ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০৩

0
153

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

অতীত…
স্কুল পড়ুয়া জীবনে আবেগের ব’শে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে পছন্দ করে বসে শাহা,যেই পছন্দ ভালো লাগা কে ভালোবাসার নাম দেয়।

প্রতি দিন অনি নামের সেই ছেলেটা লক্ষ্য করলো শাহা স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য,বার কয়েক নোটিশ করে বুঝতে পারলো শাহা তাকে পছন্দ করে। একদিন ক্লাস শেষে স্কুল থেকে বের হয় শাহা, সামনের দিকে চোখ যেতেই পিলে চমকে উঠে তার।সাদা শার্ট পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে অনি।শাহা কে দেখে এগিয়ে গেল তার দিকে।
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে শুনবে?”

শাহা থমকালো, হৃদয় স্পন্দন হুঁ হুঁ করে বেড়ে গিয়েছে, তীব্র জ’লো’চ্ছ্বা’স হচ্ছে মন গহীনে।
“আআমার সাথে কথা?”

অনি বাঁকা হাসলো,ভ্রু উঁচিয়ে বললো।
“হুম, তুমি কী বিকেলে স্টার লাইট ক্লাবে আসতে পারবে?”
“ক্লাবে? কিন্তু,,,,
“উঁহু কোনো কিন্তু না, আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো তাই আমিও তোমাকে কিছু বলতে চাই, তুমি প্লিজ এসো। আমি অপেক্ষা করবো। কথাটা শাহার হাত ধরে বলেছিল তাতেই গলে যায় শাহা।
বিকেলে স্কুলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু আনিকা কে ফোন করে সবটা জানিয়েছে শাহা,আনিকা প্রথম থেকেই জানতো অনি ভালো ছেলে নয়। অন্যদিকে আনিকা শাহা কে কখনও পছন্দ করতো না,শাহা এবং নূরের বন্ধুত্ব তার চোখে লাগতো।
সব কিছু শুনার পরে আনিকা শাহা কে সা’পো’র্ট করে যাওয়ার জন্য।
সন্ধায় স্টার লাইট ক্লাবে যায় শাহা, আশেপাশে অহরহ ছেলে মেয়ে সর্ট ড্রেস পরে ইন’জ’য় করছে,কেউ বা ড্রিং করতে ব্যস্ত ।
গুটিসুটি হয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে শাহা,ঘাড়ে কারও গরম নিঃশ্বাস উপছে পড়তেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো সে।
“হেই বেইব তুমি একা দাঁড়িয়ে কেন?”

ঢুলতে ঢুলতে কথা বলছে অনি,মুখ থেকে বি’শ্রী গন্ধ বের হচ্ছে। নাক ছিটিয়ে দূরে দাঁড়ালো শাহা।
“অনি আমরা এখান থেকে যাই প্লিজ, এখানে অনেক বাজে বাজে মানুষ আর বাজে কাজ হচ্ছে।”

অনি নিজের মথ করে বলল।
“রিল্যাক্স বেইব,চলো আমার সাথে।”
ক্লাবের উপরে গেস্টদের জন্য রুম আছে,সেখানেই শাহা কে নিয়ে গেলো অনি।
বিছানায় বসলো শাহা,সরল মনে জিজ্ঞেস করলো।
“অনি তুমি আমাকে কী যেনো বলবে বললে?”

অনি কিছু বললো না গায়ের শার্টটা আলতো করে খুলে ফেলল,ক্ষনিকের জন্য ভয় পেলো শাহা।অনি আস্তে ধীরে শাহার কাছাকাছি আসতে লাগলো সে। নিজের লেলুপ দৃষ্টি ছুড়ে দেয় শাহার দিকে,দিয়ে দেয় তার ছোট্ট দেহে নোংরা স্পর্শ।
“ছাড়ো আমায় অনি,কী করছো?”

শাহা এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে অনি কে সরিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়, কোনো মতে বাড়িতে পৌঁছে পৃথক কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। নিজের আদরের ছোট বোনের এমনতর অবস্থা দেখে থমকে যায় পৃথক, অতঃপর সবটা জানার পর অনি কে খুব মা’রে।কিয়ৎক্ষণ পর সাফিন চৌধুরী পুলিশের হাতে তুলে দেয় অনি কে,তিনি জানেন যদি ওকে পুলিশের হাতে না দেয় তাহলে পৃথক ওকে মে’রেই ফেলবে।

তীক্ষ্ণ এই অতীত মনে পড়তেই এখনো আঁ’তকে উঠে শাহা,এসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে আসে। হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পরে রেডি হয়ে সোহানের সাথে দেখা করতে যায় শাহা।
__________
“কারো প্রেমে পড়লাম না রে,মজা কী বোঝলাম না রে,শুনলাম না মোবাইল ফোনে আই লাভ ইউ।”

গানটা নিজের মত গুন গুন করছে নূর, হঠাৎ পিছন থেকে গাট্টা মা’রলো রিয়াজ।
“উফ্ ভাইয়া কী করো ব্যথা পাই তো।”

রিয়াজ আরাম করে সোফায় বসে বললো।
“ফুপি কোথায়?”
“মা তো অফিসে গেছে।”
“তুই এখানে আর ওদিকে তোর বর অন্য কাউকে ডেট করছে।”
“কীঈ?”

লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো নূর,মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল। কাদু কাদু কন্ঠে শুধায়।
“ভাই এইটা কী বললে?”

রিয়াজ বেশ বড় বড় চোখ করে আওড়াল।
“তুই জানিস না নূর? কয়েক দিন ধরেই পৃথক ফোনে কার সাথে জানি চ্যাট করে, এবং কী ওকে রাতেও আমি ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।”

নূরের এবার বেজায় খারাপ অবস্থা, মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দেবে, ওদিকে মুখ টিপে হাসে রিয়াজ।
“ভাইয়া এখন আমার কী করা উচিত? আমার জামাই কে অন্য কেউ নিয়ে নিচ্ছে তো!”

রিয়াজ কপাল চুলকে খানিকটা সময় নিয়ে ভাবলো, অতঃপর উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
“এক কাজ কর তাড়াতাড়ি ফে’ই’ক একা’উ’ন্ট খুলে পৃথক কে রিকোয়েস্ট দে এবং ন’ক কর।”নূরও ভাবলো এটাই করা উচিত তার,যদি সত্যি পৃথক কারো সাথে অ্যাটাস হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তার সাথেও কথা বলবে। নূর ত্বরিতে ফোন বের করে নতুন একটা ফে’সবু’ক একা’উ’ন্ট খুলে ফেলে। অতঃপর টুক করে একটা ম্যাসেজও দিয়ে দেয় পৃথক কে।
“আসসালামুয়ালাইকুম।”

বিছানায় শুয়ে ছিল পৃথক,সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে সে, আজকে সারাদিন ব্যস্ততায় কে’টেছে তার।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে শুতেই ফোনে টুং করে নোটিফিকেশন আসলো,ভেতরে ঢুকে দেখে কেউ ম্যা’সেজ রি’কোয়ে’স্ট দিয়েছে।
“ওয়া আলাইকুমস সালাম।”

রিপ্লাই পেয়ে ভ্রুকুটি করে তাকালো নূর ফোনের দিকে।আরেকটু চেক করার জন্য লিখলো।
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, আপনি কী আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারবেন?”

বার্তা পাঠানোর সাথে সাথে সি’ন করলো পৃথক, তবে কোনো উত্তর দেয় না। পাঁচ দশ মিনিট পর রিপ্লাই আসলো।
“অবশ্যই, আপনি যদি চান তাহলে সারা রাত আপনার কথা শুনতে পারি।”

দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো নূর, জামাই তো তার দেখছি বেজায় নির্ল’জ্জ!বউ থাকতেও পরোনারীর সাথে কথা বলছে!ছে। নিজেকে বেশ শক্ত রেখে আবারো লিখলো নূর।
“আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে,আসলে আমি আপনার প্রোফাইল দেখে পছন্দ করে ফেলছি, আপনি কী আমার সাথে রিলেশন করবেন?”

বার্তাটি পড়ার সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকালো পৃথক, অতঃপর উত্তরে লিখলো।
“কানের নিচে থাপ্পড় দিয়ে নিজের নাম ভুলিয়ে দেব নূরের বাচ্চা,তুই কাল বাড়িতে আয়। খবর আছে তোর,লু চু মহিলা।”

বার্তা পড়ে রিতিমত থো হয়ে গেছে নূর, চটপট পৃথক কে ব্ল’ক করে দেয়।
“আমাকে চিনে ফেললো? ইস্ রে এখন কী করে জানবো ওই জামাইয়ের বাচ্চা থুক্কু,পৃথক ভাই কার সাথে চ’ক্ক’র লাগাচ্ছে?”

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয় পৃথক,স্ফীত হাসলো সে।বউটা তার বড্ড অবুঝ,সে তো জানেই না তাকে এই জামাই বাবু কত ভালোবাসে?
____________________
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরেও আশানুরূপ ফল না পেয়ে হতাশ হয় নিমু। বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে,আবারো সে ব্যর্থ হলো।
“আমার কী কখনও বাচ্চা হবে না রিয়াজ?”

গলা ভার হয়ে আসছে রিয়াজের,কম চেষ্টা তো করেনি সে?একটা বাচ্চার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে।তবে হয়নি, বিয়ের আজ তিন বছর। তবুও বাবা হতে পারলো না সে।তবে হ্যাঁ এটার জন্য একদমই নিমু কে দায়ী করে না সে, হয়তো আল্লাহর ইচ্ছা হয়নি। অনেক বার ডাক্তার দেখানোর পরেও কিছু হলো না, সবাই বলেছে দুজনের মধ্যে কারো কোনো সমস্যা নেই, চেষ্টা করতে।
আজও নিমু হতাশ হলো, এখন মেয়েটা কী বলবে? কষ্ট তো কম পাচ্ছে না না সে।
কোনো রকমে বুঝি বাড়ি নিয়ে গেলো রিয়াজ নিমু কে,রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো নিমু।
রিয়াজ আলতো করে দরজা বন্ধ করে বাইরে নূরজাহান চৌধুরীর কাছে আসেন।
“মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে খুব।”

নূরজাহান চৌধুরী হতাশ হয়ে কথাটা বললেন,রিয়াজ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।

কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয় নূর, রাস্তায় আসতেই দেখলো পৃথক গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শুকনো ঠোঁট গুলো বারংবার ভিজিয়ে নিচ্ছে নূর।পৃথকের কাছে এগিয়ে গিয়ে লম্বা একটা সালাম দেয়।
“আসসালামুয়ালাইকুম পৃথক ভাই।”

পৃথক ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“রাষ্ট্র ভাষা জয় হোক।”

নূর ভ্রুকুটি করে তাকালো।
“কিছু বললেন পৃথক ভাই?”
“না আফা কিচ্ছু বলি নাই।”

হঠাৎ পৃথকের মুখে আফা ডাক শুনে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
“আফা?”
“আগগে জে,আপনে আমারে পৃথক ভাই পৃথক ভাই যখন বলেন তাইলে আমি কী দোষ করছি আফা ডেকে।”

নূর নাক টানলো,বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার,বউ থেকে সোজা আফা বানিয়ে দিলো!এইটা মানা যায় না।
“মানবো না মানবো না।”

পৃথক কপাল চুলকে বলল।
“কী মানবেন না আফা?”

নূর মুখ বাঁকিয়ে বলল।
“আমি তো আপনার বউউউউ, আফা নট চলবে।”

পৃথক একদম নাটকীয় ভঙিমায় বলে।
“তাহলে আমি তো আপনার জামাইইই,ভাই নট চলবে।”

নূর পৃথক কে দেখে ফিক করে হেসে উঠলো,অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পৃথক। অতঃপর ওর হাত ধরে গাড়িতে বসায়।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে,হুঠ করে ব্রেক ক’ষে পৃথক।
“কী হয়েছে?”
“হয়নি হবে।”

পৃথক চট করে নূরের অধর আঁ’কড়ে ধরে, নূর নিশ্চুপ। নূরের প্রতিক্রিয়া না দেখে,কা’ম’ড় বসিয়ে দেয় পৃথক ওর ঠোঁটে। পৃথকের চুল খা’ম’চে ধরলো নূর,একে অপরের নিঃশ্বাস মিলে একাকার হয়ে উঠেছে।
“ছে পৃথক ছে ছোট্ট মেয়ের সুযোগ নিচ্ছেন?”

পৃথক বাম চোখের ভ্রু নাচিয়ে বললো।
“আচ্ছা,তা ছোট্ট বাচ্চা টা কিচ্ছু বুঝে না ওলে ওলে আসো বাবু চকলেট কিনে দেই।”

নূর জিভে কা’ম’ড় দেয়,কী লজ্জা?
__________
‘মেয়ে তুমি ভীষণ মায়াবী, করবে আমায় বিয়ে?
সবার অলক্ষ্যে এই বক্ষে তোমার হবে বাস।”

সোহানের মুখে এত সুন্দর কথা শুনে আনন্দ লাগছে শাহার,হুট করেই সোহান কে জড়িয়ে ধরে।
“আমি আবার বাঁচতে চাই সোহান, আপনার সাথে। রাখবেন আমায়?”

সোহান হাসলো, প্রশান্তিময় হাসি।
“কেন রাখবো না? অবশ্যই রাখবো, তুমি তো একটু অপেক্ষা করো। আমি আজকেই বাড়িতে কথা বলছি।”

সেই সন্ধ্যা একে অপরের সাথে কাটায় শাহা ও নূর।প্রেমিক যোগল নীরব রাস্তায় একে অপরের হাত ধরে হাটে,ঢঙ দোকানে বসে চা খায়। অবশেষে এক গুচ্ছ গোলাপ কানের পিঠে গুঁজে দেয় সোহান শাহার।
“আমার তরফ থেকে তোমার জন্য এই লাল গোলাপ ”

শাহা নিজের পার্স থেকে একটা বক্স বের করলো।
“এটা আপনার জন্য আমার তরফ থেকে উপহার।”
“ওয়াও,দেখি দেখি।”
“আহ্ না এখন দেখবেন না, বাসায় গিয়ে দেখবেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

চলবে…………..✨।