ভালোবাসব যে তোকে? পার্ট ১৮

0
4770

#ভালোবাসব_যে_তোকে?
পার্ট ১৮
লেখিকাঃসারা মেহেক

??

এই ঘটনার পর থেকে মৌ অনেক চুপচাপ হয়ে যায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া সে রুম থেকে বের হয় না। কারন এই জায়গাটাই তার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়।
আয়ান, আম্মু,দাদি সবসময় চেষ্টায় থাকে যে তাদের কোনো কাজের মাধ্যমে যাতে সেদিনকার ঘটনাটা মৌ এর মনে না পরে।আয়ান মৌ কে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই তারা কোথাও না কোথাও যেতো।একদিন রেস্টুরেন্ট এ যেতো, তো একদিন পাশের পার্কে ঘুরতে যেতো।

আয়ান এসব করতো যাতে করে মৌ একটু হাসিখুশি থাকে।সে চাইতো মৌ আগের মতো দুষ্টুমি করুক।হাসিখুশি থাকুক।কিন্তু মৌ এর আগের মতো কিছুই হলো না। প্রথম প্রথম ঘুমের মধ্যেও খারাপ স্বপ্ন দেখতো সে। অবশ্য কিছুদিন পরেই তা ঠিক হয়ে যায়।

অহনা এসব শুনে মৌ এর কাছে ছিলো ৪দিনের মতো। সারাটাদিন তারা গল্প করতো। অহনার জন্য মৌ কিছুটা ঠিক হয়ে যায়।৪দিন পরেই অহনা নিজের বাসায় চলে যায়।

এভাবে দেখতে দেখতে ১মাস কেটে যায়। মৌ এখন মানসিকভাবে সুস্থ হলেও বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে সে কিছুটা অসুস্থ। কয়েকদিন যাবত সে ভালোভাবে কিছু খেতে পারছে না। খাবার মুখের কাছে নিলেই গন্ধে বমি করে দেয়। আয়ান তো ভেবেছে মৌ মুখের রুচিই চলে গিয়েছে। সে অবশ্য ডক্টর এর কাছে নিয়ো যেতে চেয়েছে কিন্তু মৌ যায়নি।

আজকে সকাল থেকেই মৌ এর বেশ খারাপ লাগছে শরীর। কোনোমতে নাস্তা বানিয়েছে আজকে সে।আয়ানকে অফিসের জন্য বিদায় দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলো মৌ। আম্মু আর দাদি জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, এমনিই একটু দূর্বল লাগছে।
এদিকে আয়ান অফিসে এসে নিউজ পায় যে তার প্রমোশন হয়ে গিয়েছে।এ খবর শুনে সে অনেক খুশি হয়।নিজের কেবিনে এসে নিজেই বলছে নিজেকে,

“এতো বড় খুশির নিউজ মৌ কে বলবো না ফোনে। বাসয় গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।
এখন তাড়াতাড়িই আমি আমার বিজনেস শুরু করতে পারবো।….”
এরপর আয়ান নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।

মৌ দুপুরের দিকে ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠেই সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।

“১টা বাজে!!আমি এতোক্ষন ধরে ঘুমালাম!!কেউ কি ডাকেনি আমাকে!!”
এরপর মৌ উঠে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়ে দেখে আম্মু রান্না করছে আর দাদি ডাইনিং এ বসে কি একটা যেনো কাজ করছে। মৌ গিয়ে আম্মুকে বলে,

“আম্মু আমাকে ডাকোনি কেনো!!”

“ডাকবো কেনো শুনি।। শরীর খারাপ ছিলো তাই ডাকেনি।”

“কিসের শরীর খারাপ। ওসব কিছুই না।তুমি গিয়ে একটু বসো। বাকি যা কাজ আছে তা আমি করছি।”

“আরে বাকি আর কিছুই নেই। সব রান্না শেষ।”

“আচ্ছা তাহলে আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি।”

“ঠিক আছে দে।”

মৌ ঠিকঠাক মতোই কাজ করছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে ওর মাথাটা হালকা ঘুরে। সে পরে যেতো যদি না পাশের রান্নাঘরের দেয়াল ধরতো।এটা দেখে আম্মু এগিয়ে এসে ধরে ওকে।

“বললাম যে কাজ করার দরকার নেই। তাও তো আসলি কাজ করতে। দেখলি তো পরেই যেতি এখন।”

মৌ কিছুই বললো না। এর মধ্য দাদি চলে আসলো রান্নাঘরে। তিনি মৌ কে বললেন ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসতে।
মৌ সোফায় বসতে যাবে কিন্তু তার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো আর সোফার উপর গিয়ে পরলো।এ দেখে দাদি আর আম্মু তাড়াতাড়ি এগিয়ে মৌ এর কাছে আসলো।মৌ এর মুখে পানির ঝাপটা দিলো দাদি কিন্তু জ্ঞান ফিরলো না। তাই আর দেরি না করে আম্মু ডক্টর এর কাছে ফোন দিলো।

এদিকে আয়ান তো অফিস থেকে আসার সময় সবার পছন্দের খাবার নিলো,মৌ এর জন্য একটা সুন্দর শাড়ী নিলো।কিন্তু বাসায় এসে সে অবাক হলো ওদের ফ্যামিলি ডক্টর কে দেখে।
সে দেখলো ডক্টর আফজাল সোফায় বসে মৌ এর চেকাপ করছে আর পাশে আব্বু,আম্মু আর দাদি দাঁড়ীয়ে আছে। ডক্টর কে দেখে আয়ান সব ফেলে মৌ এর কাছে ছুটে গেলো।

আয়ানঃ আফজাল আংকেল মৌ এর কি হয়েছে??

আফজাল আংকেলঃহয়েছে তে অনেক কিছুই, হবেও অনেক কিছু।

আয়ানঃকি বলছেন আংকেল!!

আফজাল আংকেলঃদোস্ত তুই তো এবার আরো বুড়ো হয়ে যাবি।(আয়ানের আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললো)

আম্মুঃ ভাইজান একটু ভালোভাবে বলেন কি হয়েছে ওর।

আয়ানঃহুম আংকেল, প্লিজ তাড়াতাড়ি বলেন। খুব টেনশন হচ্ছে।

আফজাল আংকেলঃআরে কেউই বুঝছে না!!!!!
আরে ভাই তোমাদের ঘরে ছোটো মেহমান আসছে। মানে মৌ মা হবে।

এ কথা শুনে সবাই খুশিতে আত্মহারা।আয়ানের তো খুশিতে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।এর মধ্য মৌ এর জ্ঞান ফেরে।তার চোখ প্রথমেই আয়ানের উপর যায়।আয়ানকে কান্না করতে দেখে মৌ অবাক হয়ে যায়।

মৌ ঃআয়ান তুমি কান্না করছো কেনো??

আব্বু: মা রে তুই এতো বড় খুশির সংবাদ শুনালি আমাদের…..

দাদিঃ আমার যে কি খুশি লাগছে।।।।আমাকে বড় দাদি বলবে কেউ।খেলবে আমার সাথে…..
এই বলেই দাদি মৌ এর কপালে একটা চুমু দেয়।

আয়ান এসে বললো,

“উই আর গোনা বি প্যারেন্টস”

এ কথা শুনে মৌ খুব খুব খুশি হলো। সে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আশেপাশে যে মানুষ আছে সেটা তার খেয়ালই নেই।

আফজাল আংকেল শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,

“পরে আরো সময় পাবে মা।”

এ কথা শুনে মৌ লজ্জায় আয়ানকে ছেড়ে দেয়।আর সবাই মুচকি হাসতে থাকে।
হঠাৎ আয়ানের মনে আসলে সে তার প্রমোশন এর কথা বলেনি।তাই সে সবার উদ্দেশ্যে বললো,

“আজকে আমার প্রমোশন হয়েছে।এবার আমি আমার বিজনেসটা শুরু করতে পারবো।”

এ কথা শুনে সবার খুশির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।

আব্বু বললো,

“এই বাচ্চাটা আমাদের জন্য অনেক লাকি। কারন একদিকে এই বাচ্চাটার আসার সংবাদ শুনলাম।আবার একদিকে তোর প্রমোশনের সংবাদ শুনলাম।সত্যিই খুশি দ্বিগুন হয়ে গেলো”

এরপর আম্মু এসে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালো।

এভাবে কেটে যেতে লাগলো সময়।২সপ্তাহ পর পরই মৌ কে চেকাপের জন্য ডক্টর এর কাছে নিয়ে যেতো আয়ান।কখনো সে বিজি থাকলে অহনা নিয়ে যেতো। সব চেকাপ ফাহাদের হসপিটালেই করানো হচ্ছে।

প্রেগনেন্সির থার্ড মান্থে মৌ জানতে পারলো যে তার প্রেগনেন্সিতে বেশ কিছু কম্পলিকেশনস আছে। সেদিন সে একাই চেকাপ করাতে গিয়েছিলো। কারন আয়ানের মিটিং ছিলো আর অহনার শ্বশুর বাড়ীতে মেহমান এসেছিলো।
কম্পলিকেশনসের কথা শুনে মৌ খুব ভয় পেয়ে যায়।ডক্টর এর সাথে কথা বলে অবশ্য কিছুটা টেনশন ফ্রি হয়েছিলো। কারন ডক্টর বলেছিলো যে মৌ যদি সবকিছু মেনে চলে, নিজের পুরোপুরি খেয়াল রাখে তাহলে আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মৌ বাসার কাউকে তার এই প্রবলেম এর কথা বললো না। কারন সবাই অনেক টেনশন করবে।সে সম্পূর্ণ নিজের খেয়াল রাখছে। ভালোমতো খাবার খাচ্ছে। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।

নিজের মধ্যে একটা অস্তিত্ব কে অনুভব করতে পেরে মৌ এর আলাদা এক রকম সুখ অনুভুত হচ্ছে। মা হওয়ার যে একটা সবচেয়ে সুখকর আলাদা একটা অনুভুতি, তা মৌ উপলব্ধি করতে পারছে।সে এখন একটা বিষয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছে যা হয়ে কিছু হয়ে যাক, সে এই বাচ্চাকে কিছুই হতে দিবে না। কষ্ট সহ্য করে হলেও তাদের বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাবে।

আয়ান, আম্মু,দাদি নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছে যাতে মৌ এর কোনো কষ্ট না হয়।

মৌ এর প্রেগনেন্সির এখন প্রায় সাড়ে ৭ মাস চলছে।এই সাড়ে ৭ মাসে অনেক কিছু বদলেছে। মৌ এর পেট স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। তার নড়াচড়া আগের থেকে একটু কমে গিয়েছে। আয়ান মৌ এর সুবিধার জন্য তাদের রুম শিফট করে নিআে এনেছে।এতে করে সিড়ি দিয়ে উঠানামা করতে হয়না বলে রিস্ক কম।অবশ্য মৌ প্রতিদিনই ছাদে যায়।প্রতিদিন ছাদে যাওয়া তার একটা রুটিন হয়ে গিয়েছে। কেউ না কেউ তার সাথে যায় ছাদে।বিকালের প্রকৃতি তার অনেক ভালো লাগে। এবং সে মনে করছে এই অভ্যাসটা হয়তো বেবির হেল্থ এর জন্য বেশ ভালো।

আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে সে।এরপর আম্মুর রুমের দিকে গিয়ে দেখো তিনি ঘুমিয়ে আছেন। দাদির রুমে গিয়েও একই জিনিস দেখে সে। তাই সে ভাবলো একা একাই ছাদে যাবে। কিছুই ভালো লাগছে না তার আজকে। অজানা এক কারনে সকাল থেকেই মনের মধ্যে কেমন যেনো করছে। তাই সে ভাবলো হয়তো ছাদে গিয়ে খোলামেলা পরিবেশ এ কিছুক্ষণ থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাই সে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

অনেকক্ষন যাবত সে ছাদেই সময় কাটালো। আসরের নামাজ পরার কিছুক্ষণ পরে সে নিচে আসার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছে।কিন্তু নিচে নামার ৪ সিঁড়ি আগেই ঘটলো বিপদ।কিভাবে যেনো হঠাৎ করেই মৌ এর পা স্লিপ কাটলো।আর সে সিঁড়ি থেকে নিচে পরে গেলো। সিঁড়ির রেলিং ধরেছিলো কিন্তু তাও লাভ হলো না। পরার সাথে সাথেই সে এক গগনবিদারি চিৎকার দিলো।সে নিচে উপর হয়ে পরেনি। পরেছে একপাশ হয়ে। তাই ডিরেক্ট পেটের সামনে ব্যাথা লাগেনি। ব্যাথা লেগেছ পেটের এক সাইডে।মৌ এর চিৎকার শুনে যে যার রুম থেকে ছুটে চলে আসলো। দুজনই নামাজ পরছিলো।
আম্মু আর দাদি রুম থেকে বের হয়ে যা দেখলো তাতে উনারা কেউই প্রস্তুত ছিলো না। তারা দেখলো মৌ পেটে হাত দিয়ে কান্না করে যাচ্ছে।উনারা তাড়াতাড়ি মৌ এর কাছে গেলো।
এরমধ্যে আয়ানও অফিস থেকে চলে আসলো।সে অনেকদিন যাবত মাগরিবের আগেই বাসায় চলে আসে।আয়ান বাসায় ঢুকেই মৌ কে এ অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো। সে তাড়াতাড়ি মৌ এর কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে নেওয়ার সময় অবশ্য অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু এ অবস্থায় তো মৌ হেঁটেও যেতে পারবে না।আয়ান মৌ কে কোলে নিয়ে গাড়ীর উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো।আম্মু আর দাদিও তার পিছে পিছে আসলো।

এদিকে মৌ ব্যাথায় চিৎকার আর কান্না করেই যাচ্ছে।আয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে পিছনের সিটে মৌ কে শুইয়ে দিলো। আর পিছনের সিটে বসলো আম্মু আর সামনে দাদি আর আয়ান।মৌ কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না।কিন্তু মনে মনে সে দোয়াদরুদ পরে যাচ্ছে আর আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে যাতে এই বেবিটার কিছু না হয়।
আয়ান গাড়ী স্টার্ট দেওয়ার আগে ফাহাদকে ফোন করলো।

“হ্যালো ফাহাদ,একটা সমস্যায় পরে গিয়েছি।”

“কি সমস্যা আয়ান?”

“আমি বাসায় এসে দেখি যে মৌ সিঁড়ির কাছে পরে আছে।ব্যাথায় চিৎকার করছে সে। আমি তাড়াতাড়ি তোমাদের হসপিটালে নিয়ে আসছি।”

ফাহাদ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

“আয়ান তুমি চিন্তা করো না।মৌ ভাবিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসো।আমি ডক্টর কে বলে ওটি রেডি করাচ্ছি।’

আয়ান আর কিছু না বলে গাড়ী স্টার্ট দেয়।এদিকে মৌ এর কান্নার গতি বেড়েই যাচ্ছে।দাদি মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বারবার আর দোয়াদরুদ পড়ছে।এদিকে আম্মুও দোয়াদরুদ পড়ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে আয়ানরা হসপিটালে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে পৌঁছে সে মৌ কে কোলে করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলো।নার্সরা মৌ কে তাড়াতাড়ি ওটির দিকে গেলো। পিছে পিছে আয়ান,দাদি আর আম্মুও আসছে।

মৌ কে অপারেশনের জন্য নিয়ে গেলো।ইতোপূর্বে অহনাও হসপিটালে পৌঁছে গিয়েছে।ফাহাদ মৌ এর খবর জানার সাথে সাথেই অহনাকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে।
আয়ান মৌ এর এ কথা কাউকে জানায়নি। টেনশনে সে ভুলেই গিয়েছিলো সবাইকে ফোন করে এই এক্সিডেন্ট এর কথা ভুলেই গিয়েছিলো।

তাই অহনা ফোন দিয়ে মৌ এর পুরো পরিবার আর তার আব্বুকে হসপিটালে আসতে বলে।

অহনা এক নজর আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ানকে এখন বিধ্বস্ত লাগছে দেখতে।চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে যে কিছুক্ষণ বাদেই সে কান্না করে দিবে।এদিকে আম্মু নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছে।কিন্তু এদিক দিয়ে দাদি বেশ শক্ত আছেন। তিনি সবার সামনে কান্না করেন না।কারন এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে যদি তিনিই নিজেকে সামলাতে না পারেন তাহলে ছোটোদের কে সামলাবে।

অহনা গিয়ে তার আম্মুর পাশে বসলো।আর দাদি আয়ানের কাছে গেলো।আয়ান একভাবে ওটির দরজার দিকে চেয়ে আছে।দাদি আয়ানের কাধে হাত রাখলো। আয়ান কারোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে সামনে ঘুরে দাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো।

“দাদি,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।”

“এতো টেনশন নিস না। আল্লাহর কাছে দোয়া কর সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“ওদের দুজনের কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না দাদি।”

“আরে কিছুই হবে না ইনশাল্লাহ। তুই নিজেকে সামলা।”

এর মধ্যে বাকি সবাই চলে আসলো। মৌ এর আম্মুর তো এই সংবাদ শোনার পর থেকে কান্নাই থামানো যাচ্ছে না।

কিছুক্ষণ বাদে একজন ডক্টর বেড়িয়ে এলো ওটি থেকে।আয়ান উনাকে দেখে তাড়াতাড়ি গেলো উনার কাছে।গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“ডক্টর, মৌ এর কি অবস্থা??”

“এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।এমনভাবে এক্সিডেন্ট করলো,… তারপর আবার উনার বেশ কিছু কম্পলিকেশনস ও আছে।”

“কম্পলিকেশনস!!!!মৌ তো আমাকে কিছু বলেনি এ ব্যাপারে।”

“উনি কাউকে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন না।যাই হোক আপনারা সবাই দোয়া করুন। অবস্থা ধীরে ধীরে ক্রিটিক্যাল হচ্ছে।মা আর বাচ্চা, দুজনেরই জীবনের রিস্ক আছে। ”
এ বলে ডক্টরটা চলে গেলেন।

এদিকে এ খবর শুনে সবার মনে আরো টেনশন কাজ করছে।আয়ানের তো এ কথা শুনে মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া ঘুরে এলো।সে নিজেকে সামলো নিয়ে চেয়ারে বসলো।আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছে।

চলবে….