মনের আড়ালে পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
1349

#মনের_আড়ালে
Part_30
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

এই প্রথম ইশমি অভিকের সাথে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে ।একটা বিশেষ কারনে তাদের বাড়িতে আসা আর বিশেষ কারনটা হল আবির আর অনিতার বিয়ে ।আজকে গায়ে হলুদ আর কালকে বিয়ে ।তাদের বিয়ের পর মাঝখান দিয়ে একুশটা দিন চলে গেছে তাদের জীবন থেকে।বাড়ির প্রতিটা কোণায় আলো ঝলমল করছে ।বাচ্চারা হৈ হুল্লোড় করছে ।বড়রা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে নিজেদের কাজ করছে ।অভিকও বাড়িতে পা রাখার পর পরই কাজে লেগে গেছে ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা ।ইশমিও হাতে হাতে সবার সাথে এটাসেটা কাজ করে যাচ্ছে ।ইশমি আফিয়া রহমানকে বাড়িতে এসে দেখতে পায়নি ।সেদিনের পর সাদাত চৌধুরি আফিয়া রহমানকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ।উনাকে ছাড়াই বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে ।

সন্ধাবেলায় গায়ে হলুদে ছেলেরা সবাই গাঢ় বেগুনি কালার পাঞ্জাবি আর মেয়েরা সবাই মিষ্টি কালার শাড়ি পরেছে ।
ইশমি শাড়ি পরে সেই কখন থেকে অভিক কে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু কোথাও তার বরের ছায়াটুকুও খুঁজে পাচ্ছেনা ।আজকে সারাদিন তার চেহারাও ঠিকভাবে দেখতে পায়নি ইশমি কথাবলা তো দূর ।

ভাবি তুমি কি কাউকে খুঁজছ ?

ইশমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল আফরিন আর তিথি একহাতে শাড়ির কুচি ধরে দাঁড়িয়ে আছে ।সে আফরিনকে জিজ্ঞেস করল

তোমার ভাইকে কোথাও দেখেছ ?

ভাইকে তো দেখলাম মাহিম ভাইয়ার সাথে কথা বলছে ।তোমার কি খুব বেশি দরকার ভাইকে তাহলে আমি ডাক দিয়ে দিচ্ছি ।

ইশমি বলে উঠল না না থাক তার প্রয়োজন নেই ।ডাক দিতে হবেনা তাকে ।

তাহলে চলো আমরা বরং নিচে যাই একটু পরেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে ।

ইশমি আফরিন আর তিথির সাথে নিচে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল মাইশা ভাবি কই ?

মাইশা ভাবি নিচেই আছে তিথি বলল ।

হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ।একে একে সবাই আবিরকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে ।
অভিক আর ইশমিও একসাথে আবিরকে হলুদ লাগিয়েছে ।
সবার হলুদ লাগানো শেষ হলে এখন সবাই নাচানাচি করছে ।সবার আগে আবির-ই নাঁচানাঁচি শুরু করে দিয়েছে ।আবিরের সাথে বাকিগুলোও তাল মিলাচ্ছে ।মাহিম তিথিকে টেনে নিয়ে গেল তার সঙ্গে নাঁচার জন্য ।আফরিন আবিরের সাথে উড়াধুরা নাঁচানাঁচি করছে ।মিনহাজও নাঁচছে আর মাইশা এককোণে দাঁড়িয়ে বরের নাঁচ দেখছে ।সে বেশি নড়াচড়া করতে পারেনা কারন সে প্রেগনেন্ট ।অভিক এইফাঁকে সবার আড়ালে ইশমিকে টেনে নিয়ে দেয়ালে ঠেকিয়ে নিজের গালে একটু হলুদ মাখিয়ে নিয়ে নিজের গালের হলুদ ইশমির গালে লাগিয়ে দিল গালে গাল ঘর্ষন করে । তারপর ইশমির পেট থেকে শাড়িটা সরিয়ে কিছু হলুদ ইশমির পেটে লাগিয়ে দিল ।ইশমিকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে কোনো কথা না বলে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেল অভিক ।ইশমি হতবিহ্বল হয়ে গালে হাত দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ ।

ইশমির খুব ঘুম পাচ্ছে তাই সে অভিক কে বলে উপরে এসে পরে ।রুমে এসে শাড়িটা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে ।অভিক তাকে আগেই বলে দিয়েছে আজকে রাতে তার সাথে অভিক থাকতে পারবেনা ।অভিক আর তার ভাই ব্রাদার , বন্ধুরা মিলে সবাই ড্রিংক করবে ।ইশমি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমে তলিয়ে পরল ।
__________________

বিয়ে শেষে অনিতাকে মায়ের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আনা হল ।অনিতা বাপের বাড়ি থেকে আসার সময় কান্নাকাটি করে অজ্ঞানঅবস্থা প্রায় ।আবির অনিতাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাড়ির দরজার সামনে ।বরন করা হবে তারপর তারা ভেতরে ঢুকবে ।আবিরের কোলে অনিতাকে দেখে সবাই হাসাহাসি , ঠাট্টা মসকরা করছে ।আবির এসবে পাত্তা দিচ্ছেনা ।উল্টো অনিতাকে একদম বুকে ঝাপটে ধরে রেখেছে ।অভিক এসব দেখে ঠোট কামড়ে হেঁসে আবিরকে বলে উঠল একটু রয়ে সয়ে আবির একটু রয়ে সয়ে ।এত তাড়াহুড়ো কিসের ?

আবির চোখ ছোট ছোট করে বলে
প্রতিশোধ নিচ্ছ ?

অভিক কিছু বলল না হাঁসল শুধু ।

বৌ বরন শেষে কিছু নিয়ম কানুন পালন করতে হল আবির আর অনিতাকে।রাত বারোটায় আবির তার রুমে যাচ্ছে ।তার পিচ্চি বৌটা তার জন্য অপেক্ষা করছে ।

________________

বাড়ির বৌ তাই দায়িত্বটা একটু বেশি ছিল ইশমির ।বিয়ে বাড়ির কোনো কাজকে সে হেলাফেলা করেনি বরং নিজের দায়িত্ব ভেবে কাজগুলো যথাযথভাবে করেছে সে।বিয়ের বাড়ির প্রত্যেকটা কাজ সে খুশিমনে করেছে ।কিন্তু তার শ্বাশুরির জন্য খুব খারাপ লেগেছে ।বাড়িতে ছেলের বিয়ে অথচ তিনি নেই ।নিজের ছেলে না হোক বাড়ির ছেলে তো ? কেউ উনাকে আনার চেষ্টা-ও করেনি বিয়েতে ।আর তার শ্বশুর তো দিব্যি স্ত্রীকে ছাড়া বিয়েতে হৈ-হুল্লোড় করেছে ।উনার মধ্যে স্ত্রীর জন্য খারাপ লাগার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি ।এমনকি অভিক আর আফরিনের মধ্যেও মায়ের জন্য খারাপ লাগা দেখা যায়নি ।

সারাদিন ভারী শাড়ি পরে থাকার কারনে খুব বেশি ক্লান্ত লাগছে ইশমির ।কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিল সে ।অভিক মনে হয় ছাদে বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ।ইশমির খুব রাগ লাগে ।আজকে দুটো দিন হল অভিকের সাথে কথা হয়নি ভালোমত এমনকি অভিকও তার সাথে কথা বলার কোনো চেষ্টা-ও করেনি ।ইশমি বিরবির করে বকল অভিক কে খারাপ লোক একটা বিয়ের তালে পরে বৌকে-ই ভুলতে বসেছে ।ইচ্ছে করেই এমন করে ।

রাত একটা বাজে ।ইশমি অভিকের কথা ভাবতে ভাবতে সেই কখন ঘুমে তলিয়ে গেছে ।অভিক একটু আগেই রুমে এসেছে । এসেই বাথরুমে গেছে ফ্রেশ হতে ।মদের আয়োজন করা হয়েছিল ছাদে ।সে বেশি ড্রিংক করেনি অল্প-ই মদ গলাতে ডেলেছে ।সে গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হল মাত্র ।ইশমি বিছানায় মরার মত ঘুমোচ্ছে ।অভিক ঠোটে দুষ্টু হাঁসি ঝুলিয়ে লাইট টা অফ করে দিয়ে ইশমির সামনে এসে বসল ।ইশমির পেট থেকে জামাটা সরিয়ে পেটে শুরশুরি দিতে লাগল ।ইশমি ঘুমন্ত অবস্থাতে অভিকের হাতটা বারবার পেট থেকে সরিয়ে দিচ্ছে কিন্তু অভিক থামছেনা ইচ্ছেমত ইশমির পেটে , কমোরে শুরশুরি দিয়ে-ই যাচ্ছে ।হুট করে ইশমি চোখ মেলে বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে অভিকের দিকে তাকাল ।অভিকের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

এভাবে শুরশুরি দিচ্ছেন কেন শয়তান লোক ?

অভিক ঠোট চেঁপে হাসতে হাসতে ইশমির পাশে শুয়ে পরল ।ইশমি অভিকের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আরো রেগে গেল ।এমনিত দুটো দিন তার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করেনি এখন আবার নাটক শুরু করেছে ।ইশমি নাক ফুলিয়ে ধুম করে অভিকের বাহুতে কিল মেরে বসল ।আর রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলে উঠল

আমার ঘুম নষ্ট করলেন কেন বাজে লোক ?

অভিক ইশমির কথার কোনো জবাব দিল না ।সে এক পা ইশমির শরীরের উপর উঠিয়ে দিয়ে আরামে চোখ বুজল ।ইশমি যেন এতে আরো রেগে গেল ।সে অভিকের খুব কাছে গিয়ে অভিকের বুকে কামড় দিয়ে বসল ।এতে অভিক একটু ব্যথা পেল কারন ইশমি কামড়টা খুব জোড়েই দিয়েছে ।অভিক ইশমির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ ।পরোক্ষনে ঠোটে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে বলে উঠল

আগে বলবে তো তোমার রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে ।আমি কিন্তু সব সময়-ই রেডি আছি বলেই ইশমির ঠোটে টুপ করে কামড় দিয়ে বসল ।

ইশমি রাগে বালিশটা ছুড়ে মারল অভিকের দিকে ।অভিক হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল ।ইশমি আর নিজের অভিমানগুলো চেঁপে রাখতে পারল না ।সে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল

এই দুইদিন আমার কথা আপনার একটুও মনে পরেনি তাই না ? আমার কথা মনে পরবে কিভাবে ?আমায় তো আর আগের মত ভালো লাগেনা আপনার ।

অভিক ইশমিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল বিয়ে বাড়ি তো তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম তুমিও তো ব্যস্ত ছিলে খুব আর্ অভিক কে থামিয়ে ইশমি বলে উঠল
তাই বলে একটু ফোন-ও কি করা যেত না ?

অভিক ইশমির গালে ছোট করে চুমু খেয়ে বলল আচ্ছা সর‍্যি বাবা এই যে কানে ধরলাম হ্যাপি ? এবার একটু হাঁসো !ইশশ আস্ত ফুলন দেবি একটা ।একেবারে টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে ।

ইশমি ঠোট টিপে হেঁসে অভিক কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।

অভিক মুচকি হেঁসে বলে উঠল
কোথাও ঘুরতে যাবে ?

ইশমি অভিকের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল মানে ?

তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো ।কোথায় যেতে চাও ? তুমি যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই নিয়ে যাবো তোমায় ।

ইশমি খুশি হয়ে বলে উঠল সত্যি ?আমার না কক্সবাজার যাওয়ার খুব ইচ্ছে ।সাগর দেখতে খুব ইচ্ছে হয় আমার ।আপনি বরং আমায় কক্সবাজার নিয়ে চলুন ।

অভিক ইশমির কাধে চুমু খেয়ে বলল তবে তাই হোক ।আমরা তাহলে কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছি দু’দিন পর ।

ইশমি খুশিয়ে বাকবাকুম হয়ে অভিকের ঠোটের কোণে শক্ত করে চুমু খেল ।

সমাপ্ত
@Nusrat Hossain