বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-০৭

0
318

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৭
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

-আজ কলেজে আসার সময় ইয়াসির ভাই কে দেখেছি।
অবশেষে মুখ খুলল সামিয়া

-তো কি হয়েছে? খুলে বল সব (সিনথিয়া)

আরে দেখলাম ইয়াসির ভাইয়া ফুলের দোকান থেকে অনেক বড় একটা গোলাপ ফুলের ফ্লাওয়ার বুকে কিনল।আমি সামনে যে বললাম ….
-ইয়াসির ভাই ফ্লাওয়ার বুকে কার জন্য?
উনি মুচকি হেসে বললেন
-এই ফুল আমার গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য।
-ওহ।
– হুম।
-ইয়াসির ভাই আপনার হৃদয়ের রাণী কি আমাকে বানানো যায় না ? এই ফুলের মালিকানা কি আমায় দেয়া যায় না ?
দু চোখে জল নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো সামিয়া।

-ভুলে যেও না ফুলের সাথে কিন্তু কাটাও আছে।ফুলকে গ্রহণ করতে হলে ফুলের কাটার অজস্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।পারবে কি সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে ?

-আপনি পাশে থাকলে শুধু ফুলের কাটার অজস্র যন্ত্রণা নয় বিষ পান করে মৃত্যর যন্ত্রণাও সহ্য করতে পারবো।

-এসব আবেগময়ী কথা বন্ধ করো।নিজের কাজে মন দাও।আমার থেকে দশ হাত দূরে থাকবে।আম আই ক্লিয়ার
বলেই চলে গেলো ইয়াসির।

কথা গুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো সামিয়ার।প্রিয় মানুষের মুখে যেখানে অন্য করো নাম শুনলেই রাগ লাগে সেখান গার্ল ফ্রেন্ড শোনা দূরের কথা।এই মানুষটাকে অন্য কারো সাথে ভাবতে পারে না সামিয়া।সময়ের আড়ালে কখন কিভাবে যে এই লোকের মাঝে আটকে গেছে সামিয়া তা সে নিজেও যানে না।এমন কি জানতেও চায় না।লোকটার মুখে গার্ল ফ্রেন্ডের কথা শুনে মনে হচ্ছে দিন দুনিয়া সব কিছু থমকে গেছে।কোনো কিছু ভালো লাগছে না।কেনো লোকটা তার ভালোবাসা বুঝতে চায় না।কেনো তার ভালোবাসা কে আবেগ মনে করে ?

-আহা কান্না করা বন্ধ কর তুই।হয়তো ভাইয়া তোর সাথে মজা করেছে।তুই এমন কান্না করলে আমরা মজা করবো কীভাবে? তুই টেনশন ফ্রি থাক।তোকেই আমি আমার ভাবি বানাবো।হুহ (সাজিয়া)

-আরে আমাদের ছিচ কাদুনি তোকে যদি ইয়াসির ভাইয়ের বাচ্চার মা না বানাইসি আমার নাম ও বেলী না।হুহ
খানিকটা ভাব নিয়ে বললো বেলী

টা দেখে হেসে দিল সামিয়া।আর যাই হোক এই মানুষ গুলোর দিনটা নষ্ট করতে চায় না সামিয়া।নিজের জন্য তাদের খুশি নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।তাই তো নিজের চোখের জল মুছে নিলো সামিয়া। চার বান্ধবী মিলে পুরো কলেজে ঘুরলো,ছবি তুললো,বেশ খানিক ক্ষণ ঘুরোঘুরি করে দুপুরে লাঞ্চ করে বাসায় ফিরলো বিকেল দিকে।

সময় চলতে থাকে করো জন্য অপেক্ষা করে না। এইতো আজ দু দিন হলো বেলীর এক্সাম শেষ। ঘরে বসে থাকতেও ভালো লাগছে না।তার উপর আবার সুবাস বলে দিয়েছে ভার্সিটি এডমিশন কোচিং ভর্তি করে দিবে।এটি কষ্ট কি সহ্য হয় কোথায় একটু ঘুরবে , চিল করবে তা না করে এই লোক এখনই এডমিশন কোচিং ভর্তির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

দুপুর থেকে বেলীর ফোনে কল করে যাচ্ছে সুবাস কিন্তু কই এই মেয়ে ?ফোন ধরার কোনো খবর নাই।অনেক বার ফোন দেয়ার পর অবশেষে কল রিসিভ করলো বেলী।

– কি করছো? দুপুরে খেয়েছো ?
– নাহ এখনো খাই নি।আপনি খেয়েছেন ?
-নাহ খাবো।আজ বাসায় তাড়াতাড়ি আসবা।কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হবে।রেডি হয়ে থেকো ঘুরতে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
খানিক ক্ষন চুপ থেকে সুবাস মিহি সুরে বললো
-বেলী…….

ইস্ এই কণ্ঠ বেলীর মনে ঝংকার তোলার জন্য যথেষ্ট।বেলী কিছু না বলে কল টা কেটে দিলো।কল টা কেটে দেয়ার পর শুনতে পেলো সামিয়া কন্ঠ
-এই তোর জন্য দেখতো পার্সেল এসেছে।সাথে আবার ফ্লাওয়ার বুকে।
-কে দিলো ?

ফ্লাওয়ার বুকে সাথে ছোট্ট একটি চিরকুট লাগানো।চিরকুট টা খুলে দেখলো লিখা

ফ্রোম ইওর হাজব্যান্ড
পরক্ষনেই মুখে লাল আভা ফুটে উঠলো বেলীর।

-আহা আজ কাল দেখি সুবাস ভাই ফুল ও পাঠাচ্ছে। আর কি কি করছে রে সুবাস ভাই তোর সাথে বেলী।
বেলীকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল সামিয়া

-চুপ কর তুই। আর তোর এখানে কাজ কি? নিজের চরকায় তেল দে।

-হুম হুম এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবে না।ভালো লাগার মানুষতো এখন অন্য কেউ।

বলেই চলে গেলো সামিয়া। ভাবলো,যাক দুজন দুজনকে নিয়ে ভাবছে।সম্পর্কটা সুন্দর ভাবে এগোচ্ছে।ইস্ যদি তার আর ইয়াসিরের সম্পর্কটা এমন হতো।হয়তো হবে নয়তো না তবে এই সামিয়ার মন পিঞ্জিরায় সব সময় ইয়াসির থাকবে।আজীবন ভালোবেসে যাবে।সব ভালোবাসার কি আর পূর্ণতা পায়। হয়তো তার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না। সবার ভাগ্য তো আর এক না যে সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।হয়তো এক আকাশ সমান চাওয়া নিয়ে ইয়াসিরের ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।তবুও সে অপেক্ষা করতে রাজি নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নিতে।

চলবে……?