শুধু তুমি আমার পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
962

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৩০
#শেষ_পর্ব
#Fariba_Ahmed

মেঘ শুভ্রের দেওয়া শাড়ি পড়ে।মেঘের খুব লজ্জা লাগছে শাড়িটা পড়ে।আগের শাড়িটাও ভালো ছিলো।শুভ্রের দেওয়া এই শাড়িটা অনেক পাতলা।পেট পুরোই দেখা যাচ্ছে।মেঘ শাড়ি পড়ে বাথরুমেই দাঁড়িয়ে থাকে।শুভ্রের মন আনচান করছে মেঘকে দেখার জন্য।কিছুক্ষণ পর মেঘ বেরিয়ে আসে।শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে হা করে থাকে।শুভ্রের কাছে মেঘকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।শাওয়ার নিয়েছে মেঘ।শাড়ি অনেকটাই লেপ্টে আছে শরীরের সাথে।মেঘকে খুবই মোহনীয় লাগছে শুভ্রের কাছে।শুভ্র নেশা ভরা চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।

শুভ্র মেঘের আরো কাছে আসলো।মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।

–তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মায়াবিনী।তোমার থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে।

শুভ্রের কথায় মেঘ আরো লজ্জা পায়।শুভ্র মেঘকে বলে,

–আমি তোমাকে আজ নিজের করে নিতে চাই মায়াবিনী।আমার রঙে তোমাকে রাঙাতে চাই।

বলে শুভ্র মেঘের ঠোঁটের দিকে এগুতে গেলে মেঘ বাঁধা দেয়।শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়।মেঘ বলতে শুরু করে,

–মিষ্টার আর্টিস্ট ভালোবাসি তোমাকে,অনেক অনেক ভালোবাসি।ছোটবেলার কোনো কথাই তেমন মনে নেই।কিন্তু ছোটবেলার ভালোবাসার অনুভূতিটা আমার স্মৃতি হারানোর পরেও রয়ে গিয়েছিল।আমার মনে।সেজন্য হয়তো তো তোমাকে না দেখে এতো ভালোবেসে ফেলেছিলাম।সব সময় তোমার আঁকা ছবি দেখতাম।কোনো জায়গায় আর্ট কম্পিটিশন হলে সাথে সাথে সেখানে চলে যেতাম।ভাবতাম তোমার সাথে হয়তো আমার দেখা হয়ে যাবে।খুব ভালোবাসি তোমাকে।নিজের থেকেও বেশি।তুমি আমার,শুধু তুমি আমার।ভালোবাসি মিস্টার আর্টিস্ট, ভালোবাসি তোমাকে।

বলে শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেঘ।শুভ্রও তার মায়াবিনীকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নেয়।সে মেঘের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনার অপেক্ষায় ছিলো।তার মায়াবিনী তাকে অবাক করে দিয়ে তাদের জীবনের এই বিশেষ দিনটাতে তাকে মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলেছে।

–ভালোবাসি মায়াবিনী,অনেক ভালোবাসি।

–একটা গান শুনাবে মিস্টার আর্টিস্ট?

–গান?

–হুম,ফুফু বললো তুমি খুব ভালো গান গাও,আমি নাকি তোমার গান শোনার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম।

–হুম মা ঠিকই বলেছে।আচ্ছা শুনাচ্ছি মায়াবিনী।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–তোমাকেও আমার সাথে গাইতে হবে।

–কিন্তু,

–প্লিজ।

–ঠিক আছে।

–তুমি আগে শুরু করো।

মেঘ গাইতে শুরু করলো,

🎶এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই
🎶তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চাই

শুভ্র গাইলো,

🎶মেঘলা হয়ে যাক আর পাঁচটা বারো মাস
🎶কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস

দুজনে একসাথে গেয়ে উঠলো,

🎶🎶শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই
শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই

গান গাওয়া শেষ হলে মেঘ তাকিয়ে দেখলো ঘরটা আগে যেভাবে সাজানো ছিলো সেরকম নেই এখন।খুব সুন্দর করে কাঠগোলাপ ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো।শুভ্র মেঘকে কোলে তুলে নিলো।মেঘ শুভ্রের গলা জড়িয়ে শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শুভ্র মেঘকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে কিস করতে থাকলো।মেঘ শুভ্রের চুলে হাত দিয়ে শুভ্রকে আরো কাছে নিয়ে আসলো। তার মায়াবিনীর মাঝে ডুব দিলো।

আজ দুটি হৃদয়ের,দুটি ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।
____________
ইয়ান আরো অনেক আগেই মুক্তাকে নিজের মনের কথা বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু শুভ্রের গুলি লাগার ওই দূর্ঘটনার পর তার সুযোগ হয়নি।শুভ্র অসুস্থ থাকায় শুভ্রের কাজ আর ইয়ানের নিজের কাজ দুটোই ইয়ানকে নিজের হাতে সামলাতে হয়েছে।

মুক্তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ইয়ান।মুক্তা নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে আর ইয়ান শুনছে।মুক্তার ঠোঁটের দিকে চোখ যায় ইয়ানের।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না।মুক্তার ঠোঁটে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়ায় ইয়ান।মুক্তা অবাক হয়ে যায়।ইয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

ইয়ানের খুব খারাপ লাগছে নিজের কাছে।তার এই কাজটা করা একদম ঠিক হয়নি।ইয়ান মুক্তাকে বললো,

–আই এম সরি মুক্তা।আমি এমনটা করতে চাইনি।আসলে আমি নিজেকে,

ইয়ানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মুক্তা ইয়ানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।ইয়ান অবাক হয়ে গেলো।মুক্তা অবাক আর লজ্জা পাওয়ার কারণে তখন ইয়ানকে সরিয়ে দিয়েছিল।মুক্তা নিজেকে সরিয়ে আনতে গেলে ইয়ান আরো মুক্তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। মুক্তাই ইয়ানকে আর বাঁধা দেয়নি।
_______

আট বছর পর____

এই আট বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই।কেউ আছে কেউ নেই।মেঘের মা দুই বছর হলো মারা গেছেন।সে সময় মেঘ অনেক ভেঙে পড়েছিলো কিন্তু শুভ্র মেঘকে বরাবরের মতোই খুব সুন্দর করে সামলেছে,আগলে রেখেছে।রাহুল আর আরিফ খানও নেই।জেলে নেওয়ার পরেই তাদের ফাঁসির আদেশ আসে।এখন খুব সুখেই দিন কাটছে ওদের।শুভ্ররা আর সুইজারল্যান্ড ফিরে যায়নি।সবাই একসাথে বাংলাদেশেই থাকে।ইয়ান নিজের অফিসে কাজ করে।শুভ্র অফিস আর ছবি আঁকার কাজ দুটোই করে।শুভ্রের এখন আরো নাম ডাক হয়েছে।

ছোট দুটো বাচ্চা একটি ছেলে আর মেয়ে তার বাবার হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আসছে।মেয়েটা দূর থেকে তার মাকে দেখে খুশিতে তার মাকে ইশারা করে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো।বাচ্চা দুটোকে দেখে এগিয়ে আসলো মেঘ।মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।আর ছেলেটাকে শুভ্র কোলে নিলো।এই ছেলে মেয়ে দুটি শুভ্র আর মেঘের।ছেলের নাম শুভ্রব চৌধুরী আর মেয়ের নাম মিহারিকা চৌধুরী।আজ মিহারিকার জন্মদিন। মিহারিকার বয়স চার আর শুভ্রবের বয়স সাত।

ইয়ান আর মুক্তারও বিয়ে হয়ে গেছে।ওদের সাত বছরের একটা ছেলে আছে নাম ইয়াশ চৌধুরী আর মেয়ের বয়স তিন,নাম মিশরা।

মিহারিকা ছোট হওয়াই সবাই ওকে অনেক আদর করে।আজকে এর জন্মদিন উপলক্ষে অনেক আয়োজন করা হয়েছে।অনেক বড় কেক এনেছে।মিহারিকাকে আদর করে সবাই মিহু আর মিশরাকে মিশু বলে ডাকে।

সবাই নিলে কেক কাটে।মিহুকে খাইয়ে সোফায় বসিয়ে দেয় মেঘ। মিহু খেলনা নিয়ে খেলতে থাকে। তখন শুভ্রের পরিচিত এক বন্ধুর ছেলে এসে মিহুর গালে কেক মাখিয়ে দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে রেগে যায় ইয়াশ। মিহুর কাছে এসে ছেলেটিকে মারতে গিয়েও থেমে যায়।নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ছেলেটিকে বলে,

–মিহুর আশে পাশেও যেন না দেখি তোকে।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি ভয় পেয়ে চলে যায়।ইয়াশ মিহুর দিকে তাকায়।মিহুর গালে ছেলেটির দেওয়া কেকটা দেখে খুব রাগ হচ্ছে ইয়াশের।তার মিহুর গালে কেন অন্য একটা ছেলে কেক মাখাবে।ইয়াশকে দেখে মিহু হাসতে থাকে।মিহুর হাসি দেখে ইয়াশের রাগ যেন গলে পানি হয়ে গেলো।ইয়াশ মিহুকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে টিস্যু দিয়ে ভালো করে গাল মুছিয়ে যত্ন করে পানি দিয়ে মুখ ধুইয়ে দিলো।মিহু ইয়াশের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে দিলো।

মিহু তার ছোট ছোট হাত দিয়ে ইয়াশের গাল চোখ ঠোঁটে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।ইয়াশের খুব ভালো লাগছে।ইয়াশের মিহুর ছোঁয়া খুব ভালো লাগে ইয়াশের।মিহুর যে গালে ওই ছেলেটা কেক লাগিয়েছে সেই গালে হাত বুলিয়ে অনেকগুলো কিস দিলো ইয়াশ।পিচ্চি মিহু কিছু না বুঝেই খিলখিল করে হেসে ইয়াশের গালে কিস দিলো।ইয়াশ যা করে মিহুও তার নকল করে সেটাই করবে।ইয়াশ মুচকি হেসে মিহুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

–মিহু তুমি আমার,তুমি আমার হয়েই থাকবে।তোমার ভাগ আমি কাউকেই দেবো না।মিহু #শুধু_তুমি_আমার।

মেঘ মিহুকে খুঁজতে এসে এই দৃশ্যটা দেখে ফেলে মুচকি হাসে।মুক্তা ইয়ান আর শুভ্রকে গিয়েও সব বলে।সবাই হেসে দেয়।
_______

এদিকে মুক্তার কোলে মিশরা বসে আছে।একটা ছেলে এসে মিশরার হাত ধরে খেলা করছে।এটা দেখে শুভ্রব তাড়াতাড়ি করে এসে মিশরার থেকে ছেলেটির হাত সরিয়ে ছেলেটিকে মারতে থাকে।এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।শুভ্র গিয়ে শুভ্রবকে আটকায়।শুভ্রব একদম শুভ্রের মতো হয়েছে।রাগ তার নাকের ডগায় থাকে।মেঘ শুভ্রবকে জিজ্ঞাসা করলো,

–শুভ তুমি এমন করলে কেন?ছেলেটাকে মারলে কেন?(রেগে)

–মারবোই আমি।যে ছেলে আমার মিশুকে ধরবে তাকেই আমি মারবো।ওকে কেউ ধরবে না আমি বাদে।মিশু শুধু আমার।

বলে মুক্তার কোল থেকে মিশুকে নিয়ে বাগানে চলে যায় শুভ্রব।

বাগানে গিয়ে দোলনায় বসে মিশুকে নিজের কোলে বসায় শুভ্রব।মিশুর দিকে তাকিয়ে বলে,

–মিশু তুমি আমার বুঝেছো।কোনো ছেলেকে আমি তোমার কাছে আসতে দিবো না।#শুধু_তুমি_আমার।

এদিকে সবাই অবাক হয়ে গেছে।সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না।শুভ্রব কেন এমন করেছে।

রাতের বেলা_____

মেঘ সব কাজ সেরে মাত্র রুমে এসেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গয়না খুলতে লাগলো।তখন শুভ্র এসে মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

— মিস্টার আর্টিস্ট ছাড়ো।

–না আমি আমার বউকে ছাড়বো না।

বলে মেঘের ঠোঁট আঁকড়ে ধরে শুভ্র।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়।

–ফ্রেশ হবো তো?

–এখন ফ্রেশ হতে হবে না।

–কেন?

–এক জায়গায় যাবো।

–কোথায়?

–গেলেই দেখতে পাবে।

–কিন্তু শুভ্রব,মিহু ওরা তো ঘুমাইনি।

–মুক্তা আর ইয়ান তো আছে,আর তার চেয়ে বড় কথা ইয়াশ আর মিশু আছে,তুমি ডাকলেও ওরা আসবে না।

–ঠিক আছে চলো।

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে সেই পদ্ম বিলের পাশে। শুভ্র কোথাও একটা গিয়েছে।কিছুক্ষণ পর শুভ্র আসলো।হাতে তার অনেকগুলো কাঠগোলাপ।মেঘ মুচকি হাসলো।কাঠগোলাপ ফুলগুলো মেঘের খোঁপায় গেঁথে দিলো শুভ্র।তারপর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্র মেঘকে এখানে নিয়ে এসেছে ভোরের সুন্দর এই দৃশ্যটা দেখতে।এই সাত বছরে অনেকবার মেঘকে শুভ্র এখানে নিয়ে এসেছে।দুজনে মিলে অনেক গল্প করেছে।একটু পরেই সকাল হতে লাগলো।শুভ্র মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে লাগলো।মেঘের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে গেয়ে উঠলো ,

🎶তুমি আর তো কারো নও
শুধু আমার
যত দূরে সরে যাও রবে আমার
স্তব্ধ সময়টাকে ধরে রেখে
স্মৃতির পাতায়
শুধু তুমি আমার

(সমাপ্ত)