অচেনা শহর পর্ব-০৫

0
427

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৫ (বিবাহ স্পেশাল)

“বিয়ে” একটা পবিত্র বন্ধন যেখানে শুধু দুটি মানুষের না দুটি পরিবারও এক হয়ে থাকে এই সম্পর্কের মাধ্যমে। আজ হেমন্তি আর ইলহামের জীবনেরও একটি বিশেষ দিন সবাই ব্যস্ত বিয়ের আয়োজনে উভয় বাড়িতে একই কান্ডকারখানা চলছে।হেমন্তি সকালে ঘুম থেকে উঠে শুধু হৈ চৈ শুনতে পারলো সে মুচকি হেসে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসতেই দেখলো পারভীন বেগম হাতে নাস্তা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।হেমন্তি বললো,
~মা,তুমি কেন রুমে আসতে গেলে নাস্তা নিয়ে আমি আসতাম বাহিরে।
পারভীন বেগম হেমন্তিকে বসিয়ে দিয়ে ওর মুখে খাবার দিয়ে বললেন,
~আজকে আমি তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো তাই নিয়ে এসেছি।
হেমন্তি খাবার শেষ করে বললো,
~কেয়া আর অনু কোথায়?
পারভীন বেগম বললেন,
~কাজে ব্যস্ত আছে।
হেমন্তি পানি খেয়ে বললো,
~আমি ওদের সাথে দেখা করে আসছি।
পারভীন বেগম বললেন,
~ওরা ছাদে আছে আর শোন সাবধানে থাকিস অনেক জিনিসপত্র আছে সেখানে।
হেমন্তি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো অনু আর কেয়াকে দেখতে।
ইলহাম নাস্তা সেরে বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে আর ধোঁয়া ছাড়ছে।তখনই ফারুক এসে ইলহামের পাশে দাড়ালো ইলহাম ফারুককে দেখে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো ফারুক বললো,
~খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি ভাই।
ইলহাম বললো,
~আমার বোনের জন্য।
ফারুক হেসে বললো,
~হ্যাঁ ওর এসবের গন্ধ সহ্য হয় না আর শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ইলহাম বললো,
~আমারও কী ছাড়তে হবে নাকি কে জানে?
ফারুক বললো,
~আমি তো নিজ ইচ্ছায় ছেড়েছি হিয়ার জন্য।
ইলহাম বললো,
~ভালোবাসা আছে বলে এমনটা করতে পেরেছেন।
ফারুক বললো,
~সময়ের সাথে সাথে সব বদলে যাবে ইলহাম অপেক্ষা করো।
ইলহাম বললো,
~সেই সঠিক সময়েট অপেক্ষা যে আমিও করছি।
ফারুক বললো,
~ইলহাম একটা মেয়ে নিজের সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসছে তাকে কখনো অবজ্ঞা করো না তাকে কষ্ট দিয়ো না।ভালোবাসাটা ধীরে ধীরে হবে তা আমি জানি কিন্তু সম্মানটা সবসময় রেখো হেমন্তির মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে তোমাকে যতোটা স্বাধীন ভাবে সে বাবার কাছে সব আবদার করতো ততটা স্বাধীন ভাবে যাতে তোমার কাছেও আবদার করতে পারে।
ফারুকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে ইলহাম বললো,
~আমি সব দিক দিয়ে হেমন্তির খেয়াল রাখবো।
ফারুক ইলহামের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~তোমার উপর আমার ভরসা আছে।

___________________♥_____________________

হেমন্তি ছাদে উঠে দেখলো অনু আর কেয়া ফুল লাগাচ্ছে স্টেজে ফ্লোরে অনেক বাঁশ রাখা আছে।তা না দেখেই হেমন্তি আগে বাড়তে নিবে তখনই হেমন্তি বাঁশের সাথে পা আটকে নিচে পরে গেলো পায়ে অনেক জোরে ব্যাথা পাওয়ায় সে চিৎকার করে উঠলো।হেমন্তির চিৎকার শুনে অনু আর কেয়া সেখানে তাকালো হেমন্তিকে দেখে তারা দৌড়ে সেখানে চলে গেলো।হেমন্তি উঠতেই পারছেনা পায়ের ব্যাথায় তার চোখ দিয়ে পানি পরছে কেয়া আর অনু তাকে উঠিয়ে নিলো তারপর অনু বললো,
~কেয়া আমরা ওকে নিচে নিয়ে যাই ওর হাতও কেটে গেছে।
কেয়া মাথা দুলালো তারা দুজন হেমন্তিকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো পারভীন বেগম হেমন্তির এ অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তির বাবাকে ফোন করলো।হেমন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিলো তারা হেমন্তির পায়ে অনেক ব্যাথা করছে তাই সে পায়ের দিকে ইশারা করে বললো,
~আমার পা মনে হয় মচকে গেছে মা।
পারভীন বেগম বললেন,
~তোর বাবা ডাক্তার নিয়ে আসছেন।
কেয়া অনু বাকি মেহমান সব হেমন্তির রুমে ডুকে আছেন কিছুক্ষণ পর হেমন্তির বাবা ডাক্তার নিয়ে আসলেন ডাক্তার হেমন্তির হাতে ব্যান্ডেজ আর পা চেক করে বললেন,
~পা মচকে গেছে ২/৩দিনে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আজকে রেস্ট করাটা জরুরি।আর এই মেডিসিন গুলো নিয়ে আসুন ঠিক হয়ে যাবে।
হেমন্তির বাবা মেডিসিন আনতে চলে গেলেন পারভীন বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
~এখন কী হবে? আজ বিয়ে সাজতে হবে ওকে ছাদে নিয়ে যেতে হবে।
কেয়া বললো,
~মা আপুকে রুমে রেখেই সব করতে হবে।
অনু বললো,
~কেয়া ঠিক বলেছে আন্টি।
পারভীন বেগম বললেন,
~এতো করে বলেছিলাম সাবধানে থাকতে এখন দেখেছিস কী হয়েছে?
হেমন্তি কিছুই বললো না চুপ করে রইলো কেয়া বললো,
~এখন এসব বাদ দাও এতো বড় কিছুও হয়নি এটার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাও।
পারভীন বেগম রুমের বাহিরে চলে গেলেন পানি গরম করতে অনু আর কেয়া হেমন্তির পাশে বসে পরলো হেমন্তির এখন অনেক চিন্তা হচ্ছে এই অবস্থায় তার বিয়ে হবে আবার অন্য জায়গায়ও যেতে হবে।আর তারা যে কী ভাববে তাও সে বুঝতে পারছেনা নতুন বউয়ের পা ভাঙ্গা শুনতেও তো ভালো লাগে না।
হিয়া সব গুছিয়ে নিয়ে রুমে আসতেই দেখতে পেলো ফারুক বিছানায় শুয়ে আছে হিয়া ফারুকের পাশে বসে বললো,
~চলেন খেয়ে নেই ৫টা বাজে।
ফারুক উঠে বসে বললো,
~দুপুরের খাবার বিকেলে খাবো।
হিয়া বললো,
~বিয়ে বাড়িতে তো এমনই হয়।
ফারুক বললো,
~আমাদের সব জরুরি কাগজপত্র জমা দেওয়া শেষ।
হিয়া বললো,
~তাহলে এখন শুধু যাওয়ার তারিখ আসলেই আমরা সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবো।
ফারুক হিয়াকে নিজ বাহুডরে রেখে বললো,
~তুমি কোনো চিন্তা করো না কাজ শেষ করেই আমরা চলে আসবো।
হিয়া ফারুককে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আপনি সাথে থাকলে সব ঠিক করে নিতে পারবো।

____________________♥_______________________

ইলহামদের দেওয়া লাল বেনারসি পরে হেমন্তি তৈরি হয়েছে শাড়িটা একটু ভারি হেমন্তির কষ্ট হচ্ছে তবুও সে এই শাড়িটায় পড়বে।পারভীন বেগম অনেক বার বলেছিলেন অন্য একটা শাড়ি পরতে কিন্তু হেমন্তির জেদের কারণে সে আর কিছুই বলেনি।হেমন্তি বিছানায় বসে আছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ৯টা বাজে বরযাত্রা আসার সময় হয়ে গেছে।হেমন্তির বুকটা ডিপডিপ করছে একটু পর তার বিয়ে নতুন জীবনের শুরু হবে তার।
সংসার জীবনটা যাতে সুন্দর এটাই আশা করছে সে শ্বশুর বাড়ির সবাইকে যাতে সুখে রাখতে পারে সে সবাইকে সাথে নিয়ে যাতে চলতে পারে।হেমন্তির ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলো কেয়া আর বললো,
~আপু বরযাত্রা এসে পরেছে।
হেমন্তি মলিন হেসে বললো,
~তাদের বলা হয়েছে যে আমি স্টেজে আসতে পারবোনা?
কেয়া বললো,
~বাবা কথা বলছে তাদের সাথে।
হেমন্তির বাবা আজাদ সাহেবকে সব কিছু বলে দিলো সব শুনে আজাদ সাহেব চিন্তিত হয়ে বললেন,
~আপনারা আমাদের বলেননি কেন?হেমন্তি এখন কেমন আছে?
হেমন্তির বাবা বললেন,
~এখন ঠিক আছে কিন্তু সে স্টেজে আসতে পারবেনা।
আজাদ সাহেব বললেন,
~না না তার আসার দরকার নেই সে নিচে রুমে থাকুক আমি হিয়ার সাথে কথা বলে আসছি।
বলেই আজাদ সাহেব হিয়ার কাছে চলে গেলেন হিয়া ইলহামের সাথেই বসে আছে।আজাদ সাহেব এসে বললেন,
~হিয়া,একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
হিয়া বললো,
~কী হয়েছে বাবা?
আজাদ সাহেব বললেন,
~হেমন্তির পা মচকে গেছে হাতও কেটে গেছে।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে ইলহামের বুকটা ধ্বক করে উঠলো সে উঠে দাড়িয়ে বললো,
~এসব কীভাবে হলো?
আজাদ সাহেব ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আজ সকালে হয়েছে।
ইলহাম রেগে গিয়ে বললো,
~আজ সকালে হয়েছে আর এখন বলছে তারা।
হিয়া বললো,
~চুপ কর তুই। ঠিক আছে বাবা আমি সবটা দেখে নিবো তার আগে হেমন্তিকে দেখে আসি।
বলেই সে নিচে চলে গেলো ইলহাম আবার গিয়ে নিজ জায়গায় বসে পরলো তারও একবার হেমন্তিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

______________________♥______________________

হেমন্তিকে আর ইলহামের কাছে নেওয়া হলো না তার রুমে বসেই কবুল পড়ানো হলো এরপর ইলহামের কবুল পড়ানো হলো।দেখতে দেখতে শুভ কাজটা হয়ে গেলো সবাই খুশি হয়ে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো।ইলহাম বিয়ে শেষে হিয়াকে বললো,
~আমি হেমন্তির সাথে দেখা করতে চাই।
হিয়া বললো,
~এখন না একটু পর বিদায় হবে তখন দেখা করিস।
খেতে বস আমি হেমন্তিকে খাইয়ে আসছি বুঝতে পেরেছিস।
ইলহাম আর কিছু না বলে ফারুকের পাশে বসে পরলো রেহেনা বেগম, ফারহান,আজাদ সাহেবও খেতে বসে পরলেন একসাথে।হিয়া হেমন্তিকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
~তোমার ব্যাথাটা কী বেশি করছে?
হেমন্তি বললো,
~একটু করছে আপু।
হিয়া বললো,
~মন খারাপ করো না এটা তোমার ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে রেস্ট নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
হেমন্তি বললো,
~আপু আমার অবস্থাটা বোঝার জন্য ধন্যবাদ।
হিয়া বললো,
~এখন তুমি আমার পরিবারের সদস্য আমি যদি তোমাকে না বুঝি তাহলে সে বুঝবে।
দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় চলে আসলে হেমন্তি বাবা-মাকে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো কেয়া তো হেমন্তিকে ছাড়তে চাচ্ছিলো না। অনেক বুঝিয়ে তাকে ছাড়ানো হলো অনুও হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোর জীবন সুখের হোক।
বিপত্তি ঘটলো সিড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় হেমন্তি পা অনেক ব্যাথা করছিল সে পায়ের উপর ভর দিতে পারছিল না তখনই পাশে দাড়িয়ে থাকা ইলহাম এমন একটা কাজ করলো যার কারণে সবাই অবাক হয়ে রইলো কেয়া,অনু,হিয়া আর ফারুক হা করল রইলো কারণ ইলহাম হেমন্তিকে

চলবে