ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০৮

0
159

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০৮]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

সুন্দর এই প্রকৃতির সাথে হই হুল্লোড় করে রান্না বান্না করার মজাই আলাদা।
সবাই মিলে হাতে হাতে কাজ করে নিচ্ছে, কাটাকাটি করা রান্না বান্না সবাই মিলে করেছে, দুপুরের দিকে ঘাসের উপর মাদুর পেতে বসলো সবাই।
শাহা এবং নিমু দু’জনে মিলে সবার প্লেটে খাবার দেয়।

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষে সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সেই রাতে প্রচন্ড রকম জ্বর উঠে নূরের, সারা রাত রূপা আহমেদ নূরের মাথায় পানি দিলেন।
সকালের সফেদ পর্দা ভেদ করে সূর্যের রশ্মি এসে মুখে উপছে পড়ছে নূরের, নাক মুখ কুঁচকে‌ নেয়।বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো নূর।
“বাবা মিস ইউ সো মাচ।”

আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বিড়বিড় করে বললো নূর।

সকাল থেকে একবারও নূর পৃথক কে কল না করায় একটু ভয় পেলো পৃথক।মেয়েটা সারাদিন মিসড কল করতেই থাকে,পৃথক রিসিভ না করলেও দিনে পনেরোটা মিসড কল করবেই নূর।
অফিসে গিয়েও মন বসলো না পৃথকের, কেমন জানি হাঁসফাঁ’স লাগছিল তার।
তীব্র এই রোদ্দুরে হেঁটে বাড়ির কাছে একটা ফার্মেসীতে গেলো নূর প্রচন্ড মাথা ব্যথা করেছে তার ওষুধ নিতে হবে,সকালের দিকে জ্বর কমে গিয়েছিল।রূপা আহমেদ থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু নূর থাকতে দেয়নি।জোর করেই অফিসে পাঠিয়েছে।
গাড়ি নিয়ে আসছিল পৃথক, রাস্তায় লালচে রঙের জামা পড়ে নূর কে দেখে গাড়ি থামিয়ে দিল সে।
নূর কে ফার্মেসীতে দেখে চিন্তার ভাঁজ পড়লো পৃথকের কপালে,গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো ফার্মেসীতে।
“নূর!”

হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠে ভড়কে গেলো নূর।ঘাড় ফিরিয়ে দেখছ পৃথক দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম দিকে একটু ভয় পেলেও তা পরক্ষণেই কে’টে যায়।
“ও আপনি?”পৃথকের চোখ দুটো আটকে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমণীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখটির দিকে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে,মলিন মুখ খানি। শরীর দেখে যে কেউ বলে দেবে,বেশ দূর্বল সে।
“আপনি!”

পৃথক চট করে নূরের কপালে হাত রাখলো, জ্ব’রে গা পু’ড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা।
“জ্বর উঠেছে তো! এখানে কেন?”

নূর ফুস করে শ্বাস টেনে বললো।
“মাথা ব্যথা করছে খুব তাই মেডিসিন নিতে এসেছিলাম।”

পৃথক চট করে নূরের হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে।
“তাড়াতাড়ি উঠ আমি আমার পরিচিত ভালো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।”

নূর আপত্তি জানালো।
“না না ডক্টরের কাছে যেতে হবে না, আমি বরং শুধু মাথা ব্যথার ওষুধ নিয়ে নি তাহলেই হবে।”

পৃথক দাম্ভিকতার সাথে বলল।
“চুপচাপ গাড়িতে বস,আর একটাও কথা শুনতে চাই না।”

নূর আর কিছু বলল না গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি গিয়ে থামলো হসপিটালের সামনে।
ডক্টরের চেম্বারে গেলো দু’জনে,পৃথক চৌধুরী কে দেখে ডক্টর আফজাল হোসেন।
“হ্যালো মিস্টার পৃথক, কেমন আছেন?”
“হাই ডক্টর,জ্বি ভালো আছি তবে,,
“কী হয়েছে মিস্টার পৃথক?”
“আসলে সি ইজ মাই ওয়াইফ মিসেস নূর চৌধুরী, ওনার একটু শরীরটা খারাপ। আপনি যদি একটু দেখে নিতেন!”

“জ্বি অবশ্যই,হ্যালো মিসেস চৌধুরী। আপনি এখানে বসুন।”

নূর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পৃথকের দিকে,লোকটা নিতান্তই বেয়াদব তা হলে সবসময় গোপনে তার সাথে ওমন করতো? এইতো বেশ তাকে বউ বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, তাহলে আগে কেন ওমন করতো? শয়’তা’ন একটা।
ডক্টর নূর কে ভালো করে দেখলেন,তার পর কিছু ওষুধ লিখে দিলেন।পৃথক বেরিয়ে গিয়ে ওষুধ গুলো হসপিটালের ফার্মেসী থেকে ওষুধ গুলো নিয়ে নেয়।
সেই দিন আর ও বাড়িতে ফিরতে দেয়না পৃথক নূর কে, চৌধুরী মহলে নিয়ে গেলো।
নূরের জ্বর শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে নূরজাহান চৌধুরী,পৃথক কে বার বার করে জিজ্ঞেস করেছে ডক্টরের কাছে গিয়েছিল কী না? পৃথক ওনার হাতে ওষুধ গুলো তুলে দিলেন।
নিমু নূর কে পৃথকের রুমে নিয়ে গেল, বিছানায় শুয়ে দেয়। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে রইলো নূর, নিজের অজান্তেই ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করে।
রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই অবস্থা পৃথকের বুকে নূরের গরম নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে।ঘুম ভে’ঙ্গে গেল নূরের,এপাশ ওপাশ করছে সে। একটুও শান্তি লাগছে না তার, জ্বর যেনো ভেতর থেকে চেপে ধরেছে তাকে। শরীরের ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নূর।
কান্নার শব্দে নড়ে চড়ে উঠলো পৃথক,হাতরে বেড সাইড লাইটের সুইচ অন করলো। তীব্র আলো চোখে পড়তেই চোখ দুটো খিঁচিয়ে বন্ধ করে নেয়।
“কী হয়েছে?নূর! কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে।”

নূর কেঁদেই চলেছে, পৃথক আলগোছে জড়িয়ে ধরে তাকে, নূরের শরীরের সব উষ্ণতা শুষে নিচ্ছে সে। অনুভব করতে পারছে নূরের কাঁপুনি।
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পৃথক ভাই, ভালো লাগছে না একটুও।”

পৃথক নূরের কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয়, মনে মনে ভাবে নূর কে এভাবে আর রাখা যাবে না।গা ধুইয়ে দিতে হবে,এই রাতবিরেতে কাউকে রাখতেও পারবে না।ওয়াশরুম থেকে পানির বালতি নিয়ে আসে পৃথক,একে একে নূরের পড়নের জিন্স প্যান্ট এবং টপ্সটা খুলে দিলো।নূর জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে আছে, পৃথক নূরের গা ধুয়ে দেয়। অতঃপর নতুন একটা জামা পরিয়ে দিলো নূর কে পৃথক।
রাত প্রায় আড়াইটার সময় জ্বর ছাড়লো নূরের, মেয়েটা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে,ওর পাশেই বালিশে হেলান দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পৃথক।
___________
“এই নিন আপনার নাস্তা।আর শুনেন মা বাবা খালার বাসায় গিয়েছে, যাওয়ার সময় বলেছে চিন্তা না করতে।”

খাবারের প্লেট সেন্টার টেবিলের উপর রেখে কথা গুলো বলল শাহা।সোহান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল, শাহা কে দেখে কাছে এগিয়ে গেলো।হাত ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
“তাহলে তো আজ রোমান্স করার খুব বড় সু্যোগ পেয়েছি তাই না!”

শাহা মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“জ্বি না, অফিসে যেতে হবে ভুলে গেছেন?”
“উঁহু যাবো না অফিসে।”
“কাল মা বলেছিল নূর নাকি খুব অসুস্থ। দেখতে যাবো ভাবছি।”

সোহান হাত ঘড়ি দেখে নিল।
“এখন নয়টা বাজে, তুমি চারটার দিকে রেডি থেকো আমি এসে নিয়ে যাবো।”

শাহা বেজায় খুশি হলো।
“সত্যি!”
“জ্বি।”
“আই লাভ ইউ।”
“লাভ ইউ টু।”

মুখের উপর সূর্যের আলো পড়তেই তন্দ্রা কে’টে যায় নূরের,শোয়া থেকে উঠে বসলো সে।মাথা চেপে ধরলো, জ্বরটা নেই তবে শরীর বেশ দূর্বল লাগছে তার।
“উফ্,এত ক্লান্ত লাগছে কেন?”

মাথা নিচু করে নেয় নূর, নিজের পরণে কলাপাতা রঙের জামা দেখে চমকে উঠে সে। এগুলো তো সে পড়েনি! ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো বিছানার কাছে নিচে বালতি রাখা আছে, তাতে পানিও আছে। পাশেই পৃথক কে উল্টো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সব কিছু বুঝতে পারে নূল। মূহুর্তে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, ভেতরে ভেতরে কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছে।বুকের ধুকপুক শব্দ তীব্র হচ্ছে। লজ্জা ভয় সব কিছু মিলিয়ে একাকার অবস্থা নূরের,সে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।ঘাড়ে তপ্ত শ্বাস পড়া মাত্র শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে চলতে লাগছে নূরের।
“এত লজ্জা?”

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক করে শ্বাস টেনে নেয়।পৃথকের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার।
“জ্বর কমেছে বউ জান?”

নূর পারলো না দাঁড়াতে,ত্বরিতে পৃথক কে পাশ কা’টিয়ে বেরিয়ে গেলো।

পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে,বাগানে বসে ছিলেন সাফিন চৌধুরী,কিয়ৎক্ষণ পূর্বে রূপা আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে ওনার,ওরা দুজনে ঠিক করেছে পৃথক এবং নূরের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়ার।

বড় একটা গাড়ি এসে থামে গেটের কাছে,গাড়ি থেকে নেমে আসে সোহান এবং শাহা। ওদের দেখে অন্তত খুশি হয় সাফিন চৌধুরী।

“তুই ঠিক আছিস?”

শাহার রুমেই ছিলো নূর,শাহার প্রশ্ন শুনে মিষ্টি হাসি টানে অধরে।
“হুম রে, আমি এখন অনেকটাই সুস্থ আছি।”
“জ্বি সুস্থ তো থাকতেই হবে আমার ভাই যে এত যত্ন নিচ্ছে।”

নূরের প্রচন্ড রকম লজ্জা লাগে,সে আজ মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে একদম পৃথকের সামনে যাবে না।এত কিছু হওয়ার পর কী করে তাকে মুখ দেখাবে? ইস্ কী লজ্জা। উফ্ এই পৃথক ভাইও না কী যে করে?

সন্ধ্যার দিকে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া হয় সবার, নূর শাহা,নিমু এবং নূরজাহান চৌধুরী একই রকম শাড়ি পড়ে।আর ছেলেরা একই রকম পাঞ্জাবি গায়ে তুলে। সবাই মিলে ফটোশুট করে।
এসবের মধ্যে পৃথক তার বউ জান কে শাড়িতে দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে। মেয়েটা একটু বেশি রূপবতী তা তো আগে দেখেনি। উফ্ মেয়েটা পা গল করে ছাড়বে,আজ তো আর ওকে ছাড়া যাবে না।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে যেতেই লাইট অফ হয়ে গেছে,ভয় পেয়ে গেছে নূর। রুমে আরো একজনের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে সে।
“কে?”

নূর জিজ্ঞেস করা সত্বেও কোনো শব্দ শুনা গেল না,নূর তেমন একটা পাত্তা দিলো না। হঠাৎ কেউ ঘাড়ে হাত রাখা মাত্র শিওরে উঠে নূর।
“পৃথক ভাইইই!”

চেঁচিয়ে উঠে নূর।
“হুস, আস্তে আমি।”
“আপনি!”পৃথক ফিক করে হেসে উঠলো
“ভয় পেয়েছিস?”

নূর মাথা নাড়িয়ে বলল।
“হুম, খুব।”
“উঁহু ভয় পেতে হবে না।”

কিয়ৎক্ষণ চললো নিরবতা। পৃথক তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নূরের থুতনি ধরে মুখটা একটু উঁচু করলো।
“সকাল থেকে আমার সামনে আসছিস না কেন?”

নূরের নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগছে খুব। পৃথক ফের বললো,তবে এইবার কাতর স্বরে বলে।
” আমি তোকে খুব ভালোবাসি,”আমাকে ভালোবাসিস না?”

নূরের বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে,সে তো তার পৃথক ভাই কে পাগলের মত ভালবাসে।

চলবে…………।✨