বুকের ভিতর রাখবো তোকে পর্ব১০

0
1803

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:10
#Writer: Doraemon(Ayesha)

অরণ্য ফোন করে ফোনের অপর পাশের লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–হ্যালো কাজী সাহেব আপনাকে আমি মেসেজে আমার বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে চলে আসুন। আর কি কারণে আপনি আসবেন তা নিশ্চই আপনাকে বলে দিতে হবে না। ঠিক আছে চলে আসুন।
বলেই অরণ্য ফোনটা কেটে দিল। পাখি অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আপনার বাসায় কাজী সাহেব কেন আসবে?
–কাজী আর কি করতে আসবে! বিয়ে পড়াতে আসবে।
পাখি আকাশ থেকে পড়ল। পাখি ভয়ে ভয়ে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
–কা কা কার বিয়ে স্যার?
অরণ্য মুচকি হেসে পাখিকে বলল
–কার আবার! তোমার আর আমার বিয়ে। একমাস তো পূর্ণ হলো। আমি চেয়েছিলাম এই একমাসের মধ্যে তুমি আমাকে মন থেকে মেনে নাও। কিন্তুু তুমি তো আমাকে মেনে নিলে না। শুধু শুধুই একমাস অপেক্ষা করলাম। এবার তো তোমার আর আমার বিয়ের পালা পাখি।
পাখির এবার মনে পড়ল অরণ্যের আগের বলা কথাগুলো! অরণ্য বলেছিল একমাস পর পাখিকে অরণ্য বিয়ে করবে। আর আজকেই সেই একমাস হওয়ার শেষ দিন। পাখি চিতকার করে অরণ্যকে বলল
–না, এটা হতে পারে না। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।আপনি ঠকবাজ। আমি আপনাকে বিয়ে করব না। আমার আপুও আপনার মতো একজন বড়লোক ঘরের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল কিন্তুু আপুর কপালে দুঃখ কস্ট ছাড়া কিছুই জোটে নি। আপুর স্বামী আপুকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আরেকটা বিয়ে করেছিল। এই কস্ট সহ্য করতে না পেরে আমার তমা আপু সুইসাইড করেছিল৷ আমি চাই না আমার পরিণতি আপুর মতো হোক। আমি বাঁচতে চাই স্যার। আমাকে আপনি ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি আপুর মতো কস্ট সহ্য করতে পারব না।
পাখি কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিল৷ অরণ্য এখন বুঝতে পারল পাখি কেন ছেলেদের এত ভয় পায়, বিশেষ করে বড়লোকদের কেন এত ভয় পায় পাখি। অরণ্য পাখির কাছে আসতে থাকল এটা দেখে পাখি অরণ্যকে ভয়ে ভয়ে বলল
–না স্যার আমার কাছে আপনি আসবেন না। আমার থেকে দূরে যান৷ অরণ্য পাখির কোনো কথা শুনছে না।
পাখি রেগে গিয়ে অরণ্যকে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে যেতে নিল কিন্তুু পারল না। তার আগেই অরণ্য পাখিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে পাখিকে শক্ত করে চেপে ধরে পাখির ঠোঁটের সাথে অরণ্য নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
পাখি ভাবতেও পারেনি অরণ্য আবার পাখির সাথে এমনটা করবে। পাখি অরণ্যের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তুু অরণ্যের কাছ থেকে পাখি ছুটতে পারল না।
বেশ অনেক্ষণ হয়ে গেছে কিন্তুু এখনও অরণ্য পাখির ঠোঁট ছাড়ে নি৷ একসময় দরজায় ধাক্কার শব্দে অরণ্যের হুঁশ ফিরল৷ অরণ্য পাখির ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিল। পাখি ঘন ঘন নিস্বাস নিচ্ছে। আর ঐদিকে অরণ্য দরজা খুলে দেখল অরণ্যের মা সামনে দাড়িয়ে আছে। অরণ্যের মা অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–খোকা কে এই মেয়ে? তুই ওকে এইভাবে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিস কেন?
–মা ওর নাম পাখি৷ তোমার বৌমা। আমি পাখিকে খুব ভালেবাসি মা।আজকেই আমি ওকে বিয়ে করব।
অরণ্যের মা অরণ্যের কথা শুনে অবাক। অরণ্যের মা অরণ্যকে বলল
— এটা কি করে হয় খোকা? তুই কাউকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করবি! তোর বাবা এসব শুনলে কি বলবে!
–মা তুমি কোনো চিন্তা করো নাতো। বাবাকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার। আর পরে নাহয় দুমদাম করে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করো। আমি এখন কোনো রিস্ক নিতে চাই না মা। পাখিকে আমি আমার জীবন থেকে কিছুতেই হারাতে দিব না।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তোর পছন্দই আমার পছন্দ খোকা। আর মেয়েটা দেখতে ভারি মিস্টি।
এমন সময় পাখি দৌড়ে গিয়ে অরণ্যের মায়ের সামনে এসে অরণ্যের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আন্টি আমি এই বিয়েটা করব না৷ যে করেই হোক আপনি এই বিয়েটা আটকান আন্টি প্লিজ।
পাখির কথা শুনে অরণ্যের মা অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
–কিরে খোকা ওতো বিয়েতে রাজি না! তুই ওকে জোর করে কেন বিয়ে করতে চাস?তুই এটা করতে পারিস না। এটা অন্যায় খোকা।
অরণ্য গম্ভীর গলায় অরণ্যের মাকে বলল
–মা তুমি কি চাও তোমার ছেলে বেঁচে থাকুক না মরে যাক?
–খোকা তুই এসব কি বলছিস?
–তোমার ছেলে এই মেয়েটাকে ছাড়া বাঁচবে না। এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও মা তুমি কি করবে।
অরণ্যের কথা শুনে অরণ্যের মা ভয়ে ভয়ে বলল
–না খোকা। তুই যা চাস তাই হবে। এই মেয়েই তোর বউ হবে।
পাখি স্তব্ধ হয়ে আছে৷ এখন পাখি জানে আর কিছুই করার নেই।
অরণ্যের মা চলে গেল। অরণ্যের মা চলে যাওয়ার পর অরণ্য দরজাটা আবারও লাগিয়ে দেয়। পাখি ভয়ে ঢক গিলতে থাকে। দরজাটা লাগিয়ে অরণ্য পাখির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে পাখিকে উদ্দেশ্য করে অরণ্য বলল
–কি ভেবেছিস তুই? মাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে আটকাতে রাজি করিয়ে ফেলবি। এ বাড়িতে সবাই অরণ্য চৌধুরীর কথা অনুযায়ী চলে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না৷ আর আমার কাছ থেকে দূরে থাকার চিন্তা তুই বাদ দিয়ে দে পাখি। কারণ অরণ্যের বুক থেকে পাখিকে আলাদা করা সম্ভব তো নয়ই বরং অসম্ভব। এই #বুকের ভিতর রাখবো তোকে। আমিও দেখবো আমার কাছ থেকে তুই কিভাবে মুক্তি পাস পাখি।
পাখি ভয়ে কাঁপছে। অরণ্যের ভয়ংকর রূপ দেখলেই পাখির বুকটা ভয়ে কাঁপাকাঁপি করে বেরিয়ে যায়৷ পাখি এই সময়ে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তাও পাখি চিতকার করে অরণ্যকে বলল
–আমি আপনাকে বিয়ে করব না, করব না, করব না।



#চলবে?