#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২০
#Fariba_Ahmed
শুভ্রের কথা শুনে মেঘ বড়বড় চোখ করে তাকায়।মেঘ ভাবতেও পারেনি শুভ্র এই কথাগুলো বলবে।শুভ্রের কথা শুনে মেঘ অনেক খুশি হয়।খুশিতে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–আপনি সত্যি বলছেন মিস্টার শুভ্র,আমি আমার মিস্টার আর্টিস্টকে দেখতে পারবো,কথা বলতে পারবো।জানেন আমি খুব খুশি।অনেক ভালো লাগছে আমার।উনাকে আমি বলতে পারবো কতটা ভালোবাসি আমি উনাকে।
মেঘের শুভ্রকে হঠাৎ করে এইভাবে জড়িয়ে ধরায় অবাক হয়ে যায় শুভ্র।মেঘ যে তাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে তা ভাবতে পারেনি শুভ্র।মেঘের জড়িয়ে ধরায় শুভ্রের শরীর জুড়ে যেনো শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।খুব ভালো লাগছে শুভ্রের নিজের ভালোবাসার মানুষের এতো কাছে এসে।শুভ্র মেঘের কথাগুলো শুনছিলো,কিছু বলেনি।মুহূর্তটা উপভোগ করছিলো শুভ্র।আর এদিকে মেঘ তার মতো কথা বলেই চলেছে।কিছুক্ষণ পর মেঘের টনক নড়লো যে সে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে আছে।এটা খেয়াল হতেই শুভ্রকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।লজ্জা পাচ্ছে মেঘ।বেশি খুশি হয়ে কি করে ফেলেছে।লজ্জায় মেঘের গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।শুভ্রের ইচ্ছে করছে মেঘের গাল দুটো খেয়ে ফেলতে।কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষ যে তাকে চায় না।তবে তার ভালোবাসার মানুষ যার সাথে খুশি থাকতে চায় তার হাতেই তুলে দেবে তাকে।
মেঘ বলে উঠলো,
–সরি মিস্টার শুভ্র। আসলে এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই ওভাবে জড়িয়ে ধরেছিলাম।কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
–ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি।এখনতো হ্যাপি তুমি?
–হুম।আপনার কথায় আমি ভরসা খুঁজে পেয়েছি।আপনাকে বিশ্বাস করি।আমি জানি আপনি যা বলেছেন তাই করবেন।আম্মু আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেছে।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।(কান্না করে)
–আবার কেন কান্না করছো?আমি আছি তো।আমি সব ঠিক করে দেবো।আর কান্না করো না।ঘরে চলো।অনেক শীত পড়েছে।আর এখানে অনেক বাতাস।
–ঠিক আছে চলুন।
–তুমি শুয়ে পড়ো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–আচ্ছা।
তারপর শুভ্র একটা তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আর এদিকে মেঘ মুক্তাকে ফোন করে সব বলে।শুভ্র যে মেঘকে বলেছে তার মিস্টার আর্টিস্ট এর কাছে নিয়ে যাবে এটা শুনে মুক্তা খুব খুশি হয়েছে।কারণ মুক্তার কারণেই শুভ্র আর মেঘের এভাবে বিয়ে হলো আর মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে,তাই মুক্তার অনুসোচনা হচ্ছিলো।এখন শুভ্রের কথা শুনে মুক্তা নিশ্চিন্ত হয়েছে।
মুক্তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে মেঘ ফোন রেখে দিলো।তবে তার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।তার মা এখন কি করছে মেঘ কিছুই জানে না।টেনশন হচ্ছে তার মায়ের জন্য।এভাবে কিছুক্ষণ বসে থেকে মেঘ উঠে দাঁড়ালো শোয়ার জন্য। কিন্তু কোথায় শোবে সেটা নিয়ে দোটানায় আছে মেঘ।শুভ্র বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো মেঘ বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে,কিছু ভাবছে আর দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে।এটা দেখে শুভ্র মুচকি হাসলো।তা মায়াবিনীর পুরোনো সেই অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে।যখন তার মায়াবিনী বুঝতে পারে না কি করবে তখনই দাঁত দিয়ে নখ কামড়ায়।এই বদ অভ্যাসটা আর গেলো না তার।শুভ্র মেঘকে বললো,
–কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মেঘ শুভ্রের দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
–আসলে মিস্টার শুভ্র,
–হুম বলো।
–মানে আমি কোথায় শুবো?
–এতো বড় খাট থাকতেও বলছো কোথায় শুবে?
–না মানে আপনি আর আমি….
কথাটা বলতে বলতে মেঘ শুভ্রের দিকে তাকায়।শুভ্রকে দেখে তাকিয়ে থাকে মেঘ।মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে শুভ্র।মাথার চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
শুভ্রকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে মেঘের কাছে।মেঘ তাকিয়েই আছে শুভ্রের দিকে।মেঘকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র জিজ্ঞাসা করলো,
–কি দেখছো মেঘ?
শুভ্রের কথায় মেঘের ঘোর কাটে।
–না না কিছু না।
–তুমি খাটে শুয়ে পড়ো।আমি সোফাতে শুয়ে পড়বো।যাও।
–আপনি খাটে শুয়ে পড়ুন।আমি সোফাতে।
–না,বেশি কথা বলো না।যাও শুয়ে পড়ো।
–ঠিক আছে।
মেঘ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।শুভ্র সোফায় বসে ল্যাপটপে তার কিছু কাজ করছে।লাইট জ্বালিয়ে রাখায় মেঘ ঘুমাতে পারছে না।শুভ্র কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেঘকেও আড়চোখে দেখছে।শুভ্র বুঝতে পারলো লাইট জ্বলাইয়ে রাখাত মেঘেত ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।তাই সে লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ পরেই মেঘ ঘুমিয়ে পড়লো।মেঘ ঘুমিয়ে পড়তেই শুভ্র মেঘের কাছে গেলো।কাছ থেকে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে লাগলো।ভোর হতেই শুভ্র গিয়ে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
সকালবেলা____
পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মেঘের ঘুম ভেঙে গেলো।মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র সোফায় জোড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে।একটু নড়লেই মনে হয় সোফা থেকে নিচে পড়ে যাবে।এতো বড় মানুষের সোফায় ভালো করে জায়গা হয় না।মেঘ শুভ্রের মুখের দিকে তাকালো।ঘুমন্ত শুভ্রকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।তারপর মেঘ উঠে ফ্রেশ হতে গেলো।
মুখে পানির ছিটা পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো শুভ্রের।তাকিয়ে দেখলো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।চুলের পানিতেই শুভ্রের ঘুম ভেঙেছে।শুভ্রের ইচ্ছা করছে মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু তা তো সম্ভব নয়।শুভ্র উঠে মেঘকে বললো,
–গুড মর্নিং মেঘ।
–গুড মর্নিং।
–এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে?
–হুম আমি সকাল সকাল উঠি।
–আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে মেঘ আর শুভ্র একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।শুভ্র মেঘকে আজকে ভার্সিটি যেতে মানা করে তাই মেঘ যায় না।শুভ্রের কাজ থাকায় ও চলে যায়।একেবারে রাতে বাসায় ফিরে।তবে একটু পর পর মেঘকে ফোন করে মেঘের খবর নিয়েছে।রাতে এসে প্রথমেই ঘরে চলে যায় মেঘকে দেখতে।সারাদিনে একবারও দেখেনি আজকে সে।মেঘকে দেখে শুভ্রের অশান্ত মন শান্ত হয়ে গেলো এক নিমিষেই।
শুভ্র রাতে সোফায় ঘুমাতে গেলে মেঘ বাধা দেয়।
–আপনি বিছানায় ঘুমাতে পারেন।
মেঘের কথায় অবাক আর খুশি দুটোই হয় মেঘ।
–আর ইউ সিউর?
–হুম।আমার আপনার উপর ভরসা আছে।
–আরেকবার ভেবে নাও।
–আমি ভেবেছি।আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।
ওকে।শুভ্র আর মেঘ শুয়ে পড়ে।মেঘ ওদের মাঝে একটা কোল বালিস দিয়ে দেয়।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মেঘ শুভ্রের বুকে শুয়ে রয়েছে।এটা দেখে মেঘ অনেক অবাক হয়ে যায়।তাড়াতাড়ি করে সরে আসে শুভ্রের থেকে।মনে মনে ভাবতে থাকে শুভ্র দেখে ফেললে তাকে অনেক লজ্জায় পড়তে হতো।আর এদিকে বেচারা শুভ্র এটা মিস করে গেলো।
শুভ্র রেডি হয়ে মেঘকে নিয়ে ভার্সিটি চলে যায়।মেঘকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায় শুভ্র।মেঘকে এসে দেখে মুক্তা এখনো আসেনি।মুক্তাকে ফোন দিয়ে জানতে পারে মুক্তার মায়ের শরীর ভালো না তাই আজকে আসেনি।মেঘ এসেছে শুনে মুক্তা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু মেঘ আসতে বারণ করেছে।ক্লাস শেষ করে মেঘ মাঠে বসে আছে।শুভ্রের জন্য অপেক্ষা করছে।শুভ্র বলেছে তাকে নিতে আসবে।কিছুক্ষণ পরে শুভ্র চলে আসলো।মেঘ শুভ্রকে দেখে এগিয়ে গেলো।
–মেঘ চলো।
–এতো দেরি করলেন কেন?
–সরি,অফিসে কাজ থাকায় দেরি হয়ে গেলো।
–ইটস ওকে। চলুন।
মেঘ গাড়ির সামনে গিয়ে দেখে ইয়ানও আছে।ইয়ানকে দেখে একটা হাসি দিয়ে মেঘ জিজ্ঞাসা করলো,
–কেমন আছেন জিজু,থুরি ভাইয়া?
–ভালো।
মেঘ দেখলো ইয়ান এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।এটা দেখে জিজ্ঞাসা করলো,
–কাউকে খুঁজছেন বুঝি?
–না মানে আমি কেন কাউকে খুঁজতে যাবো।
–আপনি যাকে খুঁজছেন সে আজ আসেনি।
–ওওহ।(মুখটা ছোট করে)
–কালকে আসবে জিজু।কালকে এসে দেখেন।
–হুম।
ইয়ানের মন খারাপ দেখে মেঘ আর শুভ্র মিটমিটিয়ে হাসছে।ইয়ান শুভ্রের সাথে এসেছিলো কারণ ও ভেবেছিলো হয়তো মেঘের সাথে দেখা হবে।কিন্তু তার আশা আর পূর্ণ হলো না।
তখনই শুভ্রের ফোনে কল আসলো।শুভ্র ফোন ধরে কিছুক্ষণ কথা বললো।তারপর মেঘ আর ইয়ানকে বললো,
–তোমরা গাড়িতে বসো।আমার একটা কাজ আছে আমি কমপ্লিট করে আসছি।
–কোথায় যাবেন?
–আমি ভার্সিটির ভিতরেই আছি।
–আচ্ছা।
ইয়ান বললো,
–শুভ্র আমিও যাই।
–না তুই থাক মেঘের সাথে।
–আচ্ছা,বডিগার্ড নিয়ে যা।
–লাগবে না।
বলে শুভ্র চলে যায়।মেঘ আর ইয়ান গাড়িতে গিয়ে বসে।মেঘ তার ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে তার একটা বই নেই তার মানে ক্লাসে রেখে চলে এসেছে।
–জিজু আমি আমার একটা বই ক্লাসে রেখে চলে এসেছি।আমি নিয়ে আসছি।
–ঠিক আছে।
মেঘ ক্লাসে গিয়ে দেখ্ব বইটা সেখানে।বই নিয়ে ফিরে আসার সময় অন্য ক্লাসে দেখে শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রকে দেখে মেঘ সেদিকে যায়।কিন্তু গিয়ে যা দেখে তাতে মেঘ অবাক হয়ে যায়।মেঘ ভাবতে থাকে তার মানে তার ধারণাই ঠিক ছিলো।
মেঘ শুভ্রকে দেখে যখন ডাক দিতে যায় তখন দেখে শুভ্র একটা কোট পড়ছে।মুখে মাস্ক পড়লো আর চোখে সানগ্লাস।শুভ্রকে এখন চেনাই যাচ্ছে না।দেখে মনে হচ্ছে এসএন।তার মানে শুভ্রই এসএন। শুভ্র তার পোশাক পড়ে যখন বেরুতে নেবে তখন দরজায় মেঘকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
–মেঘ তুমি এখানে।
–তার মানে আপনিই মিস্টার এসএন।
–হুম।
–কিন্তু আপনার এসব করার মানে কি?
–আছে।
–আপনি কোনো খারাপ কাজের সাথে জড়িত নন তো?
–এসব কি বলছো মেঘ।হ্যাঁ মানছি আমি ছদ্দবেশে কাজ করছি কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি কোনো খারাপ কাজ করছি।
–তাহলে আপনার এই ছদ্দবেশের মানে কি?
–তোমাকে আমি পরে সব বলবো।এখন আমাকে যেতে হবে।
–কোথায় যাবেন?
–মিস্টার রাহুলের সাথে দেখা করতে।
–কেন?
–আমিও জানি না।উনি আমাকে ফোন করে ভার্সিটির পিছনে দেখা করতে বলেছেন।
–আপনি যাবেন না।আপনার ক্ষতি করে দিবে রাহুল।
–আমি শুভ্র সেজে যাচ্ছি না মেঘ।আমি এখন এসএন।সো টেনশন করো না।তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।আমি আসছি।
বলে শুভ্র চলে যায়।আর এদিকে মেঘের মন কু ডাকছে।মনে হচ্ছে শুভ্রের কোনো বিপদ হতে পারে।
চলবে….