মনের আড়ালে পর্ব-০৫

0
1185

#মনের_আড়ালে
Part_5
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

ইশমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ঠোটদুটো চেঁপে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এল ।ইশমি নিজের রুমেই যাচ্ছিল আর অমনি জাহিদ তার সামনে এসে দাঁড়াল ।ইশমি থতমত খেয়ে গেল জাহিদকে এভাবে তার সামনে দাঁড়াতে দেখে ।তার দিকে কেমন লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর দাঁত বের করে হাঁসছে ।জাহিদ হেঁসে বলে উঠল
কেমন আছ ইশমি মামনি ভালো আছো তো ? কালকে রাত্…. জাহিদ আর কিছু বলার আগেই ইশমি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে এল নিজের রুমে ।সে রুমে গিয়েই দেখতে পেল তিথি বিছানায় বসে আছে ।
তিথি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল তোর ঠোটে কি হয়েছে ?
ইশমি ঠোটে আলত করে ছুঁয়ে ইতস্ততভাবে বলল কেঁটে গেছে ।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল কিভাবে কাঁটল ?
ইশমি আমতা আমতা করে বলল আ্ দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ।
তিথি রাগী কন্ঠে বলে উঠল আমারে কি বলদ মনে হয় তোর ?আমি এইচ এস সি তে ফেইল করতে পারি কিন্তু বলদ না ।দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে কারো ঠোট এভাবে কাঁটে না ।সে যাই হোক তুই বস আমি মলম আনছি ঠোটের কাঁটা জায়গাটায় দিতে হবে নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে ।
ইশমি তড়িৎগতিতে বলে উঠল আপু মলম দেয়া লাগবে না এমনিতেই সেরে যাবে ।
তিথি ঠোটে আঙুল দিয়ে ইশমিকে ইশারায় বসতে বলল ।অগত্যা ইশমি বসল তিথি মলম এনে যত্নসহকারে ঠোটে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিল আর তখনি আহিবা ইশমির রুমে এসে ইশমির ঠোটের দিকে লক্ষ্য করে বলল জানো তো তিথি আপু আমার এক ফ্রেন্ড আছে না ওর বয়ফ্রেন্ড ওর ঠোট কামড়ে এভাবে কেটে দিয়েছিল ।ইশমি আর তিথির কান গরম হয়ে গেল ।দুজনেই লজ্জায় পরে গেল কথাটা শুনে ।তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আহিবাকে ধমকে বলল এই তুই চুপ করবি এসব কি ধরনের কথাবার্তা হুম যা এখান থেকে বলছি ।
আহিবা ভেংচি দিয়ে রুম থেকে চলে গেল ।আহিবা চলে যাওয়ার পর তিথি ফিঁক করে হেসে বলল আস্ত বেয়াদপ একটা ।
ইশমিও ফিঁক করে হেঁসে দিল ।
________________

ও মাই গড তুই সোজা ইশমির মুখে ডাস্টার ছুঁড়ে মেরেছিস ? মাহিম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

তো কি করব মাথায় ভয়ংকর রাগ চেঁপেছিল মন চেয়েছিল তখনি খুন করে গুম করে দেই ওকে থমথমে মুখ নিয়ে অভিক বলল ।

মাহিম বলল তুই কেন ওর পিছে পরে আছিস ? ওর জন্য নিজের বাবার এত বড় অফিস রেখে ভার্সিটিতে চাকরি নিয়েছিস শুধু মাত্র ওকে প্রতিদিন দেখা্র জন্য কিন্তু কোনো তো লাভ হলো না শুধু শুধু সময় নষ্ট করছিস ।

অভিক শান্ত কন্ঠে বলল আমি নিজের লাইফের উপর বিরক্ত কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার ।

মাহিম কিছুক্ষণ ভেবে উৎসাহিত কন্ঠে বলল আমার একটা আইডিয়া এসেছে মাথায় ।এতে ইশমি কেন ওর বাপও তোকে মেয়ে দিতে তোর পায়ে পরবে ।

অভিক ভ্রু কুঁচকে বলল কি আইডিয়া ?

মাহিম বলা শুরু করল আমাদের বাড়ির পাশে আকাশ আছে না ও একটা মেয়েকে পছন্দ করত কিন্তু মেয়েটা ওকে পাত্তাই দিত না ।মেয়ের পাত্তা না পেয়ে ও কি করল জানিস ?

অভিক উৎসুক হয়ে তাকাল মাহিমের দিকে জানার জন্য ।

ও মেয়েটার পাত্তা না পেয়ে একদম সোজা মেয়েটাকে রেপ করে দিল তারপর মেয়েটার বাবা মা একেবারে ওর পায়ে পরে গেল মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য তারপর ওদের বিয়েও হয়ে গেল ।তুই ও ইশমিকে….. আর কিছু বলার আগেই মাহিম খেয়াল করল অভিক দাঁতে দাঁত চেঁপে রাগী চোখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।

অভিক চোয়াল শক্ত করে বলল সব ছেলেরা এক না সবার মন মানসিকতাও এক না ।আমি এটা করার কথা ভাবতেও পারি না আর তোর মাথায় এটা আসল কিভাবে ? আমাকে তোর এত নিঁচু মানসিকতার মনে হয় ?

মাহিম পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বলল শান্ত হ অভিক আমি দুঃখিত আমি বুজতে পারিনি সরি ।

অভিক একটা জোড়ে দম নিয়ে বলল জাহান্নামে যাক ওই মেয়ে ।আমি আর ওকে পাত্তাই দিবো না কয়েকদিন পর ভার্সিটির চাকরি আমি ছেড়ে দিব ।আর প্যারা নিতে ভালো লাগছে না আমার ।
অভিক মাহিমের সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে বেরিয়ে আসল মাহিমের অফিস থেকে ।তাকে এখন বাসায় যেতে হবে ।

অভিক বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে পরল ।ও খুব ক্লান্ত ঘুমের প্রয়োজন ওর ।তাই চোখ বুজে রইল কিন্তু ঘুম আসছে না বারবার ইশমির সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনটা তার চোখে ভাসছে ।চোখ বুজে ভাবতে লাগল তার সাথে ইশমির প্রথম দিন দেখা হওয়ার কথা ।
_________________
সেদিন সকাল থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল ।
অভিক একটা কাজের জন্য বাবার অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়েছিল নিজের গাড়ি নিয়ে এত বৃষ্টির মাঝেও।বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ঢুবে একাকার অবস্থা ।তাই সে আস্তেই ড্রাইভিং করছিল ।হ্ঠাৎ তার চোখে পরল রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের একদম কিনারে একটা মেয়ের দিকে ।মেয়েটা ঘুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।তার নিজেরও জানা নেই সেদিন কেন এভাবে সে মেয়েটাকে দেখেই আচমকা গাড়িটা থামিয়ে দিল ।মেয়েটার গায়ে থাকা জামাটা বৃষ্টিতে ভিজে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে ।মাথার চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে চিবুকে ।গোলাপি ঠোটদুটো বৃষ্টির পানির ছোয়ায় চুবচুবে হয়ে আছে ।অভিক মেয়েটার দিকে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ ।সে মেয়েটার দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে ভাবল হয়ত মেয়েটা বৃষ্টির জন্য এভাবে দোকানে দাঁড়িয়ে আছে , বৃষ্টি কমার জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে মেয়েটা আর বৃষ্টি কমলেই হয়ত এখান থেকে চলে যাবে ।অভিক ভাবল সে কি মেয়েটাকে নিজের গাড়ি করে ছেড়ে দিয়ে আসবে বাসায় ।যে-ই ভাবা সে-ই কাজ অভিক গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার দিকে আগাতে লাগল ।তখনো মুষলধারে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল ।অভিক মেয়েটার কাছে কোনো রকম বাক বিনিময় না করে বলল আমি কি আপনাকে কোনো হেল্প করতে পারি ?
অভিক লক্ষ্য করল মেয়েটা তার দিকে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ।মনে হয় এরকম কিছু মেয়েটা হয়ত প্রত্যাশা করেনি ।সে আবার বলল এই বৃষ্টির মধ্যে আপনার হয়ত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছে তাই বললাম আর কি ।অভিক কে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা তার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়াল ।অভিক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল ।অভিক মনে মনে ভাবল মেয়েটা হয়ত তাকে কোনো খারাপ ছেলে ভাবছে ।তাই সে নিজের ইগোটা বজায় রেখে আর কিছু না বলে সেখান চলে আসতে পা বাড়াতেই দেখল চায়ের দোকানের সামনে কয়েকটা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে।ছেলেগুলো মেয়েটার দিকে কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।অভিক ফিরে আবার মেয়েটার দিকে তাকাল ।মেয়েটা ছেলেগুলোকে দেখে ভয়ে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কাঁপছে ।এখন তার কি করা উচিত মেয়েটাকে এখানে ফেলেই চলে যাওয়া উচিত নাকি নিজের ইগো সাইডে রেখে মেয়েটাকে আবার তার সাথে যাওয়ার অফার করা উচিত ।পরক্ষনে তার মাথায় আসল মেয়েটা যদি আবার তাকে এ্যাটিটিউড দেখায় ।কিছুক্ষণ ভেবে সে নিজের ইগোটা সাইডে রেখে মেয়েটার সামনে গিয়ে বলল আপনি চাইলে আমায় বিশ্বাস করতে পারেন আমি আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দেব ।এবার অভিক কে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা তড়িৎগতিতে বলে উঠল আমি আপনার সাথে যাবো ।

চলবে,
@Nusrat Hossain