শুধু তুমি আমার পর্ব-২৮+২৯

0
513

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৮
#Fariba_Ahmed

শুভ্রের কথা শুনে মেঘের চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।মেঘ আশা করেছিলো শুভ্র হয়তো বলবে রাহুল যা বলেছে সব মিথ্যে। কিন্তু সেটা আর হলো না।

শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো,

–তোমার আসল নাম মেঘালয়া ইসলাম নয়।তোমার আসল নাম মেঘালয়া রহমান মায়া।আমার মায়াবিনী।তোমার বাবার নাম মিরাজ রহমান আর মায়ের নাম আলিয়া বেগম।তুমি আমার মামা মামির মেয়ে মেঘ।তাই তোমাকে আমি সেই ছোট্টবেলা থেকে চিনি।ছোটবেলা থেকে তোমাকে ভালোবাসি।শুধু আমি না ছোট থেকে তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসতে।আমার ছবি আঁকা শুধু তোমার জন্য।শুধু তোমার ছবি আঁকতাম আমি।আমার আঁকা ছবি তোমার খুব পছন্দ। তাই আমাকে তুমি মিস্টার আর্টিস্ট বলে ডাকতে।

–আপনি কি করে বুঝলেন আমি আপনার মায়াবিনী?আমার তো ছোট বেলার কথা কিছুই মনে পড়ছে না।

–তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার তোমার কাছে থাকতে খুব ভালো লাগতো।তোমার কথাগুলো ভালো লাগতো।তার চেয়ে বড় কথা হলো আমি আমার মায়াবিনীর সাথে তোমার অনেক মিল দেখেছিলাম।যেরকম তোমার কাঠগোলাপ ফুল অনেক ভালো লাগে,কাঠগোলাপ ফুল পেলে এক নিমিষেই তোমার মন ভালো হয়ে যায়।যা আমার মায়াবিনীরও হতো।পরে তুমি যেদিন ছাদ থেকে পড়ে গেলে সেদিন তোমার বাসায় গিয়ে আমি আমার আঁকা সেই ছবিটা দেখি।যা বারো বছর আগের আঁকা ছিলো।

–ওই ছবিটা আমি আমার একটা স্কুল বেগে পেয়েছিলাম।

–হুম,কারণ তুমি আমার আঁকা এই ছবি সবসময় তোমার সাথে রাখতে মায়াবিনী।তোমার গলার লকেটটা দেখেছো ওটা দেখেও আমার সন্দেহ হচ্ছিলো হয়তো তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা।আমি এই একি রকম লকেট জন্মদিনে আমার মায়াবিনীকে গিফট করেছিলাম।কিন্তু আমি সিউর হতে পারছিলাম না।পরে আমার কিছু লোক লাগাই তোমার ব্যাপারে সব খবর নেওয়ার জন্য। তখন অনেক খবর পাই।একদিন আমি তোমার মায়ের সাথে আলাদা করে কথা বলি।উনি প্রথমে কিছু না বললেও পরে সব স্বীকার করেছেন।তোমাকে উনি বারো বছর আগে খাগড়াছড়ির এক নদীর তীরে পরে থাকতে দেখে তোমাকে বাঁচান।উঁচু পাহাড় থেকে তুমি নদীতে পড়ে যাও।মাথার পিছনে পাথরে বারি খাওয়ার কারণে তোমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়।তুমি কিছুই মনে করতে পারছিলে না।তোমার নামও বলতে পারছিলে না।তোমার হাতে মেঘালয়া লেখা দেখে তোমার মা ভাবে হয়তো এইটা তোমার নাম হবে তাই এই নাম রাখে।তোমার হাতে নাম আমিই সবসময় লিখে দিতাম।উনি তোমার মা বাবাকে অনেক খুঁজার চেষ্টা করে কিন্তু পায় না।তোমার মায়েরও সন্তান হয়নি,স্বামীও মারা গিয়েছিলো তাই উনি তোমাকে নিজের সন্তানের মতো বড় করতে থাকে।

–আমার বাবা মা কোথায় মিস্টার আর্টিস্ট আর আমি কীভাবে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছিলাম?

–তোমার মা বাবা আর নেই মেঘ।বারো বছর আগেই মারা গেছে।

এ কথা শুনে মেঘের পায়ের নিচ থেকে মনে হয় মাটি সরে গেলো।মেঘ মাটিতে বসে পড়লো।শুভ্র শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।

–মায়াবিনী তোমার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলো।আরিফ খানের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করায় তাকে প্রাণ দিতে হয়।

মেঘ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–আরিফ খান মানে রাহুলের বাবা।

–হুম।

–রাহুল খান তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছিলো।

–কেন?রাহুল তো এখনো চায় আপনার থেকে আমাকে আলাদা করতে।

–পারবে না।তখন আমি তোমাকে বাঁচাতে না পারলেও এখন আমি তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।তুমি আমার।#শুধু_তুমি_আমার ।কেউ তোমাকে কেড়ে নিতে পারবে না মায়াবিনী।

মেঘ শুভ্রের বুকে মাথা দিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।শুভ্র থামাচ্ছে না মেঘকে।কাঁদুক মেঘ। এতে ওর মনটক হালকা হবে।
________
শুভ্র মেঘকে ঘরে রেখে মেঘের মায়ের কাছে গিয়ে বলে মেঘকে সামলাতে।ওর একটা কাজ আছে।মেঘের মা মেঘের কাছে যায়। মেঘ তার মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে। মেঘের মা বলে,

–মেঘ আমি তোকে জন্ম না দিলেও সেই ছোট থেকে আমি তোকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি।ভালোবাসি তোকে আমি।আমি জন্ম না দিলেও তোর মা।সারাজীবন আমি তোর মা হয়েই থাকবো।

আরো অনেক কিছু বলে মেঘের মা মেঘকে শান্ত করে।কিছুক্ষণ পর ইয়ান মুক্তাকে কল দিয়ে বলে নিউজ চ্যানেলে কিছু একটা দেখাবে তা দেখতে।তারপর মুক্তা টিভি অন করে।

শুভ্র মেঘকে রেখে ইয়ানের সাথে রাহুলের বাসায় চলে যায়।মিডিয়াকেও কল করে সেখানে আসতে বলে।হঠাৎ নিজের বাড়িতে শুভ্র আর মিডিয়াকে দেখে অবাক হয়ে যায় রাহুল আর আরিফ খান।রাহুল তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করে,

–এসব কি ড্যাড,ওরা এখানে কি করছে?মিডিয়াও বা কেন এসেছে?

–তুমি যেখানে আমিও তো সেখানেই রাহুল।আমি কিভাবে বলবো।

রাহুল শুভ্রের সামনে এসে বলে,

–এখানে তুই কেন শুভ্র?আর মিডিয়াও কি করছে?

–আস্তে আস্তে সব জানতে পারবি রাহুল।বি পেসেন্ট।

শুভ্র সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে বলে,

–আজকে আমি আপনাদের কিছু প্রমাণ দেওয়ার জন্য এখানে ডেকেছি।এই রাহুল খান আর আরিফ খান মেয়ে পাচারের সাথে যুক্ত।এছাড়া সে ড্রাগের ব্যবসাও করে থাকে।রাহুল খানের পেশা হলো মেয়েদেরকে পটিয়ে এক দিনের জন্য ইউজ করা।এভাবে সে অনেক মেয়ের জীবনই নষ্ট করেছে।

এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।সব টিভি চ্যানেলে এটা দেখাচ্ছে।এসব শুনে রাহুল আর আরিফ খান বলে,

–এসব মিথ্যে। তুই মিথ্যে কথা বলছিস।কি প্রমাণ আছে?

–প্রমাণের কথা বলছিস।আমার কাছে অনেক প্রমাণ আছে।কি ভেবেছিলি আমি তোদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবো কখনো না।

শুভ্র আবার সাংবাদিকদের বলে,

–এই আরিফ খান শুধু এই খারাপ কাজ গুলোও করেনি,বারো বছর আগে আমার মামা মানে আই পি এস অফিসার মিরাজ রহমান আর তার বউকে আরিফ খান মেরে ফেলে।তাদের গাড়িতে বোমা লাগিয়ে দেয়।কারণ আমার মামা আরিফ খানের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ পেয়ে গিয়েছিলো।

সবাই এসব শুনে অবাক হয়ে যায়।সবাই ভাবতেও পারছে আরিফ খান আর রাহুল খানের ভালো চেহারার পিছনে এতো জঘন্য একটা চেহারা আছে।
শুভ্র সবাইকে সব প্রমাণ দিয়ে দিলো।আরিফ খান কিছুই করতে পারলেন না।কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসলো।পুলিশ এসে আরিফ খান আর রাহুলকে ধরে নিয়ে গেলো।তারা দুজনেই রাগে ফুসছে।ওদেরকে নিয়ে যাওয়ার সময় রাহুল পুলিশের হাত থেকে একটা বন্দুক কেড়ে নিয়ে শুভ্রের পেটে আর বুকে দুইটা গুলি করে বলে

মেঘ আমার না হলে তোরও হবে না শুভ্র।যা আমি পাই না সেটা আমি অন্যেরও হতে দেই না।বারো বছর আগে মেঘকে আমি চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমার হয়নি তাই ওকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।(বলে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো)

যেহেতু এটা লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিলো মেঘও সব দেখছিলো,শুনছিলো।সব শুনে মেঘ অবাক হয়ে যায়।অনেক কান্না করতে থাকে।যখন দেখলো রাহুল শুভ্রকে গুলি করেছে মেঘ মিস্টার আর্টিস্ট বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।মেঘের মা আর নুক্তা এসে মেঘকে ধরে।

ঘটনা এতো দ্রুত হয়েছে যে কেউ বুঝতেই পারেনি রাহুল শুভ্রকে গুলি করবে।ইয়ান তাড়াতাড়ি করে শুভ্রের কাছে।শুভ্র মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।ইয়ান শুভ্রের মাথা নিজের কোলে রেখে বলে,

–চোখ খুলে রাখ শুভ্র।তোর কিছুই হবে না।আমি তোর কিছু হতে দেবো না।

–আমার কাছে হয়তো বেশি সময় নেই ইয়ান।আমার মায়াবিনীকে দেখে রাখিস।ওকে আগলে রাখবি তোরা।আমার মায়াবিনীকে বলিস তার মিস্টার আর্টিস্ট ওকে অনেক ভালোবাসে।

এই কথাটা বলে শুভ্র চোখ বুজে নেয়।ইয়ান শুভ্র বলে চিৎকার করে উঠে।

চলবে…..

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২৯
#Fariba_Ahmed

৭ মাস পর_____

মেঘ তার ঘরের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।খুব সুন্দর করে সাজছে।নীল সিল্কের শাড়ি পড়েছে,কানে নীল আর সাদা পাথরের ঝুমকা,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর হাতে নীল চুড়ি।এই সাজে খুব সুন্দর লাগছে মেঘকে।এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মেঘ সুন্দর করে সাজলো।এর আগে শুভ্রের সাথে মেঘের বিয়ের দিন মেঘ সেজেছিলো।আগের কথা ভাবতেই মেঘের মুখটা কালো হয়ে গেলো।এই সাত মাস খুব কষ্টে কাটিয়েছে মেঘ।পুরনো সব ভুলে,সব কষ্ট ভুলে নিজেকে সামলে নিয়েছে মেঘ।মেঘ আয়নায় আরেকবার নিজেকে দেখে নিলো ভালো করে।মেঘের খুব লজ্জা লাগছে।মেঘ রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।নিচে গিয়ে দেখে মুক্তা,ইয়ান,মেঘের মা,মেঘের ফুফু ফুফা সবাই বসে আছে।মেঘকে দেখে মেঘের ফুফু এগিয়ে এসে বললো,

–আমার মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মতো।জানিস আমার কত শখ ছিলো আমি দাঁড়িয়ে থেকে তোর বিয়ে দিবো।তোর মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো তোর বিয়ে দিবে,তোর বাচ্চাকে নিজের হাতে বড় করবে,কিন্তু তার সব ইচ্ছাই অপূর্ণ রয়ে গেলো।

মেঘ তার ফুফুর কথা শুনে ছলছল চোখে তাকালো।

–আজ চোখে কোনো পানি নয় মেঘ।হাসবি তুই।কান্না করার দিন শেষ।নতুন করে নিজের জীবনটা শুরু কর।

–হুম ফুফু।

–আবার ফুফু বলছিস।

–সরি গালতিছে মিস্টেক হো গেয়া।

–পাগলি মেয়ে চল।

মেঘকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।কাজি সাহেবও চলে এসেছে।মেঘের বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু হয়।
মেঘকে কবুল বলতে বললে মেঘ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর কবুল বলে দেয়।বিয়ে পড়ানো শেষ হয়।বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই মুক্তা মেঘকে নিয়ে উপরের চলে গেলো।

ফ্লাসবেক___

সেদিন শুভ্রের গুলি লাগার পর শুভ্রকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ইয়ান।শুভ্রের অবস্থা অনেক খারাপ থাকায় ওটিতে নিয়ে যায়।

মেঘ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর ওর মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়।মেঘের জ্ঞান ফেরার পর থেকেই মেঘ মিস্টার আর্টিস্ট বলে কেঁদেই যাচ্ছে।ইয়ান ফোন করে জানায় শুভ্রের অবস্থা ভালো না।এটা শুনার পর মেঘ আরো ভেঙে পড়ে।সে তার মা বাবা কে হারিয়েছে।শুভ্রকে সে হারাতে চায় না।মেঘ মুক্তা আর মেঘের মা হাসপাতালে চলে যায়।হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে শুভ্রের অবস্থা অনেক খারাপ।মেঘ কান্না করতে থাকে।কেউ মেঘকে সামলাতে পারছে না।শুভ্রের অপারেশন চলতে থাকে।মেঘ দোয়া করছে শুভ্র যেন ভালো হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা আর একজন পুরুষ আসলো।মহিলাটি কান্না করেই যাচ্ছে।ইয়ানকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসলো।ইয়ান তাদের দেখে বললো,

–কাকা কাকি তোমরা এখানে?

মহিলাটি বললো,

–আমার শুভ্র কেমন আছে ইয়ান?

–কাকি শুভ্রের অবস্থা ভালো না।পেটে আর বুকে গুলি লেগেছে।

এটা শুনে উনি আরো কাঁদতে লাগলেন।মেঘ মুক্তা মেঘের মা বুঝতে পারছেন না উনারা কারা।ইয়ান বুঝতে পেরে বললো,

–মেঘ উনারা মেঘের মা বাবা।তোমার ফুফু আর ফুফা।

এ কথা শুনে শুভ্রের মা বাবা অবাক হলেন।তারা ইয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে,ইয়ান তাদের সব খুলে বলেন।শুভ্রের মা গিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরে।মেঘও তার ফুফুর বুকে মাথা দিয়ে কান্না করতে থাকে।

শুভ্রের মা বাবা শুভ্রের আর্ট কম্পিটিশনের দিন সব জানতে পারে।এটাও জানতে পারে যে শুভ্র বিয়ে করেছে।এ কথা শুনে শুভ্রের মা খুশিও হন আবার তার মন খারাপও হয়।কারণ তিনি তার ভাইয়ের মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করতে চেয়েছিলেন।এখানে এসে যখন জানলেন মেঘ বেঁচে আছে উনি অনেক খুশি হন।মেঘের সাথেই তার ছেলের বিয়ে হয়েছে,তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।এখন শুধু শুভ্র সুস্থ হয়ে যাক।মেঘ তার ফুফুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।কিছুক্ষণ পর ওটির লাইট নিভে যায়।ডাক্তার বেরিয়ে আসেন ডাক্তার এসে বলেন অপারেশন সাকসেসফুল বাট চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে শুভ্রের জ্ঞান না ফিরলে শুভ্র কোমায় চলে যেতে পারে।এটা শুনে মেঘ হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।কান্না করতে করতে একসময় অজ্ঞান হয়ে যায় মেঘ।

জ্ঞান ফিরে দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।মেঘ উঠে শুভ্রের কেবিনের কাছে যায়।শুভ্র চোখ বুঝে শুয়ে আছে।শুভ্রের এভাবে শুয়ে থাকা মেঘের একটুও ভালো লাগছে না।মেঘ গিয়ে শুভ্রের পাশে বসলো।শুভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শুভ্রের কাধে মাথা দিয়ে একসময় ঘুমিয়ে গেলো।

চব্বিশ ঘণ্টা হতে আর মাত্র ত্রিশ মিনিট বাকি কিন্তু শুভ্রের জ্ঞান এখনো ফিরছে না।মেঘের ভয় হচ্ছে।মেঘ তার মিস্টার আর্টিস্টকে হারাতে চায় না।মেঘ শুভ্রের হাত ধরে বসে চোখের পানি ফেলতে থাকে।কিছুক্ষণ পর মেঘের মনে হলো শুভ্রের হাত নড়ছে।মেঘ বুঝতে পেরে অনেক খুশি হয়। ডাক্তারকে ডেকে আনে।ডাক্তার এসে শুভ্রকে চেক করে বলে শুভ্র এখন ঠিক আছে কিন্তু ওর অনেক যত্ন নিতে হবে।মেঘ আর শুভ্রকে রেখে বাকিরা চলে যায়।বাকিরা চলে যেতেই মেঘ শুভ্রের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠে।মেঘ বলে,

–আপনি খুব খারাপ মিস্টার আর্টিস্ট। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না আপনি।

–কে বলেছে আমি আমার মায়াবিনীকে ভালোবাসি না।

–আপনি কেন ওইখানে গেলেন?আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো।আমিও বাঁচতাম না।

–আমার কিছু হয়নি মেঘ।আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।

–আমি আমার মা বাবাকে হারিয়েছি,আপনাকে হারাতে চাই না মিস্টার আর্টিস্ট।

–আমি কথা দিলাম আমি আর এরকম কখনো করবো না।তোমাকে ছেড়ে যাবো না।ভালোবাসি মায়াবিনী ভালোবাসি।শুধু তুমি আমার।আমাদের দুজনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।

–হুম।

–মায়াবিনী তুমি ছোটবেলায় আমাকে তুমি করে ডাকতে,তাই আজ এখন থেকে আমাকে তুমি করেই ডাকতে হবে।

–কিন্তু,

— কোনো কিন্তু নয় মায়াবিনী।রাখবে না আমার কথা?

–হুম।

মেঘ আরো শক্ত করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।দুইদিন পর শুভ্রকে বাসায় নিয়ে যায়। সাত মাস লাগে শুভ্রের ঠিক হতে।মেঘ অনেক যত্ন নিয়েছে শুভ্রের।এক পলক চোখের আড়াল করেনি শুভ্রকে।মেঘ পাশাপাশি নিজের মেডিসিন গুলোও খেয়েছে।মেঘ তার ছোটবেলার কিছু কিছু কথা মনে করতে পারে।তার মা বাবার কথা।যখনই তার মা বাবার কথা মনে পড়ে তখনই কান্না করে মেঘ।কিন্তু শুভ্র মেঘকে ঠিকই সামলে নিয়েছে।মেঘের মা মেঘেদের সাথেই থাকে এখন।যেহেতু শুভ্র আর মেঘের বিয়ে অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে হয়েছিলো তাই সবাই মিলে আবার মেঘের বিয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়।
______
বাসর ঘরে বসে আছে মেঘ।পুরো ঘর মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।খাট কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে সাজানো হয়েছে।মেঘের খুব লজ্জা লাগছে।বিয়ে পড়ানোর সময় মেঘ একবার শুভ্রের দিকে তাকিয়েছিলো।শুভ্র ঘোর লাগা চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তা বুঝতে পেরে মেঘ লজ্জায় আর শুভ্রের দিকে তাকায়নি।এখন মেঘের আরো বেশি লজ্জা লাগছে।একটু পরে দরজা খোলার শব্দ হয়।মেঘ বুঝতে পারে তার মিস্টার আর্টিস্ট এসেছে।শুভ্র ঘরে এসে ভালো করে মেঘকে দেখতে থাকে।মেঘ লজ্জায় শুভ্রের দিকে তাকায় না।শুভ্র মেঘের হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বলে পড়ে আসতে।মেঘ শাড়ি পড়তে চলে যায়।
______
ইয়ান মুক্তাকে একটা জায়গার নাম মেসেজ করে সেখানে আসতে বলেছে।মুক্তা একটা সুন্দর গ্রাউন পড়ে ওখানে চলে আসে।মুক্তা এসে দেখে পুরো জায়গাটা অন্ধকার হয়ে আছে।মুক্তা ভয় পেয়ে ইয়ানকে ডাকতে থাকে।হঠাৎ করে লাইট জ্বলে উঠে।মুক্তা তাকিয়ে দেখে চারপাশ অনেক সুন্দর করে সাজানো।আর ইয়ান মুক্তার সামনে গোলাপ ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।মুক্তা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ান বলতে শুরু করলো,

–মুক্তা কিভাবে আমি আমার মনের কথা বোঝাবো তোমাকে আমি জানি না।যখন তোমার সাথে প্রথম ধাক্কা লাগে তোমাকে দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে যাই।তোমার মায়ায় পড়ে যাই যা এর আগে কখনো হয়নি।তারপর থেকেই তোমাকে ভুলতে পারতাম না।সারাক্ষণ তোমার কথা মনে পড়ে।তোমাকে মিস করি।তাই বিভিন্ন বাহানায় তোমার সাথে দেখা করতে যেতাম।তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগতো না।বিদেশে অনেক মেয়ের সাথেই কথা বলতাম ভালোবাসা খুঁজতাম।কিন্তু কাউকেই ভালো লাগতো না।কোনো অনুভূতি কাজ করতো না।এই প্রথমবার কারো জন্য আমার মনে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।তোমাকে আমি অনুভব করতে পারি।তোমার চোখে পানি দেখলে খুব কষ্ট হতো।তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না।ভালোবাসি মুক্তাপাখি,অনেক অনেক ভালোবাসি।কেন ভালোবাসু জানি না।শুধু জানি ভালোবাসি।কতটুকু ভালোবাসি তা বোঝাতে পারবো না তবে তোমায় ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না।ভালোবাসি মুক্তা,অনেক ভালোবাসি।

ইয়ানের মুখে এই কথা শুনে মুক্তা কান্না করতে থাকে।সেও তো ইয়ানকে অনেক ভালোবাসে।মুক্তা ইয়ানের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে ইয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি ইয়ান।অনেক।কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো?

–না পাখি।আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।

বলে আরো শুক্ত করে মুক্তাকে জড়িয়ে ধরে ইয়ান।

চলবে….