ভয়ংকর সে পর্ব-১৮+১৯

0
212

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৮
#M_Sonali

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে চাঁদনী। শুয়ে থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুই বুঝতে পারে না। সে ঠিক কোথায় আছে। ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করে তার সাথে কি হয়েছিল। সবকিছু মনে পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে। সাথে সাথে রুমের মধ্যে লাইট জ্বলে ওঠে। চারিপাশে আলোকিত হয়ে যায়। চাঁদনী কিছুটা চোখ ডলে নিয়ে চারিদিকে তাকাতেই দেখে সে আগের সেই রুমে শুয়ে আছে। যে রুমে শ্রাবণ তাকে বিয়ে করার পর নিয়ে এসে রেখেছিল। ভয়ে সারা শরীর শিউরে ওঠে তার। শ্রাবণের সেই ভয়ংকর রূপ টা যেন কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে। সামনে তাকিয়ে দেখে শ্রাবন মৃদু হেসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ওকে জ্ঞান ফিরতে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সে। এবার গুটি গুটি পায়ে ওর পাশে এসে দাঁড়ায় সে।

ওকে কাছে আসতে দেখে বেশ কিছুটা ভড়কে যায় চাঁদনী। সে ভয়ে এক জায়গাতেই জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। এই মুহূর্তে শ্রাবনকে বড্ড বেশি ভয় করছে তার। নিজের ভালবাসার মানুষকে যে কেউ এতটা ভয় পায় সেটা হয়তো চাঁদনীকে না দেখলে বোঝা যেত না। ওর এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে শ্রাবণের মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। সে ওর পাশে বসে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,

“আমাকে দেখে এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন চাঁদপাখি? প্লিজ এভাবে ভয় পেয়ে দূরে সরে যেও না।”

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী আরো একটু জড়োসড়ো হয়ে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় কান্না করতে করতে বললো,

“আপনি আমার থেকে দূরে সরে যান শ্রাবন। আপনাকে সত্যিই ভীষণ ভয় করছে আমার। আপনার ওই চেহারা আমি ভুলতে পারছিনা। আপনি কিভাবে পারলেন এতগুলো মানুষকে এক মুহূর্তের মাঝে রক্ত চুষে খুন করতে! আপনার কি একটুও খারাপ লাগলো না? এমন নিঃসংশ ঘটনা নিজের চোখের সামনে দেখার পরেও কিভাবে আপনাকে ভয় না পেয়ে থাকতে পারি বলুন। প্লিজ আপনি আমার থেকে দূরে সরে যান। আমার ভীষণ ভয় করছে আপনাকে দেখে।”

“চাঁদ পাখি এভাবে বলোনা প্লিজ। তুমি আমার রাগ সম্পর্কে জানো না। এমনিতেই ভ্যাম্পায়ারদে রাগ বড্ড বেশি হয়। সেখানে আমি হলাম ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবচাইতে ভয়ংকর শক্তিশালী ও রাগি ভ্যাম্পায়ার। আমার রাগের উপর কারো জোর চলে না। আর তুমি হলে সেই রাগি ভ্যাম্পায়ার এর একমাত্র দুর্বলতা। যাকে নিজের জীবনের চাইতেও ভালোবাসি বেশি।তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে ও তাকে আমি মাটির সাথে মিশিয়ে দিব। আর ওরা তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছিল। আমি কিভাবে তাদের না মেরে চুপ থাকতে পারতাম বল? সেই মুহূর্তে আমার ভিতরের ভয়ংকর রুপটা এতটাই জাগ্রত হয়ে গিয়েছিল যে, আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই ওদের ওভাবে শাস্তি দিয়েছি। এতে তোমার খুশি হওয়ার কথা। আমি কিছু কিটকে পৃথিবী থেকে চিরদিনের মত মুছে দিয়েছি।”

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী কিছুই বলল না। সে আর একই ভাবে জড়োসড়ো হয়ে সেখানে বসে রইল। ওর এমন অবস্থা দেখে শ্রাবন বুঝতে পারল এই মুহূর্তে কোন কিছু বলেই কাজ হবে না। ওকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিত। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার জন্য সময় দেওয়া উচিত। শ্রাবণ নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,

“আমি অন্য রুমে চলে যাচ্ছি। তুমি কিছুক্ষণ একা থেকে মনে মনে ভাবো আমি ভুল করেছি নাকি ঠিক করেছি। আমি জানি তুমি বুদ্ধিমতি। আজ তোমার সাথে যেটা হতে যাচ্ছিল এটা অন্য কোন মেয়ের সাথে হলে কি হতো বলতো? এখন না হয় আমি তোমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছি। যদি আমি কোন সাধারণ মানুষ হতাম। আর এতগুলো পুরুষের সাথে যদি আমি একা না পারতাম। তাহলে ওখানে কত বড় দুর্ঘটনা হতে পারত সেটা তোমার ধারণা করা উচিত চাঁদপাখি।”

কথাটি বলে অন্য রুমে চলে গেলো সে। ওর বলে যাওয়া শেষের কথাগুলো এইবার যেন মাথার মধ্যে ঢুকলো চাঁদনীর। সে এবার ভাবতে লাগল ও তো ঠিকই বলেছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন কত শত নারী ধ-র্ষন হচ্ছে এইসব নেশা-খোর জানো-য়ারদের হাতে। আর যখন এই সংবাদগুলো সে পেতো। তখন তো সে নিজেই তাদের খুন করতে চাইতো। আজ যদি শ্রাবণ কোন ভ্যাম্পায়ার না হয়ে সাধারন কোন মানুষ হতো। তাহলে আজ তো তার সাথেও একি ঘটনা ঘটতে পারত। তবে শ্রাবণ কোনো ভুল করেনি। সে যেটা করেছে সেটা ঠিক করেছে।

কথাগুলো ভেবে নিজের উপর বেশ রাগ হলো চাঁদনীর। সেই সাথে শ্রাবণের উপরে ভালবাসাটা যেন আরেকটু বেড়ে গেলো তার। যদিও এখনো মন থেকে ভয়টা যায়নি। চোখের সামনে দেখা সেই নিঃসংশ ঘটনাকে মন থেকে মুছে ফেলা সত্যিই বড় কঠিন। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানা নিচে নেমে দাঁড়ালো সে। তারপর গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল দরজার কাছে। দরজার সামনে গিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো শ্রাবন মাথা নিচু করে সোফার উপর বসে আছে। ওর উপস্থিতি টের পেতেই ওর দিকে মৃদু হেসে ফিরে তাকাল সে। ওকে হাসিমুখে দেখে যেন আরেকটু সাহস ফিরে পেল মনে। এবার সে কোন কথা না বলে দ্রুত এগিয়ে গেল তার কাছে। তার পাশে বসে শান্ত গলায় বললো,

“আই এম সরি শ্রাবণ। আমি আপনাকে ভুল বুঝেছি। আপনি যেটা করেছেন সেটা ঠিকই করেছেন।”

ওর কথার কোন উত্তর দিলানা শ্রাবণ। তাই ও ফিরে তাকাল তার দিকে। সাথে সাথে আচমকা ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে ওকে নিজের কোলে তুলে নিল শ্রাবণ। তারপর দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আবেগি গলায় বলল,

“দেরি হলেও বুঝতে পেরেছো এটাই আমার জন্য অনেক। তুমি জানো এতক্ষণ সময় কতটা ভয়ে ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে সরে যাবে। তোমাকে দূরে রেখে আমি ভালো থাকতে পারব না চাঁদপাখি।”

চাঁদনী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। সে কি বলবে এই মুহূর্তে কিছুই মুখে আসছে না তার। আচমকা এভাবে বুকে জড়িয়ে নেওয়ায় বেশ লজ্জায় পড়ে গেছে সে। সে মাথা নিচু করে চুপ করে রইল। তার অবস্থা দেখে মৃদু হাসলো শ্রাবণ।তারপর দুষ্টুমি করে বললো,

“আমার বউটা যে দেখি বড্ড লজ্জাবতী। সেকি জানে তার এই লজ্জামাখা চেহারাটা দেখার জন্য তাকে আরো বেশি লজ্জা দিতে মন চায়। ইচ্ছে করে তাকে এতটা লজ্জায় ফেলি যেনো, লজ্জায় লাল টমেটু হয়ে যায়।”

ওর কথা শুনে চাঁদনী মুচকি হেসে ওর কোল থেকে উঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু শ্রাবণ তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে নাক ঘষে বললো,

“তুমি জানো তোমাকে এত কাছে পেয়ে কতটা শান্তি লাগছে আমার। এতোক্ষণ যেন বুকের মাঝে ঝড় তুফান চলছিল। কত রকমের চিন্তা ছিলো মাথায়। তোমার কোন ধারনা আছে? আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি চাঁদপাখি। জানিনা একজন ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ারের মনে এতটা ভালোবাসার সৃষ্টি কিভাবে হলো। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। আজ আমি এত ভয়ানক এত শক্তিশালী হয়েও একটি সাধারণ মেয়ের কাছে যেন নিজেকে সমর্পণ করেছি।”

ওর মুখ থেকে শক্তির কথা শুনতেই চাঁদনীর মনে পড়ে গেল। সে দ্রুত শ্রাবণের চোখের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“কিন্তু আপনি এত শক্তি পেলেন কিভাবে শ্রাবণ? আমাকে কিন্তু সে কথা এখনো বলেননি। আমি জানতে চাই আপনার শক্তির উৎস কি। আপনি তো আমাকে বলেছিলেন আমার রক্ত না খেলে আমাকে না মারলে আপনি শক্তি পাবেন না! তাহলে এখন এতটা শক্তি কোথায় পেলেন?আর সেদিন রাতে’ই বা কারা গিয়েছিল আমাদের বাসায়। আমাদের মারার জন্য? যে কিনা আপনার কন্ঠ নকল করে বারবার আমাকে ডাকছিল দরজা খোলার জন্য?”

ওর এমন প্রশ্নে মুহূর্তেই মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেল শ্রাবণের। সে মাথা নিচু করে ফেলল। যেন ভীষণ রকম চিন্তায় পড়ে গেল সে। তাকে চুপচাপ থাকতে দেখে চাঁদনী এবার তার কোল থেকে নিচে নেমে গেল। পাশে বসে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আবার বলে উঠলো,

“কী হলো আপনি কোন উত্তর দিচ্ছেন না কেন? আপনি তো আমাকে বলেছিলেন আমাকে সব বলবেন। তাহলে এখন কেন চুপ করে আছেন? আমি সব জানতে চাই। বলুন আমাকে, কি হয়েছিল সেদিন রাতে?”

শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে ওর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলতে শুরু করল,

“আমি তোমাকে হারাতে চাই না চাঁদপাখি। তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। তাই তোমাকে সব সত্য কথা বলতে ভয় করছে। তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে সরে যাও। তাহলে আমি সবকিছু ধ্বংস করে দেবো। আমি চাইনা আমার কারণে কারো কোন ক্ষতি হোক। কিন্তু আমি নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারি না। আর যখন রাগটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন আমাকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা পৃথিবীর কারো থাকে না। তাই আমার রাগ কমানোর একমাত্র উৎস তুমি। তোমাকে আমি হারাতে চাই না। আমি তোমাকে সব বলবো। কিন্তু তার আগে তোমার আমাকে কথা দিতে হবে। সব শোনার পর তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। আমায় ভুল বুঝবে না। আমায় ছুঁয়ে প্রমিস করো।”

এবার চাঁদনীর মনে বেশ ভয় বাসা বাঁধে। সে বুঝতে পারে না কি এমন কথা যার জন্য শ্রাবণ তাকে এভাবে বলছে। তবুও সবকিছু জানার কৌতূহলে সে রাজি হয়ে যায়। ওকে ছুঁয়ে প্রমিস করে,

“আমি আপনাকে ছুঁয়ে প্রমিস করছি শ্রাবণ। যা কিছু হয়ে যাক না কেন আমি কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবো না। আপনাকে ভুল বুঝবো না। আপনি সবকিছু নির্ভযে বলতে পারেন আমায়।”

ওর কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে শ্রাবণ। ছোট্ট করে একটি শান্তির নিশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে,

“পৃথিবীর দক্ষিন সীমান্তের শেষপ্রান্তে একটি গভীর জঙ্গলের মাঝখানে আছে বিশাল এক ভ্যাম্পায়ার রাজ্য। যার আশেপাশে কোন বাড়িঘর তো দূর কোনো পশুপাখি বা মানুষের বিন্দুমাত্র চিহ্নটুকু নেই। সেই জঙ্গলের চারিপাশে বিশাল সমুদ্রে ঘেরা। আর সেখানে পৃথিবীর কারো যাওয়ার মত ক্ষমতা নেই। সেই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা ছিলেন আমার দাদু। আর তার একমাত্র ছেলে আমার বাবা এরিক। তিনি ছিলেন ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজকুমার। পাশাপাশি সবচাইতে শক্তিশালী একজন ভ্যাম্পায়ার।”

“এতটা শক্তিশালী হওয়া সত্বেও দাদুর শক্তির কাছে তার শক্তি ছিল তিল পরিমান। তাই নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে প্রত্যেক আমাবস্যার রাতে একটি করে কুমারী মেয়ের রক্ত পান করতে হতো তার। এভাবে ১০১ টি আমাবস্যার রাতে ১০১ জন কুমারী মেয়ের রক্ত পান করলে বাবা হয়ে উঠত দাদুর মত শক্তিশালী একজন ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু ৪০ টি কুমারী নারীর রক্ত পান করার পর 41 জনের বেলায় বাবা একটি ভুল করে বসে। আর সেই ভুলটি ছিল একটি কুমারী নারীর প্রেমে পড়ে যাওয়া। সে একজন ভ্যাম্পায়ার হওয়া সত্ত্বেও আমার মায়ের প্রেমে পড়ে যায়। যে কি না একজন সাধারন মানুষ ছিলো।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৯
#M_Sonali

“এতটা শক্তিশালী হওয়া সত্বেও দাদুর শক্তির কাছে তার শক্তি ছিল তিল পরিমান। তাই নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে প্রত্যেক আমাবস্যার রাতে একটি করে কুমারী মেয়ের রক্ত পান করতে হতো তার। এভাবে ১০১ টি আমাবস্যার রাতে ১০১ জন কুমারী মেয়ের রক্ত পান করলে বাবা হয়ে উঠত দাদুর মত শক্তিশালী একজন ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু ৪০ টি কুমারী নারীর রক্ত পান করার পর ৪১ জনের বেলায় বাবা একটি ভুল করে বসে। আর সেই ভুলটি ছিল একটি কুমারী নারীর প্রেমে পড়ে যাওয়া। সে একজন ভ্যাম্পায়ার হওয়া সত্ত্বেও আমার মায়ের প্রেমে পড়ে যায়। যে কি না একজন সাধারন মানুষ ছিলো।”

একনাগাড়ে এতোটুকু বলে একটু দম নিল শ্রাবণ। ওকে থামাতে দেখে উত্তেজিত কণ্ঠে চাঁদনী বলে উঠলো,

“তারপর, তারপর কি হলো? আপনার বাবা কি নিজের শক্তি পেয়েছিল। নাকি আপনার মাকে ভালোবাসার কারণে তার কোন ক্ষতি হয়েছিল?”

প্রশ্নটা শুনেই একটি ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। তারপর আবার বলতে শুরু করল,

“মাকে ভালোবাসার পরেও বাবা সিদ্ধান্ত নেয়, সে তার শক্তি পাওয়ার জন্য প্রতি আমাবস্যা রাতে কুমারী মেয়েদের মেরে নিজের কাজ হাসিল করবে। সে অনুযায়ী সে একের পর এক কুমারী মেয়েকে মারতেই থাকে। আর সেই ফাঁকে মায়ের সাথে ও তার একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মা কখনোই বাবাকে সন্দেহ করেনি। সে অনেক সাদাসিধা মানুষ ছিলেন। বাবা তার সাথে এমন ভাবে কথা বলতো আর এমন এমন কাজ করতো যে মা সন্দেহ করতে পারেনি। মা ছিল এতিম। তার আপন বলতে কেউ ছিলনা। দূর সম্পর্কের এক মামার কাছে বাড়ির চাকরানি মত বড় হয়েছিলেন তিনি। আর তার এই কষ্ট দেখে এবং তার সাদাসিধে ভাবটা দেখে বাবা তার প্রেমে পড়ে। যদিও ভাম্পায়ার রাজ্যে অনুমতি ছিল না কোন মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর। কারণ ভ্যাম্পায়ারেরা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু বাবা সেই নিয়ম এর উল্টোটা করেন। যদিও এ ব্যাপারে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে কেউই তখন জানত না। একসময় বাবা চুপ করে বিয়ে করে ফেলেন মাকে। কিন্তু বিয়ের পর মা ধীরে ধীরে সন্দেহ করতে থাকে বাবার কান্ড কালাপ দেখে। কারণ বাবা দিনের বেলা কখনোই বাইরে বের হতেন না। সারাক্ষণ ঘরে মধ্যে থাকতেন। শুধু রাত্রে বের হতেন। মা কখনো রান্না করলেও তিনি খেতেন না। এতে মার মনে সন্দেহ বাসা বাঁধে। কিন্তু সেই সন্দেহটা প্রকট হয় তখনই, যখন বাবা তার খুব কাছাকাছি চলে আসে। তখনই তার মাঝে একটা হিংস্রতা খেয়াল করতেন তিনি। চোখ দুটি মুহূর্তে লাল হয়ে যেত। মার গলার কাছে আসতেই তিনি ছিটকে দূরে সরে যেতেন। সেখানে থাকতেন না। তার এই আচরণে বেশ বিরক্ত হন মা। কারন বিয়ের পর তিন মাস কেটে যাবার পরেও তারা কখনও এক হননি। সব সময় বাবা এভাবে তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রচন্ড পরিমানে ভালোবাসেন মাকে। তাই একদিন রাগ করে মা তাকে প্রশ্ন করে বসে। কেন সে এমন করে। বাবা সেদিন তাকে কোনো উত্তর দেয়নি। তাকে ফেলে রেখে চলে যায় ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। এর মাঝে দাদু সবকিছু জেনে যায়। বাবার উপর প্রচন্ড রেগে যান তিনি।

বাবাকে তিনি অনেকবার বোঝায় মাকে ছেড়ে দিয়ে তার রক্ত পান করে নিজের শক্তি হাসিল করতে। কিন্তু বাবা সেটা মানতে নারাজ। তাই বাধ্য হয়ে দাদু নিজের ভ্যাম্পায়ার পাঠাতে চান মাকে মেরে ফেলার জন্য। কিন্তু বাবা তাদের মাঝে বাধ সাধে। শেষে বাবার সাথে পেরে না উঠে অনেক চিন্তা ভাবনার পর দাদু একটি সিদ্ধান্ত নেন। বাবাকে নিয়ে আলাদা বসেন। আর বাবাকে একটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। যেটা করতে পারলেই একমাত্র আমার মাকে নিজের বৌমা হিসেবে মেনে নেবেন তিনি। আর মায়ের কোনো ক্ষতিও হতে দিবেন না। বাবা কোন কিছু না ভেবে তার কথায় রাজি হয়ে যায়। সেটাই ছিল বাবার সবচেয়ে বড় ভুল।

দাদু বাবাকে শর্ত দিয়েছিল মাকে সবকিছু জানিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে নিয়ে আসতে। আর তাকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে থাকতে হবে। প্রতিদিন দাদু একটা জরিবুটি দিবে যেটা মায়ের খেতে হবে। এবং একটি মন্ত্র দিবে যেটা প্রতিদিন মায়ের পাঠ করতে হবে। সেই সাথে মায়ের প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় থাকবে একগ্লাস টকবকে তাজা রক্ত। তাহলে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেবে এমন শক্তিশালী সন্তান যে শক্তিশালী আজ পর্যন্ত ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে কেউ হয়নি। যার মাঝে থাকবে দুই সত্তার ভয়ংকর শক্তি।”

এতোটুকু বলে থামল শ্রাবন। ওকে থামতে দেখে চাঁদনী নড়েচড়ে বসল। বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,

“থামলেন কেন বলুন। তারপর কি হল, আপনার মা কি সেই নিয়ম গুলি মেনে চলতে পেরেছিল? একজন মানুষ কিভাবে টগবগে তাজা রক্ত পান করতেন? আমার তো ভাবতেই গা ঘিনঘিন করছে। প্লিজ আপনি বলুন তারপর কি হয়েছিল?”

ওর কথার উত্তরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। তারপর আবার বলতে শুরু করল,

“বাবা ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে ফিরে আসেন মায়ের কাছে। এসে দেখেন তিনি মন খারাপ করে বসে আছেন। বাবাকে দেখেই একনাগাড়ে হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। বাবা তার কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না। তার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই নিজের আসল রূপ মানে ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করেন। মুহূর্তেই মা যেন থমকে যান। ভয়ে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারান। উনি জ্ঞান হাড়াতেই বাবা ওনাকে তুলে নিয়ে সোজা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে আসেন। আর এমন একটি কক্ষে ওনাকে রাখেন যেখানে কোনো ভ্যাম্পায়ার যাওয়ার মত শক্তি পাবে না। উনি অজ্ঞান অবস্থায় থাকতেই দাদু চালাকি করে সবার আড়ালে তাকে কিছু একটা খাইয়ে দেয়। যেটা বাবা নিজেও জানতো না। যখন মায়ের জ্ঞান ফেরে তখন সে একদম স্বাভাবিক হয়ে যায়। মনেই হয় না যে উনি কোনো রকম ভয় পেয়েছে। ব্যাপারটা বাবা খেয়াল করে বেশ অবাক হন। তিনি মাকে জিজ্ঞেস করেন। মা তাকে কেন কোনো প্রশ্ন করছে না। কেন ভয় পাচ্ছে না। মা তাকে শান্ত ভাবে উত্তর দিয়েছিল যে তার ভয় করছে না। তার শুধু বাবাকে চাই।

তারপর থেকে বাবা ও মায়ের কাছে গেলে কখনও রক্তের পিপাসা উঠত না। সবকিছুই যেন স্বাভাবিক চলতে থাকে। এভাবে প্রায় ৩ মাস কেটে যাওয়ার পরেই মা বুঝতে পারেন তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। তার পেটে সন্তান এসেছে। খবরটা শুনতেই সবচাইতে বেশি খুশি হন আমার দাদু। তার মাঝে যেন খুশির অন্ত থাকে না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে তিনি সকল ভ্যাম্পায়ারদের অনুমতির দেন মানুষের পৃথিবীতে পৌঁছে সবাই একটা করে মানুষের রক্ত খেয়ে আনন্দ করতে।”

এতোটুকু বলতেই চাঁদনী ভয়ে শিউরে ওঠে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে ওঠে,

“আল্লাহ কি মারাত্মক ব্যাপার। তারপর, তারপর কি হয়েছিল? তাহলেতো পৃথিবীর অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল সেদিন ভ্যাম্পায়ারদের হাতে, তাই না”

“হ্যাঁ ঠিক তাই হয়েছিল। দাদুর সেই অনুমতির কারণে ভ্যাম্পায়ারেরা ইচ্ছামত সেদিন মানুষ খুন করেছিল তাদের রক্ত পান করে। এক রাতে সেদিন অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল। সারা পৃথিবীতে যেটা ছিল একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

তারপর এভাবে মানুষ মারতে গিয়ে বেশ কয়েকটা ভ্যাম্পায়ারও মানুষের হাতে মারা যায়। কারণ তারা বাদুড়ের রুপে মানুষের ঘরে ঢুকে রক্ত পান করতে গিয়েছিলো। সেই ঘটনার পর ভ্যাম্পায়ারেরা আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে মানুষের জন্য। তারা নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মানুষ খুন করার জন্য পাগল হয়ে যায়। কিন্তু দাদু তাদের অনুমতি দেয়না বলে তারা সেটা করতে পারে না। সবাই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যেই থেকে যায়।

মা প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। প্রতিদিন এক গ্লাস রক্তের জায়গায় অনেক বেশি তাজা রক্ত পান করতে থাকে। যেটার কারণ বাবা বুঝতে পারেনা। দাদু প্রতিদিন মাকে কোন একটা জরিবুটি খাওয়া তো। যেটা বিনা সংকোচে মা খেয়ে নিতো। বাবা এতে বেশ অবাক হলেও মনে মনে খুশি হন। কারণ দাদু তার এত যত্ন নিচ্ছেন বলে। কিন্তু বাবা জানতেন না এটার পরিণতি কতটা ভয়ানক হতে পারে। ধীরে ধীরে যখন মায়ের সন্তান প্রসবের সময় হয়ে আসে। তখন’ই,,,,,!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,