দ্বিতীয় সূচনা পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬+৫৭

0
506

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৪
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে অবাক হয় ফারহান। সাধারণত তার ফোনে তেমন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে না। অয়নন্দিতা পাশেই শুয়ে আছে। ফারহান ভাবছে, কে হতে পারে। ততক্ষণে ফোনের শব্দে অয়নন্দিতার ঘুম ভেঙে গেছে। অয়নন্দিতা চোখ বুজেই হাত দিয়ে ফারহানকে নাড়ছে।
‘ফারহান, ফোন বাজতেছে। রিসিভ করো।’
ফারহান কিছুটা সময় অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে এরপর ফোন রিসিভ করে।
‘হ্যালো।’
‘ফারহান, আমি বন্দনা বলছি।’
বন্দনার নাম শুনে ফারহান নড়েচড়ে ওঠে। আরেকবার অয়নন্দিতার দিকে তাকায়। অয়নন্দিতা ঘুমে। ফারহান শব্দহীন ভাবে অয়নন্দিতার পাশ থেকে উঠে যায়। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
‘হঠাৎ তুমি?’
‘কেমন আছো?’
‘কেমন আছি এটা জানার জন্য এত সকালে ফোন করেছ?’
‘ঘুমোচ্ছিলে বুঝি?’
‘তুমি জানো না আমি কতক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাই?’
ফোনের ওপাশে নীরবতা।
‘কেন ফোন করেছ?’
‘আসলে জাহরাফ যা করেছে তার জন্য…’
‘ওটা জাহরাফ আর আমার ব্যবসায়িক ব্যাপার। আমার সাথে তার সম্পর্ক একান্তই ব্যবসাকেন্দ্রিক। সম্পর্কটাকে ব্যক্তিগত না ভাবো। আশা করি, বুঝতে পারছ।’
‘আসলে, আমি বুঝতেই পারিনি জাহরাফ এমন কিছু করবে।’
‘তুমি তো সবই বুঝতে পারো। কে তোমায় ভালো রাখবে, কার কাছে তুমি ভালো থাকবে, কে তোমায় বুঝবে, সবই তো তুমি জানো। তাই না?’
কিছু পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে বন্দনার। নিজেই আজ নিজের চোখে অনেকটা নেমে গেছে। নিজেই নিজের কাছে দোষী। দোষী সে ফারহানেরও। বন্দনা কিছু বলতে যাবে এমন সময় জাহরাফ ডেকে বসে যা ফারহানও শুনতে পায়। জাহরাফের মুখে বন্দনার নাম শুনে ফারহান হালকা হেসে লাইনটা কেটে দেয়। একটা সময় ছিল যখন জাহরাফ বন্দনা বলে ডাকলে ফারহানের বুকে ব্যথা হতো। একদিন তো এমন হয়েছে সহ্য করতে না পেরে শাওয়ারের পানি ছেড়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করেছে। কষ্টটা এখন আর নেই তবে দাগটা রয়ে গেছে। হয়তো সারাজীবন রয়ে যাবে। সকালটা ভীষণ সুন্দর। ফারহান সাধারণত আরও পরে উঠে। বন্দনার ফোন তাকে আজ জাগিয়ে দিয়েছে। ভাবছে, ভাগ্যিস অয়নন্দিতা ঘুমে। নয়তো বন্দনার ফোন আসায় সে কী না কী মনে করত।

বারান্দার দরজার অপর পাশে অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে ছিল। ফারহান উত্তেজিত হয়ে কিছু কথা বলেছিল যা অয়নন্দিতার কানে লাগে। এরপরই সে জেগে যায়। চুলে খোঁপা করতে করতে অয়নন্দিতা বারান্দার সামনে এসে দাঁড়ায়। শুনতে পায় ফারহানের কথাগুলো। ফারহানের বলা শেষের কথাগুলো অয়নন্দিতার খুব লেগেছে। পুরুষ মানুষ বুঝি এত কষ্টও পায়? সত্যিকারের ভালোবেসে মানুষটা ঠকে গেছে। তাই তো এখন পর্যন্ত ওই ভাবে সে অয়নন্দিতাকে ভালোবাসতে পারেনি। আবার কমও ভালোবাসে না। চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা আঁচলে মুছে বারান্দায় যায় অয়নন্দিতা। ফারহান তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নন্দিতা ধীর পায়ে ফারহানের পেছনে এসে দাঁড়ায়। হাত রাখে ফারহানের কাঁধে। আচমকা কাঁধে কারো স্পর্শ পড়ায় ফারহান ঘুরে তাকায়। অয়নন্দিতাকে দেখতে পেয়ে হালকা ঘাবড়ে যায়। ভাবছে, শুনে ফেলেনি তো? অয়নন্দিতাও আর বুঝতে দেয়নি যে, সে সবটাই শুনে ফেলেছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তাকে না ফালানোই ভালো। হালকা হেসে ফারহানের বুকে হাত রেখে প্রশ্ন করে,
‘আর ঘুমোবে না?’
ফারহান নির্বাক চেয়ে আছে অয়নন্দিতার দিকে। ভাবছে, হয়তো শুনেনি। শুনলে একটু হলেও কষ্ট পেত। কিন্ত সে কষ্ট পাক এমন কিছু তো বলা হয়নি। অয়নন্দিতার হাসিমুখটা দেখে ফারহান কনফিউজড হয়ে গেছে। এরই মধ্যে অয়নন্দিতা আবারও বলে,
‘কী দেখছ এইভাবে?’
ফারহান কিছু না ভেবেই জবাব দেয়,
‘তোমাকে দেখছিলাম।’
‘আমায় দেখার কী আছে? রোজ-ই তো দেখ।’
‘খুব স্নিগ্ধ লাগছে তোমায়।’
‘হয়েছে। আর বলতে হবে না। চলো। ফ্রেশ হও। শাওয়ার নাও। আমি নিচে যাব। নাস্তা রেডি করব।’
এতক্ষণে ফারহান নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, অয়নন্দিতা তার আর বন্দনার ফোনালাপ শুনতে পায়নি। ফারহান অয়নন্দিতার গাল স্পর্শ করে ভেতরে চলে যায়। ফারহান চলে যাওয়ার পর অয়নন্দিতা একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে, আমি জানি তুমি ভাবছ আমি হয়তো শুনিনি। কিন্তু আমি সবটাই শুনেছি, শুধু তোমায় বুঝতে দিইনি। অনেক তো হলো কষ্টের পালা। এবার না হয় সুখগুলো আঁকড়ে ধরার পালা।

ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হতেই হাসানকে দেখতে পায় সাজি।৷ সাজি হাসানের চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছে আজও তার কপালে শনি আছে। হাসান দাঁত মুখ খিটে তাকিয়ে আছে সাজির দিকে। সাজি এদিক-সেদিক একবার তাকায়। হরপ ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। সাজি সামনে এসে দাঁড়াতেই হাসান সাজির হাতটা শক্ত করে ধরে। এরপর সোজা গেইট থেকে বের হয়ে যায়।
‘তোমার সমস্যা কী সাজি?’
‘আমার সমস্যা? কই আমার তো কোনো সমস্যা নেই।’
‘তাহলে এমন শুরু করছ কেন?’
‘কী শুরু করলাম?’
‘সাজি বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকে। দয়া করে সীমা অতিক্রম কোরো না।’
‘যতদিন পর্যন্ত না মানবেন ততদিন পর্যন্ত সীমা অতিক্রম করে যাব।’
‘তুমি জোর করতেছ। এইযে জোর করতেছ, ভালোবাসা পাবে আমার?’
‘আমায় ভালোবাসতে না পারার কারণ বলেন।’
‘আমি এখনও মিলিকে ভালোবাসি। হ্যাঁ, মিলি নেই। মিলি আর কোনোদিন আসবে না। আমি মিলিকে আর কোনোদিন পাব না। তবুও মিলিকেই ভালোবাসি।’
‘আমার ভাইয়াও কিন্তু বন্দনাকে ভালোবাসত। ভীষণ ভালোবাসত। এখন কিন্তু আপনার বোনকে ভালোবাসে। ভীষণ ভালোবাসে।’
কথাটা শোনার পর হাসানের ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে এক চড় বসাতে সাজির গালে। পাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করতে চায় না। তবুও কিছু কথা শোনানোর জন্য প্রস্তুত হয়।
‘বন্দনা আর মিলি এক? হাউ ডেয়ার ইউ সাজি? তুমি আমার মিলির সঙ্গে বন্দনাকে মেলাচ্ছো। বন্দনা তোমার ভাইকে ধোঁকা দিয়েছে। চলে গেছে অন্য একজনের সঙ্গে। আর আমার মিলি, আমার মিলি আমায় ভালোবেসে চলে গেছে। আল্লাহ পাক তাকে নিয়ে গেছে। পরপারে গিয়েও মিলি আমাকেই ভালোবাসে।’
‘আমি মিলির সঙ্গে বন্দনাকে মেলাইনি। আমি ভালোবাসার সঙ্গে ভালোবাসাকে মিলিয়েছি।’
‘তুমি কি পাগল নাকি? তোমার মাথায় কি বুদ্ধি নেই? ভালোবাসার সঙ্গে ভালোবাসাকে তুলনা করা যায় না সাজি। ভালোবাসার সঙ্গা একেকজনের কাছে একেক রকম। বোঝো কিছু তুমি?’
‘বুঝতে চাই না আমি। আমি একবারও বলিনি মিলিকে ভুলে যান। বলিনি শুধু আমাকেই ভালোবাসুন। মিলি নেই। মিলির শূন্যস্থানটা পূরণ হবে না কখনও। সবটাই জানি আমি। আর মানিও। শুধু চাই আপনার একাকিত্বটায় সঙ্গী হতে। চাই আপনার বাকি জীবনটা আমার সঙ্গে কাটুক।’
‘তুমি গতকাল কেন আমার বাসায় গিয়েছ? কেন আমার ঘরে ঢুকেছ? কেন বিছানার চাদর পালটে দিয়েছ? কেন আমার জামাকাপড় পরিষ্কার করে দিয়েছ? তোমায় আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম সাজি। এরপর আর ওয়ার্নিং দেব না। ঠাটিয়ে চড় মারব। তুমি আমার বাসায় যাবে না। খবরদার যাবে না।’
‘আমি যাব। একশো বার যাব। হাজার বার যাব। দেখব, কী করে আমায় আটকান আপনি।’
হাসানের আর ভালো লাগছে না। বিরক্ত লাগছে তার। এই মেয়েকে বোঝালেও লাভ হয় না। এই মেয়ে নিজের মতোই বলে। হাসান একটা রিক্সা ডাকে এরপর সোজা রিক্সায় উঠে চলে যায়। সাজি অয়নন্দিতার নাম্বার ডায়াল করে।
চপিং করতে করতে অয়নন্দিতা ফোন কানে নেয়।
‘হ্যাঁ সাজি, বলো।’
‘তোমার ভাই এসেছিল আমার ক্যাম্পাসে।’
‘কী বলল?’
‘থ্রেট করে গেল।’
থ্রেটের কথা শুনে অয়নন্দিতার হাতের ছুরিটা নড়ে ওঠে।
‘থ্রেট করেছে। মানে?’
পাশ থেকে নায়াও হাতের কাজ ফেলে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়।
‘আমি যেন সরে যাই। আমি যেন তার বাসায় না যাই। আমি যেন তার ঘরে না ঢুকি। নইলে ঠাটিয়ে চড়াবে আমায়।’
‘এইসব বলেছে!’
‘অবাক হবার কিছু নেই। তোমার ভাই বলতে পারে। তার সেই ক্ষমতা আছে। এবার তুমি একটা কাজ করো, তোমার ভাইকে ফোন করো। বলো সাজি সাফ বলে দিয়েছে। সে যাবে। একশো বার যাবে। হাজার বার যাবে। পারলে যেন আটকায়। রাখলাম আমি।’
সাজি ফোন রেখে দিলে নায়া চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? উত্তরে সবটা বলে অয়নন্দিতা। সব শুনে নায়া বলে,
‘সাজির মাথা থেকে হাসান ভাই নামবে না ভাবী। এক কাজ করি, আমরা সবাই মিলে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিই সংসার করতে করতে ঠিক হয়ে যাবে।’
‘একদম না নায়া। এই কথাটা ভুলেও সাজির সামনে বলতে যেয়ো না। নয়তো ও লাফাবে এমন করার জন্য। আর আমি তো চিনি ভাইয়াকে। অতিরিক্ত জোর দিলে সাজি আরও কষ্ট পাবে। আরেকটু সময় দিই আমরা ভাইয়াকে। আই হোপ সব ঠিক হবে।’
‘হুম। দেখা যাক। সাজি কোথায় এখন?’
‘ক্যাম্পাসেই মনে হয়৷’
অয়নন্দিতা ভাবছে, এর বেশি বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই যেন সব মিটে যায়। সাজিও তার আপন, তার ভাইও তার আপন। একজনের জন্য অন্যজন কষ্ট পাক কিংবা একজন অন্যজনকে কষ্ট দিক এটা সে চায় না। পঅরে যেন কেউই সাফার না করে। যেমন সাফার করছে বন্দনা। বন্দনার এখন ফেরার পথ নেই। ফিরতে চাইলেও পারবে না। সব পথ বন্ধ।

অফিসে বসে হাসান কেবল একটা কথাই ভাবছে, বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না তো। এমনিতেই অল্প বয়স তার উপর মেয়ে। কোমল হৃদয়ের অধিকারীনি। কষ্ট পেল কি না কে জানে। পর মুহূর্তে ভাবে, পেলে পাবে। এত পাকনামি করতে আসে কেন। সে জানে না, আমি মিলিকেই ভালোবাসি। মিলিকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারব না আমি৷ ফাযিল মেয়ের সাহস কীভাবে হয় আমার বাসায় যায়। আর একবার যদি দেখি, তাহলে জনমকার শিক্ষা দিয়ে দিব৷

চলবে………………..

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

যা হবার কথা ছিল না। তাই-ই হয়েছে। হাসানকে তার ছোটো বোন ফোন করে জানিয়েছে সাজি তাদের বাসায় গিয়েছে। বাবা-মা মামা বাসায় যাবে, ওই মুহুর্তে সাজি সেখানে পৌঁছায়। পরে সাজিই নাকি তাদের পাঠিয়ে দিয়েছে। সে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়েই হাসানকে ফোন করেছে। বলেছে বিকেল পর্যন্ত থাকবে। এটা শুনেই হাসানের মাথা গরম হয়ে যায়। তার মাথায় এটাই আসছে না সাজি এমন কেন করতেছে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বের হয়ে যায় হাসান। গন্তব্যস্থল নিজ বাসা।
পথ যেন শেষই হচ্ছে না আজ। অফিস থেকে বাসায় আসতে মোটামুটি ৩০/৩৫ মিনিট লাগে। দুপুর টাইম বলে সহজে রিক্সা পাওয়া যাচ্ছিল না। আর বাসে সে ওঠে না। তবুও রিক্সা যা পেল লোকটা একটু বয়স্ক হওয়ায় ধীরে ধীরে রিক্সায় প্যাডেল মারছেন। হাসানের সহ্য হচ্ছে না। বয়স্ক বলে কিছু বলতেও পারছে না। মিনিট দশেক এইভাবেই পার হয়ে যায়। ফোন করে অয়নন্দিতাকে।
দুইবার ফোন বেজে যাওয়ার পর অয়নন্দিতা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই হাসান বলা শুরু করে,
‘আমায় তো তোরা পাগল করে দিবি।’
ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অয়নন্দিতা বলল,
‘এইসব কী বলো ভাইয়া? তোমায় পাগল করতে যাব কেন?’
‘তোর ননদ কোথায়?’
‘সাজি তো ক্যাম্পাসে। কেন?’
‘ক্যাম্পাসে। হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে। কয়টা বাজে এখন। ঘড়ি দেখছস। আড়াইটার মতো বাজে। এখনও সে ক্যাম্পাসে?’
‘ওর প্রায়ই তিনটায় ক্লাস থাকে। কখনও সন্ধ্যায় ক্লাস থাকে। এখন হয়েছে কী, সেটা বলো?’
‘তোর ননদ ক্যাম্পাসে নাই। ও আমার বাসায়।’
‘তোমার বাসায় মানে!’
‘ভং ধরবি না একদম। দেখ অয়নন্দিতা, আগেই বলে দিয়েছিলাম। সেদিনও সাবধান করে দিয়ে এসেছিলাম। এই মেয়ের এত জেদ কেন? কিছুতেই শোনে না। আমি আর বরদাস্ত করব না। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব।’
‘কী করবা তুমি?’
‘এই মেয়ের জন্য আজকে কাজ করতে পারলাম না আমি। এই মেয়ের খবর আছে আজকে।’
‘তুমি কি বাসায় যাচ্ছো নাকি?’
‘হ্যাঁ। ওর বিয়ের শখ চিরদিনের মতো ঘুচিয়ে দিব আমি।’
হাসান আর কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়। অয়নন্দিতা দ্রুত ফোন করে সাজিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাজি ফোনটা রিসিভ করেনি। অয়নন্দিতাও ভেবে পায় না সাজির কি দরকার ওই বাসায় যাওয়ার। জোর গলায় কিছু বলতেও পারে না। ফারহান রাগ করবে। শত হোক একটা মাত্র বোন তার। শাশুড়িও কিছু বলে না। শ্বশুর বললেও সাজি শোনে না।
অয়নন্দিতা ফারহানকে ফোন করবে ভেবেও করেনি। কারণ, হিতে বিপরীত হবে।

সব গোছানোর পর ড্রইংরুমের সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিতেই অয়নন্দিতার ৫ টা মিসডকল দেখতে পায় সাজি। কল ব্যাক করবে ওই সময়ই ডোরবেলের শব্দ শুনতে পায় সে। হাসানের বাবা-মা চলে এসেছে ভেবে হাসিমুখেই দরজা খোলে সাজি। কিন্তু বেচারি বুঝতেই পারেনি তাকে অবাক করে হাসান দাঁড়িয়ে থাকবে। ততক্ষণে হাসানের চোখ রক্ত রঙা লাল হয়ে আছে। সাজি চিন্তাই করতে পারেনি এইসময় হাসান আসবে। তার মস্তিষ্ক তখন এটা ভেবেই ব্যস্ত যে, এইসময় তো হাসানের আসার কথা না। হাসান কি কোনো ভাবে জেনে গেছে যে, সে এখানে এসেছে। দু’হাত মোড়াচ্ছে সাজি। হাসান ততক্ষণে বাসার ভেতরে। হাতে থাকা অফিস ব্যাগটা এক আছাড় মারে হাসান৷ হাসানের এমন আচরণ দেখে সাজি চোখ-জোড়া বন্ধ করে ফেলে।
হাসান চিলের মতো ছোঁ মেরে সাজিকে ধরে। এমন ভাবে ধরে যে, সাজি নড়ে ওঠে। নরম শরীরে এমন শক্ত করে কেউ ধরলে যে কারোই ব্যথা পাওয়ার কথা।
‘লাগছে আমার।’
‘লাগুক৷ তুমি কোন সাহসে আমার বাসায় এসেছ?’
‘ভালোবাসলে সাহস লাগে নাকি। হাতটা ছাড়ুন। লাগছে আমার।’
‘হাতটা ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করতেছে আমার।’
‘আমার হাতটা ভেঙে গুড়িয়ে দিলে আপনি সুস্থ থাকবেন তো?’
‘থ্রেট দিচ্ছো আমায় তুমি? তোমার বাপ ভাইয়ের টাকা বেশি। সেই থ্রেট দিচ্ছো তুমি আমায়?’
‘একদম না। আপনার জন্য আমিই যথেষ্ট। আমার বাপ ভাই লাগবে না।’
‘সাজি…’
‘হাসান…’
হাসানের মতে সাজি বেয়াদবির শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। নিজেকে বহুক্ষণ কন্ট্রোলে রাখার পরেও শেষ রক্ষা হলো না। ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় সে সাজির গালে। থাপ্পড়টা এতই জোরে ছিল যে সাজি জায়গা থেকে সরে যায়। মুহুর্তেই গালটা জ্বলে ওঠে সাজির। রাগের মাথায় হাসানের বোধশক্তি কাজ করে না। না চাইতেও সে সাজির গালে চড় বসিয়ে দিয়েছে। বাম গালে থাপ্পড়টা পড়ায় সাজিও যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। ছোটোবেলা থেকে এই পর্যন্ত তাকে কেউ মারেনি। আজ এত বড়ো হয়ে অন্যের হাতে থাপ্পড় খাওয়া। তা-ও আবার যাকে সে ভালোবাসে তার হাতেই। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। হাসানও বুঝতে পেরে দেওয়ালের সঙ্গে নিজের হাত দিয়ে ঘুষি মারে। চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
‘বের হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। একমাত্র তোমার জন্য এমন হলো। আমি হাসান কখনও মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনি। এই প্রথম এমন হলো। একমাত্র তোমার জন্য।’
সাজি একটা শব্দও করেনি। চোখের পানি মুছে ঝড়ের বেগে হাসানের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাসান তাকিয়ে আছে সাজির মুখের দিকে। গালে নজর যায় তার। তিনটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার গালে। হাসান তখনই নিজের নজর সরিয়ে নেয়।
‘চলে যাও আমার সামনে থেকে। চলে যাও।’
সাজি চট করেই হাসানের কলার চেপে ধরে। চোখ থেকে তখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে।
‘চলে যাওয়ার জন্য আমি আসিনি। চড়টার কথা তো ভুলব না সেই সাথে আপনাকে তো কখনও ভুলব না। দিস ইজ মাই চ্যালেঞ্জ মিস্টার হাসান।’
কথাটা শেষ করেই হাসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সাজি উঁচু হয়ে হাসানে ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। হাসান সাজিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷ হাসান যতই সাজিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সাজি ততই হাসানকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। হাসানের ঘাড়ে নিজের হাতের সাহায্যে শক্ত করে ধরে রাখে। কিস করতে করতে সাজি মনে মনে বলে, ভালোবাসা যে কতটা প্রখর এখন তুমি টের পাবে। বি রেডি।

চলবে………………………

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

সাজির গালের দাগটা সবার নজর এড়ালেও অয়নন্দিতার চোখ এড়ায়নি। সাজিকে দাঁড় করায় অয়নন্দিতা।
‘ভাইয়া কি তোমায় থাপ্পড় মারছে?’
‘নাহ।’
‘মিথ্যা বলো কেন?’
‘জানোই তো তাহলে। জিজ্ঞেস কেন করো?’
‘সাজি, আমি বুঝতেছি না তুমি কোন কারণে ভাইয়ার পেছনে পড়ে আছো। তুমি ভাইয়ার থেকেও ভালো ডিজার্ভ করো।’
‘নাহ। হাসানকেই ডিজার্ভ করি।’
‘তোমাকে যে কী করে বোঝাই আমি?’
অয়নন্দিতা চলেই যাচ্ছিল তখনই সাজি বলে ওঠে,
‘ভাবী জানো একটা বিষয় খেয়াল করেছি।’
অয়নন্দিতা পেছনে ফিরে তাকায়।
‘কোন বিষয়?’
‘তোমার ভাই পছন্দ করে। একটু হলেও পছন্দ করে।’
অয়নন্দিতার মনে হচ্ছে সাজি বোধ হয় হাসান হাসান করে পাগল হয়ে গেছে। পাগলের প্রলাপ বকতেছে। এই মুহুর্তে ওর হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না মেলানোই ভালো। তাদের আলাপচারিতার মধ্যেই নায়ার আগমন ঘটে। নায়াকে দেখে অয়নন্দিতা চোখের ইশারা করে। সাজিও নায়াকে দেখতে পায়। সাজির গালে আঙ্গুলের দাগ দেখে নায়া বলে,
‘পেয়ার ভি নেহি হুয়া অর থাপ্পাড় খাকে আয়া।’
নায়ার কথা শুনে অয়নন্দিতা মুচকি হাসে। সাজিও মুচকি হাসে। এরপর বলে,
‘সংলাপটা হয়নি ছোটো ভাবী। সংলাপটা হবে– থাপ্পাড় খায়ি তো কেয়া হুয়া পেয়ার তো হুয়া হ্যায়।’
নায়া চোখ বড়ো করে বলে,
‘পেয়ার হো গায়া। সাচ ম্যায় পেয়ার হো গায়া!’
অয়নন্দিতা নায়ার কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বলে,
‘তুমিও ওর তালে তাল মেলাচ্ছো নায়া?’
‘আমি আর কোথায় তাল মেলালাম। শুনলে না ও বলল, পেয়ার হুয়া৷’
‘ও ইদানীং অনেক কিছুই বলে। ধরতে যেয়ো না।’
সাজি ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর দুই ভাবীর মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমি দরজা খুললাম, তোমার ভাই রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এরপর ঘরে ঢুকে অফিস ব্যাগটা আছাড় মারল। আমি তো চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর কিছু কথা বলল। আমিও ত্যাড়া জবাব দিলাম। আর তখনই ঠাটিয়ে এক চড়। আহ…. লেগেছিল অনেক।’
সাজির কথা শুনে অয়নন্দিতা আর নায়া চোখ বড়ো করে সাজির দিকে তাকায়। নায়ার প্রশ্নবিদ্ধ চোখ দেখে সাজি পরবর্তী পর্বতে যায়।
‘এরপর বয়ান দিল। আমি তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। রাগ হচ্ছিল ভীষণ। আমার গায়ে কখনও কেউ হাত তোলেনি। ফারহান ভাইয়া যদি জানে তাহলে তোমার ভাইয়ের হাত কেটে দিবে ভাবী। যাই হোক, এরপর বলল বের হয়ে যাও। আর আমি তখন,,,’
নায়া উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘তুমি তখন কী করেছ?’
‘কিস।’
কিস এর কথা শুনে অয়নন্দিতা খাটে বসে পড়ে। নায়ার চোখ যেন বের হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
‘কিস!’
‘হ্যাঁ কিস। একদম ঠোঁটে। ইমরান হাশমি স্টাইলে। সে আমার গালে মেরেছে আর আমি তার দিলে মেরেছি। দিল মানে হার্ট মানে হৃদয়।’
‘তারপর তারপর।’
‘কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। সে ছাড়িয়ে নিতে চায় আর আমি শক্ত করে বেঁধে দিই। এরপর একটা সময় পর সেও ক্লান্ত হয়ে গেল আর আমিও। ছেড়ে দিলাম। বুঝলে গো রাজরানী, ছেড়ে দিলাম তোমার ভাইকে। তোমার ভাইয়ের ওই শান্ত হওয়াটাই আমায় জানান দিচ্ছিল, তার মনের দরজায় লাগানো তালাটা খুলে ফেলেছি আমি।’
সব শুনে অয়নন্দিতার গালে হাত। আর নায়া তো পারে না মেঝেতেই বসে পড়ে। এ যেন তারা কাহিনী শুনছে। সাজি ফুরফুরা মনে আয়নার সামনে বসল। ফাউন্ডেশনের বেস বসিয়ে গালের দাগ ঢাকছে। আল্লাহ পাক দুই ভাবীর বদলে তাকে দুই বোন দিয়েছে। কিন্তু ঘরের লোকগুলো মোটেও সুবিধার নয়। জানতে পারলে আস্ত রাখবে না৷

ঘরে ঢুকতেই ফারহান অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ের দিকের চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় ফারহান। অয়নন্দিতা ফারহানের গলা জড়িয়ে বলল,
‘আজ হঠাৎ এত প্রেম?’
‘প্রেম করতে মন চাইল।’
‘অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?’
‘ফারাশ সাহেবকে বসিয়ে রেখে এসেছি।’
‘তুমি কি গো? তোমার উচিত ফারাশ ভাইয়াকে বাড়িতে পাঠানো। ঘরে তার বউ।’
‘বউ তো আমারও আছে। ফারাশ বিয়ের আগে প্রেম করেছে অনেক। আমি তো করিনি। তাই এখন আমি প্রেম করব আর সে কাজ করবে।’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতা হাসছে। মাঝে মাঝে ফারহান এত মজার ছলে কথা বলে যে, না চাইতেও তাকে হাসতে হয়। ফারহানকে জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতা ভাবছে, এভাবেই যেন আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারি ফারহান। অন্যদিকে হাসান ভাইয়া আর সাজিও যেন নতুন করে সব গোছাতে সক্ষম হয়।

চলবে…………………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৭
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

অয়নন্দিতা তার মামীকে সব বলে। ভদ্রমহিলা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছেন। ওতো বড়ো ঘরের মেয়েকে কি না তার ছেলে থাপ্পড় মেরেছে। বড়ো ঘর হোক কিংবা ছোটো ঘর, তার ছেলে একটা মেয়ের গালে হাত তুলেছে এটা শুনতেও কেমন জানি শোনাচ্ছে। এই শিক্ষা তো দেয়নি সে তার সন্তানকে। আয়শা বেগম অয়নন্দিতাকে বললেন,
‘তোর ননদটা যে কেন আসে বুঝি না আমি।’
‘তুমি বারণ করতে পারো না তাকে? বলতে পারো না যে, এই মেয়ে তুমি আর কখনও আমার বাসায় আসবে না।’
‘ছিঃছিঃ কীভাবে না করি। মেয়েটাকে দেখলে মিলির অভাব ভুলে থাকি। মেয়েটা আসে, টুকটুক করে এ ঘর ও ঘর হাঁটে৷ রান্নাঘরে যায়। আমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তোর বোনদের সঙ্গে গল্প করে। যেন আমি মিলিকে দেখি ওর মধ্যে।’
‘দেখলে তো মামী, তুমিও চাও মেয়েটা আসুক। সে আসলে তোমার শান্তি লাগে। অথচ মুখে বলতে পারছ না।’
আয়শা বেগম চুপ হয়ে গেছেন। অয়নন্দিতা ফের বলে,
‘মামী, ও বাড়ির সবাইকে সাজি জানিয়ে দিয়েছে বিয়ে করলে হাসানকেই বিয়ে করবে সে। তাদের একমাত্র মেয়ে সাজি। আমার শ্বশুরের কী নেই বলো তো, অথচ মানুষটা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসান ভাইয়ার হ্যাঁ শোনার অপেক্ষায় আছেন। শাশুড়িও একই। ফারহানের একমাত্র বোন সাজি৷ বুঝতেই তো পারছ তাদের কাছে সাজি কতটা মূল্যবান। যাকে কখনও ফুলের আঁচ লাগতে দেওয়া হয়নি তাকে কি না ভাইয়া চড় মারল। ভাগ্যিস সাজি কাউকে বলেনি। টানা পাঁচ দিন সাজি মেকাপ করেছিল নানান বাহানায়। যাতে কেউ তার গালের দাগ না দেখে।’
‘আমি ইচ্ছামতো কথা শুনিয়েছি৷ ছেলে বলে, তোমাদের কারসাজি এইসব।’
‘একটা কথা বলো তো মামী, ভাইয়া যে এমন করছে এটা কি ঠিক? সে কি কখনও বিয়ে করবে না? সংসার করবে না? তার পুরো জীবনটা পড়ে আছে। মিলি চলে গেছে এটা যেমন সত্যি তেমন এটাও সত্যি যে মিলি কখনও ফিরে আসবে না। বাবা-মাও তো চলে গেছে, ফিরে এসেছে। বলো, ফিরে এসেছে। তাই বলে কি আমি বেঁচে থাকা ছেড়ে দিয়েছি?’
‘মিলিকে আমাদের সবার মনে আছে। সারাজীবন মনে থাকবে। তার মানে তো এই না যে, আমরা সবাই থেমে যাব।’
‘ভাইয়ার সঙ্গে আমি কথা বলব না। আপাতত বলব না। কারণ, ভাইয়া যা করেছে ঠিক করেনি। ভাইয়া ভুল করেছে। পারলে ভাইয়াকে বোঝাও।’

হাসান অফিসে বসে আছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাজির কথা মনে পড়ছে। সেদিন মেয়েটাকে এইভাবে থাপ্পড় মারা উচিত হয়নি তার। ভুল করেছে সে। জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে সে। কিন্তু হাসান এটা ভেবে অবাক হচ্ছে যে, সাজি কাউকে বলেনি। বললে নিশ্চয়ই এতদিন এমন শান্তিতে থাকা যেত না। ভাবছে, সাজিকে কি একটা বার সরি বলবে সে।
সাজির নাম্বারটা আছে তো তার ফোনে। একবার কি ফোন করবে সাজিকে? ফোনের স্ক্রিনে সাজির নাম্বারটা দেখছে হাসান। কল দিবে কি না ভাবছে সে। সময় দেখে হঠাৎই খেয়াল হয় তার, সাজি এই সময় ক্যাম্পাসে থাকে। সে সরাসরি ক্যাম্পাসেই চলে যাবে। আজ আর রিক্সায় যাবে না। বাইক নিয়ে এসেছে সাথে। দ্রুতই পৌঁছে যাবে।
হাসান বাইকের চাবি নেয় ফোনটা পকেটে ঢুকায়। অফিস থেকে বের হয়ে বাইক স্টার্ট দেয় হাসান৷ স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। মনটা অশান্ত হয়ে আছে এইভেবে যে, হয়তো মিলিও দূর থেকে তার ওপর নারাজ। কারণ, সে অন্যায় করেছে। একজন নারীকে মেরেছে সে। এতে মিলি খুশি হবে না।
বাইক থামিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে হাসান। আশেপাশে তাকাচ্ছে হাসান। কিন্তু সাজিকে দেখা যাচ্ছে না। তবে কি সাজি আজ ক্যাম্পাসে আসেনি। ব্যর্থতা নিয়ে বের হয়ে যাবে এমন সময় একটা ছেলে তাকে ডাক দেয়।
‘এক্সকিউজ মি।’
হাসান ফিরে তাকায়। ছেলেটা বলল,
‘আপনার নাম হাসান৷ তাই না?’
হাসান বেশ অবাক হয়। জবান দেয়,
‘জি। আমি হাসান।’
‘সাজির কাছে এসেছেন?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি আমায় কীভাবে..?’
‘আমি আপনাকে কীভাবে চিনি, তাই তো? সাজি আপনার কথা রোজ-ই বলে। আপনার ছবিও দেখায় আমাদের। আর আপনাকে এর আগেও দু’দিন ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম বাই দ্য ওয়ে, আমি মোমেন। সাজির ফ্রেন্ড।’
হাসান মোমেন নামের ছেলেটার সঙ্গে হাত মেলায়। প্রশ্ন করে
‘সাজি আজ আসেনি?’
‘এসেছে তো। সাজি ক্লাসে। আজ প্রেজেন্টেশন ছিল আমাদের। আমি বের হয়েছি। ও কিছুক্ষণ পরেই বের হবে। আপনি আসুন না, আসুন।’
‘খুব বেশি দেরি হবে ওর?’
‘নাহ নাহ। আপনি আসবেন সাজি জানে?’
‘নাহ। আসলে আমি… ’
‘ওহ হো। বলতে হবে না। বুঝেছি। সারপ্রাইজ দিতে এসেছেন। গুড গুড। আসুন, আজ সাজিকে সারপ্রাইজ দিব। চলুন আপনি।’
মোমেন ছেলেটা একটু বেশিই অ্যাডভান্স। সে হাসানকে নিয়ে গেল ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে। হাসান তার পুরো কথাটা শেষও করতে পারল না।
পনেরো মিনিট পর মোমেনসহ আরও অনেকেই সাজিকে ধরে বেঁধে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে। সাজি এসবে বিরক্ত। এমনিতেই মন মেজাজ ঠিক নেই।
‘এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু মোমেন। অলয়েজ এমন করিস তুই। এমন টানাটানি কেন করিস?’
‘টানাটানি কি আর সাধে করি। ঘটনা তো ঘটিয়ে বসিয়ে আছিস।’
‘মানে? কিসের ঘটনা?’
‘দেখ কে এসেছে?’
‘কে এসেছে?’
মোমেনের ইশারায় সাজি সামনে তাকায়। সাজিকে দেখে হাসান ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। অন্যদিকে সাজি হাসানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে যেন ঝাপসা দেখছে। চোখটা কয়েকবার অন অফ করল। এরপর বুঝতে পারে, নাহ, ভুল দেখার চান্স নেই। সত্যিই হাসান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সাজি এটা বুঝতে পারছে না হাসান এখানে কী করছে? আর মোমেন-ই বা হাসানকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে? সাজি এগিয়ে যায় হাসানের দিকে। ভারী গলায় প্রশ্ন করে,
‘আপনি এখানে?’
হাসান কিছু বলতে যাবে তখনই সাজির বন্ধুরা সবাই মিলে ইয়েএ বলে চিৎকার করে ওঠে। হাসান ওইদিকে তাকায় আর সাজিও তখন পেছনে তাকিয়ে ইশারায় ওদেরকে চুপ করতে বলে। এরপর আবারও প্রশ্ন করে,
‘আপনি এখানে কেন? কী হয়েছে? আবার মারতে এসেছেন নাকি?’
হাসানের গলা কাঁপছে। কাঁপা গলায় বলল,
‘সরি বলতে এসেছি।’
‘সরি বলতে? কিসের জন্য?’
‘সেদিনের জন্য।’
‘ওহ আচ্ছা। থাপ্পড় মেরেছিলেন সেইজন্য।’
‘আই অ্যাম সরি।’
‘সেদিন কী করেছিলাম মনে আছে?’
হাসানের মনে পড়ে৷ সেদিন সাজি তাকে কিস করেছিল। হাসানের চোখ বড়ো হয়ে যায়। ভাবছে, ওইরকম কিছু করবে না তো এখানে? সাজি হালকা হেসে বলে,
‘সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বললে সবাই চোখ বন্ধ করবে। আর সবাই চোখ বন্ধ করলে কী হবে জানেন?’
‘কী?’
‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।’
হাসান এবার নিশ্চিত। এই মেয়ে ডেঞ্জারাস। যখন তখন কিস করে বসবে। এখান থেকে চলে যাওয়াই শ্রেয়। হাসান পা বাড়ালে সাজি তার হাতটা ধরে নেয়।
‘ভালোবাসি তোমাকে আমি হাসান। আগেও বলেছি। এখনও বলছি। পারলে আপন করে নাও। কথা দিলাম, মিলির জায়গা চাইব না কখনও।’
হাসান আজ অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাকিয়ে আছে সাজির চোখের দিকে। আজ সে সাজির চোখে নিজের জন্য যথেষ্ট ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।

চলবে………………………..