#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৪
আরিয়ানের এমন কথা শুনে ভীষন লজ্জা পেলো সোনালী। কাদতে কাদতে চোখ একদম ফুলে গেছে সোনালীর কিন্তু আরিয়ানের কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ লাল করে ফেলেছে এখন………
হৃদয় ড্রাইভ করছে পাশের সিটে চুপ করে বসে আছে সোনালী……
—-” ভাবী, আপনার কি শরীল খারাপ?”
সোনালী আশে পাশে দেখে পরে বললো…..
—-” আপনি কি আমায় বলছেন?”
—-” আপনি ছাড়া এইখানে কি আর কেউ আছে?”
—” তাহলে আমায় ভাবী ডাকলেন কেনো? আমি আপনার বা আপনার ওই সাইকো বজ্জাত অ্যানাকোন্ডা ভাইয়ের কিছু হই না ওকে।”
—” ভাবী আপনি নিজেই সাপের গর্তে পা দিয়েছেন এখন তো ছোবল খেতেই হবে তাই না?”
হৃদয়ের কথা শুনে সোনালী কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললো……
—” ভাইয়া এইখানে আমার একটুও দোষ নাই সব দোষ আমার এক ফ্রেন্ডের। ও আপনার ভাইকে বাঁশ দিতে গিয়ে ভুল ক্রমে আমায় দিয়ে ফেলছে। প্লিজ আমাকে বাঁচান আপনি চাইলে আমার ওই ফ্রেন্ডের সাথে আপনার ভাইয়ের বিয়ে দিবো পাক্কা প্রমিজ।”
সোনালী কথা শুনে হৃদয় হাসতে লাগলো…….
—-” বাহ ভাবী আপনি তো খুব মজার মানুষ। অন্য কাওকে না আপনাকেই লাগবে আমার ভাবী হিসেবে। ”
—-” যেমন বড় ভাই ছোট ভাই কি আর সাদু সন্ন্যাসী হবে নাকি। আমি পড়লাম এক মহা সমস্যায় এখন যে কি হবে?”
—-” বেশি চিন্তা করবেন না। ব্রো ম্যাজিকের মত সব সমস্যা দুর করে দিয়েছে।”
—” কিভাবে ম্যাজিক করলো শুনি?”
—-” আপনি বাসায় গিয়ে আপনার পরিবারকে বলবেন যারা আপনার কিডন্যাপ করেছে তাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে আরিয়ান চৌধুরী আপনাকে বাঁচিয়েছে। আর কিছু ভালো ভালো সুনাম করবেন।”
হৃদয়ের এমন কথায় সোনালী টাস্কি খেয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে…….
—-” এইসব ভিলেন মার্কা বুদ্ধি ওই ছাগলের মাথায় কিভাবে আসে?”
—” আমার সামনে আমার ভাইকে গালি দিচ্ছেন এইটা যদি ভাইয়াকে বলি আপনার কি হবে বুঝতে পেরেছেন?”
—-” সরি সরি আর বলবো না প্লিজ বলবেন না।”
—” প্রথমবার বলে ক্ষমা করলাম কিন্তু পরবর্তীতে আর ক্ষমা হবে না।”
—-” হুম।”
হৃদয় ড্রাইভ করছে আর টুকটাক কথা বলছে সোনালীকে। বাসায় কি কি বলতে হবে সব বুঝাচ্ছে। সোনালী হৃদয়ের কথা শুনে মনে মনে বললো……
—” যাহ বাবা ভালোই হলো বাসায় আর এইসব বিয়ে টিয়ের কথা বলতে হবে না। এখন আপাতত এদের কথাই শুনি পরে না হয় অন্য কোনো প্ল্যান করে এই আরিয়ান নামক ভেজালটাকে সরাবো।”
।।
।।
।।
।।
হৃদয় সোনালীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সোনালীর বাবাকে কিছু কথা বলে চলে গেলো। যাওয়ার আগে সোনালীকে চোখ টিপ দিয়ে ইশারা দিলো যেনো ভালো করে সব বুঝিয়ে বলে। সোনালীও আরিয়ানের প্রচুর সুনাম করলো। সোনালীর বাবা মা নিয়ের মেয়েকে সুস্থ্য নিরাপদ দেখতে পেয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না……..
সোনালী বসে বসে ‘ মৌরি মরিয়ম ‘ আপুর লেখা ‘প্রেমাতল’ বইটি পড়ছে। যারা ভ্রমণ প্রেমী তাদের কাছে বইটি দারুন লাগবে বেশি। সোনালী বইটি পড়ে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে।
—” আমাকেও যদি কেউ এইভাবে ঘুরতে নিয়ে যেতো? আমার তো অনেক দিনের ইচ্ছা পুরো দেশ ঘুরা কিন্তু এমন কেউ নেই যে ঘুরতে যাবো।”
মন খারাপ করে আছে সোনালী ঠিক তখন ওর ফোনে কল আসলো। সোনালী দেখলো ইতি ফোন দিয়েছে। প্রচুর রাগ নিয়ে ফোন ধরেই প্রথম দিলো এক ঝাড়ি……
—-” শালী তোর জন্য আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গিয়েছে। তোর ওই বলদ মার্কা প্ল্যানের জন্য আমার ক্রাশ খাওয়া জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। তোকে সামনে পাইলে আমি জাপানিজ কুড়াল দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে হলুদ,মরিচ, লবণ লাগিয়ে তীব্র রৌদ্রে ভাজা ভাজা করে শুকিয়ে পাশের বাসার শায়লা আন্টির টমি কে দিবো খাওয়ার জন্য।”
—-” এই ওয়েট ওয়েট আগে বল কি হয়েছে তোর? আন্টি যে বললো তোকে লেখক আরিয়ান বাঁচিয়েছে তাহলে তুই এমন কথা বলছিস কেনো?”
সোনালী এখন চুপ বোনে গেলো কেননা আরিয়ান তাকে বারন করেছে এইসব কিছু না বলার জন্য……
—-” ওই কি হলো চুপ কেনো বল আমায়?”
—” কিছু হয় নি আমার পরে কথা বলবো এখন রাখি।”
—” রাখার আগে দরজাটা খুল আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।”
—” হোয়াট? তুই এত রাতে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
—-” বেশি কথা না বলে দরজা খুল বাহিরে অনেক কুকুর দাঁড়িয়ে আছে জানিস তো আমি খুব ভয় পাই পরে বলছি।”
সোনালী দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেখলো ইতি দাঁড়িয়ে আছে।
—” তাড়াতাড়ি আয় ভিতরে।”
ইতি বাসায় ঢুকে প্রশ্ন করতে লাগলো কি কি হয়েছে……
প্রথম সোনালী কিছু বলতে চায়নি কিন্তু ইতির জোরাজোরিতে সব বলতে বাধ্য হলো। সোনালীর কথা শুনে ইতি মাথায় হাত দিয়ে বললো……
—-” সত্যিই তো আমাদের প্ল্যানটা বাচ্চাদের প্ল্যানের থেকেও খারাপ ছিলো। এইরকম বাজে প্ল্যান কিভাবে করলাম আমি।”
—-” তোরে মন চাচ্ছে একটা লাত্থি মেরে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দেই। তুই ওই প্ল্যানের কথা ভাবছিস আর এইদিকে যে আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গেছে সেইটা ভাবছিস না হারামী। তোর মত ফ্রেন্ড থাকতে আমার কাল নাগিনী শত্রুর দরকার নাই।”
—” ধ্যাত। বিয়ে হয়েছে ভালো হয়েছে। আরিয়ান দেখতে কি কিউট, হ্যান্ডসাম তার মত স্বামী পেয়েছিস ভাগ্য ভালো তোর।”
—” এমন ভাগ্য লাগবে না আমার। ওনি আমার প্রতি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছে যেদিন রিভেঞ্জ নেওয়া শেষ আমাকে দু মিনিটে টাটা বায় বায় দিবে।”
—” তাহলে তো খেলা এইখানেই শেষ। আরিয়ান কিছুদিন ওর প্রতিশোধ নিয়ে ভাববে যখন ওর এই প্রতিশোধের খেলা শেষ হয়ে যাবে তখন তোকে মুক্তি দিয়ে দিবে। এখন আপাতত ওর কথা শোন চিন্তা করিস না আমি আছি না।”
—” সেইটাই তো ভয়ের।”
ইতি সোনালীর পিঠে থাপ্পড় মেরে বললো……
—” চল কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আগামীকাল এক জায়গায় যেতে হবে।”
—-” কোথায় যাবি ?”
—-” গেলেই বুঝবি।”
—-” আমি যাবো না কোথাও এমনি আমার মন ভালো না।”
—” মা আমার, খেতে চল ক্ষুদা লাগছে প্রচুর।”
—-” রাক্ষসী। অন্যের বাড়িতে এসেও খাওয়া খাওয়া করতে হয়।”
—” ওই ভুলে যাবি না আন্টি বলেছে আমিও ওনার মেয়ে সো কথা কম বল।”
—” হুহহহ।”
সোনালী আর ইতি রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো……
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান সিগারেট খাচ্ছে আর সোনালীর ছবি দেখছে। ছবিটা সোনালীকে যখন বিয়ে করেছিল তখন তুলেছিলো। সিগারেট ছবির কাছে নিয়ে ছবিটা পুড়তে লাগলো……
—-” এইভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিবো তোমায় সোনালী। একটু একটু করে তোমার সব সুখ কেড়ে নিবো। এই আরিয়ান তার শত্রুদের কখনো ভুলে না আর তোমার মত শত্রুকে তো কোনোদিন ভুলবে না। তুমি আমার এতদিনের তৈরি করা সুনাম মর্যাদা এক নিমিষেই নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছো তোমাকে তো আমি ছেড়ে দিবো না। আগামীকাল থেকে তোমার শাস্তি শুরু।”
সোনালীর ছবিটা অনেকটা পুড়িয়ে ফেলেছে আরিয়ান। মনে তার এখন এক প্রকার শান্তি বিরাজ করছে।
সকালে…….
ইতি জোর করে সোনালীকে নিয়ে এক জায়গায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। কিছুটা পথ যেতেই দেখলো আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে সাথে হৃদয়। আরিয়ানকে দেখে সোনালী ভয়ে চুপসে গেল। ইতি তো কাপছে আরিয়ানকে দেখে। আরিয়ান অবাক করে দিয়ে সোনালীকে হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসালো। ইতি ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখন হৃদয় এসে ইতির হাত ধরে বললো…….
—-” তুমি এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও তো সমান দোষী ভাবীর সাথে।”
—” এখন কি লেখক আরিয়ান আরেকটা বিয়ে করবে?”
চলবে…….
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৫
—” এখন কি লেখক আরিয়ান আরেকটা বিয়ে করবে?”
ইতির এমন প্রশ্ন শুনে হৃদয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো…..
—-” আপনার কি আমার ভাইকে ইমরান হাশমি মনে হয়।”
—” সত্যি বলতে আপনাকে দেখে ইমরান হাশমির যমজ ভাই মনে হয়।”
ইতি হৃদয়ের ঝগড়ার মাঝেই আরিয়ান সোনালীকে নিয়ে চলে যায়…….
—-” ওই লেখক ভাইয়া শুনুন সোনালী কিন্তু জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারে না আর ড্রাইভ ধীরে ধীরে করবেন সোনালী কিন্তু ভয় পাবে।”
ইতি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে। হৃদয় হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো……
—-” এইটা কণ্ঠ নাকি বিমানের শব্দ বুঝতে পারলাম না। বাই দা ওয়ে তোমার ফ্রেন্ডকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর তুমি এইসব ফানি কথা বলছো আচ্ছা তোমার ফ্রেন্ডের জন্য তোমার দয়া মায়া হয় না যদি ব্রো কিছু করে ফেলে তোমার ফ্রেন্ডের?”
—” দয়া মায়া আছে বলেই তো বললাম সাবধানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাছাড়া লেখক ভাইয়া সোনালীর বর এতে ভয় পাওয়ার কি আছে?”
—” যখন জানো ব্রো ভাবীকে বিয়ে করেছে তাহলে তো এইটাও জানো কি পরিস্থিতির জন্য বিয়ে করেছে?”
ইতি এইবার ভয় পেলো। এতক্ষণ তো ভালোভাবেই সব বললো কিন্তু এখন তো হৃদয়ের কথায় ভয়ে হাত পা কাপছে ওর……
—” তোমার কি কোনো অসুখ আছে ?”
—” আগে ছিলো না কিন্তু আজ থেকে শুরু হবে। প্লিজ আমায় নিয়ে চলুন আমার সোনালীর কাছে।”
—-” ভাইয়া কোথায় গিয়েছে তাতো আমি জানি না। বাট তুমি চাইলে খুঁজতে পারি।”
—-” হুম চলেন তাড়াতাড়ি।”
ইতি হৃদয়ের হাত ধরে টানতে লাগলো তখন হৃদয় এক হাতে শার্ট থেকে চশমা খুলে চোখে দিয়ে বললো…..
—” গাড়ি ভাইয়া নিয়ে গেছে আমাদের রিক্সা করে যেতে হবে।”
—” কেনো আপনাদের কি একটাই গাড়ি আর কোনো গাড়ি নেই।”
—” হুম আছে কিন্তু ওইগুলো আসতে আসতে ওরা চলে যাবে পরে খুঁজা সম্ভব হবে না।”
—” ওহহ আচ্ছা তাহলে চলুন রিক্সা চড়েই যাই।”
হৃদয় রিক্সা ডাকলো ইতি তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠে পড়লো। হৃদয় অন্য পাশ ফিরে মুখ ধরে হাসছে আর মনে মনে বলছে……
—” কি বোকা মেয়ে রে বাবা রিক্সা দিয়ে কি গাড়ির নজর রাখা যাবে। যা বললাম তাই বিশ্বাস করে নিলো একদিক দিতে ভালোই হয়েছে আমার বেশি কিছু বুঝাতে হলো না।”
—-” কি ভাবছেন আপনি?”
—” ভাবছি এইভাবে বসে বসে থেকে কি লাভ চলো বাদাম খেতে খেতে ওদের খুঁজি।”
—-” ওয়াও গুড আইডিয়া। দাড়ান আমি কিনে আনছি।”
—” তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।”
রিক্সা থেকে নেমে হৃদয় বাদাম কিনতে গেলো। বাদাম কিনে রিক্সায় বসে দুইজন বাদাম খাচ্ছে আর কথা বলছে।
।।
।।
।।।
—” ভাইয়া আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
—” কে তোমার ভাইয়া? এইখানে তো তোমার ভাইয়া নেই।”
—” আপনিই তো আমার ভাইয়া।”
সোনালীর মুখে এমন কথা শুনে খুব জোরে ব্রেক মারলো আরিয়ান। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শান্ত গলায় বললো……
—-” অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছি। বেশি বকবক করলে রাগ কিন্তু আর কন্ট্রোল করতে পারবো না।”
—-” আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
—- জাহান্নামের চৌরাস্তায়।”
—- আমি এক্ষুনি মরতে চাই না। আমার অনেক সখ নাতি নাতনীদের বিয়ে খাবো আবার ওদের নাতি নাতনীদেরও বিয়ে খাবো। আপনি যদি মরতে চান তাহলে মরতে পারেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই পরে আমি আপনার পরিবার আর পুলিশকে সব বুঝিয়ে বলে দিবো ওকে।”
সোনালী যেই লক খুলতে যাবে ঠিক তখনি আরিয়ান সোনালীর হাত ধরে ফেলে। খুব শক্তভাবে হাত ধরে…..
—-” আমি ব্যাথা পাচ্ছি হাতে।”
আরিয়ান কিছু বলছে না সোনালীর হাত ধরে মুচরাতে লাগল সোনালী ব্যাথায় কাদতেঁ লাগলো……
—-” এইটা তো কিছুই না মিসেস চৌধুরী। এখন চুপচাপ বসে থাকো যদি আমাকে রাগাও তাহলে এই জঙ্গলে একা রেখে চলে যাবো।”
সোনালী ভয়ে আর কথা বললো না। আরিয়ান জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতর একটা হাফ বিল্ডিং বাড়ি বেশি বড় না । আরিয়ান গাড়ি থেকে নেমে সোনালীর হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেলো। বাড়িটার ছিলো দুইটা রুম একটা বারান্দা আর একটি বাথরুম। দেখে মনে হচ্ছে আজই সব পরিষ্কার করা হয়েছে।
—-” আপনি আমায় এইখানে নিয়ে আসলেন কেনো?”
—” তোমার সাথে রোমান্স করবো তাই।”
—-” আমি তো বলেছি আমার ভুল হয়েছে তাহলে কেনো ক্ষমা করছেন না আমায়?”
—” সব ভুলের ক্ষমা হয় না জানো না।”
—” কি করলে আমায় ক্ষমা করবেন আপনি?”
—” এখন আপাতত এই শাড়িটা পরে আসো পরে বলছি।”
সোনালীর হাতে শাড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে বললো…….
—-” আপনি কি প্ল্যান করেই এইখানে আমায় নিয়ে এসেছেন। এইসব শাড়ি আপনি আগেই কিনে রেখেছেন কিন্তু কেনো?”
—-” আমি এত প্রশ্ন করা পছন্দ করি না। তাই চুপচাপ শাড়িটা পরে আসো নাকি এখনকার মুভিতে দেখা হয় হিরোইন শাড়ি পড়তে পারে না হিরো ইউ টিউব দেখে দেখে শাড়ি পরিয়ে দেয় আমাকেও কি তেমন কিছু করতে হবে নাকি? সমস্যা নেই যদি বলো আমি পারবো।”
—-” আপনি তো খুব অসভ্য লোক। আমি পারি শাড়ি পড়তে। দুই বছর কি আর এমনি এমনি পার্লারের কাজ করেছি নাকি হুহহ।”
—-” ওয়াও গুড। যাও তাড়াতাড়ি আসবে ওকে।”
সোনালী অন্য রুমে চলে গেলো। আরিয়ান খাটের নিচ থেকে একটা বোতল বের করে খাটের উপরে বসে রইলো আর মুখে সেই দুষ্ঠু হাসি……..
।।
।।
।।
।।
—-” সেই কখন থেকে খুঁজছি ওদেরকে কোথায় গিয়েছে ওরা? নাকি আপনার ভাই আমার নিস্পাপ বাচ্চাটাকে খুন করে ফেলেছে।”
—-” আমার ভাইকে কি তোমার খুনি মনে হয়? বাই দা ওয়ে নিষ্পাপ বাচ্চা তোমার কবে হলো? আগে তো বললে না যে তুমি ম্যারিড?”
—-” ধ্যাত। নিষ্পাপ বাচ্চা হলো আমার সোনালী। আর আপনার ভাইয়ের গল্প পড়েছি আমি গল্প পড়ে বুঝতে পেরেছি ওনি কেমন মানুষ। কিছুদিন আগে ওনার একটা গল্প ছিলো ‘সমাপ্তি’ ওইখানে তো নিজের বউকে খুন করে ফেলে। আপনার ভাই তো খুন ছাড়া গল্প লিখতেই পারে না তাহলে কি ভয় হবে না।”
—” আরেহ ওইগুলো গল্প। গল্প মানেই কল্পনা ওইগুলো সাথে বাস্তব মিলাতে এসো না।”
—-” আমার বেষ্টু কোথায় একটু পর বাসায় যেতে হবে যদি ওকে ওর আব্বু আম্মু না পায় চিন্তা করবে।”
—” চিন্তা করার কি আছে তুমি ফোন দিয়ে বলো আজ তুমি আর ভাবী তোমাদের বাসায় থাকবে।”
—” মা মানে?”
—-” আজ তোমার আর তোমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়া হবে না।”
—-” মম মম মম কি কি কি বলছেন?”
—” যা বলছি ঠিকই বলছি। চুপচাপ চলো আমার সাথে আর চিন্তা করো না তোমার ফ্রেন্ডের কাছেই নিয়ে যাবো। দোষ তো ভাবী একা করে নাই তুমিও করেছো তাহলে শাস্তি কেনো শুধু ভাবী একা পাবে তুমিও পাবে শাস্তি।”
ইতির মুখ তখন ভয়ে একাকার হয়ে গেছিলো না পারছে চিৎকার দিতে না পারছে এইখানে বসে থাকতে না পারছে চলে যেতে……..
।।
।।
।।
।।
সোনালী গোল্ডেন কালার একটি শাড়ি পরেছে। কোনো মেকআপ নেই। চুলগুলো বেনুণী করা। লম্বা কানের দুল। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। আরিয়ান কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোনালীর দিকে। কিছুক্ষণ বসে থেকে দাঁড়ালো আরিয়ান। সোনালীর সামনে যেতে লাগলো। সোনালী তখনও ওইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান সোনালীর কাছে গিয়ে সোনালীর হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে কানের কাছে গিয়ে বললো……
—-” আর কারো সামনে শাড়ী পড়বে না ওকে। তোমার এই নিষ্পাপ মুখ দেখে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভুলে যাই কিন্তু যখন নিজেকে দেখি তখন তোমাকে শাস্তি না দেওয়ার জন্য বড্ড কষ্ট পাই ডার্লিং।”
কথা বলতে বলতে সোনালীর গায়ে রঙ দেওয়া পানি ঢাললো। পানির সাথে শরীর চুলকানো ওষুধ দিয়েছিলো আরিয়ান। সোনালীর মাথায় বোতলের সব রঙ দেওয়া পানি ঢেলে দেয় আরিয়ান। মুহুর্তের মধ্যে সোনালী পাগলের মত ছুটাছুটি করা শুরু করে দেয় তা দেখে আরিয়ান জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে…….
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।