সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-৯+১০

0
350

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(৯)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলো রূপক, মাঝ রাস্তায় বাইক থেমে যায়। রূপকের মনে আছে সে আসার সময় বাইক ফুল করে এনেছে। কি কারণে থেমে গেলো দেখার জন্য রূপক বাইক থেকে নেমে চেক করতে থাকে। চেক করে দেখে তার পেট্রোল শেষ। আশ্চর্য হলো রূপক, এটা কীকরে সম্ভব? ভাবনায় মশগুল থাকা রূপককে আচমকা পেছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরলো, কিছু বুঝে উঠার আগেই ঢলে পড়লো রূপক, সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি রূপককে বাহুতে আগলে নেয়।

নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে সিয়াম, দুজনে মিলে রূপককে গাড়িতে তুলে, নিয়াজ ফোন বের করে পূরবির নাম্বারে ডায়াল করে।

ওপাশ থেকে পূরবি বলে- কাজ হয়েছে?

নিয়াজ বলে- হ্যা ম্যাম, গাড়িতে তুলেছি।

ঠোঁট বাকিয়ে হেসে পূরবি বলে- গোপন আস্তানায় নিয়ে আসো, কুইক।

শিওর ম্যাম, আমি আধাঘন্টার ভিতরে আসছি।

.
চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় পরে আছে রূপক, তার সামনে বসে আছে পূরবিসহ ওর টিমের অফিসার। পূরবি জেসিকে বললো- মুখে পানি ছুড়ে মারো।

জ্বি ম্যাম বলে জেসি পানি ছুড়ে মারে রূপকের মুখে।

পিটপিট করে চোখ খুলে রূপক, শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানি শরীরে লাগায় কাঁপতে শুরু করে। চোখের সামনে পূরবিদের দেখে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রয়। আস্তে আস্তে মনে পড়তেই রূপক বুঝতে পারে ‘ এরাই থাকে কিডন্যাপ করেছে।

ক্রুদে ফেটে পড়ে রূপক বলে- তোমরা আমাকে কিডন্যাপ করেছো কেনো? কি চাই তোমাদের?

সিয়াম বলে- সে তো আপনার কাছে অনেক কিছুই চাই রূপক সাহেব।

ঠোঁট বাকিয়ে হেসে রূপক বলে- জানতাম, তোমরা কিডন্যাপাররা শুধু শুধু সময় নষ্ট করলে, আমাকে কিডন্যাপ না করে বলতে, আমি তোমাদের এমনই টাকা দিয়ে দিতাম। সামান্য টাকার জন্য তোমার আমাকে কিডন্যাপ করলে? রূপক রায়হানকে কিডন্যাপ করলে!

জেসি বলে- শুধুই রূপক রায়হান? আর কিছু নেই?

ভ্রু কুঁচকে রূপক বলে- আছে! রূপক হাওলাদার রায়হান, শর্ট করে রূপক রায়হান!

নিয়াজ বলে- আপনার বাবার নাম কি?

ফুসে উঠে রূপক বলে- কিডন্যাপ করেছো টাকার জন্য, কতো টাকা চাই সেটা বলো। বাবার নাম দিয়ে তোমাদের কাজ নেই। তবে আমি সত্যিই ইমপ্রেস আজকাল সুন্দরী মেয়েরাও কিডন্যাপারদের দলে নাম লিখিয়েছে দেখছি!

তখনই সেখানে আগমন হয় রুশা আহমেদের, রুশা এগিয়ে এসে পূরবিকে একটা ছবি দেয়। যা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে পূরবি রূপকের দিকে তাকায়।

আশ্চর্য হয়ে রূপক বলে- বাহ্, এতো সুন্দরী মেয়েরা, তোমাদের দেখে তো মনে হচ্ছে না দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাহলে তোমরা কিডন্যাপারের কাজ কেনো করছো?

রুশা দুইহাত ভাজ করে বলে- আপনাকে কে বললো আমরা কিডন্যাপার?

রূপক রুশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে- হ*ট!

ভাজ করে রাখা হাত সোজা হয়ে যায় রুশার, বিস্ময় নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রূপকের দিকে। সিয়াম রূপককে মারার জন্য এগিয়ে যেতে নিলেই হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয় পূরবি। থেমে যায় সিয়াম, রুশা কটমট চোখে রূপকের দিকে তাকিয়ে থাকে।

পূরবি নিজের মুখের মাক্স খুলে উঠে দাড়ায়, পূরবিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় রূপক, পূরবি রূপকের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে – মিস্টার রূপক হাওলাদার রায়হান, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো আমরা, তার সঠিক উত্তর দিতে হবে। যদি ভালোয় ভালোয় বলে দেন ভালো, নাহলে আমরা কথা কিভাবে বের করতে হয় তা ভালো করেই জানি।

বিস্ময়ে রূপকের মুখ হা হয়ে যায়, সবাইকে একবার দেখে নিয়ে আবারো পূরবির দিকে তাকায় রূপক, আমতা আমতা করে বলে- তুমি!

সোজা হয়ে দাড়িয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে পূরবি বলে- পূরবি শেখ, গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার!

রুশা এগিয়ে এসে হাত ভাজ করে বলে- রুশা আহমেদ, গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার।

নিয়াজ রূপকের কাঁধের পাশে দাড়িয়ে বলে- নিয়াজ নূর, গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার।

সিয়াম ও জেসি এগিয়ে এসে রূপকের আরেক কাঁধের পাশে দাড়িয়ে বলে- সিয়াম আহমেদ, গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার।

জিনিয়া জেসি, গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার।

একের পর এক বিস্ময় সহ্য হচ্ছে না রূপকের, মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। অনেক কষ্টে উচ্চারণ করে- পা পানি!

জেসি পানির বোতল এগিয়ে দেয় রূপকের দিকে, সিয়াম রূপকের বাঁধন খুলে দেয়, জেসির হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করে রূপক।

কিছুক্ষণ পরে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বসে থাকে রূপক। আবারো সবাই চারিদিকে রাখা চেয়ারে বসে পড়ে।

তো মিস্টার রূপক হাওলাদার রায়হান, কেমন ফিল করছেন এখন? বলে পূরবি।

তুমি যদি গোয়েন্দা ইনভেস্টিগেটর অফিসার হও, তাহলে আমাদের ভার্সিটিতে কি করছিলে? বলে রূপক।

মাথা নিচু করে হেসে পূরবি বলে- সে অনেক কাহিনি, ভাগ্যিস ছাত্র হয়ে আপনাদের ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি, নাহলে তো জানতেই পারতাম না, বাবার টাকার গরম দেখিয়ে আপনিও আপনার বন্ধুরা র্যাগিং করে বেড়ান।
থাক সেসব কথা কাজের কথায় আসি, আপনার বাবার নাম কি?

মাথা নিচু করে রূপক বলে- রাকিব হাওলাদার!

মায়ের নাম?বলে নিয়াজ।

নিয়াজের প্রশ্নে রেগে যায় রূপক, মূহুর্তের মধ্যেই চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে -রাহেলা বেগম হাওলাদার।

আপনার মাকে আপনি কখনো দেখেছেন? বলে রুশা।

চিৎকার করে রূপক বলে- নাহহ, কখনো দেখিনি আর না কখনো দেখতে চাই! ওই সার্থপর মহিলাকে আমি কখনো দেখতে চাইনা। কখনো না।

পূরবি বলে- নিজের মাকে সার্থপর বলছেন কেনো?

মা! ঠিকই তো মা। কিন্তু আমি ওই মহিলাকে নিজের মা হিসেবে মানি না। কোনো সার্থপর মহিলা আমার মা হতে পারে না। ওই মহিলার জন্য আমার পাপা কষ্ট পেয়েছে, এখনো কষ্ট পায়। আমি দেখি তো রাতের আঁধারে লুকিয়ে ওই মহিলার ছবি দেখে পাপা কাঁদে। সার্থপর মহিলা,

আপনি বার বার নিজের মাকে সার্থপর মহিলা কেনো বলছেন মিস্টার রূপক? বলে রুশা।

সেটা আমি আপনাদের বলতে বাধ্য নই, আপনারা যা জানার জন্য আমাকে তুলে এনেছেন, তা জিজ্ঞেস করুন।

আমরা আপনাকে যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন, আমরা আপনার মায়ের বিষয়ে জানতে চাই। বলে সিয়াম।

উত্তেজিত হয়ে রূপক বলে- ওই মহিলা কখনো আমার মা হতে পারে না, জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। মা হতে যোগ্যতা লাগে যা ওই মহিলার নেই। ওই মহিলা আমার পাপাকে কষ্ট দিয়ে পাপার অবর্তমানে অন্য লোকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো, তখন আমি মাত্র কয়েকদিনের শিশু ছিলাম, দুধের শিশু! বুজতে পেরেছেন আপনারা, যে মহিলা তার দুধের শিশুকে রেখে অন্য পুরুষের সাথে স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে যায় সে আর যাই হোক কখনো আমার মা হতে পারে না।

কে বলেছে আপনার মা পালিয়ে গেছিলেন? বলে রুশা।

আমার দাদুভাই বলেছেন, কারণ তখন বাবা দেশের বাহিরে ছিলেন, দাদু়ভাই বাড়িতে ছিলেন।

আপনি আপনার দাদুভাইয়ের কথা বিশ্বাস করেন? বলে রুশা।

হ্যা করবো না কেনো? বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি এটাই জানি। বলে রূপক।

টেবিলে থাবা মারে পূরবি, মৃদুস্বরে চিৎকার করে বলে- ভুল জানেন আপনি মিস্টার রূপক হাওলাদার রায়হান, ভুল জানেন আপনি। আপনার মা পালিয়ে যান নি, আপনার দাদুভাই তাকে বের করে দিয়েছিলেন। রাতের আঁধারে দূর্বল রাহেলাকে আপনার দাদু বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন, অল্প বয়সী হলেও মা তো, পারেন নি নিজের সন্তানকে ছেড়ে আসতে। তাই লুকিয়ে নিজের এক সন্তানকে রেখে আরেক সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান।

কাঁপা কাঁপা গলায় রূপক বলে- আরেক সন্তান!

হ্যা মিস্টার রূপক হাওলাদার রায়হান, আপনার জমজ ভাই আছে। রাহেলা বেগম জমজ সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন।

চলবে, ইনশাআল্লাহ

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১০)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

রুশা ছবি গুলো দেখাও,

পূরবির কথায় রুশা একটি ছোট ফটোফ্রেম রূপকের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রূপক পূরবির দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকায়, পূরবি চোখ দিয়ে ইশারা করে ছবিটি দেখতে। রূপক হাতে নিয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছবিটিতে তার মা ও তারমতো দেখতে একটি ছেলে, নিশ্চয় তার জমজ ভাই হবে। শিওর হওয়ার জন্য পূরবির দিকে তাকায়, পূরবি সম্মতি দিয়ে বলে- ইয়েস, ইনিই আপনার মা রূপক, সাথের ছেলেটা আপনার থেকে পাঁচ সেকেন্ডের বড়ো জমজ ভাই। রাইসুর! যে বর্তমানে মাদকাসক্তির দায়ে জেলে আছে।

অবাক হয়ে রূপক বলে- কিহ্!

শ্বাস ছেড়ে পূরবি বলে- জ্বি, রাইসুর মাদকাসক্ত। তবে ও আগে এমন ছিলো না। আগে ওরা যেখানে থাকতো সেখানের সবাই রাইসুরকে মাথায় তুলে নাচতো। ওর ব্যবহারে কতোশত রমণী প্রেমে পড়তো। বৃদ্ধা থেকে শুরু করে এলাকার আধবয়সী নারীরাও রাইসুরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো। যে রাইসুর নিজের না থাকলেও যথাসম্ভব চেষ্টা করতো সবাইকে সহোযোগিতা করার, যে রাইসুর তার মা রাহেলা বেগমের গর্ব ছিলো, সেই রাইসুর আজ মাদকাসক্ত! কেনো? খারাপ বন্ধুবান্ধব রাইসুরকে নষ্ট করে দিলো, মায়ের কোলে ঘুমানো রাইসুর টাকার জন্য মায়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতে বাঁধ রাখেনি। এর জন্য কে দায়ি? বন্ধুবান্ধব। তবে শুধু খারাপ বন্ধুদেরই দোষ নেই, সাথে রাইসুরের ও আছে৷ কথায় বলে না, নিজে ঠিক থাকলে জগৎ ঠিক! যারা যুবসমাজকে ধ্বংস করার পথে নেমেছে তাদের আমরা ছাড়বো না, যারা স্কুল কলেজ ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের ড্রাগস সেবন করাচ্ছে, এবং বিক্রি করছে ওদের কখনো ক্ষমা করা হবেনা। ওদের শাস্তি পেতে হবে, ভয়াবহ পরিণাম ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ রেহাই পাবেনা, কেউ না!

চোখ ছলছল করছে রূপকের, মা ভাইয়ের অবস্থার কথা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রূপক বলে- আমি কি আমার মাও ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারবো পূরবি?

ইয়াহ, কেনো নয়। তবে আমাদের আপনার সাহায্য করতে হবে। এ-ই মূহুর্তে আপনিই আমাদের সাহায্য করতে পারেন।

কি সাহায্য বলুন, আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।

আপনাকে ভার্সিটির আশেপাশে, রাস্তা ঘাটে খেয়াল রাখতে হবে, কে বা কারা এসব সেবন করছে। আপনাকেও তাদের একজন হতে হবে। এককথায় আপনাকেও ওদের মতো মাদকাসক্ত হতে হবে। আপনি কৌশলে সেগুলো ফেলে দিবেন, ওরা যেনো এটা জানে আপনিও তাদের মতো ড্রাগস সেবন করছেন। আপনার সাথে আমাদের টিমের অফিসারদের থেকে একজন থাকবে। সেও আপনার মতোই অভিনয় করে যাবে। তো বলুন মিস্টার রূপক হাওলাদার রায়হান আপনি কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

মাথা নিচু করে রূপক ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে- আপনি বললে তো জানও হাজির ম্যাম।

বিস্ময়ে সবার মুখ হা হয়ে যায়, সবার মুখের রিয়েকশন দেখে রাগ বেড়ে যায় পূরবির, কটমট চোখে রূপকের দিকে তাকিয়ে থাকে। রূপক পূরবির চাহুনি দেখে চোখ মাড়ে। তা কারোরিই দৃষ্টি গোছর হয়নি, ঠোঁট চেপে সবাই মিটমিট করে হাসছে, তা দেখে পূরবির রাগ যেনো আকাশ ছুলো। ধমকে উঠে ডাকে- রুশাহহহহ!

কেঁপে উঠে রুশা বলে- জ্বি জ্বি ম্যাম?

পূরবি রুশাকে কিছু বলবে তার আগেই রূপক রুশার দিকে তাকিয়ে বলে- হ্যায় হ*ট লেডি অফিসার!

রূশা কটমট করে তাকায়, তা দেখে শব্দ করে হেসে রুশাকে চোখ মাড়ে রূপক। সবার বুঝতে বাকি থাকেনা রূপক ফ্লার্ট করছে। আইনের অফিসারদের সাথে ফ্লার্ট করছে, এই ছেলের সাহস আছে বলতে হবে।

মিস্টার রূপক আপনি কি কাজ করতে রাজি? বলে পূরবি।

আমি রাজি, এখন প্লিজ আমাকে আমার মা ও ভাইয়ের সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা করুন।

পূরবি মাক্স পড়ে নেয়, রূপককে নিয়ে সবাই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রাহেলা বেগমের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আধাঘন্টার ভিতরে পৌছে যায় তারা। টিনও ইটের তৈরি সাধারণ একটি বাড়িতে রাহেলাও রাইসুর থাকতেন। দরজার সামনে সবাই গিয়ে দাড়ায়, আশে পাশের অনেকেই উচ্ছাস নিয়ে তাকিয়ে আছে, রূপকের মুখে মাক্স থাকায় কেউ দেখতে পারছে না, নাহলে সবাই রূপককে রাইসুর ভেবে ভুল করতো। রাহেলা বেগমের দিন জায়নামাজে বসেই কাটে, ইচ্ছে হলে খান, নাহলে খান না। দরজায় টুকা দেওয়ার শব্দে উঠে দাড়ান, চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দেন। সবাই ভিতরে ডুকে, রাহেলা বেগম প্লাস্টিকের চেয়ার এগিয়ে দেন বসার জন্য। কিন্তু কেউ বসেনি, সবাই এককোনায় দাড়িয়ে থাকে। পূরবি রূপকে ইশারা করে, রূপক আস্তে আস্তে রাহেলা বেগমের দিকে এগিয়ে আসে, দুইহাত দিয়ে রাহেলার বেগমের মুখ ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, রাহেলা বেগম কিছুই বুঝতে পারছেন না, তবে উনি ভিতর থেকে কেমন একটা টান অনুভব করছেন, এটা কিসের টান? মাতৃত্বের টান, যা না চাইতেও হচ্ছে, কিন্তু রাহেলা বেগম বুঝতে পারছেন না।

কন্ঠরোধ হয়ে আসছে রূপকের, অনেক কষ্টে উচ্চারণ করে- মা!

গলারস্বর শুনে রাহেলা বেগম ভাবেন, এটা বুঝি তার রাইসুর। রূপক মুখের মাক্স খুলার পরে আরো নিশ্চিত হোন। রূপকের মুখে হাতে ভুলিয়ে বলেন- আমার রাইসুর!

ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে রূপক বলে- আমি রাইসুর না মা, আমি রূপক! তোমার আরেকটা ছেলে, রাইসুর ভাইয়ার জমজ ভাই।

থমকে যান রাহেলা বেগম, তার কন্ঠনালি কাপছে, সাথে সমস্ত শরীর অবস হয়ে আসছে। আবারো কাপা কাপা হাতে রূপকের গালে হাত রাখেন, সারা মুখে হাত ভুলিয়ে আচমকা চুমু দিতে শুরু করেন, সাথে অবিরামভাবে চোখের পানি ঝড়ছে যা রূপকের সারামুখে ভেসে যাচ্ছে। এরই নাম বুঝি মা, এতো বছর পরে নিজের সন্তানকে দেখতে পাবেন, বিশ্বাস করতে পারেন নি রাহেলা বেগম৷ তিনি তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, ভাগ্য তার আরেক ছেলেকে তার কাছে নিয়ে এলো। রূপকের মুখে চুমু দিতে দিতেই জ্ঞান হারান রাহেলা বেগম, ঢলে পড়েন রূপকের বুকে। রূপক দু’হাতে মাকে আগলে নেয়, কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রুশা পানি ছিটিয়ে দেয় মুখে, সিয়াম ডাক্তারকে ফোন করে।

রূপক মায়ের হাত ধরে হাউমাউ করে কান্না করছে, নিয়াজ রূপকের কাঁধে হাত রেখে কাঁদতে মানা করে, রূপকের কান্না থামেনা, সে কেঁদেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার চলে আসেন, কিন্তু রূপক তার মাকে ছাড়ছেই না, না ছাড়লে ডাক্তার দেখবে কি করে? বাধ্য হয়ে পূরবি দেয় এক ধমক, সবাই কেঁপে উঠে সেই ধমকে। রূপক মায়ের হাত ছেড়ে নিয়াজের পাশে এসে দাড়ায়, নিয়াজ দুহাতে রূপকের কাঁধ ধরে রেখে শান্তনা দিচ্ছে।

রাহেলা বেগমের প্রেশার চেক করেন ডাক্তার, তারপর বলেন- উনি নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করছেন না, ঘুমও নিয়মিত হচ্ছে না। এরকম হলে তো মারা যাবেন উনি। এমন করলে তো শুকিয়ে যাবেন। আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি, আর একটা সেলাইন লিখে দিচ্ছি ওগুলো নিয়ে আসুন। উনার শরীর দূর্বল সেলাইন না দিলে সুস্থ হবেন না।

সিয়াম প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ছুটে যায় আশে পাশের ফার্মেসী থেকে সব নিয়ে আসে। ডাক্তার সেলাইন লাগিয়ে দিয়ে যান, সেই সাথে কোন ঔষধ কিভাবে খেতে হবে সেটাও বলে যান। সবকিছু শেষে সিয়াম ডাক্তারকে নিয়ে বেরিয়ে যায়, পারিশ্রমিক দিয়ে আবারো পূরবির সামনে এসে দাড়ায়। পূরবি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে- কি?

সিয়াম পূরবির ফোন এগিয়ে দেয়, পূরবি স্কিনের দিকে তাকায় ‘জুনিয়র রাজকুমার’ নামটা ভেসে আছে স্কিনে সাথে কল্পের হাস্যোজ্জ্বল ডেশিং এক ছবি। সবার দৃষ্টি পূরবির ফোনের দিকে নিবদ্ধ, রূপকও ভ্রু কুচকে কল্পের ছবি দেখে পূরবির দিকে তাকিয়ে তাকে।

অস্বস্তি নিয়ে পূরবি বলে- আমার ফোন আপনার কাছে কেনো?

মাথা চুলকে সিয়াম বলে- ম্যাম আপনার ফোন গাড়িতে ফেলে এসেছিলেন।

হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নেয় পূরবি, সবার দৃষ্টি এখনো তার দিকেই নিবদ্ধ, ফোন কেটে অফ করে পকেটে রেখে দেয় পূরবি। তা দেখে আড়ালে সবাই ঠোঁট কামড়ে হাসে, যা চোখ এড়াতে পারেনি পূরবির, মনে মনে কল্পের উপর রাগ হয় তার। ফোন দেওয়ার আর সময় পায়নি। বিরবির করে আচ্ছামতো কল্পকে গালি দেয়, যা পাশে দাড়ানো রূপকের কানে যায়, রূপক মাথা নিচু করে হাসে।

চলবে,ইনশাআল্লাহ,,