ভালোবাসি পর্ব-০৩

0
6549

#ভালোবাসি
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

রান্না ঘরে অনেক খুঁজেই কোনো খাবার পায় না তুলি। শুধু নুডলসের প্যাকেট আছে। ফ্রিজ খুলে দেখে সেখানে মাছ মাংস ডিম সব আছে। তুলি এবার নুডলস রান্না করবে।
তুলি শুধু তুলির জন্য নুডলস রান্না করে সোফায় বসে টিভি অন করে টিভি দেখছে আর নুডলস খাচ্ছে। সায়ান রুম থেকে বেরিয়ে দেখে তুলি পায়ের ওপর পা রেখে নুডলস খাচ্ছে। সায়ান তুলির দিকে একটু তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। সায়ানও নুডলস রান্না করে খায়।

তুলি ঘুমানোর জন্য একটা রুমে যায়। সায়ানের পাশের রুম। কিন্তু ওখানে একা থাকতে তুলির ভয় করছে তাই বালিশ নিয়ে সায়ানের রুমে চলে যায়। তুলি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একটু উঁকি দেয় দেখে রুমে কেউ নেই। তুলি চোরের মতো পা টিপে টিপে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। সায়ান বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে তুলি চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে আছে। সায়ান একটান দিয়ে চাদর সরিয়ে ফেলে। তুলি ধরফরিয়ে উঠে বসে। সায়ান রাগী সুরে বলে

“তুই এখানে কেনো?

” আআআমার ওওওই রুমে ভভভয় করছে

তুতলিয়ে বলে তুলি

“আমার বাড়িতে ভুত নেই তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঠিক আছে তুই এই রুমে থাক আমি ওই রুমে যাই

সায়ান বালিশ নিয়ে যেতে নেয় তুলি দৌড়ে সায়ানের সামনে যায়

” What

আমি আপনার সাথে ঘুমাবো

মাথা নিচু করে বলে তুলি

“আমি তোর সাথে ঘুমাবো না

” এমন করেন কেনো? আমি তো আপনার বোন। আপন না হই চাচাতো বোন।

“তো

” তো আমার প্রতি আপনার একটা দায়িত্ব আছে। আমি যদি আপনার আপন ছোট বোন হতাম তাহলে কি এমন করতে পারতেন ভাইয়া

সায়ান এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলির কথায় অসম্ভব রাগ হচ্ছে। চিৎকার করে বলে

“সামনে থেকে সর

তুলি ভয় পেয়ে সরে যায়। রুমের লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পরে তুলি। সায়ান অন্য রুমে চলে যায়। চাদর মুরি দিয়ে ভয়ে ভয়ে তুলি ঘুমিয়ে পরে।

সকালে সায়ান রান্না করছে। তুলিকে চিটাগং এর একটা স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। তুলি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। চুল গুলো ঝুটি করে স্কুল ড্রেস পরে তুলি রান্না ঘরে যায়। সায়ান এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।

আসলে সায়ান কখনো তুলিকে ভালো করে দেখেই নি। তুলির যখন চার বছর বয়স তখন সায়ান বিদেশ চলে যায়। আর বিদেশ থেকে ফেরার পরে বিয়ে নিয়ে বিজি হয়ে যায়

তুলি সায়ানের সামনে তুরি বাজায়

” হেলো ভাইয়া আপনি আমার দিকে নজর দিচ্ছেন কেনো?

তুলির কথায় সায়ান হকচকিয়ে যায়।

“ফালতু কথা বাদ দে

” ফালতু কথা কি সত্যি কথাই তো বললাম।

“তোর কাছে কেউ জানতে চায় নাই যে তুই সত্যি বলেছিস না কি মিথ্যে বলেছিস। এবার খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর আর স্কুলে চলে যা

তুলি মুখ বেঁকিয়ে খাবারটা নিয়ে টেবিলে চলে যায়। খাবার খেয়ে স্কুল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সায়ানের রুমে উঁকি দেয়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে।

” ভাইয়া

“কি চায়?

” বলছিলাম কি তোমার গাড়িতে করে আমাকে একটু স্কুলে ডপ করে দেবে

সায়ান চোখ ছোট ছোট করে তুলির দিকে তাকায়

“খুব শক না আমার সাথে স্কুলে যাওয়ার

” নাহহহ। বাট আজ ফাস্ট ডে তো একা একা নার্ভাস লাগছে সো

“সরি আমার সময় নেই। আর নেক্সট টাইম আমার থেকে কোনো হেল্প চাইবি না। আমি তোকে কোনো হেল্প করবো না। নিজের লড়াই নিজে করতে শেখ

তুলির খুব খারাপ লাগে। এই মানুষটা এমন কেনো? মানুষের খারাপ সময়ে পিছু টানে।

তুলি হাটতে হাটতে স্কুলে যাচ্ছে। বাসার কাছেই স্কুল তাই হেটে যাচ্ছে। তুলির ফোন নেই তাই ভেবেছিলো সায়ানকে বলবে একটা ফোন কিনে দিতে কিন্তু ওনার যা মেজাজ। থাক বাবা আমি একাই ফোন কিনবো। টাকা তো আছেই।

এসব ভাবতে ভাবতে তুলি স্কুলে চলে আসে। কিন্তু এখন হয়েছে আরেক জ্বালা। তুলির ক্লাস কোনটা তুলি জানে না। এখন কি করবে।
স্কুলের মাথে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোনটা নাইনের ক্লাস। কি এতো এতো ক্লাস রুমের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে না

” এনি পবলেম

কোনো একটার ছেলের কন্ঠ পেয়ে ছেলেটার দিকে তাকায় তুলি। একগাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুদর্শন একটা যুবক। দেখতে মাশাল্লাহ। তুলি তাকিয়ে আছে

“আই নো আমি খুব স্মার্ট তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকবে

তুলি হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আমতাআমতা করে বলে

“আমি এই স্কুলে নতুন। তো আমি আমার ক্লাস রুমটা খুঁজে পাচ্ছি না।

” ওহহ এই বেপার। তো কোন ক্লাসে পড়ো

“ক্লাস নাইন

” আমার সাথে এসো

তুলি ছেলেটার পিছনে যায়। দুইতলার তিন নম্বর রুমের সামনে এসে ছেলেটা দারায়।

“এইটা তোমার ক্লাস রুম

” ধন্যবাদ

“নাম কি তোমার?

” তাইবা তাজনিন তুলি

“নাইস নেম। আমি রাফসান রিক। ক্লাসে যাও

” হুম

তুলি ক্লাস রুমে গিছে দ্বিতীয় ছিটে গিয়ে বসে। তুলির পাশে একটা মেয়ে বসেছে।

“হাই। তুমি কি নিউ

” হ্যাঁ। আজই ফাস্টডে

“ওহহহ। আমি প্রভা। তোমার নাম

” তুলি। তাইবা তাজনিন তুলি

মেয়েটার সাথে তুলির ফ্রেন্ডশীপ হয়ে যায়। ফাস্ট বেলে একটা টিচার আসে। ভালোভাবেই ক্লাসটা শেষ হয়। সেকেন্ড ক্লাসে যে স্যারটা আসে তাকে দেখে তুলি হা। সবাই বসে পরেছে তুলি দাঁড়িয়ে আছে

“মিছ তুলি আপনাকে কি বসার জন্য নেমন্তন্ন করতে হবে

রিকের কথায় তুলি ঠাস করে বসে পরে। ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা হাসতে থাকে। রিক ধমক দেয়। রিক তুলিদের ইংলিশ টিচার।

ক্লাস শেষে তুলি আর প্রভা কথা বলতে বলতে বাইরে আসছে

” তুলি আমার এখন ইংলিশ কোচিং আছে রে।

“আমারও ইংলিশ কোচিং করতে হবে

” তাহলে তো ভালোই হলো তুই আর আমি একসাথে কোচিং করতে পারবো

“স্যারের সাথে কথা বলতে হবে তো

” চল এখুনি বলি

“এখন

” হুম চল

তুলি আর প্রভা রিকের অফিস রুমে চলে যায়

“মে আই কাম ইন স্যার

রিক ফোনের দিকে তাকিয়েই বলে

” ইয়েস কাম

তুলি আর প্রভা ভেতরে ঢুকে

“স্যার তুলি আপনার কাছে ইংলিশ পারত চায়

রিক তুলির দিকে তাকায়। হাসিমুখে বলে

” ঠিক আছে।

কোচিং শেষে বাসায় চলে আসে তুলি। খুব খিদে পেয়েছে সেই সকালে খেয়েছে এখন পাঁচটা বাজে। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে ডাল ভাত আর মাছ রান্না করা। তুলি ফ্রেশ না হয়েই খেতে বসে।
রাত দশটাই সায়ান বাসায় ফেরে। বাসায় ফিরে তুলির রুমে নক না করেই ঢুকে। তুলি ড্রেস চেঞ্জ করছিলো। সায়ান ওভাবে ঢুকে পরায় দুজনই মুখোমুখি হয়।
সায়ান তুলিকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়। তুলি তারাহুরো করে ড্রেস পরে

“আপনি নক না করেই আমার রুমে কেনো ঢুকেছেন?

সায়ান তুলির হাত ধরে তুলিকে কাছে এনে শান্ত গলায় বলে

” তুই দরজা লক না করে ড্রেস চেঞ্জ কেনো করছিলি? যদি কেউ চলে আসতো

“যদি কেউ আসতো মানে কি এসেছে তো। নেক্সট টাইম আর কখনো নক না করে ঢুকবেন না

সায়ান কিছু না বলে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি ভয় পেয়ে যায়

” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আর আমাকে ছাড়ুন

সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়। খেতে আয়

“আমি খেয়েছি

সায়ান ভেবেছিলো তুলি খায় নাই। সায়ান কিছু না বলে চলে যায়। তুলি একটু বই পরে শুয়ে পরে।

আজ ফ্রাইডে স্কুল বন্ধ কিন্তু কোচিং আছে। দশটাই কোচিং। তুলি জিন্স টপ পরে চুলগুলো ঝুটি করে চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বারায়। তখন সায়ান ডাকে

” কোথায় যাচ্ছিস?

“কোচিং আছে

” কাল স্কুলে গেলি আর কোচিং ও ঠিক করে ফেললি

“ইয়া কজ তাইবা তাজনিন তুলি সব কিছুতেই ফাস্ট।

” ভেরি গুড। ওড়না নিয়ে যা

“মানে

” মানে বড় হয়ে গেছিস। এখন ওড়না ছাড়া ঘুরে বেড়াতে লজ্জা করে না

“লজ্জার কি আছে। এটা ফ্যাশন

” আমার বাড়িতে এসব ফ্যাশন চলবে না। ওরনা ছাড়া যাওয়া যাবে না

“এই ড্রেসের সাথে ওড়না নিলে একদম পাক্কা গাইয়া লাগবে

” চুপ। সায়ান জোরে একটা ধমক দেয়। তুলি ভয় পেয়ে যায়। সায়ান তুলি ড্রেসের সাথে মেচিং করে একটা ওড়না এনে দেয়। তুলি সায়ানকে মনে মনে হাজারটা গালি দিতে দিতে বেরিয়ে যায়।

চলবে