অচেনা শহর পর্ব-০৯

0
447

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৯

সকালবেলা ঘুমটা প্রথমে হেমন্তির ভাঙ্গে সে নিজের উপর অনেক ভারি কিছু অনুভব করে হেমন্তির প্রথমে মনে কেয়া তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে তাই এমন লাগছে।পরক্ষণেই তার মনে পরলো সে তো কেয়ার সাথে ঘুমোয়নি সে তো আর ভাবতে পারলোনা ফটাফট চোখ খুলে নিজের পাশে তাকিয়ে ইলহামকে দেখতে পেলো ইলহাম নিজের জায়গা ছেড়ে হেমন্তির কাছে চলে এসেছে মাঝখানে বালিশ না থাকায় এ অঘটন ঘটেছে।হেমন্তি এখন কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ইলহাম জেগে উঠলে একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।তাই সে ধীরে সুস্থে নিজেকে ছাড়ানোর কথা ভাবলো আর করলোও তাই কিন্তু ইলহাম তাকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরছে।হেমন্তির এখন নিজেকে অসহায় লাগছে তাই সে ধীরে ধীরে ইলহামকে ডাকতে লাগলো,
~এই যে শুনুন আপনি একটু দূরে সরুন।
কিন্তু ইলহামের কোনো হেলদোল নেই সে ঘুমে কাতুর হেমন্তি এবার একটু জোরেই বলে উঠলো,
~আমাকে ছাড়ুন আমি ওয়াশরুমে যাবো।
এবার হেমন্তির কথা ইলহামের কর্ণকুহরে পৌছালো সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো হেমন্তির চেহারা।সে হেমন্তিকে দেখে চমকিয়ে উঠলো আর তাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~এসব কী হচ্ছিল?
হেমন্তি অবাক নয়নে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~কী হচ্ছিল?
ইলহাম বললো,
~তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলে একটা একা পুরুষের সাথে বন্ধি ঘরে এসব করতে যাচ্ছিলে।
হেমন্তির মুখ হা হয়ে গেলো ইলহামের কথা শুনে ওড়নাটা ঠিক করে উঠে বসে বললো,
~আপনি আমার জায়গায় এসেছিলেন আমি না ভালো মতো দেখুন।
ইলহাম চোখ ছোট ছোট করে বললো,
~আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না এতো চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে এমন কিছু করতে পারে।মানলাম আমি অনেক হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এর মানে তো এটা না আমার এভাবে সুযোগ নিবে তুমি।
হেমন্তি কী বলবে বুঝতে পারছেনা তবুও নিজেকে সামলে বললো,
~ঠিক আছে আজ থেকে আমি আর আপনার পাশে ঘুমবোনা।
বলেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো ইলহাম বুঝতে পারলো হেমন্তি রাগ করেছে সে মুচকি হেসে বললো,
~দেখি তুমি কোথায় গিয়ে ঘুমোও আমার পাশেই তোমাকে থাকতে হবে।
হেমন্তি ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা রুমের বাহিরে চলে গেলো ইলহাম বিছানা ছেড়ে নিজেও ফ্রেশ হতে চলে গেলো।পারভীন বেগম হেমন্তিকে দেখে বললেন,
~এতো তাড়াতাড়ি উঠে পরলি যে?
হেমন্তি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এভাবেই দাও পরোটা আমি বেলে দিচ্ছি।
পারভীন বেগমের হাত থেকে বেলন নিয়ে সে পরোটা বেলতে লাগলো।পারভীন বেগম ভাজিতে চামচ লাড়তে লাড়তে বললেন,
~হেমন্তি নিজের সংসার এখন থেকে তোকে ঘুছাতে হবে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।সবার মনোভাবকে সম্মান করতে হবে তোর শ্বশুড় অনেক ভালো মানুষ আর হিয়া তো সোনার টুকরো একটা ওদের মন যাতে তোকে নিয়ে সব সময় সুখে থাকে। আর ইলহাম তো অনেক ভালো ছেলে দেখেছিস কীভাবে আমাদেরকে আপন করে নিয়েছে।
হেমন্তি মনে মনে বললো,
~ছাই ভালো মানুষ আমার সাথে তো ভালো গিরি দেখায় না হু আজকে সারাদিন কথা বলবো না।
হেমন্তির ভাবনার মাঝে পারভীন বেগম বললেন,
~তোর সংসারটা অনেক সুখের হবে যদি তুই এই মানুষগুলোকে ভালোবাসা দিতে পারিস।
হেমন্তি মাথা দুলিয়ে বললো,
~মা তোমার কথা গুলো সবসময় মনে থাকবে।

______________________♥_______________________

নাস্তার টেবিলে সবাই একসাথপ বসেছে নাস্তা করতে ইলহামেট প্লেটে নিজ হাতে খাবার বেরে দিচ্ছেন পারভীন বেগম।ইলহাম পরোটা ভাজির সাথে মিশিয়ে মুখে দিচ্ছে আড়চোখে আবার হেমন্তিকে দিচ্ছে যে এখন শান্ত ভাবে খাবার খেয়ে যাচ্ছে।অনু তার মাঝে বলে উঠলো,
~আজ আমি চলে যাবো হেমন্তি।
অনুর কথায় হেমন্তি তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি তো আরো ১দিন থাকবো তুইও থাক।
অনু বললো,
~না রে মা ফোন করেছিল আমার খালামণির শরীরটা ভালো না বেশি তাই তাকে দেখতে যেতে হবে।
পারভীন বেগম বললেন,
~কোনো সিরিয়সাস কিছু না তো?
অনু বললো,
~তার হার্টের প্রবলেম আছে।
পারভীন বেগম বললেন,
~আচ্ছা আজ চলে যেও আগামীকাল অবশ্যই আসবে তোমার বান্ধবীকে বিদায় দিতে।
অনু হেসে বললো,
~আসবো আন্টি আর হেমন্তি মা বলেছে দুলাভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় যেতে।
হেমন্তি বললো,
~একদিন যাবো ইনশাআল্লাহ।
আফজাল হোসেন বললেন,
~তাহলে অনু চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
অনু বললো,
~তার দরকার নেই আঙ্কেল আগে আমি ভার্সিটি যাবো।
হেমন্তি বললো,
~আমি ২দিন পর যাবো।
অনু বললো,
~ঠিক আছে।
নাস্তা শেষে অনু সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো হেমন্তি নিজ রুমে না গিয়ে কেয়ার রুমে চলে গেলো আর দেখলো কেয়া ঘুমে কাতুর।হেমন্তি কেয়ার কাছে গিয়ে তাকে ডেকে তুলে বললো,
~এখন ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা দিয়েছি টেবিলে।
কেয়া আড়মোড়া ভেঙে বললো,
~অনু আপু চলে গেছে?
হেমন্তি বললো,
~জ্বী।
কেয়া বিছানা ছেড়ে উঠে জানালা দিয়ে আকাশ দেখে বললো,
~আপু আজ যদি বৃষ্টি পরে তুমি আমার সাথে ভিজবে মনে রেখো।
বলেই সে ওয়াশরুমে চলে গেলো হেমন্তি বললো,
~পাগলী একটা।
ইলহাম একটু বাসায় যাবে তাই সে তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে হেমন্তি কে খুজতে লাগলো।কেয়ার রুম থেকে বের হতেই হেমন্তি ইলহামের দেখা পেলো ইলহাম বললো,
~আমি বাসায় যাচ্ছি চলে আসবো দুপুরের আগে।
হেমন্তি বললো,
~ঠিক আছে আমি মাকে বলে দিবো।
ইলহাম আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু জড়তার কারণে আর কিছুই না বলে সেখান থেকে চলে গেলো।

____________________♥_______________________

ইলহাম যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর বৃষ্টি এলো পুরো ধুমসে হেমন্তি মাত্র গোসল করে শাড়ি পরেছে।কেয়া তার রুমে এসে হাত ধরে বললো,
~চলো বৃষ্টিতে ভিজবো।
হেমন্তি বললো,
~মাত্র গোসল করে এসেছি এখন ভিজবোনা।
কেয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,
~তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা বিয়ে হয়ে গেছো তাই আমাকে ভুলে গেছো।
হেমন্তি না পেরে বললো,
~চল কিন্তু ১০মিনিট এর বেশি না।
কেয়া খুশি হয়ে বললো,
~ঠিক আছে চলো।
দুবোন ছাদে চলে গেলো কেয়া হাত মেলে বৃষ্টির মজা নিচ্ছে হেমন্তি রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির ফোঁটা তার শরীরকে ভিজিয়ে তুলছে।
ইলহাম গাড়ি পার্ক করে হেমন্তিদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো অনেকটাই ভিজে গেছে। দরজা খোলা পেয়ে জুতো খুলে বাসায় প্রবেশ করতেই পারভীন বেগম তাকে দেখে বললেন,
~তুমি তো ভিজে গেছো?আমি হেমন্তিকে ডেকে দিচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~রুমেই আছে সে আমি রুমেই যাচ্ছি।
পারভীন বেগম বললেন,
~রুমে নেই কেয়ার সাথে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে কেয়া জেদ করে নিয়ে গেছে।
ইলহাম কিছু একটা ভেবে বললো,
~আমি ছাদে চলে যাচ্ছি।
পারভীন বেগম বললেন,
~তুমি ভিজে যাবে পুরো।
ইলহাম বললো,
~সমস্যা নেই।
বলেই সে ছাদে যাওয়ার জন্য সিড়ির দিকে পা বাড়ালো
পারভীন বেগম আলতো হেসে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
কেয়া ঠান্ডায় পুরো কাঁপছে তাই সে হেমন্তিকে রেখে ছাদ থেকে নিচে নামতেই ইলহামের সাথে দেখা হলো।সে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
~আমি রুমে যাচ্ছি আপু উপরেই আছে তাকে নিয়ে আসুন দুলাভাই।
ইলহাম বললো,
~মজা লেগেছে ভিজে?
কেয়া বললো,
~লাগছিলো এখন প্রচুর ঠান্ডা আপু রেলিং ঘেষে দাড়িয়েই রয়েছে তাকে ডাকতে পারিনি।
ইলহাম আলতো হেসে বললো,
~ঠিক আছে আমি দেখছি।
কেয়া চলে যেতেই ইলহাম ছাদের দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে পরলো সে দেখলো হেমন্তি দাড়িয়ে আছে।হেমন্তি পুরো ভিজে একাকার ইলহাম এক পা দু পা করে হেমন্তির পিছে দাড়িয়ে তার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

_____________________♥______________________

~জ্বর হলে কে আপনার সেবা করবে?
হেমন্তি ভয় পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই ইলহামকে দেখতে পেলো ফ্লোর ভিজে আছে বলে হেমন্তি স্লিপ কেটে পরে যেতে নিবে তখনই ইলহাম তার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।হেমন্তি চোখ পিটপিট করে ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে।ইলহামের সাদা শার্ট ভিজে চুপচুপ করছে বৃষ্টিটা তার গতি কমিয়েছে এখন শুধু বাতাসটা ঘনঘন বইছে।হেমন্তি ইলহামের বুকের দুসাইডে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।ইলহাম বললো,
~বৃষ্টি কমে গেছে এখনো কী এখানেই থাকবে?
বলেই সে হেমন্তিকে ছেড়ে দিলো হেমন্তি আশেপাশে তাকিয়ে কেয়াকে খোঁজার চেষ্টা করলো ইলহাম বললো,
~কেয়া আগেই নিচে নেমে গেছে।
হেমন্তি অবাক হলো সে মনে মনে কেয়াকে আচ্ছামতো বকতে লাগলো।ইলহাম বললো,
~চলো নিচে যাই।
বলেই সে দরজার দিকে হাঁটতে লাগলো হেমন্তিও তার পিছে পিছে হাঁটতে লাগলো।
অনু ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে তখনই সেখানে উপস্থিত হলো ইমজাদ।ইমজাদকে দেখে অনু ভয় পেয়ে গেলো কারণ তার অবস্থা নাজেহাল ইমজাদ বললো,
~হেমন্তি কোথায়?
অনু কোনো উত্তর না দিয়ে ইমজাদের হাত ধরলো তখনই সে বুঝতে পারলো ইমজাদের প্রচুর জ্বর অনু বললো,
~আপনার তো প্রচুর জ্বর।
ইমজাদ বললো,
~তা তোমাকে বলতে হবে না তুমি আগে বলো হেমন্তি কোথায়?
অনু বললো,
~আগে আপনি বলুন আপনার এ অবস্থা কেন?
ইমজাদ এবার রেগে গিয়ে অনুর হাত চেপে ধরে বললো,
~এতো কথা আমার পছন্দ না তুমি বলো হেমন্তি কোথায়?
অনু ব্যাথা পেলো কিন্তু তা প্রকাশ না করে বললো,
~হেমন্তি বিয়ে হয়েছে তাই ২দিন পর থেকে আসবে।
ইমজাদের হাতের বাঁধন ধীরে ধীরে হালকা হয়ে গেলো তার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে যে হেমন্তির বিয়ে হয়ে গেছে।ইমজাদ উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো অনু তাকে অনেকবার আওয়াজ দিলো কিন্তু ইমজাদের কোনো হেলদোল নেই হেঁটেই চলছে আনমনে নিজের ভাঙ্গা মন নিয়ে।

চলবে