লালগোলাপ❤ Part_15 +16

0
3256

লালগোলাপ❤
Part_15 +16
Writer_Moon Hossain

শীতল বসে আছে। রাজ তাকিয়ে আছে শীতলের দিকে। শীতল কি বলে সেটা শোনার জন্য।
-আসলে কথাটা কিভাবে যে শুরু করব।
-কেন শ্রেয়সী? মুখ আছে, মুখ দিয়ে শুরু করো, গলা দিয়ে কথা বলো।
-শুনুন!
-শুনছি।
– আজ এই চাপ্টার অফ। কাল ওপেন করি।
-বুঝেছি আমি, তুমি চাওনা আমাদের বেবি হোক।
আমাদের অনেক গুলো বেবির সাথে আমি খেলাধুলা করি সেটা চাওনা।
রাজ বেড সাইডে একটা লাথি দিলো। শীতল হাড় কাঁপানো ভয় পেলো।
রাজের গালে হাত দিয়ে রাজ কে শান্ত করে বলল- চাইলেই বেবি হয়না।
-কেন বেবি হয় না?
-বেবি হতে হলে সময়ের দরকার হয়। সময়টা হয়নি আমাদের।
-আচ্ছা বিয়ের পর বেবি হয় নাকি বিয়ের পর?
শীতল খানিকক্ষণ চুপ করে বলল- বিয়ের পর।
-আমাদের কি বিয়ে হয়েছে?
-জ্বি। ভুলে গেলেন?
-আমি না। তুমি ভুলেছো।
বিয়ে হলে আমাদের বেবি কেন হচ্ছে না? বলো তুমি?
-শুনুন, সন্তান জন্ম দেওয়া পবিত্র কাজ। আল্লাহ তায়ালা মানব সন্তান জন্ম পছন্দ করেন। আল্লাহ যখন চাইবেন তখন সন্তানের মুখ দেখে মানুষ।
-আমি কখন সন্তানের মুখ দেখব?
-আল্লাহ যখন চাইবে।
-আল্লাহ কখন চাইবে? আমাদের তো বিয়ে হয়েছে তাহলে আল্লাহ কেন চাচ্ছে না?
-সেটা তো আল্লাহ জানে।
-আচ্ছা বেবি কিভাবে হয়?
-আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ছোট ছোট গুলোমুলো বেবিরা। বল্লাম তো তখন, বেবিরা আল্লাহর কাছ থেকে আসে।
-বুঝেছি। আমি কি কিছু করেছি যে আল্লাহ রাগ করেছে আমার উপর?
শীতল রাজের কপালে কপাল ঠেকিয়ে, নাকে নাক ঘষে বলল- কখনো না। আপনার কোন পাপ নেই, আপনি পবিত্র মানুষ, আল্লাহ কখনো আপনার উপর রাগ করেনা।
– একটা কথা বলব?
-আপনার মিষ্টি কথা শোনার জন্যই তো আমি সবসময় ওয়েট করি।
-টাকা দিয়ে কি সবকিছু কেনা যায়?
-জ্বি। তবে সবকিছু যায়না।
-মানুষ কেনা যায়?
-হ্যাঁ। আগের সময়ে মানুষদের দাস-দাসী বানিয়ে কেন হতো টাকা দিয়ে।
কেন বলুন তো?
রাজ হেসে বলল- নাথিং।
রাজ মুচকি মুচকি হাসছে আর আঙুল দিয়ে কি যেন হিসেব করছে।

“পেপারে করোনা ভাইরাস নামের ব্যাধি চীনে ছড়িয়ে পড়ার খবর বের হয়েছে।
-চীনের সিচুয়েশন করুণ।
-জ্বি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।
-এই ভাইরাস যদি আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তো খুব ভয়ংকর পরিস্থিতি হবে ভাবি।
-জ্বি। পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে যাবে নিমিষেই।
-বেলকুনির গোলাপ গাছ গুলো পানি দিচ্ছিলো শীতল। রাফা এসে বেলকুনির চেয়ারে বসে পেপার পড়ছিলো ক্রিকেটের। হঠাৎ সে ভাইরাসের খবর টা দেখতে পায়।
-ভাবি এসব থেকে বাঁচার উপায় কি? এখনো কি বের হবে না শক্তিশালি কোন প্রতিরোধ?
– শক্তিশালি প্রতিরোধ অনেক আগেই মহান আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন আমাদের জন্য।
-সেটা কি? বলো, বলো?
– মারাত্মক করোনা ভাইরাসের কবল থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চেয়ে নিচের দোয়াটি পাঠ করুন।

আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া করতেন।

اَللَّھُمَّ اِنِّیْ اَعُوْذُبِکَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَسَیِّءِ الْاَسْقَامِ

উচ্চারনঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া ছাইয়্যি ইল আসকম’

অর্থ: হে আল্লাহ অবশ্যই আমি তোমার নিকট ধবল, উন্মাদ,কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার মারাত্নক ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

*আবু দাউদ ২/৯৩,সহী তিরমিযী ৩/১৮৪; সহিহ নাসাঈ ৩/১১১৬*)
-ওয়াও ভাবি। এই দোয়াটা সবাই মিলে এখন থেকে আমরা পড়ব।
-এছাড়াও আরও অনেক দোয়া-দরুদ আছে যেগুলোর মাধ্যমে আমরা ভয়ংকর রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষায় থাকতে পারি।
রাফিয়া মেইন গেইটের কাছে যেতেই শীতল বেলকুনি থেকে বলল -বড় আপা! সাবধানে যাবেন। চারপাশে কত রোগ জীবাণু ঘুরছে।
রাফিয়া মাথা নাড়ালো।
রাফিয়া কাছেই গুল পুকুর পাড়ে যাচ্ছে বান্ধবীদের বাসায়। অনেক দিন আড্ডা দেওয়া হয়না। রাফিয়ার বান্ধবী নাজমা নতুন কি এক চপের আইটেম শিখেছে বেসন দিয়ে, সেটাই সবাই কে বানিয়ে খাওয়ানো হবে, জোরালো একটা আড্ডাও হবে সব বান্ধবীদের নিয়ে।
রাফিয়া আজ গাড়ি নেবে না। বান্ধবীদের কারও গাড়ি নেই। সবাই নিশ্চয়ই এসে পড়েছে,সবার সামনে গাড়ি নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কলেজে বাবার কারণে গাড়ি নিয়ে যেতে হয়।
রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে রাফিয়া।
বিকেলের সূর্য রাফিয়ার গায়ে এসে পড়েছে।
সবুজ বোরখা আর হিজাবে আরি বিয়ানের মতো লাগছে তাকে।
হাসান রাফিয়ার জন্য ওয়েটে ছিলো।
দুপুর থেকেই এক ঠাঁই রোদের মধ্যে দাড়িয়ে ছিলো সে। রাফিয়া যেদিন কলেজে যায়না সেদিন বিকেলে বান্ধবীদের বাসায় যায়।
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-কোথাও যাচ্ছো?
– বাহিরে যখন বের হয়েছি তখন নিশ্চয়ই যাচ্ছি কোথাও।
-জায়গা টা কোথায়?
-বাংলাদেশে মধ্যে। নিশ্চয়ই আমেরিকায় নয়।
-সেটা বুঝেছি। প্লেসের নাম টা কি?
-ময়মনসিংহের মধ্যে। নোয়াখালী অথবা চট্টগ্রাম নিশ্চয়ই নয়।
রাফিয়া সরে দাঁড়ালো।
হাসানের বুকে তীব্র ব্যথা শুরু হলো। রাফিয়া সব সময় এমন কথায় বলে। হাসান কে কি সে সহ্য করতে পারেনা! ইচ্ছে করেই এভাবে ইগনোর করে!
-তোমার কথা গুলো কাঁটার মতো লাগে।
-কালো মেয়েদের কথা এর থেকে ভালো হবে না।
সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলতে যান, তখন ফুলের মতো লাগবে।
হাসান আহত চোখে রাফিয়ার দিকে তাকালো।
হাসান খালি রিকশা ঠিক করে দেয় রাফা কে।
-রাফা রিকশায় উঠে পড়ো।
যেতে যেতে না হয় রিকশাওয়ালা মামাকে বলো কোথায় যাবে।
মামা সাবধানে নিয়ে যাবেন।
হুট টা তুলে দিলো হাসান যেন রোদ না লাগে।হাসানের কাছে অবশিষ্ট ৬০ টাকা দিয়ে রিকশা ঠিক করা হয়েছে।
-এই যে, সোজা যাবেন? যেতে যেতে বলছি কোথায় যেতে হবে।
হাসানের সামনে দিয়ে রাফিয়া অন্য রিকশা দিয়ে চলে গেলো।
হাসান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রিকশাওয়ালা বলল- সাহেব আপনার টাকা টা নিন।
-ঐ টাকা টা আপনার। রেখে দিন।
.
গোলাপ ফুলের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজ একটা গোলাপ ছিড়ে শীতলের মাথায় গুজে দিলো।
– আমার মাথার চুল গেলো।
-গোলাপ কেন গাঁথছে না চুলে? খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে কেন?
-নিজে তো লাগাতে পাচ্ছেন না! এখন গোলাপের দোষ?
-মোটেও না। গোলাপ নিজেই গাঁথছে না।
শীতল মাথায় হালকা খোঁপা করলো।
-এবার গেঁথেছে।
তোমার স্বামী সব পারে। গোলাপ ফুল গেঁথে দিতেও পারে।
-হায় আল্লাহ! হাতে কি এগুলো?
হাসছেন কেন?
কিভাবে হাত কেটেছে?
-কিজানি। আই ডোন্ট নো।
-দয়া করে বলুন?
-আই হেভ নো আইডিয়া।
শীতল রুমে এসে রাজের হাতে মলম লাগিয়ে দিলো।
-এখন জ্বলছে কি?
হাসছেন কেন?
-বুঝতে পাচ্ছিনা।
-গোলাপ তুলতে গিয়েই কেটেছে হাত। এবার বুঝেছি।
আশ্চর্য হাসছেন কেন?
আবার হাসে?
-একটু একটু কি জ্বালা করছে হাতের তালু?
-ইয়েস। বেশি না এই এতোটুকু।
শীতল রাজের দুই হাতের তালুতে অজস্র চুমু দিলো।
-ভালো হয়ে যাবে এবার।
-চুমু দিলে কি ভালো হয়ে যায় সবকিছু?
– জ্বি। কেন আপনি জানেন না?
– নাতো। দাড়াও আমিও করছি। এই বলে রাজ অনেক গুলো চুমু দিলো শীতলের গলায়, ঘাড়ে হাতে, পায়ে।
-তুমিও ভালো হয়ে যাবে শ্রেয়সী। শীতলের চোখ থেকে খুশিতে কয়েক ফোঁটা পানি বের হলো।
শীলতের চোখের পানি মুছে দিলো রাজ। তারপর বলল- কেঁদোনা শ্রেয়সী।
তোমার গায়ে এই কুষ্ঠ জঘন্য রোগ ভালো হয়ে যাবে এবার। তোমার ব্যথা লাগে তাইনা?
-কুষ্ঠ রোগ মানে?
কে বলেছে আপনাকে এগুলো?
-শাকিলা বলেছে।
-আর কি বলেছে?
– তোমার কাছে এলে আমারও হবে এগুলো।
তারপর..
-তারপর?
– আমার ক্ষিদে লেগেছে।
-খাবেন। আগে বলুন শাকিলা আপা কি বলেছে?
-তোমাকে যেন আমি টাচ না করি। তোমার সাথে যেন না ঘুমায়, তোমাকে যেন আর জড়িয়ে না ধরি, তোমাকে যেন চুমু না দিই ইত্যাদি, ইত্যাদি। আর আর…
– আর কি?
-আমার ক্ষিদে পেয়েছে। তোমার হাতে যেন না খাই সেটাও বলেছে শাকিলা।
.
বেগুনে চালের গুড়ো দিয়ে ডুবন্ত তেলে ভাজা বেগুন রাজের খুব পছন্দ। দুই প্লেট সে ঘি আর তেলে ভাজা বেগুন দিয়ে খেয়ে ফেলে নিমিষেই।
-ধীরে ধীরে খান। গলায় আটকাবে।
-নো, নো। শাকিলারা বেগুন ভাজা খেয়ে ফেলবে ধীরে খেলে।
রাজ এক লোকমার উপর আরেক লোকমা মুখে তুলে দিতে জেদ করছে।
-একটা কথা বলি?
-জ্বি।
রাজ ফিসফিস করে বলল- আমি যে তোমাকে শাকিলার কথা গুলো বলেছি সেটা শাকিল কে বলবে না। ও জানলে আমাকে বকবে। তোমাকেও বকবে।
শীতল শাকিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।
রাজ ভাত খেয়ে ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে। চাঁচি সেদিনের পর থেকে রাজের সামনে আসে না।
দেখা হলেই রাজ বলে।
-আসসালামু আলাইকুম চাঁচি মা। এখন আমাকে বাবা হওয়ার বিষয়টা বলুন? আমি বাবা হব।
.
শীতলের সামনে অনার্স ২য় বর্ষের এক্সাম৷ আজ শশুর বাড়িতে থাকায় সে ক্লাসে সিট গুলো নিতে এসেছে। কিছু এসাইনমেন্টও জমা দিতে হবে।
ক্লাস শেষ হতেই দেখে তার শশুরের ২২ টা মিস কলড।
রাজের কিছু হলো নাতো? শীতলের হৃদয় যেন বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।
-আসসালামু আলাইকুম বাবা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম মা।
-উনি ঠিক আছে?
আপনি ঠিক আছেন?
সবাই কি ভালো আছে?
-আলহামদুলিল্লাহ। সবকিছু ঠিক ঠাক। আমরা ভালো আছি। তোমার স্বামীও ভালো তবে…
-তবে কি?
-তোমার স্বামী৷ কে বাবা হওয়ার জ্বীনে ধরেছে।
-কি বলছেন?
– ওর ধারণা মতে সবকিছু যখন কিনতে পাওয়া যায় তখন বাচ্চাদেরও কিনতে পাওয়া যায়। শপিং মলে আছি ওকে নিয়ে।
আমাকে চেপে ধরেছিলো শপিং মলে বাচ্চা কিনতে নিয়ে আসার জন্য।
-বাবা উনাকে এখন যেভাবে পারেন বাসায় নিয়ে আসুন। আমি দেখছি ব্যাপার টা।
রাজ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে রুমে গম্ভীর মুখ নিয়ে হাটাহাটি করছে।
শীতল প্যাকেট থেকে গোলাপজাম বের করলো।
-গরম গরম গোলাপজাম খেয়ে নিন। আপনার তো পছন্দ মুচমুচে গোলাপজাম। শহর থেকে আসার সময় এনেছি।
-উফফ, শ্রেয়সী আমি আমাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ভাবছি।
-ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে আমি আছি তো?
-সেটা ভাবিনি। ভাবতে হবে।
রাজ কে শীতল গোলাপজাম খাইয়ে দিচ্ছে, রাজ খাচ্ছে আর কি যেন ভাবছে। হাতের আঙুল গুনে গুনে কি যেন হিসেবও করছে।
-আচ্ছা তুমি তো তখন বলেছিলে টাকা দিয়ে সব কেনা যায়।
মানুষও কেনা যায়।
-জ্বি।
-তাহলে আমরা তো আমাদের বেবি গুলোও কিনতে পারি তাইনা?
-এই কথা বাদ দিন।
-এই কথা চলবে, আমি আজ শপিং মলে কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় চলে এসেছি।
-ভালো করেছেন।
-আচ্ছা রেডিমেড পছন্দ নাকি অর্ডার পছন্দ তোমার?
-কেন?
-তোমার যেটা পছন্দ সেটাই হবে আমাদের।
-কি হবে আমাদের?
-ভুলে গেলে? বেবি হবে আমাদের।
রেডিমেড বেবি বললে রেডিমেড কিনব, অর্ডার দিতে বললে অর্ডার দেব।
-আপনি কিন্তু বুঝতে পাচ্ছেন না ব্যাপার টা।
-তুমি বুঝতে পাচ্ছো না ব্যাপার টা।
শোন, ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছি। অর্ডার দিলেই ভালো হবে বেবি, তাহলে চোখ, কান, নাক, হাত, পা, ঠোঁট, চোখ,গায়ের রং সবকিছু পছন্দ মতো কোয়ালিটি সম্পন্ন হবে।
আমার সেন্সটা কেমন?
-মাইন্ড ব্লোয়িং। আল্লাহ তুমি কোথায়?
-বানানো জিনিস ভালো কোয়ালিটির হয়। টিকে বেশিদিন।
-আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো?
-শোন,মাল ডেলিভারির সময় চ্যাক করে নেব, নইলে উল্টো পাল্টা জিনিস গছিয়ে দিতে পারে।
-আল্লাহ আমার স্বামীকে বুঝার তৌফিক দান করো।
– অনলাইন থেকে বুকিং করবো? অর্ডার দিই তাহলে?
বেশি টাকা দেব তাহলে জলদি ডেলিভারি দেবে।
-কথা বলো? বুঝেছি তুমি চাওনা আমাদের বেবি হোক।
-আমার কথায় কি হবে? সবকিছু তো আপনিই ঠিক করে ফেলেছেন।
-তাহলে অর্ডার টা গোলাপজাম খেয়েই দিচ্ছি। উফফ, আমার যে কি আনন্দ লাগছে।
-মহান আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও।
শীতলের মাথা মূহুর্তে ব্লাস্ট হবে এমন সিচুয়েশনে পড়েছে সে।
-শ্রেয়সী গোলাপজাম গুলো খুব মিষ্টি রসালো আর মুচমুচে। টেস্ট মাইন্ড ব্লোয়িং।
তুমিও খাও, হা করো, কি কেমন টেস্ট?
গোলাপজামের রস শীতলের ঠোঁটের কোনায়, গালে লেগে গেলো রাজ খাইয়ে দিতে গেলে। রাজ সেগুলো চেটেপুটে খেয়ে নিলো।
শীতল কিছুক্ষণ রাজের কথা আর কান্ড দেখে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।
রাজ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে সেও কেঁদে দিলো।
-আপনি কাঁদছেন কেন? আপনাকে তো কেউ প্যাঁচে ফেলেনি।
শার্টের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে রাজ বলল- বেবি হওয়ার খুশিতে তুমি কাঁদছো, তাই আমি-ই বা বাদ থাকব কেন? আফটার অল আমি বাবা তাই আমিও খুশিতে কাঁদবো।
শীতল এতোক্ষণ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদলেও এখন জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
.
❤অর্থসহ আল্লাহর ৯৯ টি নামের দুটি নাম (আরবী,বাংলা)❤
১৫. ﺍﻟْﻘَﻬَّﺎﺭُ আল-ক্বহ্হার দমনকারী।
১৬. ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏُ আল-ওয়াহ্হাব স্থাপনকারী❤
.
চলবে…..
#লালগোলাপ❤
Writer_Moon Hossain
Part_16

-বৌমা রাজ কোথায়?
-ঘুমুচ্ছো এখন।
-বাঁচা গেলো আপাতত।
জেগে উঠলেই পাগলামি শুরু করবে। কি জ্বালা দিচ্ছে যে আমার ছেলেটা তোমাকে।
-সেটাই ভাবছি। জেগে উঠেই অর্ডার করা বেবি দেখতে চাইবে।
-আল্লাহ তায়ালা কবে যে ওকে বোঝার তৌফিক দেবে।
-মহান আল্লাহ তায়ালা যা করেন তাতে কিছু দুঃখ থাকে, আবার সুখও থাকে। আমি উনার এই পাগলামি গুলোতেই সুখ খুঁজে নিয়েছি।
– তোমাকে ছেলেটা জ্বালিয়ে মারছে। আর তুমি ওর সাথেই সুখ খুঁজে নিয়েছো।
সবাই কেন এমন হয়না বলতে পারো?
-সুখের ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেকরকম। আমার কাছে সুখের ব্যাখ্যা ঐ যে ঘুমিয়ে আছেন, উনিই আমার সুখ, এই বাড়ি, এই সংসার, আমার সংসারের প্রতিটি সদস্য আমার সুখ। সুখের ব্যাখ্যা যার কাছে যেমন সে তেমন সুখের খোঁজে যায়। আমার সুখের ব্যাখ্যা আমি খুঁজে নিয়েছি।
শীতলের শশুর কি মনে করে যেন চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু জড়ালেন।
রাজের মাথায় হাত রেখে চলে গেলেন মুখ অন্ধকার করে।
“শোন মেয়ে, তোমাকে একটা গোপন কথা বলি?
-জ্বি না। কারও গোপনীয় কথা শুনতে নেই।
-আহা! শোন না, গোপন কথাটা তোমার শাশুড়ী কে নিয়ে।
শীতল একটু নড়েচড়ে বসলো।
চাঁচি গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিস করে ষড়যন্ত্রের সুরে বলল- তুমি কি মনে করেছো তোমার শাশুড়ী মারা গেছে?
-সবাই তো সেটাই আমাকে বলল।
-ধূর, মিথ্যা কথা। রাজের মা বেঁচে আছেন।
-কি বলছেন?
-শুধু বেঁচে আছেন তা নয়, একদম তরতাজা ভাবেই বেঁচে আছে। এবং ময়মনসিংহে আছেন। খোঁজ নিলে ঠিকানাও পাওয়া যাবে।
-ময়মনসিংহে আছেন তাহলে এই বাড়িতে নেই কেন?
চাঁচি পান খেতে খেতে বলল- রাজের মা, ভাই সাহেব কে ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে গিয়েছে। স্বভাব চরিত্র খারাপ হলে যা হয় আর কি। শুনেছি কারও সাথে নাকি প্রেমও ছিলো। চাঁচি মুঝ বাঁকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো যেন কতো মজার কথা বলছেন।
এজন্যই তো আমাদের রাজের এই অবস্থা হয়েছে।
কি আর বলব, সবাই তো আমার মতো বউ পায়না, এই বংশের বউরা বেশিদিন টিকে না। আমিই টিকে গেলাম। তোমার যা অবস্থা তাতে তোমাকে রাজ টিকতে দেবেনা, তোমার তো লাশ বের হবে দুদিন পর।
.
গোলাপ ফুলের সুভাস সারা বেলকুনিতে ছড়িয়েছে। কামরাতেও এসেছে খানিকটা। হালকা বাতাসে দুলছে সবুজ পর্দা গুলো ।
রাজ ঘুম থেকে উঠলে কি করে বোঝাবে সেটার উওর ভাবা হচ্ছে। হালকা বাতাসে ঘোমটা টা পড়ে গেলো শীতলের। খোলা এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে।
গরমে হালকা বাতাসের দোল শরীর মনকে শিহরিত করে তোলে।
কোমরে কারও গরম হাতের স্পর্শ পেলো শীতল।
-ঘুম ভেঙেছে?
-হু।
-ঘুম পুরো হয়েছে?
-হু।
-চলুন না বেলকুনিতে গিয়ে বসি। আপনার ঘাড়ে মাথা রাখব।আপনি আমার চুলে বিলি কেটে দেবেন। একটু আদর করবেন।
-হু। তুমি তোমার নিজের ঘাড়ে মাথা দিয়ে বসে থাকো, নিজের চুলে নিজেই বিলি কেটে নাও, নিজেই নিজেকে আদর করো যাও।
-আহা! এতো অভিমান?
দেখি দেখি মুখ দেখি। তাকাবেন না আমার দিকে?
-না, না। আমি অনেক অভিমান করেছি।
-এদিকে তাকান একটু সাহেব। তাকান না।
-আমার সাথে তাহলে শপিং মলে যেতে হবে। মাল ডেলিভারি চ্যাক করে আনতে হবে। আমাদের বেবি গুলো নিশ্চয়ই কাঁদছে তোমাকে আমাকে না দেখতে পেয়ে।
– মানে?
-তুমি অনেক বোকা শ্রেয়সী। কাল অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তুমি আমাকে অর্ডার করতে না দিয়ে নিজে দিয়েছো। আমাকে লোকেরা ঠকাতে পারে তাই রাজি হয়েছি।
এতোক্ষণ বেবি গুলো নিশ্চয়ই রেডি হয়ে আছে
তাদের বানানো শেষ।
বাবা মা কে না দেখতে পাচ্ছেনা, তাহলে কি কাঁদবে না?
– “হে আল্লাহ তায়ালা। আবার শুরু হয়েছে।
-ওদের ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই। যাওয়ার সময় দুধ নিতে হবে ফিডারে।
আমি এখন ফিডার কিনব।
-আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও।
-ক্লিয়ারলি বুঝতে পাচ্ছি তোমার কোন টেনশন হচ্ছে না আমাদের বেবির জন্য।
তুমি এতে নিষ্ঠুর শ্রেয়সী।
– আমার মাথা যেকোনো সময় ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
.
-আমি খাব না।
-ক্ষিদে পেয়েছে?
-অনেক।
-তাহলে হা করুন।
-আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না শ্রেয়সী। আমার বেবিরা না খেয়ে আছে আর আমি কিনা বাবা হয়ে খাব?
পর বাবা হলে খেতাম বাট আমি তো ওদের আপন বাবা।
-খুব খেতে পারবেন।
হা করুন। এইতো খেতে পারবেন।
-আআআ….. গলা দিয়ে নামছেনা। খুব কষ্ট হচ্ছে ওদের জন্য। আমার বেবি…. আমার বেবি…।
-এইতো গলা দিয়ে বেশ নামছে। গুড বয়।
চাঁচি খাওয়ার জন্য নিচে নামছিলো। রাজকে দেখে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রাজ টিফিনে করে কিছু ফলমূল ভরে ফেললো। ফিডার এনে দুধও ভরে ফেললো।কিছু ছোটদের পোশাকও কোথা থেকে যেন জোগাড় করেছে।
শীতল বলল-কি করছেন?
রাজ হেসে বলল-একটু পরে আমাদের বেবিদের আনতে যেতে হবেনা। সেটার প্রস্তুতি।
-বেবিদের জন্য ফিডারে দুধ নিয়েছেন এজন্য?
-ইয়েস। তুমি তো ভুলে গিয়েছো সব। আমি কিছু ভুলিনি। দেখে নিও, আমাদের বেবিরা কোয়ালিটি সমপন্ন হবে। দেখেশুনে চ্যাক করে ডেলিভারি একসেপ্ট করতে হবে।
-আমি বেবি এখনো অর্ডার দিইনি।
-ওয়াট?
-আমাদের বেবি আমরা এখনো অর্ডার দিইনি। পরিষ্কার বাংলা বলছি।
রাজ মন খারাপ করে ছাদে বসে আছে। সে কিছু মুখেও দিচ্ছে না। কথাও বলছেনা।
-রাগ করেছেন?
-হু।
-খুব রাগ?
-হু।
রাজের গালে হাত রেখে শীতল বলল- আপনি এতো অবুঝ কেন?
-অবুঝ আমি না। অবুঝ তুমি।
-ওআচ্ছা।
-হু।
রাজের একটা হাত নিয়ে শীতল নিজের পেটে রাখলো।
-আপনার বেবিরা এখানে আছে। ওরা এখান থেকেই জন্ম নেবে, শপিং মল থেকে নয়।
-সত্যি বলছো?
-আমি কখনো আপনার সাথে মিথ্যে বলি?
-নাতো। কোথায় বেবি?
– সময় হলে এখান থেকে বের হবে।
-কখন সময় হবে?
-মহান আল্লাহ তায়ালা যখন চাইবে তখন।
-আল্লাহ তায়ালা কখন চাইবে?
-সেটা তো জানিনা।
-আল্লাহ তায়ালা আমার উপর রাগ করেছে বুঝেছি। তুমি ছাড়া সবাই আমাকে ম্যাড বলে, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই আমাকেও ম্যাড ভাবে।
শীতল রাজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল-হুশ, আপনি একদম সুস্থ মানুষ। কারও কথায় কান দেবেন না। আল্লাহ তায়ালা কখনো এমন ভাবেন না। তিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়।
-তাহলে কেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেবি দিচ্ছেন না? উনার তো অনেক দয়া।
-চিন্তার বিষয়। আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করতে হবে আপনাকে।
-আল্লাহ তায়ালা কিসে সন্তুষ্ট হবেন?
-আল্লাহর এবাদত করতে হবে
সেজন্য আপনাকে আল্লাহ তায়ালার আদেশ এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেখানো পথে চলতে হবে।
রাজ মাথা নাড়ালো। খুশিতে ঝলমলে হয়ে বলল
-বুঝতে পেরেছি।
-আল্লাহ তায়ালার এবাদত করব তাহলে উনি খুশি হয়ে আমাদের সন্তান দিতে পারেন।
-আমাকে একটু বলে দাও, আমি কি কি করব?
আমি তো কিছু জানিনা।
-সবার আগে আপনাকে সালাত সম্পর্কে জানতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের বেহেশতের চাবি।
– সালাতের_মর্যাদাঃ

সালাত সম্পর্কিত বিষয়গুলো হলো — আযান, ওযু, আযান এবং ইক্বামাত এর মাঝখানের সময়টুকু, সালাত এবং সালাত শেষে দোয়া।

১) আযান –
রাসুল সা. বলেন, “যখন তোমরা আযান শুনতে পাও মুয়াজ্জিন যা বলবে, জবাবে হুবহু তাই বলবে। আযানের জবাব দেবার কারণে তোমাদের গুণাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে অতঃপর তোমরা জান্নাতে যাবে।”
[মুসলিম ৭৩৬]

২) ওযু –
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই; আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নবী সা. তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন; আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
[মুসলিম ২৩৪, তিরমিযি ৫৫]

৩) আযান এবং ইকামতের মধ্যবর্তী সময় –
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আযান ও ইক্বামাতের মাঝের সময়ের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না”। সাহাবাগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! (ঐ সময়ে) আমরা কি বলবো? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা কর”।
[আবূ দাঊদ ৫৩৪, তিরমিজি ৩৫৯৪]

৪) সালাত –
সালাত পুরোটাই ইবাদত তন্মধ্যে সিজদার মর্যাদা খুব বেশি। অন্তর এবং অঙ্গসমূহের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সম্মান প্রকাশের নামই সিজদাহ। মানুষ আল্লাহর দাস আর মালিকের সামনে একজন দাসের দাসত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ মাধ্যম হলো এই সিজদা। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করে যেমনটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা সিজদাহর সময়ে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে। কাজেই এ সময় তোমরা অধিক পরিমাণে দু‘আ পাঠ করবে। [আবু দাউদ ৮৭৫ ]

৫) নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ –
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “প্রত্যেক ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাঁধা থাকে না, মৃত্যু ব্যতীত”। [নাসাঈ শরীফ]

কাজেই যে নামাজে এতো এতো ফজিলত এবং গুণাহ মাফের অবধারিত সুযোগ, সেই নামাজ অবশ্যই নিয়মিত, খাশ দিলের সাথে পড়া উচিত।
-আমিও এখন থেকে নামাজ পড়ব।
-ঠিক আছে।
-আমি এখন মসজিদে যাব।
-আজান দেওয়ার সময় হলেই যাবেন।
শীতলের সাথে বিয়ে হবার পর থেকে মাঝে মাঝে শীতল রাজকে হাসানের সাথে নামাজ পড়তে মসজিদে পাঠাতো। মাঝে মাঝে হাসান শীতলের কাছে নালিশ করে, রাজ দুষ্টুমি করে মসজিদে। ছোটদের সাথে মারামারি করে জায়গা নিয়ে। চিমটি কাটাকাটি করে। তবুও শীতল পাঠাতো রাজকে মসজিদে। বার বার বলে দিতো – আল্লাহর এবাদতখানায় কখনো দুষ্টুমি করতে নেই। অন্যদেরও বিরক্ত করতে নেই।
-তোমার স্বামী কিছু করেনা। ঐ বাবলু, হাবলু ওরাই আমাকে চিমটি দেয়। তখনই আমার রাগ উঠে পড়ে মাথায়।
-ওরা চিমটি দিলে আপনাকেও দিতে হবে? একদম ভালো, ভদ্র ছেলের মতো মসজিদে যাবেন।
-আচ্ছা, আর দুষ্টুমি করবো না।
কে শোনে কার কথা, সেদিন রাজ নামাজ পড়াকালীন কয়েকজনের মাথার টুপি নিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসে। বাচ্চাদের কয়েকটা কে মেরেও এসেছিলো।
আজান দিতেই রাজ বলল -শ্রেয়সী আমাকে অজু করিয়ে দাও।
অজু করা শেষ হলে বলল- পাঞ্জাবি -পাজামা পড়িয়ে দাও। নতুন টুপি টা পড়িয়ে দাও।
শীতল পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দেওয়ার সময় বলল- আজ কোন দুষ্টুমি নয়। যদি করেন তবে আল্লাহ নারাজ হবেন। আল্লাহ তায়ালা কে আমাদের উপর সন্তুষ্ট রাখার জন্যই কিন্তু আপনি নামাজ পড়তে যাচ্ছেন মসজিদে।
-উফফ, তুমি টেনশন করোনা।
আমার সব মনে আছে। আমি দুষ্টুমি করবো না।
তুমিও চলো আমার সাথে প্লিজজ? চলো চলো?
-না না। এটা সম্ভব নয়। ছেলেদের সাথে মেয়েদের নামাজ পড়তে হয়না। আপনারা মসজিদে পড়বেন এবং আমরা বাড়িতে।
-আচ্ছা আমি কে?
-আপনি একজন মানুষ।
-কি মানুষ?
-ছেলেমানুষ
-তাহলে বাসায় আমরা দু’জন প্রায় প্রায় একসাথে কেন নামাজ পড়ি।
-প্রশ্ন আর পেলেন না। খালি খালি কথার প্যাচ ধরবেন।
স্বামী স্ত্রী সব কাজ একসাথে করতে পারে। এতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। ভুলে গেলেন? ঐ দিন তো বলেছিলাম।
-বুঝেছি। আমি তাহলে মসজিদ নামাজ পড়ব, আর তুমি বাসায়।
আমি আর তুমি দুজন মিলে বেশি বেশি দোয়া করব যেন আমাদের বেবি হয়।
শীতল রাজের কপালে কপাল ঠেকিয়ে সম্মতি জানালো।
রাজ কিছুটা গিয়ে আবার পেছনে ফিরে শীতলের কাছে আসলো।
-আবার কি?
-একটা কাজ করার বাকি আছে।
-কি?
রাজ শীতলের কপালে একটা চুমু দিলো।
-স্ত্রী কে স্বামী চুমু দিলে আল্লাহ খুশি হন, সন্তুষ্ট হন তুমি বলেছিলে শ্রেয়সী।
আশ্চর্য বিষয় হলো রাজকে শেখানো নামাজের নিয়ম কানুন সব সুন্দর ভাবে বলে নামাজ শেষ করলো রাজ সেদিন। কোন দুষ্টুমি করলো না রাজ। ছোট ছেলেরা রাজকে চিমটি দিলো তবুও রাজ কিছু করলো না।
প্রতিটি দোয়াতে ছিলো তার বাবা হওয়ার আশা।
শীতলও একই সময়ে নামাজ পড়ে দোয়া করলো, তার স্বামীর মনের সব আশা যেন পূরণ হয়। সে যেন তার স্বামীকে সন্তুষ্টি দিতে পারে।
মসজিদের সবাই রাজের পরিবর্তন দেখে বলল- সব বউয়ের আমলের ফল। একজন মমিনা মুসলিমা পর্দাশীল বউ পারে বদ্ধ উন্মাদ স্বামিকেও আল্লাহর হেদায়েতের পথে আনতে। বউটার ধৈর্য আছে আল্লাহর দয়ায়।এই স্বামী স্ত্রীকে আল্লাহ যেন জান্নাতবাসী করেন। আমিন।
-আমি কোরআন তেলওয়াত করব।
-আগে শিখে নিন।
-তুমি তেলওয়াত করো। আমি আরবি ওয়ার্ড গুলো দেখে দেখে শুনব এবং শিখব।
-আরবি ওয়ার্ড? বলুন আরবি হরফ।
শীতল তেলওয়াত করে আর রাজ মনোযোগ সহকারে শুনে।
রাতে রাজ শীতলকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। শীতলের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও শীতল একটুও কাছ থেকে সরলো না। সরলেই ঘুম ভেঙে যাবে রাজের। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলেই রাজের প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে। ব্যথায় উন্মাদের মতো আচরণ করে।
রাজ ঘুমের মধ্যেই বিরবির করে বলছে, আমি বাবা হয়েছি, আমাদের অনেক গুলো বাবু হয়েছে। আমি খেলছি বাবুদের সাথে।
শীতল আহত চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারা বাবা হবার জন্য দিনরাত আল্লাহর সন্তোষের জন্য এবাদত করছে।
রাজের বাবা হবার প্রবল ইচ্ছে কিভাবে জন্মালো সেটাও রহস্য।
-তেলের ছিঁটকে যাবে।
-যাকগে।
রাজ শীতলকে পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে। শীতল কড়াইয়ে তেল গরম করছে। ডুবন্ত তেলে কুমড়োর চপ ভাজা হবে বেসন ও ঘি দিয়ে।
-কি হয়েছে?
-ছেলের ঘরে ছেলের হয়েছে।
এবার হয়েছে?
-আহা! পেছন থেকে ছেড়ে সামনে আসুন। মুখ দেখে কথা বলি।
রাজ সামনে এসেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো।
-আমার লজ্জা লাগছে শ্রেয়সী।
-দেখি, দেখি কতটা লজ্জা পেয়েছেন? মুখ লাল নীল বেগুনি হলো নাকি?
-যাও শ্রেয়সী।
-হাতে কি?
-চিঠি।
-একটু দেখি?
-না। একটা কথা বলি?
-জ্বি।
-আই লাভ ইউ।
-কি?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-ওআচ্ছা।
-তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?
শীতল মজা করে বলল-একটুও না। ভালোবাসার আপনি কি বুঝেন?
কি আছে টা কি আপনার মাঝে? কেন আপনাকে ভালোবাসবো?
-বুঝেছি। আমি পাগল তাই আমাকে ভালোবাসো না।কেউ আমাকে ভালোবাসেনা। এজন্যই তো আমার বেবি গুলো হচ্ছে না। শীতল কে অবাক করে দিয়ে কড়াইয়ের গরম তেলে রাজ নিজের দুই হাত ডুবিয়ে দিলো। শীতল আকস্মিক ধাক্কা খেলো হঠাৎ এমন আচরণে। রাজের আঙুল গুলো নিমিষেই জ্বলসে গেলো।
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের দুটি নাম (আরবি, বাংলা অর্থ)
১৭. ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕُ আর-রযযাক্ব প্রদানকারী
১৮. ﺍﻟْﻔَﺘَّﺎﺡُ আল-ফাত্তাহ় প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী❤
.
চলবে………