ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০৬

0
863

#ভালোবাসার _রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️
#পার্টঃ০৬
গভীর রাত সবাই ঘুমে মগ্ন,এদিকে একজনের ক্ষুদায় প্রাণ ধুকপুক করছে।

–” উফ! খুদার চোটে আর ভাল্লাগছে নাহ।
ওহ মাই আল্লাহ্ আমি এখন কি করবো?” ঠোঁট ফুলিয়ে বলে নূর।

নূর রুমের চারদিকে পায়চারি করতে লাগলো।অবশেষে ভেবে বলে,

–” নাহ! এখন সবাই ঘুমে আমাকে কেউ দেখবে নাহ।এই সুযোগে আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে খেয়ে এসে দিব্বি ঘুম দিবো।”

নূর তিড়িংতিড়িং করে নাঁচতে নাঁচতে চলে গেলো নিচে রান্নাঘরে।সুন্দরভাবে ফ্রিজ ঘুলে কিচেনে যেই টেবিল আছে ওইটায় বসে পড়লো গপাগপ মিষ্টি গিলছে সে।

———————
–” আফরান দোস্ত! উঠ না! এই উঠ!” মেরাজ ডাকছে আফরানকে।

আফরান বিরক্তি নিয়ে বলে,

–” উফফ কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেন? ঘুমাতে দে।”

–” দোস্ত উঠ পানি পিপাসা পেয়েছে উঠ।”

–” তো যেয়ে একা খেয়ে আয়।আর একমিনিট টেবিলের সাইডে পানি নেই?” আফরান চাপা ধমকে বললো।

মেরাজ ঠোঁট উলটে মাথা এদিকসেদিক নাড়িয়ে বুজালো মানে নেই।তারপর বললো,

–“প্লিজ দোস্ত চল।”

আফরান বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো।খুব সাবধানে খাট থেকে নেমে দাড়ালো। ওরা সবাই একসাথেই ঘুমিয়েছে।এইটা একটা এক্সট্রা রুম এখানে বিশাল আকৃতির একটা বিছানা পাতানো আছে যাতে ওরা পাঁচজন অনায়াসে ঘুমোতে পারে।
এখানে ওরা তখনি আসে যখন ওরা পাঁচজন একসাথে হয়।সাদুদের জন্যেই ঠিক একইভাবে বানানো হয়েছে ওরা আসলেও একসাথেই ঘুমোয়।

আফরান আর মেরাজ রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামতে লাগলো।
মেরাজ এদিকসেদিক তাকিয়ে এক ঢোক গিললো।
তারপর আফরানের একহাত খামছে ধরলো।এতে আফরান হালকা ব্যাথা পেলো।
রাগকন্ঠে বলে,

–“সালা কি করছিস খামছি দিচ্ছিস কেন?”

মেরাজ ভয়ে আরো আফরানের সাথে লেগে গেলো তারপর বলে,

–” তোর সাথে আমারে চিপকা রাখ ভাই।
দেখা যাবে কোন দিক দিয়া কোন চুরেল এসে আমার ঘাড় মটকে দেয়।”

আফরান মেরাজের এমন ফাউল যুক্তি শুনে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালিয়ে বললো,

–” এখন তুই যদি আমার হাত না ছাড়িস তো আমি তোর ঘাড় মটকে দিবো।”

কথাটা একটু ভয়ানকভাবেই শোনা গেলো।মেরাজ লাফিয়ে আফরান থেকে দূরে সরে গেলো।
আফরান চোখ উলটে বলে,

–” আবার কি হয়েছে এমন ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কেন?”

মেরাজ তুতলিয়েই বললো,

–” তুমি আমার দোস্ত আফরান না তাই নাহ?
নিশ্চয়ই তুমি আমার বন্ধুর গায়ে ভড় করেছো?তাই তো আমার ঘাড় মটকে দেওয়ার কথা বললে।
দেখো চুরেলনি আমাকে ছেড়ে দেও।আমি নিস্পাপ ভোলাভালা মাসুম এক বাচ্চা।
এই নিস্পাপ একটা বাচ্চা মানুষকে না খেয়ে বরং তুমি আমার বন্ধুকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।
তারপর ওর সাথে যা মন চায় করো হয় প্রেম করো না হয় ঘাড় মটকে দেও।”

এদিকে মেরাজের কথায় আফরানের চোয়াল খুলে পড়ে যাবার উপক্রম শেষে কি-না ওকে চুরেল বানিয়ে দিলো? আফরানের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে একে তো গভীররাতে তাকে জোড় করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারপর আবার তাকে ডাকা হচ্ছে চুরেল।ইজন্ট ইট উইয়ার্ড?
আফরান মেরাজকে ধরতে গেলে মেরাজ ‘ ও বাবা গো’ বলে সিড়ি দিয়ে ভৌ দৌড়।
আফরান কতোক্ষন বেক্কল বনে চেয়ে থেকে সেও মেরাজকে ধরতে ছুট লাগালো।

–” চুরেলনি আমাকে ছেড়ে দেএএএএ।
আলতু জ্বালাল তু আয়ে বালাকো টাল তু।
হুসসস হুসস চুরেল নি ভাগ। ”

এইসব উলটা পালটা বলছে আর দৌড়াচ্ছে মেরাজ।
দৌড়াতে দৌড়াতে যখন সে কিচেনে ডুকলো দেখে সাদা ড্রেস পড়া একটা মেয়ের চেহারা স্পষ্ট বুজা যাচ্ছে না।বসার ঘরে হালকা আলোর একটা লাইট জ্বালানো সেইটার আলো দিয়ে খানিক বুজা যাচ্ছে যে এটা মেয়ে।
হাতে বড় একটা থালার মতো নিয়ে দাঁড়িয়ে।
মেরাজ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো।তারপর ধপ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
এদিকে কোন ছেলেকে এইভাবে ধপ করে পড়ে যেতে দেখে নূর হাতের মিষ্টির হাড়ি টেবিলে রেখে দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গেলো।
সে কাছে বসে ভালোভাবে মুখমন্ডল দেখে বুজলো এটা মেরাজ।
অবাক হয়ে বলে,

–” আরে এটা তো মেরাজ ভাই।
উনি অজ্ঞান হলেন কেন?বলা নেই কওয়া নেই ধপ করে পড়ে গেলো।”

–” মেরাজ কোথায় তুই সামনে আয় আজ তোর পশ্চাদে এমন লাত্থি দিমু আমি বিশ্বাস কর তোর চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দিমু।”

নূর হঠাৎ আফরানের গলার আওয়াজ পেয়ে ভড়কে গেলো। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে চিন্তিত স্বরে বলে,

–” এই রে আফ্রিকান পান্ডা আসছে এখন যদি সে আমাকে দেখে এইখানে তাহলে নিশ্চিত ক্যালাংকারি হয়ে যাবে।আর যদি জানে আমি রাতের বেলা চুপিচুপি তারই বাড়িতে মিষ্টি খাচ্ছি তাহলে আমাকে খোটা দিতে দিতে শেষ করে ফেলবে।আবার আরো বড় ঝামেলা হলো মেরাজ ভাইয়া অজ্ঞান হয়ে আছে। এখন আমি কি করি?”

নূর দু তিনবার মেরাজকে ধাক্কা দিলো কিন্তু মেরাজের উঠার নাম নেই।নূর আবাশ পেলো আফরান অনেকটাই কাছে এসে পড়েছে।উপায় না পেয়ে নূর কিচেনে কাবার্ডের মতো থাকে যেখানে নানান জিনিস রাখা হয় তা একটা একটা করে খুলে দেখলো অবশেষে একটা খালি পেয়ে তার ভীতরে ডুকে গেলো।আবার কিছু একটা মনে করে বের হয়ে টেবিলের উপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ডুকে পড়লো।

এদিকে আফরান মেরাজকে খুজতে খুজতে শেষ ওর ডাকাডাকিতে সাদুদের আর মনিরদের ও ঘুম ভেঙে গেলো।
আলম সিকদার আর ফরিদা আলম এবং খোকন মির্জার রুম একটু দূরে কিচেন থেকে তাই তারা শুনতে পাননি তাই উঠে আসে নি।
কিন্তু ওরা সবাই উঠে এসেছে।
সাদু কোনরকম হাতড়েহুতড়ে সিড়ি দিয়ে নেমে আসলো তারপর বসার ঘরের লাইট জ্বালাতে গিয়ে খাম্বার সাথে বাড়ি খাওয়ার আগেই মনির একটা হাত ওর কপাল বড়াবড় দিলো যাতে সাদু ব্যাথা না পায়।একহাতে সাদুকে সরিয়ে এনে অন্য হাতে লাইট অন করলো।
আকস্মিক আলো জ্বলে উঠায় সাদু দ্রুত চোখ বুজে ফেললো।
চোখ মুখ কুচকে গেলো তার।এদিকে মনির একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইসস! মেয়েটাকে মারাত্মক লাগছে।
লং সাদা টি-শার্ট সাথে নীল ধুতি পাজামা গলায় নীল স্কার্ফ পেঁচানো।
চুলগুলো এলোমেলোভাবেই হাত খোপা করা।চুল ব্যাঙ্গস্ হেয়ারকাট দেওয়ায় ছোট ছোট চুলগুলো কপাল জুড়ে আসে।ঠোঁট জোড়া ঘুমোনোর কারনে ফুলে আছে।
মনির বুজে পায়না এই মেয়েটার মাজে এতো মায়া কোত্থেকে আসে।
অনেকে বলে যে যাকে ভালোবাসে তাকেই তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরী লাগে।
মনিরের কাছেও তার ভালোবাসার মানুষটি সুন্দর আর তার মায়াবতী।অন্যের কাছে এখন যাই লাগুক।

নিবিড়ের কথায় ধ্যান ভাঙে মনিরের সাদুও চোখ মেলে তাকায়।

–” আব্বে সালা এই মেরাজের কি হলো?এইটা এমন চিটপটাং হয়ে পড়ে আছে কেন?”

আরিফ দ্রুত বলে,

–” আরে ওকে উঠা কি হলো ওর।আফরান তুই তো আগে থেকেই এখানে ছিলি বল তো কি হয়েছে?”

–” আরে আমি কিভাবে জানবো?
আমি তো ওকে খুজতে খুজতেই এদিকে এলাম।আর তোরা আসার পর লাইট জ্বালালি আর দেখি এ পড়ে আছে নিচে।”

–” তুই ওকে খুজতে আসলি কেন? তুই কিভাবে জানলি ও যে নিচে এসেছে?”

আফরান বিরক্তি নিয়ে মনিরের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে একটু আগে যা যা হয়েছে সব বলে।
সবাই হেসে দিলো।
মিম হতভম্ব ছেলে হয়ে কি-না এ ভূতে ভয় পায়?আজব ব্যাপার এতো বড় একটা দামড়া ছেলে?
ভাবতেই জোড়ে হেসে দিলো।ওর দেখা দেখি বাকিরাও হাসছে।
সাদু সবগুলোকে ধমকে বলে,

–” আরে হয়েছেটা কি?
মেরাজ ভাইয়াকে তোমরা না উঠিয়ে দাঁত কেলাচ্ছো কেন?ভাইয়াকে উঠাও।”

মনির,আফরান,নিবিড় আর আরিফ মিলে মেরাজকে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
তারপর আরিফ ওর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
পানি দেওয়ার কারনে চোখ পিটপিট করে তাকায় মেরাজ।
মুখের সামনে এতো গুলো মানুষকে ঝুকে থাকতে দেখে ভড়কে যায় সে।লাফিয়ে চেয়ার থেকে সে উঠে দাড়ালো।

আরিফ ধমকে বলে,

–” হারামী লাফাচ্ছিস কেন? আমর কি তোরে খেয়ে ফেলবো?”

মেরাজ ভালোভাবে তাকালো দেখে সবাই আছে এখানে।তারপর দ্রুত পায়ে মনিরের কাছে গিয়ে ওকে ঝাপটে ধরে বলে,

–” দোস্ত এখানে চুরেল আছে আমি সত্যি কইতাছি।সাদা জামা পড়া ছিলো। সত্যি।”

মনির মেরাজকে সরিয়ে বলে,

–” দুড়ে যা! এমনে চিপকে ধরবি নাহ! আমি আমার বউয়ের হোক মারতে চাই নাহ?”

লাস্ট কথাটা সাদুর দিক তাকিয়ে বললো।সাদু ভেংচি কেটে দিলো।মনির ঠোঁট চোক্কা করে কিস এর মতো দেখালো সাদু চোখ রাঙানি দিলো।মনির হেসে দিলো।
মনিরকে হাসতে দেখে মেরাজ দূরে সরে বলে,

–“তুই হাসোস ক্যা?তোরেও ভূতে ধরছে?”

–” লাত্থি দিয়ে তোর বাত্তি নিভিয়ে দিবো। কিসব বলছিস?”

মেরাজ ভয়ে অস্থির কতোক্ষন আরিফকে ঝাপটে ধরে কতোক্ষন আফরানকে ধরে কতোক্ষন মনিরকে ধরে তো আবার নিবিড়কে ধরে।

এইসবের মাজে হঠাৎ আলিশা বলে,

–” এই একমিনিট আমরা সবাই এখানে নূর কোথায়?”

সবার টনক পড়ে। আফরান এদিক সেদিক তাকালো।আসলেই তো নূর কোথায়?
সবাই আছে অথচ ও নেই?

এদিকে আফরান আর বাকিরা তো জানে না যে একটা চিপার ভীতরে ডুকে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
আর মিষ্টি গিলছে।নূর লাস্ট মিষ্টিটা খেয়ে একটা ঢেকুর তুললো।
বিরাট এক আওয়াজ হলো সাথে সাথে সে নিজের মুখ চেপে ধরলো।

সাদু ভ্রু-কুচকে সন্দীহান গলায় বলে,

–“মাত্র কেমন যেন একটা আওয়াজ হলো নাহ?”

–” হ্যা আমিও শুনলাম!” মনিরও বললো।

মেরাজ আবারো কাঁদো গলায় বলে,

–” আমি বলেছি না এখানে চুরেল আছে।”

সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো ‘ চুপপপপপপপপ!’ সাথে সাথে মেরাজ মুখ আঙুল দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।

এদিকে নূর কাবার্ডে বসে মিটিমিটি হাসছে সবার কথা শুনে।ওর বেশ ভালোই লাগছে।
হঠাৎ নূর টের হেলো ওর পায়ে কিছু একটা নড়াচড়া করছে।মুহূর্তেই ওর হাসি মুখ চুপসে গেলো।
ভয়ে ভয়ে ওর পায়ের দিকে তাকাতেই দেখে একটা তেলাপোকা।নূর তেলাপোকা ততোটা ভয় পায়না তবে যদি তেলাপোকা উড়াল দেয় তাহলে ওকে আর খুজে পাওয়া মুশকিল।
তেলাপোকাটা ওর পা বেয়ে বেয়ে মুখ বরাবর আসলো।আসলে নূর ‘দ’ স্টাইলে বসে ছিলো তাই তেলাপোকাটা ওর হাটু বরাবর আসলে তার ওর মুখোমুখি হয়।
নূর জোড়পূর্বক হেসে ঢোক গিলে ফিসফিস করে বলে,

–” দেখ তেলাপোকা তোকে আমি ভয় পাই নাহ।তুই যদি চাস এইভাবে বসে থাকতে পারিস কিন্তু তাও প্লিজ উড়াল দিস নাহ।তুই উড়লে আমার রূহ উড়ে যায়।”

তেলাপোকাটা কতোক্ষন চুপচাপ বসে রইলো।তারপর হঠাৎ ওই তার পাখা মেলে হেলিকপ্টারের মতো উড়াল দিয়ে নূরের চুলের উপর পড়তেই নূর।দিন দুনিয়ে ভুলে গগন ফাটিয়ে এক চিৎকার দিয়ে কাবার্ড থেকে বের হয়ে গেলো।
আর ওকে এইভাবে বের হতে দেখে সবাই ভয়ে শেষ।
আলিফা আর মেরাজ একলাফে টেবিলের উপর উঠে গেলো।
মনির সাদুকে হেচঁকা টানে সরিয়ে এনে নিজের সাথে চেপে ধরলো।
নিবিড় ঘরের খাম্বা ঝাপটে ধরে আছে পাড়লে সে এই খাম্বা বেয়ে আকাশ ফুটো করে উড়ে যায়।
আরিফ ভয় পেয়ে দৌড় দিতে গিয়ে ধরাম করে চেয়ারের সাথে বাড়ি খেয়ে উলটে পড়ে আছে।
আলিশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আর ওকে ঝাপ্টে ধরে আছে মিম।
বেচারি আলিশা তব্দা খেয়ে আছে।
আর আফরান? ওর অবস্থা আরো খারাপ।
নূর তেলাপোকার ভয়ে দৌড়ে কাবার্ড থেকে বের হয়েই একলাফে আফরান কাধে ঝুলে পড়ে।
আফরান শুধু হতভম্ব আর ওর কাধে বানরের মতো ঝুলছে নূর।

#চলবে,,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।