মনের আড়ালে পর্ব-২৮

0
910

#মনের_আড়ালে
Part_28
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

পুরো বাড়িটাতে ইশমি এখন একা ।অভিকরা একটু আগে বের হয়েছে ।কারোর-ই নাস্তা করা হয়নি ।রিশার ঝামেলাটা মিটিয়ে অভিক এসে পরবে বলেছে ।অভিক বের হবার আগে ইশমিকে বারবার বলেছে নিজের খেয়াল রাখতে আর বাড়ি থেকে বের না হতে ।ইশমি ফুলগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে ।আগেরবার ফুলগাছগুলো ভালোভাবে দেখা হয়নি ।
ইশমি চারপাশটা বেশ সময় নিয়ে ঘুরেঘুরে দেখল ।তারপর বাড়ির ভেতরে চলে গেল ।সময় যেন তার শেষ হচ্ছে না একা একা।সে আলমারি থেকে অভিকের একটা শার্ট বের করল ।শার্ট টা নাকে গুজে ধরল ।অভিকের গাঁ-এর একটা স্মেল পাচ্ছে সে শার্ট থেকে ।সে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে শাড়িটা খুলে অভিকের শার্ট টা পড়ল ।আবেশে দুই হাত দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ধরল ।তারপর বিছানায় ধাপাস করে শুয়ে পরল ।খুব ঘুম ঘুম পাচ্ছে এখন তার ।সে আর একমুহূর্ত চোখ মেলে রাখতে পারল না ঘুমে তলিয়ে গেল ।
______________________

বাড়িটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ।সাদাত চৌধুরি গম্ভীর মুখে বসে আছে ।বাড়ির বাকি সদস্যগুলো-ও থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে ।অফিসার সেই কখন এসে বসে আছে বাড়িতে ।মূলত তারা অভিকের আসার অপেক্ষা করছে ।
কিছুক্ষণ পর তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটল ।অভিকরা সবাই বাড়িতে ঢুকল ।অফিসাররা অভিক কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল আর বলল মি. অভিক আপনার নামে রাজীব খান কেস করেছে ।তার মেয়েকে ধোকা দেওয়ার জন্য ।আপনি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছেন ।আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে ।

কোনো রকম প্রতিশ্রুতি ঐ মেয়েকে আমি দেইনি অফিসার ঐ মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন আপনি অভিক তেজী গলায় বলল ।

সাদাত চৌধুরিও বলল ঐ মেয়েকে তো আমার ছেলে পছন্দ-ই করে না প্রতিশ্রুতি তো সেই দূরের কথা ।

অফিসার বলে উঠল কিন্তু রাজীব চৌধুরি তো আমাদের বললেন আপনার ছেলে উনার মেয়েকে বিয়ে করার প্রচারণা দেখিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছে যার কারনে উনার মেয়ে কাল রাতে সুইসাইড করার চেষ্ট করেছে ।

অভিক দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল ঐ মেয়ে মরুক বা বাঁচুক আই ডোন্ট কেয়ার ।আমি শুধু একটা কথাই বলব ঐ মেয়ের সাথে না আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল আর না কোনো আত্বীয়তার সম্পর্ক ছিল।আমার রুচি অতো খারাপ না আমি ওর মত একটা মেয়েকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাবো আর প্রতিশ্রুতি তো দূরের কথা ।

আবিরও বলে উঠল রিশা মেয়েটা নিজেও জানে ভাই অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে অফিসার ।সব জানার পর-ও ঐ মেয়ে কাহিনী করছে এখন ।

অভিক নিজেকে শান্ত করে বলে উঠল অফিসার আপনি যদি এটা প্রমান করতে পারেন যে আমি নিজে রিশা মেয়েটাকে কোনোরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তাহলে আমি নিজে হেঁটে আপনার থানায় যাবো ।

অভিকের কথা শুনে অফিসার দমে গেলেন ।তিনি দলবল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন ।

পুলিশরা চলে যাওয়ার পর আফিয়া রহমান ছেলের সামনে এসে কান্নারত গলায় বলে উঠল

তুমি ঐ মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলেছো ?

অভিক নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিল হ্যাঁ বিয়ে করেছি ।

আফিয়া রহমান বড় একটা দম নিয়ে বললেন ঐ মেয়ের মা আমাদের অপমান করার পরেও তুমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে অভিক ?

অভিক আগের মতই বলল সেটা অনেক আগের কথা আর অপমান তুমিও করেছো বরং তার থেকে বেশি করেছো তুমি ।উনি শুধু আমাদের না করেছিল কিন্তু তুমি কি করেছো ? উনাকে কথা বলার-ই সুযোগ দাওনি তুমি ।একদম বাড়ি থেকে গাঢ় ধাক্কা দিয়ে বের করেছো ।কি ভেবেছো জানি না এসব আমি ?

আফিয়া রহমান ছেলের এই কথার প্রতিত্তরে আর কোনো কথা খুঁজে পেলেন না ।তিনি শুধু গম্ভীর গলায় বললেন
ঐ মেয়েকে আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন-ও মেনে নিব না আর এই বাড়ির চৌকাঠে-ও পা রাখতে দিব না ।তুমি ঐ মেয়েটাকে নিয়েই পরে থাকো ।আমায় আর মা বলে পরিচয় দিতে হবেনা তোমায় ।এত আদর যত্নে বড় করে এখন এই হাল বলেই তিনি আর একমুহূর্ত দেরি না করে গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেলেন ।

অভিক মায়ের কথা অগ্রাহ করে বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই পেছন থেকে রেহানা বলে উঠল অভিক নাস্তাটা করে তারপর যাও ।

অভিক পেছনে ফিরে রেহানাকে বলল আজকে থাক চাচী আমায় এখন যেতে হবে ।

রেহানার সাথে বাকি সবাই-ও জোড় করল নাস্তা করে যেতে ।অভিক আর অগ্রাহ্য করতে পারল না সবার কথা ।

রেহানা বলল তুমি রুমে যাও ।আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি ।

অভিক রুমে চলে এল ।
একটুপর রেহানা নাস্তা নিয়ে এল অভিকের জন্য ।অভিক নাস্তা করতে লাগল।রেহানা অভিক কে নাস্তা করতে দেখে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে দরজা চাঁপিয়ে দিয়ে অভিকের রুম থেকে বের হয়ে গেল ।

অভিক খাওয়া শেষে রুম থেকে বের হতে নিলে সে দেখল দরজা খুলছেনা ।কেউ বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে ।অভিক কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিল কিন্তু কেউ দরজা খুলল না ।সে রাগে ক্ষোভে একটা লাথি দিল দরজায় ।সব আম্মুর প্ল্যান ।মেয়েটা বাড়িতে একা আছে ।তাকে যেভাবেই হোক বের হতে হবে ।ফোনটা-ও এখন কাছে নেই । তাড়াহুড়ো করে বাড়িতেই রেখে এসেছে ।ফোনটা কাছে থাকলে বাবাকে বা আবিরকে ফোন দিয়ে জানালে দরজাটা খুলে দিতে পারত তারা।উফফফ বিপদ আসলে সব দিক দিয়েই আসে ।মেয়েটা একা একা বাড়িতে কি করছে কে জানে ? অভিক ভাবে ।

বিকাল পাঁচটা ,

—- তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো আফিয়া ।দাও চাবি দাও বলছি সাদাত চৌধুরি ক্ষীপ্তকন্ঠে বলে উঠল ।

——- আফিয়া রহমান জেদি গলায় বললেন আমি চাবি দিব না ।তোমার যদি মনে হয় আমি বেশি বাড়াবাড়ি করছি তো আমি একদম ঠিক করেছি ।

——– সাদাত চৌধুরি থমথমে গলায় বললেন তুমি একটা নিষ্পাপ মেয়ের সংসার ভেঙে দিও না আফিয়া ।আল্লাহ সহ্য করবেনা ।

——- আফিয়া রহমান সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললেন ওরকম নিষ্পাপ মেয়ে রাস্তায় হাজারটা পরে আছে আর ঐ বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই ।আর তুমি ! রেডি হয়ে নাও ।পুরোনো শার্ট প্যান্ট ছেড়ে নতুন শার্ট প্যান্ট পরে নাও ।আমাদের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা ।

সাদাত চৌধুরি একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললেন এত জেদ ভালো না আফিয়া।

আফিয়া রহমান মুচকি হেঁসে বললেন ছেলে যদি নিজের জেদ বজায় রেখে আমার অপছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি-ও ওর মা !

সাদাত চৌধুরি থমথমে গলায় বললেন কম্পিটিশন লেগেছো ছেলের সাথে ?

আফিয়া রহমান নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিলেন তোমার যা মনে হয় ।
আফিয়া রহমান নিচে নেমে এলেন ।ছেলে সোজা কথার মানুষ না তাই প্ল্যান করেই অভিক কে ঘরবন্দি করে রেখেছেন ।এমনকি দুপুরের খাবার-ও দেননি ছেলেকে ।তিনি যা করছেন ঐ দুই টাকার মেয়েটার হাত থেকে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য-ই করছেন ।কোনো ভুল তিনি করছেন না আফিয়া রহমান মনে মনে ভাবলেন ।বাড়ি সাজানো হচ্ছে দুপুর থেকে ।রিশা আর রিশার পরিবার রাতেই এসে পরবে ।তারা এসে পরলেই অভিক আর রিশার বিয়েটা হয়ে যাবে ।আফিয়া রহমান একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লেন ।তিনি যেমনভাবে ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ঠিক তেমনভাবেই বিয়ে হবে ছেলের আরমাত্র কিছুঘন্টা ।
_____________________

ইশমি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল ।চোখটা কিছুক্ষণ ডলে নিয়ে ভীতদৃষ্টিতে চারদিকে চোখ বুলাল ।তারপর দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকাল বিকেল পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট ।এতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে ?রাতে ঘুম হয়নি বিধায় তাই হয়ত এতক্ষণ পড়ে পড়ে ঘুমালো ।সে হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে নিচে নেমে এল সারা বাড়িতে চোখ বুলাল অভিক এখনো আসেনি ।সে বাইরে চলে এল ।তার খুব কান্না পাচ্ছে ।অভিক কে কি পুলিশ থানায় নিয়ে গেল ?কোনো বিপদ হলো না তো অভিকের আবার ? তার ইচ্ছে করল একছুটে অভিকদের বাড়ি যেতে ।যে পর্যন্ত না সে নিজে সব জানবে ঐ পর্যন্ত সে শান্তি পাবেনা ।কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা সে ?
_________________

রাত আটটা বিশ মিনিট ,

অভিক বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আধশোয়া হয়ে আছে।
তখনি কেউ দরজা খুলে রুমে ঢুকে বলল
অভিক ডার্লিং এখন আমাদের বিয়ে তুমি রেডি তো ?

রিশার গলা শুনে অভিক চোখ মেলে তাকাল সামনে ।অভিক ভাবছে এই মেয়েটা না সুইসাইড করেছে তাহলে এখানে কি করছে ? আর কার বিয়ের কথা বলছে এই মেয়ে ?

রিশা মুচকি হেঁসে অভিকের অবাক হওয়ার সুযোগ নিয়ে অভিকের খুব কাছে এসে দাঁড়াল আর অভিকের বুকে হাত রেখে বলল

অবাক হচ্ছ ? ভাবছ সুইসাইড করেছি তো আবার এখানে কি করছি ? রিশা ডানহাতটা অভিকের চোখের সামনে নিয়ে বলল বেশি কাটেনি অল্প-ই কেঁটেছে ।

অভিক রিশার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল সুইসাইড টা যখন করেছিলেই একটু ভালোভাবেই করতে ।তোমার মত একটা আপদ বিদায় হত ।আমার আফসোসের শেষ নেই তুমি মরলে না কেন বলোতো ?

রিশা হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল অভিকের কথা শুনে । যেন সে কোনো জোক্স শুনেছে ।সে হাঁসতে হাঁসতে বলল তোমায় না বিয়ে করে মরি কিভাবে আমি অভিক ?

অভিক রিশাকে অগ্রাহ করে চলে যেতে নিলেই রুমে হুড়মুড়িয়ে রিশার মা , বাবা , ভাই আফিয়া রহমান আর একটা হুজুর টাইপ লোক ঢুকল ।রাজীব খান রুমে ঢুকেই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললেন

তোমার পালানোর সব পথ বন্ধ ।কোনো লাভ নেই।
রাজীব খান হুজুর টাইপ লোকটাকে আদেশের স্বরে বলে উঠল

কাজী আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন ।

অভিক বিষ্মিত চোখে তার মায়ের দিকে তাকাল ।তার গলা শুকিয়ে গেল ।বুকটা কেমন ভার হয়ে আসছে ।রাগে কষ্টে অভিকের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে ।সে নিজের ঠোট কামড়ে চোখের পানি আটকে রাখার চেষ্টা করছে ।এমন ভয়ংকর পরিস্থিতে সে কোনোদিন-ও পরেনি ।চিৎকার করে তার বাবাকে ডাক দিতে চাইল কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না ।

চলবে,
@Nusrat Hossain