ করছে হয়তো!একটু খেয়াল রাখবে না তোমরা?কল করো ওকে!রাইট নাও!
আমি আব্বুর কাছ থেকে সরে দাড়ালাম।তাড়াহুড়োয় ফোনটাও আনি নি।পাশে দাড়ানো তামিম ভাইয়ার ফোনটা কেড়ে নিয়ে শুদ্ধকে কল করতে যাবো,যীনাত আপু ডাক লাগালো।
-ইনসু!
ওর হাতে একটা চিরকুট।তাড়াতাড়ি নিলাম ওটা।আপু বললো,
-নার্স দিয়ে গেলো।
চিরকুট খুললাম আমি।এটা শুদ্ধর লেখা।
” প্রথমেই বলি,সিয়াকে এই চিরকুট এখনই দেখিও না।আমি চাই ও এখন ছোটমা,ছোটকাকুর সাথে ব্যস্ত থাকুক।আমাকে নিয়ে নয়।আর সরি আপু।তোমাদের সাথে,সিয়ার পাশে থাকা হলো না ওখানে।এখন আবার সবাই মিলে ফোন করতে শুরু করো না।রিসিভ করা হবে না আমার।আসলে অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছে।একটু!তবে আব্বুর পক্ষে একা সবটা হ্যান্ডেল করা সম্ভব না।তাই বেরিয়ে আসতে হলো।সবাইকে বলে আসতে গেলে আর যেই হোক,ছোটকাকু ছাড়তো না আমাকে জানি।তাই এভাবে চলে আসা।ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে আমার মাত্রই।দেখো,এতোক্ষনে হয়তো ওটি থেকে বেরিয়েও গেছেন উনি।ছোটমা সুস্থ্য হয়ে যাবে।টেনশন করো না।আর হ্যাঁ,সিয়াকে দেখো আপু!আর কাদতে দিও না ওকে।অনেক তো হলো,ছোটকাকুকে বলো,এ কয়েকদিনের সবটা আদর যেনো একেবারে উজার করে দেয় ওকে।সিয়াকে বলো,আমি দুর্বল শরীর নিয়ে ড্রাইভ করে আসিনি।ড্রাইভার মামা ছিলো আমার সাথে।এটাও বলো,একটু সময় দিতে আমাকে।সবটা ঠিক করে তাড়াতাড়িই ফিরবো আমি!
-শুদ্ধ ”
#চলবে….
#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৫
চেয়ারে হাত পা বেধে আটকে রাখা হয়েছে আমাকে।চোখ মেলার চেষ্টা করছি অনেকক্ষন হলো।পারছি না।চোখ বাধা আমার।মুখটাও বাধা বলে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।কোথায় আছি,কেনো আছি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।হসপিটালে শুদ্ধর চিরকুট পরে ভয় হচ্ছিলো আমার।কল রিসিভ করছিলেন না উনি।আব্বুকেও ফোন লাগিয়েছি,উনিও রিসিভ করেন নি।চিন্তা বাড়লো আমার।আয়ান চৌধুরীর সবটা জানাতে হবে সবাইকে।যে করেই হোক!নইলে শুদ্ধরই…
ঠিক করলাম ইমরোজ ভাইয়ার সাথে ঢাকায় ফিরবো।আম্মু খানিকটা সুস্থ্য তখন।আমার জোরাজুরিতে আমাকে ছাড়তে রাজি হয়ে গেলো সবাই।ইমরোজ ভাইয়া আসছিলো আমার সাথে।গাড়ি পার্কিং এরিয়া থেকে নিয়ে আসছিলো ও।আমি হসপিটালের গেইটেই দাড়িয়েছিলাম।হুট করেই একটা গাড়ি সামনে এসে দাড়ায় আমার।ভেতর থেকে দুজন লোক জোর করে টেনে তুলে নেয় আমাকে।জোরাজুরি করেছিলাম অনেক।লাভ হয়নি।মুখ আটকে ধরে তারা আমার।তারপর নিজেকে এভাবে আবিষ্কার করলাম।নড়াচড়া করে উঠতেই কেউ বলে উঠলো,
-কেমন আছো ইনসিয়া?
সেই চেনা স্বর!দুবার কথা বলায় এই উক্তি চেনা হয়ে গেছে আমার।এটা আয়ান চৌধুরী।উনি কেনো এখানে?তবে কি উনিই আমাকে…
-উম্ ম উম্!
-ওপস্!ওয়েট!মুখ খুলে দেই তোমার!শুদ্ধর শ্যামাপাখির সুর বেরোচ্ছে না যে!
উনি মুখ খুলে দিলেন আমার।চোখটাও।চোখ মেলতে সামনেই আয়ান চৌধুরী।পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে সে।চারপাশে তাকালাম।জায়গাটা বড়সর কোনো গোডাউন।কিন্তু আমি এখানে কেনো?চেচিয়ে বলে উঠলাম,
-আমাকে কেনো এনেছেন এখানে?
আয়ান হাসলেন।আবারো বললাম,
-এসব অসভ্যতামির মানে কি?এভাবে কেনো আনা হয়েছে আমাকে?
উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন।বললেন,
-রিল্যাক্স!রিল্যাক্স ইনসিয়া!সবটা বলবো।আগে এটা শোনো তো!কেমন শোনা যায়?
-কোনো কিছুই শুনবো না আমি।ছেড়ে দিন আমাকে!যেত্….
উনি ঘাড় বাকিয়ে হেসে মুখের বাধন তুলে দিলেন আমার।আর শব্দ বেরোচ্ছিলো না।আয়ান হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে লাগলেন,
-বলো না,বলার কাজ আছে তোমার একটুপরেই।আগে শোনো!লাইভ নিউজ চলছে!তাতে বড়বড় হেডিংয়ে লেখা,”আজাদ গ্রুপের উত্তরসুরী ইরহাম আজাদ শুদ্ধ ব্যাংক রোবারিতে জড়িত।”সাংবাদিকেরা চেচিয়ে বলে চলেছে,”মিস্টার ইরহাম আজাদ শুদ্ধ ব্যাংক রোবারির মুখপাত্র।হ্যাক করে নিয়েছে বিশিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট মিস্টার রায়হানের ব্যাংক একাউন্টের ** কোটি টাকা।তার পারসোনাল পিসি থেকে সমস্ত প্রমান জোগার করতে ব্যস্ত পুলিশ।আসাদুজ্জামান আজাদের একমাত্র ছেলে,আজাদ গ্রুপের ভবিষ্যৎ ওনারের এতোবড় কুকীর্তি?টাকার লোভে অন্ধ হয়ে শেষে কিনা চুরি করলেন উনি?এতোবড় ডাকাতি?আরও ডট ডট ডট!কেমন ছিলো ইনসিয়া?এবার বলো!
উনি মুখ খুলে দিলেন আমার।বললাম,
-হাউ ডেয়ার ইউ?আপনি কি করে এইসব বলতে পারেন?শুদ্ধকে নিয়ে খবরদার যদি আরেকটা বাজে কথা বলেছেন তো আম্….
আয়ান অট্টহাসি হাসলেন খানিক।বললেন,
-লিসেন ইনসিয়া,এমনটাই নিউজ বেরোবে আজকের লাইভ খবরে!তোমার সো কলড্ বর,শুদ্ধ আসলে একটা চ্…
-শাট আপ!জাস্ট শাট ইউর মাউথ আপ মিস্টার আয়ান চৌধুরী!ছিহ্!এতোটা নিচ চিন্তাভাবনা আপনার?এতোটা নিচ আপনি?লজ্জা করে না?যে বন্ধু বলে আপনাকে এতোটা,এতোটা মানে,তাকে এসব মিথ্যে অপবাদ দিতে?এভাবে ফাস্…
-হেই?ওয়েট!কোনটা মিথ্যে?কোনো মিথ্যে নেই এতে!
-সবটা মিথ্যে!সবটা মিথ্যে বলছেন আপনি!আমি জানি আস্…
আয়ান উঠে দাড়ালেন শক্তভাবে।আমার হাত খুলে দিলেন উনি।এটাই চাইছিলাম।পায়ের বাধন খুলে আমিও দাড়ালাম চেয়ার ছেড়ে।সোজা হয়ে দাড়াতেই চোখের সামনে কিছু কাগজ তুলে ধরলেন উনি।বললেন,
-এইসব প্রমান আমার কাছে আছে ইনসিয়া!আর আমি চাইলেই শুদ্ধর পিসির সব প্রমান দু মিনিটে পুলিশের হাতেও চলে যাবে!
কাগজগুলোতে চোখ বুলালাম।ওগুলো দেখে শরীর কাপছে আমার।আয়ান কাগজ নামিয়ে নিচদিক তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে হেসে বললেন,
-হোয়াট?বলেছিলাম না?শুদ্ধ একটা….
সজোরে চড় পরলো আয়ানের গালে।চড়টা আমিই দিয়েছি।সে লোকটা দুহাত পিছিয়ে গেছে।নিচদিক তাকিয়ে গাল ধরে থমকে আছে সে।পাশের দুটো লোক আমার দিকে এগোতে গেলেই আয়ান হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন ওদের।তারপর অগ্নিচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে।রাগে চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।উনি সোজা এসে আমার চুল মুঠো করে ধরলেন।ব্যথায় কুকড়ে বলে উঠলাম,
-আহ্!লাগছে আমার!ছ্ ছাড়ুন!ছাড়ুন আমাকে!
আয়ান চেচিয়ে বললেন,
-ছাড়বো?ছেড়ে দেবো তোমাকে?এই মুহুর্তে টুকরো টুকরো করে কেটে তোমাকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারি আমি ইনসিয়া!কিন্তু তাতে শুদ্ধও মরে যাবে!আর সাথে আমার বোনও!এই একটাই দুর্বলতা আমার।তা বলে আয়ান চৌধুরীর গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হলো তোমার ইনসিয়া?হাউ?
সর্বশক্তিতে ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে দিলাম ওনার হাত।চেচিয়ে বললাম,
-সেভাবেই,যেভাবে আপনি নকল কাগজপত্র দেখিয়ে আমার কাছে শুদ্ধকে খারাপ প্রমান করার সাহস দেখিয়েছেন!
আয়ান আবারো তেড়ে এসে দুহাত চেপে ধরলেন আমার।বললেন,
-এই?বলেছি না তোমাকে?শুদ্ধ এই রোব্….
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চড় লাগিয়ে দিলাম তার গালে।চেচিয়েই বললাম,
-আর একবার আপনার ওই নোংরা মুখে শুদ্ধর নাম নিলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না মিস্টার চৌধুরী!নিজের খারাপ কাজের দায় খবরদার শুদ্ধর ওপর চাপানোর চেষ্টা করবেন না!
রাগে কান্না করছি।হাত পা কাপছে আমার।ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে খুন করে ফেলতে।আমাকে এভাবে দেখে,আমার কথা শুনে আয়ানও কিছুটা থমকে গেছেন।গালে হাত রেখেই একটু বিস্ময় নিয়ে বললেন,
-ম্ মানে?
-মানে বোঝেন নি এখনো আপনি?ফাইন!আমি বোঝাচ্ছি!এই সবগুলো কাগজ জাল!আমি জানি সবটাই!এই কাগজগুলোর যেখানে যেখানে শুদ্ধর নাম লেখা,সবখানে আসলে আপনার নাম মিস্টার আয়ান!
আয়ান মিস বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন।বললেন,
-তুমি এসব….
-কি?আমি এসব কিভাবে জানি তাইতো?আমি সবটা জানি শুনে অবাক লাগছে?এটা তো আমার জানার কথা নয় তাইনা?সত্যিই,যার রক্ষক স্বয়ং শুদ্ধের মতো কেউ,তার কুকীর্তি সত্যিই আমার জানার কথা নয়।কিন্তু কি বলুনতো মিস্টার আয়ান চৌধুরী? সত্যিটা সত্যিই!হাজার মিথ্যের আড়ালেও তাকে চাপা দেওয়া যায় না।যেমনটা শুদ্ধও পারেন নি!আমি আজই আমাদের রুমে আপনার ইচ এন্ড এভরি ডিটেইলস্ খুজছিলাম।আপনার সবটা জেনে শুদ্ধকেও জানাবো বলে।তখনই এসবের মুল পেপারস্ হাতে আসে আমার!আর আমি জানি!সবটা আপনি করেছেন মিস্টার আয়ান চৌধুরী!সবটাই আপনি করেছেন!
-ক্ কি বলতে চাইছো তুমি?কিস্ কিসের মুল পেপারস্?
-এখনও বোঝেন নি?মুল পেপার্স মানে এই কাগজগুলোর আসল কপি।যেখানে স্পষ্ট লেখা,হ্যাকিংয়ের সমস্ত প্লানিং,ট্রেনিং আপনি,আপনিই কোথায় কিভাবে করেছেন,শুদ্ধর পিসিতে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট,অফিসের স্টোররুমে বসে সবটা করার সিসিটিভির ফুটেজসহ সব প্রমান ছিলো ওতে।সবটা দেখে নিয়েছি আমি!
আয়ান মাথার চুলে উল্টে ধরে দিশেহারার মতো করতে লাগলেন।তারপর আমারদিক এসে বললেন,
-কোথায়?বলো সেসব কোথায়?সে ইট ইনসিয়া!বলো!
-বলবো না!রুমে ওগুলো শুদ্ধ নিজে লুকিয়ে রেখেছিলেন।অফিসের সিসিটিভি ফুটেজও উনি আব্বুর অগোচরে সরিয়ে ফেলেছিলেন।আমি জানতাম,শুদ্ধ কোনোদিনই আপনাকে দোষী সাব্যস্ত হতে দিতে চাইবেন না!তাই আমিই….
উনি হাত চেপে ধরলেন আমার।আরো জোরে চেচিয়ে বললেন,
-কোথায় আছে সেটা বলো!
-বলেছি তো বলবো না!বলবো না আমি!আর খবরদার ছোবেন না আমাকে।শুদ্ধ জানলে আপনার ওই হাত থাকবে না মিস্টার চৌধুরী!শরীর থেকে আলাদা করে দেবেন উনি ওই হাত!
উনি ছেড়ে দিলেন আমাকে।কি ভেবে বাকা হেসে বললেন,
-তুমি বেশ চালাক ইনসিয়া!
-মানে?
-মানে এটাই,আমাকে বাচাতে কোবো প্রুভ লুকানোর হলে শুদ্ধ সেটা তোমাদের রুমেই লুকোবে না।আর কোনো প্রুভ তোমার হাতে আসলে আমি এখনো জেলের বাইরে কি করে?এতোক্ষনে তো সেগুলো তোমার পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করার কথা!রাইট?
-আ্ আমি আম্মুকে নিয়ে…
-ডোন্ট গিভ মি দিস বেসলেস লজিকস্!যদি সত্যিই পেপারস্ হাতে আসতো তোমার,ওটা আগে তুমি পুলিশকেই দিতে!
মাথা নিচু করে রইলাম।এটাই ঘটেছে।না জেনে এতোবড় মিথ্যেটা বলেছি ঠিকই,কিন্তু সেটাই সত্যি হলো।কোনো পেপার্স দেখিনি।কিন্তু আমি জানতাম শুদ্ধ এমন কিছুই করবেন না।আর যেহেতু ঘটনাটা ঘটেছে,তারমানে তাকে ফাসানোর জন্যই কেউ এটা করেছে।মন বলছিলো,আয়ান চৌধুরীই সবটা করেছে।আয়ান চৌধুরীর এই অসহায়ত্ব দেখে এবার শিওর হয়েছিলাম আমি।আয়ান হাতে তালি বাজিয়ে আমার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললেন,
-ওয়াও!কি আন্দাজ তোমার!প্রশংসনীয়!একেবারে আউটস্ট্যান্ডিং যাকে বলে!
….
-তার থেকেও বেশি আমেজিং,শুদ্ধের প্রতি তোমার বিশ্বাস!এটারও তারিফ করতে হয়।এই বিশ্বাসের জোরেই এতোগুলো কথা এতো শক্তভাবে বলে দিলে তুমি।আর সেটাই সত্যি দাড়ালো!তোমার গলার জোর শুনে আমিও বোকার মতো স্বীকার করে নিলাম সবটা!
…..
-এনিওয়েজ,ভেবেছিলাম সোজা কথায় কাজ হবে।কি যে করো না তুমি!কি হতো আমার কথাগুলো,কাগজগুলো বিশ্বাস করলে?ইজিলি শুদ্ধকে বলতে পারলে ও একটা অপরাধী।আর ওউ তোমাকে…যাই হোক,আই হ্যাভ মাল্টিপল চয়েজ!
-দেখুন,আপনি কিন্তু…
-তুমি আগে এটা বলো,তোমার আম্মু কেমন আছেন?শুনলাম উনি হসপিটালাইজড্?
আটকে গেলাম।আয়ান ওভাবেই হেসে বললেন,
-চুপ করে থেকো না ইনসিয়া!তোমাকে এখন শ্যামাপাখিইইইর মতো হাকডাক ছাড়তে হবে যে!
-আ্ আপনি…..
-ওয়েট!লেট মি শো ইউ সামথিং!
উনি পাশের ছোট টেবিলে রাখা একটা ট্যাবে কিছু অন করলেন।দেখার সাহস নেই আমার।আশপাশ দেখে পালানোর রাস্তা খুজছিলাম।কিন্তু দশ বারোজন লোক চারপাশ ঘিরে রেখেছদ আমার।গোডাউনের শার্টার নামিয়ে তালা ঝুলানো।উচু দেয়ালের একদম উপরে আলো আসছে সরু জানালাসদৃশ কিছু দিয়ে।আয়ান ট্যাবটা সামনে ধরলেন আমার।যা দেখলাম তাতে ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।আর্তনাতের মতো বলে উঠলাম,
-আম্মু!
-জ্বী না।এটা শুদ্ধের আম্মু!
শব্দ করে কেদে দিলাম আমি।আম্মুকেও আটকে রেখেছে এই লোক।পাশে মাহিও আছে।হাত,পা,চোখ,মুখসব বাধা ওদের।ঘৃনার চোখে তাকালাম আয়ানের দিকে।যতোদুর জেনেছি,আম্মু,আব্বু কেউই আয়ানকে শুদ্ধের চেয়ে কম ভালোবাসতেন না।আর মাহিরও তো ওনার জন্য কিছুটা…
-আপনি ওদেরকেউ…..
-হ্যাঁ।মাহিকে কল করেছিলাম।বললো বাসায় শুদ্ধ নেই,ও আর মিসেস আজাদ একা।তাই….
-ওদের ছেড়ে দিন মিস্টার চৌধুরী! প্লিজ যেতে দিন ওদের!কেনো এমন করছেন?ওরা তো আপনাকে কতো ভালোবাসে!তবে কেনো….
-আই ডোন্ট কেয়ার!আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার কে আমাকে ভালোবাসলো না বাসলো।অল আই নো ইজ,আমার বোন শুদ্ধকে ভালোবাসে।আর তাই শুদ্ধর পাশে আমার বোনকেই চাই!
-আপনি…..
-নেকামো ছাড়ো!নাও কাম টু দ্যা পয়েন্ট!আগেই বলেছি,শুদ্ধকে কিছু করতে পারবো না,একইকারনে তোমাকেও কিছু করা সম্ভব না আমার।তাছাড়া তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কাজগুলো কে করে দেবে?তাই শুদ্ধর আরেক প্রানভোমরা আইমিন মিসেস আজাদকেও আনতে বাধ্য হলাম।এখন তুমিও আমার কথা মানতে বাধ্য।নইলে তোমার আম্মুর ক্ষেত্রে যে ট্রেইলরটা ছিলো,তারই পুরো পিকচার মিসেস আজাদের উপর হবে!
-ম্ মানে?
-যতোটা চালাক ভেবেছিলাম তোমাকে,ততটা তুমি নও।বলার পরেও মানে বোঝো না।শোনো,তোমার আম্মুর ওই ছোটখাট এক্সিডেন্টটা আমিই করিয়েছিলাম।জাস্ট একটু….
নির্বাক হয়ে গেলাম আমি।মানুষ কতোটা জঘন্য হলে এমনটা করতে পারে?তেড়ে এগোতে যাচ্ছিলাম তারদিকে।আয়ান হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-হেই!ওয়েট!বলা শেষ হয়নি আমার!
কিছুই শুনি নি।এই লোকটার জন্য আমার আম্মু আজ মৃত্যুর পথযাত্রী হতে যাচ্ছিলো।কলার চেপে ধরলাম তার।চেচিয়ে বললাম,
-আজ আপনাকে শেষ করে ফেলবো আমি!
আয়ান গায়ের জোরে কলার ছাড়িয়ে নিলেন নিজের।ইশারা করতেই দুটো লোক এসে আবারো জোর করে চেয়ারে বসিয়ে বেধে দিলো আমাকে।আমি চেচাচ্ছি,তবুও কারো কানে যাচ্ছে না তা।আয়ান তার নখ দেখতে দেখতে বললেন,
-এসব ফিল্মি ভঙিমা ছাড়ো।তোমার আম্মুকে মারার প্লান ছিলো না আমার।শুধু একটু….যাতে তোমার চোখে আমাকে নিয়ে ভয়টা থাকে।এটা বুঝতে কোনো সমস্যা না হয়,আমি আমার বোনের জন্য সব করতে পারি!মিসেস আজাদকে….
-না!কিছুই করবেন না আপনি আম্মুর!
-করবো!আলবাত করবো!অনেককিছু করবো!কিন্তু তারজন্যে দায়ী থাকবে তুমি!আর কারনটা হবে তোমার আমার কথা না মানা!
-না প্লিজ!আপনি…
-ওনাকে ছাড়ার একমাত্র শর্ত!আমি যা চাই তাই করতে হবে তোমাকে।
-ক্ কি?কি চান আপনি?
উনি একদম মাসুম হেসে বললেন,
-দুটো জিনিস!শুদ্ধর জীবন থেকে তুমি চিরতরে সরে যাবে আর শুদ্ধ মুনকে বিয়ে করবে।দ্যাটস্ ইট!
কথাগুলো শুনে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো আমার।শুদ্ধর থেকে নিজেকে দুর,এটা তো কল্পনাও করতে পারবো না আমি!তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে বললাম,
-ক্ কিন্তু শুদ্ধ মুনিয়াকে ভালোবাসেন না!কোনোদিনও সুখী করতে পারবেন না উনি মুনিয়াকে।উনি তার শ্যামাপাখিকে ভালোবাসেন,আমাকে ভালোবাসেন!আর তাই উনি কোনোদিনও আম্….
-আবারো ফিল্মি ডায়লগ!শোনো ইনসিয়া,যখন তোমার প্রতি ঘৃনাটা এক আকাশসম হবে,তখন ও মুনকেই ভালোবাসবে।তোমাকে ঘৃনার তীর ছুড়ে মুনকেই বিয়ের মালা পরাবে ও।ওর শ্যামাপাখির এ আসক্তি কাটিয়ে ঠিক চাদ সওদাগরের সওদা হওয়া মনকে দাম দেবে ও।ঠিক দেবে!আর তার ব্যবস্থা তুমি নিজে করবে ইনসিয়া!ইউ উইল ডু ইট!তোমাকে বলেছিলাম,আয়ান চৌধুরী এমন কিছু গিফট্ দেবে তোমাকে,যা আজীবন মনে রাখবে তুমি।সো আর ইউ রেডি ফর ইট?আমার দেওয়া উপহার গ্রহনের জন্য প্রস্তুত তুমি?
চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।ভয়টা সব সীমা পার করে যাচ্ছে।এই লোকটা এক আম্মুর এক্সিডেন্ট করিয়েছে,আরেক আম্মুকে ওভাবে আটকে রেখেছে,হ্যাকিংয়ের সবটা দায় শুদ্ধর উপর চাপাতে যাচ্ছিলো,আর কি বাকি আছে?সেটা কোনোভাবে আমার মৃত্যু হলেও তা মানতে পারবো আমি,কিন্তু শুদ্ধকে এতোটুকো কষ্ট দেওয়ার মতো কিছু সহ্য করতে পারবো না!পারবো না আমি!
#চলবে….