#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
“কবে আসবো আমার পালা রেএএ?কবে দিবো গলায় মালা রে,মালা রে।
মনে তো নাই কোনো কামও বন্ধু,মনে তো নাই কোনো কাম।
তোর প্রেমেতে দিবানিশি,
থাকে আমার মন উদাসী।
প্রেমের জ্বা’লা বড়ই জ্বা’লা রে,
বুকের ভেতর আগুন জ্বলে,
জ্ব’লছে জ্ব’লে নিভে ন
এই শাহা এর পরের লাইনটা কী যেনো?
শাহা কপাল চুলকে বলল।
“আমি জানি না।”
নূর আর ভাবলো না।
“ধুর বাদ দে, এর পর পারি না সোজা।
আরেহ কবে কবে আসবো পালা রে?কবে দিবো গলায় মালা রে,মালা রে।”
“আরেহ চুপ কর বেডি,কখন থেকে তোর রেডি চালু করেছিস থামার নাম নেই।”
নূর মুখ বাঁকিয়ে বলল।
“ক্যে,মই কী করছি?গানটা আমার হৃদয় থেকে আসছে,তুই জানিস না কত্ত খষ্ট নিয়ে গানটা গুন গুন করছি আমি।”
কথাটা বলে নাক টানলো নূর,শাহা ফিক করে হেসে উঠলো।
“তুই কি জানিস এই পুরো গানটাই ভুল গেয়েছিস তুই পা গলী।”
“কই ভুল? কোথায় ভুল?”
“ছাড় বাদ দে, এখন আমাকে বল এত্ত খষ্ট কিসের তোর?”
নূর ফের আগের ন্যায় নাক টানে।
“তোরও বিয়ে হয়ে গেলো, এদিকে আমি সিঙ্গে’ল।”
“তোরও মানে?আর কার বিয়ে হয়েছে?”
“তুই জানিস না শাহা,ওই যে আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ির আন্টির ছেলের শালিকারও বিয়ে ডান, এখন তোর। আমার কী হব্বে??”
শাহা কপাল চাপ’ড়া’চ্ছে।এ মেয়ে কী?
“হায় খোদা,তুই কী রে নূরিয়া?এত মানুষের খবর রাখিস?”
“নট,আমি শুধু যারা বিয়ে করে তাদের খবর রাখি।”
“তাহলে নিজেই বিয়ে করে নে না?”
পিছন থেকে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে উঠে পৃথক,শাহা ও নূর ঘাড় ফিরিয়ে দেখে বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে পৃথক।শাহা নূর কে চোখ টিপে ড্রয়িং থেকে প্রস্থান করে,বেশ আরাম করেই সোফায় বসলো পৃথক।ওর ঠিক সামনে বসে আছে নূর।
“তা তুই আমাকে ফে’ই’ক আ’ই’ডি দিয়ে নক করেছিলে কেন?”
কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে নূরের, কালকের কথা আজকে কেন জিজ্ঞেস করছে?তাও আবার এই বিকেলে? সকালে তো দেখা হয়েছিল কিন্তু তখন তো কিছু বললো না!
“হে হে পৃথক ভাই ওইটা তো কালকের কথা, আজকে কেন বলছেন?তাও এখন? সকালে দেখা হলো তখন বললেন না।”
“কী বল তো সকালে অন্য মুডে ছিলাম।”
নূর বোধহয় লজ্জা পেলো,সে আর বসলো না নূরজাহান চৌধুরীর রুমে চলে গেল।
রাতের দিকে নূরজাহান চৌধুরী একে বারে খাবার খাইয়ে বাড়িতে যেতে বলে নূর কে। সবাই মিলে
খাওয়া দাওয়া করে নেয়, রাতের দিকে রিয়াজ বাড়ি দিয়ে আসে নূর কে । পৃথক সরাসরি মুখের উপর না করে দিয়েছিল, তাঁতে বেশ খারাপ লেগেছে নূরের। তবুও সে কিছু বললো না, চুপচাপ চলে গেলো।
_______________
ঝলমলে রোদ এসে উপচে পড়ছে বারান্দায়,আম শুকোতে দিয়েছে রূপা আহমেদ, নূর এসে পিছন থেকে ওনাকে জড়িয়ে ধরে।
“মা ভালো লাগছে না।”
রূপা আহমেদ মুচকি হাসেন,মেয়েটা রোজ কোনো না কোনো বাহানা করে তাকে আটকে রাখতে।রোজ অফিসে যেতে হয় ওনাকে, তাঁতে নূর কে একাই থাকতে হয় বাড়িতে।যার কারণে মন খারাপ লাগে।
মেয়ের মাথায় স্নেহ ভরা হাত রে বলেন।
“মা রে আমি অফিসে না গেলে চলবে কী করে? তোমার পড়াশোনা তার পর আরো খরচ আছে, সামনেই তো আবার বিয়ে।যতই সাফিন ভাইয়া তোমাকে মেয়ের মত আগলে রাখুক না কেন আমার তো একটা দায়িত্ব আছে।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নূর,সে তার মা কে ভীষণ ভালোবাসে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সে কিছু করুক যাতে তার মায়ের কষ্ট কম হয়। অতঃপর চেষ্টা করেও ফলাফল শূন্য।
চৌধুরী বাড়িতে আনন্দের মি’ছিল লেগেছে, শাহা কে সোহানের বউ করতে উঠে পড়ে লেগেছে তার পরিবার।অবশ্য তার পুরো কৃতিত্ব সোহানের, অবশেষে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।আজ রবিবার,গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হবে,রাতে মেহেদী এবং কাল সকাল সকাল বিয়ে।
নিজের বিয়ের কথাবার্তা শুনে শাহা বারংবার লাজুক পাতার ন্যায় নুইয়ে পড়ে।
হলুদ রঙের আটপৌরে শাড়ি পড়েছে নূর,বেশ মানিয়েছে তাকে।নিমুও ঠিক তার মত একই রঙের শাড়ি পড়েছে, ওদিকে দুই ভাই রিয়াজ এবং পৃথক দু’জনেই একই রকম কুর্তা গায়ে দিয়েছে।
নূরজাহান চৌধুরী সেই সকাল থেকে বিয়ের কাজ নিয়ে।নিমু নূর দু’জনেই ওনাকে সাহায্য করছে, ওদিকে সাফিন চৌধুরী এবং ছেলেরা মিলে বাড়ির বাকি কাজ গুলো দেখে নিচ্ছে, ডেকোরেশন করা, খাওয়া দাওয়া বর আসার সব আয়োজন করছে।
“মাশাআল্লাহ।”
শব্দটি কর্ণকুহ হওয়া মাত্র সেদিকে দৃষ্টিপাত করে নূর,পৃথক পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ায়।চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে পৃথক কে,নূর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজের মনে মনেই থু থু দিচ্ছে,যদি নজর লেগে যায়?
“কী বউ জান ওমনে তাকিয়ে থাকলে তো নজর লেগে যাবে!”
নূর চমকালো,নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ ফাঁক করে শ্বাস টেনে নেয়,এই প্রথম পৃথক তাকে বউ জান বলেছে। বুকের ভেতর তীব্র জ’লো’চ্ছ্বা’স হচ্ছে, হাঁসফাঁস করছে নূর।
“আমি যাই।”
নূর অপেক্ষা করলো না, কোনো মতে পা’লিয়ে যায়।
কবুল শব্দ বেশ অন্য রকম,এই শব্দ বলা মাত্র তুমি নিজেকে অন্য কারো করে দিচ্ছো। অনেক দায়িত্ব জুড়ে থাকে, নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়।আজ সেই সম্পর্কের সুতোয় বাঁধা পড়লো শাহা, একজন মানুষ কে সারাজীবনের জন্য দিয়ে দিলো নিজেকে। নতুন মানুষ কে আপন করে নিয়েছে।
“বান্ধবী যখন জামাই লইয়া আমার চোখের সামনে দিয়া ঢ্যাং ঢ্যাং হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”
“আহারে আমাদের নূরিয়ার কত্ত কষ্ট।”
নিমু বেশ মজা নিয়েই বলল কথাটা নূর কে, বেচারি নূর শোকে কাতর হয়ে স্যাড সং গাইছে।ওর গান শুনে ফিক করে হেসে উঠলো নিমু,নূর মলিন মুখে বলল।
“ভাবিই আমার বিয়েটা কবে হবে?ওই শাহাও এখন বিয়াইত্তা মহিলা হয়ে গেছে।আমিও জন্মের সি’ঙ্গেল রয়ে যাবো মনে হচ্ছে?”
“না না, তুমি চিন্তা করো না, আমি আজকেই মায়ের সাথে কথা বলব তোমায় আর পৃথক ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে।”
নূরের চোখ দুটো চক চক করে উঠলো,তার মানে তারও বিয়ে হবে।মানে সে ওই বদের হা’ড্ডি পৃথক ভাইয়ের বউ হবে?
“সত্যি ভাবি?”
“হুম হুম।”
“থ্যাংকু সো মাচ।”
নূর জড়িয়ে ধরে নিমু কে,নিমু অলওয়েজ নূর এবং শাহা কে নিজের বোন মনে করেছে। দু’জনে যেটাতে খুশি হয় সেটাই করে এসেছে সবসময়।
_________
সন্ধায় কালো রঙের কুর্তা পড়ে সোফায় বসে আছে পৃথক চৌধুরী, বারংবার হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বিষয়টি খেয়াল করে নূর, অতঃপর সেও এসে পৃথকের পাশের জায়গা দ’খ’ল করলো।পৃথক নূর কে দেখেও কিছু বললো না,সে নিজের অপেক্ষায় ব্যস্ত, সেন্টার টেবিলের উপর থেকে রিমোট নিয়ে টিভি অন করে নূর।তাতেও কোনো ভাবান্তর নেই পৃথকের, এবার নূরের বেশ বিরক্ত লাগছে।পৃথক কে বিরক্ত না করতে পারলে তার যেনো পেটের ভাত হজ’ম হয় না।
টিভি অফ করে পাশে থাকা সাউন্ড বক্স অন করে নূর,ফুল ভলিউমে গান শুনতে শুরু করে।পৃথক বেশ বিরক্ত হয়,তার কান ঝা’লাপা’লা হয়ে গেলো।
“নূরের বাচ্চা সাউন্ড কম কর।”
নূর ভেংচি কে’টে বলে।
“করব না, আমি গান শুনছি বেশি প্রবলেম হলে চলে যান হুউ।”
পৃথক আর স’হ্য করতে পারলো না,উঠে গিয়ে সাউন্ড বক্স অফ করে দিল।
“পৃথক ভাই ভালো হচ্ছে না কিন্তু আপনি,,,,
আর কিছু বলতে পারলো না সে,পৃথক তৎক্ষণাৎ নূরের কাছাকাছি এসে হাত দুটো পিছমো’ড়া করে নিজের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আ’টকে ফেলল।
“খুব বাড় বেড়েছে তাই না? আমাকে বিরক্ত না করলে পেটের ভাত হজ’ম হয় না?”
“ও মা পৃথক ভাই আপনি কেমনে জানলেন আমার মনের কথা?”
সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো পৃথক,এই অবুঝ মেয়ে নিয়ে কী করে থাকবে সে?
“বাবা কোন গুনে যে তোকে আমার বউ করতে চাইছে সেটাই বুঝলাম না।”
নূরের রাগ হলো,সে ঝাঁ’ঝা’লো কন্ঠে বলে উঠলো।
“কে বলেছে আমার কোনো গুন নেই?কী কী গুন আছে শুনুন!’
“চুপ,কী কী গুন নেই সেটা শুন। সারাদিন টই টই করে ঘুরিস,একটা গুন।খালি খাবি আর ঘুমাবি,দুইটা গুন।আর সব শ্রেষ্ঠ গুনের নাম সারাদিন রাষ্ট্র ভাষা আওড়ানো পৃথক ভাই পৃথক ভাই।মা গোঁ মা কান ঝা’লাপা’লা করে দিলো।”
নাকের পাটাতন ফুলে উঠে নূরের,তাকে এমনে অ’পমান করলো?
“আপনি আমাকে এমনে অপমান্স করলেন পৃথক ভাই?”
পৃথক বেশ ভাব নিয়েই বললো।
“তোর তো মান-ই নেই, কিসের আবার অ’পমান।”
নূরের চোখ দুটো ইতিমধ্যেই জলে টুইটম্বুর অবস্থা।তাকে এমনে কথা শুনিয়ে দিলো।
“হেই পৃথক?”
মেয়েলি কন্ঠে চমকে উঠে নূর,সদর দরজার দিকে চোখ যেতেই মস্তিষ্কে সেদিনের কথা হানা দিচ্ছে।
“হেই প্রীতি আয় ভেতরে।”
“কী ব্যাপার ভাই হঠাৎ ইনভাইট করলি?”
রুদ্র দুষ্টুমি করে বলে,প্রীতিও ওর সাধ দেয়।
“মনে হচ্ছে আজকে পৃথক বেশ মুডে আছে।”
পৃথক ওদের সাথে বেশ হাসিখুশি মুখ নিয়ে বলে।
“তেমন কিছু না ওই আর কী?ওশান আজকেও এলো না?”
রুদ্র ঘড়িতে সময় দেখে বলল।
“এখুনি চলে আসবে,ও তো বললো রাস্তায় আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,তোরা ভেতরে আয়।”
রুদ্র এবং প্রীতি দু’জনেই ভেতরে আসে,প্রীতি কে দেখে রাগ লাগে নূরের,এই মেয়েটা সেদিন ফার্মগেট ক্যাফেতে পৃথক কে জড়িয়ে ধরেছিল। সম্পর্কে বান্ধবী হলেও নূরের বিষয়টি একদমই পছন্দ নয়।
নূরজাহান চৌধুরী সবাই কে দেখে বেশ খুশি হয়, সবাই ওনাকে সালাম দেয়। উনি নিমু কে ডেকে বলে সবার জন্য কিছু নিয়ে আসতে,নিমু রান্না ঘরে চলে গেল।ওর পিছু পিছু নূরও গেলো।
“কী হয়েছে নূরের?মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?”
নূর মলিন মুখে শুধায়।
“আচ্ছা ভাবি পৃথক ভাই আমাকে কী একটুও ভালোবাসে না?”
হঠাৎ নূরের মুখে এমন কথা শুনে অবাক লাগে নিমুর।
“কে বলেছে এটা?পৃথক তো নূর কে খুব ভালোবাসে।”
“না গোঁ ভাবি,দেখলে না সেদিন যাদেল কাছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়নি সেই তারাই আজকে আবার বাড়িতে এসেছে। কিন্তু পৃথক ভাই আমাকে দেখলো তবুও কাউকে কিছু বললো না।”
“আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার? তুমি এক কাজ করো এই নাস্তা গুলো নিয়ে যাও,তখন এমনিতেই সবাই জিগ্গেস করবে তুমি কে?তখন পৃথক অবশ্যই বলবে।”
নূরের বেশ ভালো লাগে নিমুর আইডিয়া টা।সেও রাজী হয়ে নাস্তা নিয়ে সবার সামনে গেলো।
ড্রয়িং রুমে যাওয়া মাত্র তার চোখ দুটো ছানাব’ড়া হয়ে গেল।
“এহহহহহহহহহহহ!”
চলবে………..।✨