#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২০
#M_Sonali
“ধীরে ধীরে যখন মায়ের সন্তান প্রসবের সময় হয়ে আসে। তখনই ঘটতে থাকে তার শারীরিক পরিবর্তন। দিন দিন তার শরীর শুকিয়ে একদম কঙ্কালের মত হয়ে যায়। চোখ দুটো চলে যায় গর্তে। দেখে যেন মানুষ মনে হতো না। পুরো একটা কঙ্কাল হয়ে যান তিনি। মাথার চুলগুলো সব পড়ে মাথা একদম টাক হয়ে যায়। এতে বাবা বেশ অবাক হন। তাকে হাজার রক্ত খাইয়েও শরীরে এক ফোঁটা রক্ত দেখা যায়না। সন্তান প্রসবের সময় মা মৃত্যুবরণ করেন। আর তখনই জন্ম হয় আমার। আমি যখন ওনার পেট থেকে ভূপৃষ্ঠ হই তখন মায়ের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত ও অবশিষ্ট ছিল না। তার কারণ আমি পৃথিবীতে আসার আগে মায়ের শরীরের সমস্ত রক্ত চুষে নিয়েছিলাম।”
এতোটুকু বলে থামল শ্রাবণ। দু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে চাঁদনীর বুকেও যেন কষ্টের পাহাড় গড়ে উঠলো। ভীষণ খারাপ লাগতে শুরু করলো তার। সে কি বলে সান্তনা দিবে ভেবে পাচ্ছেনা। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। শ্রাবণ আবারো বলতে শুরু করল,
“মায়ের মৃত্যুর পর বাবা অনেকটা ভেঙে পড়েন। তিনি দাদুর বিরুদ্ধে চলে যান। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন মায়ের মৃত্যুর জন্য একমাত্র দাদু দায়ী। তিনি নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছেন যার কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাকেও তিনি একবারের জন্য মুখ ফিরে দেখেন নি। মাকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন যে নিজের সন্তানের প্রতি এক ফোঁটা ভালোবাসাও কাজ করেনি তার মৃত্যুতে। বাবা যখন দাদুর কাছে রেগে যান। তার কাছে কৈফিয়ৎ চান। মায়ের সাথে এমন টা করার কারণ জানতে চান। তখন দাদু বিনা সংকোচে বলেন,
“হ্যাঁ আমি এটা ইচ্ছা করেই করেছি। কারণ আমি চেয়েছিলাম ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের একজন উপযুক্ত রাজা ও উত্তরাধিকারী পেতে। আর যেটা জন্ম নিয়েছে তোমার ছেলে। তোমার ছেলে কোন সাধারন ভ্যাম্পায়ার নয়। তার মাঝে রয়েছে দুই সত্তার এক অপার ও ভয়ানক শক্তি। যে শক্তি আজ পর্যন্ত ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কারো মাঝে সৃষ্টি হয়নি। এমনকি আমার মাঝেও না। তুমি কি জানো প্রতিদিন তোমার বউকে আমি যে জরিবুটি খেতে দিতাম, সেটা কোন সাধারন জরিবুটি ছিল না। সেটা ছিল ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে সবচাইতে শক্তিশালী এবং ভয়ানক ভ্যাম্পায়ার হয়ে জন্ম নেওয়া মন্ত্রপূত জরিবুটি। যেটা তোমার বউ খাওয়ার কারণে প্রতিদিন তার পেটে তিল তিল করে বড় হয়ে উঠেছে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের উপযুক্ত উত্তরাধিকার। সে এতটাই শক্তিশালী হবে যে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকল ভ্যাম্পায়ার মিলে যদি তার উপর আক্রমন করে, তবুও তার একার শক্তি সকলের কাছে যথেষ্ট। কারো ক্ষমতা নেই তার ওপরে নিজের শক্তি প্রয়োগ করার। সে সকল ভ্যাম্পায়ারকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তার এই শক্তির পরিপূর্ণতা পেতে তোমার সাহায্য প্রয়োজন। তোমার স্ত্রী তো মারা গেছে তাকে জন্ম দিতে গিয়ে। এখন তোমার তাকে সাহায্য করতে হবে।”
এতোটুকু বলে থামেন দাদু। কিন্তু উনার কথার কোন রকম উত্তর দেয় না বাবা। সে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। তার মনের ভাব কোন কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। দাদু আবারো বলতে শুরু করেন,
“আজ থেকে ২০ বছর অব্দি তোমার ছেলের দায়িত্ব আমার। তাকে দেখাশোনা তার যত্ন সবকিছু আমি করব। কিন্তু তার ২০ বছর বয়স হতে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি আমাবস্যা রাতে একটি করে কুমারী যুবতী মেয়ের রক্ত পান করতে হবে তাকে। তবে সেই মেয়েগুলোর বয়সও হতে হবে ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। এভাবে ৫ আমাবস্যায় ৫ জন মেয়ের রক্ত পান করতে পারলেই সে পূর্ণ শক্তি ফিরে পাবে। বিশেষ করে মনুষ্য শক্তি পাবে। সে তখন মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারবে। মানুষের মত খেতে পারবে। মানুষের মত সূর্যের আলোতে বের হতে পারবে। এমন কি সে নিজ ইচ্ছায় সব করতে পারবে।”
এতোটুকু বলে থামল শ্রাবণ। চাঁদনী এতক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথাগুলো শুনছিল। শেষ কথাগুলো শুনে সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে তাকে শ্রাবণ কেন তুলে নিয়ে এসেছিল। তার রক্ত খাওয়ার জন্য। কারণ তার বয়স এখন ২২ বছর। আর সে এখন কুমারী এবং যুবতী। তাই শ্রাবণের শক্তি লাভের জন্য সে একদম পার্ফেক্ট নারী ছিল। কিন্তু সেই সাথে আরো কিছু কথা ভেবে বেশ খটকা লাগে চাঁদনীর। এবার সে ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“তাহলে কি আপনি আপনার পূর্ণশক্তি পেতে ৫ আমাবস্যায় পাঁচজন কুমারি মেয়ের রক্ত খেয়েছেন? কিন্তু আমাকে তো এখনো কিছু করেননি। তাহলে আপনি এত শক্তিশালী কিভাবে হলেন শ্রাবণ?”
শ্রাবণ ওর প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। ওর দিকে একবার ফিরেও তাকাল না। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে আবার বলতে শুরু করল,
“দাদুর কথা সব কিছুই চুপচাপ শুনছিল বাবা। কোনরকম উত্তর দেয়নি সে। হঠাৎ দাদু দেখলো বাবা ছুটে যাচ্ছে আমার দিকে। দাদু তার ভাব বুঝতে পারে। তাই তার পিছনে ছুটে যায়। বাবা আমার গলা চেপে ধরে ঘাড়ে কামড় বসাতে চায় আমাকে হত্যা করার জন্য। কিন্তু তার আগেই দাদু তাকে আটকে ফেলে। দাদুর শক্তি বেশি হওয়ায় বাবা কিছুতেই তার সাথে পেরে ওঠে না। একসময় স্ত্রীর শোক এবং নিজের বাবার ওপর রাগে বাবা নিজেকেই নিজে শেষ করে দেওয়ার প্ল্যান করে। আর সে সেটাই করে। সে মায়ের মৃতদেহ কোলে নিয়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে উড়ে কোথাও চলে যায়। দাদু তাকে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেও খুঁজে পায়নি। তিনদিন পর তার মরদেহ নিয়ে ফিরে আসে ভ্যাম্পায়ারেরা। বাবা নিজেকে নিজে শেষ করে দিয়েছিল। সে দিনের বেলা সূর্যের তীব্র আলোতে বের হয়েছিল তাও আবার নগ্ন শরীরে। যার ফলস্বরূপ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কারণ ভ্যাম্পায়াররা কখনোই সূর্যের আলোতে বের হতে পারে না।”
এতোটুকু বলে কিছুক্ষণ দম নিল শ্রাবণ। তারপর আবারো বলতে শুরু করল,
“বাবার মৃত্যুর জন্য সারাক্ষণ নিজেকেই দায়ী মনে করি আমি। বাবা এবং মা দুজনের মৃত্যু হয়তো আমার কারনে হয়েছে। তারা যদি আমাকে পৃথিবীতে না আনতো তাহলে এমন হতো না। কিন্তু তবুও আমি আফসোস করি না। কারন দাদু যেটা করেছে সেটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্য এবং মানুষের ভালোর জন্য করেছে। আজ আমার জন্ম যদি না হতো তাহলে কোন ভ্যাম্পায়ার দাদুর কন্ট্রোলে থাকত না। তারা ইচ্ছেমত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে সকল মানুষের রক্ত চুষে তাদের মেরে ফেলতো। এতে অনেক ক্ষতি হতো সবার। তাইতো আমি সেই দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে কন্ট্রোলে রেখেছি। কারণ আমার শক্তির কাছে সকল ভ্যাম্পায়ার এর শক্তি অচল।”
“সবই বুঝলাম শ্রাবন কিন্তু আপনি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। আপনি এত শক্তি কি করে পেলেন? আমি সেটা জানতে চাই।”
বেশ গম্ভির গলায় কথাগুলা বলল চাঁদনী। ওর কথায় এবার অন্য দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাল শ্রাবণ। ওর দিকে ঘুরে ওর ডান হাতটা নিজের দু হাতে বন্দী করল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলল,
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো দূরে যেওনা চাঁদপাখি। ভুল বুঝে দূরে সরে থেকো না। আমি মানছি আমি তোমার মতই আরও পাঁচটি মেয়ের রক্ত চুষে তাদের হত্যা করেছে। কিন্তু এটা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। পরিপূর্ণ শক্তিশালী হতে হলে সেটা করতেই হতো। জানিনা কিভাবে সেটা তোমার সাথে করতে পারিনি। তোমাকে এমন পাগলের মত ভালবেসে ফেলেছি যে তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না। কিন্তু আমি তোমার বদলে অন্য একটি মেয়ের রক্তচুষে খেয়েছি। সে আর কেউ নয় তোমারি এক বান্ধবী। যে তোমার সাথে একই স্কুলে পড়তো। আমি জানি এটা জানার পর তুমি হয়তো আমাকে ভুল বুঝবে। রেগে যাবে। তাই তোমাকে বলতে চাইনি। কিন্তু তুমি জোর করে ধরলে তাই সকল সত্যি বলে দিলাম। এখন প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি আমাকে ছেড়ে দূরে যেও না। আমি যতটা শক্তিশালী তার চাইতেও বেশি ভয়ংকর। আমি চাইনা নিজের ভয়ঙ্কর রূপ টা সামনে আনতে। তুমি যদি আমার থেকে দূরে যাও তাহলে আমি হিংস্র হয়ে উঠবো চাঁদ পাখি। যেটা হবে মানবজাতির জন্য অনেক ভয়ংকর ও আতঙ্কের।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২১
#M_Sonali
চাঁদনী ভয়ার্ত দৃষ্টিতে শ্রাবনের দিকে তাকাল। দুরু দুরু বুক নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,
“আমার সে বান্ধবীর নাম কি শ্রাবণ? আপনি কি বলতে পারবেন?”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবন একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“তার নাম শিউলি। তোমাদের পাশের এলাকার রহমত মিয়ার ছোট মেয়ে শিউলি।”
কথাটা শুনতেই যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল চাঁদনী। বুকের মধ্যে যেন ঝড় তুফান বয়ে যেতে লাগলো তার। নিজেকে পাগল পাগল মনে হতে লাগলো। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল,
“এটা আপনি কি করেছেন শ্রাবণ? ওকে না মেরে আপনি যদি আমাকে মারতেন তবুও আমি এতটা কষ্ট পেতাম না। যতটা কষ্ট ওর মরে যাওয়া তে পেয়েছি। আপনি কিভাবে পারলে এমন নিষ্পাপ একটি মেয়ের জীবন এভাবে কেড়ে নিতে। আপনি জানেন ও শুধু আমার বান্ধবী নয় আমার বোনের মতো ছিল। যখন পুরো এলাকার সবাই আমাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করত, বারবার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে। তখন ওই একমাত্র মেয়ে যে কিনা সারাক্ষণ আমায় সান্তনা দিতো। সেইসাথে আমাকে নিজের বোনের চাইতে বেশি ভালোবাসতো। আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। ঘৃনা হচ্ছে আপনার উপর আমার। আপনি এটা কিভাবে করতে পারলেন।”
কথাগুলো বলতে বলতেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল চাঁদনী। অঝোর ধারায় কান্না করতে লাগল সে। তার কথা শুনে এবং অবস্থা দেখে শ্রাবণ বেশ ঘাবড়ে গেল। সে উঠে দাড়িয়ে কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“প্লিজ চাঁদনী আমার পুরো কথাটা তো শুনো। এভাবে ভেঙ্গে পড়না প্লিজ। আমাকে দোষারোপ করার আগে পুরো কথাটা তো শুনো।”
ওর কোনো কথায় কর্ণপাত করলো না চাঁদনী। শরীরের সমস্থ শক্তি দিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে অঝোর ধারায় কান্না করতে করতে চিৎকার করে বলতে লাগল,
“আমাকে বাবার কাছে দিয়ে আসুন। আমি থাকতে চাই না আপনার মত একটি রাক্ষসের সাথে। আপনি তো মানুষ নন। আপনি একজন ভ্যাম্পায়ার। আপনার মনে দয়া মায়া ভালবাসা বলতে কিছু নেই। আপনি যদি ওমন মিষ্টি মেয়ে শিউলিকে মেরে ফেলতে পারেন, তাহলে আমাকে মেরে ফেলতেও আপনার হাত কাঁপবে না। আমি বুঝে গেছি আপনি আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছেন। আর নিশ্চয়ই অন্য কোন স্বার্থের জন্য আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না। আপনি যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে মুক্তি দিন। ফিরিয়ে দিয়ে আসুন আমার বাবার কাছে। আর কখনো নিজের ঐ ধ্বংসকারী মুখটা আমার সামনে নিয়ে আসবেন না।”
কথাগুলো বলতে বলতেই হাতজোড় করে নিচে লুটিয়ে পরল চাঁদনী। ওর কথায় মুহূর্তে যেন ভয়ঙ্কর রূপ নিল শ্রাবণ। চোখ দুটো আগুনের মত জ্বলে উঠলো তার। হাতের মুঠো শক্ত করে উঠে দাঁড়ালো। দাঁত কিড়মিড় করে সেখান থেকে সরে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়াল। কারণ সে জানে সে তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না। রাগ উঠে গেলে নিজের ভয়ংকর চেহারা টা সামনে চলে আসবে। যেটা চাঁদনীর জন্য মোটেও ভালো হবে না।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। চাঁদনী অনেকক্ষণ কান্না করার পর নিজের চোখ মুছে নিলো। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত করে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো। শ্রাবনের কাছে এগিয়ে এসে রাগী গলায় বলল,
“আপনি এখনো দাড়িয়ে আছেন কেন? আমাকে রেখে আসুন বাবার কাছে। আমি এখানে থাকতে চাইনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার এখানে। আর যদি সেটা না করেন তাহলে আমাকেও শিউলির মত এক্ষুনি মেরে ফেলুন। আপনার রক্ত পিপাসা পূর্ণ করুন আমাকে মেরে ফেলে। তবুও আপনার সাথে থাকতে চাই না আমি।”
ওর কথার উত্তরে ভয়ংকর দৃষ্টিতে ওর দিকে ফিরে তাকালো শ্রাবণ। ওর এই দৃষ্টি দেখে যেন কেঁপে উঠল চাঁদনী। ভয়ে আনমনেই দুপা পিছিয়ে গেল সে। শ্রাবনের চোখ দুটো একদম রক্তের মতো লাল টকটকে হয়ে আছে। হাতের নখ গুলো লম্বা লম্বা হয়ে গেছে। সেই সাথে চেহারার রংটাও পাল্টে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অসম্ভব রকম রেগে আছে সে। এই মুহূর্তে যেন চোখ দিয়ে সবকিছু ভস্ম করে দিবে সে। চাঁদনী কে ভয় পেতে দেখে মুহূর্তেই নিজের স্বাভাবিক রূপে ফিরে এলো শ্রাবণ। আবারো চাঁদনীর ডান হাতটা নিজের দু হাতের মধ্যে চেপে ধরে আবেগি কন্ঠে বলল,
“দেখো চাঁদনী আমি তোমাকে বারবার বলেছি। আবারো বলছি। তুমি যদি আমার থেকে দূরে সরে যাও। তাহলে তোমাকে দূরে যাওয়ার বিরহ সইতে পারবো না আমি। আর সেটা হবে মানব জাতির জন্য ভীষণ ভয়ানক। কারণ আমি যদি একবার রেগে যাই তাহলে রাগের উপর নিজের কন্ট্রোল থাকবে না। তখন আমি কি করছি না করছি কোন হুশ থাকে না। যার কারণে সামনে যাকে পাব তাকে হ-ত্যা করতে এক মুহুর্ত ভাববো না আমি। পরিণাম হবে ভীষণ ভয়াবহ। পরিপূর্ণ শক্তি পেয়ে যাওয়ার পর আমি আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছি। সেই হিংস্রতা শুধুমাত্র তুমি সামনে থাকলে প্রকাশ পায় না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমার বান্ধবীকে মারতাম না। কিন্তু আমাবস্যা রাতের জন্য আমার একটি কুমারী যুবতি ২০ থেকে ২৫ বছরের মেয়ের প্রয়োজন ছিল। যার রক্ত চুষে না মারলে আমি শক্তি পেতাম না। আর এখনকার যুগে ২২ বছরের কোন মেয়ে কুমারী থাকাটা অনেক দূষ্কর। এর মাঝে খুঁজে শুধু তুমি এবং তোমার সেই বান্ধবীকে পেয়েছি। তোমাকে আমি কিছুতেই মা-রতে পারবোনা বলেই তোমার বান্ধবীর রক্ত খেয়ে তাকে হ-ত্যা করতে হয়েছে আমার।”
চাঁদনী নিজের হাতটা ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নিল। কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,
“আপনি নিজেই বলছেন আপনি কতটা হিংস্র। কোন মানুষকে খুন করতে এক মুহূর্ত সময় লাগবে না আপনার। তারপরেও আপনি কীভাবে ভাবলেন আপনার সাথে আমি থাকবো? কিছুতেই না। আপনাকে আমি ঘৃণা করি। আই হেইট ইউ। কখনো যদি কাউকে ভালবাসতে হয় সেটা কোন মানুষকে বাসবো। আপনার মত কোন মানুষ রুপি ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ারকে নয়। আমাকে ভালোভাবে বাবার কাছে রেখে আসুন। নইলে এখান থেকে বের হয়ে যাব। তাতে যদি আমার মৃত্যু হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই।”
কথাটি বলেই নিজের চোখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো চাঁদনী। সাথে সাথে তাকে গিয়ে আটকে দিল শ্রাবণ। রাগে তার চোখ জ্বলছে। তবুও কোনো কথা না বলে চাঁদনীকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে উড়াল দিলো সে।
,
,
,
তিন দিন পর সকাল বেলা,
সকালে চারিদিকের চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো চাঁদনীর। সে ঢুলুঢুলু চোখে উঠে বসলো। চারিদিকে এত শোরগোল কিসের সেটা জানার জন্য বেশ কৌতূহল বাসা বাঁধলো তার মনে। তাই দ্রুত বিছানা থেকে উঠে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হল। দেখল তাদের বাসার মেইন দরজা খোলা। বাসার মাঝে দাদি বা বাবা কেউই নেই। মনে এক অজানা আতঙ্ক বাসা বাঁধলো তার। সে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরে বেড়িয়ে দেখলো দুজন মহিলা মাটিতে বসে কান্না করছেন। তাদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে অসংখ্য এলাকা বাসি। সেখানে এগিয়ে গেল সে। সেখানে তার বাবা আর দাদিও উপস্থিত আছেন।
চাঁদনী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে তার দাদির কাছে দাড়ালো। কিছুটা নিচু হয়ে দাদিকে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে দাদি, ওনারা এভাবে কান্না করছেন কেন? আর আশেপাশে এত লোক জড়ো হয়েছে কেন?”
দাদি ফিসফিস করে তার কথার উত্তর দিয়ে বললো,
“গত দুদিনের মত আজকে রাতেও গৃহপালিত পশুর রক্তশূন্য লা-শ পাওয়া গেছে। যারা কাঁদছে তাদের একটি বড় খামার ছিল। যেখানে প্রায় ৩৫ টি গরু এবং দশটি ছাগল ছিল। সকালে উঠে সবগুলো গুরু এবং ছাগলের রক্তশূন্য লাশ পাওয়া গেছে। এত বড় শোক কি আর সামাল দেওয়া যায় বল। তাই এভাবে কান্না করছে তারা। আল্লাহই জানে এলাকাতে আবার কি শুরু হয়ে গেল এসব। কিছুদিন তো সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল।”
চাঁদনী কোন কথা বলল না। দাদির কাছ থেকে ধীরে ধীরে সরে এলো। তারপর সোজা নিজের রুমে চলে এলো। দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার উপর চুপচাপ বসলো। রাগে যেন তার শরীর ফেটে যাচ্ছে। কারণ সে বেশ ভালো করেই জানে এই সবকিছুর পেছনেই আছে শ্রাবণ। সে’ই একমাত্র লোক যে কিনা এসব ঘটাচ্ছে। এমনিতেই শ্রাবনের ওপর আর কোন মায়া মহাব্বত নেই তার। এসব করার কারণে আরো বেশি রাগ হচ্ছে তার উপর। এই মুহূর্তে শ্রাবণ কে সামনে পেলে হয়তো সে’ই শ্রাবণের রক্ত চুষে খেতো। রাগে সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তখনই তার মনে পড়ে গেল শ্রাবণের দেওয়া সেই পালকটার কথা। যেটা সে অনেক আগেই নিজের হাত থেকে খুলে ড্রয়ারের মধ্যে রেখে দিয়েছে। সে দ্রুত উঠে ড্রয়ারের কাছে চলে গেল। ড্রয়ার খুলে পালক টা বের করে নিয়ে আবারো বিছানার ওপরে এসে বসলো সে। তারপর পালকটার ওপর হাত বুলিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“কোথায় আপনি শ্রাবণ। এই মুহূর্তে এখানে আসুন। আপনার সাথে কথা বলতে চাই আমি।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,