দ্বিতীয় সূচনা পর্ব-৪+৫+৬

0
543

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

ছাত্র-ছাত্রী কম করে হলেও প্রায় ৩৫ জন হবে। টিচার্স সব মিলিয়ে ৮ জন। শরীফের ওয়াইফ এবং বন্ধু ফারহান সহ আরও দু’জন। বাসে ওঠার অপেক্ষায়। যে যার মতো বাসে উঠে গেছে। সবাই সবার পছন্দের সিটগুলোতেই বসেছে। বাস ভর্তি হয়ে যাওয়ায় ফারহান যাবে শরীফের সঙ্গে। মিনিট পাঁচেক ধরে বাস দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান বুঝতে পারছে না, সবই যখন রেডি তাহলে অপেক্ষা কীসের? সে শরীফকে জিজ্ঞেস করে,
‘এই অপেক্ষাটা কীসের জন্য?’
‘একজন স্টুডেন্টের জন্য।’
‘সে কি এখনও আসেনি?’
‘রাস্তায় আছে। আসতেছে।’
‘দায়িত্বহীন মানুষজনের জন্য আবার অপেক্ষাও করতে হয়। এতগুলো স্টুডেন্ট যাচ্ছে সবাই তো টাইমলি চলে এসেছে। তবে সে এখনও পৌঁছাতে পারল না কেন?’
ফারহানের কথার জবাবে শরীফ শুধু হালকা হাসল। এমতাবস্থায় বাস থেকে দু’জন স্টুডেন্ট নেমে শরীফের কাছে আসে।
‘স্যার, অয়নির জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি আমরা?’
‘শিওর। আমরা আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করব। টেনশন নিও না। অয়নি এলেই গাড়ি ছাড়া হবে। কেমন?’
‘থ্যাংক ইউ স্যার। ও একটু অসুস্থ। না হলে ও সবার আগেই পৌঁছাত।’
‘আমি জানি। ও যে যেতে পারছে এটাই অনেক।’
তাদের কথোপকথনগুলো পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল ফারহান। অয়নি নামটা শুনেই গত পরশুদিনের মুহুর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার। ফারহান ভাবছে, সেই মেয়েটা! সেও যাবে?
সবার কথার মাঝেই একটা সি এন জি সেখানে থামে। একজন সুদর্শন পুরুষ এবং একজন বয়স্ক লোক সি এন জি থেকে নামে। ফারহানসহ সবাই তাকিয়ে আছে। শরীফ তাদের দেখে হাসির মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
‘খাইরুল সাহেব এবং হাসান সাহেব দু’জন আজ একত্রে।’
হাসান এগিয়ে এসে সালাম দেয়। এবং হাত মেলায়। বলে,
‘অয়নিকে নিয়ে আসলাম।’
‘আমরা ওর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’
‘গত পরশু রাত থেকে এত পরিমাণ জ্বর ছিল ওর। গতকাল মা’কে বলে আমাকে দিয়ে হাই পাওয়ারের ওষুধ কিনিয়ে এনে খেয়ে জ্বর কমিয়েছে শুধু আজকে আপনাদের সঙ্গে যাবে বলে।’
‘এই ট্রিপে অয়নির যাওয়ার ইচ্ছা ছিল অনেক।’
তখনই খাইরুল সাহেব বলেন,
‘অয়নি কখনও তেমন কিছু চায় না আমাদের কাছে। বলতে পারেন, ওর শখ আহ্লাদ কিছুই নেই। শুধু এই আবদারটাই করেছিল। তাই অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ওকে আপনাদের সঙ্গে যেতে দিলাম স্যার।’
‘অয়নিকে দেখে রাখা হবে। চিন্তা করবেন না।’
পেছন থেকে ধীর গতিতে অয়নন্দিতা এসে পাশে দাঁড়ায়। হাসান তার কাঁধে হাত রাখে এবং বলে,
‘সব বলে দিয়েছি স্যারকে। তোর কোনো সমস্যা হবে না। আমি এখনও বলছি, তুই অসুস্থ। যেতে পারবি?’
ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত গলায় বলে,
‘যাই না আমি ওদের সবার সঙ্গে?’
কথাটা ফারহানের কানে থাকে। হাসান আর খাইরুল সাহেবকে আসতে দেখে ফারহান একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। সবার সব কথাই মোটামুটি কানে আসার। তবে অয়নির বলা কথাটা একদম স্পষ্টভাবে কানে লাগে তার। সে তাকায় অয়নির দিকে। হাতের ব্যান্ডেজটা এখনও আছে। চোখ মুখে অসুস্থতার ছাপ বোঝা যাচ্ছে।
হাসান বোনের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল,
‘মা ব্যাগে মেডিসিনগুলো রেখেছে। মনে করে খেয়ে নিস। আর কোনো সমস্যা হলে স্যারদের বলবি। কিংবা আমাকে অথবা বাবাকে ফোন করবি। এম বি কিনে দিয়েছি। আমি ভিডিওকল করব। কেমন?’
‘হুম।’
‘এতগুলো কথার জবাব ছোট্টো একটা হুম! অয়নি তুই কবে মন খুলে কথা বলবি বল তো।’
ভাইয়ের কথায় মাথা নিচু করে রাখে অয়নন্দিতা। শরীফ তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে তাদের বিদায় দেয়। ততক্ষণে অয়নন্দিতা তার বান্ধবীদের সাথে কথা বলে। শরীফ তাদের জানায় অয়নন্দিতা সবার সঙ্গে বাসে না অয়নন্দিতা শরীফদের গাড়িতে যাবে৷ এই গাড়িতে শরীফসহ তিনজন টিচার, শরীফের ওয়াইফ এবং ফারহান যাচ্ছে। অয়নন্দিতা তাদের সঙ্গেই যাবে।
কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় অয়নন্দিতার। সে ভেবেছিল বাসে সবার সঙ্গে মজা করতে-করতে যাবে।
‘স্যার আমি বাসেই যাই।’
‘তোমার ভাই কী বলে গেল, শুনেছ? আর তাছাড়া বাসে গেলে তোমায় শেষের সিটে বসতে হবে৷ সবাই আগে আগে এসে সামনের সিটগুলোতে বসে পড়েছে।’
‘কিন্তু স্যার,,,’
‘জার্নির পথটুকু শুধু অয়নি। এরপর তো বন্ধুদের সঙ্গেই থাকবে৷ চলো। কেমন?’
‘আচ্ছা।’
অয়নন্দিতা কথা ধ্যানে থাকার কারণে ফারহানকে তখন খেয়াল করেনি। তার ধারণার বাইরে ছিল যে ফারহানও যাবে। গাড়িতে বসতে গিয়ে দেখে ফারহানও আছে। একটু অবাক হয় অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতাকে অবাক হতে দেখে শরীফের ওয়াইফ মিলি বলে ফারহান ভাইয়াও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে আপু। কলেজে মিলি অয়নন্দিতার এক বছরের জুনিয়র। তাই আপু করেই ডাকে সে অয়নন্দিতাকে। যদিও অয়নন্দিতা যখন জানতে পারে মিলি তাদের স্যারের ওয়াইফ তখন থেকেই সে মিলিকে ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে। যদিও ম্যাডাম ডাকে মিলি ভীষণ আনকমফোর্টেবল ফিল করে। কিন্তু অয়নন্দিতার মুখ থেকে ম্যাডাম ডাকটা সরাতে পারেনি সে।
ফারহান অয়নন্দিতার এক্সপ্রেশন দেখে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তার মনে হচ্ছিল, সে যাচ্ছে এটাতেই মেয়েটার যত অস্বস্তি। আর মেয়েটার অস্বস্তি দেখে তারও অস্বস্তি লাগছে।

আধা ঘন্টা আগে গাড়ি ছেড়েছে। ভাগ্যক্রমে অয়নন্দিতা ফারহানের পাশেই বসেছে। সামনের সিটে অবশ্য শরীফ মিলি এবং আরেকজন টিচার বসেছেন। অয়নন্দিতার জানালার পাশের সিট ভালো লাগে। তাই সে জানালার পাশে বসেছে। যদিও এখানে আগে ফারহান বসেছিল। অয়নন্দিতা আমতা-আমতা করে জানালার পাশে বসার আবদার করলে ফারহানও তাকে বসতে দেয়।
জানালার পাশে বসে প্রকৃতি দেখছে অয়নন্দিতা। শো-শো করে বাতাস বইছে। জানালার পাশে বসায় বাতাস অয়নন্দিতার শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে তার। ভাবছে, শরীফ স্যার ভালোই করেছেন তাকে এই গাড়িতে নিয়ে। কী শান্তিতে জার্নি উপভোগ করা যাচ্ছে। চারপাশে কোনো চিৎকার চেঁচামেচি নেই। একদম শান্ত আর নিরিবিলি।
ফারহান এই মুহুর্তে বন্দনাকে মিস করছে। কয়েকবছর আগে ফারহান আর বন্দনা ঠিক এমনই একটা ট্রিপে গিয়েছিল। সেই দিনগুলোর কথা কখনও ভুলতে পারবে না ফারহান। সেই ট্রিপেই বন্দনা তাকে বলেছিল —
‘আমার জীবনের সেরা উপহার কি জানো ফারহান?’
‘কী?’
‘তুমি।’
‘আমি কীভাবে তোমার জীবনে সেরা উপহার হলাম?’
‘ফারহান, তুমি যে আমার কাছে কী, তা তুমি নিজেও জানো না।’
‘এত যে ভালোবাসো আমায় তুমি। তোমার এই ভালোবাসা আমি কোথায় রাখব বন্দনা।’
‘তোমার বুকের মধ্যে যেই জমিনটুকু আছে তার মধ্যেই রেখে দাও।’
‘রেখে দিলাম। কথা দাও। আমায় ছেড়ে কখনও কোথাও যাবে না।’
‘যাব না। কখনও কোথাও যাব না। কথা দিলাম।’
সেদিন বন্দনা কথা দিয়েছিল সে কোথাও যাবে না তাকে ছেড়ে। অথচ বন্দনা ঠিকই চলে গেছে। সে তার কথার খেলাপ করেছে। ক্ষমার অযোগ্য।
পাশে নজর যায় ফারহানের। অয়নন্দিতা ওপাশে জানালার গ্লাসে মাথা ঠেঁকিয়ে ঘুমাচ্ছে। ফারহান উপলব্ধি করতে পারছে তার পাশে যে একটা জলজ্যান্ত রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ বসে আছে বোঝাই যাচ্ছে না। সামান্যতম নড়াচড়া করছে না। কথাও বলছে না চুপচাপ বসেছিল এতক্ষণ। শেষবার যখন তাকিয়েছিল তখন দেখেছিল অয়নন্দিতা বাইরে তাকিয়ে আছে। আর এখন তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে। ফারহানের নজর অয়নন্দিতার হাতের দিকে। হাতটা হাটুর ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। সাদা হাতে সাদা ব্যান্ডেজটা বেশ মানিয়েছে।
অবশ্য এই ব্যান্ডেজটার জন্য সে দায়ী। ফারহানের ঘুম পাচ্ছে। সিটের পেছনের দিকে মাথা ঠেঁকিয়ে শুয়ে পড়ে ফারহান। গতকাল রাতে ঘুম হয়নি। এখন ঘুমোলে ক্লান্তিটা অবসান নেবে। মুহুর্তেই চোখ বুজে ফারহান।
সামনে থেকে শরীফ একবার পেছনে তাকায়। ফারহান আর অয়নন্দিতা। পাশাপাশিই বসে। দু’জনেই ঘুমোচ্ছে। হাতের ইশারায় এই দৃশ্য সে মিলিকে দেখায়। মিলিও একবার পেছনে তাকায়। এরপর শরীফের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছ শরীফ?’
‘খালাম্মাকে বলতে হবে। বলব একদিন সময় করে।’
‘ফারহান ভাইয়া কি রাজি হবে?’
‘ও বান্দা কি রাজি হবার মানুষ? রাজি করাতে হবে।’
‘আমি কী চাই জানো?’
‘কী?’
‘আমি চাই আমাদের মতো ফারহান ভাইয়াও ভালো থাকুক।’
‘ফারহানও ভালো ছিল। তুমি তো দেখনি। দেখেছি আমি। আমাদের সব বন্ধুদের মধ্যে ফারহান ছিল সব থেকে সুখী মানুষ। অঢেল সম্পত্তি, ব্রাইট ফিউচার, আর মিষ্টি একজন ভালোবাসার মানুষ। সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো ছিল ফারহান। কিন্তু কোনো এক ঝড়। সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। আজ ফারহানের ব্রাইট ফিউচার আছে। অঢেল সম্পত্তিও আছে। শুধু ভালোবাসার মানুষটাই নেই।

দুপুর আড়াইটা নাগাদ গাড়ি এসে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। অয়নন্দিতা এখনও ঘুমে। ফারহানেরও একই অবস্থা। শরীফ তাদের ডাক দেবে বলে পেছনে তাকাতেই দেখে দু’জন ভীষণ আরাম করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের তালের কখন যে অয়নন্দিতা ফারহানের কাঁধে নিজের মাথা রেখেছে তার অয়নন্দিতা নিজেও বুঝতে পারেনি। অন্যরা দেখার আগেই তাদের ঘুম থেকে ওঠাতে হবে৷ শরীফ নিঃশব্দে ফারহানের হাতে নাড়া দেয়। কারো ধাক্কা খেয়ে ফারহান ঘুম থেকে উঠে পড়ে। দারুণ একটা ঘুম দিয়েছে সে। পুরো রাস্তা জুড়েই সে ঘুমের রাজ্যে ছিল। সমস্ত ক্লান্তি কেটে গেছে তার। চোখ খুলেই ফারহান বুঝতে পারে তার কাঁধে অয়নন্দিতার মাথা। সে নড়তেও পারছে না। কী বিশ্রী ব্যাপার! ফারহান শরীফের দিকে তাকালে শরীফ তাকে আস্তে করে বলে,
‘দারুণ ঘুম দিলা দোস্ত। পুরো রাস্তাতেই ঘুমে ছিলা। আগামী তিন চারদিন না ঘুমালেও চলবে।’
‘ধুর। বাজে বকিস না।’
‘আচ্ছা এখন নাম। অয়নিকে ডাক দে। কেউ দেখে ফেললে নানান কথা বলবে।’
‘ঘুমের ঘোরে আমার কাঁধেই মাথা রাখতে হলো এনাকে।’
‘এই, এইভাবে কথা বলিস কেন? পাশে তুই-ই তো বসা ছিলি। আর তাছাড়া মেয়েটা অসুস্থ। আস্তে-আস্তে ডাক ওকে।’
ফারহানও শরীফের কথায় অয়নন্দিতাকে ডাকতে শুরু করে,
‘এইযে শুনছেন? এক্সকিউজ মি। এইযে মিস অয়নন্দিতা।’
অয়নন্দিতা ঘুমে এতটাই বিভোর ছিল যে তার কান অবধি ফারহানের কথা পৌঁছায়নি। এদিকে ফারহানের ভীষণ বিরক্ত লাগছে। ফারহান বাধ্য হয়ে অয়নন্দিতার হাতে নাড়া দেয়।
‘অয়নন্দিতা, আপনি শুনছেন? উঠুন প্লিজ। আমরা এসে গেছি।’
ফারহানের ডাকে অয়নন্দিতা চোখ মেলে নিজের মাথা ফারহানে কাঁধে আবিষ্কার করে। ভীষণ সংকোচ হচ্ছিল তার নিজেরও। ভাবছে, ছিঃ ছিঃ এটা কী হলো। ঘুমের মধ্যে অচেনা একজনের কাঁধে মাথা রেখে এইভাবে ঘুমানো কি উচিত হলো? লোকটা কী না কী মনে করে। বেশি কিছু না বলে অয়নন্দিতা — সরি, বুঝতে পারিনি বলেই কেটে পড়ার পায়তারা করল। ফারহানও ইটস ওকে বলে এই পরিস্থিতি থেকে কেটে পড়ার চেষ্টা করল।

দুপুরবেলা। সবার ক্ষুধার্ত। লাঞ্চ করা অতি আবশ্যক। তাই সবাই আগে লাঞ্চ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কলেজের ট্যুর বলে আগেই সব ম্যানেজ করা ছিল। সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসা হয়। অয়নন্দিতা তার বান্ধবীদের সঙ্গে বসে। সেখানে তাদের সঙ্গে শরীফের ওয়াইফ মিলিও ছিল। ফারহানসহ বাকি টিচাররা তাদের সামনের টেবিলেই বসে। অয়নন্দিতা আর ফারহানের বসার দূরত্ব খানিকটা বেশি হলেও বসেছে তারা সরাসরিই। এটাও ভাগ্যক্রমেই হওয়া। বার কয়েক ফারহানের দিকে চোখ যায় অয়নন্দিতার। কিন্তু চোখে চোখ পড়ে কিছুক্ষণ আগেই। দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় দু’জনেই। অয়নন্দিতার খুব কাছের বান্ধবী শাম্মি বলে,
‘নিজ হাতে তো খাওয়া সম্ভব না তোর। আয় আমি খাইয়ে দেই।’
‘চামচ দিয়ে পারব। তুই তোর খাবারটাই খা। কষ্ট করতে হবে না।’
‘চামচ দিয়ে খেতে হবে না। আমিও খাব তোকেও খাওয়াব। নেহ, হা কর। মেডিসিনগুলো সাথে আছে?’
‘হুম আছে।’
‘তাহলে দ্রুত খেয়ে মেডিসিনগুলো নিয়ে নে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।’
ফারহান দূর থেকেই দেখছে অয়নন্দিতাকে কেউ খাইয়ে দিচ্ছে। সে ভাবছে, যে অয়নন্দিতাকে খাইয়ে দিচ্ছে সে যথাসম্ভব বান্ধবী হবে। বান্ধবীদের মধ্যে এত ভালোবাসা ইদানীং খুব কম দেখা যায়। এদের বন্ধুত্বটা ঠিক ফারহানদের সার্কেলের মতো।
উপস্থিত কিছু মেয়ের নজর সেই সকাল থেকে ফারহানের ওপর৷ সবার মুখে একটাই কথা। একটা পুরুষ ঠিক কতটা সুদর্শন হতে পারে তা এই লোককে না দেখলে বোঝা যায় না। কথাগুলো অয়নন্দিতার কানে এলেও সে আমলে নেয়নি। সে ভাবছে তার নিজের কথা। গাড়িতে পুরো রাস্তা সে ওই লোকটার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। কো বিশ্রী ব্যাপার! ছিঃ ছিঃ

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে সবাই সবার রুমে চলে যায়। ডাবল রুমে ছয়জন করে থাকার প্ল্যানিং হয়েছে। ছেলেরা আলাদা আর মেয়েরা আলাদা। টিচারদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা হয়েছে। ফারহানের জন্য সিঙ্গেল রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই রুমের ভাড়া ফারহান নিজে দেবে বলে দাবি করে। শরীফ না করার পরেও সে শোনেনি। ফারহান আধাঘন্টা যাবত শাওয়ার নেয়। তার ইচ্ছা ছিল শাওয়ার নিয়ে খানিক সময় রেস্ট নিয়ে এরপর বের হবে।
অয়নন্দিতার শাওয়ার নিতে সমস্যা হয়নি। শাম্মি তাকে সাহায্য করেছে। অয়নন্দিতার চুল মুছে দিয়ে ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দিয়েছে। ড্রেসটা ঠিকঠাক মতো পরিয়ে দিয়েছে। অয়নন্দিতার এই বান্ধবীটা অন্য সবার থেকে আলাদা। ভীষণ আলাদা। শাম্মির জন্য অয়নন্দিতার ভালোবাসাটা অনেক।
‘শাম্মি, থ্যাংকস রে।’
‘তোর ভাইয়ের বউ করে নিলে খুশি হতাম।’
‘হা হা। সেইজন্যই তো আমার কোনো ভাই নাই।’
‘এখানেই আফসোস। এখন চল নিচে যাই। সবাই বের হবে কিছুক্ষণ পর।’
‘ভাইয়া আর মামা ফোন করেছিল। আগে কথা বলি। এরপর আমি যাব। তুই বের হয়ে যা। সমস্যা হবে না।’
‘শিওর তো?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ। পাক্কা শিওর।’
‘ওকে। আমরা লবিতেই আছি। তুই আয়। কেমন?’
‘আচ্ছা।’

চলবে…………………………..

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

মামা আর ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে লবিতে যাওয়ার জন্য বের হয় অয়নন্দিতা। শাম্মিকে বার-বার না করা সত্ত্বেও শাম্মি ওড়নাটা ঘুরিয়ে পরিয়ে দিয়েছে। শাম্মির ভাষ্যমতে, তাকে এইভাবে ওড়না পরলে দারুণ লাগে। সুস্থ থাকলে একটা কথা ছিল কিন্তু হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে এখন ঠিক মতো চলা দায় হয়ে পড়েছে তার। এর উপর আবার এইভাবে ওড়না পরা আরেক ঝামেলা।
ধীর পায়ে লবির সামনে এগিয়ে যায় অয়নন্দিতা। সেখানে সবাই ভাগে ভাগে বসে আছে। সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডা যাকে বলা যায় আর কি। অয়নন্দিতা যেতেই টুকটাক সবাই তাকায় তার দিকে। হালকা আকাশি রঙের সালোয়ার স্যুট সাথে সাদা রঙের ওড়নায় তাকে বেশ মানিয়েছে। অয়নন্দিতাকে আসতে দেখে শাম্মি এগিয়ে যায় তার দিকে।
‘এতক্ষণ লাগল বুঝি?’
‘কথা শেষ করেই তো এলাম।’
‘আচ্ছা আয়, এইখানটায় বোস।’
‘স্যাররা কোথায়?’
‘স্যাররা ওইপাশে। জানিস আমরা আগামীকাল ভোরে সূর্য উদয় দেখব।’
‘কে বলল?’
‘শরীফ স্যার বলেছে।’
‘ওহ।’
‘জানিস, স্যারের সঙ্গে যেই ভদ্রলোক এসেছেন, তিনি নাকি খুব ভালো গান গায়।’
‘যেই ভদ্রলোক আমায় জখম করেছেন, তিনি?’
‘বেচারার কী দোষ বল, ইচ্ছা করে তো আর দেয়নি।’
‘ব্যাপার কী, হঠাৎ তার হয়ে কথা বলছিস? ভালো লেগে গেছে নাকি?’
‘কার না লাগবে বল। কী স্মার্ট, আর কী গুড লুকিং। আহ, দেখলেই প্রেম প্রেম লাগে?’
‘আস্তে বল, কেউ শুনলে তিল থেকে তাল বানাবে। চুনোপুঁটিকে ডলফিন বানাবে।’
‘অয়নি,,,!’
‘আচ্ছা শোন, তোরা বোস এখানে। আমি ওইপাশ থেকে ঘুরে আসি।’
‘এই ভর সন্ধ্যায় ওইপাশে যাওয়ার দরকার নাই। আমাদের সাথেই বোস।’
‘বসে-বসে আলোচনা সমালোচনা শুনতে ভালো লাগবে না আমার। আমি বরং ঘুরে আসি।’
শাম্মিকে বসিয়ে রেখে অয়নন্দিতা লবি থেকে বের হয়ে আসে। একটু এগিয়ে যেতেই সে শরীফ স্যার আর ফারহানকে দেখতে পায়। অয়নন্দিতা তাদের সামনে গিয়ে বলল,
‘স্যার, একটু কথা ছিল।’
অয়নন্দিতার কন্ঠস্বর শুনে ফারহান এবং শরীফ একত্রেই তার দিকে তাকায়।
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘স্যার, আমি একটু ওইপাশ থেকে ঘুরে আসি?’
‘ওইপাশটা অন্ধকার তো। তুমি লবিতেই বোসো না সবার সঙ্গে।’
‘স্যার আমার একা-একা হাঁটতে মন চাইছে। বেশি দূরে যাব না।’
‘ওকে। সাবধানে যাও। আর প্লিজ, দয়া করে বেশি দূরে যেও না।’
‘ওকে স্যার।’
ফারহান অয়নন্দিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। এক জোড়া শান্ত মলিন চোখও যেন আকুতি করছে। এমনটাই মনে হলো তার। আকাশি রঙের সালোয়ার স্যুটে দারুণ লাগছে তাকে। ঠিক যেন বন্দনা। বন্দনার কথা মনে হতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে ফারহান। কী ভাবছে সে এইসব। এখানে সে ঘুরতে এসেছে। মন ফ্রেশ করতে এসেছে। মাথায় যেই চাপটা ছিল সেই চাপটা দূর করতেই এখানে আসা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উল্টো আরও চাপ বাড়ছে। সে বার-বার বন্দনাকে নিয়েই ভাবছে। চোখ খুলতেই তার সামনে থাকা অসম্ভব মায়াময়ী মেয়েটা হারিয়ে গেল। হঠাৎই শরীফ বলল,
‘চল, অন্যান্য টিচাররা ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে। যাওয়া যাক।’
‘দোস্ত তুই যা। আমি না কিছুক্ষণ পর আসব।’
‘শিওর?’
‘হুম শিওর।’
‘ওকে।’

শরীফ চলে গেলে ফারহান উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। গন্তব্যস্থল দূরে অবস্থিত নির্জন রাস্তা। যেখানে কিছু দীর্ঘশ্বাস গোপন করা যাবে।
হাঁটতে-হাঁটতে কিছুটা দূরে চলে এসেছে অয়নন্দিতা। বিরাট বড়ো গাছের গুড়ির ওপর বসে পড়ে অয়নন্দিতা। নজর তার আকাশ পানে। বড়ো একটা চাঁদ উঠেছে আজকে আকাশে। চাঁদটাকে ঘিরে আশেপাশে অনেকগুলো তারা জ্বলছে। অয়নন্দিতা ভাবে ওই তারাগুলোর মধ্যে দুটো তারা তার মা আর বাবা। টিভিতে দেখেছে সে, মৃত মানুষরা তারা হয়ে যায়। আসলেই কি মৃত্যুর পর সবাই তারা হয়ে যায়? অনেকদিন হলো চিৎকার করে কাঁদে না সে। চোখ দিয়ে পানি গড়াতে-গড়াতে ইদানীং চোখ জোড়াও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আজ গলা ফাটিয়ে কান্না আসছে। আশেপাশে তেমন কেউই নেই।
অয়নন্দিতার ভেতরটা হু-হু করে ওঠে। চোখ বেয়ে পানি গড়ায়।
‘আম্মু, কীভাবে আছো আমায় ছেড়ে? জানো কত দিন হয়ে গেছে আমি তোমাকে আর দেখতে পাই না। আমার চুলে তোমার হাতটা আর পড়ে না তো। তোমার হাতের গরুর মাংসটা কতদিন হলো আর খাওয়া হয় না। গভীর রাতে আমার ঘরে আর কেউ উঁকি দিয়ে দেখে না তো আম্মু। এইভাবে ঠকিয়ে চলে গেলে আমায়। দিব্যি ভালো আছো আব্বুর সঙ্গে। তাই না? আর আমি এখানে এইভাবে পড়ে আছি।’
শব্দ করে কান্না করে অয়নন্দিতা। হেঁচকি তুলে কাঁদছে অয়নন্দিতা। ঢোক গিলে আবারও বলে,
‘আব্বু, তোমার প্রতি ভীষণ রাগ লাগে। আম্মুকে কেন এত ভালোবেসেছ তুমি যে, আম্মু তুমি যাওয়ার পর-পরই চলে গেল। দেখেছ আব্বু, আমি বলতাম না যে, আম্মু আমার থেকে বেশি তোমাকে বেশি ভালোবাসে। মিলল তো আব্বু। আম্মু সত্যিই তোমাকে বেশি ভালোবাসে। তাই তো আমায় একা করে দিয়ে তোমার কাছে চলে গেল। ভাবলও না আমার কথা। দু’জনেই স্বার্থপরের মতো চলে গেলে।’
বাবা-মা ছাড়া একটা সন্তান এই দুনিয়ায় কীভাবে থাকতে পারে তা কেবল সে-ই জানে।

ফারহান কিছুটা পথ হাঁটতেই কারো কান্নার শব্দ পায়। মনে হচ্ছিল কেউ যেন খুব কষ্ট নিয়ে কাঁদছে। ফারহান ভাবে, তার চাইতেও কি কেউ কষ্টে আছে? তার ভেতরে যেমন দুঃখের বসতবাড়ি তেমন কি অন্যের ভেতরেও দুঃখের জমিন আছে?
ফারহান ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই কান্নার শব্দের কাছে।

চলবে…………………

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

‘কোনো সমস্যা? আপনি কাঁদছেন কেন?’
পাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায় অয়নন্দিতা। চোখের পানি মুছতে-মুছতে অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহানকে দেখেই সে দাঁড়িয়ে যায়।
‘নাহ। কোনো সমস্যা না।’
‘আপনি শুধু-শুধুই কাঁদছিলেন?’
‘কাঁদিনি তো।’
‘জলজ্যান্ত মিথ্যা বললেন। আপনার চোখে এখনও পানি। আর বলছে আপনি কাঁদছেন না।’
‘আচ্ছা অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আমার যাওয়া উচিত।’
‘আমিও হোটেলেই ফিরব। চলুন যাওয়া যাক।’
‘আচ্ছা।’
দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করে অয়নন্দিতা। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফারহান যাতে তাকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না পায়। হাঁটতে-হাঁটতে ফারহান বলল,
‘মিস অয়নন্দিতা, ধীরে হাঁটুন। ভয় নেই, আমি আপনাকে এক্সট্রা কোনো প্রশ্ন করব না।’
‘আসলে তা না। দেরি হয়ে গেছে তো, যেন তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারি সেইজন্যই হাঁটছি।’
‘এখান থেকে হোটেল খুব বেশি দূরে নয়। অথচ আপনি হাঁটছেন যেন মনে হচ্ছে হোটেল বহু দূরে। যাই হোক, ধীর গতিতেই হাঁটুন। সমস্যা নেই।’
অয়নন্দিতা বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। সে যে মূলত এই কারণেই দ্রুত পায়ে হাঁটছিল তা ফারহান বুঝে গেছে। আর সে বুঝে যাওয়াতেই অয়নন্দিতার লজ্জা। তাই নিঃশব্দে হাঁটাই শ্রেয় মনে করে অয়নন্দিতা।
লবি পর্যন্ত পৌঁছে অয়নন্দিতা ফারহানকে বলে,
‘আমি আগে যাই। আপনি কিছুক্ষণ পর আসুন।’
‘একসাথে গেলে সমস্যা কোথায়?’
‘সমস্যা আছে।’
‘কোথায় সমস্যা?’
‘আমরা এক সঙ্গে ভেতরে গেলে অনেকেই ব্যাপারটাকে দৃষ্টিকটু ভেবে বসবে।’
‘এক সঙ্গে ভেতরে ঢোকাটা দৃষ্টিকটু?’
অয়নন্দিতা বাড়তি আর কিছু না বলেই — আপনি প্লিজ পরে আসুন বলেই লবির ভেতরে প্রবেশ করে। ফারহান সেখানেই দাঁড়িয়েই কিছু কথা ভাবতে শুরু করে, এক সঙ্গে ভেতরে ঢোকার ব্যাপারটা কী করে দৃষ্টিকটু হতে পারে? মেয়েটা তখন ওইভাবে কেঁদেও কেন বলল, সে কাঁদছিল না। দ্বিতীয়বার তাকে কোনো প্রশ্নেই জবাব না দিতে হয় সেইজন্য এত দ্রুত হেঁটেই বা কেন গেল? আর সব থেকে বড়ো ব্যাপার, সব কিছু অনায়াসে লুজিয়েই বা গেল কেন? অদ্ভুত আচরণের মেয়ে তো সে। আবার ভাবে তার বন্দনার মতো কেউ হতে পারে না। কখনও হবেও না।

রাত প্রায় দেড়টা। সাগরের গর্জন শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল ঢেউগুলো একটা আরেকটার ওপর আছড়ে পড়ছে। নিস্তব্ধ রাতে সাগরের গর্জন খুব স্পষ্টভাবেই কানে লাগে। অয়নন্দিতার ধারণা এটা ঢেউগুলো একে অপরের সঙ্গে মিলিত হতেই বেশি পছন্দ করে। তাই তো তাদের মিলনে এত গর্জন।
শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না অয়নন্দিতার। সমুদ্রের গর্জন তো কানে শোনা যাচ্ছে। তাদের মিলন যে দেখতে ইচ্ছে করছে অয়নন্দিতার। শাম্মি ঘুমে মাতাল হয়ে আছে। শাম্মির ঘুম এত গভীর যে তার পাশে কাউকে খুন করে ফেললেও সে টের পাবে না। তার নিজের বেলাতেও একই উদাহরণ গ্রহণযোগ্য। তাকে কেউ ঘুমের মধ্যে খুন করে ফেললেও তার হুশ ফিরবে না। তাই এই মুহুর্তে শাম্মিকে জাগানোও যাবে না। সব দিক চিন্তা করে অয়নন্দিতা নিজেত রুম থেকে বের হয় ঢেউয়ের মিলন দেখবে বলে।
ওড়না দিয়ে বুক ঢেকে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় অয়নন্দিতা। হোটেলের অবস্থান একদম সরাসরি বলেই সাগর এবং তার আশেপাশের জায়গা অনায়াসেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। অয়নন্দিতা ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে সাগরের বুকে আছড়ে পড়া ঢেউগুলোকে দেখছে। তাকিয়ে থাকার মধ্যেও একটা শান্তি কাজ করে। মনে জমে থাকা সমস্ত দুঃখ, সমস্ত বেদনা সব এক দৌড়ে পালিয়ে যায় ওই ঝাউবনে।
হঠাৎই সিগারেটের কড়া স্মেল নাকে আসে অয়নন্দিতার। এত রাতে সিগারেট খাচ্ছে কে? আশেপাশে তাকায় অয়নন্দিতা। কিছুটা দূরে ফারহানকে দেখতে পায় অয়নন্দিতা। ফারহান সিগারেট টানছে। নজর ফোনের দিকে৷ বোঝা যাচ্ছে কিছু দেখছে আর সিগারেট টানছে। সে। কিন্তু কি এমন দেখছে ফোনে? অয়নন্দিতা সন্দেহজনক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অয়নন্দিতার তাকিয়ে থাকার মাঝেই ফারহানের নজর যায় অয়নন্দিতার দিকে। চোখাচোখির এক পর্যায়ে অয়নন্দিতা চোখ নামিয়ে নেয়। কিন্তু চোখ নামিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সে যে ফারহানকে পর্যবেক্ষণ করছিল তা ফারহান বুঝে গেছে। হালকা হেসে হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অয়নন্দিতার দিকে পা বাড়ায় ফারহান।
ফারহানের এগিয়ে আসা দেখে অয়নন্দিতার পা জোড়া কেঁপে ওঠে। ভাবছে, উনি এদিকে আসছে কেন? উফ, তাকানোর কী প্রয়োজন ছিল ওনার দিকে? নিশ্চয়ই বুঝে গেছে আমি তাকে দেখছিলাম তাও আবার সন্দেহজনক চোখে। তাই হয়তো এগিয়ে আসছে। এখন এসে যদি প্রশ্ন করে আমি তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে ছিলাম কেন? তবে কী জবাব দেব আমি?
সে ভাবনার মাঝেই ফারহান তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতার ভাবনা বাস্তবে রুপ নেয়। ফারহান প্রশ্ন করে তাকে,
‘এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কী করছেন আপনি?’
অয়নন্দিতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। প্রশ্ন তাকে করা হয়েছে তবে অন্যটা। এটাতেই শান্তি।

চলবে…………………………