#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২১
#Fariba_Ahmed
শুভ্র রাহুলের সাথে দেখা করার জন্য ভার্সিটির পিছনে চলে যায়।কিন্তু সেখানে গিয়ে রাহুলকে দেখতে পায় না।শুভ্র ভাবতে থাকে রাহুল তাকে ফোন করে বললো সে ভার্সিটির পিছনে অপেক্ষা করছে কিন্তু রাহুল তো এখানে নেই।শুভ্র এসবই ভাবছিলো আর তখন কেউ একজন পিছন থেকে এসে শুভ্রের মাথার পিছনে জোরে বারি মারে।শুভ্র চিৎকার দিয়ে উঠে।মাথার পিছনে দুই হাত দিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।পিছনে ফিরে দেখে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে,কালো কাপড় দিয়ে মুখটা ঢাকা।শুভ্রের মাথা ঘুরছে।শুভ্র লোকটাকে মারতে গেলে লোকটা জোরে শুভ্রের নাকে ঘুসি মারে।শুভ্র মাটিতে পড়ে যায়।মাথার পিছনে অনেক জোরে মারার কারণে শুভ্র ভালো করে দাঁড়াতেও পারছে না।চোখে ঝাপসা দেখছে।
লোকটা শুভ্রের কাছে এসে বসে।পকেট থেকে একটা ছুঁড়ি বের করে শুভ্রের ডান হাতের তালুতে আর আঙুলে আঘাত করে।গড়গড় করে রক্ত পড়তে থাকে।আরেকবার শুভ্রের হাতে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করে।শুভ্র ব্যাথায় আহ করে উঠে।লোকটা আরেকবার ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করতে আসলে শুভ্র বাম হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে।লোকটা আর শুভ্রের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে।কারো পায়ের আওয়াজ শুনে লোকটা শুভ্রকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।শুভ্র ব্যাথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,সেখানেই জ্ঞান হারায়।
শুভ্র চলে যাওয়ার পর মেঘের বার বার মনে হচ্ছিলো কোনো বিপদ হতে পারে শুভ্রের।মেঘ গাড়ির কাছে চলে যায়।গাড়িতে গিয়ে বসে থাকে।শুভ্রের আসতে অনেক দেরি হওয়াতে মেঘ ভয় পেয়ে যায়।ইয়ানকে বলে শুভ্রকে কল করতে।অনেকবার কল করার পরও শুভ্র ফোন তুলছিলো না।ইয়ান বুঝতে পারে হয়তো শুভ্রের কোনো বিপদ হয়েছে।কারণ শুভ্র ফোন কখনো এতো দেরিতে ধরে না।ইয়ান মেঘকে জিজ্ঞাসা করে,
–শুভ্র কোথায় গেছে তুমি জানো?
–হুম।রাহুলের সাথে দেখা করতে।
–তুমি আমাকে আগে বলবে তো।আমাকে এখনি যেতে হবে।তুমি থাকো এখানে।
–না আমিও যাবো আপনার সাথে।
–কিন্তু।
–প্লিজ নিয়ে যান।
–ঠিক আছে চলো।শুভ্র যেখানে গিয়েছে সেখানে আমাকে নিয়ে চলো।
–চলুন।
তারপর মেঘ আর শুভ্র ভার্সিটির পিছনের দিকে আসে।কিন্তু সেখানে শুভ্রকে দেখতে পায় না।খুব ভয় পেয়ে যায় ওরা।ফিরে আসতে নিলে মেঘের চোখ যায় নিচে একটু দূরে।দেখে কেউ একজন উপর হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।মেঘ ছুটে সেদিকে যায়।বসে পড়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অবাক হয়ে যায় মেঘ।শুভ্র বলে চিৎকার করে উঠে।মেঘের চিৎকার শুনে ইয়ান ছুটে আসে।শুভ্রকে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায় ইয়ান।মেঘ শুভ্রের মাথা নিজের কোলে রাখে।শুভ্রের গালে হাত রেখে বলে,
–মিস্টার শুভ্র,শুনতে পাচ্ছেন?উঠুন।কি হয়েছে আপনার।কথা বলুন।
মেঘ তার হাতে তরল কিছু অনুভব করে।হাত সরিয়ে দেখে শুভ্রের মাথার পিছন থেকে অনেক রক্ত পড়ছে।হঠাৎ মেঘের চোখ যায় শুভ্রের হাতের দিকে।শুভ্রের ডান হাত দেখে আঁটকে উঠে মেঘ।কি বিশ্রী ভাবে শুভ্রের হাতে আঘাত করেছে।অনেক রক্ত পড়ছে।ইয়ান আর মেঘ দুজনে ধরাধরি করে তাড়াতাড়ি করে শুভ্রকে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে।পিছনের সিটে মেঘের কোলে শুইয়ে দেয় শুভ্রকে।গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় শুভ্রকে।
ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শুভ্রকে।ও.টির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ আর ইয়ান।মেঘের অজান্তেই ওর চোখ বেয়ে পানি পড়েই চলেছে।ইয়ান মুক্তাকে ফোন করে সব বলে।মুক্তা তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে এসে পড়ে।মেঘকে দেখে অবাক হয় মুক্তা।কারণ মেঘ শুভ্রের জন্য কাঁদছে।মুক্তা গিয়ে মেঘের পাশে বসে।মুক্তা মেঘকে বলে টেনশন না করতে শুভ্র ঠিক হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পরে ও.টির লাইট বন্ধ হয়ে যায়।ডাক্তারকে দেখে মেঘ ইয়ান মুক্তা তার কাছে যায়।
মেঘ জিজ্ঞাসা করলো,
–ডাক্তার মিস্টার শুভ্র এখন কেমন আছে?
ডাক্তার বলে,
–দেখুন উনার মাথার পিছনে জোরে আঘাত করা হয়েছে।আর ডান হাতের তালুতেও আঘাত করা হয়েছে। উনি এখন ভালো আছেন।কিছুক্ষণ পরেই উনার জ্ঞান ফিরে আসবে।উনার সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।অনেক যত্ন নিতে হবে শুভ্রের।
ইয়ান বললো,
–ডাক্তার এখন কি আমরা শুভ্রের সাথে দেখা করতে পারি?
–হুম।তবে একজন দেখা করতে পারবেন।
–আচ্ছা।
ডাক্তার চলে গেলো।ইয়ান মেঘকে বললো,
–মেঘ তুমি আগে যাও।শুভ্রকে দেখে আসো।
–আমি,কিন্তু
মুক্তা বললো,
–মেঘ তুই যা।গিয়ে দেখে আয়।
–আচ্ছা।
মেঘ শুভ্রের কেবিনের দিকে গেলো।শুভ্রকে দেখে মায়া লাগলো মেঘের।মাথায় ব্যান্ডেজ,হাতে ব্যান্ডেজ করা।বাইরে থেকে কিছুক্ষণ শুভ্রকে দেখে ভিতরে গেলো মেঘ।শুভ্রের কাছে গিয়ে বসলো।শুভ্রের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো মেঘ।কেন জানি মেঘের খুব খারাপ লাগছে।যখন শুভ্রকে ওই রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছিলো মেঘের মনে হয়েছিলো ওর পুরো দুনিয়াটাই যেন থামকে গেছে।খুব অসহায় লাগছিল তার।
মেঘ এক হাতে শুভ্রের হাত ধরে আরেক হাত দিয়ে শুভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেঘ মনে মনে বলছে,
–আপনার কিছু হবে না শুভ্র।একদম ঠিক হয়ে যাবেন।আমি আপনাকে সুস্থ কতে তুলবো।
মেঘ এভাবেই বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো শুভ্রের হাত নড়ছে।মেঘের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।শুভ্র আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো।শুভ্র চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে মেঘ বসে আছে।মেঘকে দেখে মৃদু হাসলো শুভ্র।চোখ মেলেই মেঘের মুখটা দেখে যেন শুভ্র তার সব ব্যাথা ভুলে গেলো।
–কেমন লাগছে শুভ্র?খারাপ লাগছে?ডাক্তারকে ডাক দিবো?
শুভ্র কিছুই বলছে না।চুপ করে আছে।কারণ মেঘ এই প্রথমবার শুভ্রকে নাম ধরে ডেকেছে।শুভ্রের মনে অনেক ভালোলাগা কাজ করছে।
–কি হলো কিছু বলুন?আচ্ছা আমি ডাক্তারকে ডেকে আনছি।
বলে চলে যেতে নিলে শুভ্র মেঘের হাত টেনে ধরে।তারপর বলে,
–আমি ঠিক আছি মেঘ।
–আমি আপনাকে কালকে বার বার বলেছিলাম রাহুলের সাথে দেখা করতে যেয়েন না।কিন্তু আপনি আমার কথা শুনলেন না।কি হয়েছিলো কালকে?রাহুল আপনার সাথে এরকম কেন করলো?
মেঘ খেয়াল করলো শুভ্রের কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে।মেঘ শুভ্রকে বললো,
–আচ্ছা সব পরে শুনবো।আপনি এখন রেস্ট নিন।আমি ডাক্তারকে ডেকে আনি।
–মেঘ।
–বলুন।
–তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
–কি?
–তুমি আজকে আমাকে নাম ধরে ডেকেছো।
–আমি তো আপনাকে নাম ধরেই ডাকি।
–তুমি আমাকে মিস্টার শুভ্র বলে ডাকো।আজকে শুধু শুভ্র বলে ডেকেছো।
শুভ্রের কথায় থ হয়ে আছে মেঘ।আবার লজ্জাও লাগছে।মেঘ ভাবছে সত্যিই কি সে শুভ্রকে নাম ধরে ডেকেছে।
–আমি আপনাকে কখন,
–হয়তো তুমি খেয়াল করো নি কিন্তু আমি করেছি।
–আচ্ছা আপনি থাকুন আমি ডাক্তারকে ডেকে আনি।
বলে মেঘ চলে যায়।ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে মেঘ।ইয়ান আর মুক্তাকেও খবর দেয়।ইয়ান আর মুক্তা এসে শুভ্রকে দেখে।ইয়ানের খুব খারাপ লাগছে।আজ যদি ও শুভ্রের সাথে যেতো তাহলে হয়তো শুভ্র এই অবস্থায় থাকতো না।ডাক্তার শুভ্রকে চেকআপ করে বলে শুভ্র এখন ঠিক আছে তবে ওর সঠিক যত্ন আর রেস্টের প্রয়োজন।
মেঘ জিজ্ঞাসা করে,
–আমরা কি উনাকে নিয়ে যেতে পারি?
–হ্যাঁ তবে একজন নার্স লাগবে যে উনার যত্ন নিবে।
–আচ্ছা।
তারপর শুভ্রকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসে।শুভ্রর জন্য একটা নার্সও নিয়ে আসা হয় সাথে করে।মেঘ ইয়ান শুভ্রের কাছে যায়।ইয়ান শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করে,
–শুভ্র কি হয়েছিলো সেখানে?কে তোর এই অবস্থা করলো?
–রাহুল আমাকে সেখানে যেতে বলে।আমি সেখানে গিয়ে দেখি রাহুল নেই।আমি রাহুলকে খুঁজতে থাকি।তখন কেউ পিছন থেকে জোরে আমার মাথায় আঘাত করে।আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি লোকটার মুখে মাস্ক।তাই চেহারা দেখতে পারিনি।তারপর আমার হাতে সে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করে।ছেলেটা রাহুল ছিলো নাকি আমি জানি না।
মেঘ বলে উঠে,
–আপনি তো এসএন সেজে গিয়েছিলেন।যদি রাহুল এই কাজ করে তাহলে সে কেন এরকম করবে?আপনার সাথে কি ওর কোনো শত্রুতা আছে?
চলবে….