সাত পাকে বাঁধা পর্ব-০৩

0
2511

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

নির্বণ টানতে টানতে নিয়তিকে রুমে নিয়ে আসে৷ তাদের পিছু পিছু পিসি মনিও চলে আসে। নির্বণ কিছু করে ফেলে কি না৷ নির্বণ আড় চোখে তার পিসি মনিকে দেখে ফেলে।পিসি মনি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে যায়।

— প্লিজ,,

নিয়তি কিছু বলার আগেই নির্বণ নিয়তির মুখে আঙ্গুল দিয়ে নিয়তিকে থামিয়ে দেয়।

— তোমাকে রান্না করতে কে বলেছে। বাড়িতে সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে।

— আসলে আমি নিজের ইচ্ছায় রান্না করতে গিয়েছিলাম।এভাবের মতো আমায় ক্ষমা করে দেন।

— আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত।কি জবাব দিতাম পিসি মনিকে। পিসি মনি ভাবত আমার ভাইপু আমার পছন্দ করা মেয়ের সাথে এমন করছে৷ তার মানে আমার পছন্দ ভুল ছিল।

নির্বণ তার পিসিকে শুনানোর জন্য কথাগুলো একটু উঁচু স্বরে বলে। যেন পিসি মনি নির্বণকে কোন ভুল বুঝতে না পারে।

পিসি মনি নির্বণের এমন ভালোবাসার জবাব পেয়ে খুশি মনে পিসি মনে তাদের দ্বার থেকে চলে যায়। নির্বণ গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখে পিসিমনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে চলে যাচ্ছে। [ নির্বণ এতক্ষণ তাট পিসি মনিকে ড্যাসিং টেবিলের গ্লাসে খেয়াল করেছে]

পিসি মনি নিচে চলে যাওয়ার সাথে সাথে নির্বণ দ্বার বন্ধ করে দেয় ভিতর থেকে। দ্বার বন্ধ করেই নিয়তির সামনে এসে নিয়তির গালে জোরে একটা চর বসিয়ে দেয়৷ চর টা সামলে না পেরে বিছানায় পড়ে যায়। নিয়তির ভাগ্য ভালো অন্য কোথায় বারি খায়নি৷ তাহলে বড় কোন সমস্যা হতে পারত।

–নির্বণ নিয়তির মুখ চেপে ধরে রান্না করে সকলের মন জয় করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু আমি তার হতে দিলাম না৷

নিয়তি টপ টপ করে চোখের জল ফেলে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে একটু আগে আমার প্রতি অনেক ভালোবাসা দেখালো৷ এখন কি হলো? কি চায় এই ব্যক্তি?

— তুমি ভাবছো একটু আগে কেন ভালোবাসা দেখালাম? আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। তখন পিসি মনি আমাদের দ্বার বেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তোমার জন্য আমার পরিবারের সামনে নিচু হতে তো পারব না।

— আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?

— অন্য কেউ হলে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিত। কিন্তু আমি কেন দেয়নি জানিস?

— না জানি না৷ পারলে আমাকে এই সমন্ধ থেকে মুক্তি দেন৷

— মুক্তি দিব তার আগে বল প্রবণের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক ছিল?

— বিশ্বাস করেন আমি প্রবণ দা সাথে এমন কিছু করি নি। হ্যাঁ এটা সত্যি কলেজে প্রবণদা আমাকে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু আমি এক্সেপ্ট করিনি।

— তার কোন প্রমাণ তোমার কাছে আছে৷ যদি প্রমাণ করতে পার তাহলে কথা দিচ্ছি আমি এই অপবাদ থেকে তোমাকে মুক্ত করব৷ আর যদি না করতে পার ছয় মাস পর তোমার জায়গা হবে,, শয়তানি একটা হাসি দেয়৷

নিয়তি নির্বণের এই ডেবিল হাসি খুব ভালো করে চিনে ফেলেছে৷ তার মানে নির্বণ তার থেকে খারাপ কিছু করতে পারে৷ নিয়তি কিছু চিন্তা না করেই বলে উঠে..

— ছয় মাস পর কি হবে?

— কি হবে আর? আমাদের ডিভোর্স হবে৷ তার থেকে বড় কথা ডিভোর্সের পর তুমি তোমার নিজের বাড়িতে যেতে পারবে না৷ তোমাকে এমন জায়গায় পাঠাবো যেখান থেকে তুমি চাইলেও ফিরে আসতে পারবে না৷

— প্লিজ কি করবেন আমার সাথে?

— কিছুটা তোমার গালে হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখা যাচ্ছে দুই মিনিটের মাঝে মেকআপ করে দাগ মিশিয়ে ফেলে৷ চোখ পাকিয়ে কথা বলে৷

নিয়তি নির্বণের চোখ পাকানো দেখে যত তারাতাড়ি পারে মেকআপ করছে। ভয়ের কারণে এমন ভাবে মেকআপ করেছে দেখে মনে হচ্ছে মুখে শুধু আটা মেখে রেখেছে। যা দেখে নির্বণ আরও ক্ষেপে যায়।

— মেকআপ করতে বলছি । এমনভাবে মেকআপ মেখেছে দেখে মনে হচ্ছে আমার সামনে ময়দা সুন্দর দাঁড়িয়ে আছে। এখন মুখে জল দিয়ে এসব ময়দা দূর করে ঠিকঠাক মেকআপ কর?

নিয়তি দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায় মুখ থেকে দামি ময়দা তুলছে৷

সালা তুই এটাকে ময়দা বলছিস? তুই জানিস এই ময়দা সেই ময়দা নয়৷ এটা ব্যান্ডের ময়দা। এটা আমাদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তুলে৷ কথা কথায় আঘাত করিস। প্রবণের জন্য এসব কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। প্রবণের কাছে পেলে তার মুখ থেকে বের করিয়েই ছাড়তাম আমি এসব কিছু করি নি৷ মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে যাচ্ছে নিয়তি৷

নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে নির্বণ রুমে নেই৷ কিন্তু বিছানার উপর এন্টিসেপ্টি মলম রেখে গেছে।

সালা মারার সময় মনে থাকে না৷ এখন আসলে এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে। সরি মলম রেখে দিতে। তোর মলম আমি লাগাব না৷ কি করবি তুই? না থাক লাগিয়ে ফেলি। যদি না লাগায় তাহলে আমার ব্যান্ড বাজিয়ে ছাড়বে৷ এমনিতেই হাত পায়ের ব্যথা নিয়ে কিছু করতে পারছি না৷

🍃

— কোথায় যাওয়া হচ্ছে? (নির্বনের মা)

— মা আমি অফিসে যাচ্ছি।

— কি তুমি অফিসে যাচ্ছো মানে কি?

— মানে মা অফিসে কিছু কাজ পড়ে গেছে।

— কাজ টাজ আমি কিছু বুঝি না৷ তুমি অফিসে যাবে না মানে যাবে না৷

— কেন?

— গতকাল নিয়তির মা বাবাকে বলে দিয়েছি তুমি নিয়তিকে নিয়ে আজ তাদের বাড়িতে যাবে।

— আমি পারব না মা।তুমি নিয়তিকে চলে যেত বল?

— চলে যেতে নলব মানে কি?

— মানে তুমি নিয়তিকে একা যেতে বল৷ আমার কাজগুলো খুব ইম্পরট্যান্ট।

— সব কাজ তোমার বাবা সামলে নিবে৷ আমি নিয়তি থেকে আনছি৷

— বউদি আমি ঢেকে আনছি৷ (পিসি মনি)

পিসি মনি সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেই নির্বণ দৌড় দিয়ে পিসি মনির পথ আটকিয়ে ফেলে৷

— পিসি মনি তুমি এখানে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখো। আমি ডেকে আনছি৷ তুমি এত কষ্ট করে উপরে কেন যাবে৷

— আমার কষ্ট তোমার চোখে ধরা পড়ল তাহলে এতদিনে৷ ওঁকে যাও। তবে একটা কথা বলতে হচ্ছে।

— কি কথা পিসি মনি?

— আমি ভাবতে পারিনি তুমি এত বউ পাগল ছেলে হবে৷ খুব ভালোবেসে ফেলেছ নিয়তিকে বুঝি৷

— পিসি তুমি কিছু জানো না৷

নির্বণ আর কিছু না বলে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যায়৷ সে জানে এখানে সে থাকলে তার পিসির হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে৷ যার জন্য নির্বণ প্রস্তত নয়৷

— দেখেছো বউদি তোমার ছেলে নিয়তিকে চোখে হারায়।

— বর্তমান যুগের ছেলে মেয়ে এমনই হয়৷ তারা এখনও কিছু খায়নি৷

— হ্যাঁ। আমি কিন্তু খেয়ে নিয়েছি৷ অরিন সব রান্না করে ফেলেছে (পিসি মনি)

(অরিন হলো কাজের মেয়ে। কিন্তু সবাই অরিনকে খুব ভালোবাসে৷ অরিনও নিজেকে এই পরিবারের একজন মনে করে। সব সময় এই পরিবারের জন্য ভাবে৷)

— ভালো করেছে৷ অরিনকে কিছু বলতে হয়না। সে নিজে থেকে সব করে ফেলে৷ (মা)

–অরিন অরিন 📣

অরিন দৌড়ে এসে,,, কি বলবেন?

— তোমাকে আমি বলেছি দৌড়ে আসতে৷ ধীরে ধীরে আসলে কি হয়৷ পড়ে গিয়ে দাঁত ভাঙতে চাও (মা)

— না পড়ে যাব কেন? আমি তো দৌড়ে চ্যামপিয়ান।

— আসছে কোথাকার চ্যামপিয়ান। এজন্য দৌড় প্রতিযোগিতায় লাস্ট হয়। ( পিসি মনি হেঁসে বলে উঠে)

— অরিন প্যাঁচার মতো মুখ করে পিসি মনি তুমি পঁচা। সব সময় আমার কথার ভুল ধর৷ একটু উৎসাহ দাও। যেন পরবর্তী প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হতে পারি৷ এই জন্য তো হাত পায়ে দৌড়ে কন্ট্রোল করি।

— তোমার কন্ট্রোল করতে হবে না অরিন৷ আমি জানি তুমি এবার মহাভারতে দৌড় প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হবে৷ হেঁসে কথা বলে উঠে নির্বণের মা৷

— আন্টি আপনি খুব ভালো। মহাদেব কে বলে দেন আমি যেন ফাস্ট হতে পারি৷ জানেন ফাস্ট হলে কি হয়?

— ব্রু নাচিতে কি হয় রে অরিন? (পিসি মনি)

— পিসি তুমি দেখি খুব বোকা।ফাস্ট হলে ছেলেরা ক্রাশ খাবে আমার উপর৷

অরিনের কথা শুনে উপস্থিতি সবাই হেঁসে উঠে।

🌼

— ডাফার মেয়ে এখনও তোমার মেকআপ করা শেষ হয়নি৷ কি করতে পারো তুমি? কিছুটা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে।

— এক মিনিট মেকআপ করা শেষ৷ এখন দেখতেছি দাগ বুঝা যায় কি না৷

— এন্টিসেপ্টি মলম লাগিয়েছিলে। লাগাতে সেটাও ভুলে গেছ৷

— মাথা নিচু করে না ভুলি নি৷ সেটা লাগিয়েই মেকআপ করেছি৷

— একটা ভালো কাজ করেছো বহুবছর পর৷ চল আমার সাথে৷

— কোথায়?

— নিচে চল কিছু তো খাওয়া হয়নি। খাবে না কিছু৷

— আসলে আমার ক্ষুধা নেই৷

— “সিপ” ক্ষুধা নেই বললেই হলো,,, আমার সাথে বসে এক টেবিলে খাবে৷

— আপনি খেয়ে নেন৷ আমি পরে মার সাথে খেয়ে নিব৷

— তোমার কথা শুবার আমার কোন ইচ্ছা নেই।

— আমি,,

নিয়তি কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্বণ নিয়তিকে কোলে তুলে নেয়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।

নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়তি নির্বণের মুখে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।নির্বণের বুকে মাথা রেখে মনে হচ্ছে এটা নিয়তির জন্য পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গা।

নিয়তির মনে বয়ে যাচ্ছে

মনে মনে দুজনে😍
হৃদয়ের বাধনে😘
প্রিয়া তুমি আমার🥰
সাত পাকে বাঁধা 💗
সাত পাকে বাঁধা 😻

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই তাদের (পিসি, আর নির্বণের মা, প্যাঁচার মতো মুরগি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিন) হাসি পায় নির্বণ নিয়তি৷ নিয়তি তাদের দেখতে পেয়ে লজ্জায় লাল নীলা হয়ে যায়।

— কি নিয়ে হাসা হচ্ছে তোমাদের? (নির্বণ)

— দাদাবাবু নতুন একটা সিনেমা দেখে হাসি পাচ্ছে৷ আগ বাড়িয়ে কথা বলে যাতে বুঝতে না পারে তার কথা শুনে পিসি মনি আর মা হাঁসছে।

— তোদের বাজে সিরিয়াল দেখ।আর হাসতে থাক।

— আমাদের বাজে সিরিয়াল না তোমাদের দেখে হাসি পাচ্ছে৷ তুমি যেভাবে শারুক খানের মতো বউদিকে কোলে নিয়ে নামতেছ। আহা যদি আমার এমন একটা বর হলো৷ চোখ বন্ধ করে দু হাত দুই দিকে বাড়িয়ে।

— সাট আপ। সব সময় বাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরিস?

অরিন কাউকে ভয় পায় না৷ শুধু নির্বণকে সে জমের মতো ভয় করে৷ তবুও সব সময় নির্বণকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। নির্বণের কথা শুনে অরিন এক পা পিছিয়ে।

— তোমরা খেতে আস? তোমাদের জন্য খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি।

অরিন সেখান থেকে কেটে পড়ে।নির্বণ নিয়তিকে নামিয়ে দেয়।

— আমাদের নিয়তি পা ভাঙলে সমস্যা হবে না৷ তার জন্য আমাদের নির্বণ আছেই। (পিসি মনি)

[ বিঃ দ্রঃ বাড়িতে পিসি মনি থাকলে প্রেম, বিয়ে এসব নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলবেই৷ পিসি মনি দের জন্মগত স্বভাব৷ প্রেম না করলেও বলে কয়টা প্রেম করছিস]

— না নিয়তি বলছিল সে খাবে না বলে জোর করছিল। আর তোমরা জানো কেউ না খেলে আমার খারাপ লাগে। যদি হয় ঘরওয়্যালী তাহলে তো আরও।তাই এমন ভাবে নিয়ে আসলাম।

— নিয়তি ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে জানত না সে খারাপ রান্না করবে৷ তোমার রান্না নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। (নির্বণের মা)

— নিয়তি মাথা নিচু করে আসলে মা আমি কোনদিন রান্না করিনি তাই এমন হয়েছে৷ বিশ্বাস করেন আমি রান্না শিখে নিব৷

— হুম জানি তুমি রান্না শিখে নিবে৷ চল খাবার খাওয়ার পর তোমাকে নিয়ে নির্বণ তোমাদের বাড়িতে যাবে।

নিয়তি নির্বণের দিকে তাকায়ে নির্বণ চোখের ইশারায় হ্যাঁ উত্তর জানায়৷ সে নিয়তিদের বাড়িতে যেতে রাজি।

খাবার শেষ করে নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে নিয়তিদের বাসায় আসে।

নিয়তিদের বাসায় আসে নির্বণ ভয়ে কাবু হয়ে যায়,,

চলবে…