ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০৭

0
149

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৭]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

ছোট্ট বাচ্চা কে কোলে নিয়ে আ’ত্মহা’রা হয়ে উঠে নিমু, বাচ্চা কে কোল থেকে নামতেই চাইছে না।কী খাবে না খাবে সেটা নিয়ে তার কী চিন্তা?
এসব দেখে আ’ত্মা ঠান্ডা হয়ে যায় নূরজাহান চৌধুরীর ,এত দিনে মেয়েটা কে এত খুশি দেখছেন তিনি।
বউয়ের খুশি দেখে চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো রিয়াজের, তাহলে সে তার স্ত্রী কে অবশেষে খুশি দিতে পারলো।
“শুনো তুমি আজকেই ওর জন্য নতুন জামা নিয়ে আসবে কেমন?গায়েল গুলো কেমন জানি পুরোনো লাগছে,আর হ্যা ওর জন্য নতুন নতুন খেলনা আনবে।আর কী যেনো লাগবে?”

রিয়াজ নিমুর বাহু ধরে বলল।
“শান্ত হও জান,সব আনবো।আগে তুমি একটু শান্ত হও।”

নিমু শান্ত হলো, বাচ্চার পাশে বসলো সে। নূরজাহান চৌধুরী অধরে হাসি টেনে বলেন।
“অবশেষে তুমিও মা হলে নিমু, এবার নিজের বাচ্চা মানুষ করো।”

নিমুর চোখ দুটো ইতিমধ্যেই ভিজে উঠেছে। কাঁপা গলায় বলে।
“মা আপনারা জানেন না আজ আমি কত খুশি?ও আমার ছেলে তাই না?”

নূরজাহান চৌধুরী নিমুর মাথার উপর স্নেহ ভরা হাত রেখে বলল।
“হ্যা মা,ও তোমার ছেলে, আমাদের বংশধর।তুমিই ওর মা।”

শান্তির শ্বাস ফেলল নিমু,ভেতরে ভেতরে কত তৃপ্তি অনুভব করছে সে বলার মতো নয়। নূরজাহান চৌধুরী ছেলে এবং বউ কে প্রাইভেসি দিলেন।রুম থেকে বের হওয়া মাত্র নিমু রিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে।
“ধন্যবাদ তোমায়।”
“ভালোবাসি ম্যাম।”
“আমিও ভালোবাসি স্যার।”
____________
সাফিন চৌধুরী আজ নূরের বাড়ি গেলো, নিজের রুমে বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে নূর,রূপা আহমেদ কয়েক বার ডেকে গিয়েছিল তাকে,এই ভরদুপুরে ঘুমাচ্ছে কেন? কিন্তু নূর উঠেনি,তার প্রচন্ড রকম মাথা ব্যথা করছে।
চায়ের ট্রে নিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলেন রূপা আহমেদ।
“তা বলুন কেমন আছেন ভাইয়া?”

সাফিন চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?”
“জ্বি ভাইয়া আমিও ভালো আছি মেয়ে নিয়ে, কিন্তু কত দিন আর থাকবো আল্লাহ জানে?”

সাফিন চৌধুরী চায়ের কাপ টেবিলের উপর রেখে বলেন।
“এ কেমন কথা রূপা বোন?”

রূপা আহমেদ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“কী বলব ভাইয়া? মাঝে মাঝে কেমন একটা অস্বস্তি লাগে, মনে হয় এখুনি হয়তো পৃথিবীর মায়া ত্যা’গ করবো।”

সাফিন চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে নিলেন।
“এসব কী কথা?আজ বাদে কাল মেয়ে বিয়ে দেবে এখন এই সময় তুমি এসব ভাবছো?”

“কী আর করব ভাইয়া? আপনারা তো আছেন নূরের জন্য। আমি না থাকলে ওর দেখাশোনার কমতি হবে না এটা আমি জানি।”
“এসব বলো না রূপা বোন,নূর শুনতে পেলে কষ্ট পাবে।”

অতঃপর দুজন আরো খানিকটা সময় ধরে কথা বললো।

গৌধূলি বেলায় একা কি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নূর,ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়তেই শিউরে উঠে নূর। বলিষ্ঠ হাত দুটো কো’ম’ড় জড়িয়ে ধরে নূরের,ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় নূর।
পৃথক দাঁড়িয়ে আছে,চোখ দুটো তার নে’শা’য় বুঁদ হয়ে আছে।নূর ফিক করে হেসে উঠলো,পৃথক হাসির পিঠে বলে উঠে।
“এখনো নে’শা কা’টেনি আমার।”

নূর চুপ করে গেলো,দু পা পিছুতেই হেঁচ’কা টান দিয়ে আবারো কাছে টেনে নেয় পৃথক। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল।
“বউ জান।”

নূর থমকালো,চমকালোও।কী শুনছে সে?বউ জান!
“আমার বউ হতে চাস পারমান্যান্টল”

নূর কী বলবে বুঝতে পারছে না? সত্যি তাকে বউ করবে এই পৃথক চৌধুরী?
“কী রে হবি?”

নূর কিছু বললো না,পৃথক কে জাপটে জড়িয়ে ধরলো।
“সত্যি আমাকে বউ করবেন?”

পৃথক ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।
“না এখন শুধু বাড়ি নিতে বাকি,বউ তো সেই কবে হয়ে গিয়েছিস।”

নূরের হাতের বাঁধন দৃঢ় হয়েছে,সে অবশেষে সফল। নিজের ভালোবাসা পেয়েছে।জিতে গিয়েছে সে।
____________
শাহা কাজ শেষে সবে মাত্র বিছানায় এসে শুয়েছে তারই মধ্যে হুট করে ভারি কিছু নিজের উপর অনুভব করলো।চোখ খুলে দেখে সোহান তার উপর শুয়ে আছে।
“নির্ল’জ্জ লোক একটা সরুন।”

সোহান বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বলল।
“নির্ল’জ্জ হয়নি এখনও,তবে হতে কতক্ষণ সেটাও কিন্তু জানি না।”

শাহা সোহানের বুকে আলতো ধা’ক্কা দিয়ে বলে।
“উঁহু শখ কত?”

সোহান ঝাপ্টে ধরে শাহা কে,একে অপরের নিঃশ্বাস মিলে একাকার হয়ে উঠেছে।

সকাল সকাল বেশ আয়োজন শুরু হয়েছে চৌধুরী বাড়িতে,শাহা নিজের স্বামী নিয়ে আসবে।
সেই জন্য বেশ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে নূরজাহান চৌধুরী, আর ওনাকে সাহায্য করছে নূর।নিমু তিফান কে সামলাচ্ছে, বাচ্চা আনার পর তিফান নাম রাখে নিমু এই নামটা তার ভীষণ পছন্দ তাই সেটাই লাগলো।

ধূসর রঙা পাঞ্জাবি পড়ে অপেক্ষা করছে পৃথক,শাহাদের জন্য অপেক্ষা করছে,কিয়ৎক্ষণ পরেই
শাহা এবং সোহান চলে আসে।
“আসসালামুয়ালাইকুম পৃথক ভাইয়া কেমন আছো?”

পৃথক সোহান কে জড়িয়ে বললো।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? শাহা কেমন আছিস?”

শাহা পৃথক কে জড়িয়ে ধরে।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া, তুমি কেমন আছো?”
“এই তো ভালো আছি,আয় ভেতরে। সোহান তুমিও আসো।”

শাহা এবং সোহান দু’জনে বাড়ির ভেতরে যায়। নূরজাহান চৌধুরী মেয়ে কে দেখে জড়িয়ে ধরে, সোহান শাশুড়ির পায়ে ধরে সালাম করে।
“এসো বাবা ভেতরে।”

দু’জনে সোফার উপর বসলো, নূর শাহা কে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে।
“হেই মিসেস শাহা।”

শাহা হেসে উঠলো, নূর ধপাস করে ওর পাশে বসে পড়ে।
“আসসালামুয়ালাইকুম দুলাভাই, কেমন আছেন?”

সোহান খানিকটা লজ্জা পেলো।
“ওয়া আলাইকুমস সালাম নূর, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
“জ্বি ভালো, এখন আপনাদের দেখে আরও ভালো লাগছে।”
নিমু তিফান কে নিয়ে নিচে আসে, শাহা গিয়ে কোলে নেয় তিফান কে।
“ভাবিই তোমার ছেলে দেখো আমার উপর হিশু করে দিলো।”

সবাই হু হু করে হেসে উঠলো। শাহা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, সোহান মুখ টিপে হাসে। তাতে গা জ্ব’লে যাচ্ছে শাহার।

বিকেলের দিকে সবাই মিলে ঠিক করে বনভোজনের আয়োজন করবে সবাই মিলে।সব ঠিক আছে বলেন নূরজাহান চৌধুরী, তবে ওনারা যাবেন না, বাচ্চাদের মধ্যে বুড়ো বুড়ি গিয়ে কী করবেন? সেজন্য নূরজাহান চৌধুরী না করে দিলেন।
পৃথক এবং নূর বার কয়েক বলেছিল ওনাকে, কিন্তু উনি রাজি হন
নি।

সন্ধায় আইসক্রিম নিয়ে আসে পৃথক, একে একে সবাই কে আইসক্রিম দেয় নিমু। নূরের জন্য আইসক্রিম নেই তাতে বেজায় রেগে গেলো নূর।
“পৃথক ভাই আমার আইসক্রিম কোথায়?”

পৃথক ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“ভুলে গেছি আনতে।”

নূরের ঠোঁটে কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল। কাতর স্বরে বলল।
“আপনি আমার জন্য আইসক্রিম আনতে ভুলে গেছেন? সত্যি!”

পৃথক পিটপিট চোখ করে তাকালো, নূর এই বুঝি কেঁদে দেবে। নিমু নূর কে আশ্বাস দিয়ে বলল।
“আরেহ নূর এনেছে হয়তো,ওর রুমে গিয়ে দেখো তোমার জন্য স্পেশাল আইসক্রিম রাখা আছে।”

নূর ছুটে পৃথকের রুমে গেলো। ওদিকে পৃথকও ওর পিছু পিছু গেলো। রুমে প্রবেশ করা মাত্র পৃথক দেখলো একটা ফুলদানি তার পায়ের কাছে এসে পড়লো,চোখ দুটো তার ছানাবড়া হয়ে গেছে,এটুকু সময়ের মধ্যে ভূমিকম্প হয়েছে।নূর চোর ধরা পড়ার মত মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে, পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো পৃথক। ফুঁপিয়ে উঠলো নূর,মেয়েটা বোধহয় কাঁদছে, কপাল চুলকায় পৃথক।কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখলো পৃথক,চোখ তুলে তাকায় নূর।
“এত রাগ?”

নূর আবারো মাথা নুইয়ে নেয়, পৃথক হাসলো।বাইরে গেলো সে,ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম নিয়ে এসে হাতে দিলো নূরের।
“তোর জন্য আনবো না এটা হতে পারে? পাগলী একটা।”

নূর আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো, আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে। প্রথম বাইট দেওয়া মাত্র পৃথক ওকে বিছানার কাছে বসিয়ে বললো

“আমাকে দিবি না?”

নূর খেতে খেতে বলে।
“কেন? আপনি না নিচে খেয়েছেন?”

পৃথক অধর বাঁকিয়ে হাসলো। আচমকা নূরের ঠোঁটে ঠোঁ’ট মিশিয়ে আ’শ্লে’ষে শুষে নেয়।চোখ দুটো বড় বড় আকারের হয়ে উঠে,এই বুঝি মনিকোঠা থেকে বেরিয়ে আসবে।
“ছিহ্ আপনি কী বাজে?”

বুড়ো আঙ্গুলের সাহায্যে ঠোঁট মুছে নেয় পৃথক,চোখ টিপ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলো পৃথক,ঘাড় বাঁকিয়ে বললো।
“আধঘন্টা পর রুমে আসবো,সব কিছু যেনো আগের মত পাই।”

নূরের মাথায় আকাশ ভে’ঙ্গে পড়ার মত তাকালো সে।
“কী?”
“আগ্গে জ্বি, ফটাফট সব গুছিয়ে ফেল। না হলে খবর আছে।”

নূর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল পৃথকের যাওয়ার পথে।
_______________
সকাল সকাল সবাই তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে পাহাড়ী অঞ্চলের দিকে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে ব্যস্ত পৃথক,মূলত হেডফোন লাগানোর একটাই কারণ তা হলো নূর।সে বকবক করেই চলেছে তো চলেছেই,থামার নাম নেই।তার উপর ওর সঙ্গী হয়েছে শাহা, দুজনে কানের মাথা খাচ্ছে পৃথকের।
ছোট খাটো মিনি বাস বুক করেছে ওরা,যাতায়াতে কোনো সমস্যা না হয়।
সকালের এই মনোরম দৃশ্য বেশ লাগছে নূরের কাছে,সে এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে রাখছে।
গাছপালায় ভরপুর একটা জায়গায় এসে বাস থামলো। সবাই একে একে নেমে আসে,নিমু শাহা সোহান রিয়াজ সবাই মিলে জিনিস পত্র নামাচ্ছে,নূর তিফান কে কোলে নিয়েছে,তাকে এটা সেটা দেখাচ্ছে, পাঁচ মাসের এই বাচ্চা নূরের হাসিতে বারংবার হেসে উঠছে।বিষয়টি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে পৃথক।কী প্রাণবন্ত সেই হাসি।
“বাবু লাগবে?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে চমকে উঠে নূর, পৃথক ঠিক নূরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নূর,তাই বোধহয় খানিকটা লজ্জায় আড়ষ্ট হয় সে।
“কী ব্যাপার? নূরিয়া জান্নাত লজ্জা পেলো?”

নূর মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“মোটেও না, আমি কেন লজ্জা পাবো?”

পৃথক সামনের দিক থাকায়, নূরের বা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল।
“বউউ জান।”

নূর চুপ রইল,তবে তার অধরে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে।
“আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

নূর অবাক হলো।
“সত্যি!”
“হুমম,তবে এখন দেবো না।দু দিন পর।”

নূর সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো। সাসপেন্স তার একদমই পছন্দ নয়, এখন দু দিন কী করে অপেক্ষা করবে সে?
“নূর এদিকে আয়।”
“আসছি।”

শাহা ডাকা মাত্র নূর তিফান কে পৃথকের কোলে দিয়ে শাহার কাছে গেলো, যাওয়ার পূর্বে এক নজর পিছন ফিরে তাকালো। পৃথক তিফানের সাথে দুষ্টুমি করছে,তা দেখে মুচকি হেসে নূর। বিড়বিড় করে আওড়াল।
“আমাকে বলে পাগল,নিজেই তো বড় পাগল।”
চলবে………..✨।