অচেনা শহর পর্ব-০৪

0
450

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৪

পারভীন বেগম হন্তদন্ত করে হেমন্তির রুমে ডুকে বললেন,
~আজকে তারা বর সহ আসবেন ইলহামের বাবা বলেছেন বর কনে একসাথে গায়ে হলুদ দিবে।
মায়ের কথা শুনে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো হেমন্তি তার পাশে বসে থাকা কেয়া আর অনু মুখ টিপে হাসছে। পারভীন বেগমের কথা শুনে হেমন্তির দাদি বললেন,
~এটা আবার কেমন কথা বর সহ আসবেন তাও গায়ে হলুদ তোমাদের আজ কালকার নিয়ম কিছু বুঝিনা বাপু।
পারভীন বেগম বললেন,
~ছেলের বাবার ইচ্ছে মা এতে আমরা কী করতে পারি?
হেমন্তির দাদি বললেন,
~হ্যাঁ তাও ঠিক যাক বর যেহেতু আসবে আয়োজন আরো ভালো মতো করতে হবে।
পারভীন বেগম বললেন,
~সেই দেখছে আপনার ছেলে।
হেমন্তি চুপ করে বসে রইলো সে মনে মনে ভাবছে,
~আবারো তার সামনাসামনি হতে হবে আবার লজ্জায় পরতে হবে গায়ে হলুদ একসাথে করার কী প্রয়োজন আছে?
হেমন্তির ভাবান্তর মুখ দেখে অনু তার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
~কী গো কনে কী ভাবছো?তোমার বরের যে তর সইছেনা তাই তো উড়াল দিয়ে চলে আসছে বিয়ের আগের দিনই।
হেমন্তি চোখ বড় করে অনুর দিকে তাকাতেই অনু বললো,
~সত্য কথা বলছি তো তাই গায়ে লাগছে।
হেমন্তি কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো হাতের মেহেদী ফেলার বাহানায়।অনু কেয়াকে বললো,
~দুলাভাই আসছে যে তোরজোর শুরু করতে হবে।
কেয়া ভাব নিয়ে বললো,
~সে আবার বলতে দুলাভাই আজকে বউ দেখার আগেই শালীদের দেখে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
বলেই দুজনই হাসতে লাগলো আর হেমন্তি ওয়াশরুমে বসে ভাবছে কীভাবে কী করবে?দুজনকেই একই স্টেজে বসে হলুদ ছোয়াবে সবাই ইশশ কেয়া আর অনু তো মজা নিতেই থাকবে।হেমন্তি বেসিনের সামনে গিয়ে হাত ধুতে লাগলো আয়নায় নিজের চেহারা দেখে ভাবলো লজ্জায় কেন বার বার লাল হয়ে যায় এই গাল দুটো এখন পর্যন্ত আসেনি তাই এ অবস্থা যখন আসবে তখন কী হবে?
ইলহাম রুমে বসে কাজ করছে অফিসের কাজ বাসায়ই করছে সে তখনই দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করলো ফারুল।চোখ তুলে ফারুককে দেখে বললো,
~ভাইয়া যে তা সব কাজ শেষ নাকি বাকি আছে কিছু।
ফারুক বললো,
~সব শেষের পর্যায়ে এসে পরেছে আচ্ছা শোনো হলুদের জন্য পাঞ্জাবি নিয়ে আসছে ফারহান ঠিক সময়ে রেডি হয়ে থেকো।
ইলহাম বললো,
~একসাথে হলুদ দেওয়ার প্ল্যান টা কার ভাইয়া?
ফারুক বললো,
~Guess করো কার হতে পারে?
ইলহাম হেসে বললো,
~অবশ্যই আপনার বউয়ের।
ফারুক শরীর দুলিয়ে হেসে বললো,
~আমার বউ কিন্তু তোমার জন্যই এতো সব করছে।
ইলহাম ফারুকের কথায় তার দিকে তাকালো ফারুক ইলহামের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~হেমন্তি খুবই ভালো মেয়ে তুমি অনেক সুখী থাকবে বর্তমান নিয়ে ভাবো ইলহাম।ভবিষ্যৎ দেখবে এভাবেই অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।
বলেই সে রুম ছেড়ে চলে গেলো ইলহাম বসা থেকে উঠে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো চোখ বন্ধ করে হেমন্তির ব্যাপারে ভাবতে লাগলো।

_____________________♥______________________

হেমন্তিকে রেডি করতে পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে হেমন্তি আয়নার সামনে চুপ করে বসে আছে পার্লারের মেয়ে গুলো তাকে সাজাতে ব্যস্ত।কেয়া অনু আর বাকি মেয়েরা সাজছে হেমন্তি একটু বিরক্ত বোধ করছে কারণ সে এতো ভারি সাজ কখনোই পছন্দ করে না।
অনু সেটা বুঝতে পেরে মেয়ে গুলোকে বললো হালকা ভাবে সাজাতে মেয়েরা তাই করলো।হলুদ রঙ্গের শাড়ি,হাত ভর্তি চুড়ি,চুলগুলো খোঁপা করা তাতে বেলিফুলের মালা গাথা,হালকা মেকআপ সাথে লাল লিপস্টিক হেমন্তিকে দেখতে একদম হলুদ পরী লাগছে।
অনু আর কেয়া তাকে দেখে হা হয়ে গেলো অনু বললো,
~আজ দুলাভাই মরে যাবে দোস্ত।
হেমন্তি বললো,
~কীসব আজেবাজে বকছিস?
কেয়া বললো,
~আপু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসছি
বলেই সে রুমের বাহিরে চলে গেলো অনু হেমন্তিকে বসিয়ে দিয়ে বললো,
~তোকে খুব সুন্দর লাগছে কয়েকটা ছবি তুলে নেই।
নিজ মোবাইলটা নিয়ে ফটাফট ছবি তুলে নিলো হেমন্তি বললো,
~আর তুলতে হবে না ভালো লাগছেনা।
তখনই পারভীন বেগম রুমে প্রবেশ করলেন হেমন্তিকে দেখেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো মেয়ে যে এতো বড় হয়ে গেছে তা সে আজ উপলব্ধি করতে পারলো।
হেমন্তির কাছে গিয়ে তার কপালে চুমো দিয়ে বললেন,
~মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।
হেমন্তি মুচকি হাসলো পারভীন বেগম একটা নেকলেস আর হাতের বালা হেমন্তিকে পরিয়ে দিয়ে বললেন,
~তোর বাবা তোকে দেখলে আজ অনেক খুশী হবে।
ইলহামের ঘরে ফারহান পাঞ্জাবি নিয়ে দাড়িয়ে আছে ইলহাম ফারহানকে বললো,
~ফারহান,পাঞ্জাবি বিছানায় রেখে দেও।
ফারহান বললো,
~ভাইয়া তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও সবাই অপেক্ষা করছে।
ইলহাম বললো,
~তোমার ভাবির হয়েছে তারই তো সারাদিন লেগে যায়।
তখনই ঘরে প্রবেশ করলো হিয়া আর বললো,
~আমার সারাদিন লাগে না আমি তৈরি হয়ে বসে আছি।
ফারহান বললো,
~ভাবি তুমি ৫ঘন্টা যাবত রেডি হচ্ছো।
হিয়া নাক ফুলিয়ে বললো,
~স্কুলের পিকনিকে যেতে চাস তুই?
ফারহান বললো,
~হ্যাঁ ভাবি।তোমার রেডি হতে কোনো সময়ই লাগে না
ফারহানের কথায় ফিক করে হেসে দেয় হিয়া।ইলহাম বললো,
~৫ মিনিট সময় দে আমি পাঞ্জাবি পরে আসছি।
হিয়া বললো,
~আমরা নিচে আছি চলে আসিস।
বলেই হিয়া ফারহানকে নিয়ে চলে আসে ইলহাম পাঞ্জাবি পড়ে নিলো চুলগুলো ঠিক করে হাতে কালো রঙ্গের ঘড়িটা পরে পারফিউমটা শরীরে দিয়ে জুতাটা পড়ে নিলো একবার নিজেকে আয়নায় দেখে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে আসলো।
নিচে এসে দেখলো সবাই দাড়িয়ে আছে ইলহাম সেখানে পৌছাতেই এক এক করে সবাই গাড়িতে উঠে পরলো রওনা হলো হেমন্তিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

____________________♥______________________

হেমন্তি রুমে বসে আছে একা সবাই বরের বাড়ির লোকদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। ইলহামরা এসেছে ২০ মিনিট হয়েছে কিছুক্ষণ আগে অনু এসে খবরটা দিয়ে গেছে আর বলেও গেছে যে ইলহামকে নাকি দারুন লাগছে।হেমন্তির বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে অনেক ভয় আর লজ্জা লাগছে সে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলো তাকে কী সুন্দর লাগছে?ইলহামের পাশে বউ সাজে কী তাকে সুন্দর লাগবে?ইলহাম কী তাকে দেখে পছন্দ করবে এ সাজে?হেমন্তির মনে অনেক প্রশ্ন এর জবাব একটাই সময় হলে সব বোঝা যাবে।হেমন্তির ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলো হিয়া হেমন্তিকে দেখেই সে বললো,
~মাশআল্লাহ কারো নজর যেন না পরে অনেক সুন্দর লাগছে তোমায়।
হেমন্তি হিয়াকে দেখে সালাম দিলো হিয়া সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
~তোমাকে অনেক মিষ্টি লাগছে হেমন্তি একটু বসো তো।
হেমন্তি বিছানায় বসে পরলো হিয়া হাতে থাকা বক্সটা থেকে একটা চেইন বের করে হেমন্তির গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললো,
~এই চেইনটা আমার মায়ের ছিল এখন তোমার এইটা সামলে রাখবে।
হেমন্তি বললো,
~সামলে রাখবো আপু।
হিয়া বললো,
~সব আয়োজন শেষ হয়ে গেছে মেহমানরাও চলে এসেছে তোমাকে নিতে এসেছি।
হিয়ার কথা শুনে হেমন্তি শুকনো ঢোক গিলে হিয়ার হাতে হাত রেখে উঠে দাড়ালো রুমের বাহিরে চলে আসলো।ছাদে সব আয়োজন করা হয়েছে হিয়া হেমন্তিকে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
ইলহামকে স্টেজে বসানো হয়েছে এখন হেমন্তির জন্য অপেক্ষা। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হেমন্তি এসে পরলো হিয়ার সাথে অনু আর কেয়াও হেমন্তির পাশে এসে দাড়ালো।
হেমন্তির দিকে তাকাতেই ইলহামের চোখ আটকে যায় একদম হলুদ পরী লাগছে তাকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা ইলহাম চোখ সরিয়ে নিলো সে।
হেমন্তিকে ইলহামের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো সবাই তাদের ছবি তুলতে থাকলো।হেমন্তি আড়চোখে একবার ইলহামের দিকে তাকালো সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো সে।সবাই ওদের নিয়ে মেতে উঠলো এক এক করে সবাই হলুদ ছুইয়ে দিলো ইলহাম আর হেমন্তিকে।হলুদ দেওয়া শেষে কেয়া বললো,
~এখন ফটো টাইম বর কনের এক সাথে ছবি তোলা হবে।
কেয়ার কথা শুনে হেমন্তি অসহায় দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকালো অনু হেমন্তির পাশে দাড়িয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
হেমন্তি বললো,
~আমি ছবি তুলতে পারবো না প্লিজ কেয়াকে বোঝা।
অনু বললো,
~এভাবে বলিস না কালকে বিয়ে আজ ছবি তুললে কী হবে?
হেমন্তি আর কিছুই বললো না তখনই ইলহাম বলে উঠলো,
~আজ অনেক ছবি তোলা হয়েছে সবাই ক্লান্ত কালকে অবশ্যই তোমার ইচ্ছা মতো ছবি তুলবো।
কেয়া মুখ কালো বললো,
~ঠিক আছে কিন্তু কালকে ছবি তুলতেই হবে।
ইলহাম মৃদু হেসে কেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~অবশ্যই প্রমিজ করলাম।
কেয়া হেসে সেখান থেকে চলে গেলো হেমন্তি হাফ ছেড়ে বাচলো।

_____________________♥________________________

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আজাদ সাহেব হেমন্তির বাবাকে বললেন,
~রাত অনেক হলো আমরা এখন বিদায় নিচ্ছি।
হেমন্তির বাবা বললেন,
~আমাদের কোনো ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করবেন।
আজাদ সাহেব বললেন,
~এসব বলে আমাদের ছোট করবেন না ভাই আমার তো মনে হয়েছে আমি নিজ বাড়িতেই আছি।
হেমন্তির বাবা বললেন,
~কালকে আবার দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আপনার মেয়েকে আমার মেয়ে করে নিয়ে যেতে আসছি।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে হেমন্তির বাবা হেসে ফেললেন।কিছুক্ষণ পর ইলহামরা রওনা হলো নিজ বাসার উদ্দেশ্যে হেমন্তি নিজ রুমের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বাহিরে দেখতেই ইলহামের দেখা পেলো।ইলহাম সেখানে তাকাতেই হেমন্তি সরে দাড়ালো ইলহাম হেমন্তির লুকোচুরি দেখে মনে মনে বললো,
~এতো লুকিয়ে লাভ কী কাল তো আমার সাথেই যেতে হবে।
হেমন্তি আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখতে পেলো তারা চলে গেছে।হেমন্তি সেখান থেকে সরে দাড়ালো গহনা খুলতে খুলতে ভাবলো,
~আগামীকাল তো তার সাথেই যেতে হবে তখন কীভাবে লুকাবো?

চলবে