অচেনা শহর পর্ব-০৮

0
452

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৮

বৌ ভাতের সব আয়োজন করা শেষ এখন সবাই যে যার রুমে তৈরি হচ্ছে হেমন্তি হিয়ার রুমে তৈরি হচ্ছে পার্লার থেকে মেয়ে ডাকা হয়েছে তার জন্য। ইলহাম নিজ রুমেই আছে ফারুক তার সাথে রয়েছে ফারহানও বিছানায় বসে গেমস খেলছে।ফারুক বললো,
~ইলহাম,আমাদের সব কাগজ পত্র রেডি হয়ে গেছে কালকে হয়তো পাসপোর্টও দিয়ে দিবে।
ইলহাম বললো,
~তাহলে তো আর কোনো ঝামেলা রইলো না।
ফারুক বললো,
~আমার তো ভয় হচ্ছে হিয়াকে নিয়ে সে তোমাদের থেকে দূরে থাকতে পারবে তো?আমার কারণে ওর অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।
ইলহাম বললো,
~এখানে কষ্টের কিছু নেই আপনারা দুজন একসাথে থাকবেন অবশ্যই একসাথে সামলে নিতে পারবেন।
ফারুক বললো,
~তাই যেন হয়।
তাদের কথার মাঝেই ফারহান বললো,
~ভাইয়া যাওয়ার আগে আমাকে একটা নতুন মোবাইল কিনে দিয়ে যেও এটাতে ভিডিও কল দিলে ভালো মতো কথা বলতে পারবোনা।
ফারুক বললো,
~ভিডিও কলে কথা বলার জন্য তোকে নতুন মোবাইল কিনে দিতে হবে বাহ ভালোই।
ফারহান বললো,
~তোমাদের ভালোর জন্যই বলেছিলাম।
ফারুক বললো,
~হ্যা জানি আমাদের কতো ভালোর জন্য বলেছিস পরীক্ষার পর সব দেওয়া হবে।
ফারহান মুখ বাকিয়ে আবার গেমসে মনোযোগ দিলো।
হিয়া হেমন্তি রেডি হয়ে গেছে হেমন্তি গোলাপী রঙ্গের লেহেঙ্গা পড়েছে। হিয়া বললো,
~আমি ছেলেদের দেখে আসি আমার মনে হয় এখনো সেই গরীব লুকেই আছে।
হেমন্তি ফিক করে হেসে বললো,
~আপুও আপনি পারেন ও বটে।
হিয়া বললো,
~একটু পর মেহমান রা চলে আসবে আর লাট সাহেবরা এই অবস্থাতেই বসে থাকবে।
বলেই হিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো সোজা চলে গেলো ইলহামের রুমে সেখানে গিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
~যতদ্রুত সম্ভব তিনজন তৈরি হয়ে নেও মেহমান আসার সময় হয়ে গেছে ৩০ মিনিটের সময় আছে।
ফারুক বললো,
~তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে।
ইলহাম বললো,
~১০ ঘন্টা ঘষামাজার ফল তো সুন্দরই হবে ভাইয়া।
হিয়া বললো,
~তোর কিসমতে আজ বউ নেই দেখিস হেমন্তির আশেপাশেও তোকে থাকতে দিবো না।
ফারহান বললো,
~এটা ঠিক না ভাবি।
হিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর গার্লফ্রেন্ডের খবর মাকে গিয়ে বলবো?
ফারহানের মুখটা চুপসে গেলো সে পাঞ্জাবি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।হিয়া বললো,
~তোমরা দুজন রেডি হয়ে নেও দ্রুত।
রাত ৮টায় হেমন্তির পরিবার চলে আসে ইলহামদের বাসায় হিয়া আর ফারুক তাদের সাথে কুশলাদি করে বললো,
~আপনারা কেমন আছেন?
পারভীন বেগম বললেন,
~ভালো।
আজাদ সাহেব আর আফজাল হোসেন দুজনই কথায় ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।কেয়া আর অনু হিয়া থেকে হেমন্তির খবর নিয়ে চলে গেলো তাকে দেখতে।

_____________________♥______________________

হেমন্তি রুমে বসে আছে একটু পর তাকে স্টেজে নেওয়া হবে এমনটাই হিয়া বলে গেছে।দরজা ঠেলে কেয়া আর অনু রুমে প্রবেশ করলো হেমন্তি ওদের দেখে অনেক খুশী হয়ে গেলো কেয়া দৌড়ে গিয়ে হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,
~আপু তুমি কেমন আছো?
হেমন্তি বললো,
~ভালো আছি।
অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
~তুই কেমন আছিস?
অনু বললো,
~ভালোই আছি।
কেয়া হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আপু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
হেমন্তি বললো,
~হিয়া আপু আর পার্লারের মেয়েটা এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে।
অনু বললো,
~তা বাসর রাত কেমন কাটলো?
হেমন্তি বললো,
~এসব কী বলছিস?লজ্জা সরম আছে তোর?
অনু বললো,
~নাহ সব লজ্জা বিক্রি করে দিয়েছি।
হেমন্তি অনুর কথা শুনে হেসে বললো,
~ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি বাসর রাত।
অনু বললো,
~আনরোমান্টিক কোথাকার।
কেয়া হেসে বললো,
~তোমার কী মনে হয়েছিল আপু দুলাভাইয়ের গলা জড়িয়ে বলবে চলেন বাসর রাত উদযাপন করি সে তো লজ্জায় মাথা হেড করে রেখেছিল।
হেমন্তি কেয়ার মাথায় থাপ্পড় মেরে বললো,
~এসব কথা ভুলে যা এখন চল আমাকে স্টেজে নিয়ে।
কেয়া আর অনু মুখ টিপে হেসে হেমন্তিকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো তারপর ছাদে নিয়ে গেলো।হিয়া হেমন্তিকে দেখে এগিয়ে এসে বললো,
~হেমন্তি আমার নানু বাসার লোক তোমার সাথে দেখা করতে চায় একটু এখানে আসো।
হেমন্তি হিয়ার সাথে সাথে চললো হিয়া তাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সবাই বউয়ের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত।হিয়া গিয়ে ইলহামকেও সাথে করে নিয়ে আসলো আর হেমন্তির পাশে দাড় করিয়ে দিলো আর ক্যামেরা ম্যানকে বললো ভালো মতো ছবি তুলতে।
কেয়াও নিজ মোবাইল নিয়ে দাড়িয়ে গেলো হেমন্তি ইলহাম থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে তা দেখে ক্যামেরা ম্যান বললো,
~আপনারা এতো দূরে কেন দাড়িয়েছেন কাছাকাছি আসেন।
ইলহাম হেমন্তির আরেকটু কাছে গিয়ে দাড়িয়ে তার কোমড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে দিলো।ইলহামের স্পর্শ পেয়ে হেমন্তি কেঁপে উঠলো কেয়া মুখ টিপে হাসছে হেমন্তির চেহারা দেখে।ক্যামেরা ম্যান বললো,
~একদম পার্ফেক্ট লাগছে।
তারা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেললো আশেপাশের লোকজন হেমন্তি আর ইলহামকে দেখে অনেক প্রশংসা করছে।

______________________♥_______________________

খাওয়া-দাওয়া শেষে আফজাল হোসেন আজাদ সাহেবের হাত ধরে বললেন,
~তাহলে ইলহাম আর হেমন্তিকে নিয়ে আমরা রওনা হই বাসার উদ্দেশ্যে।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আরো কিছুক্ষণ থেকে যান আপনারা।
আফজাল হোসেন বললেন,
~নাহ ভাইজান রাত তো অনেক বেশি হয়ে গেছে আজ আসি আমরা।
আজাদ সাহেব বললেন,
~ঠিক আছে ভাইজান আরেকদিন অবশ্যই আসবেন।
আফজাল হোসেন বললেন,
~অবশ্যই ভাইজান।
ইলহাম আজাদ সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে হেমন্তি,কেয়া,অনু,পারভীন বেগম,আর আফজাল সাহেবকে নিয়ে নিজ গাড়িতে রওনা হলো।হিয়া থাকবে এ বাসায় যে পর্যন্ত ইলহাম আর হেমন্তি না ফিরে আসে।ইলহাম গাড়ি ড্রাইভ করছে আফজাল হোসেন বললেন,
~তুমি ক্লান্ত মানুষ কেন এতো কষ্ট করছো আমরা ট্যাক্সি বুক করেও আসতে পারতাম।
ইলহাম বললো,
~কষ্টের কিছু নেই আসলে রাতে অনেক সময়ই ড্রাইভ করা হয়।
আফজাল হোসেন বললেন,
~ওহহ।
কিছুক্ষনের মধ্যে তারা বাসায় পৌছে গেলো ইলহামকে গাড়ি রাখার জায়গা আফজাল হোসেন দেখিয়ে দিলেন।হেমন্তি সোজা নিজ রুমে চলে গেলো আজ সে শাড়ি পরবেনা একটা সালোয়ার নিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ইলহাম বাসায় প্রবেশ করতেই পারভীন বেগম নানান ধরনের খাবার তার সামনে সাজিয়ে দিলো।ইলহাম বললো,
~আসলে আমি অনেক খেয়েছি এখন কিছুই খেতে পারবোনা।
পারভীন বেগম বললেন,
~সে কী বাবা তোমার জন্যই এতো খাবার তৈরি করেছি আমি।
ইলহাম হালকা হেসে বললো,
~ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে এসে অবশ্যই খাবো।
কেয়া বললো,
~বলেই হতো আপনি আপু ছাড়া খাবেন না এতো ভালোবাসা যে কোথায় রাখবো।
কেয়ার কথায় পারভীন বেগম বললেন,
~অনেক কথা বলিস তুই যা তুইও ফ্রেশ হয়ে আয় আর অনুকেও সাথে করে নিয়ে আয়।
ইলহাম বললো,
~দুই শালিকা কে ছাড়াও আমি কিছু খেতে পারবোনা তারাও যাতে চলে আসে।
কেয়া চোখ টিপ দিয়ে বললো,
~এখনই আসছি।
হেমন্তি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো ইলহাম বিছানায় শুয়ে আছে তাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে। হেমন্তি চুল গুলো আছরাতে লাগলো তখনই ইলহাম চোখ খুলে হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আজ শাড়ি কেন পড়ো নি?
হেমন্তি ইলহামের আওয়াজ শুনে চমকে যায় সে পিছন ফিরে দেখলো ইলহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে

_____________________♥________________________

হেমন্তি বললো,
~এখানে কোনো শাড়ি নেই কালকে মায়ের থেকে নিয়ে পরবো।
ইলহাম বললো,
~আমার ব্যাগ থেকে একটা শার্ট আর টাউজার দেও তো।
হেমন্তি চুলগুলো হাত খোপা করে ব্যাগ থেকে ইলহামের জিনিস গুলো গুছিয়ে তার পাশে রেখে দিলো।ইলহাম হেমন্তির টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো হেমন্তি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে চলে গেলো ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো দেখলো সে বুঝতে পারলো এসব ইলহামের জন্য। তখনই কেয়া আর অনু চলে আসলো হেমন্তিকে দেখে অনু বললো,
~কী রে তোর বর কোথায়?
হেমন্তি বললো,
~ফ্রেশ হতে গিয়েছেন।
অনু বললো,
~হেমন্তি ভার্সিটি যেতে হবে কয়েকদিন পরীক্ষা মনে রাখিস।
হেমন্তি বললো,
~ওনার সাথে আর আপুর সাথে কথা বলে জানাবো।
তখনই ইলহাম পিছন থেকে বলে উঠলো,
~পড়াশোনা নিয়ে অমনোযোগী হওয়া যাবেনা।
পিছন ফিরে ইলহামকে দেখতে পেলো হেমন্তি কেয়া বললো,
~পড়াশোনার কথা বাদ দেও এখন খেতে বসো।
৪জন একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো তারপর হেমন্তি আর ইলহাম নিজ রুমে চলে আসলো।হেমন্তি ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইলহান একপাশে শুয়ে আছে সে আর কিছু না বলে তার পাশেই শুয়ে পরলো কিন্তু দুরত্বে বজায় রেখে না একটু কাছাকাছি গিয়েই শুয়ে পরলো।

চলবে