#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–14
নিঝুম, নিশ্চুপ, নিরিবিলি, দুপুর। আকাশে অলসভঙ্গিতে একটা শালিক উড়ে গেল। গাছের ডালে একটা কাক বসে ঝিমুচ্ছে। পুরান ঢাকার গিঞ্জি রাস্তায় মানুষের যাতায়াত চলছে। প্রত্যকেই ব্যস্ত। সবার মধ্যে দ্রুত বেগে যাওয়ার তাড়া আছে।কে কার আগে যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। অবশ্য ইমান পকেটে হাত গুজে হাঁটছে,তার মধ্যে কোন তাড়া ভাব নেই। সারাটা সকাল সে পরে পরে ঘুমাচ্ছিল। বেলা এগারোটায় উঠে নাস্তা খেয়ে চায়ের জন্য উসখুস করছিল। কাকে বলবে চা বানিয়ে দেওয়ার কথা? মিরা তো নেই। তার অনুপস্থিত বারবার তাকে বিষন্ন করে তুলছিল। অগত্যা চা খাওয়ার জন্যই সে বেরিয়ে পরে বাসা থেকে। এম্নিতে বাসায় তার কোন কাজ নেই। অন্যান্য দিন সোনালী আপুর সঙ্গে গল্প করে দিব্যি কাটত। আজ বড় একা লাগছিল নিজেকে৷ সে দম ফেলে সামনের দোকানে চায়ের অর্ডার দিল। ছোট দোকানটা তাদের বাসা থেকে একদম নিকটে। বারান্দা দিয়ে দোকানটা দেখা যায়। রাত বারোটা-একটা অব্দি এই দোকান চালু থাকে। মাঝে মাঝে বারান্দা থেকে সে দোকানের ভিতরে ঘটা কাজ-কর্ম পর্যবেক্ষণ করে৷
চা পরিবেশন করা হলো একটা ওয়ান টাইম কাপে। সে চায়ে চুমুক দিল। এবং আশপাশে চোখ বুলাতে থাকে। আচমকা চোখে পড়ল, খুব ছোট একতলা একটা বাসা৷ বাসার সামনে কিছু জায়গা ফাঁকা। সেখানে একটা গাছ রয়েছে। গাছে ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে। সে বুঝতে পারল, এই ফুলের গন্ধই রুম অব্দি যায়৷ কিন্তু কী ফুল এটা?
সে চায়ের কাপ সরিয়ে রেখে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে, ভাই সামনের বাসায় যেই গাছটা আছে সেটা কি গাছ?
দোকানদার গরম পানিতে কন্ডেক্সমিল্ক গুলাতে গুলাতে জবাব দেয়, জামান ভাইয়ের বাসার কথা কইতেছেন?
সে আন্দাজেই হু বলে। জামান সাহেবকে সে চেনে না৷ তার বাড়িও চেনার কথা না৷
দোকানদার বলল, ওইটা বকুল গাছ। জামান সাহেব লাগাইছিল সেই পচিশ বছর আগে৷
ইমান ঘার ঘুরিয়ে দেখল। বাসাটায় অদ্ভুত আকর্ষনীয় কিছু আছে। সে নেমপ্লেট দেখল বাড়ির নাম “কাজলাদিদি”। নামটা দেখেই তার চোখ উজ্জ্বল হলো। কবিতার নামেও যে বাসা হতে পারে তা আজ প্রথম দেখল৷
দোকানদার বলে উঠে, বাড়িটা জামান ভাই মারা যাওয়ার পর পইড়া ছিল৷ এখন বিল্ডার্সরা নিসে। ভাইঙ্গা দশতলা বিল্ডিং হইব৷
আচমকা ইমানের মনের গহীনে পুনরায় বিষন্নতা হুমড়ি খেল। এতো সুন্দর বাসাটা ভাঙ্গা হবে!
আচ্ছা, মানুষ কী তবে গড়েই ভেঙে ফেলবার জন্য?
একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে দাম মিটিয়ে মামার বাসায় ফিরে আসে৷ তিনতলা অব্দি উঠেও আর ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছা করল না। বেলও বাজায় না সে। ভেতরে যাওয়ার জন্য কোন দায়বদ্ধতা বা মায়া কাজ করছে না৷ সে সিড়ি দিয়ে নেমে আসে এবং তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, গেন্ডারিয়া যাবে। আপুর শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসবে৷ দু’হাত ভর্তি মিষ্টি নিয়ে সে রওনা হয় বোনের শ্বশুড়বাড়ির উদ্দেশ্য। গেন্ডারিয়া পৌঁছে সে সোনালী আপুকে কল দেয়। প্রান্ত ভাই নিযে এসে তাকে রিসিভ করে নিয়ে যায়। আপুর বাসায় গিয়ে অতিথি আপ্যায়নে কোন কমতি খুজে পেল না সে। তবুও যেন কিসের একটা কমতি অনুভব করছিল সে। বারবার চোখ দিয়ে সেই কমতিটুকু খোজার চেষ্টা চালায় সে।
আপু হাসতে হাসতে বলে, তুই যাকে খুজছিস সে এখানে নেই৷
ইমান চমকে উঠে বলে, কাকে খুজছি আমি?
— তোর মিষ্টি বউটাকে৷
আচমকা ইমানের ভারী লজ্জা লাগলো। একটা ছেলে হয়েও এই সামান্য কথায় সে কেন লজ্জা পেল এই কারনটা সে নিজেও জানে না৷
সোনালী আপু বলে, ওরা বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে গেল। তুই আসবি জানলে বোধহয় যেতে দিতাম না৷
ইমান খুকখুক করে কাশে এরপর মিনমিন করে বলে, বিয়ে তো এখনো হয়নি৷ তার আগেই বউ-মিসেস বানায় দিচ্ছো!
সে বলে উঠে, বিয়ে করেননি তাও সার্ভিস তো ঠিকই নেওয়া হয়। হু? রাত একটা বাজে ওর কাছে গরম ভাত চাওয়া হয়? কেন রে? আমার বোনটা তোর বউ লাগে?
ইমান দ্রুত নড়েচড়ে বসে। আপুর কথাগুলো তাকে বড্ড বিব্রত করাচ্ছে৷ সে শার্টের টপ বোতাম খুলে ফেলে। কেন যেন এখানে আসাটাই বৃথা মনে হচ্ছে। সে বিড়বিড় করে বলে, খুব দ্রুত বিয়ে করে নিয়ে যাব৷
তারপর আওয়াজ তুলে বলে, কার সঙ্গে নদী ভ্রমণে বেরিয়েছে?
— রাকিব নিয়ে গেল। রাকিবকে চিনিস? আমার দেবর৷ অবশ্য ওর চাচাত ভাই হয়৷
সে বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে বলে, বুড়িগঙ্গায় ঘুরতে যাওয়ার কী আছে? ময়লা-আবর্জনায় ভরা৷
সোনালী মিটমিট হেসে বলে, তোর কেন জ্বলে রে? এখন ঘুরতে গেলেও তোকে সঙ্গে নিয়ে যাবে ও?এককাজ কর, মিরাকে নিজের কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখ৷
ইমান অপ্রতিভ কন্ঠে বলে উঠে, “আপু”
আপু আবারো হাসল। এরপর বলে, আয় খেতে আয়।
— খাব না এখন৷
— আমার শ্বশুড়বাড়ি প্রথম আসলি। না খেয়ে যেতে দিব কীনা। এছাড়া আর কোনদিন আসবি তার ঠিক আছে? এরপর এক দন্ড থেমে বলে, কত বছর পর আসলি দেশে। দাদী আর আব্বু একদম ঠিক করেছে। তোদের দুইজনের বিয়ে ঠিক একদম উচিত কাজ করেছে। বউয়ের জন্য হলেও চ্যালচ্যালাইয়া দেশে আসবি এবার। নাহলে নানী-বোনের কথা তো নিউইয়র্ক গেলে মনে থাকে না৷ বিদেশের হাওয়া লাগে তোর।
সে কিঞ্চিৎ হাসলো। আপু উঠে যেতেই, সে ফোন বের করে ফোন লাগায় মিরাকে। বাংলাদেশ আসার পরপরই সোনালী আপু তাকে মিরার নাম্বার দিয়েছিল। আপু নাম্বার দিয়েছিল ফোনে কথা বলার জন্য।দুজনের মধ্যে চেনা-জানা হওয়ার জন্য। কিন্তু সে নাম্বার সেইভ করে রেখেও কল তো করেই নি বরং একটা ম্যাসেজও দেয়নি৷ আজ নিজ থেকে মিরাকে প্রথম কল দিচ্ছে৷ কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মিরার নাম্বারে কল দিলেও কেউ রিসিভ করল না। এতে হাল্কা চিন্তারা এসে তার মনের এক পাশ খামচে ধরে৷
আপুর ডাক পরতেই সে ডাইনিং রুমে খেতে বসে। হরেকরকমের খাবার। আপু প্লেট এগিয়ে দিল। এদিকে তার খাওয়ায় একদম মনোযোগ নেই বরং প্রতি মনোবিয়োগ হচ্ছে। আচানক তার ফোন বেজে উঠল। সে কল রিসিভ করতেই, একটা পুরুষালী ভরাট কন্ঠে এক লোক বলে উঠে, আপনি মাত্র একটা নাম্বারে কল দিয়েছিলেন। সেই সিমের মালিক আপনার পরিচিত কেউ?
ইমান হতভম্ব হলো। সে এইমাত্র মিরাকে কল দিয়েছিল৷ লোকটি কি মিরার কথাই বলছে? সে বলে উঠে, কার কথা বলছেন?
— আমি সিটি হাসপাতালের একজন কর্মচারী। আপনি যেই মেয়েটাকে কল দিলেন, উনি এখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি। উনার ফোনে সমস্যা হচ্ছে জন্য তার আত্নীয়দের জানাতে পারছি না। আপনি কল দিচ্ছেন দেখে আপনার নাম্বার কালেক্ট করে কল দিলাম। আপনি তার পরিচিত কেউ হলে রুগীর কাছে আসুন৷
কথাগুলো কর্ণপাত হওয়া মাত্র তার যেন দুনিয়া থমকে যায়৷ পা থেকে মাটি ক্রমশ সরে আসতে লাগে৷ মাথা ঝিম মেরে উঠে মিরা হাসপাতালে ভর্তি কেন? কি হয়েছে ওর? এসব প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতি রইল না তার। সে মিনিট দশ মূর্তির মতো বসে থাকে। এই দশটা মিনিট তার কাছে দশ মাসের মতো দীর্ঘ লাগলো। এরপর হুট করে উঠেই দ্রুত গতিতে বের হয়ে যায়। আপু পেছনে থেকে তাকে ডাকতে লাগে। সে সাড়া দেওয়ার মতো মানসিকতায় ছিল না তখন৷
____________________
তীব্র পা ব্যথা আর বিচ্ছিরি একটা গন্ধে মিরা জাগ্রত হলো। চোখ খুলেই সে প্রথমে ব্যথা অনুভব করে। এজন্য আপনা-আপনি তার মুখ থেকে “উফ” শব্দটা বেরিয়ে আসে। সে অধো অচেতন অবস্থায় নিজের পেটের উপর ভারী কিছু অনুভব করে। ঘাড় তুলে তাকাবার সামর্থ্য নেই জন্য বুঝতে পারছে না ভারী জিনিসটা আসলে কী? নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করল। পরমুহূর্তেই মনে পড়ল, দুপুরে তার দিকে দ্রুতগামী একটা বাইক ছুট্র আসছিল। এরপর আর কিছু মনে নেই। আচ্ছা সে এখন কোথায়? চোখ খুলেই সে ফ্যান ঘুরতে দেখছে। আশেপাশে তাকানোর জন্য ঘাড় নাড়াতে পারছে না সে। শুধু পেটের উপর কিছু একটার উপস্থিতি অনুভব করছে৷ সে নিজের হাত উঠালো। হাতে ক্যানেল। তার বুক আতকে উঠে। সে কী হাসপাতালে? মা-বাবা কোথায়? আর সে-ই বা কোথায় আছে বর্তমানে?
নিজের হাতটা পেটের ওই জিনিসের উপর রাখতেই কিছুটা নড়েচড়ে সরে যাওয়ার পদক্ষেপ অনুভব করে। আচমকা মিহি কণ্ঠে বলে উঠে, এখন কেমন লাগছে?
মিরা চকিতে উঠে। এই কণ্ঠ তার পরিচিত। সে বহু কষ্টে বামে ফিরে তাকালো। তার পাশের চেয়ারে ইমান বসে আছে। ছেলেটার চোখ লাল। মনে হয়, না ঘুমিয়ে আছে জন্য চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণা করেছে৷ সে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু বলার শক্তিটা বোধহয় তার শরীরে নেই৷
ইমান এই প্রথম তার উপর সহানুভূতি দেখালো। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, তুমি রেস্ট নাও। চিন্তার কিছু নাই। সব ঠিক আছে। সামান্য একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। পায়ে ব্যথা পেয়েছো। এই যা ভয়ের কিছু নেই। আর তোমার আব্বু-আম্মুও আছে। হাসপাতালে বেশি মানুষ এলাও করেনা জন্য আমি একাই আছি আপাতত।
মিরা বলে উঠে, আপনি কেন আছেন?
এই কথায় যেন ইমান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। এরপর বলে, জেনে যাবে কেন না ঘুমিয়ে তোমার পাশে আছি৷
মিরা ঘাড় নড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যথা পাচ্ছে সে।
ইমান বলে উঠে, কিছু খাবে মিরা?
মিরা তার দিকে তাকিয়ে বলে, পানি খাব৷
ইমান সঙ্গে সঙ্গে পানি এগিয়ে দেয়। সে বলে উঠে, ঠাণ্ডা পানি নেই?
ইমান উঠে দাড়ালো এবং বিনাবাক্যে দুই মিনিটের মধ্যে ঠাণ্ডা পানি এনে দেয়। মিরা পানি পান করে। তখনি তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। ইমানকে শায়েস্তা করার বুদ্ধি। এই ছেলেকে দিয়ে সে আজ অযথা খাটাবে যেমনটা ও তার সঙ্গে করে৷ পানি খেয়ে মিরা মিষ্টি করে বলে, আমার জুস খেতে ইচ্ছা করছে৷
ইমান অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকালো। তা দেখে মিরা বলে, হাসপাতালে ভর্তি জন্য কী জুস খাওয়া মানা?
এই কথায় ইমানের চাউনি স্বাভাবিক হলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে সত্যি একটা জুসের বোতল আনলো। তা দেখে মিরা বলে, ইয়ে মানে আমার ম্যাংগো জুস খেতে ইচ্ছা করছে৷ অরেঞ্জ জুস পছন্দ না আমার৷
ইমান মাত্র খেয়াল করে এটা অরেঞ্জ জুস। সে বিরক্তিপ্রকাশ না করে আবার ক্যান্টিনে গিয়ে জুস পরিবর্তন করে এনে তাকে দেয়। মিরা ভদ্র মেয়ের ন্যায় জুস খায়।
জুস খাওয়ার মিনিট এক পর সে বলে উঠে, আমি চা খাব৷ মাথা ব্যথা করছে। চা খেলে ব্যথা দূর হবে৷
ইমান পকেটে হাত গুটিয়ে নিল এবং বলল, চা খেলে ব্যথা দূর হয়?
— হ্যা হয়৷
— আচ্ছা৷
সে আবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল। তা দেখে মিরা হাসতে হাসতে শেষ। তার ভীষণ মজা লাগছে৷
এবারে ইমান পনের মিনিট পর ফিরে আসে। তাও দুঃখী দুঃখী মুখ করে। সে হাপাতে হাপাতে বলে, রাত হওয়ার জন্য চা ক্যান্টিনে নেই৷ এক নার্সকে বলে এসেছি। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বানিয়ে এনে দিবে৷ একটু অপেক্ষা কর প্লিজ৷
ইমানের কথায় আজ কোন তেজ নেই। বরং ঝড়ে হেলে পরা গাছের মতো দুর্বল তার কণ্ঠস্বর।
মিরা মন খারাপ হওয়ার ভান ধরে বলে, আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম তাই না?
ইমান নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে, আরে না। তুমি অসুস্থ। তোমার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। আর কিছু দরকার?
ইমান জানে মিরার আর কোন কিছুর দরকার নেই৷ সব দরকার ফুরিয়ে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে মিরা বলে, আমার না ক্ষুধা পেয়েছে৷
ইমান ফোস করে একটা দম ফেলে বলে, ক্যান্টিন এখনো খোলা আছে৷ আমি খাবার আনছি৷
মিরা পুনরায় হাসল। ইমান তার জন্য চাওমিন আনলো। এই একটা আইটেমই নাকী ছিল৷ কিন্তু চাওমিন সে খাবে কীভাবে? ডান হাতে ক্যানেল দেওয়া।
অগত্যা তাকে খাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ইমানকে পালন করতে হলো৷ বাধা-বিপত্তি ঘটলো যখন ইমানের খেয়াল হলো সে চামচ আনতে ভুলে গেছে৷
মিরা বলে উঠে, হাত দিয়েই খাইয়ে দেন৷ আমি আপনার জন্য রাত একটায় ভাত রেধেছি৷ আপনি আমাকে খাইয়ে দিতে পারবেন না?
ইমান হাত দিয়েই তাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে, মামী খুব করে চাইছিল থেকে যেতে৷ আমি মানা করলাম। কারণ তার প্রেশার বেড়ে গিয়েছে। তোমার অবস্থা দেখে কাদছিল খুব।
— আফসোস হচ্ছে থেকে যেয়ে?
— উহু৷ এমনি বললাম।
আচমকা মিরা তার হাতে কামড় দিয়ে বসে৷ মিরার দাতে যেন বিষ আছে। এতো জোরে ব্যথা পেল সে। সে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে বলে, ইটস ওকে৷
মিরা বলে উঠে, সর্যি।
ইমান আর কিছু না বলে তাকে চুপচাপ খাইয়ে দেয়। এরপর বলে উঠে, তুমি তো রাকিবের সঙ্গে ছিলে। কিন্তু হাসপাতালে তো ওকে দেখলাম না৷
রাকিবের কথা শুনেই মিরা যেন নিভে গেল। সে মলিন গলায় বলে, ওর কথা আমার সামনে বলবেন না।
ইমান ভারী মজা পেয়ে বলে, কেন?
— আজকে ও আমাকে প্রোপোজ করেছে। যা রাগ উঠেছে না আমার। মাথা কাজ করছিল না তখন৷
ইমানের ভ্রু কুচকে যায়। সে ধারণা করছিল রাকিবের মনে কিছু আছে৷ কিন্তু এতো দ্রুত রাকিব এমন স্টেপ নিবে তা ভাবে নি সে৷
সে প্রশ্ন করে, প্রোপোজ করতেই পারে৷
— উহু পারে না৷ আমি যাকে ভালোবাসি না তার আমাকে “আই লাভ ইউ” বলার অধিকার নেই। এটা একটা দামী কথা। যাকে আমি ভালোবাসি শুধু সেই আমাকে “ভালোবাসি” বলার অধিকার রাখে। যার-তার কাছ থেকে শুনতে ভালো না৷ একজনই বলবে। এবং প্রতিদিন বলবে আর যতোবার বলবে অনুভূতি প্রতিবার একইরকম থাকবে।
ইমান অবাক হয়ে গেল এবং বলে, তাহলে সেদিন যে আমি “আই লাভ ইউ” বললাম তখনো এমনি রাগ হচ্ছিল তোমার?
মিরা মুখ ফোসকে না বলে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর শোনার পর ইমানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।
মিরা আমতাআমতা করে বলে, ওটা তো ডেয়ার ছিল। এজন্য আরকি………
ইমান বলে, সেটাই সামান্য একটা ডেয়ারই তো।
মিরা মাথা নিচু করে ফেলে। ক্ষণেই ইমান তার দিকে এগিয়ে এসে বসে। এরপর দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
সে কোমল গলায় বলে, তুমি কী সত্যিই কিছু বুঝো না? কিছু জানো না? কিছু দেখো না মিরা?
— কী দেখি না?
ইমান আচমকা তার একটা হাত মিরার গাল ছুইয়ে দেয় আর আরেকটা হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, দুইদিন পর যে আমরা স্বামী-স্ত্রী হবো এটা জানো না?
মিরা বিষ্ফোরিত চোখে তার পানে তাকায়। ইমান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে এসে গাল স্লাউড করতে থাকে। সে আবেশে চোখ বুজে ফেলে ঘণ ঘণ শ্বাস ফেলতে থাকে। এই সুযোগ ইমান তার কপালে গাঢ় কিস করে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। মিরা চোখ খুলে ফেলে। তবে বাধা দেয় না।
ইমান আরো নিকটে আসতেই কেবিনের দরজা খুলে যায়। নার্স চা হাতে ভেতরে ঢুকেই, মাগো বলে উঠে।
ভীষণ বিব্রতকর অবস্থা তখন। লজ্জায় যেন মাথা কাটা যাচ্ছে। ইমান বিড়বিড় করে বলে, ভাগ্যই খারাপ। এতো খাটলাম অথচ একটা চুমু অব্দি দিতে পারলাম না। এরা সবাই আমার দুশমন। চুমু-দুশমন।
চলবে।
#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–15
ইমান ছিটকে একদম বেডের শেষ কিনারে গিয়ে বসে পড়ে এবং নিজের মাথা চুলকাতে লাগে। নার্স সাহেবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। সেও যেন মজা নিচ্ছে৷ ইমান ক্যাবলাকান্ত হাসি দিয়ে বলে,” চা টেবিলের উপর রেখে দিন৷”
নার্স তাই করল। চা টেবিলে রেখে ইমানকে বলে উঠে, “স্যার আমাকে বখশিশ দিবেন না?”
ইমানের খেয়াল হলো এতোরাতে চা বানিয়ে দেওয়ার জন্য সে বখশিশ দিতে চেয়েছিল। আর এখন চুমু দৃশ্য দর্শন করার জন্য তাকে টিকিটের টাকাটা তথা জরিমানা প্রদান করতে হবে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভারাক্রান্ত মনে পাঁচশ টাকা বের করে দিয়ে বলে, “ভাগ্নাদের মিষ্টি খাওয়ায়েন আমার তরফ থেকে।”
নার্স তাকে লজ্জায় ফেলার জন্য বলে উঠে, “ভাবীর কিছু লাগলে আমাকে ডাকবেন ভাই৷ আমি নাইট শিফটেই আছি।”
— “জি অবশ্যই, দরকার হলে ডাকব।”
নার্স এক গাল হেসে বলে,” দুঃখিত স্যার, আপনাদের ডিস্টার্ব করলাম। আসলে আমি বুঝিনি এমন সিচুয়েশনে পড়ব৷ এটা তো আর হানিমুন কটেজ না, যে যখন-তখন রোমান্স হবে। হাসপাতালে রোগী আসে৷ ভাবীকে বলবেন কিছু মনে না নিতে। ”
–” আমরা কিছু মনে করিনি৷ আপনি যান এখন।”
নার্সের মুখে নিজের পরিচয় শুনে চকিতে উঠে মিরা। “ভাবী” শব্দটা শোনামাত্র তার পেটের নাড়ি-ভুরি যেন পাক খাচ্ছে৷ ইশ কি লজ্জা! বিয়ে হওয়ার আগেই ভাবী হওয়ার অনুভূতিটা এতো মিষ্টি কেন?
— “হার হাইনেস কিছু ভাবছেন?”
মিরা সেই প্রশ্নের উত্তর দিল না। নিশ্চুপ রয়ে যায় সে।
ইমান বলে উঠে, “চা ঠাণ্ডা হচ্ছে৷”
সে চা হাতে নিল ঠিকই কিন্তু চা খাওয়ার রুচি বা মুড কোনটাই বর্তমানে নেই তাও জোরপূর্বক এক চুমুক দিতেই সে লক্ষ করে, ইমানের চোখে-মুখে তন্দ্রাভাব৷ একবার তো হাইও তুলেছে৷
মিরা কিয়ৎক্ষণ পর বলে উঠে,” আপনার চা খাওয়া দরকার।”
ইমান চোখ তুলে তাকিয়ে স্নান হেসে বলে,” আমার দরকার-অদরকারের পরোয়া তুমি করো?”
মিরা নিরব থাকল। ছেলেটা মাঝেমধ্যে এতো ডিপ কুয়েশ্চন কেন করে? সে এতো কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না৷ কোনদিনই পারবে না৷
ইমান নিজ থেকে এগিয়ে এসে বলে,” কেন আমার চা খাওয়া দরকার? হু?”
— “ঘুম আসছে আপনার। এইজন্য ঘুম তাড়ানোর জন্য চা খান৷”
— “আমি ঘুমিয়ে পড়লে সমস্যা কোথায়?”
মিরা হতবিহ্বল হয়ে গেল এবং নরম গলায় বলে, “আপনি ঘুমিয়ে গেলে আমি একা হাসপাতালের কেবিনে জেগে থাকব!”
— “কেন? কেন? একা জেগে থাকলে অসুবিধা কী?”
— “ভয় লাগেনা বুঝি! কেমন গা ছমছমে অবস্থা রুমের। যেন আশেপাশে একটা মানুষও নেই৷ এম্নিতেই হাসপাতাল জায়গা হিসেবে ভালো না।”
ইমান হোহো করে হাসতে গিয়েই থেমে যায়। এরপর মজার ছলে বলে, “ভূতে ভয় পাও?”
মিরা ঠোঁট বাকিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বলে, “ভালোবাসা আর ভুত বিশ্বাস করিনা৷ কিন্তু ভয় পাই প্রচন্ড৷”
ইমান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে, “ভুত আর ভালোবাসা কী এক? এই দুটোর মধ্যে কোন মিল আছে যে একসঙ্গে তুলনা করে ফেললে৷”
— “মিল তো আছেই বটে৷”
— “যেমন?”
— “ভুত আর ভালোবাসা কোনটাই কিন্তু দেখা যায় না৷ ”
মিরার কথার মাঝেই ইমান হাই তুলে আরেকটা৷ সে এবারে মিরার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খেতে লাগলো। ঘুম যদি সত্যি সত্যি উবে যায়। তবে মন্দ হবে না৷ এমন রাত তো আর প্রতিদিন আসেনা। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে আজ নো ঝগড়াঝাঁটি।ওনলি দুষ্ট-মিষ্টি কথা হবে৷
মিরা যেন তার চা খাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। সে চা খাওয়া শেষ করতেই মিরা দাঁড়ানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু ডান পায়ের পাতায় ব্যথা করার জন্য পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই ভীষণ ব্যথা লাগে তার। সে “উফ” বলে চেচিয়ে উঠতেই ইমান হন্তদন্ত হয়ে তাকে ধরে ফেলে এবং বেডে বসিয়ে দেয়। এরপর নিজে হাঁটু গেড়ে বসে বেশ ব্যস্ত হয়ে মিরার পায়ের পাতা পর্যবেক্ষণ করতে লাগে। নিজ গরজে যখন পায়ের পাতায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মালিশ করতে থাকে, তখন মিরার প্রতিটা লোম যেন খাঁড়া হয়ে যায়। বিচিত্র এক অনুভূতি মনের মধ্যে জন্ম নেয়৷ এই অনুভূতির সঙ্গে সে আরো দু’বার পরিচিত হয়েছিল। প্রথমবার যখন তাকে এয়ারপোর্টে দেখেছিল আর দ্বিতীয়বার যখন সে সব কাজিনের সামনে তার চোখে চোখ রেখে বলেছিল, “I need you like a sky needs moon.”
আজ তৃতীয়বার একই অনুভূতি অনুভব করছে সে। বিষয়টা অদ্ভুত। একই অনুভূতির পুনরাবৃত্তি কিভাবে হতে পারে? তাহলে কী অনুভূতিরা ফিরে আসে? কিন্তু অনুভূতি যদি ফিরে আসত, তাহলে পৃথিবীর কোনে বিচ্ছেদের হার কমে যেত!
ফ্যানের হাওয়ায় তার উড়ন্ত চুল মুখে এসে আছাড় খেল। এতে বিরক্তি প্রকাশ করতেই মৃদ্যু হেসে উঠে ইমান।
তা দেখে মিরা উত্তেজিত হয়ে বলে, “আপনি কী জন্য হাসলেন?”
ততোক্ষণে মিরা যেন পাজোড়া ইমানের হাটুর উপর রেখে বসে পড়েছে। সে এক পা দিতে চেয়েছিল কিন্তু এক পা রাখলে ভারসাম্য বজায় রাখা যাচ্ছিল না জন্য মিরা আরেকটা পাও তার গায়ের উপর রাখলো৷ সে অবশ্য অভিযোগ করেনি একফোঁটা। আর মিরার ভাবসাব দেখলে মনে হবে, ইমানের একমাত্র কর্মই তার পায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়া।
ইমান আইসকুল দিয়ে পা মালিশ করে দিচ্ছিল। আচমকা নজর কাড়ে নিজের পায়ের গোড়ালির এক ইঞ্জি উপরে অবস্থিত ছোট তিলের দিকে৷ সে হাত নিয়ে গিয়ে তিলের উপর রাখে। এরপর প্রশ্ন করে তাকে।
–” হাসলেও কৈফিয়ত দিতে হবে?”
–“সেটা বলিনি।”
–“তোমার পায়ে তো দেখি তিল আছে।”
মিরা খুশি ভাব নিয়ে বলে, “হ্যাঁ এইজন্যই তো আমি বিদেশে যাব।”
— তাই নাকী?
— “হু। শুধু তাই না, আমার ডান হাতেও তিল আছে জন্য আমার হাতের রান্না মজা।”
–” ওহ আচ্ছা। আর কোথায় তিল থাকার জন্য তুমি এক্সাট্রা সুবিধা পাচ্ছো?”
মিরা বলে উঠে, “আমার গলার কাছে দুটো তিল একসঙ্গে আছে। এজন্য দাদীর বলেছে আমার নাকী যমজ বাবু হতে পারে৷”
ইমান শব্দ করে হেসে বলে, “বাহ!”
মিরা লজ্জা পেল সামান্য। ইমান বলে উঠে, নাকের ডগায় যে তিল তোমার সেটার জন্য কী হবে?
— সেটার জন্য কিছু হবে না। আপনার তিল নেই কোথাও?
ইমান সামান্য ভ্যাবাচেকা খেল। জীবনে কত প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। অথচ এতো আজব প্রশ্ন এই প্রথমবার সে শুনল।
সে মুখে হাসি ভাব রেখে বলে,” আমি তো পাসপোর্ট দেখিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করি এজন্য আমার তিলের দরকার পড়েনা। তোমার আর কই কই তিল আছে?”
মিরা অস্বস্তিবোধ করে। সে বেঁফাস কথা বলে ফেলেছে। এখন সেই ফাস নিজের গলায় এসে ঝুলল৷
সে আমতাআমতা করে বলে, “বাম পায়ের আঙুলে আছে একটা৷ পিঠের মাঝে আছে। কানের পিছনে আর একটা বুকের বাম দিক……….”
শেষের কথা বলতে গিয়ে মিরা পাথরের মতো জমে যায়। মুখ ফোসকে পেটের কথা বলে দেওয়ার অভ্যাসটা যে একটা বিরাট বদ অভ্যাস তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে সে। কী বাজে একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হলো তাকে। ছেলেটা কিভাবে তার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে৷ ইশ! মাটির ফাঁক হলে যাক না, সে পালিয়ে যাবে মাটির নিচে।
ইমান চোখে-মুখে দুষ্টুমি ভাব এনে বলে, মিরা তুমি জানো বুকে তিল থাকলে কী হয়?
মিরা মাথা ঝাকিয়ে না অর্থ প্রকাশ করে৷ অর্থাৎ সে জানে না।
ইমান দুষ্ট হেসে তার সঙ্গে আই কন্ট্রাক্ট করে বলে , “বুকে তিল থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর সোহাগ বেশি পাওয়া যায়। এখন আমার আফসোস হচ্ছে কেন আমার গায়ে কোন তিল নেই। এট লিস্ট বুকে একটা থাকলেই চলত৷ বউয়ের আদর-সোহাগ বেশি পাইতাম৷ কী তাই না?”
মিরার তখন লজ্জায় যায় যায় অবস্থা। মানুষটা কীভাবে চোখে চোখ রেখে এতো অসভ্য কথা অবলীলায় বলে দিল? আর সে! সামান্য শুভ্র কথাই চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেনা। বেয়াদবের হাড্ডি একটা!
দুষ্টুমি শেষ করে ইমান উঠে দাড়ালো এবং সিরিয়াস মুডে বলে, ব্যথা কমেছে কী?
–হু।
— কয়েকদিন সোজাসুজি পায়ের পাতায় ভর দিও না। ব্যথা বাড়বে এতে৷ বাই দ্যা ওয়ে, উঠতে কেন চাচ্ছিলে তখন?
মিরার মুখ মলিন হয়ে গেল। সে কীভাবে তার জরুরি কাজের কথা বলবে? আবার লজ্জা দিয়ে না বসে ছেলেটা! উফফফফ!
ইমান বুঝি তার মনের কথা পড়তে পারল। আর মলিন ও নিস্তেজ চেহারার দিকে তাকিয়ে যেন তার অসুবিধার কথা এক নিমিষেই পড়ে ফেলে। নিজ থেকে বলে উঠে, “ওয়াশরুমে যাবে?”
মিরা যেন লজ্জায় লাল হতে লাগলো। নাক দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে যেন৷ তবুও হ্যা বোধক মত প্রকাশ করে। ইমানের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক থাকল। সে চোখ ঘুরিয়ে বাথরুমের অবস্থান দেখে নিল৷ কেবিনের শেষ মাথায় বাথরুম। কয়েক কদম এগুতে হবে। তার জন্য কয়েক কদম হেটে যাওয়া সহজ কাজ হলেও।,মিরার জন্য এখন সেটা কঠিন কাজ। ব্যথা পাবে সে হাটতে গেলে। অগত্যা সে মিরার কোমড় জড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলে নেয়৷
মিরা একদম হতভম্ব বনে যায়৷ তার গলা শুকিয়ে কাঠ হতে লাগে। মনের আন্দোলন শুরু হলো। বুকের ধুকপুক আওয়াজ এতো জোরে হতে লাগে যে সে বিপাকে পড়ে যায় যদি সে তার বুকের আওয়াজ শুনে ফেলে! তাহলে বিরাট মসিবত হবে৷ কারন বুকের প্রতিটা উঠা-নামায় “ইমান ইমান” শব্দ হচ্ছে৷ তা যদি সে শুনে ফেলে তাহলে মিরা শেষ!
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই পুনরায় তাকে কোলে তুলে নেয় ইমান৷ এবারে মিরা তার কাধে হাত চেপে ধরে বলে, আমি বারান্দায় যাব।
— এখন?
— ইয়েস৷
— কেন? বারান্দায় কী আছে?
মিরা ফাজলামো করে বলে, বারান্দায় হ্যান্ডসাম ছেলে আছে জন্য যেতে চাচ্ছি।
ইমান সঙ্গে সঙ্গে বেডের দিকে হাটা শুরু করে বলে, হ্যান্ডসাম ছেলে তো কেবিনের ভেতরেও একজন আছে। আজকের রাতটা তাকে দেখেই পার কর৷ কেমন?
মিরা হেসে উঠে খিলখিল করে৷ ইমান অবাক নয়নে তার পানে তাকালো৷ ইশ! মেয়েটা আসলেই এতো মিস্টি কেন?
ইমানের মনে হলো, কারো হাসির প্রেমে পড়া মারাত্মক বিপদের কাজ। কারণ সেই হাসির প্রেমে বারবার পড়তে হয়! যতোবারই প্রেমে পড়ে, ততোবারই চোট খেতে হয়৷
তাকে বেডের উপর বসিয়ে দিল ইমান। দুইজনেই চুপ। নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল চারপাশ মুহুর্তেই। মিরা পা লম্বা করে শুয়ে পড়ে বেডে। তাকে দেখেও ইমানও চেয়ারে বসে পড়ে৷
আজ বুঝি চাঁদের মন খারাপ। রজনীর মধ্যভাগ চলছে এখন। কৃষ্ণকালো, এই আধারিয়া রাত্রি। সারাদিনের ভ্যাপসা গরম যেন পালিয়ে যাচ্ছে। হিম বাতাসে কেবিনের সাদার মাঝে লাল প্লাস চিহ্নের পর্দাটা তিরতির করে কাঁপছে৷ অশান্ত মন নিমিষেই শান্ত হয়ে গেল। চোখে ঘুমের রাজ্য নেমে আসাকে ইমান ঠেকাতে পারলো না। সে মিরার পেটে মাথা পেতে দিয়ে ক্রমশ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুমের দেশে রওনা দিল৷ মিরা তখনো জাগনা ছিল। তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে আর একটা শব্দও করল না। নিশ্বাস ও আস্তে আস্তে নিচ্ছে যেন তার নিশ্বাসের শব্দে সে জেগে না যায়। নিজের হাত বাড়িয়ে সে তার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগে৷
মিরা তার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে একটা সময় আনমনে ইমানকে নিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দেয়৷ তার সঙ্গে কাটানো ক্ষুদ্র মুহুর্ত এবং ঝগড়াঝাটি সব এক এক করে স্মরণ হতেই সে হাসে। মন ভরে হাসে। গালের ফোলা জায়গাটায় লজ্জার লালের সরু রেখার আবির্ভাব ঘটে। সে বিড়বিড় করে বলে, হাসপাতালেও এতো সুন্দর মুহুর্ত কাটানো সম্ভব!
এরপর তার ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার প্রতিটা রাত যেন এমন নিশ্চিন্তে, শান্তির ঘুমে অতিবাহিত হয়৷”
ঘুমের মধ্যেই ইমান ইংরেজিতে কিছু একটা বলে উঠে। ইমানের ঘুমের মধ্যে কথা বলার অভ্যাসের কথা মিরা জেনে যায় এবং তা দেখে মৃদ্যু হাসে৷ এই বিরক্তিকর ছেলেটাকে সে বিরক্ত হয়েই বিরক্তভাবে ভালোবাসে বড্ড!
চলবে৷
#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
বোনাস পার্ট
সকাল-সকাল কিচিরমিচির পাখির কলকলানি আর সূর্যের তীর্যক কিরণে ইমানের ঘুম ভেঙে গেল। সে আড়মোড়া ভেঙে একটা হাই তুলে, পিটপিটিয়ে চোখ খুলে। অনেকদিন পর বেশ গাড় একটা ঘুম হলো তার৷ বেশ সতেজ লাগছে। সেই সাথে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ মন ভালো করে দিচ্ছে৷ সে উঠতে গিয়ে টের পেল তার মাথার কাছে কারো হাত। সে মাথা উচিয়ে তাকিয়ে দেখল, মিরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিন্তু তার একটা হাত ইমানের মাথায়৷ রাতে কী মিরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল? আনমনে হেসে উঠে সে৷ কিন্তু সারাটা রাত এই পিচ্চির মেয়ে গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছিল সে? মিরা তো অসুস্থ। তার ভার কীভাবে নিল? একবার ডাক দিলেই পারত৷ ইমান তো আর ঘুমাতে আসেনি এখানে৷ বরং মিরার সেবা করতে এসেছিল৷ কিন্তু হলো তো বিপরীতটা৷ মিরাই তাকে চুলে বিলি কেটে দিল। সেবা প্রদান করল৷ এবার সে বুঝলো কেন তার ঘুম এতো শান্তিময় হয়েছিল৷
ঘুমন্ত মিরার দিকে চেয়ে সে বলে উঠে, ” চুলে বিলি কেটে দেওয়ার জন্য কেউ পাশে থাকলে, জীবনটা অদ্ভুত সুন্দর লাগে।”
সে উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে গলা ভেজালো। বাংলাদেশের ওয়েদার খুব রুক্ষ্ম। এতো গরম লাগে। ফ্যানেও গরম ভাব যায় না। এসি দরকার সবসময়ের জন্য।
সে পানির গ্লাস টেবিলে রাখতেই মিরা জেগে যায়৷ ইমানকে দেখে সে উঠে বসে বলে, গুড মর্নিং।
ইমান মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে, “আজকের সকালটা সত্যি গুড।”
মিরা হাল্কা হেসে বলে, “আপনাকে মেয়ে পটোনার কোর্সে ফাস্ট ক্লাস দেওয়া উচিত।”
— “ইমান খান মেয়ে পটায় না। বরং মেয়েরা তার উপর ফিদা হয়।”
— “আচ্ছা তাই নাকী?”
— “জি, ম্যাডাম।”
মিরা নাক ফুলিয়ে বলে, “বিদেশি শর্ট ড্রেস পরা সুন্দরী ললনাগুলোর সঙ্গে মাখোমাখো ভাব আপনার তাই না?”
ইমান টিটকারি করে বলে, “তোমার জ্বলে নাকী?”
— “হ্যাঁ আমার অনেক জ্বলে। জ্বলে জ্বলে একদম ছাই হয়ে যাচ্ছি।”
— “এতো হিংসা ভালো না৷”
— “আপনিও হিংসা করা কমান। হুহ৷”
ইমান হতভম্ব হয়ে বলে, “আমি আবার কখন হিংসামো করলাম?”
মিরা নিজের চুলে হাত দিয়ে তা আংগুলের ফাঁকে এনে চুল আছড়ানোর ভঙ্গি করে বলে,” রাকিব আমার সঙ্গে কথা বললে আপনি মনে মনে জ্বলে কয়লা হন।”
ইমান চমকে গিয়ে তার দিকে চকিত তাকায়। তার ফেস এক্সপ্রেসন এমন যে মাত্র জুতা চুরি করতে গিয়ে জনগণের কাছে ধরা পড়েছে৷
এরপর সে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিংবা প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বলে উঠে, “ডাক্তার মনে হয় রাউন্ডে এসেছে। উনি চেক আপ করুক একবার। এরপর রিলিজ দিলেই বাসায় যাব৷ আমি ডাক্তার সাহেবকে ডেকে আনাচ্ছি।”
মিরা হাসল শুধু। এই হাসির অর্থ হলো, ধরা পড়েছো জন্য পালাবার পায়তারা হচ্ছে৷
ইমান তাকে উপেক্ষা করে কেবিন থেকে বের হতেই, রাতের সেই নার্স আপার সঙ্গে দেখা। তাকে দেখামাত্রই নার্স আপা এমন ভঙ্গিমা করে হাসল। যে সে পুনরায় বিব্রতবোধ করে৷
নার্স বলে উঠে, “স্যার, রাত কেমন কাটলো আপনাদের? কোন অসুবিধা হইনি তো? ভাবী এখন কেমন আছেন?”
তার প্রশ্ন শুনে ইমান ভড়কে উঠে। নার্স এমন ভাবে প্রশ্ন করছে যেন সে হাসপাতাল থেকে না বরং বাসর করে বের হলো৷ কি একটা অবস্থা!
দশটার দিকে তারা দুইজনে নাস্তা সারলো। এরপর মিরার বড় আব্বু আজমল সাহেব এবং মিরার বাবা তালুকদার সাহেব হাসপাতালে আসলেন। ইমান তখন তাদের রেখে পাশ কাটিয়ে হাসপাতালের বাইরে প্রস্থান করে৷ এই প্রথম মিরার মনে হলো, ইমান কিছু একটা ইগনোর করে৷ তখন তার চেহারায় রক্তিম ভাব ফুটে উঠে৷ কিন্তু কী বা কাকে সে ইগনোর করছে ?
মিরাকে নিয়ে তার বাবা বাসায় রওনা দেয়৷ বড় আব্বু ইমানকে নিয়ে রিকশায় ফিরে৷ অথচ তাদের প্রাইভেট কারে ইজিলি চারজন বসা যায়৷ সে বাসা ফিরতেই মা আর ইরা তাকে জড়িয়ে ধরল। মা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ালো৷
আজ শুক্রবার। এজন্য ইমান সরাসরি বড় আব্বুর সাথে নামাজ পরে বাসায় ফিরল। দুপুরে রান্না-বান্নার আয়োজন ভালোই। উৎসব-উৎসব আমেজ৷ বাসার সবার মধ্যে একটা চঞ্চল ভাব যেন। ইরা মিটমিট হাসছে। মাও বেশি উত্তেজিত। ইমানের খাতেরদারি কয়েক স্কেল বেড়ে গেছে। দাদীও আজ সবার সঙ্গে খেতে বসেছেন। সেও খুশি৷
দুপুরে খাওয়ার পর ইরা আর সে রুমে ফিরে যায় রেস্ট নেওয়ার জন্য। ওই সময় সুপ্তি বেগম তার মেয়েদের রুমে আসেন৷ মাকে আসতে দেখেই ইরা অদ্ভুত ভাবে হেসে বেরিয়ে যায়৷
সুপ্তি বেগম একটা লাল কাজ করা শাড়ি মিরার সামনে এনে বলে উঠে, শাড়িটা কেমন রে?
— খুব সুন্দর।
এবার তিনি দুটো সোনার বালা আর একটা বড় সীতাহার বের করে বলে,” এগুলো পড়লে তোকে মানাবে খুব৷”
মিরা চকিত উঠে বলে, এইসব বিয়ের শাড়ি-গহনা কেন আমি পড়ব?
সুপ্তি বেগম তার মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে, “আমি তো মা। সব কথা মুখে বলতে পারিনা। তোর সোনালী আপু আসুক। ও তোকে সব বুঝিয়ে বলবে।”
সুপ্তি বেগম চলে যেতেই মিরা চিন্তায় পরে যায়। কি এমন হতে চলেছে? আচমকা ফোনের রিংটোনে তার ঘোর কাটে। সে দেখল রাকিব কল দিচ্ছে৷ সে ফোন রিসিভ করে।
অপর প্রান্ত থেকে রাকিব বলে উঠে, “শুনলাম তোমার নাকি এক্সসিডেন্ট হয়েছিল। মিরা আই এম সর্যি। আমার জন্য তোমার বিপদ আসলো। ওসব কথা না বললে হয়তো তুমি আমার সঙ্গেই থাকতে৷ এমন বিপদ আসত না।”
মিরা শান্তসুরে বলে, “ইটস ওকে। তোমার দোষ নেই। দুর্ঘটনা তো বলে-কয়ে আসে না৷ আর আমি একদম ঠিক আছি৷ ফোন দিয়ে খবর নিয়েছো জন্য ভালো লাগলো।”
— “মিরা আমি তোমাকে কীভাবে বোঝাব সত্যি আই ফিল ফর ইউ……. ”
–” ওই টপিকে কথা বলতে চাইছি না। রাখছি৷”
রাকিবের ফোন রেখে সে বারান্দায় গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকলো। বিকেল হওয়া দেখল। গুনগুনিয়ে কিছুক্ষণ গান গাইলো৷
সন্ধ্যার আগে বাসায় বেশ কয়েকজন গেস্ট আসল। ফুপু আসলেন পরিবারসহ। তাদের দুরসর্ম্পকের এক দাদা এবং এলাকার তিনজন মুরুব্বিও আসলো। মা প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবাই এসে এসে মিরার খোজ নিয়ে গেল। সন্ধ্যার পর আসলো সোনালী আপু। এসেই আপু একদন্ড অপেক্ষা না করে মিরাকে শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগে৷
সে ঘাবড়ে গিয়ে বলে, আমি শাড়ি পরব না এখন আপু৷
সোনালী আপু অবাক হয়ে বলে, “দুইদিন আগে যখন গ্যাদা বাচ্চা ছিলি প্রায় বিকেলে শাড়ি পড়ায় বউ সাজিয়ে দাও আপু– বলে বলে আমার মাথা খেতি আর আজ নিজ থেকে পরিয়ে দিতে চাইলাম এজন্য মানা করে দিলি!”
মিরা সামান্য হাসল। ছোটবেলায় তার বউ সাজতে খুব ভালো লাগত এইজন্য সোনালী আপুর কাছে বায়না ধরত। আপু এখনো এসব মনে রেখেছে। সে বলে উঠে, ” তখন বাবু ছিলাম।”
আপু হেসে বলে, আমার কাছে তুই বাবুই থাকবি সবসময়।
আপুকে আর সে বাধা দিল। আপু সুন্দর করে লাল শাড়িটা পরিয়ে দিয়ে সেভটিপিন লাগিয়ে দিল৷ মিরাকে আয়নার সামনে বসিয়ে আদুরে গলায় বলে, ” আজকে সত্যিকারের বউ সাজিয়ে দেই তোকে?”
মিরা চোখ বড় করে তাকালো আপুর দিকে যেন সে কিছুই বুঝতে পারেনি। আপু তার গলায় সেই সীতাহার পরিয়ে দিয়ে বলে, “ইমান কিন্তু খুব ভালো একটা ছেলে। নিজের ভাই জন্য গুনগান গাইছি না। তোরা সুখে থাকবি দেখিস।”
মিরা চুপ হয়ে গেল। এই দিনটা যে আসবে এটা সে জানত। কিন্তু এতো জলদি কেন এসে গেল দিনটা! সে বলে উঠে, ” উনি রাজী হয়েছেন অবশেষে?”
–” রাজী তো হয়েছিল সেইদিন-ই যেদিন আব্বু, ছোট চাচা আর দাদী মিলে বৈঠক বসালো। তবে বিয়ে করতে চাচ্ছিল না এতো জলদি৷ কাল তোর এক্সসিডেন্ট হলে, দাদী ভেঙে পড়ে একদম। জানিস তো, দাদী তোকে খুব ভালোবাসে৷”
— দাদী উনাকে দ্রুত বিয়ে করতে রাজী করিয়েছিল গতকালকে তাই না?
— “হু”
— ” এইজন্য জনাব আমার খেয়াল রাখার জন্য রাতে থেকে গেল?”
— হ্যাঁ রে।
— “আজকে কী বিয়ে পড়ানো হবে? মানে আকদ হবে আমাদের? ”
— “বড়রা তাই চাচ্ছে। ইমানের আপত্তি নেই। এখন তোর অনুমতি থাকলে আজকেই কাজী ডেকে আকদ পড়িয়ে ফেলবে৷ ”
মিরা স্নান হেসে বলে,” বউ সাজানোর পর বিয়ে করব কীনা জিজ্ঞেস করছো?”
সোনালী আপু পালটা প্রশ্ন করে, আগে জিজ্ঞেস করলে মানা করতি?
মিরা দুম করে শ্বাস ছেড়ে বলে, জানি না। কিন্তু আমি প্রস্তুত নই৷”
আপু তার হাতে বালা পরিয়ে দিয়ে বলে, “পরীক্ষা আর বিয়ের জন্য কোন ক্যান্ডিডেটই প্রস্তুত থাকে না। যতোই প্রিপারেশন নিবি মনে হবে কিছুই পারবি না৷ কিন্তু একবার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্র পড়লে একে একে সব মনে পড়ে যায়। বুঝলি? একবার কবুল বলে দেখ, সংসার-জীবন, স্বামীর জন্য মায়া পড়ে যাবে৷ আমি তো চার বছর প্রেম করেও কবুল বলার টাইমে সেই নার্ভাস হলাম। এখন কিন্তু ঠিকই তোর দুলাভাইয়ের জন্য মন কেমন করে সবসময়ই।”
মিরা ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে বলে,” তোমার যোগ্য পদ্মের মতো ভাইয়ের জন্য আমি হলাম গোবর।”
আপু বলে,” তুই ওর যোগ্য না হলে এই দুনিয়ায় ওর জন্য আর কোন মেয়েই যোগ্য নয়৷”
— ওর সাথে কথা বলতে চাই। এরপর সিদ্ধান্ত নিব৷
সোনালী আপু বলে,” বেশ তবে তাই হবে।”
আপু বেরিয়ে গেল। মিরা একা বসে রইল চুপচাপ। গতকাল হয়তোবা অনেককিছুই ঘটে গেছে হাসপাতালে। যা সে ঘুণাক্ষরেও জানত না। কাল রাতে কী ইমান পারত না বিয়ের কথা নিয়ে সোজাসাপটা তার সঙ্গে কনভারসন ক্লিয়ার করতে? কিন্তু নাহ উনি সব ধোয়াশায় রখল। ফাইজলামি করল আর আসল কথা না বলেই পগারপার।
সোনালী আপু পনের মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে মুখ গোমড়া করে বলে, ইমান তো বাসায় নাই এখন। বাইরে গেল কাজে। পরে কথা বলিস৷
মিরা ভারাক্রান্ত গলায় বলে, আমি অনেক কনফিউজড। কী করব জানি না৷
আপু তার পাশে বসে বলে, “এমন কনফিউশানে পড়লে ফ্যামিলির কথা শুনবি সবসময়। উনারা যা করতে বলবে করবি, যদি সফল না হোস, তাদের উপর দোষ চাপাবি। এতে তারা ঠিকই তোর সমস্যা সমাধান করে দিবে। সলিউশন না দিতে পারলেও পাশে অন্তত পাবি৷”
মিরার কপালে চিন্তার ভাজ পরে যায়।ফ্যামিলির কথা শুনলে আজকে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ভাবতেই তার সারা শরীর কেঁপে উঠে।
চলবে।