অজানা অনুভূতি পর্ব-১৫+১৬+১৭+১৮

0
188

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১৫
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

স্যার কিছু বলবেন?( আদ্রিতা)

হ্যাঁ, কালকে তোমাকে দেখলাম সাজ্জাদের সাথে কলেজে আসবে বলে গাড়িতে উঠেছো। তারপর কলেজে আসো নি কেনো? ( আরিয়ান)

স্যার কলেজে আসতাম কিন্তু হঠাৎ রাস্তায় হঠাৎ শরীর দুর্বল লাগছিলো তাই সাজ্জাদ ভাইয়া বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো। তাই আসতে পারি নি (আদ্রিতা)

তোমাকে আমি প্রায় সময় সাজ্জাদের সাথে দেখেছি। কার সাথে তুমি আসবে যাবে এইটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তুমি একা সাজ্জাদের সাথে আসা যাওয়া করো না তোমার সাথে আলো ও থাকে। সাজ্জাদ হয়তো তোমার বাবার বন্ধুর ছেলে কিন্তু তাই বলে কি তোমাদের কলেজ থেকে নিয়ে আসার বা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তার?এমন কিছু করো না যেনো আমাদের কলেজের সুনাম নষ্ট হয়। আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো কি বলতে চাচ্ছি। (আরিয়ান)

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।আমি কার সাথে আসবো এইটা আমার ব্যাপার স্যার কেনো এ বিষয়ে কথা বলবে। শান্ত গলায় স্যারকে বললাম,

স্যার আমরা কার সাথে আসা যাওয়া করবো সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর এমন না যে আমার বাসায় জানে না যে আমি সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে এসেছি। আলোর পরিবার ও জানে। আর আমরা এমন কিছু করি নি যে কলেজের সুনাম নষ্ট হবে। (আদ্রিতা)

ওকে এখন যেতে পারো তুমি। (আরিয়ান)

আদ্রিতা রুম থেকে বাইরে চলে গেলো।

আরিয়ান বসে বসে ভাবতে লাগলো আদ্রিতাকে কিছু বলে লাভ নেই। সাজ্জাদের সাথে আসা যাওয়া করবেই। আনমনে বলে উঠলো,
আমি ত চাই না আমার প্রিয়তমা অন্যের সাথে যাওয়া আসা করুক। প্রিয়তমা তুমি কি বুঝতে পারো না আমি চাই না তুমি অন্য কারোর সাথে আসা যাওয়া করো। কতোবার ত আমি তোমাদের পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলাম তখন ত রাজি হলে না। তাহলে সাজ্জাদের সাথে কেনো যাও? আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

স্যারের রুম থেকে বের হবার পর হঠাৎ কেউ আমার হাত ধরে টান দিলো। তাকিয়ে দেখি সাজ্জাদ।

আপনি এইখানে? (আদ্রিতা)

এতোক্ষণ একা আরিয়ানের রুমে কেনো ছিলে?(সাজ্জাদ)

মেজাজা আর ও খারাপ হয়ে গেলো, সাজ্জাদের গাড়ি দিয়ে আসলে আরিয়ান স্যারের সমস্যা। আবার আরিয়ান স্যারের রুমে আসলে সাজ্জাদের সমস্যা। আমি যাবো কোথায়। সাজ্জাদের থেকে হাত ছাড়িয়ে তাকে বললাম,

কোন সাহসে আপনি আমার হাত ধরেছেন? নিজের লিমিটের মধ্যে থাকেন। ভুলে যাবেন না কয়েকদিন পর আপনার সাথে দির বিয়ে।

মুখে খুব কথা ফুটেছে দেখি। আমার সাথে এইভাবে কথা বলার সাহস কিভাবে পাও? তোমার সাহস দেখে অবাক হয় আমি। যাই হোক তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। তাই নেক্সট টাইম আমার কথার বাইরে একটা কাজ ও যেনো না দেখি।আশা করি বুঝতে পেরেছো। (সাজ্জাদ)

পাগল হয়ে গেছেন আপনি কিসের অধিকারের কথা বলছেন? আপনার আমার উপর অধিকার কেনো থাকবে? আপনার দির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার সাথে না। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা আর কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ আদ্রিতার হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে কলেজের বাইরে পেছনের মাঠে নিয়ে আসলো।সেখানে সচারাচর কেউ আসা যাওয়া করে না। এতো শক্ত করে সাজ্জাদ আদ্রিতার হাত ধরেছে আদ্রিতা কোনোভাবে হাত ছাড়াতে পারছে না। মাঠের মধ্যে এনে আদ্রিতাকে ধাক্কা দিয়ে একটু দুরে সরিয়ে বললো। এখন বলো কি বলবে? কি যেনো বলছিলে আমার তোমার উপর অধিকার নেই? আমার কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার দিকে আগাতে লাগলো।

আদ্রিতা খেয়াল করলো সাজ্জাদের চোখগুলো রক্ত লাল হয়ে আছে। আদ্রিতা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে।আদ্রিতা ভাবছে সাজ্জাদ হয়তো সেদিনের মতো আদ্রিতার মাথায় বন্দুক ঠেকাবে। কিন্তু আদ্রিতাকে অবাক করে দিয়ে,

সাজ্জাদ কেমন যেনো নেশাক্ত চোখে আদ্রিতার দিকে এগিয়ে আসছে আর তারপর সাজ্জাদ আদ্রিতার কোমর ধরে ওকে একটু উচু করে আদ্রিতার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।

সাজ্জাদের এমন কাজে আদ্রিতা বরফের মতো শক্ত হয়ে গেলো। যেন পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। সাজ্জাদের থেকে দুরে সরতে চাইলে সাজ্জাদ আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে

সাজ্জাদ নিজে ও যেনো আদ্রিতার নেশা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। আর ও গভীর নেশায় পরে যাচ্ছে। পরে কি মনে করে যেনো হঠাৎ আদ্রিতাকে ছেড়ে দিলো। তারপর বললো অধিকারের কথা বললে পরের বার এর থেকে আর ও বেশি কিছু হয়ে যাবে।

আদ্রিতার থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের মুখ মুছতে লাগলাম।

লজ্জা করে না আপনার? আমার বোনের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া শর্তে ও কিভাবে পারলেন আমার সাথে? ছিঃ ঘৃণা হচ্ছে আপনার উপর। ( আদ্রিতা)

এখনই ঘৃণা হচ্ছে আর ও কিছু করবো নাকি? কথাটি বলে সাজ্জাদ এগিয়ে আসতে নিলে।

আর এক পা ও এগিয়ে আসলে আপনার সামনে নিজেকে শেষ করে দিবো। কোন সাহসে আপনি আমার শরীরে স্পর্শ করলেন? (আদ্রিতা)

বললাম না আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোমার উপর। (সাজ্জাদ)

ভুলে যাবেন না দির সাথে আপনার বিয়ে (আদ্রিতা)

কার সাথে কার বিয়ে হয় কে কার ভাগ্যে লেখা আছে তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে। এখন ক্লাসে যাও। চুপচাপ ক্লাস করবে কোনো ছেলের সাথে একা কোথাও যেনো না দেখি। (সাজ্জাদ)

সমানে চোখের জল পড়ছে যে মানুষটা কিছুদিন পর আমার বোনের স্বামী হবে সে কিভাবে এখন আমার সাথে এ কাজ করতে পারলো। আবার সেদিন আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালো। সাজ্জাদ কি আসলেই খারাপ কাজের সাথে জড়িত? (আদ্রিতা)

মাঠে দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিলাম। তখন সাজ্জাদ কাছে এসে নিজের সাথে জড়িয়ে আমার কানের সামনে নিজের মুখ এনে বললো, ম্যাডামের কি হেঁটে যাওয়ার ইচ্ছে নেই? আমি আমার পদ্ধতিতে নিয়ে যাবো নাকি? কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো।

ছাড়ুন আমাকে নামান আমি নিজেই চলে যাচ্ছি। ছাড়ুনননননন (আদ্রিতা)

সাজ্জাদ ওকে নামিয়ে দিলো। আদ্রিতা দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আদ্রিতা যাওয়ার পর সাজ্জাদ ও চলে গেলো। কিন্তু সেই এলাকার মধ্যেই আছে। কারন সাজ্জাদের কিছু কাজ রয়েছে এলাকাতে।

রুমে যাওয়ার আগে ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে নিলো।

এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? ( আলো)

স্যারের সাথে কথা বলে একটু ক্যানটিনে গিয়েছিলাম।(আদ্রিতা)

স্যার কি বললো তোকে? (আলো)

স্যার যা যা বলেছে সব আলোকে খুলে বললাম। সব শুনে আলো বললো,

সাজ্জাদের সাথে তোর একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো আগে। আর তুই কার সাথে যাবি এইটার ব্যাপারে স্যার কেনো কথা বলবে। আবার আমাকে ও তোদের মধ্যে টেনেছে। (আলো)

এমন সময় তানহা আর আবির আসলো,

কিরে কোথায় ছিলি আর স্যার কি অনুষ্ঠানের ব্যাপার কিছু বলেছে? (আবির)

ওদের দু’জন কেও সব কিছু বললাম

দেখ আমার মনে হচ্ছে, স্যার চাচ্ছে না তোরা অন্য ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করিছ। বাই এনি চান্স তোদের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে না ত? (আবির)

আবিরের কথা শুনে আমি আর আলো চমকে উঠলাম। আবিরের কথা ঠিক কিন্তু কাকে পছন্দ করতে পারে?

আরিয়ান স্যার রুমে আসলেন,

আদ্রিতা বাকি কাজ গুলো কি শেষ হয়েছে? বাকি কাজ গুলো সেরে তুমি আলো তানহা আবির আমার সাথে আসো গিফট কিনতে হবে।

আমরা বাকি কাজ গুলো সেরে স্যারের সাথে বেরিয়ে পড়লাম।

এতোক্ষণ সাজ্জাদের খবর হয়ে গেছে আদ্রিতা আরিয়ানের সাথে বাইরে গেছে। সাজ্জাদ ও সেই জায়গার জন্য রওনা হলো যেখানে আদ্রিতারা গিয়েছে।

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১৬
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

স্যারের সাথে আমরা মার্কেটে পৌঁছে গেলাম।

আমি আর আবির যাচ্ছি গিফট কিনতে। আদ্রিতা আলো তানহা তোমরা ডেকোরেশন এর জন্য কিছু জিনিস কিনে নেও। (আরিয়ান)

ওকে স্যার (আলো)

তারপর আরিয়ান স্যার আর আবির চলে গেলেন। এইদিকে আমরা ডেকোরেশন এর জিনিস কিনছি।

*****

সাজ্জাদ যখন খবর পেয়েছে আদ্রিতা আরিয়ানের সাথে মার্কেট গিয়েছে তখন সাজ্জাদ ও মার্কেট ও প্রবেশ করেছে। কিন্তু সাজ্জাদ হুডি আর মাস্ক পরা। তাই হঠাৎ করে কেউ সাজ্জাদকে দেখলে চিনতে পারবে না।

*****

ডেকোরেশন এর জিনিস কিনা শেষ আগে থেকে লিস্ট করা ছিলো তাই বেশি সময় লাগে নি। কিন্তু আরিয়ান স্যার আর আবির এখনো আসে নি।

দোস্ত চল কোনো একটি দোকান থেকে ঘুরে আসি। (তানহা)

হ্যাঁ চল দেখ ঔই দোকানর জিনিস গুলো কতো সুন্দর। দেখে আসি একবার(আদ্রিতা)

কিন্তু টাকা আছে তোদের কাছে? (তানহা)

আরে পছন্দ করে আসি পরে না হয় একদিন এসে কিনে নেবো।চল যাই।(আদ্রিতা)

না না স্যার এখনই এসে পড়লে আমি যাবো না।(আলো)

আরে কিছু হবে না চল। এই কথা বলে আমরা ৩ জন একটি দোকানে গেলাম। দোকানটি বেশ বড়ো। চারদিকে বিভিন্ন রকমের গহনা, চুরি, কানের দুল, ড্রেস আর ও অনেক কিছু।

আদ্রিতা,তানহা,আলো দোকানে যাওয়ার পর সাজ্জাদ ও তাদের পিছনে গেলো। কিন্তু ততোক্ষণে মাস্ক খুলে ফেলেছে।

তাড়াতাড়ি চলো এতোক্ষণে মনে হয় ওদের ডেকোরেশনের জিনিস কেনা হয়ে গেছে। আমাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে। (আরিয়ান)

জ্বি স্যার। (আবির)

কি ব্যাপারে এই দোকানে ত ওরা নেই কোথায় গেলো?(আরিয়ান)

আবির একটু আশে পাশে তাকিয়ে বললো, স্যার ও ওই দেখুন অন্য দোকানে গিয়েছে। আমারা মনে হয় ওদের ডেকোরেশন এর জিনিস কেনা শেষ। তাই নিজেদের জন্য কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছে। (আবির)

চলো আমরা ওইখানে যাই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো। (আরিয়ান)

আরিয়ান আর আবির আদ্রিতারা যেই দোকানে গিয়েছে সেই দোকানে ডুকেছে।

দোস্ত দেখ এই চুরিটা কতো সুন্দর (আদ্রিতা)

হ্যাঁ রে আমার ও অনেক পছন্দ হয়েছে। (আলো)

হ্যাঁ, ঠিক বলেছিছ সুন্দর অনেক। কিন্তু আমাদের কাছে ত এটা কিনার মতো টাকা নেই। (তানহা)

হ্যাঁ, এই চুরির সেটের দাম নাকি ২০০০।আমাদের কাছে এতো টাকা নেই। (আদ্রিতা)

আমার ত একটা ড্রেস ও পছন্দ হয়েছে কিন্তু টাকা নেই।কি করি আমরা (তানহা)

হ্যাঁ ওই লাল লেহেঙ্গাটা দেখ কতো সুন্দর। আমার অনেক ভালো লেগেছে। (আদ্রিতা)

ওই লেহেঙ্গাতে কিন্তু আদ্রিতাকে একদম বউ বউ লাগবে। কথাটি বলে আলো আর তানহা হেসে উঠলো। আদ্রিতা কিছুটা লজ্জা পেলো।

হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এমনি ও কোনো একদিন এক রাজপুত্র এসে আমার বান্ধবীকে নিয়ে যাবে। (আলো)

অনেক হয়েছে থাম তোরা, না আমার কাছে টাকা আছে আর না কোনো রাজপুত্র আমার জীবনে আসবে। কিন্তু লেহেঙ্গাটা সুন্দর 🥲 দোস্ত কিনে দে লেহেঙ্গা(আদ্রিতা)

বিয়ে করে নেই জামাইের টাকা দিয়ে কিনে দিবো নি 🥲 লেহেঙ্গা ত আমার ও পছন্দ হয়েছে। (আলো)

হয়েছে আর স্বপ্ন দেখতে হবে না টাকা নেই আমাদের কাছে। (তানহা)

ওরা এতোক্ষণ খেয়াল করে নি পেছনে আবির আর আরিয়ান স্যার দাঁড়িয়ে আছে।

তানহার মাথায় বাড়ি মেরে টাকা নেই ত দোকানে এসেছিছ কেনো?(আবির)

উফফফ সব সময় বিরক্ত করিছ। (তানহা)

আমরা পিছনে তাকিয়ে দেখলাম। আরিয়ান স্যার দাঁড়িয়ে আছে।

তোমাদের কি আরো দেড়ি হবে? (আরিয়ান)

না স্যার এখনোই বের হবো। (আলো)

কথাটি বলে আমরা বের হতে নিলাম।

আরিয়ান একটু আমাদের সামনে এসে আবিরের হাতে গিফটের প্যাকেট দিয়ে বললো, তোমরা বাইরে গিয়ে দাঁড়াও আমার একটু কাজ আছে।

ওকে স্যার। কথাটি বলে আমরা ৪ জন বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম।

এতোক্ষণ সবার কথাই শুনছিলো সাজ্জাদ। আদ্রিতারা বাইরে যেতেই সাজ্জাদ দোকানের মালিককে বললো,

এই চুরির সেটটি প্যাকেট করে দিন (সাজ্জাদ)

আদ্রিতারা যাওয়ার পর আরিয়ান পিছনে ফিরে দেখলো, সাজ্জাদ সেই চুরির প্যাকেটটি কিনছে। এটি দেখে আরিয়ানের রাগ বেড়ে গেলো। নিজের রাগ সংযত রেখে বললো,

আরে সাজ্জাদ তুই?(আরিয়ান)

হ্যাঁ, একটু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। (সাজ্জাদ)

ও আচ্ছা, কিন্তু চুরি কেনো রে দোস্ত প্রেমে পরেছিছ নাকি? (আরিয়ান)

সাজ্জাদ কথাটি শুনে হেসে বললো, হ্যাঁ ধরে নে এরকম কিছুই।

আরিয়ান দোকানের মালিককে বললো, এরকম আর একটি চুরির সেট প্যাকেট করে দিন।

সাজ্জাদ বুঝতে পারলো, ওরা এইটি পছন্দ করেছে দেখেই আরিয়ান চুরির সেটটি কিনছে। সাজ্জাদ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বললো,

তুই কার জন্য চুরি কিনলি? (সাজ্জাদ)

আমার প্রিয়তমার জন্য। (আরিয়ান)

নাম কি তোর প্রিয়তমার? (সাজ্জাদ)

সময় হলে জেনে যাবি। অদ্ভুত না দেখ আমাদের দু’জনের পছন্দের মানুষের জন্য একই রকমেন চুরি কিনলাম। (আরিয়ান)

সাজ্জাদ মুচকি হাসলো। লাল রঙের লেহেঙ্গা দেখিয়ে বললো এইটি ও প্যাক করে দিন সাথে একটি হিজাব দিবেন। আর ও কিছু কসমেটিকস দেখিয়ে বললো প্যাক করে দিন। (সাজ্জাদ)

তোর আর আমার প্রিয়তমার পছন্দ যেহেতু এক। তুই যা যা কিনেছিছ আমি ও সেগুলো কিনে নেই।আশা করি আমার প্রিয়তমা ও খুশি হবে। (আরিয়ান)

কথাটি বলে সাজ্জাদ যা যা কিনেছে আরিয়ান ও সেগুলো দেখিয়ে বললো প্যাক করে দিতে। ব্যাপারটা সাজ্জাদের পছন্দ হলো না। কিন্তু কিছু বলার ও নেই।

আরিয়ান মার্কেট থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ান বের হওয়ার কতক্ষণ পর সাজ্জাদ দোকান থেকে বেরলো কিন্তু মার্কেট থেকে পরে বের হবে। সাজ্জাদ চাচ্ছে না আদ্রিতার সাথে এখন দেখা হোক।

সরি সরি একটু বেশি ক্ষন দাঁড় করয়ে রেখিছি তোমাদের। (আরিয়ান)

না স্যার সমস্যা নেই। (তানহা)

আরিয়ান স্যারের হাতে ব্যাগটি আদ্রিতা খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বললো না। সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হলো।

অন্যদিকে ~

ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে সামিরা দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত চেহারায় অসাধারণ লাগছে সামিরাকে।

হেই সামিরা, (স্বাধীন)

হঠাৎ পিছন থেকে ডাক শুনে কিছুটা চমকে উঠলো সামিরা। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জবাব দিলো, হাই।

এই দুপুরে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে? (স্বাধীন)

বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। (সামিরা)

ও আচ্ছা, বিয়ে করে নিন তাহলে আপনার হাসবেন্ডই সব জায়গায় আপনাকে নিয়ে আসা যাওয়া করবে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।(স্বাধীন)

সামিরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো, আপনি বিয়ে করলে বুঝি আপনার বউকে সব জায়গায় নিয়ে যাবেন? একা ছাড়বেন না? (সামিরা)

আমার বউকে আমি একা ছাড়ি ও না। (স্বাধীন)

কি? আপনার বউ আছে? (সামিরা)

না মানে মেয়ের বাসায় কথা বলা আছে। এখন সঠিক সময়ের অপেক্ষা। (স্বাধীন)

কেনো জানি সামিরার স্বাধীনের বিয়ের বিষয়টা ভালো লাগছে না। সেদিন পার্কে অনেকটা সময় একসাথে কাটানোর পর স্বাধীনের প্রতি পজিটিভ ধারণা তৈরি হয়েছে।

ভালো ত, তাহলে যান আপনার বউকে আনা নেওয়া করুন। আমাকে বিরক্ত করবেন না। কথাটি বলে সামিরা চলে গেলো।

যাক বাবা রেগে হেলো কেনো। স্বাধীন একা একা কি করবে সেও চলে গেলো।

*****
আরিয়ান প্যাকেটটি নিজের আলমারিতে রেখে দিলো আনমনে বলে উঠলো, প্রিয়তমা তোমার বাসার ঠিকানা আমার কাছে নেই।চাইলে আমি কলেজ থেকে তোমার ঠিকানা নিতে পারি। কিন্তু আমি চাই বিয়ের পর নিজ হাতে তোমাকে এই গিফটটা দিবো।

****আদ্রিতার বাসায় ~

আদুরি পড়তে বস। (সামিরা)

দি পড়ে টিভি দেখতেছি। তুই পড়তে যা। (আদ্রিতা)

আমি আর দি সোফার রুমে বসে আছি। আমি টিভি দেখতে চাচ্ছি আর দি পড়তে বসতে বলছে। এমন সময় হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১৭
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা সোফায় বসে আছে। সামিরা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

আপনাদের বাসায় আদ্রিতা নামের কেউ আছে? আদ্রিতার নামে পার্সেল এসেছে। ( ডেলিভারি ম্যান)

জ্বি, আপনি আমাকে দিয়ে দিন আমি ওর বড় বোন।(সামিরা)

সামিরাকে পার্সেলটি দিয়ে লোকটি চলে গেলো।

আদুরি তোর পার্সেল এসেছে। অনলাইন থেকে কিছু কিনেছিছ নাকি? (সামিরা)

না দি আমি কিছু কিনি নাই মনে হয় আলো, তানহা বা আবির কিছু কিনেছে আর আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। (আদ্রিতা)

হ্যাঁ, তাই হবে। যা রুমে রেখে দে। (সামিরা)

দি আমি এখন পারবো না। সোফায় রেখে দে(আদ্রিতা)

শুধু এমনি বড় হযেছিছ, কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারিছ না। (সামিরা)

আদ্রিতা সামিরার কথা কানে তুলল না মন দিয়ে টিভি দেখতে থাকলো

সামিরা আদ্রিতার রুমে পার্সেলটি রেখে আসলো।

রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসলাম ঠিক করলাম গ্রুপে জিজ্ঞেস করি এটা কার পার্সেল। নিশ্চয়ই আন্টিকে না জানিয়ে কিনেছে তাই আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
ফোন চেক করে দেখি ২য় নাম্বারটি থেকে মেসেজ সেখানে লেখা,

মায়াপরী লাল লেহেঙ্গা পরলে কিন্তু তোমাকে অনেক মানাবে। অনেক মায়াবী লাগবে। তোমার কলেজের অনুষ্ঠানে তোমাকে এই লেহেঙ্গাতে তোমাকে দেখতে চাই। আমার পাশে দাঁড়িয়ে যখন ছবি তুলবে। তখন তোমাকে একদম লাল টুকটুকে বউ লাগবে। আমার ভালোবাসা মিশ্রিত আছে এই ড্রেসটিতে। ড্রেসটি নিজে পরবে ত নাকি আমার হাতে পরিয়ে দিতে হবে? তুমি নিজে না পড়লে কিন্তু আমি ঠিকই তোমার বাসায় এসে পড়িয়ে তারপর তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। বাসার সবার সামনে নিশ্চয়ই অন্য ছেলের কোলে করে যেতে ভালো লাগবে না। তাই সুন্দর ভাবে সেজে যা যা দিয়েছি সেগুলো দিয়ে সাজবে। হিজাবটা অবশ্যই পরবে। আমি চাই না তোমার ঘন কালো চুল আমি বাদে কেউ দেখুখ। তোমার ঠোঁটের লাল রঙে আমার ঠোঁট রাঙাতে চাই।

মেসেজটি পড়ে বুকের হার্টবিট বেড়ে গেলো দ্রুত প্যাকেটটি খুললাম। প্যাকেটে সেই লেহেঙ্গাটি রয়েছে যেটা আমি তখন পছন্দ করেছিলাম সাথে একটি হিজাব আর ও অনেক কিছু। সব গুলো জিনিসই অনেক সুন্দর। আবার সেই চুরির সেটটি ও রয়েছে। কিন্তু এটি কে দিবে আমাকে? সাজ্জাদ? কিন্তু সাজ্জাদ ত জানে না আজকে আমি মার্কেটে গিয়েছিলাম বা এইটা ও জানে না আমি এই জিনিস গুলো পছন্দ করেছি। কিন্তু মেসেজের যেই ভাষা এটা ত সাজ্জাদ ছাড়া আর কারোর পক্ষে বলা সম্ভব না।কিন্তু সাজ্জাদ কিভাবে জানবে। তার মানে কি আরিয়ান স্যার? স্যারের হাতে একটি প্যাকেট দেখেছিলাম এই প্যাকেটটা ত ঔই প্যাকেটের মতো। তার মানে কি স্যার আমাকে পছন্দ করে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? এইজন্যই কি সাজ্জাদের সাথে আসা যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছে। আমি এখন এই লেহেঙ্গাটি কি করবো? আরিয়ান স্যার দিয়েছে নাকি এটি সম্পূর্ণ ভাবে সিউর না হয়ে আমি স্যারকে কিছু বলতে পারবো না। প্যাকেটটি আবার আগের মতো গুছিয়ে রেখে দিলাম।
বিষয়টি না জেনে কারোর উপর সন্দেহ করা যাবে না। হয় সাজ্জাদ না হয় আরিয়ান স্যার দু’জনের কেউ একজন মেসেজ গুলো করছে। এগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই।

*****পরেরদিন সকালে*****

আদ্রিতা তোর কলেজের অনুষ্ঠান শেষ হলে পরের সপ্তাহে সামিরার বিয়ের কেনাকাটা করতে তুই সামিরা আর বাকিরা যাবে। (আদ্রিতার বাবা)

বাবা আমি না হয় না গেলাম বাকিরা যাক (আদ্রিতা)

না যাওয়ার কারন?(আদ্রিতার বাবা)

(সামিরা ঠিকই বুঝতে পারছে আদ্রিতা কেনো যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু কিছু না বলে চুপ থাকা ছাড়া সামিরার কাছে ার কিছু করার নেই।)

যাবি না কেনো? বোনের বিয়েতে কি তুই ড্রেস কিনবি না? আর যেহেতু সেদিন সব কেনাকাটা হবে তাই তোর ও যা যা প্রয়োজন কিনে ফেল। এমনি বিয়ের আর এক মাস ও বাকি নেই। (আদ্রিতার মা)

মা বিয়েতে ত আলো তানহা ওরা ও আসবে। আমি ওদের সাথে শপিং এ যাবো। (আদ্রিতা)

আমি চাই তুই যেনো ওদের সাথে যাস (আদ্রিতার বাবা)

আর কিছু না বলে চুপচাপ বললাম ওকে বাবা আমি যাবো। (আদ্রিতা)

আদুরি একটু আমার রুমে চল। (সামিরা)

দির সাথে রুমে গেলাম।

তুই এই বিয়েটা মানতে পারবি ত? (সামিরা)

দি আমি এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাই না। তোরা সুখি হ এইটা আমি চাই। আমি যাই কলেজ আছে। বাকিরা অপেক্ষা করছে (আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা চলে গেলো। এদিক দিয়ে কালকে স্বাধীনের সাথে কথা বলার পর থেকে সামিরার মনটা অস্থির অস্থির করছে। এক অজানা অনুভূতি গ্রাস করছে সামিরাকে। এই অজানা অনুভূতির মানে জানা নেই সামিরার কাছে।

*****

মায়াপরী তোমাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তোমার সেই ভয়ার্ত চেহারা, হাসিমাখা মুখ সব কিছু যেনো আমাকে পাগল করে তুলছে। আর কয়েকটি দিন তারপর থেকে তুমি আমার। পিচ্চি পরীটা আমার।

******

স্বাধীন ভেবে পাচ্ছে না তার অসময়ী বৃষ্টি তাকে চাই নাকি না। আর স্বাধীনকে পাওয়ার পর অসময়ী বৃষ্টির মনের অবস্থা কি হবে জানা নেই স্বাধীনের কাছে।

অফিসে কাজের জন্য রাখা হয়েছে কারোর কথা ভাবার জন্য না। (সাজ্জাদ)

স্বাধীন কথাগুলো ভাবছিলো ঠিক তখনই রুমে সাজ্জাদের আগমন।

চিল ব্রো সব সময় কাজ ভালো লাগে না (স্বাধীন)

কাজের সময় বাড়তি কথা পছন্দ না। (সাজ্জাদ)

নিজে ত সারাক্ষণ একজনের কথা চিন্তা করতে থাকছ আর আমি চিন্তা করলেই দোষ? (স্বাধীন)

সাজ্জাদ কথাটি শুনে আর কিছু বললো না।

আমি বুঝতে পারি না একটি হাস্যজ্বল মেয়ে তোর মতো একটি গম্ভীর মানুষের প্রেমে কিভাবে পড়লো? ভাবতে অবাক লাগে। (স্বাধীন)

যেইভাবে তুই একটি গম্ভীর মেয়ের প্রেমে পড়লি।(সাজ্জাদ)

আরে দোস্ত হঠাৎ কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। কেনো আমার সাথে মানাবে না? (স্বাধীন)

মানাবে। কিন্তু (সাজ্জাদ)

কিন্তু কি?(স্বাধীন)

মেয়ে কতটুকু মানতে পারবে ভাবনার বিষয়। সব মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অনেক কল্পনা স্বপ্ন অনেক কিছু থাকে। S.R দের জন্য দুটি মেয়ের অনেক স্বপ্ন হয়তো পূর্ণ হবে না। বিয়ের পর এমন ভাবে রাখতে হবে যেনো কোনো আফসোস করতে না পারে। (সাজ্জাদ)

হ্যাঁ, তোর কথা বুঝতে পেরেছি। চিন্তা করিছ না বিয়ের পর কোনো ধরনের সমস্যা পড়তে দিবো না।(স্বাধীন)

সে আমাকে মানতে পারবে ত? (সাজ্জাদ)

ভালোবাসে তোকে অবশ্যই মানবে। (স্বাধীন)

সাজ্জাদ আর কিছু বললো না দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

সাজ্জাদ মনে মনে ভাবছে, না জানি আদ্রিতার মনের উপর কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

চল বের হয় আজকে একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে। তুই যাবি নাকি আমি একা যাবো?

আদ্রিতা কে একা রেখে কি যাওয়া ঠিক হবে? দুবছর ওর সাথে যোগাযোগ ছিলো না তখন একবারের জন্য ও ওর কোনো ক্ষতি হয় নি। আর এখন এই কয়েকদিনের ভিতর ওর উপর দু’বার হামলা হয়েছে। আমি ওকে একা রেখে কোথাও যেতে চাচ্ছি না। তুই একা চলে যা।(সাজ্জাদ)

ওকে তাহলে আমি এখনই বের হচ্ছি।(স্বাধীন)

****কলেজে*****

আমি আলো আর তানহা মাঠে বসে আছি। আলোকে এখনো ও ঔই লেহেঙ্গার ব্যাপারে বলি নি।

এই আদ্রিতা কি এতো ভাবছিছ। (তানহা)

মনে হয় ওর স্বপ্নের রাজকুমারের কথা ভাবছে।(আলো)

দুর সেরকম কিছু না এমনি তোরা কি যেনো বলছিলি বলতে থাক আমি শুনছি।

এমন সময় আবির ৪টি বার্গার কিনে আনলো।

দোস্ত আমার জন্য নিশ্চয়ই এনেছিছ, দে এমনি ও অনেক ক্ষিদা লেগেছে। (তানহা)

আমার কি আর কাজ নেই? যে তোর জন্য খাবার আনবো? (আবির)

হয়েছে হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। কি কিনে এনেছিছ দে এইবার (আলো)

তারপর আবির ওদের সবাইকে বার্গার দিলো।

তোরা বস আমি রুম থেকে পানি নিয়ে আসি।(আদ্রিতা)

হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা (আবির)

দৌড়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলাম

আদ্রিতাতাতা কথাটি বলে আলো তানহা আর আবির দৌড়ে আসলো।

ঠিক আছিছ তুই? (আলো)

পা মচকে গেছে দাঁড়াতে পারছি না। (আদ্রিতা)

কি করবি এখন? (তানহা)

অনেক ব্যথা করছে। (আদ্রিতা)

আদ্রিতা দাঁড়াতে চেয়ে ও দাঁড়াতে পারছে না।

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১৮
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা দাঁড়াতে চেয়ে ও দাঁড়াতে পারছে না।

এই আদ্রিতা একটু দাড়ানোর চেষ্টা কর (আলো)

পারছি না রে। (আদ্রিতা)

কি দরকার ছিলে দৌড়ে যাওয়ার? এমনি সকালে কিছু খাওয়া হয় নি তোর আবার লো প্রেসারের সমস্যা রয়েছে। এখন কি করবি? (আবির)

বাজে বকা অফ কর আর ওকে টেনে তোল (তানহা)

তোরা তোল আমি দেখি বরফ নিয়ে আসি।(আবির)

আবির একথা বলে বরফ আনতে চলে গেলো।

কি হচ্ছে এখানে?(আরিয়ান)

হঠাৎ আরিয়ান স্যারের শব্দ পেয়ে সবাই চুপ হয়ে গেলো।

স্যার আদ্রিতা তাড়াতাড়ি করে যেতে গিয়ে পরে গেছে।পা মচকে গেছে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু দাঁড়াতে পারছে না।(আলো)

এখন এই অবস্থা কেনো তোমার ? কালকে অনুষ্ঠান তোমার কতো দায়িত্ব রয়েছে আর আজকে সিট কি করবে এখন (আরিয়ান)

আরিয়ান স্যারের কথা ভালো লাগছে না। একে ত সেই লেহেঙ্গার প্যাকেট দেখেছিলাম স্যারের হাতে আবার ফোনের ম্যাসেজ। সব কি স্যার করছে নাকি না বুঝতে পারছি না। কিন্তু এখন ব্যথা পাওয়ার পর ও স্যারের মধ্যে আমার জন্য কোনো চিন্তা দেখতে পারছি না। তাহলে কি আমার ধারনা ভুল? উফ মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাজ্জাদ যে এগুলো কিনবে সাজ্জাদ ত জানে না আমি এগুলো পছন্দ করেছি। আদ্রিতা নিচে বসে এই কথাগুলো ভাবছে।

আরিয়ানের মনে একটি বিষয় নিয়ে অনেক সংকোচ কাজ করছে তাও নিজেকে সংযত রেখে আদ্রিতার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,

আদ্রিতা উঠার চেষ্টা করো। (আরিয়ান)

আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মনে মনে খুব করে একটি মানুষকে চাইছি। সে আসুক আমি আমার বিপদে তাকে বাদে অন্য কারোর সাহায্য চাই না। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে কথা গুলো ভাবছিলো।

কি হলো উঠে এসো? (আরিয়ান)

আলো বুঝতে পারছে আদ্রিতা সংকোচ বোধ করছে। আলো কিছু বলবে এর আগে পিছন থেকে শব্দ আসলো।

তুমি এতো কেয়ারলেস কেনো? (সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ শান্ত গলায় কথাটি বললো। সাজ্জাদ এইবার ও হুডি পড়ে এসেছে যেনো হঠাৎ দেখায় কেউ তাকে চিনতে না পারে।

আদ্রিতার চোখ গুলো যেনো এতোক্ষণ এই মানুষটাকেই খুঁজে চলেছিলো। আদ্রিতা ও বুঝতে পারছে ওর পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো ছেলের সাহায্য লাগবে। কিন্তু অন্য কোনো ছেলের স্পর্শ আদ্রিতা চাই না। কতক্ষণের জন্য আদ্রিতা যেনো ভুলে গিয়েছিলো মানুষটা আদ্রিতার নয়।

সাজ্জাদকে দেখে কেনো জানি আরিয়ানের ভালো লাগলো না। সাজ্জাদের ঘন ঘন কলেজে আসা আরিয়ানের মোটেও পছন্দ না।

**********

সামিরা ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে। সামিরার মনের বিরুদ্ধে কাউকে খুঁজে চলেছে। সামিরার বিশ্বাস সে আসবে। প্রথম একটি বাসে সামিরা উঠলো না। অপেক্ষা করতে থাকলো কিন্তু সে আসলো না। সামিরা নিজে ও বুঝে উঠতে পারছে না কেনো তাকে খুঁজে চলেছে? এমন না যে সামিরার সামনে সেই ব্যক্তিটি আসলে সামিরা কথা বলবে। কিন্তু নিজ অজান্তেই চোখ গুলো খুঁজে চলেজে একজনকে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ও যখন সেই ব্যক্তি আসলো না তখন সামিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসে উঠে গেলো।সামিরা কেনো তাকে খুঁজলো সামিরা নিজে ও জানে না এই #অজানা_অনুভূতির মানে সামিরার কাছে জানা নেই।

*******

সাজ্জাদ এগিয়ে এসে আদ্রিতার হাত ধরে ওকে টেনে দাঁড় করালো।

অনেক ব্যাথা করছে হাঁটতে পারছি না। (আদ্রিতা)

সাজ্জাদ আদ্রিতার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে এখনই যেনো চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়বে। সাজ্জাদ বুঝতে পারলো তার মানে ভালোই ব্যাথা করছে।

সাজ্জাদ আর কিছু না ভেবে আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো।

হঠাৎ সবার মাঝে এমন ঘটনার জন্য আদ্রিতা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। ভয় এবং লজ্জা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

আদ্রিতারা মাঠের যেখানে বসে ছিলো সেখানে একটি গাছ ছিলো গাছের চারপাশে বসার জন্য জায়গা তৈরি করা আছে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে সেখানে বসিয়ে দিলো। সাজ্জাদের পিছন পিছন বাকিরা ও বসালো আরিয়ান স্যার ও আসলো।

দেখি তোমার পা কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার পা ধরতে নিলে আদ্রিতা চিল্লিয়ে উঠলো,

একিকিকি কি করছেন পায়ে হাত দিবেন না আপনি আমার বড়। (আদ্রিতা)

এখন এইসব ফালতু আলাপ করো না। চুপচাপ দেখতে দেও কি হয়েছে। (সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ভাইয়া যা করছে ভালোর জন্য করছে তুই একটু চুপ থাক (আলো)

আদ্রিতাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সাজ্জাদ আদ্রিতার পা ধরলো।

সাজ্জাদের স্পর্শে আদ্রিতার শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

সাজ্জাদ আদ্রিতার পা একটু মোচড় দিলো। পরেরবার একটু জোড়ে মোচর দিলে আদ্রিতা ব্যাথায় সাজ্জাদ সার্ট খামছে ধরে। চোখ থেকে এক ফোঁটা জল সাজ্জাদের হাতে এসে পড়ে।

ছাড়ো (সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথা শুনে আদ্রিতা শার্ট থেকে হাত ছেড়ে দেয়।

এখন হাঁটার চেষ্টা করো দেখো পারবে। (সাজ্জাদ)

আদ্রিতা সোজাসুজি দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছিল। সাজ্জাদ বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজের হাত এগিয়ে দিলো,

আমার হাতে হাত রেখে দাঁড়াও (সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ও কথা অনুযায়ী সাজ্জাদের হাতে হাত ধরে দাঁড়ালো।

হ্যাঁ এখন পা ঠিক আছে। (আদ্রিতা)

ব্যবসার পাশাপাশি দেখি ডাক্তারের কাজ ও শিখে গেছিছ (আরিয়ান)

ওই একটু আকটু সবাই পারে (সাজ্জাদ)

আরিয়ান আর সাজ্জাদ কথা বলছে শুধু ভাবছি আমি সাজ্জাদকে ভালোবাসি সে কি আমাকে ভালোবাসে? আমার সব বিপদে এগিয়ে আসে কেনো? আবার ওই প্যাকেটের ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না সেটা কি আরিয়ান স্যার দিলো নাকি অন্য কেউ? সাজ্জাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না আবার অসম্ভব ও না মানুষটাকে রহস্যময় লাগে। এসব কথা ভাবছিলাম হঠাৎ মাথা কেমন জানি ঘুরে উঠলো।

আদ্রিতা হঠাৎ পড়ে যেতে নিলে সাজ্জাদ আকড়ে ধরলো।

ওর কি হয়েছে? (আরিয়ান)

সকাল থেকে এখনো কিছু খাওয়া হয় নি তাই প্রেসার লো হয়ে গেছে। (আলো)

কি? আদ্রিতা এখনো কিছু খায় নি? তোমরা জানো না ওর প্রেসারের সমস্যা রয়েছে? (সাজ্জাদ)

সরি ভাইয়া (আলো)

আরিয়ানের এসব বিষয় ভালো লাগছে না।

তোমাদের ওর সাথে কোনো কাজ থাকলে পরে ওর সাথে দেখা করে নিও আমি এখন আদ্রিতাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। কথাটি বলে সাজ্জাদ আবার আদ্রিতাকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে হাঁটতে থাকলো।

*****

দূর থেকে নওশিন সব দেখছে। নওশিন আর এসব সহ্য করতে পারছে না। চোখে মুখে প্রতিশোধর আগুন ফুটে উঠছে।

******

সামিরা বাসায় চলে এসেছে। কিন্তু কোনোভাবে শান্তি পাচ্ছে না। সামিরা নিজে ও বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হলো সামিরার

*****

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে গাড়িতে বসালো। একটি পানির বোতল আর সাথে কিছু খাবার কিনে নিলো। সাজ্জাদ নিজে ও গাড়িতে বসে আদ্রিতার চোখে মুখে পানি ছিটানো শুরু করলো। সাজ্জাদ খেয়াল করছে আদ্রিতার ঠোঁট গুলো হালকা কাঁপছে। জিনিসটা যেনো সাজ্জাদ অনেক উপভোগ করছে। আদ্রিতার এখনো জ্ঞান ফিরে নি অন্যদিকে আদ্রিতার ঠোঁট যেন অনেক টানছে সাজ্জাদকে। সাজ্জাদের পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সাজ্জাদ আর কিছু না ভেবে আদ্রিতার ঠোঁট ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।

#চলবে