অতলস্পর্শ পর্ব-১৪

0
351

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_১৪
#জান্নাতুল_বিথী

রৌদ্রময় সকালের তপ্ত গরমে ঘেমে একাকার।এই গরম আমার এতো শত্রু কেনো তাই বুঝি না।যখন একটু শুভ কাজ করতে যাবো ঠিক তখনি শুরু হবে তার খেলা।যেমন এখন এই গরমের কারনে এখন ঘুমাতে পারছি না।কাল অনেক রাত পর্যন্ত কুশান ভাইয়ার সাথে ঘুরেছিলাম।তার সাথে কাটানো সময় গুলো ছিলো সব থেকে বেস্ট।কথা গুলো মনে পড়তেই আনমনে হাসি আমি।হঠাৎ আবার গরম লাগছে কথাটা মাথায় আসতেই শতো বিরক্ত নিয়ে আমি উঠে বেলকনিতে চলে যাই।বেলকনিতে এসে ভালো করে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি কুশান ভাইয়া বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে এদিকে তাকিয়েই।ভাইয়ার শান্ত চাহুনি বলে দিচ্ছে সে বড্ড ক্লান্ত।সকাল সকাল তার মুখটা দেখতেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।তার দিকে তাকিয়েই ভাবতে থাকি কোন দিন থেকে প্রতিদিন তার মুখ দেখে ঘুম ভাঙ্গবে আমার।কোন দিন থেকে তার বুকে মাথা রেখে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো।কোন দিন তাকে খুব করে কাছে পাবো।ভাবতে ভাবতেই তার দিকে তাকাই।সে এখনো আমার পানে তাকিয়ে আছে।আমি আস্তে করে নিচের দিকে তাকিয়ে রুমে চলে আসি। ভাইয়ার সাথে কথা বলতে অনেক ইচ্ছে করছিলো।তাই তাকে ফোন করলাম।মুলত রুমে এসেছিই তাকে ফোন করার জন্য।…

“কতো ইচ্ছে করছিলো তোমাকে একটু মন ভরে দেখবো আর তুমি এটা কি করলে.??চলে গেছে কেনো জিহু.??”

ফোন ধরতেই কিছুটা হতাশ কন্ঠে বলে কুশান ভাইয়া।তার কথা শুনে আমি অমায়িক ভাবে হাসি।ঠোট টিপে বলি..

“এতে আমার কি দোষ বলেন।জিহুর নাকি হঠাৎ ইচ্ছে করছিলো তার কুশান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে।তাই তো এক প্রকার বাধ্য হয়েই রুমে এসেছিলাম।”

আমার কথা শুনে কুশান ভাইয়া হাসে।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি..

“আপনি কি সকাল সকাল অফিসে গেছিলেন.??আই মিন আপনাকে দেখে ক্লান্ত মনে হইছে।”

“উমমম আসলে সকাল সকাল অফিসে একটা মিটিং ছিলো তাই অফিসেই ছিলাম।মাত্র আসছি।”

“ওহহহ সরি সরি তাহলে মনে হয় আপনাকে অসময়ে ডিস্টার্ব করলাম।আপনি বরং ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নিন।”

জিহার কথা শুনে কুশানের অনেকটা রাগ হয়।কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে..

“আমার ক্লান্তি দুর করার জন্য একটি বার তোমাকে দেখার জন্য ছুটে গেছিলাম।তোমার মাঝেই আমার সব ক্লান্তি দুর হয়ে যায়।তারপরো এই কথা বলছো তুমি.??এখন বুঝি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না তোমার.??”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নিঃশব্দে হাসি।তার কথার মাথে আলাদা একটা টান আছে।যা মুহূর্তেই যে কাউকে ঘায়েল করতে পারবে।আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে আছি।দুজনেই চুপ করে আছি। দুজন দুজনকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।..

“জিহু…..”

ঘোর লাগা কন্ঠে এভাবে ডেকে উঠায় আমি কেটে উঠি।..

“হু…”

“আমার মাঝে মাঝে অনেক ভয় হয়।যদি তোমাকে হারিয়ে পেলি তাহলে আমি সত্যিই বাচবো না।হয়তো বেচে থাকতে পারি কিন্তু তা হবে মরেো বেচে থাকার মতো।এক ধরনের জীবন্মৃত হয়ে বেচে থাকবো।এভাবে বেছে থাকার কোনো মানেই হয় না।প্লিজ কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো।আমি সত্যিই মরে যাবো।কেনো এতো ভয় হয় আমি জানি না।কেনো এমন হয় জিহু।..??”

ভাইয়ার এমন কথায় চমকে উঠি আমি।হঠাৎ আমার মন অজানা আশঙ্কায় বার বার কেপে উঠতে থাকে।তার কথা গুলো আমি ঠিক ভাবে হজম করতে পারছি না।আমার চোখ দুটি ভিজে উঠছে।আমি তাকে কাপা কাপা কন্ঠে বলি..

“কুশান ভ-ভাইয়া ক-কি বলছেন আপনি এসব।আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।আপনার জিহু কি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে.??”

ভাইয়া চুপ করে আছে।তারপর আরো কিছু টুকিটাকি কথা বলে ফোন রেখে দেই।বারবার ভাইয়ার বলা কথা গুলো মনে পড়ছে।কেনো এভাবে বলছে সে।এর পেছনে কি কোনো কারন আছে.??সব কিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।

________________________________

লিভিং রুমে বসে আছি আমরা সবাি।বড় মা বড় বাবা মা বাবা জিদান ভাইয়া কুশান ভাইয়া সহ সবাই উপস্থিত আছে।একটু আগেই সবাই মিতুদের বাড়ি থেকে এসেছিলো।বিয়ের ডেট ফাইনাল করে আসছে।সামনের মাসের ১০ তারিখেই বিয়ে।হিসাব মতে বিয়ের বাকী আর মাত্র ১৫ দিন।সবাই তাই নিয়েই কথা বলছে।আমাদের আত্মীয় তেমন কেউ নেই।কুশান ভাইয়াদের পরিবার আমার কিছু ফ্রেন্ড ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা আর অল্প কিছু আত্মীয়।বাবার কিছু বিজনেস ফার্টনার।জিদান ভাইয়ার মুড অফ।কারন তার এখন মোটেও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না।তার কথা হরো আগে আমাদের এক্সাম শেষ হবে তারপর বিয়ে নিয়ে কথা হবে।কিন্তু বাবা আর মা তাদের আর তর সইছে না।তারা এখনই তাদের পূত্র বধুকে ঘরে তুলবে।তাদের কথার উপরে আর কার কথা বলার সাধ্য থাকে।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ভাইয়া রাজী হয়েছে।

আমি বারবার কুশান ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি। তাকে বুঝার চেষ্টা করছি আসলে কি তার মুড অপ নাি সব কিছুই ঠিক ঠাক ভাবই চলছে।কিন্তু তাকে খুব শান্ত দেখাচ্ছে।সুন্দর করেই বসে বসে জিদান ভাইয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।তাহলে ভাইয়া তখন এই ধরনের কথা বলছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছি না।এক সময় সবাই উঠে যায়।সোথায় বসে বসে এখনো কথা বলছে জিদান আর কুশান ভাইয়া।তাদের ফ্রেন্ডরা আসবে মনে হয় তাই নিয়েই কথা বলছে।দুজনকেই অনেক এক্সাইটেড দেখাচ্ছে।আমিও মনে মনে খুশি হই।কারন যদি কুশান ভাইয়ার মুড খারাপ থাকে তাহলে তার বন্ধুদের সাথে কথা বললে তাদের সাথে আড্ডা দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।
,

সন্ধ্যার পর মা আমাকে এক বাটি পিঠা দিয়ে বলে কুশান ভাইয়াদের বাসায় দিয়ে আসার জন্য।আমাদের ঘরে যাই বানানো হয় তা তাদের পাঠানো হয়।তারাো ব্যতিক্রম নয়।আমি পিঠা বড় মার হাতে পিঠা দিয়ে চলে আসবো এমন সময় দেখি একটা মেয়ে হঠাৎ এসে কুশান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে।আর হাজারো প্রশ্ন করতে থাকে।

“বেবি তুমি কেমন আছো,তুমি কি জানো আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি,তুমি কি আমাকে একটুো মিস করো না.??আমি তো তোমাকে ছাড়া এক মিনিটকে এক যুগ মনে হয়।আই লাভ ইউ জান।”

মেয়েটার এমন অদভুত ধরনের কথা শুনে আমি অনেক অবাক হয়ে যাই।এই মেয়েকে আমি ছিনি না।তাহলে কে এই মেয়েটা.??কিন্তু মেয়েটার কথা শুনে আমার সারা শরীর জ্বলে উঠলো।আমি কুশান ভাইয়ার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসি।প্রচুর রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে এই মেয়েটার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।

চলবে