#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_২
#অধির_রায়
নির্বণ নিয়তিকে রুমে নিয়ে এসে নিয়তির শাড়ি থেকে পিন খোলতে শুরু করে। নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে সরে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তিকে আরও কাছে টেনে আনে। তাদের মাঝে শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ বয়ে যাচ্ছে। নিয়তির হার্টে রক্তের সঞ্চালন বেড়ে চলছে৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে
— কি করছেন? এভাবে পিন খোলছেন কেন?
— নির্বণ নিয়তির মুখে হাত দিয়ে “সিপ” কোন কথা নয়৷
নিয়তি নির্বণের কথা মেনে নেয়৷ কেননা নিয়তি বুঝে ফেলছে নির্বণের কথা অমান্য করা মানে বিপদ।
নির্বণ নিয়তির শাড়ী খুলে তাতে এন্টিসেপ্টি মলম লাগিয়ে দেয়৷ নিয়তি কিছুটা ভয়ে নির্বণের হাত খামছে দিয়ে ধরে। যার ফলে নিয়তির নক দিয়ে নির্বণের হাতে আঁচ লাগে। তবুও নির্বণ কিছু বলে না৷
— মলম লাগিয়ে দিয়েছি অল্প কিছু সময়ের মাঝেই তোমার ব্যথা কমে যাবে। সাথে এই দাগগুলো বুঝা যাবে না৷
নিয়তি মুখ হাঁ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ যে ছেলে গতকাল রাতে আমাকে এভাবে নির্যাতন করল। সেই এখন মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। এর কত রুপ। সামনে না থাকলে বুঝতে পারতাম না৷
— হাঁ করে না তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দাও।একটু পর বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। আমি চায়না এই ভাবে আদি বুড়ির মতো সেজে সবার সামনে আস। প্রয়োজন পড়লে মেকআপ করে লাল দাগগুলো মুছে ফেলবে। বুঝতে পেরেছ।
— নিয়তি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে দিল।
–
–
–
নিয়তি নিজেই খুব সুন্দর করে সেজেছে।হালকা মেকআপে নিয়তিকে খুব সুন্দর লাগছে। সবাই নিয়তির সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলছে। বাড়ির অনেক ছেলে নিয়তিকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। নির্বণও কম নয়। কালো প্যান্ট,সাদা শার্ট। শার্টের উপর কালো জ্যাকেট। চুলগুলো স্পাইক করা হালকা বাতাসে চুলগুলো বার বার নাক বরাবর ঝুলে পড়ছে৷ চোখে কালো সানগ্লাস। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। সব মেয়েরাই নির্বণের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
— নির্বণ এসব কি পড়েছো? (নির্নণের মা)
— কেন মা? আমি কোন ভুল করিনি?
— আজ বউভাত অনুষ্ঠান।এই অনুষ্ঠানে ধুতি পাঞ্জাবী না পড়ে তুমি শার্ট প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো।(নির্বণের মা)
— আমি ধুতি পড়তে পারি না৷ আমি যেটাতে কমফোর্টেবল সেটাই পড়ব।প্লিজ আমাকে অন্য কিছু পড়তে বাদ্য কর না৷
— বউদি ছেড়ে দাও। নির্বণ যেটা পছন্দ করে সেটাই পড়তে দাও৷ বর্তমান যুগে কেউ ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে না৷ (পিসি মনি)
পিসি মনি নির্বণের হাত ধরে নিয়তির সামনে নিয়ে যায়। নির্বণের হাতে খাবারের প্লেট, শাড়ি, আলতা সিঁদুর দিয়ে পিসি মনি বলে উঠে,,
— আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম।(পিসি মনি)
নির্বণ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে৷ সবাই তার উত্তরের আশা করছে৷ নিয়তি ছলছল নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে।
–
–
–
🍁
ভালোই ভালোই বউভাতের অনুষ্ঠান মিটে যায়। নিয়তি আর নির্বণ একি রুমে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না৷ নিয়তিই বলে উঠে,,
— আপনি ঠিক আছেন তো?
— তোমার সাথে আজ ভালো ব্যবহার করেছি বলে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি এটা ভুলে যাও। আমি তোমাকে কোনদিন স্ত্রী হিসেবে মানতে পারব না৷
— আমি কি এমন ভুল করেছি যার শাস্তি আপনি আমাকে দিচ্ছেন৷ বিয়ের আগেও তো ভালো ছিল আমাদের সম্পর্ক।
— বিয়ের আগে জানতে পারলে তোমার মতো চরিত্র হীনাকে তোমাকে আর বিয়ে করতাম না।
— আপনি কিসের ভিত্তিতে আমাকে দোষারোপ করছেন?
— তাহলে দেখো,,
নির্বণ নিয়তির মুখের সামনে তার অঙ্গ রঙ্গ কিছু বাজে পিক ছুঁড়ে মারে৷
নিয়তি তার বাজে ছবিগুলো দেখে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না৷ সে এমন কোন কাজ করে নি৷ তাহলে এসব বাজে ছবি কে তুলল। কে করেছে এই কাজ৷
— এখনও বলতে চাও তুমি কিছু জানো না৷
নির্বণ রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।নিয়তি ছবিগুলো নিয়ে কাঁদতে শুরু করে।
কে আমার সাথে এমন কাজ করল? কে আমার এত বড় ক্ষতি করল? নিয়তি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে। সারা রাত নির্বণ ঘরে ফিরে নি। বাহিরে ডিস্কোতে বসে সারা বসে ডিংক করে যায়। ডিংক করে সকাল হবার একটু আগে বাড়িতে ফিরে আসে।
ফিরে এসে নিয়তি এই ভাবে ঘুমাতে দেখে নির্বণের আরও রাগ উঠে যায়।নির্বণ নিয়তিকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নিয়তির ঘুম ভাঙায়।
— তোর খুব সাহস ভেড়ে গেছে তুই আমার বিছানায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরিস। রক্ত বর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলে।
— নিয়তি নির্বণের চোখে তাকিয়ে ছোট করে উত্তর দেয় সরি আর কখনও এমন হবে না৷
নির্বণ নিয়তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ নির্বণ বিছানায় শুয়ে কাঁধ হয়ে শুয়ে পড়ে।
নিয়তি দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়৷ তবুও নিজেকে সামলিয়ে নেয়৷ সে জানে তার জন্য নির্বণের এমন অবস্থা। সে জন্য নিয়তি নির্বণের সব অত্যাচার সহ্য করতেছে।
নিয়তি চোখের জল মুছে স্নান করে নিচে যায়। সকলের জন্য খাবার তৈরি করতে। কিন্তু নিয়তি রান্না করতে জানে না৷ সে কোনদিন রান্না করেনি৷ কিভাবে রান্না করতে হয় সেটা নিয়তির জানা নেই? নিয়তি ইউ টিউবে দেখে ডাল রান্না করার চেষ্টা করে।
নিয়তি এক পাতিল জল দেয়৷ তার পর কিছু পরিমাণ ডাউল ছেলে দেয়৷ কিছু পাঁচ ফোড়ন দেয়৷ দু মুঠো লবণ দেয়৷ লবণ দিয়ে নিয়তি খুব খুশি সে রান্না করতে পেরেছে। ( আপনারও ট্রাই করতে পারেন)
নিয়তি ডাউল রান্ন করার পর নিয়তির শ্বাশুড়ি মা রান্না ঘরে আসে৷ এসে দেখে নিয়তি কিছু রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি জানেন না নিয়তি ডাউল রান্না করেছে৷
— নিয়তি তুমি রান্না ঘরে কি করছো?
— আসলে মা আমি রান্না করতে এসেছি৷
— কি তুমি রান্না করবে?
— কেন মা? এটা তো আমারও সংসার। আমি কেন রান্না করতে পারবো না?
–তুমি রান্না করতে জানো?
— আপনি শিখিয়ে দিবেন?
— আমি এখন আছি। এখন তোমাকে রান্না করতে হবে না।
— না মা। আমি থাকতে আপনি কেন রান্না করবে?
— ওঁকে। আমি তোমাকে রান্না করা শিখিয়ে দিচ্ছি৷
🌼
নির্বণের মা আর নিয়তি দুই জন মিলে রান্না শুরু করে দেয়৷ নিয়তি খুব অস্বস্তি বোধ করছে। তবুও নিয়তি খুব খুশি আজ সে নিজের হাতে সবার জন্য রান্না করেছে৷ নিয়তি বলতে পারবে আজ সে নিজে থেকে ডাউল রান্না করেছে৷ কারো সাহায্য নেই নি৷
নিয়তি নিজের হাতে ডাউল রান্না করেছে৷ একটু শ্বাশুড়ির আড়ল হয়ে সোশাল মিডিয়ায় আপডেট করে দেয়৷ আপডেট করে একটা মিষ্টি মুচকি হাসি।যেন সো মহাভারত জয় করে ফেলেছে৷
— নিয়তি
— অপ্রস্তুতভাবে বলে ফেলে তোর মতো বান্ধবী থাকলে শত্রুর অভাব পড়বে না। একটু কমেন্টগুলো দেখতে দে।বলেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বসে৷
— কিছু বললে?
— না মা৷ আসলে আমি ফোনে কথা বলছিলাম। আমার এক বান্ধবীর সাথে৷
— ভালো কথা। এখন এসব খাবার টেবিলে দিয়ে আসো৷ সবাই খাবারের জন্য নিচে নামবে এখন৷
— ওঁকে মা৷
–
–
–
নিয়তি একে একে খাবারের সব রেসিপি টেবিলে সাজিয়ে রাখছে৷ খুব সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছে৷ সাথে তার রান্না করা ডাউলও রেখেছে।
— নিয়তি নির্বণকে ঢেকে দাও?
— ওঁকে মা৷
★
নিয়তি রুমে এসে দেখে নির্বণ গালি গায়ে ওয়াসরোম থেকে বের হয়েছে৷ নির্বণের পরনে শুধু আন্ডারগ্রাউন্ড। নিয়তি নির্বণের এমন অবস্থা দেখে চোখে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে৷
— আমি কিছু দেখি নাই।
নির্বণ চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখে নিয়তি চিৎকার করেছে৷ নির্বণ দৌড় দিয়ে নিয়তির মুখ চেপে ধরে।
— এই মেয়ে রুমে লক করে আসতে হয় জানা নেই তোমায়।
— চোখের ইশারায় মুখের উপর থেকে হাত সরাতে বলছে।
— চিৎকার করবে না।
— উম উম ,
— ও সরি,,,
নির্বণ নিয়তির মুখ ছেড়ে দিয়ে পিছনে দাঁড়ায়৷ যেন নিয়তি আর কিছু দেখতে না পারে। নিয়তি নির্বণের দিকে ঘুরতে নিলেই বির্বণ নিয়তি কাঁধে হাত দিয়ে ঘুরানো থেকে আটকায়৷
— পিছনে ঘুরার চেষ্টাও করবে না৷ আমার রুমে আসার আগে লক করে আসবে৷
— আপনি হাক করে দ্বার খোলে রাখলে আমার কি দোষ? আপনি শুধু আন্ডারগ্রাউন্ড পড়ে বের হবেন তা আমার জানা ছিল না৷
— এখনই রুম থেকে বের হও৷ কিছুটা উঁচু স্বরে বলে।
নিয়তি ভয় পেয়ে কোন প্রতিবাদ না করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।নির্বণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্বার বন্ধ করে পোশাক পড়ে নেয়। দ্বার খোলেই নিয়তিকে দেখতে পায়৷
— এখানে কি চায়? ক্ষেপে বলে
— আপনাকে মা খেতে ডাকছে?
— খেতেই যাচ্ছি। তোমাকে বলতে হবে না৷ আমার সামনে কম আসার চেষ্টা করবে তাতেই তোমার ভালো হবে৷
নির্বণ নিয়তিকে ইগনোর শন শন করে ক্ষেপে চলে যায়। নিয়তিও পিছন পিছন চলছে৷ একি পরিবারের সামনে হুনু বিড়াল সাজল। যেন তিনি পৃথিবীর সব থেকে ভালো ছেলে। তার মতো ছেলে দুনিয়াতে একটাও হয়না৷
— নিয়তি সবাইকে খাবার স্রাব করছে৷ নির্বণের বাবা বলে দিয়েছে তিনি পরে খাবে৷ নিয়তি মনের সুখে নির্বণকে খাবার দিচ্ছি। নির্বণের সাথে খাবার টেবিলে বসেছে পিসি মনি।
নির্বণ প্রথমে মুখে দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে ভেসিনে ফেলে আসে।
— এসব খাবার কে রান্না করেছে?
— আমি এসব খাবার রান্না করেছি৷
— খেয়ে দেখো? এসব খাবারের জন্য উপযুক্ত হয়েছে কি না।
— মা যেভাবে রান্না করতে বলছে আমি ঠিক সেইভাবে রান্না করেছি। নরম স্বরে বলে উঠে।
— খেয়ে দেখে বলছি৷ নাকি খাবারে বিষ মিশিয়ে রেখেছ আমাদেরকে মেরে ফেলার জন্য।খেতে মন চায় না কেন?
— কি হচ্ছে টা কি? (পিসি মনি) তুমি তো এমন ছিলে না নির্বণ।
নির্বণ পিসি মনির কথা না শুনে নিয়তিকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে,,,
চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।