দ্বিতীয় সূচনা পর্ব-১+২+৩

0
1272

#দ্বিতীয়_সূচনা
#সূচনা_পর্ব
লেখা – আফরোজা আক্তার

বন্দনা আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ। তুমি চলে গেলে আমি পঙ্গু হয়ে যাব। আমার শরীরের সমস্ত রক্ত কণিকা তাদের কার্যকলাপ ধীরে-ধীরে বন্ধ করে দেবে। বন্দনা শুনছ আমার কথা। প্লিজ আমায় ছেড়ে চলে যেও না। — হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় ফারহানের। শোয়া থেকে উঠে বসে সে। আজও বন্দনাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছে। ইদানীং প্রায় সময়ই এমন হচ্ছে যে, সে দুঃস্বপ্ন দেখছে। বেড টেবিলে ল্যাম্পের পাশে থাকা গ্লাসটা হাতে নেয় ফারহান। এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে৷
ফোনটা হাতে নেয় ফারহান। রাত এখন প্রায় তিনটা। সকালে অফিসে যেতে হবে। সজাগ থাকলে চলবে না। বন্দনা চলে যাওয়ার পর থেকে নিজেকে সব কিছুতেই ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে ফারহান। নিজেকে ব্যস্ত রাখার একটাই কারণ, বন্দনার অনুপস্থিতিটা সে ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু পারে না।
বন্দনার চলে যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারেনি ফারহান। দুই বছর পাঁচ মাস হলো বন্দনা ফারহানকে রেখে চলে গেছে। বন্দনাকে ভীষণ ভালোবাসত ফারহান। তাই তার চলে যাওয়াটা আজও তাকে পোড়ায় প্রতিনিয়ত। এদিকে বন্ধু-বান্ধব এবং অফিসের কিছু কর্মকর্তাসহ বাসার মানুষগুলো তাকে নিয়মিত বলে, ফারহান নতুন করে ভাবতে শুরু করো। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। মাঝে-মাঝে তার প্রশ্ন করে, জীবনকে আরও একবার একটা সুযোগ দিয়ে দ্বিতীয় সূচনা কি করা উচিত?
ফারহানের ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক একটাই কথা ভাবে, বন্দনার মতো কি দ্বিতীয় কেউ হতে পারে? বন্দনার মতো কি দ্বিতীয় কেউ তাকে সেই সুখটা দিতে পারবে? দ্বিতীয় সূচনা করা কি সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে? ফারহান উত্তর খুঁজে পায় না। সে কেবল বন্দনাতেই লেপ্টে থাকতে চায়। বন্দনা ব্যতীত অন্য কিছু ভাবনাতেও আনতে চায় না ফারহান। বন্দনার শাড়ি, চুড়ি, গয়না আজও সে তার কাবার্ডে যত্ন করে তুলে রেখেছে। সে বিশ্বাস করে বন্দনা ফিরে আসবে। হ্যাঁ বন্দনা একদিন না একদিন ঠিক ফিরে আসবে। অথচ এই অহেতুক বিশ্বাসের যে কোনো মানে হয় না এটা সে নিজেও বোঝে। তাকে ইদানীং ছয়/সাত বছরের বাচ্চার মতো লাগে যেখানে তার বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ ছাড়িয়েছে।

সকাল নয়টা। নাস্তার টেবিলে সবার সঙ্গে ফারহানও বসে আছে। রমজান শেখের সম্পত্তির অভাব না থাকলেও তার পরিবারে হাসির ভীষণ অভাব৷ শেখ ভিলা আগে ভীষণ হাসিখুশিতে ভরপুর থাকত। যেন রোজই এখানে কিছুর না কিছুর আয়োজন চলত। বন্দনা চলে যাওয়ার পর থেকে রওশন বেগমও চুপ হয়ে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি কথা তিনি বলেন না। কিন্তু ইদানীং তার মাথায় ভূত চেপেছে। ফারহানের বিয়ে ভূত৷ যেই ভূত হাজার ঝাটা-পেটা করলেও নামবে না।
রমজান শেখের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ফারহান সবার বড়ো। মেজ ছেলে ফারাশ এবার ফাইনালে আছে। আর ছোটো মেয়ে সাজি ৩য় সেমিস্টারে। তারা দু’জনেই বাবা আর বড়ো ভাইকে ভীষণ ভয় পায়। এ বাড়িতে রমজান শেখ এবং ফারহান যা বলে তাই-ই হয়। আর এরা দু’জন এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
ফারহানকে নাস্তার টেবিল ছাড়া আর পাওয়া যায় না। এই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চান না রওশন বেগম।
‘ফারহান, একটা কথা বলতে চাইছিলাম তোকে।’
‘হ্যাঁ মা, বলো।’
‘ফারহান, এভাবে আর কতদিন? এবার অন্তত আমাদের কথা শোন বাবা।’
‘তোমাদের কোন কথাটা শুনিনি আমি।’
‘ফারহান, এবার অন্তত বিয়েটা নিয়ে ভাব বাবা।’
‘মা, আমার কি মনে হয় জানো। আমাকে খেতে বসতে দেখলেই তোমার এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতেই হয়। এর থেকে ভালো আমি আর খেতেই না বসি।’
ফারহান টেবিল থেকে উঠে সোজা বের হয়ে যায়। রওশন বেগম ব্যর্থ নিঃশ্বাস ফেলেন। রমজান শেখ বলে,
‘ছেলে যখন এইসব পছন্দ করে না। শুধু-শুধু বলতে যাও কেন?’
‘ওর কষ্ট আমি দেখতে পারি না।’
মায়ের কথা শুনে ফারাশ বলে,
‘মা, ভাইয়াকে আরেকটু সময় দাও। ঘটনাটা ভুলতে দাও আগে। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘গত আড়াই বছর কি কম সময় ফারাশ? কষ্ট কি আমাদের হয়নি? দুঃখ কি আমরা পাইনি?’
‘আমাদের সবার থেকে ভাইয়ার কষ্ট টাই বেশি মা। আফটার অল জিনিসটা তো তার খোঁয়া গেছে।’
ফারাশও বের হয়ে যায়। রওশন বেগম সাজিকে বলে,
‘তুইও কি জ্ঞান দেওয়ার জন্য বসে আছিস নাকি?’
‘আমি আর কাকে জ্ঞান দিব মা। আমি তো জ্ঞান খাই। এই মনে করো, পরোটা, ডিম, জুস এইসবের সাথে মাখিয়ে জ্ঞানও খাই।’
‘উঠ এখান থেকে। ফাযিল মেয়ে কোথাকার।’
মেয়ের কথা শুনে রমজান শেখ পত্রিকার আড়ালে হাসছেন। মায়ের ধমক খেয়ে সাজিও উঠে চলে যায়। রওশন বেগম ক্ষেপে গিয়ে বলেন,
‘আমারই যত জ্বালা। আল্লাহ আমাকে নেয়ও না এই সংসার থেকে। সব কষ্ট ভোগ করার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

খাইরুল সাহেবের বাসার মানুষজন একেকজন একেক রকম। একেকজনের একেক রকম। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ফরমায়েশ। সবার সব ফরমায়েশ শুনতে-শুনতে আয়শা বেগম হিমশিম খেয়ে যান। সেই ভোর ছয়টায় উঠে রান্নাঘর ঢুকেন। বের হোন সাড়ে আটটার পর। অবশ্য তাকে সাহায্য করে আরও একজন। আয়শা বেগম মনে করেন তাকে ছাড়া তিনি অচল।
খাইরুল এবং আয়শা দম্পতির তিন ছেলে মেয়ে। বড়ো ছেলে হাসান একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। মাস চারেক হবে বিয়ে করেছে। বউ যেন ননির পুতুল। আয়শা বেগম ছেলের বউয়ের ওপর ভীষণ রাগ। সব কাজ তাকে করতে হয়। কোনো কাজই বউকে দিয়ে করানো সম্ভব হয় না। মেজ মেয়ে রত্না ইন্টারে পড়ে। ছোটো মেয়ে মনি এবার ক্লাস নাইনে। আর তাদের সাথে থাকে বাবা-মা মরা খাইরুল সাহেবের এতিম ভাগনি অয়নন্দিতা। এই সেই অয়নন্দিতা যাকে ছাড়া আয়শা বেগম অচল। ভোর বেলা নামাজ পড়ে মামীর সঙ্গে রান্নাঘর টুকিটাকিতে হাত বাড়ায় সে। জগত হারে আয়শা বেগম ভীষণ ভালো মানুষ। ভাগনিকে মায়ের ভালোবাসা দিয়েই কাছে রেখেছন। অয়নন্দিতা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। খাইরুল সাহেব এবং আয়শা বেগম তাদের তিন ছেলে মেয়ের মতোই অয়নন্দিতাকেও সমান ভালোবাসা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবেন। মামার সংসারটাকে একজোট করে রেখেছে অয়নন্দিতা। দুটো ছোটো মামাতো বোনদের পড়াশোনা এবং যত্নের ব্যাপারে সে সচেতন। বড়ো ভাই এবং তার বউয়ের ভালো লাগা খারাপ লাগার ব্যাপারেও সে এক নাম্বার। যদিও হাসান অয়নন্দিতাকে বোনের মতোই দেখে। সমস্যা করে হাসানের বউ মিলি। কোনো এক কারণ অয়নন্দিতাকে সে দেখতে পারে না। তাতে অবশ্য অয়নন্দিতার কিছু আসে যায় না। সে তার মতো থাকে।

বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন খাইরুল সাহেব। আয়শা বেগম বুঝতে পেরেছেন, তার স্বামী কিছু ভাবছেন। কাছে গিয়ে বসেন তিনি। প্রশ্ন করেন,
‘কী চিন্তা করছ?’
‘পাশের গলির আনোয়ার ভাই একটা প্রস্তাব দিলেন গতকাল। ওইটা নিয়েই ভাবছিলাম।’
‘প্রস্তাব! কীসের প্রস্তাব? আর আমাকে তো কিছুই বলোনি তুমি।’
‘নিজেই আগে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে চাচ্ছিলাম। তাই আর তোমাকে বলিনি।’
‘এখন বলো কীসের প্রস্তাব?’
‘আনোয়ার ভাই অয়নন্দিতার জন্য একটা প্রস্তাব এনেছেন। ছেলে নাকি ভালো। বিরাট পয়সাওয়ালা। সম্পত্তির অভাব নেই। কিন্তু সমস্যা একটা আছে।’
‘কী সমস্যা?’
খাইরুল সাহেব তার স্ত্রীর চোখের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকেন। আয়শা বেগম আবারও প্রশ্ন করেন,
‘কী হলো বলো, কী সমস্যা?’

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_২
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

টিচার্স রুমে পিওনের আগমন।
‘স্যার, আসব?’
‘হ্যাঁ আসেন৷’
‘স্যার, আপনার কাছে একজন লোক আসছে। দেখা করতে চান।’
‘কে?’
‘তা তো জানি না স্যার।’
‘আচ্ছা পাঠিয়ে দিন।’
‘আচ্ছা স্যার। আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
শরীফ আহমেদ। পেশায় লেকচারার। তার সাথের বন্ধুরা কেউ ব্যাংকার। কেউ ভালো কোম্পানির ম্যানেজার। কারো নিজস্ব বিজনেস। আবার কেউ বিদেশে স্যাটেল।
কিন্তু তিনি হলেন শিক্ষক। তার কাছে কেন যেন শিক্ষকতা করতেই ভালো লাগত। তাই পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন।
‘শরীফ সাহেব, অনুমতি পেলে ভেতরে আসতাম।’
শরীফ আহমেদ দরজার দিকে তাকায়। আনন্দে দু’চোখ জ্বল-জ্বল করে ওঠে তার। প্রায় অনেকদিন পর দেখল এই মানুষটাকে সে। তার জীবনে এই মানুষটার অবদান কিছুতেই ভুলতে পারবে না সে। নিজে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়।
‘ফারহান, তুই এখানে! প্লিজ ভেতরে আয়।’
‘হ্যাঁ, আসতে হলো। লেকচারার সাহেব তো খোঁজ খবর রাখে না। তাই আসা লাগে।’
‘আর বলিস না ভাই ভীষণ ব্যস্ত থাকা হয়।’
‘লেকচারার সাহেবদের ভীষণ ব্যস্ততা। তাই না?’
‘খোঁচা মারিস না তো। বল কী খাবি? কফি নাকি চা?’
‘খুব সহজে যেটা পাওয়া যাবে সেটাই খাব।’
‘হা হা। চেঞ্জ আর হইলি না।’
শরীফ খেয়াল করছে ফারহানের মুখটা বিষন্ন হয়ে আছে। এই বিষন্নতার কারণ শরীফের অজানা নয়। তাদের সার্কেলের সবাই মোটামুটি ফারহানেত ক্রাইসিসটার ব্যাপারে জানে। কিন্তু জেনে আর কী করা যায়। যা করার ওই যে উপরে যিনি বসে আছেন তিনিই করেছেন। তার হাতে সবাই কাঠের পুতুল। তিনি যেমন নাচান, তেমনই নাচতে হয় সবার। শরীফ ফারহানকে প্রশ্ন করে,
‘এনিথিং রং ফারহান৷’
‘সব কিছুই তো রং হচ্ছে রে।’
‘কী হয়েছে বল তো। এই যে চা চলে আসছে।’
‘বাসায় তো থাকা যাচ্ছে না।’
‘কেন কী হয়েছে?’
‘বিয়ে, বিয়ে, বিয়ে। মাথা নষ্ট করে দিছে।’
‘ফারহান, আমারও মনে হয় তোর এইবার অন্তত ভাবা উচিত।’
‘শরীফ, তুইও।’
‘হ্যাঁ। আমিও। দেখ, কোনো মানুষই কিন্তু চিরকাল একা থাকতে পারে না।’
‘আমি আছি। দিব্যি ভালো আছি।’
‘বন্দনার স্মৃতি নিয়ে আছিস। একটা ট্রমার মধ্যে আছিস। তাই এইসব ভাবছিস তুই।’
‘বাদ দে প্লিজ। ভালো আছি আমি। বিয়ে থা আর আমায় দিয়ে সম্ভব না।’
‘তোর জীবন তুই ভালো বুঝবি। আমরা তোর বন্ধু। আমরা তোর ভালো চাই। তাই বার-বার বলি।’
‘তোর বউ কেমন আছে?’
‘হ্যাঁ। ভালো আছে। তবে মন খারাপ করে। ফ্যামিলির কেউ মেনে নেয়নি তো।’
‘খালাম্মা কিছু বলে না তো।’
‘আরে নাহ। মা বাবা সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। তবে বুঝিসই তো। নিজের মা বাবা নিজেরই থাকে। তাই হয়তো জ্বলে।’
‘তুই শালা বিয়ে করলি তো করলি তাও আবার একেবারে ছাত্রীকেই বিয়ে করলি।’
‘এটাই ওর মা বাবা বলে। তবে কিছু করার ছিল না। আমি আমার নিজের ভাগ অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে নারাজ। ওর বাপটা আসলেই বজ্জাত। মেয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাতেই অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে ফেলছে। ভাব একবার। সে তো একবার অন্তত আমার সাথে কথা বলতে পারত। বলে নাই। পিয়া’র সামনে দুটো রাস্তা দিয়েছিলাম। এক – হয় আমার হাত ধরবে, দুই – নয় আমায় ভুলে গিয়ে ভালোমতো সংসারে মন দিতে হবে। অপশন দুই ওর জন্য ইম্পসিবল ছিল কারণ কলেজে এলেই আমায় দেখতে হবে। ও এমনিতেই শোকে মরে যাবে। তাই অপশন এক’ই রাজি হয়। সেদিনই বিয়ে করলাম। তবে তোর আর রাতুলের অবদান ভুলব না।’
‘আরে অবদান টবদান কিছু না। তোরা ভালো থাক। এটাই কামনা। তা তোর বউ ক্লাসে আসে নাকি?’
‘হ্যাঁ আসে। আসবে না কেন। আমায় দেখার জন্য একবার হলেও সে কলেজে আসে।’
‘বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে এমনই হবে।’
‘ও বাচ্চা! তোরে কে বলল?’
‘দেখলেই বোঝা যায়।’
‘বাদ দে। এরপর বল আর কী অবস্থা?’
‘মন ভালো নেই রে। অফিসেও মন বসতেছিল না। তাই এলাম তোর কাছে।’
জীবনে এমন কিছু বন্ধুর প্রয়োজন হয় যাদের সঙ্গে মনের সব দুঃখ শেয়ার করা যায়। যাদের সব বলা যায়। একে অপরের পাশে দাঁড়ানো যায়। এদের সার্কেলটা হচ্ছে তেমন। সবার জন্য সবাই পাশে থাকে। ফারহানের ক্রাইসিসের সময় সবাই মিলে তাকে বেশ সাপোর্ট দিয়েছে।
ফারহানের মনটা খানিকটা হলেও ভালো করার মতো একটা উপায় শরীফের মাথায় আসে।
‘ফারহান, যাবি আমাদের সঙ্গে?’
‘কোথায়?’
‘পরশু কলেজ থেকে দু’দিনের ট্যুরে যাওয়া হচ্ছে৷ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ৪ টা ইউনিট যাচ্ছে। চল আমার সঙ্গে।’
‘তোরা টিচার আর স্টুডেন্টরা যাবি। আমি যাব কীভাবে? না আমি টিচার না স্টুডেন্ট।’
‘তুই আমার সঙ্গে যাবি।’
‘নাহ রে। ইচ্ছে করছে না।’
‘আরে চল।’
শরীফ জোরপূর্বক ফারহানকে রাজি করায়। ফারহানও কয়েকবার না না করে পরে রাজি হয়। তার কাছেও মনে হচ্ছিল নিজেকে সময় দেওয়া উচিত। সব কথা শেষ করে ফারহান বিদায় নেয় শরীফের কাছ থেকে।
ফারহান শরীফের রুম থেকে বের হয়ে আনমনে হেঁটে বের হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময়ই পেছন থেক শরীফ ডাক দেয়। শরীফ তার হাতের ইশারায় দেখাচ্ছে যে, ফারহান তার ফোন টেবিলেই ফেলে রেখে এসেছে। ফারহান হাঁটতে-হাঁটতেই পেছনে ফিরে। আর তখনই,,,
‘আহ,,,,’
ফারহান ঘুরে তাকাতেই দেখে একজন পড়ে গেছে। বুঝতে পারে ধাক্কাটা তার সঙ্গেই লেগেছে আর মেয়েটা পড়ে গেছে। পড়ে তো যে কেউই যেতে পারে। এই মেয়েটাও পড়ে গেছে। ব্যাপার না কিন্তু ঘটনা ঘটল আরেক জায়গায়। পাশে পড়ে থাকা ভাঙা গ্লাসের উপর গিয়ে মেয়েটার হাত পড়ে। ভাগ্য ভালো পুরো শরীর নিয়ে পড়েনি। নয়তো কী যে হতো।
শরীফ দ্রুত পায়ে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে সে নিশ্চিত পড়েছে কে। ফারহান যেন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতেই পারেনি তার দ্বারা কারো এমন ক্ষতি হবে। মেয়েটার হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। শরীফ এসে মেয়েটার হাত চেপে ধরে।
‘অয়নি, লেগেছে বেশি। এক্সট্রিমলি সরি। আসলে আমারই ভুল। আমিই হঠাৎ পেছন থেকে ওকে ডাকলাম।’
‘ইটস ওকে স্যার।’
‘ব্যথা করতেছে নাকি?’
‘তা তো করছেই। সমস্যা নেই স্যার। ঠিক হয়ে যাবে।’
‘পিওনকে আমি গতকালকেও বলেছিলাম এখান থেকে গ্লাস ভাঙাগুলো ফেলে দিতে।’
পাশ থেকে অয়নন্দিতার বান্ধবী বলে ওঠে,
‘ইশ! রক্ত পড়তেছে তো স্যার।’
‘হ্যাঁ। তাই তো দেখছি। কী একটা অবস্থা। চলো তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।’
‘লাগবে না স্যার। আমি নিজেই যেতে পারব।’
‘কী বলো নিজেই যেতে পারবা।’
ফারহান এগিয়ে আসে। মুখটা তার অপরাধীর মতো হয়ে আছে। অয়নন্দিতার মুখের দিকে একবার তাকায় সে। এত স্নিগ্ধ আর মায়াময় মুখটা ফারহানের বুকে হালকা ধাক্কা দেয়। অয়নন্দিতার হাতের দিকে নজর করলে দেখতে পায় হাত থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছে। তার মনে হচ্ছিল, মেয়েটা মুখে কিছু না বললেও তার যন্ত্রণা হচ্ছে ভীষণ। চোখের কোণে পানি জমে গেছে। ফারহান যেহেতু তার ব্যথার কারণ, তাই ফারহানই তাকে নিয়ে যাবে হসপিটালে৷
‘আপনি প্লিজ আমার সঙ্গে চলুন। আমিই নিয়ে যাব। প্লিজ আসুন।’
‘নাহ। ঠিকাছে। আমি যেতে পারব।’
‘নাহ আপনি যেতে পারবেন না। আর তখন থেকে এমন না না করছেন কেন। আমার জন্য আপনি ব্যথা পেয়েছেন। রক্ত বের হচ্ছে৷ এরপরও বলছেন আপনি নিজে যেতে পারবেন। প্লিজ, আমায় এভাবে অপরাধী করবেন না। চলুন আপনি।’
লোকটার আচরণ অদ্ভুত লাগছে অয়নন্দিতার কাছে। একে তো ধাক্কা দিল। ব্যথা পেল আরেকজন। এখন উল্টো তাকেই ধমকাচ্ছে।
শরীফ ফারহানকে চোখের ইশারা করে। এরপর অয়নন্দিতাকে বলে,
‘অয়নি, ও আমার বন্ধু। তুমি ওর সঙ্গে যাও। পরে সেখান থেকে বাসায় চলে যেও।’
‘কিন্তু স্যার,,,’
‘যাও। সমস্যা নেই। আর ফারহান এই নে তোর ফোন।’
ফারহান আর তেমন কিছু না বলে অয়নন্দিতাকে নিয়ে বের হয়ে যায়। আর এদিকে অয়নন্দিতা, অপরিচিত একজন পুরুষের সঙ্গে কোথাও যেবে ভেবেই ভয়ে সিটিয়ে আছে। বান্ধবীরা দুটো টিস্যু দিয়ে তার হাতটা মুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু রক্তক্ষরণ কমছে না। গাড়িতে বার কয়েক ফারহান আড়চোখে অয়নন্দিতাকে দেখছিল। তার হাতের দিকে দেখছিল৷ মেয়েটা লাল হয়ে গেছে। হয়তো অপরিচিত বলে তার সামনে নিজের যন্ত্রণাটা দেখাতে পারছে না। নিজের ওপর চরম বিরক্ত লাগছে। আরেকটু সাবধান হলে মেয়েটার হাতটা আজ অক্ষত থাকত। কেটেছে তো কেটেছে একেবারে ডান হাতটাই কেটেছে। অনেক বড়ো সমস্যা হয়ে গেল মেয়েটার।

চলবে……………………..

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

‘ভাগ্য ভালো যে স্টিচ লাগে নি। তবে একটা ইনজেকশন দিতে হবে।’
সিনিয়র নার্সের কথা শুনে কিঞ্চিৎ ভয় পায় অয়নন্দিতা। মেয়েরা নাকি তেলাপোকায় ভয় পায়। কিন্তু অয়নন্দিতার ভয় ইনজেকশনের সুঁইতে। ছোটোবেলায় এক ইনজেকশন দিতে গেলে আশেপাশের এলাকা গরম করে ফেলত অয়নন্দিতা। সেই অভ্যাসটা বড়ো হওয়ার সাথে-সাথে চলে গেলেও ভয়টা এখনও আছে তার মনে। ইনজেকশনের কথা শুনে অয়নন্দিতার মুখটা শুকিয়ে ছোটো হয়ে যায়। পাশ থেকে ফারহান অয়নন্দিতার মুখটা দেখছে। সে বুঝতে পারছে যে, মেয়েটা ভয় পেয়েছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
নার্সের কথা শুনে অয়নন্দিতা বলে,
‘ইনজেকশন কি দেওয়া খুবই প্রয়োজন?’
‘হ্যাঁ। রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না।’
‘না মানে, মেডিসিন নিলে ঠিক হবে না। ইনজেকশন দিতেই হবে।’
‘হ্যাঁ। দিতে হবে। সেইজন্যই বললাম। আর মেডিসিনও নিতে হবে। জ্বর আসতে পারে কিন্তু। বাই দ্যা ওয়ে পড়লেন কি করে? ভালো ভালো শুধু কেটেছে। বড়ো কোনো সমস্যা হয়নি।’
নার্সের কথা শুনে ফারহান নড়েচড়ে বসে। ভাবছে, মেয়েটা বলে দেবে না তো আবার। বলে দিলে নার্স আবার কি না কি বলে৷ তখনই অয়নন্দিতা বলে,
‘আসলে হাঁটছিলাম তো ঠিকঠাক। মাথাটা ঘুরে গেল। পড়ে গেলাম। খেয়াল ছিল না যে কোথায় পড়েছি বা কিছু।’
‘যাক। বড়ো কিছু যে হয়নি এটাই অনেক।’
ফারহান এতক্ষণ চুপচাপ বসে-বসে অয়নন্দিতার মিথ্যা কথা গিলছিল। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটালো নার্স ম্যাডাম।
‘খুব কেয়ারিং হাসবেন্ড আপনি। বউকে নিয়ে ছুটে চলে এলেন।’
‘জি!!’
ফারহান এতটাই অবাক হয় যে, যেন সে কোনো অদ্ভুত কিছু শুনেছে। অয়নন্দিতা নিজেও একটু অবাক হয় নার্সের কথা শুনে। এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে মহিলা কাজ কম কথা বেশি বলে। আপাতত তারা দু’জনেই চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। আর বেশি কথা বললে হয়তো এখানেই বাচ্চার বাবা-মা বানিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর৷ ফারহান ভাবছে, যত দ্রুত এখান থেকে বের হওয়া যায়। অয়নন্দিতারও একই ভাবনা, কখন বের হবে এখান থেকে।

দশ দিনের মেডিসিন কিনে ফারহান অয়নন্দিতাকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা হয়। গাড়িতে দু’জনেই চুপচাপ। ফারহান বার কয়েক অয়নন্দিতার হাতটা খেয়াল করে। হাতটা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন করা উচিত হবে কি না ভেবে-ভেবেও প্রশ্ন করে ফারহান,
‘আপনি তখন মিথ্যা বললেন কেন?’
‘কখন?’
‘যখন নার্স আপনাকে প্রশ্ন করল আপনি ব্যথা কীভাবে পেয়েছেন?’
‘ওহ।’
‘বলুন, মিথ্যা কেন বললেন?’
‘সব জায়গায় সব সত্য বলতে হয় না।’
‘মিথ্যা বলারও কারণ ছিল না। কারণ আমি তো আর আপনাকে ইচ্ছে করে ব্যথা দেইনি। ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট।’
অয়নন্দিতার কথা বলতে ভালো লাগছে না। এই মুহুর্তে তার ঘুমোতে ইচ্ছা করছে। যদি এখানে কেউ তাকে একটা বালিশ আর তার প্রিয় কাঁথাটা দিত। তবে সে আরাম করে তিন থেকে চার ঘন্টার একটা দারুণ ঘুম দিত। ইনজেকশনটা দেওয়ার পর থেকেই তার ঘুম পাচ্ছে। মিনিট সাতেক পর ফারহান আবারও জিজ্ঞেস করে,
‘বাসাটা যেন কোথায়?’
ঘুমের ঘোরে অয়নন্দিতার জবাব দেয়,
‘আপনার বাসা কোথায় আমি কেমন করে বলব?’
‘এক্সকিউজ মি ম্যাডাম, আমার বাসা না। আপনার বাসার কথা জিজ্ঞেস করেছি। কোথায় যেন বললেন।’
‘সরি। চৌদ্দ নাম্বার সেক্টর। ৬৪ নাম্বার বাসা।’
‘ওকে।’

গাড়ি ব্রেক করার সাথে-সাথে অয়নন্দিতাও লাফ দিয়ে ওঠে। অয়নন্দিতার এই অবস্থা দেখে ফারহান বলে,
‘ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন নাকি আপনি?’
‘নাহ মানে, আসলে চোখটা লেগে গিয়েছিল আর কি।’
‘চোখ লাগার আর কোনো জায়গা পেল না।’
‘সরি,,, কিছু বললেন?’
‘নাহ নাহ। কিছু বলিনি। নামুন। আপনার বাসা এসে গেছে নিশ্চয়ই।’
‘ওহ হ্যাঁ। তাই তো। বাসা এসে গেছে।’
অয়নন্দিতা গাড়ি থেকে নেমে বাসার গেইটের কাছে গিয়েও ফিরে আসে।
‘কী ব্যাপার, ফিরে এলেন যে।’
‘আসুন না আমাদের বাসায়।’
‘নাহ। আজ আর যাব না। অফিসে কিছু কাজ জমা পড়ে আছে। এখন অফিসেই যেতে হবে। অনেক দেরি হয়ে গেল।’
‘আসলে আমি ভীষণ দুঃখিত।’
‘কেন, দুঃখিত কেন?’
‘এইযে, আমায় নিয়ে হসপিটালে গেলেন। আবার বাসায় পৌঁছে দিলেন। অনেকটা সময় নষ্ট হলো আপনার।’
‘হাতের ব্যথাটা তো আমার জন্যই পেয়েছেন। সো আমি দুঃখিত। আপনাকে দুঃখিত হতে হবে না। আসি তাহলে। ভালো থাকবেন।’
ফারহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। অয়নন্দিতাও গেইটের ভেতরে প্রবেশ করে।
গাড়িতে বসে-বসে ফারহান ভাবছে, মেয়েটার চিকিৎসা করিয়ে এখন ভালো লাগছে। বন্দনা আমি কোনো দিন কাউকে কষ্ট দেইনা। এটা তো তুমি জানো। তবুও আজ আমার দ্বারা একজনের রক্তক্ষরণ হলো। এটা আমি মানতে পারেনি। তাই নিজেই তার সব চিকিৎসা করালাম। ভালো করেছি না আমি বন্দনা। মেয়েটা কিছুই বলল না জানো তো। একদম চুপচাপ। অনেকটা চাপা স্বভাবের। মিথ্যা বলে আমার দোষটা ঢেকে দিল। বন্দনা জানো, মেয়েটা প্রায় তোমার মতো। তার চোখ জোড়া বহমান নদীর মতো। ঠিক যেমন তোমার চোখ জোড়া শান্ত। জানো বন্দনা, তুমি যেমন ব্যথা পেলে সহ্য করে নিতে এই মেয়েটাও ঠিক তেমন করেই সহ্য করল। আমাকে একটা কটু কথাও বলেনি। চেহারায় মিল নেই তোমাদের কিন্তু আচরণে কতটা মিল দু’জন মানুষের। তুমি থাকলে বলতে, এ তো আমার জেরক্স কপি ফারহান। কিন্তু এটা বলার জন্য তুমি আমার পাশে নেই বন্দনা।

রাত নয়টা।
আয়শা বেগম অয়নন্দিতার কপালে জলপট্টি দিচ্ছেন। সিনিয়র নার্সের কথা ফলে গেছে। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর চলে এসেছে অয়নন্দিতার। ব্যথা আর ইনজেকশনের সুঁইয়ের কারণেই এই জ্বর। খাইরুল সাহেব যেন অস্থির হয়ে গেছেন ভাগনির জ্বর দেখে। এতিম মেয়েটার কিছু হলে আর কারো জ্বলুক কি না জ্বলুক। তার জ্বলে। ভীষণ জ্বলে। দুপুর বেলা ব্যান্ডেজ করা হাত নিয়ে বাসায় আসা মাত্রই আয়শা বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কীভাবে হয়েছে, কখন হয়েছে, কোথায় হয়েছে, ব্যথা বেশি কি না জিজ্ঞেস করে-করে অয়নন্দিতাকে পাগল করে ফেলেছেন। অয়নন্দিতা যখন বলল তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তখনই আয়শা বেগম প্লেটে ভাত এনে নিজ হাতে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেন। দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অয়নন্দিতা ঘুমিয়েছে। অন্যান্যদিন নামাজের জন্য তাকে বলতে হয় না। আজ কয়েকবার ডাকার পরেও সে ঘুম থেকে সজাগ হয়নি। সাড়ে আটটার দিকেই জ্বর শুরু।
আয়শা বেগম খেয়াল করছেন অয়নন্দিতা কাঁদছে। কিন্তু কোনো শব্দ হচ্ছে না। নিঃশব্দে কাঁদছে সে। অবশ্য তার এই কান্নার কারণ তিনি ধরতে পেরেছেন। তিনি হালকা হেসে অয়নন্দিতার চোখের পানি মুছে দেন। এরপর বলেন,
‘একদিনের মধ্যেই জ্বর ভালো হয়ে যাবে। কান্নার কোনো প্রয়োজনই নেই৷’
মামীর কাছ থেকে পজিটিভ কথা শুনে স্বস্তিতে বুকটা হালকা হয় অয়নন্দিতার।

ফারহান সবেমাত্র ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। এরই মাঝে শরীফের ফোন। ডাটা অন রাখলেই ঝামেলা। এ ফোন করে ও ফোন করে। তবে স্ক্রিনে লেকচারার সাহেব নামটা ভাসতেই ফারহান ফোনটা রিসিভ করে। বলা হয়নি, ফারহান পিঞ্চ করে মেসেঞ্জারে শরীফের নিক নেইম সেভ করেছে লেকচারার সাহেব দিয়ে।
‘হ্যালো।’
‘হ্যাঁ, কী খবর ফারহান সাহেব।’
‘মজা নেস নাকি?’
‘আমার নাম যখন লেকচারার সাহেব দেও, তখন মনে থাকে না।’
‘আমি দিতে পারি, তুই পারিস না।’
‘অভ্যাস ত্যাগ করো বন্ধু। সেই তুমি এখনও বদলাইলা না।’
‘আচ্ছা, ওই মেয়েটার আর কোনো খবর আছে?’
‘কোন মেয়েটার?’
‘ওই যে কি যেন নাম। পড়ে গেল। আমি হসপিটালে নিয়ে গেলাম।’
‘ওহ অয়নি। নাহ খোঁজ খবর পাইনি। আগামীকাল কলেজে গিয়ে দেখি খোঁজ নেব একবার। বাই দ্যা ওয়ে ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘ডক্টর কী বলল?’
‘স্টিচ লাগেনি। ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ইনজেকশন পুষ করল একটা। আর মেডিসিন দিয়েছে দশ দিনের। হোপ সো, দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।’
‘বেচারির ডান হাতটাই গেল।’
‘গিল্টি ফিল হচ্ছিল আমার। যদিও সরি বলেছি আমি।’
‘অয়নি মেয়েটা ভীষণ নম্র এবং ভদ্র। সারা কলেজ খুঁজে ওর নামে একটা রেকর্ড পাওয়া ভীষণ মুশকিল হয়ে যাবে।’
‘তুই কি আমায় মেয়েটার গুনগান শোনানোর জন্য ফোন দিয়েছিস?’
‘আরেহ নাহ। ওটা তো এমনি বললাম। কথার কথা আর কি। আচ্ছা শোন। তোর নাম লিস্টে রেখেছি। পরশু তুইও যাচ্ছিস আমাদের সঙ্গে।’
‘ওকে।’
‘দোস্ত, সকালে ক্লাস আছে। আপাতত রাখছি। আমি সময় করে কাল ফোন দেব। ওকে?’
‘ওকে। টেক কেয়ার।’
‘ইউ অলসো।’
এখন আর কাজ করবে না ফারহান। মাথা ভার হয়ে আছে তার। ঘুমাবে সে এখন। তাই ল্যাপটপ অফ করে দিয়ে ঘরের লাইট নিভিয়ে দেয় সে।

চলবে……………………….