#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_03
#Writer_NOVA
এক ধ্যানে রাই-য়ের মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তীব্র। মেয়েটার চোখ মুখ উপচে পরছে মায়া। নাকের ডোগার বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো থাকায় আরো বেশি মায়াবী লাগছে।নিজের অজান্তে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠেছে তীব্রর।তখন রাই-কে তীব্রই পেছন থেকে রুমাল চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলছিলো।
বস্তি এলাকায় রাতের অন্ধকারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও খাবার পৌঁছে দিতে এসেছিলো তীব্রর দল।ওরা কাউকে জানিয়ে ত্রাণ দেয় না।ওদের একটা সংগঠন আছে।যার নাম “আল্লাহর দান” সংগঠন। এখান থেকে প্রতি রাতে বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হয়। রাতের বেলা সবার অজান্তে খাবার পৌঁছে দেয় প্রতিটা অনাহারীর দুয়ারে।তীব্র এখনো রাই কে দেখছে।ল্যাম্প পোস্টের আবছা আলোতে রাই-এর মুখ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। রাইকে অজ্ঞান করার কারণ হলো সে তাদের কাজ-কর্ম দেখে ফেলেছিলো।যেটা পরবর্তীতে ওদের বিপদে ফেলতে পারতো।কারণ ওরা তো চায় না কারো কাছে খ্যাতি পেতে।
আবিরঃ তীব্র, আমাদের কাজ শেষ। এখন পূর্বের বস্তি এলাকায় যেতে হবে। মেয়েটাকে কি করবি?
তীব্রঃ হুম।(রাইয়ের দিকে তাকিয়ে)
আবিরঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।তুই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হুম হুম করছিস কেন?
বন্যাঃ আরে আবির,আমাদের তীব্র মনে হচ্ছে প্রেমে পরেছে।দেখছিস না, এক ধ্যানে কিরকম মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। ডাল মে কুছ কালা হে।
আশাঃ ডাল মে কুছ কালা নেহি।পুরো ডালহি কালা। তা পরে বোঝা যাবে।এখন ওকে ধাক্কা মেরে হুশে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
সাব্বিরঃ লাভ এট ফাস্ট সাইড।অবশেষে আমাদের তীব্রও কারো প্রতি মুগ্ধ হলো।
সবাই এতো কথা বলছে কিন্তু তীব্রর কানে কোন কথাই ঢুকছে না।আশার ধাক্কায় ওর হুশ ফিরে এলো।
আবিরঃ কুছ কুছ হোতা হে।
তীব্রঃ ধূর,তেমন কিছু নয়।চল, আমাদের যেতে হবে তো।এখানে বেশি সময় থাকলে আমাদের চিনে ফেলবে।রাত শেষ হওয়ার আগে আরো কতগুলো বস্তিতে ত্রাণ পৌঁছাতে হবে তো।
বন্যাঃ তাতো আমরা কখন থেকেই বলছি।কিন্তু তোর তো কোন হুঁশ নেই। কি যে ভাবছিলি এতো কে জানে?
সাব্বিরঃ মেয়েটাকে কি করবি? তাতো বললি না।এখানে একা এভাবে রেখে যাওয়াতো ঠিক হবে না।দিনকাল ভালো না। যদি কোন ক্ষতি হয়?
তীব্রঃ আমিও তাই ভাবছি।এখন কি করবো মেয়েটাকে? আচ্ছা তোরা বরং চলে যা।অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে কোলে করে নিয়ে সামনে কাউকে জিজ্ঞেস করি ওর বাসা কোথায়?কেউ যদি বলতে পারে তখন পৌঁছে দিয়ে আসবো।
আশাঃ বাহ বাহ!!! আর কিছু নয়।সোজা কোলে তুলে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবি।তুই ঠিক আছিস তো তীব্র? আই মিন তোর শরীর খারাপ করিনি তো।
তীব্রঃ কথা কম বলে ভাগ এখান থেকে।
সাব্বিরঃ হ্যাঁ,হ্যাঁ। চল জলদী।ওদের ক্যামেস্ট্রীতে আমরা ডিস্টার্ব করবো তো।
তীব্রঃ ফালতু কথা বলে মেজাজ গরম করিস না।আমি যেহেতু অজ্ঞান করেছি আমাকেই তো ওর সেফটির কথা বিবেচনা করতে হবে। আমি একজন মানুষ হিসেবে ওর সাহায্য করতে চাইছি।আর ওকে অজ্ঞান না করে তো কোন উপায় ছিলো না। ভাগ্যিস ঠিক সময়ে ওকে দেখতে পেয়েছি।নয়তো আমাদের খবর সবাই জেনে ফেলতো।আমাদের প্রধান কাজই তো না জানিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা।যাতে ডান হাত দিলে বাম হাত কখনো না জানে।
আবিরঃ হয়েছে আর জ্ঞান বিতরণ করতে হবে না। আমরা যাচ্ছি। তুই মেয়েটাকে পৌঁছে দিয়ে পূর্বের বস্তিতে পৌঁছে যাস।
মালবাহী ট্রাকে করে বন্যা,আশা,আবির, সাব্বির চলে গেল।তীব্র রাইকে কোলে তুলে রোডের দিকে হাঁটতে লাগলো। রাই ওর কোলে গুটিসুটি মেরে আছে।একসময় ওর বাড়ির গেইটে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই সে বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে তীব্র খুব বড় অন্যায় করে ফেলছে।
🌺🌺🌺
সারা শহর তন্নতন্ন করে ফেলেছে তাসিন।কিন্তু ওর বোনের কোন দেখা মিলেনি।রাই যেখানে যেখানে যেতে পারে সেই জায়গাগুলো উলোটপালোট করেও পায়নি।এমনকি যেখানে জীবনে যায়ও নি সেই জায়গাগুলোও তালাশ করেছে। রাত দুটোর নিস্তব্ধতায় শুধু ওর চোখের পানি ও নাম না জানা নিশাচর পাখির ডাক আসছে।শেষ পর্যন্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় নিজের বাড়ি ফিরে এলো।গেইট দিয়ে ঢুকতেই দারোয়ান চাচা করিম দৌড়ে এলো।
করিমঃ তুমি ওহোন আইলা বাজান।
তাসিনঃ আমি বোইনাকে পাই নি।ও আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেল? চাচা,রাইপরী কি ফিরেছে?
করিমঃ আমি তোমার লিগাই অপেক্ষা করতা ছিলাম। একখান কালা জ্যাকেট পরা পোলা তোমার বোইনেরে কোলে কইরা দিয়া গেছে। রাই মা-মণি এখন ঘরেই আছে,ঘুমাইতাছে।তুমি গাড়ি রাইখা ঘরে যাও।
তাসিনঃ কোন ছেলে? কে এসেছিলো? আমাকে কল করেন নি কেন?আমার রাইপরী ঠিক আছে তো?কখন এসেছিলো?আমার বোন কোথায় গিয়েছিলো?
তাসিন একদমে কথাগুলো বলে নিশ্বাস ছারলো।ও পুরো ব্যস্ত হয়ে পরছে।করিম চাচা মুচকি হেসে উত্তর দিলো।
করিমঃ তুমি ব্যস্ত হইয়ো না।রাই মা-মণি ভালাই আছে।ঐ মাঠের মধ্যে পোলাডায় মা-মণিরে পাইছে।তাই নিজে কোলে কইরা দিয়া গেছে। তবে আমি পোলাডারে ঠিকমতো খেয়াল করি নাই। প্রথমে আমিও ইচ্ছা মতো কথা শুনাইছি।কিন্তু পোলা খারাপ না।এত বয়স হইছে মানুষ চিনবার পারি।ওয় নিজে কোলে কইরা মা-মণি রে রুমে দিয়া চইলা গেলো।তবে পোলাডার আচারণ একটু অদ্ভুত লাগলো।
তাসিনের কানে বাকি কথা ঢুকলো না।গাড়ির দরজা বন্ধ না করেই দৌড়ে বোনের রুমে চলে গেল। গিয়ে দেখে খুব শান্ত হয়ে সে ঘুমোচ্ছে। সামনে গিয়ে বোনের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।এতক্ষণে প্রাণপাখি টা ফিরে এসেছে। তার বোনকে সুস্থ দেখে ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
তাসিনঃ আমার এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো আমি তোকে হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া তিনি তোকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।এবার আমার খোঁজ লাগাতে হবে কে তোকে এখানে পৌঁছে দিলো।তুই বাইরে বা গেলি কি করে? যদিও সেটা আমার বা হাতের খেল।(বাঁকা হাসি দিয়ে)
মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।রাজনৈতিক দলের একজনকে কল করে সবকিছু জানিয়ে দিলো।আর ছেলেটার খোঁজ প্লাস পুরো ডিটেলস তাকে ভোর সকালের মধ্যে জানাতে বললো।
তাসিনঃ এটা যদি আমার শত্রুপক্ষের কাজ হয় তাহলে অনেক বড় ভুল করলি তোরা।এর মাশুল খুব ডেঞ্জারাসভাবে দিতে হবে তোদের। যাস্ট ওয়েট এন্ড সি।সামনের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকিস।
তখনি তাসিনের চোখ গেলে রোডের দিকে।সেখানে একটা ছায়ামূর্তি ওকে দেখে দ্রুত গাছের আড়ালে চলে গেল।সেখানে আবছা লাইটের আলো থাকায় তাসিনের চোখ এড়ালো না।
তাসিনঃ কে ছিলো ঐখানে?আমার রাজনীতিতে এমনি অনেক শত্রু আছে। তাদের মধ্যে কেউ কি এমন করেছে?গাছের আড়ালে কে গেল?আমাকে আরো সাবধান থাকতে হবে।রাজনীতি করেও শান্তি নেই। এখন আবার আমার বাসার সামনে এসে আমাকে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে পরলো তাসিন।ফ্রেশ হয়ে বোনকে দেখে, বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।সকাল সকাল আবার ক্লাশ করে জব করতে যেতে হবে।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।
অপরদিকে যে এতক্ষণ আড়াল থেকে তাসিনকে দেখছিলো সে এক রহস্যময়ী হাসি দিয়ে নিজের ডেরার দিকে পা বাড়ালো।
#চলবে