অতলস্পর্শ পর্ব-১০

0
366

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১০
#জান্নাতুল_বিথী

কুশান ভাইয়া আর আমি গাড়িতে বসে আছি।ভাইয়া ড্রাইভ করছে।আমি বসে বসে ভাইয়ার সাথে বকবক করছি আর ভাইয়া চুপচাপ ড্রাইভ করছে।আমার সাথে এক বারের জন্যও কথা বলে নাই।ভাইয়ার সাথে বকবক করতে করতে আমি খেয়ালই করি নাই যে আমরা বাড়ির ঠিক উল্টো রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।এটা দেখেই আমি আৎকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকাই।তার দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।..

“ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি.??”

ভাইয়া কোনো কথা না বলে ড্রাইভ করতে থাকে মনোযোগ দিয়ে।এবার আমার মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি ভাইয়ার দিকে মন খারাপ করে তাকাই। ভাইয়ার এক হাত ধরে হালকা টান দিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে বলি..

“ভাইয়া আমি কি কোনো ভুল করছি যার কারনে আপনি আমার উপর রেগে আছেন.??”

কুশান ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে..

“কই না তো।আমি কি তোকে বলছি যে আমি রাগ করছি বা অন্য কিছু.??

“নাহ কিন্তু আপনি তাহলে আমার সাথে কথা বলেন না কেনো।আমি তো সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছি কিন্তু আপনি মনে হচ্ছে কিছুই শুনেন না।কি হলো আপনার.??”

“তোর প্রতিটা কথা সব সময় আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনি।সো কখনোই এই ধরনের কথা মুখেও আনবি না।আর বাকী রইলো কথা না বলা।ওইটা এমনিই আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপ করে আছি।তোর কথা শুনতে ভালো লাগছে।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে যায়।আমি গাল ফুলিয়ে বলি..

“তার মানে আমি আপনাকে বিরক্ত করছি।আর আপনি আমার কথায় বিরক্ত বোধ করছেন বলেই চুপ করে আছেন ভালো লাগছে না আপনার।তো সেই কথাটা আগে বললেই পারতেন এতো অভিনয় করার কি ছিলো??”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক কষে। সিটবেল্ট থাকায় এই যাত্রায় বেচে গেলাম।আমি একবার চারপাশে তাকিয়ে দেখি আমরা একটা জন মানবশূন্য গ্রাম সাইড এলাকায় আছি।বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।আমার কথায় ভাইয়া হয়তো রেগে গেছে।কিন্তু আমি এখানে রেগে যাওয়ার মতো কোনো রিজনই খুজে পাই নাই।তাই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি..

“ভাইয়া আমি যা বলছি সত্যি বলছি এখানে রেগে যাওয়ার…”

“জাস্ট সাট আপ জিহা।যে সব কথার কোনো মানে বুঝিস না তা নিয়ে এতো গবেষনা করতে কে বলছে তোকে।??”

আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ভাইয়া জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠে ভাইয়া।আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বারের মতো দেখলাম কুশান ভাইয়া আমাকে পুরো নামে ডাকছে।নয়তো সব সময় আমাকে সে জিহু বলেই ডাকতো।ভাইয়া কতো টা না রেগে গেলে তার রাগ কন্ট্রোলে থাকে না।আমার এবার অনেক ভয় করছে।ভাইয়া বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে আমার দিকে তাকায়।তারপর বলে…

“জিহা তুই নিজেও জানিস না আমার কাছে তোর মুল্য ঠিক কতোটুকু।কি বলবো আমি তোকে.?? কথার বলার কোনো অবস্থাতেই নেই এখন আমি।যে মানুষটার একটু কথা শুনার জন্য দিশেহারা হয়ে যেতাম। যাকে একটা মুহূর্ত দেখার জন্য মন চাইতো সে যখন আমার পাশে থাকে কিংবা কথা বলে তখন কেনো আমার বিরক্ত লাগবে জিহু।কেনো.??এন্সার মি.”

ভাইয়ার চিৎকারে আমি কেপে উঠি।নিচের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমি ভাবতে থাকি।ভাইয়া কেনো এই কথা গুলো বলছে।আমাকে দেখতে তার ইচ্ছে করে।আমার কথা শুনতে সব সময় মন চায়। কেনো.??তার মানে কি ভাইয়া আমাকে.??

আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে।তার চোখ মুখ পুরোটাই লাল হয়ে আছে।বেশি রেগে গেলে যা হয় আর কি।ভাইয়া গাড়ি ঘুরিয়ে আবার বাড়ির পথে যেতে থাকে।আমার একবার ইচ্ছে করছিলো তাকে জিজ্ঞেস করি যে আমরা কোথায় যাচ্ছিলাম।কিন্তু সাহসে হয় নাই তার সাথে দ্বিতীয় বারের মতো কথা বলার।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

কেটে যায় আরও তিনদিন।এই তিনদিনে প্রতিটা দিন আবার আমাকে ইমন ডিস্টার্ব করে গেছে।সিনিয়র ভাই কারনে আমি কিছু বলতে পারি নাই।এই তিনদিনের মধ্যে কুশান ভাইয়া একবারের জন্যও আমাদের ফ্ল্যাটে আসে নাই।ধরতে গেলে এই তিনদিনের একদিনও আমি ভাইয়াকে দেখি নাই।আমি তো ভেবেছিলাম কুশান ভাইয়া হয়তো বাড়িতে নেই।কিন্তু বড়মা কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলছে ভাইয়া নাকি বাড়িতেই আছে।অফিসে কাজের চাপ হয়তো একটু বেশিই যার কারনে ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ভাইয়া আমাকে ইগনোর করছে।আমার সাথে ইচ্ছে করেই দেখা করছে না।আমার কিচ্ছু ভাল্লাগে না।সব সময় ইচ্ছে করে একবার কুশান ভাইয়ার সাথে কথা বলি।ভাইয়াকে একবারের জন্য একটু দেখতে ইচ্ছে করে।আমার অনেক কান্না আসছে।সহ্য করতে পারছি না কিছুই।

এখন রাত প্রায় ৯ টা বাজতে চলেছে।আমি বেলকনিতে রেলিয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি।চোখ দিয়ে এক ফোটা জল অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।আমি জানি না ভাইয়ার জন্য আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো।শুধু জানি তাকে ছাড়া আমার সময় কাটে না।তাকে ছাড়া আমি একেবারেই অচল।হঠাৎ আমার চোখ যায় ভাইয়ার রুমের দিকে।আলো জ্বলছে।তার মানে ভাইয়া এখন বাড়িতে আছে।আমি এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে যাই কুষান ভাইয়াদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য।লিভিংরুমে এখন কেউ নেই।জিদান ভাইয়া এখনো অফিস থেকে ফিরে নাই।বাবাও অফিসে আর মা হয়তো রুমে আছে।যার কারনে আমি আসার সময় কারো চোখেই পড়ে নাই।
,

আমি ভাইয়ার রুমে আসতেই দেখি কুশান ভাইয়া সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হইছে।কালো ট্রাউজার আর খালি গায়ে গলায় টাওয়াল জুলানো।আমি ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেই।ভাইয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইয়া আমাকে এখানে মোটেই আশা করে নাই।আমাকে এভাবে হঠাৎ তার রুমে আসতে দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে বলে..

“কি চাই এখানে.??”

“ভাইয়া আপনি আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন কেনো.??”

“আমি তোকে ইগনোর করতে যাবো কেনো।আমি তোকে ইগনোর করার কে হুমম??নিজেকে এতো ইম্পরট্যান্ট ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখানে কি তোর.??যা না ভার্সিটিতে যা।ওইখানে তো তোর জন্য কতো জন অপেক্ষা করছে তাহলে আমার কাছে কি তোর।বিরক্ত লাগছে আমার জিহু প্লিজ রুম থেকে বের হয়ে যা।একা থাকতে দে আমাকে একটু প্লিজ।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার সামনে থেকে সরে বেলকনিতে চলে যায়।

#চলবে

[ গঠন মুলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। ]