বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-০৬

0
655

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৬
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

আজ বেলীর ফ্রেন্ড সাজিয়ার বার্থডে। সেখানেই যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে বেলী। থ্রী পিস পড়ার ইচ্ছা থাকলেও সাজিয়া বার বার করে বলে দিয়েছে যেনো শাড়ি পরে।অবশ্য চার বান্ধবী এক রকম শাড়ি পড়বে বলে ডিসাইড করেছে।তাইতো বেলী সেজে গুজে শাড়ি পরতে শুরু করলো। তখনই ঘরে প্রবেশ করলো সুবাস। সাধারণত সন্ধ্যা বেলা সুবাস আসে না।তবে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে।সুবাস বেলীকে দেখে থমকে গেলো।মেয়েটাকে আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে। হালকা সাজেছে তবুও আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।লেভেন্ডার কালার শাড়ি।সাদা রঙের ফুল কভার ব্লাউজ।হাতে সাদা রঙের চুরি।চুল গুলো একপাশ করে সেট করেছে। সুবাসকে দেখে বেলী ঘাবড়ে গেলো।হাত থেকে শাড়ির কুচি গুলো পড়ে গেলো।সুবাস এক পা এক পা করে বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো বেলীর কুচি গুলো ঠিক করে সেট করে দিলো।নিজ হাতে শাড়ির কুচি গুলো গুজতে গেলে বেলী বাধা দেয়।কুচি গুলো নিজের হাতে নিয়ে গুজে ফেলে।সুবাসের চোখ আটকে রয়েছে বেলীর ফর্সা পেটের দিকে।কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। বেলীর কোমর জড়িয়ে আর একটু কাছে নিয়ে এলো সুবাস।নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুজনার উপর দুজনার নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে।বেলী দু হাতে নিজের শাড়ি খামচে ধরলো।সুবাস বেলীর কানের কাছে ঠোঁট এগিয়ে বললো
-আজ যদি তোমার ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট গুজে দেই তাহলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে?
……
-তোমাকে ছোঁয়ার জন্য এই ব্যাকুল হৃদয়ের চাওয়া কি খুব বেশি অবিচারপূর্ণ ?
………
-তোমার ঠোঁটের স্পর্শে নিজেকে মাতাল করতে চাওয়া কি খুব বেশি বেহায়াপনা?
……..

নাহ বেলী আর নিতে পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কত গুলো বছর পানি খাওয়া হয় না। মস্তিষ্ক শূন্য মনে হচ্ছে।হাত পা অবশ হয়ে আসছে।সুবাস বেলীর ঠোটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে আসলো।দুজনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই ঠিক সেই মুহূর্তে কানে ভেসে এলো ……

-বেলী তুই কি রেডি হোস নি? আর কতক্ষণ লাগবে তোর ? এতো সময় নিলে কিভাবে হবে আমি সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।

সামিয়ার ডাক শুনে দুজনেই ছিটকে দূরে চল এলো।সুবাসের ঘোর কাটল।দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো সুবাস ।এ কি করছিল সে।নাহ এভাবে নিজের ইচ্ছে গুলোকে আস্কারা দেয়া যাবে না। নিজেকে সংযত রাখতে হবে।পরক্ষণে মনে হলো এটা তো আর হারাম চাওযা নয় বেলী তার স্ত্রী।তার নামে লিখিত হয়েছে। তার নামের কাবিন নামায় আজীবনের জন্য নিজেকে আবদ্ধ করেছে।সব কিছুর ঊর্ধ্বে বেলী তার বউ।তার মন পিঞ্জিরায় আবদ্ধ পাখি। শুধু একমাত্র তার বউ।তার নিজস্ব সম্পদ।

-এতক্ষণ সময় লাগে তোর ?
মুখটা খানিক কুচকে বললো সামিয়া
-এইতো আমি রেডি রাগ করিস না,প্লীজ! আর রাগ করলে তোকে ডাইনীর মত লাগে।পড়ে পার্টিতে সবাই তোকে ডাইনি বলবে।
বলেই হাসতে লাগলো বেলী।

-তুইও আমার সাথে এমন করিস।আমি যাব না ।
-আরে রাগ করিস কেনো ?আমি তোর সাথে মজা করছিলাম।আচ্ছা সরি।চল এবার।

বসার ঘর থেকে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়াতেই করো কণ্ঠ শুনে পিছে তাকালো বেলী ।

-আমি তোমাদের পৌঁছে দিবো।একা যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তোমরা যেদিক যাচ্ছ আমিও সেই দিক যাচ্ছি।

পেছন ফিরে তাকালো বেলী। সিঁড়ি দিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নামছে সুবাস।লোকটাকে আজ একটু অন্য রকম লাগছে।কালো প্যান্ট ,কালো শার্ট, চুল গুলো সেট করা,শ্যামলা মুখ খানায় চাপ দাড়ি বেশ মানিয়েছে। হাতে ব্র্যান্ডের সিলভার কালার ওয়াচ। সব মিলিয়ে লোকটাকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে। পরক্ষনেই এসব ভাবার জন্য নিজেকে একশো একটা কথা শুনালো বেলী।

সাজিয়ার বড় ভাই ইয়াসির আফতাব।সুবাসের কলেজে ফ্রেন্ড।বলা চলে বেস্ট ফ্রেন্ড।সেই সাথে আবার কলিগ। তাইতো আজ সাজিয়ার বার্থডে তে সেও যাবে।

-কখন থেকে তোদের জন্য ওয়েট করছি (মিরা)
-তোরা না আসলেই পারতি।এত লেট করে আসার কি দরকার ?
রাগী গলায় বলল সাজিয়া।
-সব দোষ এই বেলীর রেডী হতে এত সময় নিসে কি আর বলবো (সামিয়া)
-আচ্ছা বাবা সরি। মুড ঠিক কর।তোর আজ জন্মদিন।(বেলী)

ইয়াসিরের রূমে প্রবেশ করলো সামিয়া।নাহ বলতে হবে লোকটা বেশ গুছানো টাইপের। ছেলে মানুষের রূমে এত সুন্দর করে গুছানো ভাবাযায়!।যেখানে সে মেয়ে হয়েও অতটা গুছানো না।

-অন্যের ঘরে পারমিশন না নিয়ে প্রবেশ করতে হয়? মিস সামিয়া।
আয়নার সামনে টাই বাঁধতে বাঁধতে বললো ইয়াসির।

খানিকটা ঘাবড়ে গেল সামিয়া।সে তো মনে করেছে লোকটা রূমে নেই।এখন কিভাবে মুখ দেখাবে?

-কোথায় হারিয়ে গেলেন মিস সামিয়া ?
কথাটা বলেই সামনে দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ইয়াসির।সামিয়াকে হেঁচকা টানে নিজের সামনে এনে দরজা টা বন্ধ করে দরজার সাথে চেপে ধরলো

-আপনাকে কত বার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকবেন।আপনি আমার আসল রূপ দেখলে নিতে পারবেন?
বলেই সামিয়ার মুখের উপর ফু দিলো ইয়াসির।
সামিয়া চোখ বন্ধ করে নিলো।

-যতবার আগুনের সামনে আসবেন ততবার কিন্তু ঝলসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।এমনটা নয় যে আগুন বার বার আপনাকে কাছে পেয়েও ছেড়ে দিবে।
-আমি তো বারবার আগুনের সামনে আসি নিজেকে ঝলসে দিতে।আমিও চাই আগুনের তাপ নিজের গায়ে মেখে নিতে।
এবার সাহস করে বলেই ফেললো সামিয়া।কি হলো আজ? অন্য সময় তো মুখ দিয়ে কথায় বের হয় না। আজ কি হলো তাহলে ?

-আপনাকে লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ন করছি আমার থেকে ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবেন।
বলেই রূমে থেকে বের হয়ে গেলো ইয়াসির।

কেক কাটার পর্ব শেষ হলো। সকলে মিলে ভালোই মজা করেছে আজ।সুন্দর সন্ধ্যার শেষ হয়ে রাতের খাবারের পর্ব শেষ হলো। একে একে সবাই বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসার দিকে রওনা হলো।

আজ সকলে শাড়ি পড়েছে।আজ বেলীদের বিদায় অনুষ্ঠান । সবার মন ভালো থাকলেও সামিয়ার মন একটুও ভালো নেই।

– কি হয়েছে তোর সামিয়া? বেলী তুই জানিস কিছু ওর কি হলো? (মিরা)
-আরে আমি জানবো কি করে? নানুর শরীর ভালো না থাকায় নানুকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ছিলাম রাতে। সেখান থেকেই কলেজে এসেছি। (বেলী)
-বল তোর কি হয়েছে এমন মন মরা হয়ে আছিস কেনো ?( সিনথিয়া)

চলবে।