#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৭
গম্ভীর মুখে বসে আছে সবাই বসার ঘরে।
কিন্তু সাদু আর আলিশা মুখ চেপে হাসছে অনেক কষ্টে তারা হাসি থামিয়ে রেখেছে।
আরিফ কোমড় ধরে বসে আছে আর ওর কোমড়ে হট ব্যাগ দিয়ে ছ্যেক দিচ্ছে আলিফা।
আফরান তো এখনো শক্ত চোখে নূরের দিক তাকিয়ে। আর নূর আফরানের দৃষ্টি উপেক্ষা করতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
মেরাজ এখনো কাঁদো মুখ নিয়ে বসে আছে।মিম মেরাজের দিকে তাকালেই ওর হাসি থামাতে কষ্টে কলিজা ফেটে যাচ্ছে।
মনির গম্ভীরমুখে বসে আছে।
নিবিড় এখনো সবকিছু বুজে উঠতে পারছে না আসলে একটু আগে হলোটা কি?
মেরাজ সবার নিরবতা কাটিয়ে কাঁদো গলায় বলে,
–” আচ্ছা নূর তুমি ওই কিচেনের কাবার্ডে কি করছিলে?”
নূর এদিক-সেদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো।সে কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ।
–” আসলে ভাইয়া হয়েছে কি আসলে ওইযে,,”
আফরান ধমকে উঠে বলে,
–” আসলে ওইযে করছো হ্যা ডিরেক্ট বলো তুমি ওখানে কি করছিলে?”
নূর গেলো রেগে।ধপ করে উঠে বসে সে আফরানের দিকে শাসিয়ে গিয়ে বলে,
–” আমাকে ধমকাচ্ছেন কেন হ্যা?সাদু আর বাকিরা সবাই জানে সে মাঝরাতে আমার ক্ষুদা লাগে তাই আমি কিচেনে খেতেই গিয়েছিলাম তারপর মেরাজ ভাইয়া আসে।আর হঠাৎ জ্ঞান হারায় আমি উনাকে দু-তিনবার ডাক দেই কিন্তু সে উঠে না তারপর আপনার গলার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে কাবার্ডে ডুকে পড়ি।
আর সেখানে তেলাপোকা আমার চুলে উড়ে এসে পড়ার পড়েই আমি ভয়ে দৌড় দেই তারপরেই এই কান্ড।”
রেগে একদমে কথাগুলো বলে থামে নূর।আফরান বলে উঠলো,
–” তাই বলে এভাবে আমার কাঁধে বানরের মতো ঝুলে পড়বে হ্যা?”
আফরানের কথায় সাদু আর আলিশা নিজের হাদি থামিয়ে রাখতে পারলো না গগন ফাটিয়ে হেসে উঠে।
ওর সাথে হাসছে মিম আর আলিফাও নূর কাঁদো মুখে তাকিয়ে।
আলিফা হঠাৎ হাসার মাঝেই আরিফের কোমড়ে জোড়ে চাপ দিয়ে ধরে হট ব্যাগ।আরিফ ব্যাথাতুর আওয়াজ করে উঠে বলে,
–” উফফ! আস্তে আস্তে আজকে আমার কোমড় আর নেই আল্লাহ্। ”
–” আচ্ছা সরি হ্যা!” আলিফা ঠোঁট চিপে হাসছে।
আলিশা ভ্রু-কুচকে নূরকে বলে,
–” নূর তুই তো তেলাপোকা ভয় পাস না।তাহলে কেমনে কি?”
নূর হতাশ গলায় বলে,
–” আর কইছ না বইন। এই তেইল্লাচোরা ইস তেইল্লাচোরা নান ওফ মাই তেইল্লাচোরা।সো তেইল্লাচোরা হোয়েন ফ্লাই করিং তো আমার আত্মা সাত আসমানে উঠে যায়িং।”
নূরের এমন ইংলিশ আর কথা শুনে সবার মাথা ঘুরে পড়ে যাবার উপক্রম।আফরান অবাক দৃষ্টিতে বলে,
–” এইগুলা কি ছিলো?”
মনির বিরক্তির স্বরে বললো,
–“ভাই এসব বলে লাভ নেই।ওরা পাগল তাই পাগলের কথা কান না দিয়ে তোরা ঘুমোতে যা অনেক রাত হয়েছে।আর কাল ভার্সিটি যেতে হবে।”
সবাই সহমত জানালো আসলেই অনেক রাত হয়ে গেছে তাই সবাই যার যার রুমে ঘুমোতে চলে গেলো।
পরেরদিন সকালে,,,,,
ভার্সিটির মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে মনির, আফরান,নিবিড়,আরিফ আর মেরাজ।আজ ভার্সিটিতে আসতে সবার লেট হয়েছে।কাল ওইসব কান্ড মনে পড়লে এখনো হাসি পায় ওদের।
ওদের থেকেই কিছুটা দূরে দাঁড়ানো সাদু,নূর,আলিশা,আলিফা আর মিম।
ওরা কথা বলছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।ওদের কথার মাজেই সাদুর ফোনে কল আসে আলম সিকদারের।এই সময়ে নিজের বাবার কল পেয়ে ভ্রু-কুচকে তাকায় সাদু।ফোন রিসিভ করে বলে,
–” আসসালামু আলাইকুম আব্বু!”
–” ওলাইকুম আসসালাম। কি করে আমার আম্মুটা?”
–” আমি ভার্সিটিতে বাবা।”
–” আফরান আর নিবিড় কোথায়?”
সাদু কিছুটা দূরে নিজের ভাইদের দিক তাকিয়ে বলে,
–” এইতো মাঠে আড্ডা দিচ্ছে কেন বাবা?”
–” ওহ ক্লাস নেই?”
–” নাহ আজ কিসের যেন মিটিং হয়েছিলো তাই ক্লাস হয়নি।”
–” ওহ তাহ আফরানের কাছে একটু যেতে পারবি?”
–” হ্যা যাচ্ছি দাড়াও।”
সাদু কান থেকে ফোন সরিয়ে বাকিদের ইশারা দিলো ওর সাথে যেতে।তারপর সাদু আফরানের কাছে গেলো ওর পিছে পিছে বাকিরাও আসলো।
সাদু নিজের ফোনটা আফরানের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
–” ভাইয়া আব্বু ফোন দিয়েছে নেহ কথা বল।”
আফরান ভ্রু-কুচকে বলে,
–” আমার ফোনে কি হয়েছে যে তোরটায় কল দিলো।”
আফরান নিজের ফোন বের করে দেখে সাইলেন্ট করা আর আলম সিকদারের ৬ টা মিস্ডকল।
–” ওহ সিট! আব্বু হয়তো এইজন্যেই তোকে কল দিয়েছে। দে আমাকে ফোন দে।”
সাদু ফোনটা এগিয়ে দিলো।আফরান ফোন কানে নিয়ে বলে,
–” হ্যা আব্বু বলো?”
–“বাসায় আয় আজকে আর বাকিদের কেও নিয়ে আসিস।আর হ্যা সাদুকেও বলিস বাকিদের নিয়ে আসতে।”
–“কেন আব্বু?”
–” জড়ুরি কথা আছে। আয়।”
–” কি এমন জড়ুরি আব্বু?আজ সকালেই তো ওখান থেকে আসলাম।”
–” উফফ! ফোনে বলা যাবে নাহ তুই বাড়িতে আয়।”
–” আচ্ছা আসছি।”
আফরান ফোন রাখতেই সাদু জিজ্ঞেস করে,
–” কি হয়েছে ভাইয়া?”
–” জানিনা রে আব্বু জলদি বাসায় যেতে বললো সাথে সবাইকে নিয়ে যেতে বললো।”
নিবিড় বলে উঠলো,
–“সকালেই তো ওখান থেকে আসলাম?”
–” হ্যা কিন্তু জানিনা কি বলে দরকারি কথা বলবে।” আফরান চিন্তিত কন্ঠে বলে।
আরিফ বললো,
–” কিন্তু আমাদেরকে কেন যেতে বললো?”
–“উফফ! এতো সব প্রশ্ন করে লাভ আছে?ওখানে গেলেই জানতে পারবো।”
মনিরের কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু মনিরের হালকা ভয় লাগছে আবার কি হলো হঠাৎ? আলম সিকদার আবার কোন কারনে তার উপর অসন্তুষ্ট হয়নি তো?কিন্তু কাল তো সব ঠিকিই ছিলো।
ওতোশতো না ভেবে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে চললো।
—————
–” কি হয়েছে আব্বু ডাকলে কেন আমাদের সবাইকে?”
সাদু প্রশ্নে চোখ তুলে তাকায় আলম সিকদার।শ্বাস ফেলে বলে উঠেন,
–” দেখ সাদু আমি যা বলি মন দিয়ে শোন”
–” আচ্ছা!”
সবাই মনোযোগ সহকারে তাকালো।
আলম সিকদার বলছেন,
–” দেখ ভাগ্যে যা হয় আমরা তা কল্পনাও করিনা কিন্তু আমাদের সাথে তা ঘটে যায়।এবং তা পরিবর্তন করা আমাদের কারো সাধ্য নেই।কি আছে বল?”
সাদু মাথা নাড়ায় মানে নেই।কথায় আছে না, ‘ ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন’ ঠিক তেমনটাই।
–” তাই তোকেও তোর ভাগ্যে যা আছে তা সাদড়ে গ্রহন করে নিতে হবে।এইযে তোর আর মনিরের বিয়েটা এইভাবে হয়ে যাবে কেউ কি আমরা ভেবেছি?”
সাদু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তার বাবা হঠাৎ এইসব কথা কেন বলছে সেটাও বুজতে পারছে নাহ।মনির মাথা নিচু করে বসে আছে।তার মাথায়ও একই প্রশ্ন চলছে।
–” আমি চাই তুই মনিরকে মেনে নেহ মা।”
সাদু আহত দৃষ্টিতে তাকায়।সে বুজতে পারছে না সবাই এমন হাত ধুয়ে কেন পড়েছে তার পিছে যেন সে মনিরকে মেনে নেয়।আরে সেতো ভালোবাসে তাই নাহ? কিন্তু একটা সম্পর্কে বিশ্বাসটা অনেক জড়ুরি যা ওদের সম্পর্কে অনেক কম।আর এই বিশ্বাসটা যেন ওদের মাঝে আরো দৃঢ় হয় সাদু সেটাই চাচ্ছে কিন্তু কেউ তা বুজতেই পারছে নাহ।
সাদু শক্ত কন্ঠে বলে,
–” আমার সময় লাগবে আব্বু।”
–” আমি বুজতে পারছি মা তোর মনের অবস্থা।তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোদের দুজনের জন্যে।”
মনির শ্বাস আটকে বসে আছে কি বলবে আলম সিকদার সেটার কথা ভেবে।মনির আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার বুকটা ধুক-পুক করছে।
–” কি সিদ্ধান্ত আব্বু?” সাদু প্রশ্ন করে।
–” তোকে আমি বিদেশ পাঠিয়ে দিবো।
তুই সেখানেই থাকবি দেশে পাঁচ বছর পর ফিরে আসবি তারপর তোকে আর মনিরকে বিয়ে দিবো।
সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।একি বলছেন আলম সিকদার।মনিরের যেন মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।সাদুর চোখেও জল টলমল করছে।হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আলম সিকদার হেসে দিলেন।
–” আমি মজা করছিলাম এমন কিছুই করবো না
।”
উনার হাসি দেখে সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেললো।মনিরের বুক থেকে যেন ভারি কোন পাথর সরে গিয়েছে।ইসস একটুর জন্যে তো সে মরেই যাচ্ছিলো।
#চলবে,,,,