ভুলে যেতে ভালোবাসিনি
সূচনা পর্ব
রোকসানা আক্তার
বাসরঘরে টোপার মাথার ওড়না সরিয়ে চমকে উঠে নীর!নীরের বিশ্বাসই হচ্ছে না দু,’বছর আগে যে মেয়ের লাভ প্রপোজাল রিজেক্ট করেছে, এখন সে মেয়েই তার সামনে বউ সেঁজে বসে আছে।
নীর হাতে একটা চিমটি কাটে!আর সে স্থান চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়।য়ু হু এটাতো কোনো স্বপ্ন নয়,তরতাজা বাস্তব! তারমানে টোপা তার এখন বিয়ে করা সদ্য স্ত্রী!
মুহূর্তেই নীরের দু’চোখ লাল হয়ে যায়।
নীরের সাথে টোপার পরিচয় হওয়াটা এক আকস্মিক।নীর তার নানুর বাড়ি বেড়াতে গেলেই টোপাকে প্রথম স্বচোক্ষে দেখতে পায়।নীর ছোটকাল থাকতেই শহরে বড় হয়েছে।গ্রাম তাদের পছন্দ না বিধায় নানুর বাড়িও বেশি আসা হয়না।গ্রামের লোকদের দেখলে নীরের নাক ছিটকানি আসতো। নিজের নানুর ফ্যামিলি ছাড়া বাহিরের লোকদের সাথে কথা বলতো না।তবে হ্যাঁ টোপার চালচলন মোটামুটি নীরের মনে ধরেছিল।তাই সে প্রায়শই টোপাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে আসতো।।অবশ্য টোপা গ্রামের মেয়ে হলেও অনেকটা ম্যাচিউরড!গোলগাল মুখ,খাঁড়া নাঁক,গোলাপী দু’ঠোঁট,কোমর ছড়ানো কালো চুল,শরীরের ফিটনেস সবদিক দিয়ে টোপা পারফেক্ট।তার অপ্রতিভ সৌন্দর্যের নেশায় চোখ সরানো দায়য়।
এভাবে টোপা নীরের সাথে কিছুদিন চলতে চলতে নীরকে তার মনে ধরে যায়।যখন টোপা নীরের একদম ধার কাছে ঘেঁষতে পারে তখনই মুখ ফসকে টোপা তার মনের কথা বলে দেয়।
নীর তাচ্ছিল্য ভরে একটা হাঁসি এটে বললো,
—–গ্রামের মেয়েদের আমার মোটেও পছন্দ না।তাদের মাঝে ম্যাচিউরিটি নেই বললেই চলে।আর সবথেকে বড় কথা ওরা খুব ঝগড়াটে হয়।তুমি ভুল জায়গায় এসেছ!আই এম স্যরি।
এ বলে টোপার সামনে থেকে নীর চলে আসে।টোপা একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলে।
আর আজ টোপার সেই চোখের পানির ধোঁয়াশা মুছে গেছে।তবে কি নীর টোপাকে শান্তিতে রাখবে!?
এ বিয়েতে টোপার কোনো দোষ নেই।নীরের মা কোহিনুর বেগম স্বয়ং নিজেই টোপাকে পুএবধু করে এনেছেন।কোহিনুর বেগমের দুই ছেলে,মেয়ে নেই।বড় ছেলেকে শহরে বিয়ে করিয়েছেন,কিন্তু শান্তি বলে যে একটা শব্দ আছে তা বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েই কোহিনুর বেগম ভুলে গেছেন।তার ধার্মিকতার বিষয় মাথায় রেখে টোপার মতো মেয়েকেই চোজ করেছেন তিনি।অবশ্য নীর বিয়ে করার জন্যে রাজি ছিলনা।তার একটাই জবাব ছিল সে এখনো বিয়ের জন্যে প্রস্তুত না।তবে কোহিনুর বেগমের হাজারো প্রতিশ্রুতির কাছে না টিকতে পেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই নীর বিয়েটা করে।।মায়ের জেদের কাছে হেরে গিয়ে নিজের হবুবউকে নিজচোখে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি।আর সেই হবুবউ এখন টোপা!
তারউপর “ফল ইন লাভ ” মেয়টিই তার বউ!!
নীর এটা কোনোমতে মানতেই পারছে না।
আগের ভাবনাগুলো নীরকে ঘিরে ধরতেই সে বিছানা থেকে নেমে যায়।বেলকনি হতে রুম পর্যন্ত নীর পায়চারী করতে থাকে।চোখে-মুখে তার আগুনের আভা যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে।টোপা হালকা মাথা নুইয়ে চোখবুঁজে আছে,আর কাঁপা কাঁপা চোখে নীরের দিকে দৃষ্টি দেয়।সে নিজেই জানেনা নীরের মনে এখন কি চলছে!
নীর পায়চারী বন্ধ করে টোপার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে হালকা একটা কাশি দেয়।
টোপাকে কড়া কন্ঠে বলে উঠে,
——তুমি আমার সাথে সংসার করলে কখনোই সুখী হবা না।আমি চাইনা কোনো মেয়ে বিনে কারণে আমার জন্যে কষ্ট পাক।
টোপা নীরের কথা শুনে মাথা তুলে তাকায়।আর ক্ষীণ গলায় বলে,
——-আমি জানি আমাকে আপনার পছন্দ না।কিন্তু সত্য কথা কি জানেন?আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি!
——দ্যাখ, তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো।আমাকে আমার আত্মসম্মানের কথা ভাবতে হবে।আমার ফ্রেন্ড সার্কেল উঁচু আভিজাত্যে বিলোংয়েবল,ওরা যদি শোনে আমি একটা গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেছি তাহলে আমার মুখ থাকবে না।ইভেন আমি মায়ের উপর রাগ করে বিয়েতে ওদের ইনভাইটও করিনি।তুমি আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে?
টোপা চোখতুলে নীরের দিকে তাকায়।আর থমথমে গলায় বলে,
——জ্বী বলুন?
——তুমি আমায় আজকের রাতের মধ্যে ডিভোর্স দিতে পারবে?আর যদি তোমার আপওি না থাকে তাহলে আমি দিব!
টোপা ডিভোর্সের কথা শুনামাএই আঁতকে উঠে।কেউ যেন তার বুক ছিঁড়ে কলিজাটা এখনি বের করে ফেললো।টপটপ গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে থাকে টোপার।নিজেকে সামলে নীরকে বলে,
—–তাহলে কেন তখন আমায় বিয়ে করলেন?আগে তো জানতেনই যে আমি গ্রামের মেয়ে।
—–নাহহ জানতাম না। বিয়ের এরেন্জ ঢাকায় হওয়াতে আমি বুঝতে পারিনি।কিন্তু এখন তোমায় দেখে বুঝতে পেরেছি।
—–আমি যদি গ্রামের মেয়ে না হয়ে শহরের হতাম তাহলেও কি ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবতেন?
নীর কোনো জবাব দেয়নি। দরজায় করাঘাত পড়ে।ওপাশ থেকে নীরের ভাবি বলে উঠে,
——এই নীর?মা তোকে ডাকছে।
নীর তার রাগান্ধিত কটমটানি বন্ধ করে দরজা খুলে বাহিরে যায়য়।
আর টোপা অনবরত চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছে।সে জানে না এখন তার অনিশ্চিত জীবন কী?নীরকে কি বাধ্য হয়েই ডিভোর্স দিতে হবে? নাকি নীর নিজেই ডিভোর্স দিবে!
চলবে….