অতলস্পর্শ পর্ব-১৩

0
442

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১৩
#জান্নাতুল_বিথী

প্রকৃতির দৃশ্য নিতান্তই সুন্দর।শরৎ কালের মাঝামাঝি সময়।শরৎ কালে প্রকৃতির দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হই।আসলে প্রকৃতি এমন যাকে যতো দেখি ঠিক ততোবেশিই মুগ্ধ হয়ে যাই।এই কয়টা দিনে আমি আর কুশান ভাইয়া জমিয়ে প্রেম করি।সারা রাত দুজনে ফোনে কথা বলি।ভালোবাসার হাজারো স্বপ্ন বুনতে থাকি।কিন্তু তারপরও ভাইয়া আমাকে ধমক দেওয়া বন্ধ করে নাই।আমাকে দেখলেই তার ধমক দিতে ইচ্ছে করে।আমাকে দেখলেই চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলে।মাঝে মাঝে আবার আমার পছন্দের সব কাজ করে।মাঝে মাঝে এমন কাজ করে যা আমার কল্পনার বাহিরে থাকে।যেমন আজ রাত প্রায় ১০ টার পর হঠাৎ জিদান ভাইয়া এসে আমাকে বলে..

“জিহু কুশান তোর জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যা।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।অবাক চোখে তাকিয়ে বলি..

“কেনো ভাইয়া কোথায় যাবে.??”

ভাইয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে।..

“আমি জানি কি করে।ও আমাকে বলছে তোকে বলার জন্য তাই বলছি।আর হ্যা ফেরার পর কলিং বেল বাজাবি না।আমাকে মেসেজ করলেই হবে।”

কথাটা বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে ভাইয়া চলে যায়।আমি অনেক্ষন তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলাম।হঠাৎ তার কথা মাথায় আসতেই আমি তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিচে আসি।আমি নিচে নামতেই দেখি কুশান ভাইয়া বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমাকে আসতে দেখেই সে সোজা হয়ে দাড়ায়।তারপর আমাকে একবার দেখে নিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বাইকে উঠতে বলে।আমি ভাইয়ার দিকে এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।জিদান ভাইয়া আর তার দুজনের ব্যবহারই খুব অদ্ভুত লাগছে।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি..

“কোথায় যাবো আমরা.???”

“আমার নীলপরীর সাথে একটু ঘুরতে ইচ্ছে করছে।তাই আর দেরি না করেই চলে আসলাম।এখন তুই একদম দেরি করাবি না।তাড়াতাড়ি বাইকে উঠতে বলছি।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি মুচকি হাসি।মাঝে মাঝে তার ছাওয়া গুলো খুব ভালো লাগে।আমি বাইকে বসে দুই হাত দিয়ে ভাইয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে তার পিঠে মাথা রাখি।আচমকা এমন হওয়ায় কুশান ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।পরক্ষনে ঘটনা বুঝতেই মুচকি হেসে সে বাইক স্টার্ট দেয়।আমরা দুজনেই চুপ করে আছি।একজন আরেক জনকে অনুভব করছি।এই ভাবে চুপ করে থাকার মাঝেও যেনো আলাদা শান্তি খুজে পাচ্ছি।হঠাৎ আমার জিদান ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই কুশান ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলি..

“ভাইয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে.???

“হুমমমমম।বাট তার আগে আমাকে ভাইয়া ডাকা বন্ধ করতে হবে।”

কুশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠি।তাকে ভাইয়া ডাকা বন্ধ করতে হবে মানে.??কি বুঝাতে চাইছে সে।কিন্তু একটু পর তার কথার মানে বুঝতেই আমি হেসে তাকে দুইহাতে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি..

“ঠিক আছে ব্রো এখন থেকে আর ভাইয়া ডাকবো না।ওকে.???”

আমার কথা শুনে ভাইয়া ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে..

“হোয়াট ইজ ব্রো।???”

“ব্রো ইজ ব্রো।”

বলেই হা হা করে হাসতে থাকি।আমাকে হাসতে দেখে ভাই বাইক থামিয়ে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।তাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি কিছুটা দমে যাই।অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখে ভ্রু কুচকে তাকে কি জিজ্ঞেস করি।সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে…

“মজা নিতে খুব ভালো লাগে তাই না.??এই দিকে আমি দুঃখে কষ্টে মরে যাচ্ছি।আমারই হবু বউ কিনা আমাকে ভাইয়া, ব্রো এসব বলে ডাকছে.??হাইরে কপাল আমার।”

করুন কন্ঠে বলে ভাইয়া।তাকে এখন একদম ছোট বাচ্ছাদের মতো লাগছে।তার এমন ফেস দেখে আমার আরো হাসি পাচ্ছে।আর আর না পেরে আবার জোরে হেসে দেই।এবার ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে।..

“হাই আল্লাহ আমি তো আমার হবু বউকে নিয়ে একটু ঘুরবো ভেবেছিলাম।কিন্তু এখন তো দেখছি তাকে পাবনা নিতে হবে।সে কি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে.??”

ভাইয়ার কথা শুনে এবার আমার হাসি উধাও হয়ে যায়।তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আর তার কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করছি।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া হয়তো আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে।তাই সে হঠাৎ বলে উঠে..

“ওহহহহ তুই ঠিক আছিস.??আমি তো আরও ভাবলাম তুই হয়তো পাগল হয়ে গেছে।কারন ছাড়া একমাত্র পাগলকেই হাসতে দেখলাম আমি।”

ভাইয়ার কথার মানে বুঝতে পেরেই আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি।বসে তার বুকে এলোপাথাড়ি ঘুসি মারতে থাকি।আর আমার কাজে ভাইয়া হাসতে হাসতে কুটিকুটি।তাকে হাসতে দেখে আমার আরো বেশি রাগ হয়।তাই তাকে বলি..

“আমি পাগল হলে একটা পাগলকে আপনি ভালোবাসেন কেনো।কেনো তাকে শুধু শুধু বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখান.??”

হঠাৎ কুশান ভাইয়া আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে..

“আমি শুধু শুধু কেনো বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে যাবো।যা সত্যি তাই তো বলছি।আর তুই এতোটা পাগলী কারনেই তো তোকে এতো ভালোবাসি।সেটা কি তুই বুঝিস না।??”

ভাইয়ার কথায় এক ধরনের মাদকতা ছিলো।যাতে আমি শিউরে উঠি।তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।সত্যি বলতে তাকে যতো দেখছি ততোই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।আমি কথা ঘুরানোর জন্য বলি..

“জ্ জিদান ভাইয়া আমাদের এভাবে সাহায্য করছে কেনো.??”

আমার কথার মানে কুশান ভাইয়া বুজেও না বুঝার ভান করে আবার বাইক স্টার্ট দেয়।দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই বলে..

“জিদান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই।আর তার ছেয়ে বড় কথা ও তো আমার শালা।তাই এখন থেকেই আমাকে প্রেম করতে সাহায্য করছে।”

“ভাইয়া কি সব কিছু জানে.??”

“হুমমমম।সেই অনেক আগে থেকেই জানে।যখন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি তখন থেকেই জিদান জানে।”

#চলবে

[ গঠন মুলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।]