ফেইরিটেল পর্ব-৫৮+৫৯

0
583

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–58

নিউইয়র্কের আবহাওয়া আজ দারুণ চমৎকার। ঝিলিমিলি রোদ হাসছে। বহু দিন বাদে সূর্য উঠেছে। সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে হাসনাহেনা কাজে লেগে গেলেন। যদিও বা দু’জন মানুষের ঘরের কাজে তেমন চাপ নেই। সে বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখ অভ্যাসগতভাবে দো’তলার দিকে গেল৷ কোন এক সময়ে বাসাটা মানুষ পূর্ণ একটা ঘর ছিল। হয়তো ঘরের ভেতরের মানুষ গুলোর মধ্যে কথা হত না তবুও তাদের অস্তিত্বই যেন আজ বড় মনে করায়। শূন্য এ বাসা তার বুকে বড় পোড়ায়৷ একটা সুন্দর, হাসি-খুশি পরিবারের সাধ তার এই জনমে আর হলো না। ওয়াশিংমেশিন অন করলেন। ওয়াশিং মেশিনে ধোয়ার পরও তার মন ভরলো না। হাত দিয়ে সাবান মাখা করে সে কাপড় ধুলেন। গত সাত দিনের কাপড় জমে আছে৷ রোদ উঠে না জন্য সে ইচ্ছা করে ধুতে দেয়নি। বাঙ্গালী হওয়ার দরুন কাপড় ধুয়ে রোদে না শুকালো তার শান্তি আসে না৷ সে বাসার সামনের বাগানে দড়ি টানিয়েছেন। সেখানে কাপড় শুকান। এটা নিয়ে জহির সাহেব সবসময় চেচামেচি করে এসেছেন৷ এখন আর করেন না। বয়সের ভারে বা কোন এক কারণে আগের দাপট তার মধ্যে আর নেই। বরং আজ-কাল হাসনাহেনাকে নিজের কাছে বসিয়ে টুকটাক গল্প করেন। শৈশবের গল্প করেন৷ নিজের গ্রামের কথা বলেন৷ হাসনাহেনা মন দিয়ে শুনে।

বাগানের দিকে আসলেন তিনি৷ ছয় বছরে বাসার সৌন্দর্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাদের সামনের বাসার দেয়াল ঘেঁষে চেরি ব্লসম ফুলের গাছে হয়েছে। ফুল ফুটলে অপূর্ব লাগে৷ তবে গাছটা এখনো ছোট আছে। তার ডানে পাশে বাসার প্রতিবেশী মিষ্টার থমাস গত হলেন এক বছর আগে। ওনার বাসাটায় নতুন মানুষ উঠেছে৷ একটা দম্পতি উঠেছে৷ ইটালি থেকে এখানে শিফট হয়েছে তারা৷ ভাব জমাতে এক-দুই বার এসেছিল৷ হাসনাহেনার ভালোই লেগেছে কথা বলে। আসলে তার কথা বলার কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সের এই একাকিত্ব তার অসহ্য লাগছে৷ নাতি-নাতনীদের সঙ্গে থাকা এরচেয়ে অনেক ভালো হত৷ ইমানের একমাত্র ছেলের কথা সে কানেই শুনে গেলেন। নাতিকে চোখের দেখাও দেখতে পারছে না। যদিও বা ইমান তাকে মা হিসেবে মানে না৷ তবুও ইমাদের মুখে দাদি ডাকটা শোনার জন্য ছটফট লাগে তার৷

পেছন থেকে জহির সাহেবের ডাকে সে তাকালো। মানুষটা যেন প্রতিদিন বৃদ্ধ হচ্ছে৷ চুল সব পেকে গেছে ওনার। হাতের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে৷

উনি বলে উঠে, ” চা খাবে হেনা? আমি নিজের জন্য বানাচ্ছি।”

–” চিনি দিবেন না৷ ডাক্তার আপনাকে সুগার খেতে বারন করেছে৷”

উনি চা বানাতে না গিয়ে বাগানে এসে দাঁড়ালো। বাগানে ঘাস গুলো লম্বা হয়েছে। ঝেঁটে দিতে হবে৷

সে পিষে মরা ঘাসের মতো নরম কণ্ঠে বলে, ” সাদ আসবে কবে কিছু জানো?”

হাসনাহেনার এ’প্রশ্নে খুব কষ্ট হলো। সাদ তো কতদিন হলো বাসা ছেড়েছে৷ নিজের মতো থাকছে৷ মাসে একবারও এ বাড়িমুখো হয় না। জবে না ঢুকে তার ছেলে কী-সব করে বেড়াচ্ছে। বিয়ের নাম তো মুখেও নেয় না৷ কিছু দিন আগে ফোন দিয়ে বলছিল,” মম আমি ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যাব৷”

সে বলে, ” সাদ মনে হয় আমেরিকায় নেই৷ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যাওয়ার ধান্দায় আছে৷”

জহির সাহেব অবিশ্বাস্য চোখে তাকালেন। হেনা বলে, ” এখন ও ইমানের সঙ্গে বাংলাদেশে গেছে। শেষ কথা হওয়ার সময় ও বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে যাচ্ছিল।”

–” জবে ঢুকল কোন?”

–” না। সামনেই ওর একটা ফটোগ্রাফি এক্সজিবিশন আছে৷”

জহির খান সামান্য কাঁপতে লাগলো। এরপর আফসোস ভরা কণ্ঠে বলে, ” আমার দুই ছেলেই হলো লাফাঙ্গা। বড়টা বারো মাসে তের বার চাকরি ছাড়ে আর ছোটজন বেকার থেকেই নিজেকে বীর ভাবে। ওরা দেশে গেল আর আমাকে কিছু জানালে না?”

–” ভেবেছি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।”

–” দেশের জন্য বড় টান লাগে৷ আরেকবার গ্রামে ফিরে যেতে মন চায়৷ মুন্সি চাচার দোকানটা দেখতে ইচ্ছা করে৷ আমরা আগে মুন্সি চাচার দোকানে রেডিও শুনতাম৷ কাঁঠাল গাছ দেখি না কতদিন হলো। স্কুলের পর আমরা দশ-বারো জন মিলে কাঁঠাল ভেঙে খেতাম৷ কী মিষ্টি সেই কাঁঠাল! দশজন মিলেও খেয়ে শেষ করা যেত না৷”

জহির রায়হান সাহেব রিটায়ার্ড করার পর প্রতিদিন হাঁটতে বের হন। রাস্তার বাচ্চারা সাইকেল চালায় উনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন। ইমানকে যেদিন প্রথম সাইকেল কিনে দিল কি খুশি হয়েছিল ছেলে তার৷ কিন্তু ইমান সাইকেল চালাতে জানত না৷ সে অফিস থেকে এসে ক্লান্ত শরীরেই ইমানকে নিয়ে বের হত। গ্যারেজে সাইকেল চালানো শিখাত ছেলেকে। ছেলের উচ্ছ্বাস ভরা চেহারা দেখলে ক্লান্তি আর থাকত না। সামান্য ভারসাম্যহীন হতে গেলেই ইমান ভয় পেয়ে বাবা বাবা বলে চিল্লাত। আজ ছয়টা বছর হয়ে গেল। ছেলে একবারও তাকে বাবা বলে ডাকে নি৷

বিকেলের দিকে জুই আসল তাদের সঙ্গে দেখা করতে। দীর্ঘ দুই’মাস পর সে এসেছে আংকেল জোয়ের বাসায়৷ এই কয়েকদিন সে কাজে বেশ ব্যস্ত ছিল। ফ্রান্স গিয়েছিল মাঝে৷ আসার সময় হেনা আন্টির প্রিয় পাস্তা আর আংকেলের জন্য মাংসের তরকারি বানিয়ে এনেছে৷ এ’দুটো মানুষ একা থাকে। ভালো-মন্দ খাবার আজ-কাল আর তৈরি করে না। হেনা জুইকে দেখে খুব খুশি হলো। জহির সাহেব গল্প করতে লাগলো। খাওয়া-দাওয়া করার সময় জহির সাহেব বলে উঠে, ” ভাবছি বাংলাদেশ থেকে একবার ঘুরে আসব। অনেক বছর যাই না দেশে।”

বাংলাদেশ শুনে জুই সামান্য মিইয়ে পরে। এরপর কী যেন ভেবে বলে, ” আমিও আপনাদের সঙ্গে যেতে যাই। বাংলাদেশ তো আমারও মাতৃভূমি।”

হাসনাহেনা তার পানে তাকালো। মেয়েটার জন্য মায়া লাগে। যেদিন সে সমস্ত সত্য জেনে ফেলে, ওইদিন হাসনাহেনার বুকে এসে চুপটি করে অনেকক্ষণ কেঁদেছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তারা তিনজন খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ যাবে সাদ থাকতে থাকতেই। হাসনাহেনা দারুণ খুশি। সে সকালে মেলে দেওয়া কাপড় তুলতে ভুলে গিয়েছিল। সেই কাপড় তুলতে বাগানে ফিরে আসে। বাগানে নিরালা চোখের জল মুছে। বাংলাদেশে গেলে নিশ্চয়ই ইমাদের সঙ্গে দেখা করবে সে।

___________________________

ভোর পাঁচটায় অফিসের বাস গাবতলি থেকে রওনা হবে৷ টোটাল বিশ জন মিলে কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে। এতো সকাল হওয়ার জন্য ইমাদকে আর জাগানো হলো না৷ মিরা রেডি হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকল। দুটো রাত, তিনটে দিন বাবুকে ছাড়া থাকতে হবে৷ বাবুর তেমন সমস্যা হবে না। চাচ্চুর সঙ্গে খেলবে৷ মিমোর সঙ্গে ঘুমাবে৷ ইমান বাবুর কপালে চুমু দিল৷ তখন তার মনে হলো, বাবুর গা বোধহয় একটু গরম। পরবর্তীতে আমলে নেয় না ব্যাপারটা। কম্বল গায়ে থাকায় গরম হয়ে আছে হাত এটা ভেবে সে বাড়তি চিন্তা মাথায় আনে না। তারা বের হয়ে যায়৷ গাবতলির নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তারা বাসে উঠে পরে৷ সামান্য লেইট হয়ে গেছে জন্য বাসের সব সিট দখল হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষের পাশের সীট ফাঁকা কিন্তু ব্যাগ রেখেছে। কেউ আবার পা তুলে দিয়েছে৷ কেবল ডান পাশের রো’তে একসঙ্গে দুটো সিট ফাঁকা আছে৷ ইমান বলে, ” তুমি জানালার সিটে বসবে?”

মিরা বলে উঠে, ” হ্যাঁ।”

–” বস তাহলে।”

পাশাপাশি সিটে বসল তারা৷ যে যার মতো জার্নি ইনজয় করবে বলে পরিকল্পনা করে এসেছে৷ কিন্তু সকাল জন্য সবাই ঘুমু ঘুমু অবস্থায় আছে৷ ইমানের আজ বড় ক্লান্তি লাগছে। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য মাথাব্যথা করছে৷ দু’চোখে ঘুম এসে হানা দিচ্ছে। কাল আড্ডা মারার পর রাত জেগে অফিশিয়াল কাজ করেছে৷ রাতে কেবল দেড় ঘন্টা ঘুম হয়েছে। বাস চলতে আরম্ভ করার পর পর সে মিরার গায়ে হেলান দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে যায়৷ ঘুমের রেশ ধরেই সে মাথায় হাত দিয়ে নিজের মাথা ব্যথার জন্য চুল বুলাতে লাগে স্বস্তি পাওয়ার উছিলায়। এবং পুরনো অভ্যাস মতে ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে বলে, ” মাথাব্যথা করছে।”

তার কাণ্ড দেখে মিরা হাসলো। সেইম অভ্যাস বাবুরও আছে। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কথা বলার অভ্যাস বাপ থেকে ব্যাটা পেয়েছে৷ সে আস্তে করে ইমানের মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে এরপর কায়দা করে ধীর গতিতে মাথায় হাত বুলায়, কপালে ম্যাসাজ করে দেয়৷ একটু পর ইমান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়৷

তার ঘুম ভাঙ্গে মিহি কণ্ঠের ডাকে। সে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বাস থেমে আছে। হচকচিয়ে উঠে বলে, ” বাস থেমেছে কেন? পৌঁছে গেছি?”

–” উহু। ফ্রেস হওয়ার জন্য ফুড ভিলেজে এসে থেমেছে। সবাই নেমে গেছি৷ আপনার জন্য আমারও দেরি হলো। বাস থেকে নামুন৷”

ইমান বাস থেকে নামল। মুখে ঘুমের রেশ লেগে আছে৷ আবার ক্ষুধাও লেগেছে৷ ফ্রেস হয়ে সে ন্যান্সি ম্যাডামের সঙ্গে নাস্তা করল৷ মিরাকে চোখে চোখে দেখে রাখছে সে। ও পরোটা-সবজি খেয়ে চায়ের অর্ডার দিল। তার দশ মিনিট পর উঠে দাঁড়ালো এবং অন্য দিকে হাঁটা দেয়৷ তখনই চা টেবিলে সার্ভ করা হয়। ইমান ভাবল, মিরাকে চায়ের কথা জানানো দরকার নাহলে চা ঠাণ্ডা হলে খেয়ে মজা পাবে না৷ সে মিরাকে ফলো করতে করতে আগালো। একটা সময় ভুলে লেডিস্ ওয়াশরুমে মিরার পিছু নিয়ে ঢুকে পড়ে৷ প্রবেশ করতেই তার হুশ হলো আরেকটা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে৷ ওয়াশরুমের কক্ষের ভেতর থাকা মহিলাগণ তার দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। যেন এক্ষুনি তাকে মেরে ফেলবে তারা৷ চেচামেচি করে অবস্থা বেগতিক করে দিল৷ ইমানকে ঘিরে দাঁড়ালো সব মহিলারা৷ একজন বলে উঠে, ” দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে, কিন্তু এমন বেহায়াপনা করলেন কেন?”

আরেকজন বলে, ” মেয়েদের বাথরুমে ঢুকতে শরম লাগে না?”

ইমানের নাস্তানাবুদ অবস্থা। সে মিনমিন করে বলে, ” বউকে দেখতে আসছিলাম ভুলে ঢুকে গেছি।”

এক মহিলা বলে, ” অন্য মানুষের বউকে দেখার জন্য ঢুকছেন?”

তাকে উদ্ধার করার জন্য মিরা ছুটে এসে বলে, ” সর‍্যি, সর‍্যি। উনি আসলে আমার সঙ্গে ভুলে এখানে এসে পড়েছে৷”

–” এই লোক আপনার কে হয়?”

মিরা ইমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমার মিষ্টার লাগে।”

ইমানের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

তিন-চারটে উত্তপ্ত কথা শুনিয়ে ইমানকে ছেড়ে দিল তারা৷ ওয়াশরুমের বাইরে বেরিয়ে মিরা ধমকে বলে, ” আপনি কী মানুষ? মানে মহিলাদের ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন কোন সেন্সে?”

ইমান কাচুমাচু করে বলে, ” তোমাকে ফলো করে আগাচ্ছিলাম। কে জানত তুমি ওয়াশরুমে যাচ্ছো। তোমার দিকে তাকালে আমি অন্যসব কিছু ভুলে যাই৷ বল আমার কী দোষ আছে কোন?”

–” এখন যে গণগালি খেলেন তার বেলায় কী?”

–” তোমার মুখে “মিষ্টার লাগে” শুনার জন্য যদি আরো একশবার গণগালি বা গণধোলাই খাওয়া লাগে, আমি ইমান খান প্রস্তুত আছি।”

–” পাগল আপনি! ”

–” অনলি ফর ইউ।”

মিরা চোখ গরম করে বলে, ” আপনার বয়স ত্রিশ ক্রস হলো কিন্তু ভাব-সাব দেখে মনে হয় টিন এইজ চলছে।”

ইমান হেসে বলে, ” আই এম ওলওয়েজ সুইট এইটন্টিন৷ আমার ছেলে যখন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরবে৷ সেইম জায়গায় আমি বাপ হলেও বউ নিয়ে ঘুরব। ছেলে যে হোটেলে হানিমুনে চেইক ইন করবে, আমিও বউ নিয়ে সেই হোটেল হানিমুনে যাব৷”

______________________

— ইরা, তোমাকে একটা কি*স করি?”

সাদের সরাসরি এহেন প্রশ্নে ইরা হতবাক হয়ে যায়। এরপর রেগেমেগে তেড়ে এসে তার গায়ে এলোপাতাড়ি কিল মেরে উঠে বলে, ” বেয়াদব একটা! কর বড় সাহস তোর।”

ইরা রেগে গেছে। তার নাকের ডগায় রাগ যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে তান্ডব করছে। সাদ হোহো করে হাসছে। দুপুর বারোটায় তারা ছাদের গাছগুলোয় পানি দেওয়ার নাম করে উপরে এসে প্রেম করছে৷ সাদ টবে থাকা একটা কাঠগোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে তার চুলের বেণীতে গুঁজে দিয়ে টুপ করে কপালে একটা চু’মু খেয়ে উঠে বললো, ” তুমি খুব দ্রুত মিস থেকে মিসেস হতে যাচ্ছো৷”

ইরা আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। সাদ বলে, ” শ্বাশু মাকে পটানোর মিশন চলছে৷”

ইরা কিছু বলতে পারলো না। তবে কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে সে বলে, ” সাদ, আমার কেন যেন মনে হয় আমার দ্বারা বিয়ে বা ট্রাস্টেট রিলেশন সম্ভব না৷ আমি কেন জানি কাউকে স্পেশালি কোন পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারি না৷ সব পুরুষ এক না। একজন খারাপ জন্য অন্যরা খারাপ না– এসব জানি৷ মানতে চাই৷ কিন্তু কেন যেন তাও বারবার মনে হয় সবাই খারাপ।”

সাদ তার দিকে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটা মনে হয় কাঁদছে৷ ইরা সম্পর্কে সে সব জানে। সে বলে, ” সবাইকে অনিকের মতো মনে হয়? ”

–” হুম”

–” এটা তোমার একটা মানসিক সমস্যা। সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার আছে৷ আসলে ওই হ্যারেজমেন্টের প্রভাব তোমার ভেতর থেকে যায়নি।”

ইরা তার দিকে তাকিয়ে থাকল অবাক হয়ে। সাদ তাকে টেনে এনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশালো এরপর বললো, ” আমরা অনেকেই ভাবি শারিরীক ভাবে ক্ষতি নাহলেই আমরা সুস্থ। কিন্তু মাঝে মাঝে মানসিক অসুস্থতা আমাদের ভোগায়। অনিক তোমার ক্ষতি করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু ওই ঘটনার প্রভাব তোমার মনে রয়ে গেছে৷ যন্ত্রণা, কষ্ট-দুঃখ গুলো নিজের মধ্যে চেপে রেখেছো। চেপে রাখতে রাখতে যন্ত্রণা গুলো ফুলে-ফেঁপে উঠে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে যার জন্য তোমার আত্মার দু’টো সত্তা তৈরি হয়েছে। এক সত্তা নরমাল লাইফ চায়৷ যেখানে তোমার স্বামী হবে, সংসার হবে৷ দ্বিতীয় সত্তা প্রতিশোধ নিতে চায়৷ পুরুষ বিদ্বেষী সেই সত্তা৷ অনিকের করতে চাওয়া অন্যায় তুমি অন্য কারো সঙ্গে অন্যায় করে শোধ তুলতে চাও। নেগেটিভিটির শক্তি বেশি এইজন্য দ্বিতীয় সত্তা তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷”

সাদের কথা মন দিয়ে শুনলো সে। ভুল বলেনি ও৷ ইরার চোখ বেয়ে পানি গড়ালো। সে সাদের বুকে মাথা রেখে বলে, ” অনিকের ভাইয়ের বাজে ইঙ্গিতের কথা মনে হলেই, জানো কত রাত যে ঘুম হত না। মা বা আপুর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতেও গা গুলাত। আমি রাতের পর রাত বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছি। ঘটনা ঘটলো মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে কিন্তু ওই দশ মিনিট আমার বাকি দিন গুলোকে কুৎসিত করে দিল।”

সাদ শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” তুমি প্লিজ প্লিজ কান্না করো না৷ আই হেইট ইউর টিয়ার’স মোস্ট।”

চলবে।

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–59

সমুদ্রের বিশালতার মাঝে, কড়া রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুটিং দেখছে মিরা। সাগরের ঢেউয়ের শব্দ কানে ভাসছে৷ খুব বিলাসবহুল একটা রিসোর্টে তারা উঠেছে। রিসোর্টের নিজস্ব বা প্রাইভেট বীচ আছে। যার জন্য নির্জন সমুদ্রের পাড়ে শুটিং করা সম্ভব হচ্ছে। আজ শুক্রবার হওয়ায় লাবনী বীচে উপচে পরা ভীড়৷ সমুদ্র সৈকতে এই প্রথম ফটোশুট হতে দেখছে মিরা। ভীষন চমৎকার এক অভিজ্ঞতা। একপাশে সমুদ্রের উত্তাল – পাতাল ঢেউ অপরদিকে, ক্যামেরা-ফ্লাশ লাইট নিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মেকাপ ঠিক করা হচ্ছে। ন্যান্সি ম্যাডামকে এদিক থেকে ওদিক ছুটে যেতে দেখা যাচ্ছে৷ স্পটে ইমান নেই। এখানে ওর কোন কাজ নেই বলা চলে। ফটোশুট শুরু হলো৷ বিশটা নিউ কালেকশনের উপর ফটোশুট হবে। কাজ শেষ হতে অনেকক্ষণ সময় লাগবে৷ আজকের ফটোশুটের মডেলদের পরনে বেশিরভাগ-ই তার ডিজাইন করা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ৷ তার নিজস্ব ডিজাইন করা ড্রেস কেউ পরলে খুব আনন্দ লাগে!

মিরা হাঁটতে লাগলো। কিছুদূর ধীরগতিতে পায়ে হেঁটে নিরিবিলি সমুদ্রের সঙ্গে যেন সে মিশে যাচ্ছে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে সেটের মানুষ-জনকে৷ নিস্তব্ধ, নির্জন একপাশে এসে থামলো সে। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ তার পায়ের গড়ালি অব্দি ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে প্রচুর বাতাস বইছে৷ ওড়না কাঁধে থাকতে চাইছে না। বারবার নিচে পরে ভিজে যাচ্ছে। চুল এলোমেলো হচ্ছে বাতাসের দমকা হাওয়ায়। সে সমুদ্র ও আকাশের রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে ওসেন ব্লু রঙের সালোয়ার আর সাদা ওড়না পরেছে। সবাই তার জামার প্রশংসা করেছে। বীচের এইধারে আবার বসার জন্য জায়গা বানানো হয়েছে৷রোদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য উপরে ছাতার ব্যবস্থা রাখা আছে। সে স্বচ্ছ সাগরের পানির দিকে তাকিয়ে রইল৷ কতক্ষণ কেটে গেল সে হিসাব রাখলো না। বালিতে হাঁটু গেড়ে বসে একদম আনমনে বালিতে দাগ কাটছে আর আজকের ভোরের কথা ভাবছিল। ইমানের সঙ্গে বাস ভ্রমণটা সে উপভোগ করেছে। ফিমেইল ওয়াশরুমে ঢুকে পরার পর ইমানের চেহারাটা চোখে ভাসতেই মিরা ফিক করে হেসে দেয়৷ তখনই পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠে বলে উঠে, ” ম্যাডাম, আপনি এখানে! আর আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে আপনার সৈনিক হয়রান।”

মিরা পেছনে ঘাড় ফিরিয়ে দেখল, ইমান সাদা ধবধবে শার্ট পরে বুকের উপর দু’হাত ভাঁজ করে তার দিকে চেয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস পরে আছে। একদম নায়ক-নায়ক ভাব, শুধু নায়িকার অভাব যেন৷ ইমান তার কাছে এসে বসল। দু’জনই চুপ আছে এবং একদৃষ্টিতে সমুদ্রের পানে তাকিয়ে থাকে৷

ইমান নরম গলায় বলে, ” মনের অজান্তেই আমাকে আরেকবার ভালোবেসে ফেলেছো মিসেস খান।”

মিরা চমকে উঠে বলে, ” সর‍্যি?”

–” আজকে তোমার নতুন রুপ উন্মোচন করলাম। তুমি সমুদ্রের চাইতেও মোহনীয়। প্রথম দর্শনে যেমনটি করে সাগরের দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না, তেমনই তোমার দিকে তাকালে চোখ আটকে যায়। তুমি আজ থেকে সমুদ্রকন্যা। আমার সমুদ্রকন্যা। আর আমি তোমার বুকে বাস করা এক ভাসমান দ্বীপ। যার অস্তিত্ব তোমার উপর নির্ভর করে। তুমি চাইলেই আমাকে ভাসিয়ে দিতে পারো অতলে আবার চাইলে আগলে রাখতে পারবে।”

মিরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাহিত্যিক দিকটা তার দারুণ লাগে।

সে মৃদ্যু হেসে ইশারায় বালুর দিকে তাকাতে বলে৷ মিরা সেদিকে তাকাতেই লজ্জায় মিইয়ে পরে৷ আয়হায়! সে বালুতে আঁকা-আঁকি করার সময় মনের ভুলে বড় করে ইংরেজিতে “ইমান” লিখেছে। ইশ! এই মূহুর্তে তার লজ্জা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৌঁড়ে পালাতে মন চাইছে। ইমান তার হাত ধরে। সে শিউরে ওঠে। তার হাতের উপর হাত রাখল সে। আংঙুলে আংগুলে রেখে বালিতে মিরা নামটা লিখলো মাঝে প্লাস চিহ্ন বসালো। এরপর নাম দু’টোকে কেন্দ্র করে, লাভ শেইপ ড্র করে।

সে বলে, ” নাস্তা খাওয়ার জন্য সবাই হোটেলে গেছে। তোমাকে নিতে এসেছি৷”

তারা উঠে দাঁড়াতেই একটা বড় ঢেউ এসে লেখাটা মিশিয়ে নিয়ে গেল৷ মিরা অবাক হয়ে মিশে যাওয়া বালুর দিকে তাকিয়ে থাকলে ইমান মৃদ্যু হেসে বলে, ” সমুদ্রের বুকে তোমার-আমার ভালোবাসা জমে থাকুক।”

ইমাদের স্কুল ছুটি হলো মাত্র। সে ব্যাগ ঘাড়ে ঝুলিয়ে হাঁটা ধরল। বাম হাতে ক্যাপ্টেন ব্যাচটা সে ইচ্ছা করে উপরে তুলল যেন সকলে সহজেই দেখে। ইমাদ নিজে স্কুলে আসার কথা ভুলে যেতে পারে কিন্তু ক্যাপ্টেন ব্যাচ আনার কথা ভুলবে না৷ স্কুল ছুটির পর দেখা গেল ক্লাসরুমে অনেকেই বসে আছে। সবাই সৃজাকে কেন্দ্র করে বসে বা দাঁড়িয়ে আছে৷ ইমাদ দৌঁড়ে এসে সব লাইট-ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে গম্ভীরমুখে বলে, ” তোমরা ছুটির পরও ক্লাসরুমে কী করছো?

সৃজা বলে উঠে, ” এই ক্যাপ্টেন তুমি ফ্যান কেন বন্ধ করে দিলা? তুমি একটা পঁচা ক্যাপ্টেন।”

ইমাদ মুখ কালো করে বলে, ” তোমরা আমাকে ছাড়া কেন গল্প করছো?”

সৃজার সবচেয়ে ভালো ফ্রেন্ড বলল, ” বাইশ তারিখ সৃজার জন্মদিন। আমরা বার্থডে পার্টি নিয়ে কথা বলছি।”

সৃজা ইমাদকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” তোমাকে ইনভাইটেশন দিলাম ইমাদ৷ আমার বার্থডে পার্টিতে আসবে কিন্তু। আমার আম্মু তোমার আম্মুকে আজকে কল দিবে।”

ইমাদ মনে মনে দারুণ খুশি হলো জন্মদিনের দাওয়াত পেয়ে। কিন্তু সে গম্ভীরমুখে বলে, ” না, আমি যাব না তোমার জন্মদিনে।”

তাদের আরেক ক্লাসমেট নাম আয়ান, সে বলে উঠে, ” কেন রে ইমাদ? তুই আসবি না কেন?”

সে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে, ” ইনভাইটেশন দেওয়ার স্টাইল ভালো লাগেনি।”

আয়ান হচ্ছে তাদের ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু প্লাস পঁচা কথা বলা ছেলে। সে হেসে কুটি কুটি হয়ে বলে,” সৃজা কী তোর বউ ইমাদ? আমাদের থেকে আলাদাভাবে তোকে দাওয়াত দিবে কেন? ”

সবাই আয়ানের কথায় হোহো করে হেসে উঠে। কেবল ইমাদ হাসল না। সে গম্ভীরমুখে নিজের বাম হাতের ব্যাচ ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। স্কুল মাঠে চাচ্চুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে খুশিতে লাফ মারে৷ তাকে স্কুল থেকে রিসিভ করতে চাচ্চু এসেছে!

সাদ ইমাদকে দেখে এগিয়ে এসে বলে, ” এই যে সুপারম্যানের ছানা-পোনা, স্কুলে সব পড়া পেরেছো তো?”

ইমাদ মাথা নেড়ে বলে, ” একটা অংক পারিনি চাচ্চু।”

সাদ তাকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে গাড়িতে উঠল। সে মূলত সুপ্তি বেগমকে ইমপ্রেস করার ট্রাই করছে৷ মা-বাবা বাংলাদেশে আসছে। এছাড়া সেদিন ভাইয়া ভরসা দিয়ে বলেছে ইরা রাজী থাকলে সে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। আজকে বাজার করে এনে সে একটু হলেও সুপ্তি বেগমের এটেনশন সিক করেছে৷ উনি বলছিলন,” তোমার মতো এতো ভালো ছেলে আজ-কাল পাওয়াই যায় না।”

বিকেলের দিকে মিরা হোটেল রুমে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ তার দরজায় যেন ডাকাত পড়ল। সে হুড়মুড় করে উঠে ধাতস্থ হলো আগে। এরপর গেইট খুলে দিতেই ন্যান্সি ম্যাডামকে খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে মোবাইল চালাতে দেখা গেল। তিনি মিরাকে দেখে বলে, ” মিরা বিশাল বড় সমস্যা হয়েছে।”

–” কী হয়েছে ম্যাম?”

–” বিকেলের ব্রাইডাল শুটের মডেল লাস্ট মুহূর্তে কাজ করার প্লান ক্যান্সেল করেছে৷ ওর নাকী পারিবারিক সমস্যা। সেট রেডি, ক্যামেরাম্যান দেলোয়ার ভাই বসে বসে বিস্কুট খাচ্ছে৷ অথচ মডেল আপা গায়েব৷ আজকে কাজ শেষ না করলে ঝামেলা হবে৷ ওপেনিংয়ে এইসব ফটোশুট মূল আকর্ষণ।”

–” ভারী বিপদ হলো দেখছি। দেখুন কোনো সমাধান পান কীনা।”

–” সমাধানের জন্যই তোমার দুয়ারে এসেছি। প্লিজ হেল্প মি।”

মিরার চোখ কপালে উঠে গেল৷ ন্যান্সি ম্যাডাম চাচ্ছে সে যেন ব্রাইডাল ফটোশুট করে৷ মিরা বহুবার না করল বাট ন্যান্সি ম্যাডাম নাছোড়বান্দা। সে মিরাকে চেপে বসে। অনুরোধ করতে করতে মুখে ফেনা তুললো৷

অতঃপর দ্বিতীয়বারের মতো নিজের ডিজাইন করা লেহেঙ্গা পরে সে বধূ সাজে। নিজের দিকে তাকিয়ে সে খানিকটা চমকে যায়। ছয় বছর আগে, কোন এক সন্ধ্যারাতে সে এভাবেই বউ সেজেছিল। ওইদিনের মতো অনুভূতি হচ্ছে। ইমান তাকে এই বেশে দেখলে কেমন রিয়্যাক্ট দিবে? পাগলটা নিশ্চয়ই উল্টা-পাল্টা কিছু ভেবে বসবে৷

লাল লেহেঙ্গা পরে সে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দাঁড়ালো। বরাবরের মতো ফটোশুটের টাইমে ইমান নেই৷ ভাগ্যিস নেই। এই বধূরুপে ওর সামনে দাঁড়ালে লজ্জায় কথা বলতে পারবে না।

ফটোগ্রাফার খটখট শব্দ তুলে ছবি তুলে যাচ্ছেন। এংগেল অনুযায়ী দাঁড়ানোর স্টাইল ঠিক করার জন্য আরেকজন স্টাফ আছে৷

সূর্য শেষবেলায় বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুত। সেটের সবার জন্য চা পরিবেশন করা হলো৷ ন্যান্সি ম্যাডাম চা হাতে নিয়ে বলে, ” দুধ ছাড়া চা আর বর ছাড়া বউ– দুইটা কেমন পানসে।”

মিরা অবাক চোখে বললো, ” মানে?”

ন্যান্সি ম্যাডাম হেসে বলে, ” অপেক্ষা কর নিজেই সব বুঝে যাবে ডিয়ার।”

একটু পর ইমানকে আসতে দেখা গেল। সে এই কোম্পানির সিইও। যখন খুশি আসতে পারে কিন্তু ওর বেশভূষা দেখে মিরার মাথা ঘুরাচ্ছে।পরে যেতে গিয়েও সামলে নেয় নিজেকে। এ্যাশ রঙের তার-ই ডিজাইন করা শেরওয়ানী পরে সে বর সেজেছে। পাগড়ীও মাথায় আছে৷

ন্যান্সি ম্যাডাম হেসে বলে, ” ব্রাইডাল ফটোশুট আর জামাই নাই বিষয়টা আমার ভালো লাগে না। কাপল পিকচার দিয়েই ব্রাইডাল শুটের শোভা বাড়ে। এইজন্য হুট করে সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করে কাপল শুট করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এজ ইউজাল মেইল কোন মডেল ছিল না। এইজন্য আমাদের সিইও সাহেব নিজে থেকে শুটটা কভার করতে চেয়েছেন। ”

ইমান মিরাকে নিয়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

ফটোগ্রাফার বলে, ” ভাইয়া আরেকটু ক্লোজ হন৷ আপু ভাইয়ার ঘাড়ে হাত রেখে চোখে চোখ রাখুন। দারুণ আসছে ছবি গুলো।”

ইমান তার মুখ মিরার মুখের কাছে আনে। মিরা ভীষণ লজ্জা পায়৷ এবং পিছিয়ে আসে। ইমান সবার সামনেই তাকে টান মেরে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে বললো, ” আশ্চর্য, নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি তুলতেও এতো লজ্জা কিসের? ”

সেটের সবাই হাসাহাসি করল। ইমান তাদের সামনেই তার কোমড় চেপে ধরে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল৷

সূর্য ডুবে যাচ্ছে এমন এক মুহূর্তে ইমান মিরার কপালে নিজের অ’ধ’রজোড়ার মাধ্যমে আদুরে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। মৃদ্যু বাতাসে লেহেঙ্গার ওড়না দুলছে৷ দুলহানের চোখে-মুখে লজ্জার আভা। সমুদ্রের স্রোত আসছে। চমৎকার কিছু ক্লিক করল ফটোগ্রাফার।

সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে ফটোগ্রাফি এবং তাদের ফ্যাশন হাউসের পেজ থেকে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়৷ ক্যাপশন ছিলোঃ” মিষ্টার এন্ড মিসেস খান।”

ছবিটা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়৷ লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের যেন বন্যা হতে লাগলো। আবেগী সোশাল মিডিয়া ইউজার তাদের দম্পতি জীবনের সুখ চেয়ে প্রার্থনা করলো। মানুষ-জন শেয়ার দিয়ে হেডলাইন দিচ্ছে, ” ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত।” কেউ ফান করে লিখছে, ” আমার বিয়েতে এমম রোমান্টিক পিকচার না আসলে আবার বিয়ে করব৷”

ভাইরাল হওয়া ছবি দেখেই ইমাদ মাকে কল করে জানালো, সে খুব রাগ করেছে। মা-বাবার প্রথম বিয়েতেও সে ছিল না। এবারও তাকে ছাড়াই মা-বাবা বিয়ে করে ফেললো। কাজটা তারা ঠিক করেনি। প্রথমবারও তারা ইমাদকে দাওয়াত দেয়নি। সেকেন্ড টাইমও দেয়নি। তাদের কাছে ইমাদের কোন গুরুত্ব-ই নেই। এরচেয়ে সৃজাই ভালো। এটলিস্ট দাওয়াত তো দেয়।”

চলবে৷