#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৬
#Fariba_Ahmed
শুভ্র মেঘকে নিয়ে ওর সেই ঘরে চলে যায় যেটা সব সময় বন্ধ থাকতো,যে রুমে শুভ্র নিজের আঁকা সব ছবি রেখেছে।শুভ্র মেঘকে বললো,
–তোমার চোখ বন্ধ করো মেঘ।
–কিন্তু কেন?
–আগে করো,
–আচ্ছা।
শুভ্র মেঘকে নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে।ঘরের ভিতরে নিয়ে মেঘকে চোখ খুলতে বলে।মেঘ চোখ খুলে যা দেখে তাতে পুরো অবাক হয়ে যায়।শুভ্র যে ছবিটা এঁকেছে তা ওইদিন শুভ্রের সাথে পদ্ম বিলে সকালের
সূর্যোদয় উপভোগ করার মুহুর্তটার ছবি। ছবিটা দেখে মেঘ মুগ্ধ হয়ে গেছে।বাস্তব থেকে কোনো অংশে কম সুন্দর লাগছে না।ছবিটা দেখে মেঘের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।মেঘ আড়চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো।
–মিস্টার আর্টিস্ট এটা তো সেই দিনের,
–হ্যাঁ সেই দিনের সেই বিশেষ মুহূর্তটার ছবি।সেদিন ভোরে তুমি মুগ্ধ হয়ে পদ্ম বিলের সূর্যোদয়ের সেই মুহূর্তটা উপভোগ করছিলে।আর আমি আমার মায়াবিনীকে দেখছিলাম।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।তোমার অজান্তেই তোমার কিছু ছবি আমি তুলে নিয়েছিলাম মায়াবিনী।সারাক্ষণ তোমার ছবি দেখতাম।যখন তোমাকে অনেক মিস করতাম তখন তোমার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম এক পলক দেখার জন্য।
মেঘ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তার মিস্টার আর্টিস্ট যে তার জন্য এতো পাগল তা আগে জানা ছিলো না।সত্যি সে এমন একজন মানুষকে নিজের অজান্তেই মন দিয়ে দিয়েছে যে তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
মেঘ ঘুরে ঘুরে পুরো ঘর দেখতে থাকে।পুরো ঘরে শুভ্রের আঁকা ছবিগুলো দেখতে থাকে।সত্যি মেঘ খুব ভাগ্যবতী যে শুভ্রের মতো একজন মানুষ পেয়েছে।
শুভ্রের ফোনে কল আসে।শুভ্র ফোন বের করে দেখে ইয়ান কল দিয়েছে।মেঘ পাওয়ার খুশিতে শুভ্র ভুলেই গিয়েছিলো যে মুক্তা আর ইয়ানও মেঘকে খুঁজছে।শুভ্র ফোন রিসিভ করে বাইরে চলে যায়।
–হ্যালো শুভ্র।
–ইয়ান আমি মেঘকে খুঁজে পেয়েছি।
–যাক অবশেষে পাওয়া গেলো।কোথায় ছিলো মেঘ?
–বাসায় ছিল বাগানে।
–ওহ।এইদিকে মুক্তা তো কান্না করছে।
–ওকে বল মেঘ একদম ঠিক আছে।আমি রাখি।
–আচ্ছা বায়।
ইয়ান ফোন রেখে মুক্তার কাছে যায়।মুক্তা রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে বসে কেঁদেই চলেছে মেঘকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাই।ইয়ান গিয়ে মুক্তার পাশে বসলো।দুই হাতে মুক্তার মুখটা ধরে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,
–মুক্তা মেঘকে খুঁজে পাওয়া গেছে।শুভ্র মেঘকে খুঁজে পেয়েছে।
–আপনি সত্যি বলছেন?
–হুম।এতো কান্না কেন করো?তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না মেঘ।এইখানে খুব কষ্ট হয় তোমার চোখে পানি দেখলে।(বুকের দিকে ইশারা করে)
–কেন কষ্ট হয় আপনার?আমি কে হই আপনার?
–তুমি জানো না তুমি আমার কি হও।
–না জানি না।
–তবে খুব তাড়াতাড়ি জেনে যাবে।
–জানতে হবে না আমার।আপনি যান আপনার কাজে।
–কোথায় যাবো?
–তখন না গেলেন।একটু বসতে বলে এক ঘন্টা পর এসেছেন।
–তো মহারানী এজন্য রাগ করে আছো নাকি?
–আমি রাগ করি না।
–বুঝলাম তা কি করলে তোমার অভিমান ভাঙবে?
–কিছু করতে হবে না।আমাকে মেঘুর কাছে নিয়ে চলুন।
–ঠিক আছে চলো।
শুভ্র ফোনে কথা বলে ঘরে এসে দেখে মেঘ মাটিতে পড়ে আছে।মেঘকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে মেঘ বলে চিৎকার করে উঠে শুভ্র।মেঘের কাছে গিয়ে বুঝতে পারে মেঘ অজ্ঞান হয়ে গেছে।কিন্তু কেন এমন হলো তা বুঝতে পারছে না শুভ্র।শুভ্র মেঘকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে আসে।বিছানায় শুইয়ে দেয়।তারপর পানি এনে মেঘের মুখে পানির ছিটা দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে।মেঘের জ্ঞান ফিরতে দেখে শুভ্রের কলিজায় পানি এলো।
মেঘ চোখ খুলে দেখলো শুভ্র বসে আছে।শুভ্র মেঘকে উঠে বসতে সাহায্য করলো।মেঘ হাত দিয়ে পানি খাওয়ার জন্য ইশারা করলো।শুভ্র মেঘকে পানি খাইয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–কি হয়েছে মায়াবিনী?তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে কেন?
–মিস্টার আর্টিস্ট ওই ছবিগুলো..
–কোন ছবি?
–আপনার আঁকা কিছু ছবি দেখে আমার মনে হচ্ছিলো ওগুলো সব বাস্তবে হয়েছে আর আমার সাথেই হয়েছে।অনেক মনে করার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু কিছুই মনে পড়ছিলো না।ঝাপসা ঝাপসা কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো না।পরে মাথায় খুব ব্যাথা করছিলো।তারপর আর কিছুই মনে নেই।কখন যে অজ্ঞান হয়ে গেছি জানি না।ওই ছবি গুলো কার ছবি মিস্টার আর্টিস্ট?কেন আমার মাথায় এতো ব্যাথা করলো ছবিগুলো দেখে?বলুন না।
–শান্ত হও মেঘ।দেখো ওগুলো শুধু আঁকা ছবি।
–নাহ।আমার মনে হচ্ছে ছবিতে যা আঁকা হয়েছে তা বাস্তবে আমার সাথে হয়েছে।
–ইটস ওকে মেঘ।একটু শান্ত হও।
শুভ্র মেঘকে জড়িয়ে ধরে।মেঘ শুভ্রের বুকে মাথা দিয়ে চুপটি করে শুয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর শান্ত হয় মেঘ।শুভ্রের বুকে মাথা দিয়ে শুইয়ে যেন শান্তি খুঁজে পাচ্ছে মেঘ।মনে হচ্ছে এখানেই মেঘ সুরক্ষিত।কোনো বিপদ তাকে ছুঁতে পারবে না।মেঘ শুভ্রের বুকেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।শুভ্র মেঘকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাইরে চলে যায়।
শুভ্র ড্রয়িংরুমে বসে কাজ করছিলো তখন ইয়ান মুক্তাকে নিয়ে আসে।মুক্তা শুভ্রকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
–জিজু মেঘ কোথায়?
–ঘুমায় ও।
–এখন ঘুমোচ্ছে?
–হুম।মেঘ একটু আগে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।
ইয়ান আর মুক্তা জিজ্ঞাসা করলো,
–কেন?
–কারণ ওর ভুলে যাওয়া অতীত বার বার ওর সামনে আসছে।
মুক্তা জিজ্ঞাসা করলো,
–মানে কি জিজু?
–ইয়ান সব জানে পরে জেনে নিও।আমার মনে হয় একটা ভালো ডাক্তার দেখানো উচিত।
–ঠিক বলেছিস।মেঘকে ভালো ডাক্তার দেখা।
–হুম।মুক্তা তুমি চিন্তা করো না।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আজ এখানেই থাকো।
–ঠিক আছে।
মুক্তা যাওয়ার পর ইয়ান বললো,
–শুভ্র রাহুল আর আরিফ খানের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ জোগাড় করে ফেলেছি।এখন শুধু সব ফাঁস করার অপেক্ষা।
–ঠিক আছে।প্লান মোতাবেক কাল সব করবো।আমি জানি আরিফ খান আর রাহুল আমাকে চিনে ফেলেছে।ওরা এখন যে করেই হোক আমার আর আমার মায়াবিনীর ক্ষতি করতে চাইবে।রাহুল খান কিছু করার আগেই ওদের আসল চেহারা সবার সামনে আনতে হবে।
–আচ্ছা।আমি সব কিছুর খেয়াল রাখবো।
–আমি মেঘের কাছে যাই।
–বউ পেয়ে আমাকে ভুলেই গেলি?
ইয়ানের কথায় শুভ্র মুচকি হেসে বললো,
–বারো বছর পর আমার মায়াবিনীকে আমি পেয়েছি।এক মুহূর্তের জন্যও আমি ওকে নজরের বাইরে রাখবো না।
–হুম দোস্ত।আমারই পোড়া কপাল।যাকে ভালোবাসি তাকে মনের কথা বলতেই পারলাম না।
–ইয়ান যাকে ভালোবাসিস তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনের কথা বলে দে।তোর আগে অন্য কেউ বলে দিলে তখন তোকে পস্তাতে হবে।
–ভালো একটা কথা বলেছিস দোস্ত।আমি আর একটুও দেরি করবো না।মুক্তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলেই ছাড়বো।
_______
শুভ্র ঘরে এসে দেখে মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র গিয়ে পিছন থেকে মেঘকে জড়িয়ে ধরে।প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারে তাকে তার মিস্টার আর্টিস্ট জড়িয়ে ধরেছে।শুভ্রের জড়িয়ে ধরাতে মেঘ শুধু কাঁপছে।মেঘের এভাবে কাঁপাকাঁপি তে শুভ্রের নেশা ধরে যাচ্ছে।তার মনে ইচ্ছা জাগছে তার মায়াবিনীকে নিজের করে নিতে।মেঘ শুভ্রের থেকে দূরে যেতে চাইলে শুভ্র আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্র মেঘের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো,
–এতো কাঁপাকাঁপি করো না মায়াবিনী।আমি কোনো ভুল করে ফেললে তখন কিছুই বলতে পারবে না কিন্তু।আমি কিন্তু তখন তোমার কোনো কথাই শুনবো না।বুঝেছো মায়াবিনী?
শুভ্রের এরকম কথা শুনে মেঘও যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।শুভ্র মেঘের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে আরো শক্ত করে মেঘকে জড়িয়ে ধরে মেঘের গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।
দুজনেই এখন একটা ঘোরের মধ্যে আছে।শুভ্রের এই স্পর্শ মেঘের খারাপ লাগছে না।বরং ভালোলাগা কাজ করছে।খুব লজ্জা লাগছে।মেঘ তার মিস্টার আর্টিস্ট এর অনেক কাছে এখন।শুভ্রের মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে গেলে ভালো হতো।কিছুক্ষণ পর মেঘ শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বলে,
–রাত হয়েছে অনেক।খাবার খেতে হবে চলুন।
বলে মেঘ এর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না।লজ্জায় শুভ্রের দিকে তাকাতেই পারছে না।শুভ্রও খেয়াল করেছে তার মায়াবিনীর লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে,তা দেখে শুভ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
চলবে….
#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৭
#Fariba_Ahmed
মুক্তা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো।ইয়ান সেখানে যায়।পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে তাকায় মুক্তা।দেখে ইয়ান দাঁড়িয়ে আছে।মুক্তা জিজ্ঞাসা করে,
–আপনি এখানে?
–কেন আসতে পারি না।
–তা নয়।
–তুমি আমাকে আজকে জিজ্ঞাসা করেছিলে যে তুমি আমার কে হও।তুমি জানো তুমি আমার কে?তুমি আমার….
–কে আমি আপনার?
–আজ নয়।তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি তোমাকে কাল দেবো।কালকে তোমাকে একটা জায়গায় যেতে বলবো।ওখানে চলে আসবে।
–আচ্ছা।
মুক্তা চলে যেতে নিলে ইয়ান পিছন থেকে হাত টেনে ধরে।মুক্তার কপালে কিস দিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।আর মুক্তা ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ সময় লাগলো মুক্তার বুঝতে।তারপর মুচকি হেসে চলে গেলো।
_______
শুভ্র মেঘকে এসে বললো,
–মায়াবিনী রেডি হয়ে নাও।
–কোথায় যাবো?
–সারপ্রাইজ মেঘ।বলা যাবে না।
–বলুন না।
–বললে তো সারপ্রাইজ থাকবে না।
–আচ্ছা।
মেঘ রেডি হয়ে আসার পর শুভ্র মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।শুভ্র মেঘকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো।শুভ্র মেঘকে ভালো একটা ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছে।মেঘ দেখলো শুভ্র হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামিয়েছে।মেঘ শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করলো,
–এখানে কেন নিয়ে এলেন আমাকে মিস্টার আর্টিস্ট?
–চলো।তোমাকে ডাক্তার দেখাবো।
–কেন?আমার কি হয়েছে?
–অজ্ঞান হয়ে যাও যে তাই।
–ওটা কিছু না।
–সাট আপ মেঘ।আর একটাও কথা বলবে না।(রেগে)
মেঘ শুভ্রের রাগ দেখে ভয় পেয়ে আর একটাও কথা বলে না।ডাক্তার মেঘকে ভালো করে চেকআপ করে।কিছু মেডিসিন লিখে দেয় আর শুভ্রকে বলে মেঘকে পুরনো সব কিছু মনে করাতে।তাহলে হয়তো মেঘের স্মৃতি ফিরে আসতে পারে।শুভ্র মেঘকে নিয়ে চলে আসে।গাড়িতে গিয়ে বসে।শুভ্র খেয়াল করে দেখে মেঘ মুখ গোমড়া করে বসে আছে।শুভ্র বুঝতে পারে তার মায়াবিনীর তার উপর অভিমান হয়েছে।শুভ্র মেঘকে তুলে নিজের কোলে এনে বসায়।মেঘ ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে।শুভ্র মেঘের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
–আমার মায়াবিনীর কি আমার উপর অভিমান হয়েছে?
–হুম।আপনি আমাকে বলেছেন আমাকে সারপপ্রাইজ দিবেন।এটাই কি আপনার সারপ্রাইজ?
–আমি কি একবারো বলেছি এটা সারপ্রাইজ?
–না।
–তোমার জন্য অন্য সারপ্রাইজ আছে মায়াবিনী।তুমি খুব খুশি হবে।
–কখন দিবেন সারপ্রাইজ?
–একটু সবুর করো।
–আচ্ছা।
–এবার যাও বসে পড়ো সিটে।
মেঘ ভাবলো শুভ্রকে একটু জ্বালানো যাক।তাই মেঘ বললো,
–আমি আপনার কোলেই বসে থাকবো মিস্টার এসএন।
–তুমি আমার কোলে বসে থাকলে গাড়ি চালাবো কি করে?
–আমি জানি না।
–মায়াবিনী এখন নামো।পরে যত ইচ্ছা কোলে উঠাবো।
–না আমি নামবো না।এভাবেই গাড়ি চালাতে পারলে চালান।
শুভ্র কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বললো,
–ঠিক আছে নো প্রব্লেম। আমি এভাবেই গাড়ি চালাতে পারবো।
মেঘ টাস্কি খেয়ে গেলো।মজা করতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেলো।
–আসলে বলছিলাম কি আমি তো মজা করছিলাম।ছাড়ুন আমি সিটে গিয়ে বসি।
–কিন্তু আমি এখন সিরিয়াস।আর একটা কথাও নয়।চুও করে বসে থাকো।
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে রইলো।খুব লজ্জা লাগছে মেঘের।শুভ্র মেঘকে নিয়ে ওর মায়ের বাসার সামনে চলে যায়।মেঘ এখনো খেয়াল করে নি শুভ্র ওকে কোথায় নিয়ে এসেছে।লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ্র মেঘকে বললো,
মায়াবিনী আমরা চলে এসেছি।নামো
হুম।
বলে মেঘ শুভ্রের কোল থেকে সরে যায়।গাড়ি থেকে নেমে বাইরে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা ওর মায়ের বাড়ি।মেঘ বুঝতে পারছে না শুভ্র ওকে কেন এখানে নিয়ে এলো।মেঘ বললো,
মিস্টার আর্টিস্ট আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলেন?
বলেছিলাম না সারপ্রাইজ দিবো সেজন্য।
মানে?
আগে ভিতরে চলো,তাহলেই সব বুঝতে পারবে।
কিন্তু মিস্টার আর্টিস্ট আম্মু,
চিন্তা করো না,চলো আমার সাথে।
শুভ্র আর মেঘ বাসার ভিতরে গিয়ে অবাক হয়ে যায়।কারণ সেখানে আরিফ খান আর রাহুল বসে ছিল।শুভ্র আর মেঘ বুঝতে পারছে না আরিফ খান আর রাহুল এখানে কি করছে।মেঘের মা মেঘকে দেখে জড়িয়ে ধরে।শুভ্র জিজ্ঞাসা করে,
–আপনারা এখানে কি করছেন?কেন এসেছেন এখানে?
রাহুল বলে,
–মিস্টার শুভ্র উপস কি বলে ডাকবো আপনাকে?শুভ্র,এসএন নাকি মিস্টার আর্টিস্ট?
–কি বলতে চান আপনি?
–শুভ্র এখানে না আসলে তো অনেক কিছুই জানা বাকি রয়ে যেতো।
–মানে?
–এইযে তুই শুভ্র এটা আগেই বুঝে গিয়েছিলাম কিন্তু তুই যে তোর মায়াবিনীকে রেখে মেঘকে বিয়ে করবি তা আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিলো না।কারণ তোকে খুব ভালো করেই চিনি আমি।তুই তোর মায়াবিনী ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাস না আর সেই তুই কিনা মেঘকে বিয়ে করবি।তাই আমাদের কনফিউশান দূর করতে এখানে চলে আসি।আর সব জেনেও গেছি।মেঘ আর তোর মায়াবিনী আলাদা নয়।
শুভ্র রাহুলের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।মেঘ কিছুই বুঝতে পারছে কি বলছে এসব রাহুল।শুভ্র মেঘের মায়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞাসা করে এসব কি হচ্ছে।মেঘের মা বলল,
–শুভ্র এই রাহুল আর তার বাবা এসে বললো যে তারা নাকি মেঘকে কিডন্যাপ করেছে।এটা শুনে আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই।তারা আমাকে মেঘের ব্যাপারে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে কিন্তু আমি প্রথমে রাজি হয়নি।মেঘের কথা ভেবে সব বলে দিয়েছি।
রাহুল মেঘের সামনে এসে বললো,
–মেঘরানি তুমি নিশ্চয় কিছু বুঝতে পারছো না।আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।এই যে এই মহিলা যাকে তুমি তোমার নিজের মা ভাবো সে আসলে তোমার নিজের মা নয়।বলতে গেলে সে তোমার কিছুই হয় না।তোমার যখন নয় বছর বয়স তখন তোমাকে কুড়িয়ে পায়।তুমি উনার কিছুই হও না।আর তোমার আসল মা বাবাও বেঁচে নেই।
–শাট আপ রাহুল।অনেক বলেছিস তুই।তোর সাহস কি করে হলো আমার মায়াবিনীকে এসব বলার।
–আমি তো ভুল কিছু বলিনি শুভ্র।যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি।
মেঘ রাহুলের কথা শুনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পড়ছে।শুভ্র মেঘের কাছে গিয়ে বললো,
–মায়াবিনী আমার দিকে তাকাও।রাহুল যা বলেছে সব মিথ্যে।তুমি ওর কথা বিশ্বাস করো না।
–মিথ্যা তো আপনারা বলছেন মিস্টার আর্টিস্ট।ওইদিন মিসেস খান ঠিক বলেছিলো যে আমার শরীরে অন্য কারো রক্ত বইছে।
মেঘ তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
–আম্মু এসব মিথ্যে তাই না।বলো না আম্মু।রাহুল আর মিসেস খান যা বলেছে সব মিথ্যে। তুমি তো আমার আম্মু তাই না।
–মেঘ আমার কথা শোন।
–কি কথা শুনবো আমি।আমি কিভাবে এটা মেনে নিবো যে আমি তোমার কেউ হই না।তুমি আমার কেউ না।বলো।
মেঘ পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে।শুভ্র আর আর মেঘের মা কিছুতেই মেঘকে সামলাতে পারছে না।একসময় মেঘ অজ্ঞান হয়ে যায়।শুভ্র মেঘকে গিয়ে ধরে।কোলে তুলে নেয় মেঘকে।রাহুলের সামনে গিয়ে বলে,
–খুব বড় ভুল করলি রাহুল।আমার মায়াবিনীর কিছু হলে আমি তোকে ছাড়বো না।তোকে শেষ করে দেবো।কাজটা তুই ঠিক করিসনি।
রাহুলকে এই কথা বলে মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে যায় শুভ্র।সাথে মেঘের মাও যায়।
______
মেঘ এখন ঘুমিয়ে আছে।ডাক্তার এসে দেখে গেছে।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছে।
শুভ্র ইয়ানকে ডেকে পাঠিয়েছে।ইয়ান আসার পর শুভ্র ইয়ানকে বললো,
–ইয়ান রাহুল খান আর আরিফ খানের বিরুদ্ধে মেয়ে পাচার আর বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার যত প্রমাণ আছে তা মিডিয়াকে দিয়ে দে।ওরা খুব ভুল করেছে।আমি ওদের ছাড়বো না।
–ঠিক আছে।
শুভ্র আর ইয়ান কথা বলছিলো তখন মুক্তা এসে বলে,
–জিজু মেঘকে আমরা কেউ থামাতে পারছি না।পাগলামি করছে ও।হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে।
–কিহ।আচ্ছা তোমরা থাকো।আমি দেখছি।
বলে শুভ্র মেঘের কাছে চলে যায়।গিয়ে দেখে পুরো ঘরে ভাঙা জিনিস পড়ে আছে।শুভ্র আস্তে করে মেঘের কাছে যায়।মেঘ শুভ্রকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।শুভ্রও মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
–মিস্টার আর্টিস্ট আপনি আমাকে এই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।আমি এটা মানতে
পারছি না মিস্টার আর্টিস্ট।রাহুল এসব কি বললো।আমার আসল মা বাবা কে আর তারা বেঁচে নেই মানে কি।আপনি তো সব জানেন।আমাকে বলছেন না কেন?আমার এসব আর সহ্য হচ্ছে না মিস্টার আর্টিস্ট।
–শান্ত হও মেঘ।আমি তোমাকে সব বলবো।রাহুল ঠিকই বলেছে তোমার আম্মু তোমার নিজের মা নয়।তুমি তার কেউ হও না।
চলবে….