অচেনা শহর পর্ব-০৭

0
451

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৭

সকাল থেকেই হিয়া ব্যস্ত নাস্তা তৈরি করতে নতুন বউয়ের জন্য নানান ধরনের আইটেম সে আর রেহেনা বেগম তৈরি করেছেন।হিয়ার মতে হেমন্তির যাতে কোনো ভাবে নিজেকে একা না মনে করে এই বাসায়।নতুন নতুন সবারই এমন ভয় হয় হিয়ারও হয়েছিল কিন্তু রেহেনা বেগম যেভাবে হিয়াকে আগলে নিলো সেটা হিয়া কোনোদিন ভুলবেনা।সব নাস্তা টেবিলে সাজাতেই ফারহান এসে হাজির হলো স্কুল ড্রেসে হিয়া তাকে দেখে বললো,
~সামনে পরীক্ষা না হলে তোর ছুটির ব্যবস্থা করতাম কিন্তু পরীক্ষার জন্য করলাম না।
ফারহান মুখ ভার করে বললো,
~ভাবী একটা দিন ছুটি নিলে কী হবে?
হিয়া বললো,
~তোর পড়াশোনার অবস্থা দেখেছিস তুই ম্যাথের অবস্থা তো নাজেহাল আজকে মিস দেওয়াই চলবেনা।
ফারহান আর কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে চেয়ারে বসে পরলো হিয়া তার প্লেটে খাবার তুলে দিলো। তখনই ফারুক আর আজাদ সাহেব এসে হাজির হলো আজাদ সাহেব হিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
~রেহেনা আপা কোথায়?
হিয়া বললো,
~মায়ের মাথা ব্যাথা করছিলো তাই তাকে নাস্তা করিয়ে মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে রেখেছি।
আজাদ সাহেব বললেন,
~তা ঠিক করেছো ইলহাম আর বউ মার কী খবর?
হিয়া বললো,
~এখন পর্যন্ত ঘুম থেকে ওঠেনি মনে হয়।
আজদা সাহেব বললেন,
~থাক ওদের ঘুমাতে দেও বউ মার পায়ের ব্যাথাটা কমেছে?
হিয়া বললো,
~ঘুম থেকে উঠলে বোঝা যাবে।
ফারুক বললো,
~আমার আজ একটু অফিসে যেতে হবে তাই বাবুর্চি চলে আসলে আমাকে কল করো বুঝেছো?
হিয়া বললো,
~ঠিক আছে।
সবাই নাস্তা করে যে যার কাজে চলে গেলো হিয়া আবারও সুন্দর করে নাস্তা সাজিয়ে ইলহামের রুমের দিকে চলে গেলো তাদের ডাকতে কারণ ১০টা বেজে গেছে হেমন্তির মেডিসিনও নিতে হবে।
হেমন্তির মুখে রোদের রশ্নি তীব্রভাবে পরতেই সে চোখ খুলে ফেললো আশেপাশে তাকাতেই সে একটু অবাক হলো অপরিচিত জিনিস দেখে। পরক্ষণেই মনে পরলো সে এখন ইলহামের রুমে রয়েছে।নিজের পাশে তাকাতেই ইলহামের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পেলো।হেমন্তি ধীরে ধীরে উঠে নিজের পা টা মাটিতে ফেলতেই বুঝতে পারলো ব্যাথাটা অনেকটাই সেরেছে।সে ধীর পায়ে উঠে লাগেজ থেকে শাড়ি নিয়ে যেই ওয়াশরুমে যেতে নিবে তখনই দরজায় টোকা দিলো হিয়া।
হেমন্তি ধীর সুস্থে হেঁটে দরজার কাছে গিয়ে তা খুলে দিতেই হিয়াকে দেখতে পেলো।হিয়া হাসি মুখে বললো,
~ঘুম ভেঙ্গেছে ফ্রেশ হয়ে চলে এসো বাহিরে আর ইলহামকেও ডেকে দিও।
হেমন্তি বললো,
~আপু এতো দেরি করে ওঠার জন্য সরি।
হিয়া বললো,
~আরে পাগলী মেয়ে এতে সরির কি আছে কালকে তোমার উপর অনেক ধকল গিয়েছে তাই তুমি ক্লান্ত ছিলে।
হেমন্তি মুচকি হাসলে হিয়া বিদায় নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো হেমন্তি দরজা ভিরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।একবারে শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে সে বের হয়ে আসলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা চেইন আংটি কানের দুল পরে নিলো।হাতে বালা নাকফুল আগে থেকেই ছিল চুলগুলো মুছে তা পিঠে ছড়িয়ে দিতেই তার মনে পরলো ইলহামের কথা।সে পিছে ফিরে দেখলো ইলহাম ঘুমিয়ে আছে সে ধীর পায়ে ইলহামের কাছে এসে আসতে করে বললো,

______________________♥_______________________

~এই যে শুনুন সকাল হয়ে গেছে আপু ডাকছে।
হেমন্তির ডাক ইলহামের কান পর্যন্ত পৌছায়নি সে একই ভাবে শুয়ে আছে।হেমন্তি এবার আরেকটু কাছে গিয়ে ডাকতেই ইলহাম চোখ পিটপিট করে খুলে হেমন্তির মুখ দেখে একটু অবাক হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলে হেমন্তি সোজা হয়ে দাড়ালো ইলহাম হেমন্তিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো।হেমন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আপু ডাকছে নাস্তা করতে।
ইলহাম আড়মোড়া ভেঙে বললো,
~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমার পা ঠিক আছে?
হেমন্তি বললো,
~অনেকটাই ভালো।
ইলহাম বললো,
~হেটে যেতে পারবে নাকি।
ইলহামের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই হেমন্তি বললো,
~হেটপ যেতে পারবো আমি এখন আপুর কাছে যাই।
বলেই সে এক দন্ডও সেখানে দাড়ালো হালকা হালকা পা ফেলে রুমের বাহিরে চলে গেলো।হেমন্তির যাওয়া দেখে ইলহাম হাসলো সে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।হেমন্তি রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই দেখতে পেলো হিয়া বসে আছে।হিয়া হেমন্তিকে দেখে বললো,
~আসো হেমন্তি চেয়ারে বসো নাস্তাটা করে নেও।
হেমন্তি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক ধরনের আইটেম তাতে সাজানো হিয়া বললো,
~সব তোমার জন্য হেমন্তি জানিনা মা থাকলে কী করতেন?কিন্তু আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
হিয়ার হাত ধরে হেমন্তি বললো,
~আপনি এতো কিছু করছেন যার কারণে আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার বড় বোন।
হিয়া হেসে বললো,
~এখন বসো খেয়ে নেও।
হেমন্তি বললো,
~আপনিও তো নাস্তা করেননি একসাথে খেয়ে নেই আমরা।
হেমন্তির কথা শেষ হতেই ইলহাম এসে উপস্থিত সে এসেই চেয়ার টেনে বসে পরলো।হেমন্তি হিয়ার পাশে বসে পরলো হিয়া হেমন্তির প্লেটে এক এক করে খাবার সাজিয়ে দিলো ইলহাম বললো,
~আমার প্লেটে দেবে কে?
হিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
~তোর হাত আছে নিয়ে খা।
ইলহাম বললো,
~১০,০০০ টাকা দিয়েছি কী আমি বেরে খাবো বলে?
হিয়া বললো,
~আর একটা কথা বেশি বললে খাবারও কপালে জুটবে না।
ইলহাম মুখ বাকিয়ে খাবার প্লেটে তুলে নিলো হেমন্তি এদের কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছে।নাস্তা শেষ করে হিয়া দুপুরের রান্না করতে লাগলো রাতে তো বৌ ভাত ছাদেই করা হবে হিয়ার পাশে এসে দাড়ালো হেমন্তি।হিয়া হেমন্তিকে দেখে বললো,
~তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নেও একটু পর আবার পার্লারে যেতে হবে।
হেমন্তি বললো,
~আমি আপনাকে সাহায্য করি আপু।
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~তোমার কিছু করতে হবে না কারণ কিছুদিন পর সব তোমারই করতে হবে এখন তুমি রেস্ট নেও।
হেমন্তি বললো,
~আমি আন্টির কাছে যাই তাহলে।
হিয়া বললো,
~যাও।

_____________________♥________________________

ইলহাম অফিসের কাজ করছে রুমে বসে ল্যাপটপ নিয়ে সে প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশনটা করে নিচ্ছে।তখনই দরজা ঠেলে হেমন্তি ঘরে প্রবেশ করলো একবার ইলহামের দিকে তাকিয়ে সে নিজ ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে বারান্দায় চলে গেলো মাকে ফোন করতে।ইলহাম সবই আড়চোখে দেখলো কিন্তু কিছুই বললো না হেমন্তি বারান্দায় গিয়ে পারভীন বেগমকে ফোন করলো দুবার রিং হতেই পারভীন বেগম রিসিভ করলেন হেমন্তি বললো,
~মা কেমন আছো?
পারভীন বেগম বললেন,
~ভালো আছি তোর পায়ের অবস্থা কেমন?
হেমন্তি বললো,
~ভালো মা কেয়া কোথায়?
পারভীন বেগম বললেন,
~তোর শ্বশুর বাড়ি যাবে বলে সেই কখন থেকে একটা একটা করে ড্রেস চয়েজ করেই যাচ্ছে।
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~অনু আছে সাথে?
পারভীন বেগম বললেন,
~হ্যা সাথেই আছে।
হেমন্তি বললো,
~বাবা কী করছে?
পারভীন বেগম বললেন,
~দোকানে গেলেন একটু আগে।
হেমন্তি বললেন,
~তোমরা তাড়াতাড়ি চলে এসো।
পারভীন বেগম বললেন,
~ওখানে সবাই কেমন?
হেমন্তি বললো,
~সবাই ভালো মা আমার অনেক খেয়াল রাখছে।
পারভীন বেগম বললেন,
~শুনে ভালো লাগলো আমরা তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো এখন রাখি।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে।
বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে সে পিছন ফিরতেই ইলহামকে দেখতে পেলো ইলহাম অনেকটাই তার কাছে এসে দাড়িয়েছে ইলহামকে এতো কাছে দেখে সে একপা পিছিয়ে গেলো।ইলহাম বললো,
~কথা হয়েছে তোমার?
হেমন্তি মাথা দুলালো ইলহাম বললো,
~তুমি মেডিসিন কেন নেওনি?
হেমন্তি বললো,
~ব্যাথা নেই এখন তাই।
ইলহাম বললো,
~ব্যাথা নেই বলে মেডিসিন নিবে না এরপর যদি ব্যাথা আরো বাড়ে তখন কী করবে?
হেমন্তি চুপ করে দাড়িয়ে আছে ইলহাম বললো,
~রুমে যাও সোফায় বসো আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি।
হেমন্তি রুমে গিয়ে সোফায় বসে পরলো ইলহাম হাতে মেডিসিন নিয়ে এসে হেমন্তির হাতে দিলো সে খেয়ে নিলো।ইলহাম একটু ঝুঁকে হেমন্তির পায়ে হাত দিতেই সে দ্রুত পা সরিয়ে ফেললো ইলহাম বললো,
~পা কেন সরালে?
হেমন্তি বললো,
~আপনি বয়সে আমার বড় তাই পায়ে হাত দেওয়াটা ভালো দেখায় না।
ইলহাম বললো,
~তুমি কী ইন্ডাইরেক্টলি আমাকে বুড়ো বলছো?
হেমন্তি চোখ বড় বড় করে বললো,
~আমি এটা কখন বললাম?
ইলহাম হেমন্তির পাশে বসে বললো,
~এখনই তো বললে।
হেমন্তি মিনমিন করে বললো,
~আপনি কানে হয়তো বেশি শুনেছেন।
ইলহাম হেমন্তির একহাত ধরে বললো,
~দেখো এখন বুড়ো বললেও কোনো লাভ হবে না কারণ এই বুড়োর সাথেই তোমাকে আজীবন থাকতে হবে।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি তার দিকে তাকালো ইলহাম মুচকি হেসে বললো,
~বোর হলে হিয়ার কাছে বসে থেকো আমার ডেকোরেশনের কাজ দেখতে যেতে হবে।
বলেই সে শার্ট পাল্টে রুমের বাহিরে চলে গেলো হেমন্তি ইলহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার এই জীবন থাকতে তো আপনার থেকে দূরে যাচ্ছিনা।

চলবে