#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৮
বলে না অতি আনন্দে মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
মনিরের অবস্থা ঠিক তেমন।সে ভাবতেই পারেননি আলম সিকদার এমন কিছু বলবে।যখন আলম সিকদার বললেন, ‘ মনির আমি তোমার আর সাদিয়ার বাগদানটা সেরে ফেলতে চাই।বিয়েটা হয়েছে আমরা জানি কিন্তু অন্যরা তো জানে নাহ?তাই আমি চাইছি আনুষ্ঠানিকভাবে তোমাদের বিয়ের সব কিছু করতে।আপাততো বাগদানটা সেরে ফেলি তারপর সাদুর অনার্স শেষ হলে না হয় বিয়ে হবে।”
এই কথাটা শুনে মনির স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।সাথে সাদুও। নূর, আলিশা, আলিফা, মিম তো রিতিমতো নাচানাচি স্টার্ট করে দিয়েছে।
আলম সিকদার ওদের কান্ড দেখে হেসে দিয়ে বললো,
–” আরে বাচ্চারা থাম তোরা। আগে আমার পুরো কথাটা তো শুন।”
আফরান হাসি মুখেই বলে,
–” আর কি বলবে বাবা?”
–” আমি চাইছি সাদিয়া আর মনিরের বাগদানটা তোর দাদাবাড়িতে করতে।”
নিবিড় চিল্লিয়ে উঠে বললো,
–” মানে কুয়াকাটা!”
–” হ্যা!” আলম সিকদার মুচকি হেসে বললো।
–” ইয়েহুউউউ অনেক মজা হবে।” সবাই হৈ হৈ করে উঠলো।
আরিফ সবার আগোচড়ে আলিফার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো।
আলিফা চারপাশে তাকালো না সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত।আলিফা চাপা আওয়াজে বললো,
–” কি হয়েছে?”
আরিফ মুখ ভার করে বললো,
–” মনির নিজের মনের কথা প্রকাশ না করে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেললো।আর আমি তোমাকে প্রোপোজ করলাম আমরা রিলেশনশিপে আছি আর এটা আমার ফ্যামিলি আর তোমার ফ্যামিলিও জানে তাহলে আমাদের বিয়েটা দিচ্ছে না কেন? দিছ ইজ নট ফেয়ের হাহ্।”
আলিফা চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আরিফ মৃদু আওয়াজে বলে,
–” কি হলো এভাবে তাকাও কেন?”
–” আপনি একটা লুচু কিসব বলছেন।আমি তো ভেবে রেখেছি আমার অনার্স শেষ না হওয়া অব্দি নো বিয়ে।
আর আমরা পাঁচ বান্ধবী বিয়ে একসাথে করবো।
আর আপনি এতো অস্থির হচ্ছেন কেন?হ্যা! আপনার আর আমার তো বাগদান হয়ে গেছে তাই নাহ?”
আলিফার কথায় আরিফ ঠোঁট উলটে বসে রইলো।
আলিফা নিঃশব্দে হাসলো।এই ছেলেটাকে ছাড়া তার এক বিন্দুও চলে নাহ।ছোট বেলা থেকেই যারপ সাথে ঝগরা বিবাদ করতো তার প্রেমেই কিভাবে পড়লো সে নিজেই জানে নাহ।যেদিন আরিফ তাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলো সেদিন আলিফা খুশিতে যেন ভাষা হারা হয়ে গিয়েছিলো।লোকটাকে ও কতোটা ভালোবাসে তা বলে বুজানো সম্ভব নাহ।
মুচকি হাসি লেগে আছে আলিফার ঠোঁটে।
এদিকে আলম সিকদার চলে গেলেন এখন আর বাচ্চাদের মাজে তার থেকে লাভ নেই তাই।
আলম সিকদার যেতেই সাদু দৌড়ে চলে গেলো বাড়ি থেকে বাগানের দিকে।
মনির হতাশার এক নিশ্বাস ফেললো।এতোটা আনন্দের মাজেও তার বুকে একচাপা যন্ত্রনা আছে যা সব আনন্দে মাটি করে দেয়।
নূর নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাইটা যে তার বেষ্টফ্রেন্ডকে বড্ড ভালোবাসে।
নূর মনিরের পাশে গিয়ে ওর কাধে হাত দিলো।মনির পাশ ফিরে তাকালো।
–” চিন্তা করিস না ভাইয়া।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মনির আকুলতা ভরা গলায় বলে,
–” তাই যেন হয় নূর।”
–” নো টেন্সন ডু ফুর্তি।আমরা কাল সকালেই রওনা হবো।কয়দিন ঘুরবো না?অনেক মজা হবে।এর মাঝে তুই সুন্দর একটা সার্প্রাইজ প্লান করে সাদুকে প্রোপোজ করে দিবি।”
মনিরের মন মুহূর্তেই খুশি হয়ে গেলো।আনন্দিত কন্ঠে বললো,
–” হ্যা তাই ঠিক হবে। বল তুই কি চাস আমার কাছ থেকে?”
নূর মুচকি হাসলো বললো,
–” আমারটা আমি সময় মতো চেয়ে নিবো।”
নিবিড় খুশিতে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।সে এখনই সব প্লান করছে কি করবে না করবে সব।
–” শোন মেরাজ আর আফরান আমরা কিন্তু একরকম পাঞ্জাবি বানাবো।তারপর একরকম হেয়ারস্টাইল বুজেছিস মানে সবাই একরকম সাজে সজ্জিত হবো।”
আফরান আর মেরাজ ভ্রু-কুচকে ওর কথা শুনছে।
আলিশা আর মিম, নূর ওদের কাছে গেলো।
আলিশা নিবিড় এর সব কথাগুলো শুনে বললো,
–” আপনি কি মেয়ে?”
নিবিড় কথার মাজে থতমত খেয়ে বললো,
–” মানে?! ”
–” মানে বললাম যে আপনি কি মেয়ে?”
নিবিড় উঠে দাড়িয়ে রাগি গলায় বলে,
–” আমাকে দেখে কি তোমার মেয়ে মনে হয়?তোমার কি চোখে সমস্যা?”
–” আমার চোখে সমস্যা না আমি ঠিক আছি।”
–” তাহলে এসব কি বলছো?”
–” না মানে আপনি যেভাবে বাগদানের জন্যে প্লানিং করছেন সেইভাবে তো মেয়েরা প্লানিং করে।তাহলে নিশ্চয়ই আপনি আগের জন্মে মেয়ে ছিলেন?”
সবাই আলিশার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে।
–” তুমি এইসব ফালতু কথা কোথা থেকে পাও?”
–” আপনি যেভাবে আগের জন্মে মেয়ে থেকে এখন ছেলে হয়েছেন।কদিন পর দেখা যাবে আপনি প্রেগনেন্ট!”
–” ওয়াট দ্যা হেল! তুমি কি ঠিক আছো!” নিবিড় রেগে মেগে একাকার।
এদিকে সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
নিবিড় রাগি চোখে তাকালো কিন্তু মুহূর্তেই সব রাগ যেন উধাও হয়ে গেলো।পলকহীন ভাবে আলিশার দিকে তাকিয়ে আছে সে।গোল্ডেন আর রেড কালারের কম্বিনেশনে একটা একটা গোল চুরিদার জামা পড়া।চুলগুলো ছাড়া সামনের কিছু চুল গোল্ডেন আর রেড কালার বেবি ক্লিপ দিয়ে আটকানো,চেহারায় কোন মেক-আপ নেই শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁট হালকা লিপ্সটিক।
কেন যেন এই অতি সাধার সাজে আলিশাকে অসাধারন লাগছে নিবিড়ের কাছে।
হঠাৎ কাধে কারো ধাক্কা দেওয়াতে হুশ আসে ওর।
–” কিরে ভাই কি দেখিস এইভাবে?”
আরিফের কথায় নিবিড় থতমত খেয়ে যায়।
ইসস! সে কি রকম বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো আলিশার দিকে।
নিবিড় আমতা আমতা করে বললো,
–” নাহ নাহ কিছু না।”
–” আমাকে মিথ্যে বলিস প্রেমে টেমে পড়লি না-কি আবার?”
নিবিড় মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো,
–” কিসব বলছিস?আমি আর প্রেম ইম্পসিবল।আমার দ্বারা এসব কখনো হবে নাহ।”
আরিফ হেসে দিয়ে নিবিড় এর কাধে হাত রাখলো।বললো,
–” ভাই এই কথা আমিও বলতাম! ইনফেক্ট এটাই দেখ আমি যেই মেয়েকে সয্যই করতে পারতাম নাহ
এখন সেই মেয়েকে আমি আমার চোখের সামনে না দেখলে মনে হয় এই বুজি আমার প্রাণ পাখিটা দেহ ছেড়ে উড়াল দিলো।”
নিবিড় মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো।
আচ্ছা! এমনটা কি কখনো হবে?ওহ কি প্রেমে পড়বে কারো।আর সেই মানুষটা কি আলিশা হবে?
নিবিড় আড়চোখে তাকালো আলিশার দিকে।
মেয়েটা কথা বলছে মিম,আলিফা আর নূরের সাথে।কথা বলার মাঝে হঠাৎই যখন খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।নিবিড়ের হৃদয়টাও বুজি সেই ঝংকারের তালে তালে নৃত্য করতে মত্ত হলো।
নিবিড় আনমনেই নিজের বুকের বা-পাশে আকড়ে ধরলো বললো,
–” ইসস! কি নিষ্ঠুর!!”
ভুলক্রমে আরিফ কথাটা শুনে ফেললো।বাকা হেসে বলে সে,
–” কি সাহেব? বুকে ব্যাথা করে?”
নিবিড় আনমনেই বলতে থাকে,
–” হ্যা!”
–” শুধু তাকিয়েই থাকতে মন চায় তাই নাহ?”
–” হ্যা!”
–” হার্টবিট বেড়ে যায়?”
–” হ্যা!”
–” কোংগ্রাচুলেশন দোস্ত ইউ আর ফল ইন লাভ।”
কথাটা আরিফ নিবিড়ের কানের কাছে একটু জোড়েই বলেছে যার ফলে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে নিবিড়।
অপ্রস্তুত গলায় বললো,
–” কে প্রেমে পড়েছে?”
–” কেন তুই!” হাসি মুখে বলে আরিফ।
–” এমনটা মোটেও না বাদ দে তোর আজগুবি কথা আমি আসছি।”
নিবিড় যতো দ্রুত সম্ভব জায়গা ত্যাগ করলো।সেদিকে তাকিয়ে নিশব্দে হাসলো আরিফ।
–” বন্ধু আমার প্রেমে পড়েছে।কিন্তু স্বিকার করতে চাইছে না আমাকেই কিছু করতে হবে।”
————
সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে সাদু।মনটা একদিক দিকে আনন্দে নেচে উঠছে অন্যদিকে কেমন যেন মন খারাপ লাগছে। আচ্ছা! কেন লাগছে তার মন খারাপ?তার তো খুশি হওয়ার কথা।
তবে কিসের এতো অস্থিরতা?ভাবনার মাজেই নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো সাদু।সে ভালোভাবেই জানে লোকটা মনির।সাদু নড়লো না যেমন ছিলো সেইভাবেই বসে রইলো।
অনেক্ষন নিরবতা কাটিয়ে মনির নিজেই বলে,
–” মন খারাপ?”
সাদু চোখ বন্ধ করে ফেললো।এই লোকটার কথাগুলোতেও মাদকতা।কেমন যেন নেশা ধরে যায়।মন চায় বলতে ‘ আপনি আমার সামনে বসে কথা বলুন আমি শুনতে থাকি।’ কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারে নাহ সে।
সাদুকে চুপ থাকতে দেখে মনির আবার বলে,
–” বললে না যে মন খারাপ?”
–” উহুঁ!”
–” তেমনটাই তো লাগছে।”
–” আপনি আবার আমার মন পড়তে পারেন জানতাম না তো।”
–” ভালোবাসি তাই বুজি।”
–” ওহ আচ্ছা! ভালোবাসলে বুজি ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করে কেউ?”
মনির কথাটা শুনে মাথা নিচু করে ফেললো।সে জানে সে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে তার প্রিয়তমাকে কিন্তু কিছু করার নেইযে।
রাগের মাথায় করা ভুলটা তো আর বদলানো যাবে নাহ?
–” ভালোবাসি উম্মি।”
এই একটা কথা এই একটা কথা।সাদুর সব কিছু এলোমেলো করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।অভিমানে গড়া শক্ত পাথরের দেয়ালটা একনিমিষে ভেঙ্গে দেয়।সাদুর চোখে জল এসে জমলো।এই বুজি কান্নাগুলো ঝড়ে পড়বে কিন্তু ও কাঁদতে চায় নাহ।সে নিজেকে দূর্বল দেখাবে না।সাদু হুট করে দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে গেলো।আর সেদিকেই তাকিয়ে আছে মনির।আর কতোটা কাঠখোড় পোড়াতে হবে তাকে তার অভিমানির অভিমান ভাঙ্গাতে কে জানে?
#চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।