বুকের ভিতর রাখবো তোকে পর্বঃ১১

0
1993

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part: 11
#Writer: Doraemon(Ayesha)

পাখির কথায় অরণ্য রেগে আগুন। –তাই বুঝি পাখি আমাকে বিয়ে করবে না তুমি! চলো নিচে চলো বউ। বিয়ে তো তোমায় আমাকেই করতে হবে।
পাখি চিতকার করে অরণ্যকে বলল
–না, আমি আপনাকে বিয়ে করব না। আমাকে আপনি যেতে দিন প্লিজ স্যার।
–তোমাকে যদি যেতে দেই তাহলে আমি কি করে বাঁচব বউ। তোমাকে ছাড়া তো আমি একমুহূর্তের কথা চিন্তাও করতে পারি না৷
অরণ্য পাখিকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে এলো। সেখানে কাজী সাহেব সোফায় ইতিমধ্যে বসে আছেন।
পাখি কেঁদে কেঁদে অরণ্যের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আন্টি স্যারকে বলুন না আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি উনাকে বিয়ে করব না।
অরণ্যের মা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মারে আমার ছেলে যে আমার কথা শুনবে না। আমি ওকে ইদানীং খুব হাসি খুশিতে দেখতাম, যে ছেলে আমার সহজে হাসে না। আগে কারণটা বুঝতাম না, কিন্তুু এখন বুঝলাম। তোকে না পেলে আমার ছেলেটা যে বাঁচবে না মা। আমি কি করে আমার ছেলের ক্ষতি করি বল তুই! মা তুই খোকাকে বিয়ে কর। আমার ছেলে তোকে খুব সুখে রাখবে।
পাখি বেশ বুঝতে পারছে আর কোনো কিছু করার নেই। পাখি যে পালাবে তারও কোনো উপায় নেই কারণ অরণ্য পাখির হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
অরণ্য পাখিকে জোর করে সোফায় বসিয়ে নিজেও পাখির সাথে সোফায় বসল। অরণ্য কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল
–কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
কাজী সব নিয়ম পালন করে অরণ্যকে বলতে বলল কবুল বলতে। অরণ্য সাথে সাথে কবুল বলে দিল। এবার পাখির পালা। কাজী সাহেব পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এবার আপনি বলুন মা কবুল।
পাখি কাজী সাহেবকে কাঁদতে কাঁদতে রাগী গলায় বলল
–না আমি কবুল বলব না।
পাখির কথা শুনে এবার অরণ্য রেগে গেল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি কবুলটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলো নাহলে তোমাকে এর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
–আপনার যা ইচ্ছে তাই করেন। আমি কবুল বলব না।
অরণ্য দেয়াল থেকে চাবুক এনে পাখিকে বলল
–পাখি তাড়াতাড়ি কবুল বল।
–আমি বলব না। আপনি আমাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলুন তাও আমি কবুল বলব না। আমি আপনাকে বিয়ে করব না।
অরণ্য ভেবেছিল মারের ভয় দেখালে পাখি অরণ্যকে বিয়ে করতে রাজি হবে। কিন্তুু অরণ্যকে পাখি ভুল প্রমাণিত করল। এবার অরণ্য পাখিকে বলল
–পাখি তোমার মা, বাবা, বোন আজকে আমার দেওয়া ফ্ল্যাটে চলে গেছে। বলতে গেলে আজকে আমি ওদের বস্তি থেকে তাড়িয়েছি। আর আমার লোকেরা জোর করে তাদের আমার দেওয়া ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছে। এখন তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি আমার ফ্ল্যাট বোম মেরে উড়িয়ে দিব। তখন তোমার মা, বাবা, বোনের মৃত্যু তুমি সহ্য করতে পারবে তো পাখি?
পাখি আকাশ থেকে পড়ল৷ পাখির মনের মাঝে ঝড় বইতে লাগল। পাখি অরণ্যকে বলল
–স্যার আপনি এত নিচ! আমার মা, বাবা, বোনকে আপনি বস্তি থেকে তাড়িয়ে এখন আপনার ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে চাইছেন শুধু মাত্র আমাকে পাওয়ার জন্য?
–তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি পাখি। Now choice is your. তুমি এখন সিদ্ধান্ত নেও আমাকে বিয়ে করবে নাকি পরিবারের মৃত্যু দেখবে?
পাখি কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমার মা, বাবা, বোনকে প্রাণে মারবেন না প্লিজ।
–হ্যা মারব না আগে কবুল বলো।
পাখি এবার বাধ্য হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–কবুল… ক ক কবুল…. কবুল।
পাখি কাঁদছে। পাখির কান্না দেখে অরণ্যেরও খুব কস্ট লাগল। অরণ্য জানত পাখিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলে পাখি অরণ্যকে বিয়ে করতে বাধ্য হবে। যদিও অরণ্য পাখির পরিবারকে প্রাণে মারত না। শুধু মাত্র পাখিকে ভয় দেখিয়েছে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য। অরণ্য পাখিকে বলল
–আমি জানতাম পাখি তোমাকে ভয় দেখালেই তুমি আমাকে বিয়ে করবে। তুমি আমাকে এখনো চিনো না পাখি। এই অরণ্য তোমার পরিবারের ক্ষতি করবে তা তুমি ভাবলে কি করে পাখি?
পাখি অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাখি ভাবতেও পারে নি অরণ্য তাকে বোকা বানাবে।
পাখিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে পার্লারের কিছু মেয়ে সাজাতে লাগল। কারণ আজ পাখির বাসর রাত। পাখি নিস্তব্ধ হয়ে আছে৷ একদম অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে পাখি।
রাত নয়টা বাজে। পাখি বাসরঘরে বিছানায় বসে আছে। বিছানাটা ফুল দিয়ে সাজানো। অরণ্যের বেডরোমটা বিশাল বড়। ঘরের চারিপাশটাও ফুল দিয়ে সাজানো। অরণ্য দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল। তারপর অরণ্য দরজাটা লাগিয়ে দিল। অরণ্য পাখির কাছে ধীরে ধীরে যেতে লাগল। একসময় পাখির ঘোমটা অরণ্য সরিয়ে দিল। অরণ্য দেখতে পেল পাখি কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। পাখির মন খারাপ দেখে অরণ্যের বুকে চিনচিন ব্যথা হতে লাগল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছো?
পাখি কোনো কথা বলছে না। অরণ্য আবারও পাখিকে বলল
— কি হলো পাখি কথা বলো?
পাখির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অরণ্য রেগে গিয়ে পাখির দুই বাহু ধরে পাখিকে ঝাকিয়ে চিতকার করে অরণ্য বলল
–কি হলো পাখি কথা বলছো না কেন?
পাখি অরণ্যের এমন ভয়ংকর চিতকার শুনে ভয়ে কেঁপে উঠল। পাখি কাঁদতে কাঁদতে অরণ্যকে বলল
–আমার শরীরটাকেই তো আপনি চেয়েছিলেন। এখন আপনি আমার শরীরটাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন৷ আমি আপনাকে আর বাঁধা দিব না।
অরণ্য পাখির এমন নোংরা কথা শুনে রেগে গিয়ে পাখিকে ঠাসসসস করে এক থাপ্পড় মেরে দিল। পাখি ছিটকে গিয়ে বিছানায় পড়ল। অরণ্য চিতকার করে দাঁতে দাঁত চেপে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর এত বড় সাহস আমার ভালোবাসাকে তুই শারিরীক চাহিদার কথা দিয়ে অপমান করিস! যদি আমার এতই তোর শরীরের প্রতি লোভ থাকত তাহলে বিয়ের আগেই তোর সাথে শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারতাম। আমি তোর শরীরটাকে নয় তোর মনটাকে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তোর একটু ভালোবাসা।
পাখি গালে হাত দিয়ে অরণ্যের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি আপনার এসব নাটকীয় কথা শুনতে চাই না। আমাকে আপনি মুক্তি দিন?
–মুক্তি তুই তখনি পাবি যখন আমি এই পৃথিবীতে থাকব না।
পাখির মুখে আর কোনো কথা নেই। অরণ্য সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। পাখি বিছানায় বসে কাঁদতে লাগল আর মনে মনে বলতে লাগল
–আমি কি তাহলে আপনাকে চিনতে ভুল করলাম স্যার? আমি যে নিজেও বুঝতে পারছি না আপনার মনে আসলে আছে টা কি!



#চলবে?